নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে পবিত্রতা অর্জন করতেন (⮫)


 নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে পবিত্রতা অর্জন করতেন

كيفية طهور النبي صلى الله عليه وسلم

 লেখকের কথা

الْـحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِهِ وَصَحَابَتِهِ وَالتَّابِعِيْنَ لـَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ.

সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি সর্বজগতের রব। সালাত ও সালাম আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবীগণ ও তা কিয়ামত আগত সকল অনুসারীদের ওপর।

মূলত ধর্মীয় জ্ঞানার্জন সর্বোৎকৃষ্ট কর্ম ও সর্বাধিক কল্যাণকর কাজ।

মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّيْنِ».

“আল্লাহ তা‘আলা যার সাথে কল্যাণের ইচ্ছে করেন তাকেই তিনি ধর্মীয় জ্ঞান দান করেন। কারণ, সঠিক ধর্মীয় জ্ঞানের ওপরই একমাত্র পুণ্যময় কর্ম নির্ভরশীল”[1]

আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কল্যাণকর জ্ঞান ও পুণ্যময় কর্মসহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন,

﴿هُوَ ٱلَّذِيٓ أَرۡسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلۡهُدَىٰ وَدِينِ ٱلۡحَقِّ﴾ [التوبة: ٣٣]

“তিনিই আল্লাহ যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কল্যাণকর জ্ঞান ও পুণ্যময় কর্মসহ দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন”[সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩৩]

আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর নিকট জ্ঞান বর্ধনের প্রার্থনা করতে আদেশ করেন। তিনি বলেন,

﴿وَقُل رَّبِّ زِدۡنِي عِلۡمٗا﴾ [طه: ١١٤]

“আপনি বলুন! হে আমার রব! আপনি আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন”[সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ১১৪]

উক্ত আয়াত ধর্মীয় জ্ঞানার্জন সর্বোৎকৃষ্ট কর্ম হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শুধু জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যই দো‘আ করতে আদেশ করেন, অন্য কিছুর জন্যে নয়।

অন্য দিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষার মজলিসকে জান্নাতের বাগান এবং আলিম সম্প্রদায়কে নবীগণের ওয়ারিশ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এ কথা সবারই জানা যে, যে কোনো কাজ করার পূর্বে সর্বপ্রথম সে কাজটি বিশুদ্ধরূপে কীভাবে সম্পাদন করা সম্ভব সে পদ্ধতি অবশ্যই জেনে নিতে হয়। নতুবা সে কাজটি সঠিকভাবে আদায় করা তদুপরি অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়া কখনোই সম্ভবপর হয় না। যদি এ হয় সাধারণ কাজের কথা তাহলে কোনো ইবাদাত যার ওপর জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি ও জান্নাত লাভ নির্ভর করে তা কী করে ধর্মীয় জ্ঞান ছাড়া সঠিকভাবে সম্পাদন করা সম্ভবপর হবে। অবশ্যই তা অসম্ভব। অতএব, এ দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত:

১. যারা লাভজনক শিক্ষা ও পুণ্যময় কর্মের মাঝে সমন্বয় সাধন করতে পেরেছে। এরাই সত্যিকারার্থে নবী, চির সত্যবাদী, শহীদ ও পুণ্যবান লোকদের পথে উপনীত।

২. যারা লাভজনক শিক্ষা গ্রহণ করেছে ঠিকই; অথচ তদনুযায়ী আমল করছে না। এরাই হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার রোষানলে পতিত ইয়াহূদীদের একান্ত সহচর।

৩. যারা সঠিক জ্ঞান বহির্ভূত আমল করে থাকে। এরাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট খ্রিস্টানদের একান্ত অনুগামী।

উক্ত দলগুলোর কথা আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে উল্লেখ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧﴾ [الفاتحة: ٦،  ٧]

(হে আল্লাহ!) আপনি আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন। ওদের পথ নয় যাদের ওপর আপনি রোষান্বিত ও যারা পথভ্রষ্ট”[সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৬-৭]

সর্বজন শ্রদ্ধেয় যুগ সংস্কারক শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহ্‌হাব রহ. বলেন,

وَأَمَّا قَوْلُهُ تَعَالَى: ﴿غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ﴾ فَالْـمَغْضُوْبُ عَلَيْهِمْ هُمُ الْعُلَمَاءُ الَّذِيْنَ لَمْ يَعْمَلُوْا بِعِلْمِهِمْ، وَالضَّالُّوْنَ الْعَامِلُوْنَ بِلاَ عِلْمٍ ؛ فَالأَوَّلُ صِفَةُ الْيَهُوْدِ وَالثَّانِيْ صِفَةُ النَّصَارَى، وَكَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ إِذَا رَأَى فِيْ التَّفْسِيْرِ أَنَّ الْيَهُوْدَ مَغْضُوْبٌ عَلَيْهِمْ وَأَنَّ النَّصَارَى ضَالُّوْنَ ظَنَّ الْـجَاهِلُ أَنَّ ذَلِكَ مَخْصُوْصٌ بِهِمْ وَهُوَ يَقْرَأُ أَنَّ رَبَّهُ فَارِضٌ عَلَيْهِ أَنْ يَّدْعُوَ بِهَذَا الدُّعَاءِ وَيَتَعَوَّذَ مِنْ طَرِيْقِ أَهْلِ هَذِهِ الصِّفَاتِ !! فَيَا سُبْحَانَ اللهِ! كَيْفَ يُعَلِّمُهُ اللهُ وَيَخْتَارُ لَهُ وَيَفْرِضُ عَلَيْهِ أَنْ يَّدْعُوَ رَبَّهُ دَائِمًا مَعَ أَنَّهُ لاَ حَذَرَ عَلَيْهِ مِنْهُ وَلاَ يَتَصَوَّرُ أَنَّ فِعْلَهُ هَذَا هُوَ ظَنُّ السُّوْءِ بِاللهِ!.

“উক্ত আয়াতে “মাগযুব ‘আলাইহিম” বলতে সে সকল আলিমদেরকে বুঝানো হচ্ছে যারা অর্জিত জ্ঞান মাফিক আমল করে না। আর “যাল্লীন” বলতে জ্ঞান বিহীন আমলকারীদেরকে বুঝানো হচ্ছে। প্রথম বৈশিষ্ট্য ইয়াহূদীদের আর দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য খ্রিস্টানদের। অনেকেই যখন তাফসীর পড়ে বুঝতে পারেন যে, ইয়াহূদীরাই হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার রোষানলে পতিত আর খ্রিস্টানরাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট তখন তারা মূর্খতাবশতঃ এটাই ভাবেন যে, উক্ত বৈশিষ্ট্যদ্বয় শুধু ওদের মধ্যেই সীমিত; অথচ তাদের এতটুকুও বোধোদয় হয় না যে, তাই যদি হতো তা হলে আল্লাহ তা‘আলা কেন সালাতের প্রতিটি রাকাতে ওদের বৈশিষ্ট্যদ্বয় থেকে নিষ্কৃতি চাওয়া ফরয করে দিয়েছেন। সত্যিই তাদের এ রকম ধারণা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি চরম কুধারণার শামিল”

উক্ত আলোচনা থেকে যখন আমরা লাভজনক জ্ঞানের অপরিহার্যতা অনুধাবন করতে পেরেছি তখন আমাদের জানা উচিত যে, এ জাতীয় জ্ঞানের সঠিক সন্ধান কোথায় মেলা সম্ভব। সত্যিকারার্থে তা কুরআন ও হাদীসের পরতে পরতে লুক্কায়িত রয়েছে। তবে তা একমাত্র সহযোগী জ্ঞান ও হক্কানী আলিম সম্প্রদায়ের মাধ্যমেই অর্জন করতে হয়।

তবে একটি কথা বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে, আমলের ওপরই ইলমের প্রবৃদ্ধি নির্ভরশীল। যতই আমল করবে ততই জ্ঞান বাড়বে। বলা হয়, যে ব্যক্তি অর্জিত জ্ঞানানুযায়ী আমল করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে এমন কিছু জ্ঞান দান করবেন যা সে পূর্বে অর্জন করে নি।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱللَّهُۗ وَٱللَّهُ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٞ﴾ [البقرة: ٢٨٢]

“তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তিনি তোমাদেরকে জ্ঞান দান করবেন, তিনি সর্বজ্ঞ”[সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮২]

আল্লাহ তা‘আলা আমলকারী আলিমদের মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,

﴿يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ﴾ [المجادلة: ١١]

“আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ও জ্ঞানীদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। তিনি তোমাদের কর্ম সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত”[সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ১১]

আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞানী মুমিনদের মর্যাদা বর্ণনা করে ক্ষান্ত হননি বরং তিনি আমাদের কর্ম সম্পর্কে তাঁর পূর্ণাবগতির সংবাদ দিয়ে এটাই বুঝাতে চাচ্ছেন যে, শুধু জ্ঞানই যথেষ্ট নয় বরং আমলও একান্ত প্রয়োজনীয়। আর তা জ্ঞান ও ঈমানের ঘনিষ্ঠ সংমিশ্রণের মাধ্যমেই একমাত্র সম্ভব।

বিশুদ্ধ জ্ঞান সঞ্চার ও গ্রহণযোগ্য আমলের পথ সুগম করার মানসেই এ পুস্তিকাটির সংকলন। সাধ্যমত নির্ভুলতার প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এরপরও সচেতন পাঠকের চোখে নিশ্চিত কোনো ভুল ধরা পড়লে সরাসরি লেখকের কর্ণগোচর করলে অধিক খুশি হবো। এ পুস্তক পাঠে কারোর সামান্যটুকুও উপকার হলে তখনই আমার শ্রম সার্থক হবে।

نَسْأَلُ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنْ يُّمِدَّنَا وَإِيَّاكَ بِالْعِلْمِ النَّافِعِ، وَيُوَفِّقَنَا لِلْعَمَلِ الصَّالِحِ، كَمَا نَسْأَلُهُ سُبْحَانَهُ أَنْ يُّرِيَنَا الْحَقَّ حَقًّا وَيَرْزُقَنَا اتِّبَاعَهُ، وَيُرِيَنَا الْبَاطِلَ بَاطِلًا وَيَرْزُقَنَا اجْتِنَابَهُ، إِنَّهُ سَمِيْعٌ مُجِيْبٌ، وَصَلَّى اللهُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ .


 পূর্বাভাষ

আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনের পরপরই ইসলামের দ্বিতীয় রুকন ও বিধান হচ্ছে সালাত। একমাত্র সালাতই হচ্ছে মুসলিম ও অমুসলিমের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিধানকারী। ইসলামের বিশেষ স্তম্ভ। সর্বপ্রথম বস্তু যা দিয়েই কিয়ামতের দিবসে বান্দার হিসাব-নিকাশ শুরু করা হবে। তা বিশুদ্ধ তথা গ্রহণযোগ্য প্রমাণিত হলে বান্দার সকল আমলই গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হবে। নতুবা নয়। সালাতের বিষয়টি কুরআন মাজীদে অনেক জায়গায় অনেকভাবেই আলোচিত হয়েছে। কখনো সালাত প্রতিষ্ঠার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আবার কখনো এর মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। তেমনিভাবে কখনো এটির সাওয়াব ও পুণ্যের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। আবার কখনো মানুষের জীবনে আকস্মিকভাবে আগতসমূহ বিপদাপদ সহজভাবে মেনে নেওয়ার জন্য সালাত ও ধৈর্যের সহযোগিতা নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্যই এ সালাত সর্বদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরাত্মাকে সম্পূর্ণভাবে শীতল করে দিতো। তাই বলতে হয়, সালাত নবীদের ভূষণ ও নেককারদের অলঙ্কার, বান্দা ও প্রভুর মাঝে গভীর সংযোগ স্থাপনকারী, অপরাধ ও অপকর্ম থেকে হিফাযতকারী।

তবে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা থেকে যথাসাধ্য পবিত্রতা অর্জন ছাড়া কোনো সালাতই আল্লাহ তা‘আলার দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণেই পবিত্রতার ব্যাপারটি ইসলামী শরী‘আতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।   


 পবিত্রতা

আভিধানিক অর্থে পবিত্রতা বলতে দৃশ্য অদৃশ্য সকল ময়লা আবর্জনা থেকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন হওয়াকে বুঝানো হয়। শরী‘আতের পরিভাষায় পবিত্রতা বলতে যে কোনো ভাবে দৃশ্যমান ময়লা আবর্জনা সাফাই এবং মাটি বা পানি কর্তৃক বিধানগত অপবিত্রতা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়াকে বুঝানো হয়। মূলকথা, শরী‘আতের পরিভাষায় পবিত্রতা বলতে সাধারণত সালাত, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদতকর্ম সম্পাদনে প্রতিবন্ধক অপবিত্রতা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়াকে বুঝানো হয়।

 পবিত্রতার প্রকারভেদ:

শরী‘আতের পরিভাষায় পবিত্রতা দু’প্রকার : অদৃশ্য ও দৃশ্য পবিত্রতা।

অদৃশ্য পবিত্রতা : অদৃশ্য পবিত্রতা বলতে শির্ক ও সকল পাপ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়াকে বুঝানো হয়। শির্ক থেকে মুক্তি তাওহীদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এবং পাপ থেকে মুক্তি পুণ্যময় কর্মসম্পাদনের মাধ্যমেই সম্ভব। মূলতঃ অদৃশ্য পবিত্রতা দৃশ্যময় পবিত্রতার চাইতে অনেক অনেক গুণ বেশী গুরুত্বপূর্ণ। বরং বলতে হয় : শির্ক বিদ্যমান থাকাবস্থায় কোনোভাবেই শারীরিক পবিত্রতার্জন সম্ভবপর নয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّمَا ٱلۡمُشۡرِكُونَ نَجَسٞ﴾ [التوبة: ٢٨]

“মুশরিকরা একেবারেই অপবিত্র”[সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ২৮]

এর বিপরীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ الْـمُؤْمِنَ لاَيَنْجُسُ»

“ঈমানদার ব্যক্তি সত্যিকারার্থে কখনোই একেবারে অপবিত্র হতে পারে না”[2]

তাই প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য, নিজ অন্তরাত্মাকে শির্ক ও সন্দেহের পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করা। আর তা একমাত্র সম্ভব আল্লাহতে দৃঢ় বিশ্বাস, একনিষ্ঠতা ও তাওহীদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে। তেমনিভাবে নিজ অন্তঃকরণকে হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা, ফাঁকি-ধাপ্পাবাজি, দেমাগ-আত্মগরিমা, আত্মশ্লাঘা তথা আত্মপ্রশংসা এবং যে কোনো পুণ্যময় কর্ম অন্যকে দেখিয়ে বা শুনিয়ে করার প্রবণতা জাতীয় পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিজকে পরিচ্ছন্নকরণ প্রতিটি মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। আর তা একমাত্র সম্ভব সকল গুনাহ থেকে সত্যিকার তাওবার মাধ্যমে। ঈমানের দু’টি অঙ্গের এটিই হচ্ছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আর অন্যটি হচ্ছে বাহ্যিক পবিত্রতা।

দৃশ্যমান পবিত্রতা: দৃশ্যমান পবিত্রতা বলতে বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনকে বুঝানো হয়। আর এটিই হচ্ছে ঈমানের দ্বিতীয় অঙ্গ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الطُّهُوْرُ شَطْرُ الإِيْمَاْنِ»

“পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ”[3]

আর তা অবাহ্য নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের মানসে অযু, গোসল বা তায়াম্মুম এবং শরীর, পোষাক, সালাতের জায়গা ইত্যাদি থেকে বাহ্যিক নাপাকী দূরীকরণের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়ে থাকে।

 বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জনের দু’টি মাধ্যম : পানি ও মাটি

পানি কর্তৃক পবিত্রতা : পানি কর্তৃক পবিত্রতা অর্জনই হচ্ছে মৌলিক তথা সর্বপ্রধান। সাধারণতঃ আকাশ থেকে অবতীর্ণ এবং ভূমি থেকে উদ্গত অবিমিশ্র সকল পানি পবিত্র। তা সব ধরনের বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা দূরীকরণে সক্ষম। যদিও কোনো পবিত্র বস্তুর সংমিশ্রণে উহার রং, ঘ্রাণ বা স্বাদ বদলে যায়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ الْـمَاءَ طَهُوْرٌ لاَيُنَجِّسُهُ شَيْءٌ».

