কিরান হজ আদায়ের জন্য কি হাদী সাথে নেওয়া বাধ্যতামূলক ?

বর্ণনা

এটি হজ্জে কিরান আদায় করা বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাতওয়া। যাতে হাদী বহন না করতে পারলেও যে কিরান হজ করা যাবে তা দলীল প্রমাণ সহকারে আলোচনা করা হয়েছে।

Download
এ পেইজ এর দায়িত্বশীলের কাছে টীকা লিখুন

সম্পূর্ণ বিবরণ

    কিরান হজ আদায়ের জন্য কি হাদী সাথে নেওয়া বাধ্যতামূলক?

    هل هناك تلازم بين القران وسوق الهدي؟

    < بنغالي – Bengali – বাংলা >

    শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

    الشيخ محمد صالح المنجد

    —™

    অনুবাদক: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    ترجمة: ذاكر الله أبو الخير

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    কিরান হজ আদায়ের জন্য কি হাদী সাথে নেওয়া বাধ্যতামূলক?

    প্রশ্ন: বর্তমানে হজ্জে কিরান করা সম্পূর্ণ অসম্ভব কিনা জানতে চাই? কারণ, বর্তমানে মানুষ সাধারণত বিমান বা জাহাজে হজ করতে যান ঠিকই কিন্তু হাদীর জন্তু সাথে নিয়ে যায় এমন কাউকে দেখা যায় না। (যারা কিরান হজ করে থাকেন তাদের দেখা যায় তারা উমরা করার পর মক্কা থেকেই হাদী ক্রয় করে থাকেন। অর্থাৎ হাদী সাথে না নেয়ার কারণে, কিরান করার সুযোগ তাদের হয় না। তাতে প্রতীয়মান হয়, কিরান হজ করার কোনো সুযোগ বর্তমানে নেই।) আমার জানা মতে কিরানকারীর জন্য ইহরামের শুরু থেকেই হাদী সাথে নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু যখনই সে কোনো হাদী বিমান বা জাহাজে বহন করল না, তার অর্থ হলো কিরানকারী পাওয়া গেল না। কেবল তামাত্তু বা ইফরাদ হজকারীই পাওয়া গেল। আমি যা বুঝেছি তা সঠিক কিনা জানাবেন?

    উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ

    হাদী সাথে নিয়ে যাওয়া ও কিরান হজ করার মধ্যে কোনো প্রকার বাধ্যবাধকতা নেই। যে ব্যক্তি হাদী সাথে নিয়ে যায় নি তার জন্য কিরান হজ করা সম্পূর্ণ বৈধ। অনুরূপভাবে যিনি কিরান হজকারী নয় তার জন্যও হাদী সাথে নিয়ে যাওয়া বৈধ। বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিরান হজকারী ছিলেন এবং তিনি হাদী সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন। এতে প্রমাণিত হয় কিরান হজকারীর জন্য হাদী সাথে বহন করা সুন্নাত, তবে কিরান হজকারীর জন্য হাদী সাথে নিয়ে আসা ওয়াজিব বা শর্ত নয়।

    শাইখ উসাইমীন রহ. বলেন, হাদী সাথে নিয়ে আসা সুন্নাত, তা ওয়াজিব নয়। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাথে করে হাদী নিয়ে এসেছেন। কিন্তু কাউকে হাদী সাথে নিয়ে আসার আদেশ দেন নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম সম্পর্কে মূলনীতি হলো, যে কর্ম তিনি ইবাদত হিসেবে করেছেন, অন্যকে করার জন্য নির্দেশ দেন নি তা করা সুন্নাত।

    কোনো কোনো আলিম কিরান হজকারীর জন্য হাদী নিয়ে আসাকে ওয়াজিব বলেছেন। কিন্তু তাদের এ কথাটি দুর্বল ও ভিত্তিহীন এবং তাদের কথাটি শর্তহীনভাবে তিন প্রকার হজের যে কোনো একটি হজ আদায় করা বৈধ হওয়া বিষয়ে প্রতিষ্ঠিত ঐকমত্যের (ইজমার) পরিপন্থী।

