বান্দার ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় নি‘আমত ঈমান

বর্ণনা

এ ফতোয়ায় নিম্নের প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হয়েছে: কোনো এক শাইখের বক্তব্য সম্বলিত জনৈক ভাইয়ের একটি পত্র আমার হস্তগত হয়েছে, পত্রটি ছিল নিম্নরূপ: সবচেয়ে বড় নি‘আমত কোনটি? সম্পদ, পিতা-মাতা অথবা পাপ থেকে সুরক্ষা? কেউ বলেছেন: আমাদের ওপর সবচেয়ে বড় নি‘আমত আমার রব..... আমাদের ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় নি‘আমত কী? জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন।

Download
এ পেইজ এর দায়িত্বশীলের কাছে টীকা লিখুন

সম্পূর্ণ বিবরণ

    বান্দার ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় নি'আমত ঈমান

    أعظم نعم الله تعالى على عباده الإيمان به

    < بنغالي >

    ইসলাম কিউ এ

    الإسلام سؤال وجواب

    —™

    অনুবাদক: সানাউল্লাহ নাজির আহমদ

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    ترجمة: ثناء الله نذير أحمد

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    বান্দার ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় নি'আমত ঈমান

    প্রশ্ন: কোনো এক শাইখের বক্তব্য সম্বলিত জনৈক ভাইয়ের একটি পত্র আমার হস্তগত হয়েছে, পত্রটি ছিল নিম্নরূপ: সবচেয়ে বড় নি'আমত কোনটি? সম্পদ, পিতা-মাতা অথবা পাপ থেকে সুরক্ষা? কেউ বলেছেন: আমাদের ওপর সবচেয়ে বড় নি'আমত আমার রব, যিনি উপকার ও অপকারের মালিক, তার হাতে রয়েছে সর্বময় ক্ষমতা, আমরা তার নাফরমানী করি অথচ তিনি আমাদের ওপর ধৈর্যধারণ করেন ও আমাদেরকে সুযোগ দেন।

    এ কথা কি ঠিক যে, আমাদের ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় নি'আমত তিনি আমাদের রব অর্থাৎ তার রুবুবিয়্যাত আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় নি'আমত? এরূপ বলা কি বৈধ যে, আল্লাহ সবচেয়ে বড় নি'আমত, অথবা এরূপ বলায় কোনো পার্থক্য আছে কি, আল্লাহ তা'আলাই নি'আমত কিংবা আল্লাহ আমার রব এটিই সবচেয়ে বড় নি'আমত? আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন।

    উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ।

    এতে সন্দেহ নেই যে, বান্দার ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় নি'আমত তার দীনের হিদায়াত, যা তিনি বান্দাদের জন্য পছন্দ করেছেন ও যার ওপর চলার আদেশ করেছেন। তিনি বলেন:

    ﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ٣﴾ [المائدة: ٣]

    “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নি'আমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে"[সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]

    ইবন কাসীর রহ. বলেন: এ উম্মতের ওপর আল্লাহ তা'আলার এটিই সবচেয়ে বড় নি'আমত যে, তিনি তাদের জন্য তাদের দীনকে পূর্ণ করে দিয়েছেন, তাই তারা অন্য কোনো দীনের মুখাপেক্ষী নয়, তাদের অন্য কোনো নবীর প্রয়োজন নেই, আল্লাহ তাদের সবার ওপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন। আল্লাহ তা'আলা জিন্ন ও মানুষের নিকট মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী বানিয়ে প্রেরণ করেছেন। তার হালাল ব্যতীত কোনো হালাল নেই, তার হারাম ব্যতীত কোনো হারাম নেই, তার স্বীকৃত দীন ব্যতীত কোনো দীন নেই। তিনি যেসব বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য ও সঠিক, তাতে মিথ্যা ও প্রতারণা নেই। যেমন, তিনি বলেন:

    ﴿وَتَمَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدۡقٗا وَعَدۡلٗاۚ ١١٥﴾ [الانعام: ١١٥]

    “আর রবের বাণী সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার দিক থেকে পরিপূর্ণ হয়েছে"[সূরা আল-আন'আম, আয়াত: ১১৫] অর্থাৎ তার সংবাদ সত্য এবং তার আদেশ ও নিষেধ ন্যায়পরায়ণতার দিক থেকে পরিপূর্ণ। দীনকে পূর্ণ করে আল্লাহ এ উম্মতের ওপর স্বীয় নি'আমত পরিপূর্ণ করেছেন"। [সূরা আল-আন'আম, আয়াত: ১১৫]

    শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: “আল্লাহ মানুষকে ঈমানের হিদায়াত করেছেন ও তাদেরকে তা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন, এটিই তাদের ওপর তার সবচেয়ে বড় নি'আমত। তারাই বড় নি'আমতের অধিকারী, যারা হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং যাদেরকে আল্লাহ নিম্নের আয়াতে উল্লেখ করেছেন:

    ﴿ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ ٧﴾ [الفاتحة: ٦، ٨]