“নিশ্চয় পানি পবিত্র ও পবিত্রতা বিধানকারী। কোনো বস্তু উহাকে অপবিত্র করতে পারে না”[4]

 পানি সংক্রান্ত বিধান :

সালাতের জন্য পবিত্রতা অর্জন তথা অযু করা আবশ্যক। কারণ, অযু ব্যতীত সালাত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ تُقْبَلُ صَلاَةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ»

“অযু ভঙ্গকারীর সালাত গ্রহণযোগ্য হবে না যতক্ষণ না সে অযু করে”[5]

আর অযুর জন্য পবিত্র পানির প্রয়োজন। তাই পানি সংক্রান্ত বিধানই আলোচনায় অগ্রাধিকার পায়।

 পানির সাধারণ প্রকৃতি:

পানির সাধারণ প্রকৃতি হচ্ছে পবিত্রতা। তাই পুকুর, নদী, খাল, বিল, কূপ, সাগর, বিগলিত বরফ, বৃষ্টি ইত্যাদির পানি পবিত্র।

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, আমরা বুযা‘আ কূপের পানি দ্বারা অযু করতে পারবো কি? তা এমন কূপ যাতে অপবিত্র বস্তু নিক্ষেপ করা হয়। তখন তিনি বললেন:

«الْـمَاءُ طَهُوْرٌ لاَ يُنَجِّسُهُ شَيْءٌ»

“পানি বলতেই তা পবিত্র ও পবিত্রতা বিধানকারী। কোনো বস্তু একে অপবিত্র করতে পারে না”[6]

সমুদ্রের পানি সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«هُوَ الطَّهُوْرُ مَاؤُهُ، الْحِلُّ مَيْتَتُهُ»

“সমূদ্রের পানি পবিত্র ও পবিত্রতা বিধানকারী এবং উহার মৃত হালাল”[7]

তবে কোনো নাপাক বস্তু কর্তৃক পানির রং, ঘ্রাণ ও স্বাদের কোনো একটির পরিবর্তন ঘটলে তা নাপাক বলে পরিগণিত হবে। এ ব্যাপারে আলিমদের কোনো দ্বিমত নেই। 

মূলতঃ কূপ, নদী ইত্যাদির পানি সর্বদা এজন্য পবিত্র কেননা উহার পানি দু’ ক্বুল্লা তথা ২২৭ লিটার থেকে ও বেশি। এজন্যই কোনো নাপাক বস্তু উহাকে অপবিত্র করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا كَاْنَ الـْمَاْءُ قُلَّتَيْنِ لَمْ يَحْمِلِ الْـخَبَثَ»

“যদি পানি দু’ ক্বুল্লা তথা ২২৭ লিটার সমপরিমাণ হয় তাহলে উহা কোনো নাপাক বস্তু কর্তৃক অপবিত্র হবে না”[8]

তবে দু’ ক্বুল্লা থেকে কম হলে যে কোনো নাপাক বস্তু উহাকে অপবিত্র করে দেয়। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ يَغْتَسِلْ أَحَدُكُمْ فِي الـْمَاْءِ الدَّائِمِ وَهُوَجُنُبٌ»

“তোমাদের কেউ জুনুবী অবস্থায় (অর্থাৎ যখন গোসল ফরয হয়) স্থির পানিতে গোসল করবে না”[9]

তিনি আরো বলেন,

«لاَ يَبُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ فِي الـْمَاْءِ الدَّائِمِ الَّذِيْ لاَ يَجْرِيْ، ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيْهِ»

“তোমাদের কেউ স্থির পানিতে প্রস্রাব করবে না অতঃপর গোসল করবে না”[10]

তিনি আরো বলেন,

«لاَ يَبُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ فِي الـْمَاءِ الدَّائِمِ، ثُمَّ يَتَوَضَّأُ مِنْهُ»

“তোমাদের কেউ স্থির পানিতে প্রস্রাব করবে না অতঃপর অযু করবে না”[11]

 পানির প্রকারভেদ :

পানি আবার তিন প্রকার :

 ১. পবিত্র ও পবিত্রতা বিধানকারী পানি:

যে পানি নিজ প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের ওপর বহাল রয়েছে সে পানি পবিত্র ও পবিত্রতা বিধানকারী পানি। যেমন, বৃষ্টির পানি এবং ভূমি থেকে উদ্গত যে কোনো পানি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيُنَزِّلُ عَلَيۡكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ لِّيُطَهِّرَكُم بِهِ﴾ [الانفال: ١١]

“তিনি (আল্লাহ তা‘আলা) তোমাদেরকে পবিত্র করার জন্য আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন”[সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ১১]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমা ও কিরাতের মধ্যবর্তী স্থানে অনুচ্চস্বরে বলতেন:

«اللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْـمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ».

“হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহগুলো পানি, বরফ ও শিশির দিয়ে ধৌত করুন”[12]

এ প্রকারের পানি আবার তিন ভাগে বিভক্ত :

ক. যা ব্যবহার করা হারাম। তবে তা বিধানগত নাপাকী (অযু, গোসল কিংবা তায়াম্মুমের মাধ্যমে যা দূর করা হয়) দূর করতে সক্ষম না হলেও বাহ্য নাপাকী (মল, মূত্র, ঋতুস্রাব ইত্যাদি) দূর করতে সক্ষম। এ পানি এমন যা জায়েয পন্থায় সংগৃহীত নয়। যেমন, আত্মসাৎ বা বলপ্রয়োগে ছিনিয়ে আনা পানি।

জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐতিহাসিক ‘আরাফা ময়দানে বিদায়ী ভাষণে বলেন,

«إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِيْ شَهْرِكُمْ هَذَا، فِيْ بَلَدِكُمْ هَذَا».

“নিশ্চয় তোমাদের জান ও সম্পদ সংহার করা পরস্পরের ওপর হারাম যেমনিভাবে হারাম তোমাদের এ দিন, তোমাদের এ মাসে, তোমাদের এ শহরে”[13]

খ. যা বিকল্প থাকাবস্থায় ব্যবহার করা মাকরূহ। এ পানি এমন যা নাপাক জ্বালানি কাঠ বা খড়কুটো দিয়ে উত্তপ্ত করা হয়েছে। কারণ, এ জাতীয় পানি নাপাকীর সূক্ষ্ম সংমিশ্রণ থেকে মুক্ত নয়।

হাসান ইবন ‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيْبُكَ».

“সন্দেহজনক বস্তু পরিত্যাগ করে সংশয়হীন বস্তু অবলম্বন কর”[14]

তেমনিভাবে স্বচ্ছ ও নির্মল পানি থাকাবস্থায় কর্পূর, তৈল, আলকাতরা ইত্যাদি মিশ্রিত পানি ব্যবহার করা মাকরূহ।

গ. যা ব্যবহার করা সম্পূর্ণরূপে জায়েয। যেমন, পুকুর, নদী, খাল, বিল, কূপ, সাগর, বিগলিত বরফ, বৃষ্টি ইত্যাদির পানি। এ সম্পর্কীয় প্রমাণ ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

 ২. পবিত্র তবে পবিত্রতা বিধানকারী নয়:

যে পানির রং, স্বাদ বা ঘ্রাণ পবিত্র কোনো বস্তুর সংমিশ্রণে বদলে গিয়েছে। এমনকি অন্য নাম ধারণ করেছে। যেমন, শিরা, শুরুয়া ইত্যাদি। তা পবিত্র তবে পবিত্রতা বিধানের কাজে তা ব্যবহার করা যাবে না। এ ব্যাপারে সকল আলিমের ঐকমত্য রয়েছে।

 ৩. যা নাপাক ও ব্যবহার করা হারাম :

যে পানিতে নাপাকী পড়েছে; অথচ তা দু’ ক্বুল্লা থেকে কম অথবা দু’ ক্বুল্লা বা ততোধিক কিন্তু নাপাকী পড়ে এর রং, ঘ্রাণ বা স্বাদের কোনো একটির পরিবর্তন ঘটেছে। এমতাবস্থায় সে পানি নাপাক ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। এ সম্পর্কীয় প্রমাণাদি পূর্বোল্লিখিত হয়েছে। 

 মাটি কর্তৃক পবিত্রতা:

পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে পাক মাটি পানির স্থলাভিষিক্ত। পানি ব্যবহারে স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিলে অথবা অযু-গোসলের পানি যোগানো অসম্ভব প্রমাণিত হলে পানির পরিবর্তে পবিত্র মাটি কর্তৃক পবিত্রতা অর্জন করার শরঈ বিধান রয়েছে।

আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ الصَّعِيْدَ الطَّيِّبَ طَهُوْرُ الـْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الـْمَاءَ عَشْرَ سِنِيْنَ»

“নিশ্চয় পবিত্র মাটি মুসলিমদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের এক বিকল্প মাধ্যম। যদিও সে দশ বছর নাগাদ পানি না পায়”[15]

 নাপাকীর প্রকারভেদ ও তা থেকে পবিত্রতা অর্জন:

শরী‘আতের পরিভাষায় নাপাকী বলতে দূরীকরণ আবশ্যক এমন সকল ময়লা-আবর্জনাকে বুঝানো হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤﴾ [المدثر: ٤] 

“তোমার পোষাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখো”[সূরা আল-মুদ্দাস্‌সির, আয়াত: ৪]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَيَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡمَحِيضِۖ قُلۡ هُوَ أَذٗى فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ وَلَا تَقۡرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطۡهُرۡنَۖ فَإِذَا تَطَهَّرۡنَ فَأۡتُوهُنَّ مِنۡ حَيۡثُ أَمَرَكُمُ ٱللَّهُۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ ٢٢٢﴾ [البقرة: ٢٢٢]

“তারা (সাহাবীগণ) আপনাকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। আপনি বলুন! তা হচ্ছে অশুচিতা। অতএব, তোমরা ঋতুকালে স্ত্রীদের নিকট যাবে না ও তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না যতক্ষণ না তারা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায়। তবে যখন তারা (গোসল করে) ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হয়ে যাবে তখন তোমরা তাদের সাথে সে পথেই সহবাস করবে যে পথে সহবাস করা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন অর্থাৎ সম্মুখ পথে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাওবাকারী ও পবিত্রতা অন্বেষণকারীদের ভালোবাসেন”[সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২২]

 নাপাকীর প্রকারভেদ :

নিম্নে কিছু সংখ্যক নাপাকীর বর্ণনা তুলে ধরা হলো :

১. মানুষের মল-মূত্র :

মানুষের মল-মূত্র নাপাক।

‘আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 

«مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم بِقَبْرَيْنِ، فَقَالَ: إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَايُعَذَّبَانِ فِيْ كَبِيْرٍ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ يَمْشِيْ بِالنَّمِيْمَةِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি বললেন: কবর দু’টিতে শায়িত ব্যক্তিদ্বয়কে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে উভয়কে বড় কোনো গুনাহ’র কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের একজন প্রস্রাব থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্রতা অর্জন করতো না। আর অপরজন চোগলখোরী করত (একজনের কথা আরেক জনকে বলে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিত)[16]

 মল-মূত্র ত্যাগের শর‘ঈ নিয়ম :

 শৌচাগারে প্রবেশের সময় যে দো‘আ পড়তে হয় :

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মল-মূত্র ত্যাগের জন্য শৌচাগারে প্রবেশের ইচ্ছে করতেন তখন বলতেন :

«اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُبِكَ مِنَ الْـخُبْثِ وَالْـخَبَائِثِ»

“হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট অপবিত্র জিন্ন ও জিন্নীর (অনিষ্টতা) থেকে আশ্রয় চাচ্ছি”[17]

তিনি আরো বলেন, শৌচাগার হচ্ছে জিন্ন ও শয়তানের অবস্থানক্ষেত্র। তাই যখন তোমরা সেখানে যাবে তখন বলবে :

«أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الْـخُبْثِ وَالْـخَبَائِثِ».

“আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি অপবিত্র জিন্ন ও জিন্নীর (অনিষ্ট) থেকে”[18]

শৌচাগারে প্রবেশের পূর্বে بِسْمِ اللهِ টুকুও পড়ে নিবে।

‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«سَتْرُ مَا بَيْنَ أَعْيُنِ الْجِنِّ وَعَوْرَاتِ بَنِيْ آدَمَ، إِذَا دَخَلَ أَحَـدُهُمُ الـْخَلاَءَ؛ أَنْ يَقُوْلَ: بِسْمِ اللهِ».

“মানুষের সতর (যা ঢেকে রাখা ফরয) ও জিন্নদের চোখের মাঝে আড় হচ্ছে যখন মানুষ শৌচাগারে প্রবেশ করবে তখন বলবে, বিসমিল্লাহ”[19]

 শৌচাগার থেকে বের হওয়ার সময় যে দো‘আ পড়তে হয়:

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগার থেকে বের হতেন তখন বলতেন:

«غُفْرَانَكَ»

“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি”[20]

 মল-মূত্র ত্যাগ সম্পর্কীত মাসআলাসমূহ:

 ১. মল-মূত্র ত্যাগের সময় কিবলামুখী হওয়া অথবা কিবলাকে পেছন দেওয়া জায়েয নয়।

আবু আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلاَ تَسْتَقْبِلُوْا الْقِبْلَةَ وَلاَ تَسْتَدْبِرُوْهَا بِبَوْلٍ وَلاَ غَائِطٍ»

“তোমরা যখন প্রস্রাব বা পায়খানার জন্য শৌচাগারে প্রবেশ করবে তখন কিবলামুখী হবে না এবং কিবলাকে পশ্চাতে ও দেবে না”[21]

উক্ত হাদীস বর্ণনাকারী আবু আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা সিরিয়ায় সফর করলে সেখানের শৌচাগারগুলো কিবলামুখী দেখতে পাই। তখন আমরা আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে কিবলা ছেড়ে অন্য দিকে ফিরে ইস্তিঞ্জাকর্ম সম্পাদন করি।

 ২. গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা তথা মল-মূত্র পরিস্কার করা জায়েয নয়।

সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لَقَدْ نَهَانَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ لِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ، أَوْ نَسْتَنْجِيَ بِالْيَمِيْنِ، أَوْ نَسْتَنْجِيَ بِأَقَلَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ، أَوْ نَسْتَنْجِيَ بِرَجِيْعٍ أَوْ بِعَظْمٍ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কিবলামুখী হয়ে মল-মূত্র ত্যাগ, ডান হাতে ইস্তিঞ্জা, তিনটি ঢিলার কমে ইস্তিঞ্জা এবং গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে নিষেধ করেছেন”[22]

হাড় হচ্ছে জিন্নদের খাদ্য এবং মানবপালিত পশুর মল হচ্ছে জিন্নদের পশুর খাদ্য।

আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জিন্নরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের খাদ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করে তখন তিনি বলেন,

«لَكُمْ كُلُّ عَظْمٍ ذُكِرَ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ يَقَعُ فِيْ أَيْدِيْكُمْ أَوْفَرَ مَا يَكُوْنُ لَحْمًا، وَكُلُّ بَعْرَةٍ عَلَفٌ لِدَوَابِّكُمْ».

“আল্লাহ তা‘আলার নাম উচ্চারিত হয়েছে এমন প্রতিটি হাড় তোমাদের খাদ্য। তা তোমরা গোশতে পরিপূর্ণ পাবে। তেমনিভাবে উটের প্রতিটি মলখণ্ড তোমাদের পশুর খাদ্য। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

«فَلاَ تَسْتَنْجُوْا بِهِمَا، فَإِنَّهُمَا طَعَامُ إِخْوَانِكُمْ».

“অতএব তোমরা এ দু’টি বস্তু দিয়ে ইস্তিঞ্জা করবে না। কারণ, এগুলো তোমাদেরই ভাই জিন্নদের খাদ্য”[23]

 ৩. পথে-ঘাটে, বৈঠকখানা অথবা ছায়াবিশিষ্ট গাছের তলায় মল-মূত্র ত্যাগ করা জায়েয নয়।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اِتَّقُوْا اللَّعَّانَيْنِ، قَالُوْا: وَمَا اللَّعَّانَانِ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ: الَّذِيْ يَتَخَلَّى فِيْ طَرِيْقِ النَّاسِ أَوْ فِيْ ظِلِّهِمْ».

“তোমরা অভিশাপের দু’টি কারণ হতে দূরে থাকো। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম বললেন: অভিশাপের কারণ দু’টি কী? তিনি বললেন: পথে-ঘাটে অথবা ছায়াবিশিষ্ট গাছের তলায় মল-মূত্র ত্যাগ করা”[24]

মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اِتَّقُوْا الْـمَلاَعِنَ الثَّلاَثَةَ : اَلْبَرَازَ فِي الْمَوَارِدِ، وَقَارِعَةِ الطَّرِيْقِ، وَالظِّلِّ».

“তোমরা তিনটি অভিশাপের কারণ থেকে দূরে থাকো: নদী বা পুকুর ঘাট, পথের মধ্যভাগ ও ছায়ায় মল ত্যাগ করা থেকে”[25]

 ৪. ডান হাত দিয়ে লজ্জাস্থান স্পর্শ বা ইস্তিঞ্জা করা জায়েয নয়।

আবু ক্বাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفَّسْ فِيْ الإِنَـاءِ، وَإِذَا أَتَى الـْخَلاَءَ فَلاَ يَمَسَّ ذَكَرَهُ بِيَمِيْنِهِ، وَلاَ يَتَمَسَّحْ بِيَمِيْنِهِ».