    শাইখ উসাইমীন রহ. বলেন, কোনো কোনো আলিম এ কথা বলেছেন যে, তামাত্তু করা ওয়াজিব, হাদী সাথে নিয়ে না আসা ছাড়া কিরান হজ করা বৈধ নয়। তাদের কথাও সঠিক নয়, তাদের কথা দুর্বল। বিশুদ্ধ কথা হলো, তিন প্রকারের হজ করাই বৈধ। তবে কোন প্রকারের হজ করা উত্তম এ বিষয়ে ইমামদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। সর্বোত্তম হলো, তামাত্তু করা, তারপর যিনি হাদী নিয়ে আসবেন তার জন্য কিরান করা, তারপর উত্তম হলো ইফরাদ হজ করা।

    মনে রাখবেন, হজ ও ওমরার ইহরাম একসাথে বাঁধাকে কিরান বলা হয়। অথবা ওমরার ইহরাম বাঁধার পর উমরা শুরু করার পূর্বে উমরার মধ্যে হজের অনুপ্রবেশকে কিরান বলা হয়। যেমনটি করেছিলে আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহা। এ ব্যক্তির হজের কর্মসমূহ হজ ও উমরা দু'টির জন্যই যথেষ্ট হবে, তবে তাকে অবশ্যই কুরবানী করতে হবে। তামাত্তুকারী ও তার মধ্যে পার্থক্য হলো, তামাত্তুকারী হজের মাসে ইহরাম বাঁধবে এবং উমরা আদায়ের পর হালাল হয়ে পুনরায় হজের ইহরাম বাঁধবে এবং কুরবানী করবে। ইফরাদ হজকারী শুধু হজের ইহরাম বেঁধে হজ করবে তাকে কোনো কুরবানী দিতে হবে না। সুতরাং যে ব্যক্তি হজ ও উমরার ইহরাম এক সাথে বাঁধবে সে কিরান হজকারী। যদিও সে হাদী বহন করেনি। তবে তাকে মক্কা থেকে ক্রয় করে হলেও অবশ্যই হাদী কুরবানী করতে হবে। যদি না পারে তাকে দশটি সাওম পালন করতে হবে।

    আল্লামা ইবন কুদামাহ রহ. বলেন, তামাত্তু, কিরান ও ইফরাদ হজের যে কোনো একটির ইহরাম বেঁধে হজ পালন করাতে কোনো অসুবিধা নেই। তামাত্তু হজকারী হজের মাসে মীকাত থেকে শুধু উমরার ইহরাম বাঁধবে এবং হালাল হয়ে একই বছর হজের সময় হজের ইহরাম বেঁধে হজ আদায় করবে। আর শুধু হজের ইহরাম বাঁধাকে ইফরাদ হজ বলে। হজ ও ওমরাকে একই ইহরামে একত্র করাকে কিরান বলা হয়। অথবা ওমরার ইহরাম বাঁধার পর উমরার তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে হজকে উমরার মধ্যে অনুপ্রবেশকে কিরান বলা হয়। সুতরাং এক ব্যক্তি যে কোনো হজের নিয়ত করবে তা সে করতে পারবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

    «خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فمنا من أهل بعمرة ومنا من أهل بحج وعمرة ومنا من أهل بحج».

    “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হজের উদ্দেশ্যে বের হলাম, আমাদের কেউ উমরা কেউ হজ ও উমরা আবার কেউ শুধু হজের ইহরাম বাঁধল।" (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৬২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১১)

    আহলে ইলমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, তামাত্তু, কিরান ও ইফরাদ হজের যে কোনো একটির ইহরাম বেঁধে হজ করতে পারবে। তবে কোনটি আদায় করা উত্তম এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে।

    সুতরাং উল্লিখিত আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট হয় যে, কিরান করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়নি। যদি কেউ কিরান করতে চায় তার জন্য অবশ্যই কিরান করার সুযোগ রয়েছে। তার জন্য হাদী সাথে নেওয়া শর্ত নয়। যারা এ কথা বলে, কিরানের জন্য হাদীর জন্তু বহন করা জরুরি তাদের কথা অগ্রহণযোগ্য। তাদের কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না। বর্তমানে হাদী সাথে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব হওয়ার কারণে কিরান করা নিষিদ্ধ হয়ে যায় নি। কারণ, হাদী নিয়ে যাওয়া সুন্নাত ওয়াজিব নয়। আল্লাহই ভালো জানেন।