    “আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দিন, তাদের পথ, যাদেরকে নি'আমত দিয়েছেন"[সূরা আল-ফাতেহা, আয়াত: ৬-৭][1]

    শাইখুল ইসলাম অন্যত্র বলেন: “বান্দার ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় নি'আমত ও অনুগ্রহ হচ্ছে যে, তিনি তাদের জন্য স্বীয় রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাদের ওপর স্বীয় কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাদের জন্য সঠিক পথ বাতলে দিয়েছেন। যদি এরূপ না হত, তাহলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত হয়ে যেত, কিংবা তার চেয়েও নিকৃষ্ট হত। অতএব যে আল্লাহর রিসালাত গ্রহণ করল ও তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকল, সেই পার্থিব জগতে সবচেয়ে উত্তম, আর যে তা প্রত্যাখ্যান করল ও তার থেকে বিচ্যুত হল, সেই পার্থিব জগতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট, কুকুর, শূকর ও চতুষ্পদ জন্তু থেকেও ঘৃণিত"[2]

    এ থেকে স্পষ্ট হলো যে, বান্দার ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় নি'আমত হচ্ছে আল্লাহ ও তার রাসূলদের প্রতি ঈমান এবং তার দীন ও শরী'আতকে আঁকড়ে থাকার তাওফীক। আল্লাহ যেহেতু সকল মখলুকের স্রষ্টা, তিনি মানব জাতিরও স্রষ্টা, তাদের পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণকারী। তিনি ধৈর্যশীল, মখলুককে তার অপরাধের কারণে দ্রুত শাস্তি প্রদান করেন না, তাদের অপরাধ ও কৃতকর্মের দরুন তাদেরকে পাকড়াও করেন না। আল্লাহর এসব দয়া শুধু তাদের পক্ষেই নি'আমত, যারা তাকে চিনে, তার ওপর ঈমান আনে ও তার হিদায়াতের অনুসরণ করে, কিন্তু যে তার সাথে কুফুরীতে লিপ্ত হয়, তার নাফরমানী করে, তার ধৈর্যশীলতার সুযোগে দাম্ভিক হয়, তার জন্য এসব উল্টো শাস্তি, অতিরিক্ত পাপ ও দুর্ভোগের কারণ। দুনিয়াবী নি'আমতও তার জন্য শাস্তির কারণ যেমন, রিযিক, সুস্থতা, সম্পদ ও সন্তান ইত্যাদি। হ্যাঁ, এসব তার পক্ষেই নি'আমত, যে এসব নি'আমতের কদর করে ও আল্লাহর শোকর আদায় করে, কিন্তু যে তা চিনে না ও আল্লাহর নাফরমানি করে, তার পক্ষে এসব কখনো নি'আমত নয়।

    শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: “বান্দার ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় নি'আমত ঈমান, যা কথা ও কর্মের সমষ্টি। ঈমান বর্ধিত হয় ও হ্রাস পায়, অর্থাৎ ইবাদত ও নেক আমলের কারণে ঈমান বর্ধিত হয়, পাপ ও নাফরমানীর কারণে হ্রাস পায়। মানুষ যখন তার নেক আমল বাড়িয়ে দেয়, তার ঈমান বর্ধিত হয়। এ কথাই আল্লাহ নিম্নের আয়াতে বলেছেন:

    ﴿ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ ٧﴾ [الفاتحة: ٦، ٨]

    “আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দিন, তাদের পথ, যাদেরকে নি'আমত দিয়েছেন"[সূরা আল-ফাতেহা, আয়াত: ৬-৭][3] বরং দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নি'আমত দীনের নি'আমত। দুনিয়া নি'আমত কি না, এ বিষয়ে আলেমদের দু'ধরণের অভিমত রয়েছে। সঠিক কথা হচ্ছে, এক বিবেচনায় নি'আমত, যদিও সকল বিবেচনায় নি'আমত নয়। পক্ষান্তরে দীনের নি'আমত, যেমন নেক আমল করা ও পাপ থেকে সুরক্ষার তাওফীক হাসিল করা সকল বিবেচনায় নি'আমত ও কল্যাণ, এটিই আহলে সুন্নত ওয়াল জামা'আতের নিকট সত্যিকার নি'আমত"।[4]

    মুদ্দাকথা: বান্দার ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় নি'আমত তাদেরকে আল্লাহর পরিচয় ও তার তাওহীদের জ্ঞান দেওয়া, তার রাসূলের অনুসরণ ও তার শরী'আত আঁকড়ে থাকার তাওফীক প্রদান করা। আর দুনিয়া তার পক্ষেই নি'আমত, যে তা সঠিকভাবে ব্যয় করে ও আল্লাহর ইবাদাতের জন্য খরচ করে। আল্লাহ ভালো জানেন।

    সূত্র:

    موقع الإسلام سؤال وجواب

    [1] জামেউল মাসায়েল: (৪/২৮৪)

    [2] মাজমুউল ফতোয়া: (১৯/১০০)

    [3] জামেউল মাসায়েল: (৪/২৮৪)

    [4] মুখতাসারুল ফতোয়া আল-মিসরিয়াহ: (২৬৮)