“তোমাদের কেউ যেন পানি পান করার সময় পানপাত্রে নিশ্বাস ত্যাগ না করে। শৌচাগারে প্রবেশ করলে যেন ডান হাত দিয়ে নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে। এমনকি ডান হাত দিয়ে যেন ঢিলা-কুলুপও না করে”[26]

আবু ক্বাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَلاَ يَسْتَنْجِ بِيَمِيْنِهِ»

“এমনকি ডান হাত দিয়ে কেউ যেন ইস্তিঞ্জাও না করে”[27]

 ৫. ঢিলা-কুলুপ ব্যবহার করলে বেজোড় ব্যবহার করতে হয়।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَمَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوْتِرْ».

“ঢিলা-কুলুপ ব্যবহার করলে বেজোড় ব্যবহার করবে”[28]

 ৬. ঢিলা-কুলুপ ব্যবহার করলে কমপক্ষে তিনটি ব্যবহার করতে হয়।  

সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لَقَدْ نَهَانَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم أَنْ لاَ يَسْتَنْجِيَ أَحَدُنَا بِأَقَلَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ করেন, যেন আমাদের কেউ তিনটি ঢিলার কম ব্যবহার না করে”[29]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا ذَهَبَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْغَائِطِ فَلْيَذْهَبْ مَعَهُ بِثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ يَسْتَطِيْبُ بِهِنَّ فَإِنَّهَا تُجْزِئُ عَنْهُ».

“তোমাদের কেউ পায়খানা করতে গেলে সাথে তিনটি ঢিলা নিবে এবং তা দিয়ে ইস্তিঞ্জা করবে। কারণ, এ তিনটি ঢিলাই তার জন্য যথেষ্ট”(আবু দাউদ ৪০)

এ হাদীসটি ইস্তিঞ্জার সময় শুধু ঢিলা ব্যবহার যথেষ্ট হওয়ার প্রমাণ। 

 ৭. মল-মূত্র ত্যাগের সময় আপনাকে কেউ যেন দেখতে না পায়।

জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا أَرَادَ الْبَرَازَ اِنْطَلَقَ حَتَّى لاَ يَرَاهُ أَحَدٌ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মল-মূত্র ত্যাগের ইচ্ছে করতেন তখন এতদূর যেতেন যাতে কেউ তাঁকে দেখতে না পায়”[30]

৮. পানি, ঢিলা অথবা যে কোনো মর্যাদাহীন পবিত্র বস্তু দিয়ে ভালোভাবে ইস্তিঞ্জা করে নিবে যাতে উভয় দ্বার সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়ে যায়।

ইস্তিঞ্জা মূলতঃ তিন প্রকারের:

ক. প্রথমে ঢিলা অতঃপর পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা। প্রয়োজনে উভয়টি একসঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, তাতে অধিক পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয়। তবে এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা কখনোই ঠিক হবে না। যেমন, প্রস্রাবের পর ঢিলা হাতে নিয়ে শৌচাগারের বাইরে চল্লিশ কদম দেওয়া, লেফট-রাইট করা, বার বার উঠা-বসা করা, কেউ পানির পূর্বে ঢিলা ব্যবহার না করলে তাকে পশুর সাথে তুলনা ও ঘৃণা করা কিংবা কটু বাক্য বানে তাকে জর্জরিত করা ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যাপারটি এমন পর্যায়ে উপনীত হলে তা অবশ্যই বিদ‘আত বলে গণ্য হবে। কারণ, বিশুদ্ধ হাদীসে উভয়টি একসঙ্গে ব্যবহার করার কোনো প্রমাণ নেই।

খ. শুধু পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা।

গ. ইস্তিঞ্জার জন্য শুধু ঢিলা ব্যবহার করা।

শুধু ঢিলা দিয়ে ইস্তিঞ্জা করার প্রমাণ ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করার ব্যাপারে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ  صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُ الْخَلاَءَ، فَأَحْمِلُ أَنَا وَغُلاَمٌ نَحْوِيْ إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ وَعَنَـزَةً، فَيَسْتَنْجِيْ بِالْمَاءِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় গেলে আমি এবং আমার সমবয়সী একটি ছেলে এক লোটা পানি ও একটি হাতের লাঠি নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপেক্ষায় থাকতাম। অতঃপর তিনি পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন”[31]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ فِيْ أَهْلِ قُبَاءَ ﴿فِيهِ رِجَالٞ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُواْ﴾ [التوبة: ١٠٨]  قَالَ: كَانُوْا يَسْتَنْجُوْنَ بِالْـمَاءِ فَنَزَلَتْ فِيْهِمْ هَذِهِ الآيَةُ».

“উক্ত আয়াতটি “তাতে এমন লোক রয়েছে যারা অধিক পবিত্রতাকে পছন্দ করে” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০৮] কুবাবাসীদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন: তারা পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতো। অতএব, তাদের সম্পর্কেই উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে”।[32]

উক্ত হাদীস ইস্তিঞ্জার জন্য শুধু ঢিলা ব্যবহারের চাইতে কেবল পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা উত্তম হওয়ার প্রমাণ।

৯. প্রস্রাব করার সময় কোনো ব্যক্তি সালাম দিলে উত্তর দেওয়া যাবে না। এমতাবস্থায় কোনো কথা ও বলা যাবে না।

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَرَّ رَجُلٌ، وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَبُوْلُ، فَسَلَّمَ، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ».

“জনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল যখন তিনি প্রস্রাব করছিলেন। তখন সে তাঁকে সালাম দিলে তিনি কোনো উত্তর দেন নি”[33]

মুহাজির ইবন ক্বুনফুয রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাব করছিলেন এমতাবস্থায় তাঁর নিকট এসে তাঁকে সালাম করলে তিনি সালামের উত্তর দেন নি। তবে তিনি দ্রুত অযু সেরে তার নিকট এ বলে আপত্তি জানান :

«إِنِّيْ كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللهَ -عَزَّ وَ جَلَّ- إِلاَّ عَلَى طُهْرٍ أَوْ قَالَ: عَلَى طَهَارَةٍ».

“আমি অপবিত্র থাকাবস্থায় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা অপছন্দ করি”[34]

 ১০. গোসলখানায় প্রস্রাব করা নিষেধ।

আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফ্‌ফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ يَبُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ فِيْ مُسْتَحَمِّهِ، ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيْهِ»

“তোমাদের কেউ গোসলখানায় প্রস্রাব অতঃপর গোসল করবে না”[35]

 ১১. অযু ও ইস্তিঞ্জার লোটা ভিন্ন হওয়া উচিত।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَاْنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا أَتَى الْخَلاَءَ، أَتَيْتُهُ بِمَاءٍ فِيْ تَوْرٍ أَوْ رَكْوَةٍ، فَاسْتَنْجَى، ثُمَّ مَسَحَ يَدَهُ عَلَى الأَرْضِ، ثُمَّ أَتَيْتُهُ بِإِنَاءٍ آخَرَ فَتَوَضَّأَ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শৌচাগারে যেতেন তখন আমি জগ বা লোটায় পানি নিয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করতাম। অতঃপর তিনি তা দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন। এরপর তিনি জমিনে হাত ঘঁষে নিতেন। পুনরায় আমি আরেকটি লোটা পানি নিয়ে আসলে তিনি তা দিয়ে অযু করতেন”[36]

১২. মল-মূত্র ত্যাগ বা ভোজনের বেশী প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তা প্রথমে সেরে নিবে। অতঃপর সালাত আদায় করবে। কারণ, তা প্রথমে না সেরে সালাত আদায় করতে গেলে সালাতে মন স্থির হবে না বরং অস্থিরতায় ভুগতে হবে।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ صَلاَةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ، وَلاَ هُوَ يُدَافِعُهُ الأَخْبَثَانِ»

“খাবার উপস্থিত (প্রয়োজনও রয়েছে) এবং মল-মূত্রের চাপও রয়েছে এমতাবস্থায় সালাত আদায় হবে না”[37]

 ১৩. মল-মূত্র ত্যাগের সময় সম্পূর্ণরূপে বসার প্রস্তুতি নিলেই কাপড় খুলবে; তার পূর্বে নয়।

আনাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا أَرَادَ الْحَاجَةَ، لَمْ يَرْفَعْ ثَوْبَهُ حَتَّى يَدْنُوَ مِنَ الأَرْضِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মল-মূত্র ত্যাগের ইচ্ছে করলে ভূমির নিকটবর্তী হলেই কাপড় খুলতেন। নইলে নয়”[38]

 ১৪. স্থির পানিতে প্রস্রাব করা নিষেধ।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ يَبُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ فِي الـْمَاءِ الدَّائِمِ الَّذِيْ لاَ يَجْرِيْ ثُمَّ يَغْتَسِلُ مِنْهُ».

“তোমাদের কেউ স্থির পানিতে প্রস্রাব অতঃপর গোসল করবে না”[39]

 ১৫. ইস্তিঞ্জা করার পর হাতখানা মাটি দিয়ে ঘষে অতঃপর ধুয়ে নিবে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَضَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم حَاجَتَهُ ثُمَّ اسْتَنْجَى مِنْ تَوْرٍ، ثُمَّ دَلَكَ يَدَهُ بِالأَرْضِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মল-মূত্র ত্যাগ করে এক লোটা পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করেছেন। অতঃপর মাটি দিয়ে নিজের হাত খানা ঘঁষে নিয়েছেন”[40]

১৬. বসার স্থান চাইতে তুলনামূলক নরম ও নিচু স্থানে প্রস্রাব করবে। যাতে প্রস্রাবের ছিঁটা-ফোঁটা নিজের শরীরে না পড়ে।

 প্রস্রাবের ছিঁটা থেকে বাঁচার কঠিন নির্দেশ:

‘আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 

«مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم بِقَبْرَيْنِ، فَقَالَ: إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَايُعَذَّبَانِ فِيْ كَبِيْرٍ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ يَمْشِيْ بِالنَّمِيْمَةِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি বললেন: কবর দু’টিতে শায়িত ব্যক্তিদ্বয়কে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে উভয়কে বড় কোনো গুনাহ’র কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের একজন প্রস্রাব থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্রতা অর্জন করতো না। আর অপরজন চোগলখোরী করতো (একজনের কথা আরেক জনকে বলে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিত)[41]

উক্ত হাদীস থেকে এটাই বুঝা গেলো যে, প্রস্রাবের ছিঁটা থেকে কঠিন সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাই যারা প্রস্রাব করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করে না, নিজের পোষাক-পরিচ্ছদকে প্রস্রাবের ছিঁটা থেকে রক্ষা করে না, এমনকি প্রস্রাবের পর পানি না পেলে ডেলা-কুলুপ, টিসু ইত্যাদিও ব্যবহার করে না তাদের জানা উচিত, প্রস্রাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন না করা একদা কবরে শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 ১৭. বিনা প্রয়োজনে বাটি বা পাত্রে প্রস্রাব করা নিষেধ।

তবে কোনো প্রয়োজন থাকলে তা করা যেতে পারে।

উমাইমাহ বিনতে রুক্বাইক্বা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَدَحٌ مِنْ عِيْدَانٍ تَحْتَ سَرِيْرِهِ، يَبُوْلُ فِيْهِ بِاللَّيْلِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাটের নিচে কাঠের একটি পেয়ালা ছিল যাতে তিনি রাত্রিবেলায় প্রস্রাব করতেন”[42]

 ১৮. মুসলিমদের কবরস্থানে মল-মূত্র ত্যাগ করা নিষেধ।

উক্ববাহ ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَا أُبَالِيْ أَوَسَطَ الْقُبُوْرِ قَضَيْتُ حَاجَتِيْ أَوْ وَسَطَ السُّوْقِ».

“আমার মতে কবরস্থানের মাঝখানে ও বাজারের মধ্যভাগে মল-মূত্র ত্যাগে কোনো পার্থক্য নেই। (মনুষ্যত্বের বিবেচনায় দু’টোই অপরাধ)[43]

 মল-মূত্র থেকে পবিত্রতা :

 ভূমির পবিত্রতা :

বিছানা, ঘর বা মসজিদের কোনো অংশে প্রস্রাব অথবা অন্য কোনো নাপাক (যা দৃশ্যমান) দেখা গেলে প্রয়োজন পরিমাণ পানি ঢেলে তা দূরীভুত করবে। একদা জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি মসজিদে নববীতে প্রস্রাব করলে সাহাবারা তার উপর ক্ষেপে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বললেন:

«دَعُوْهُ وَهَرِيْقُوْا عَلَى بَوْلِهِ سَجْلاً مِنْ مَاءٍ أَوْ ذَنُوْبًا مِنْ مَاءٍ فَإِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِيْنَ وَلَمْ تُبْعَثُوْا مُعَسِّرِيْنَ».

“তোমরা তাকে ছেড়ে দাও, তাকে বাধা দিও না। তবে প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কারণ, তোমাদেরকে সহজতার জন্যে পাঠানো হয়েছে কঠোরতার জন্যে নয়”[44]

তিনি ওকে ডেকে আরো বললেন:                                       

«إِنَّ هَذِهِ الْـمَسَاجِدَ لاَ تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ وَلاَ الْقَذَرِ، إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّوَجَلَّ، وَالصَّلاَةِ، وَقِرَاءَ ةِ الْقُرْآنِ».

“এ মসজিদগুলো প্রস্রাব ও ময়লা করার জন্যে নয়। তা হচ্ছে আল্লাহর যিকির, সালাত ও কুরআন পড়ার স্থান”[45]

 নাপাক কাপড়ের পবিত্রতা:

পোশাক-পরিচ্ছদে নাপাক লেগে গেলে তা যদি দৃশ্যমান হয় প্রথমে তা হাত দিয়ে ঘষে (শুষ্ক হলে) অথবা যে কোনো পন্থায় (শুষ্ক না হলে) পরিষ্কার করে নিবে। অতঃপর তা পানি দিয়ে ধুয়ে নিবে।

আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঋতুস্রাব দ্বারা কলুষিত পোষাকের পবিত্রতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন:

«إِذَا أَصَابَ ثَوْبَ إِحْدَاكُنَّ الدَّمُ مِنَ الْحَيْضَةِ فَلْتَقْرُصْهُ، ثُمَّ لْتَنْضَحْهُ بِمَاءٍ، ثُمَّ لْتُصَلِّيْ فِيْهِ».

“তোমাদের কারোর পোষাক ঋতুস্রাব দ্বারা কলুষিত হলে প্রথমে তা হাত দিয়ে ঘষে নিবে। অতঃপর তা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই তাতে সালাত পড়া যাবে”[46]

 শাড়ীর নিম্নাংশের পবিত্রতা:

মহিলাদের বোরকা, পাজামা ও শাড়ীর নিম্নাংশে কোনো নাপাকী লেগে গেলে হাঁটার সময় পরবর্তী মাটির ঘর্ষণ তা পবিত্র করে দিবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,

«يُطَهِّرُهُ مَا بَعْدَهُ».

“পরবর্তী ধুলোমাটির মিশ্রণ উহাকে পবিত্র করে দিবে”[47]

 দুগ্ধপোষ্য শিশুর প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা:

যে বাচ্চার খাদ্য শুধুমাত্র মায়ের দুধ সে ছেলে হলে এবং কোনো কাপড়ে প্রস্রাব করলে তার প্রস্রাবের উপর পানির ছিঁটা দিলেই কাপড়টি পাক হয়ে যাবে। আর সে মেয়ে হলে তা ধুয়ে নিতে হবে।

উম্মে ক্বাইস রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَتَيْتُ بِابْنٍ لِيْ صَغِيْرٍ لَمْ يَأْكُلِ الطَّعَامَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَأَجْلَسَهُ فِيْ حِجْرِهِ فَبَالَ عَلَىْ ثَوْبِهِ فَدَعَا بِمَاءٍ فَنَضَحَهُ وَلَمْ يَغْسِلْهُ».

“আমি আমার একটি দুগ্ধপোষ্য শিশু নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাকে কোলে উঠিয়ে নেন। অতঃপর শিশুটি তাঁর কোলে প্রস্রাব করে দেয়। তখন তিনি পানি আনতে বললেন। পানি আনা হলে তিনি তা কাপড়ে ছিঁটিয়ে দেন। তবে তিনি কাপড় ধোননি”[48]

লুবাবাহ বিনতে হারিস রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَالَ الْـحُسَيْنُ بْنُ عَلِيٍّ فِيْ حِجْرِ النَّبِىِّ  صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَعْطِنِيْ ثَوْبَكَ وَالْبَسْ ثَوْبًا غَيْرَهُ، فَقَالَ: إِنَّمَا يُنْضَحُ مِنْ بَوْلِ الذَّكَرِ وَيُغْسَلُ مِنْ بَوْلِ الأُنْثَى».

“একদা হুসাইন ইবন ‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোলে প্রস্রাব করে দিলে আমি তাঁকে বললাম: ময়লা (প্রস্রাবকৃত) কাপড়টি আমাকে দিন এবং আপনি অন্য একটি কাপড় পরে নিন। তখন তিনি বললেন: দুগ্ধপোষ্য ছেলের প্রস্রাব পানি ছিঁটিয়ে দিলেই পাক হয়ে যায়। আর মেয়েদের প্রস্রাব ধুয়ে নিতে হয়”[49]

‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«يُغْسَلُ مِنْ بَوْلِ الْـجَارِيَةِ، وَيُنْضَحُ مِنْ بَوْلِ الْغُلاَمِ مَا لَمْ يَطْعَمْ».

“মেয়েদের প্রস্রাব ধুয়ে নিতে হবে। আর দুগ্ধপোষ্য ছেলের প্রস্রাব পানি ছিঁটিয়ে দিলেই চলবে”[50]

 নাপাক জুতার পবিত্রতা:

জুতো-সেন্ডেলে নাপাকী লেগে গেলে ওগুলোকে মাটিতে ভালোভাবে ঘষে নিলেই চলবে, যাতে নাপাক দূর হয়ে যায়।  

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ إِلَى الـْمَسْجِدِ فَلْيَنْظُـرْ، فَإِنْ رَأَى فِيْ نَعْلَيْهِ قَذَرًا أَوْ أَذًى فَلْيَمْسَحْهُ، وَلْيُصَلِّ فِيْهِمَا».

“তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করতে চাইলে জুতায় ময়লা (নাপাকী) আছে কিনা তা সর্বপ্রথম দেখে নিবে। তাতে ময়লা পরিলক্ষিত হলে ঘষে-মুছে পরিষ্কার করে নিবে এবং উক্ত জুতা পরাবস্থায়ই সালাত আদায় করবে”[51]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«إِذَا وَطِئَ أَحَدُكُمْ بِنَعْلِهِ الأَذَى ؛ فَإِنَّ التُّرَابَ لَهُ طَهُوْرٌ».

“তোমাদের কেউ নিজ জুতা দিয়ে ময়লা (নাপাকী) মাড়িয়ে গেলে পরবর্তী পবিত্র মাটির ঘর্ষণ উহাকে পবিত্র করে দিবে”[52]

 ২. কুকুরের উচ্ছিষ্ট :

 কুকুর কর্তৃক অপবিত্র থালা-বাসন ইত্যাদির পবিত্রতা :  

কুকুর কোনো থালা-বাসনে মুখস্থাপন করলে ওগুলোকে সাত বার ধুয়ে নিবে এবং উহার প্রথম বার মাটি দিয়ে ঘঁষে নিবে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«طُهُوْرُ إِنَاء أَحَدِكُمْ إِذَا وَلَغَ فِيْهِ الْكَلْبُ أَنْ يَغْسِلَهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ أُوْلاَهُنَّ بِالتُّرَابِ».

“তোমাদের কারোর প্লেটে কুকুর মুখস্থাপন করলে উহাকে পবিত্র করতে হলে সাত বার পানি দিয়ে ধুয়ে নিবে এবং উহার প্রথম বার মাটি দিয়ে ঘষে নিবে”[53]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«إِذَا وَلَغَ الْكَلْبُ فِيْ إِنَاءِ أَحَدِكُمْ فَلْيُرِقْهُ، ثُمَّ لْيَغْسِلْهُ سَبْعَ مِرَارٍ».

“তোমাদের কারোর পানপাত্রে কুকুর মুখস্থাপন করলে তাতে খাদ্য পানীয় যা কিছু রয়েছে উহার সবটুকুই ঢেলে দিবে। অতঃপর উহাকে সাতবার ধুয়ে নিবে”[54]

 ৩. প্রবাহিত রক্ত, শুকরের গোশত ও মৃত জন্তু:

 উপরোক্ত বস্তুগুলো নাপাক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُل لَّآ أَجِدُ فِي مَآ أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَىٰ طَاعِمٖ يَطۡعَمُهُۥٓ إِلَّآ أَن يَكُونَ مَيۡتَةً أَوۡ دَمٗا مَّسۡفُوحًا أَوۡ لَحۡمَ خِنزِيرٖ فَإِنَّهُۥ رِجۡسٌ أَوۡ فِسۡقًا أُهِلَّ لِغَيۡرِ ٱللَّهِ بِهِ﴾ [الانعام: ١٤٥]

“আপনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলে দিন! আমার নিকট অহীর মাধ্যমে প্রেরিত বিধানের মধ্যে আহারকারীর ওপর কোনো বস্তু হারাম করা হয়েছে এমন পাই নি। তবে শুধু মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত ও শূকরের গোশত যা হারাম করা হয়েছে। কেননা, তা নিশ্চিত নাপাক ও শরী‘আত গর্হিত বস্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে”[সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৪৫]

তবে মৃত মাছ ও পঙ্গপাল পবিত্র ও তা খাওয়া জায়েয।

‘আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أُحِلَّتْ لَنَا مَيْتَتَانِ وَدَمَانِ ؛ فَأَمَّا الْـمَيْتَتَانِ فَالْحُوْتُ وَالْجَرَادُ، وَأَمَّا الدَّمَانِ فَالْكَبِدُ وَالطِّحَالُ».

“আমাদের জন্য দু’টি মৃত জীব ও দু’ধরণের রক্ত হালাল করে দেওয়া হয়েছে। মৃত দু’টি হচ্ছে  মাছ ও পঙ্গপাল এবং রক্তগুলো হচ্ছে কলিজা ও তিল্লী”[55]

এ ছাড়া সকল মৃত জীব নাপাক। তবে কোনো মুসলমান সে কখনোই এমনভাবে নাপাক হতে পারে না যে নাপাকী দূরীকরণ কোনোভাবেই সম্ভবপর নয়।

আবু হুরায়রা ও হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ الْـمُسْلِمَ لاَ يَنْجُسُ».

“প্রকৃতপক্ষে মুসলিম কখনোই নাপাক হয় না”[56]

যে জীবের রক্ত বহমান নয় সে ধরনের জীব প্রাণত্যাগ করলে তা নাপাক হয় না।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

»إِذَا وَقَعَ الذُّبَابُ فِيْ شَرَابِ أَحَدِكُمْ فَلْيَغْمِسْهُ ثُمَّ لْيَنْزِعْهُ، فَإِنَّ فِيْ إِحْدَى جَنَاحَيْهِ دَاءً وَالأُخْرَى شِفَاءً».

“তোমাদের কারোর খাদ্যপানীয়তে মাছি বসলে ওকে তাতে ডুবিয়ে অতঃপর উঠিয়ে নিবে। কারণ, তার একটি ডানায় রয়েছে রোগ এবং অপরটিতে রয়েছে উপশম”[57]

 মৃত পশুর চামড়া সংক্রান্ত বিধান:

যে কোনো মৃত পশুর চামড়া (যা জীবিতাবস্থায় যবাই করে খাওয়া হালাল) দাবাগত (শুকিয়ে বা কোনো মেডিসিন ব্যবহার করে দূর্গন্ধমু্ক্ত করে নেওয়া) করে নিলে তা পাক হয়ে যাবে।

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 

«تُصُدِّقَ عَلَىْ مَوْلاَةٍ لـِمَيْمُوْنَةَ بِشَاةٍ فَمَاتَتْ، فَمَرَّ بِهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَقَالَ : هَلاَّ أَخَذْتُمْ إِهَابَهَا فَدَبَغْتُمُوْهُ، فَانْتَفَعْتُمْ بِهِ ؟ فَقَالُوْا: إِنَّهَا مَيْتَةٌ فَقَالَ : إِنَّمَا حَرُمَ أَكْلُهَا».

 “মাইমুনা রাদিয়াল্লাহু আনহার জনৈকা আযাদকৃত বান্দীকে একটি ছাগল ছাদকা দেওয়া হলে তা মরে যায়। ইতোমধ্যে ছাগলটির পাশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন: তোমরা যদি এর চামড়া দাবাগত করে কাজে লাগাতে। সাহাবীগণ বললেন: ছাগলটি তো মৃত। তিনি বললেন: মৃত ছাগল খাওয়া হারাম। তবে তার চামড়া দাবাগত করে যে কোনো কাজে লাগানো জায়েয”[58]

উম্মুল মুমিনীন সাওদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَاتَتْ لَنَا شَاةٌ فَدَبَغْنَا مَسْكَهَا ثُمَّ مَازِلْنَا نَنْبِذُ فِيْهِ حَتَّى صَارَ شَنًّا».

“আমাদের একটি ছাগল মরে গেলে ওর চামড়া দাবাগত করে আমরা একটি মশক বানিয়ে নিয়েছিলাম। যাতে আমরা নাবীয (খেজুর পানিতে ভিজিয়ে যা তৈরি করা হয়) তৈরি করতাম। এমনকি মশকটি পুরাতন হয়ে যায়”[59]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেনঃ

«إِذَا دُبِغَ الإِهَابُ فَقَدْ طَهُرَ».

“কোনো কাঁচা চামড়া দাবাগত করা হলে তা পবিত্র হয়ে যায়”[60]

উপরোক্ত হাদীসটি শূকর ব্যতীত যবেহ করে খাওয়া হালাল বা হারাম যে কোনো ধরণের পশুর চামড়া দাবাগত করলে পবিত্র হয়ে যায় তা প্রমাণ করে।

তবে যে পশুরা নিজ শিকারকে ছিঁড়ে-ফুঁড়ে খায় ওদের চামড়া কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না।

আবুল মালীহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,  

«نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَنْ جُلُوْدِ السِّبَاعِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিঁড়ে-ফুঁড়ে খায় এমন পশুদের চামড়া ব্যবহার করতে নিষেধ করেন”[61]

মৃত পশুপাখির কেশর, পশম, পালক ইত্যাদি পবিত্র।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِنۡ أَصۡوَافِهَا وَأَوۡبَارِهَا وَأَشۡعَارِهَآ أَثَٰثٗا وَمَتَٰعًا إِلَىٰ حِينٖ﴾ [النحل: ٨٠]

“তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পশুদের পশম, লোম ও কেশ হতে ক্ষণকালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার উপকরণ”[সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৮০]

 ৪. বীর্য:

বীর্য বলতে উত্তেজনাসহ লিঙ্গাগ্র দিয়ে লাফিয়ে পড়া শুভ্র বর্ণের গাঢ় পানিকে বুঝানো হয়। তা নির্গত হলে গোসল ফরয হয়ে যায়। বীর্য পবিত্র বা অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে আলিমদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে বীর্য পবিত্র। এতদসত্ত্বেও বীর্য ভেজা হলে তা ধোয়া এবং শুষ্ক হলে তা খুঁটিয়ে ফেলা মুস্তাহাব।  

একদা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার মেহমানখানায় জনৈক ব্যক্তি রাত্রিযাপন করলে তার স্বপ্নদোষ হয়ে যায়। অতঃপর সে নিজের বীর্যযুক্ত পোশাক ধুয়ে ফেলা লজ্জা ও ঝামেলাবোধ করছিল। এমতাবস্থায় ব্যাপারটি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কর্ণগত হলে তিনি তাকে বললেন:

«إِنَّمَا كَانَ يُجْزِئُكَ إِنْ رَأَيْتَهُ أَنْ تَغْسِلَ مَكَانَهُ، فَإِنْ لَمْ تَرَ نَضَحْتَ حَوْلَهُ، وَلَقَدْ رَأَيْتُنِيْ أَفْرُكُهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَرْكًا، فَيُصَلِّيْ فِيْهِ».

“তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যেখানে বীর্য দেখবে সে জায়গাটুকু ধুয়ে ফেলবে। আর বীর্য দেখা না গেলে সন্দেহজনক জায়গার আশপাশে পানি ছিঁটিয়ে দিবে। নিশ্চয় আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাপড় থেকে বীর্য খুঁটে ফেলতাম। অতঃপর তিনি তা পরেই সালাত পড়তে যেতেন।”[62]

অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছেঃ

«لَقَدْ رَأَيْتُنِيْ وَإِنِّيْ لَأَحُكُّهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَابِسًا بِظُفُرِيْ».

“নিশ্চয় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাপড় থেকে নিজের নখ দিয়ে শুষ্ক বীর্য খুঁটে ফেলতাম”[63]

তিনি আরো বলেন,

«كُنْتُ أَغْسِلُ الْجَنَابَةَ مِنْ ثَوْبِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَيَخْرُجُ إِلَى الصَّلاَةِ، وَإِنَّ بُقَعَ الْـمَاءِ فِيْ ثَوْبِهِ».

“আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাপড় থেকে বীর্য ধুয়ে ফেলতাম। অতঃপর তিনি তা পরে সালাত পড়তে যেতেন; অথচ তাঁর কাপড়ে তখনো পানির দাগ পরিলক্ষিত হতো”[64]

 ৫. মযী :

মযী বলতে সঙ্গমচিন্তা বা উত্তেজনাকর যৌন মেলামেশার সময় লিঙ্গাগ্র দিয়ে নির্গত আঠালো পানিকে বুঝানো হয়। তা অপবিত্র।

 মযী বের হলে গোসল করতে হয় না:

শরীরে কোনো ধরণের যৌন উত্তেজনা অনুভব করলে লিঙ্গাগ্র দিয়ে অল্পসামান্য আঠালো পানি বের হওয়া একেবারেই স্বাভাবিক। তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যে কোনো সুস্থ পুরুষের পক্ষেই অসম্ভব। তাই ইসলামী শরী‘আত তা থেকে পবিত্রতার ব্যাপারে তেমন কোনো কঠোরতা প্রদর্শন করে নি। সুতরাং কারোর মযী বের হলে শুধু লিঙ্গ ও অণ্ডকোষ ধুয়ে অযু করে নিলেই চলবে। তবে শরীরের কোথাও লেগে গেলে তা ধুয়ে নিতে হবে।

‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার খুব মযী বের হতো। তবে আমি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করতাম। কারণ, তাঁর কন্যা ফাতিমা আমার বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। তাই আমি মিকদাদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জেনে নিতে অনুরোধ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন:

«يَغْسِلُ ذَكَرَهُ وَيَتَوَضَّأُ»

“লিঙ্গ ধুয়ে অযু করে নিবে”[65]

 অন্য আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে:

«لِيَغْسِلْ ذَكَرَهُ وَأُنْثِيَيْهِ وَلْيَتَوَضَّأْ وُضُوْءَ هُ لِلصَّلاَةِ»

“লিঙ্গ ও অণ্ডকোষ ধুয়ে নিবে এবং সালাতের অযুর ন্যায় অযু করে নিবে”[66]

লুঙ্গি, পাজামা ও প্যান্টের কোথাও মযী লেগে গেলে এক চিল্লু পানি হাতে নিয়ে সেখানে ছিঁটিয়ে দিলেই চলবে। তবে তা ধোয়াই সর্বোত্তম। কারণ, মযী তো নাপাকই। পাক তো আর নয়।

সাহল ইবন হুনাইফ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন:

«فَكَيْفَ بِمَا يُصِيْبُ ثَوْبِيْ مِنْهُ ؟ قَالَ: يَكْفِيْكَ بِأَنْ تَأْخُذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ، فَتَنْضَحَ بِهَا مِنْ ثَوْبِكَ حَيْثُ تَرَى أَنَّهُ أَصَابَهُ».

“মযী কাপড়ে লেগে গেলে কি করতে হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এক কোষ বা চিল্লু পানি নিয়ে কাপড়ের যেখানে মযী লেগেছে ছিঁটিয়ে দিবে। তাতেই যথেষ্ট হয়ে যাবে”[67]

উক্ত হাদীসে “নাযহুন” শব্দটি হালকা ধোয়ার অর্থে ব্যবহৃত হওয়া অযৌক্তিক বা অস্বাভাবিক নয়। তাই ধোয়াই সর্বোত্তম।

 ৬. অদী:

অদী বলতে সাধারণত প্রস্রাবের আগে-পরে লিঙ্গাগ্র দিয়ে নির্গত শুভ্র বর্ণের গাঢ় ঘোলাটে পানিকেই বুঝানো হয়। তা থেকে পবিত্রতার জন্য লিঙ্গ ধুয়ে অযু করে নিলেই চলবে। তবে শরীরের কোনো জায়গায় অদী লেগে গেলে তাও ধুয়ে নিতে হবে।

 মনী, মযী ও অদীর মধ্যে পার্থক্য:

মযী হচ্ছে উত্তেজনার সময় লিঙ্গাগ্র দিয়ে নির্গত আঠালো পানি। আর মনী হচ্ছে; চরম উত্তেজনাসহ লিঙ্গাগ্র দিয়ে লাফিড়ে পড়া শুভ্র বর্ণের গাঢ় পানি, যা মানব সৃষ্টির মৌলিক পদার্থ। এতে গোসল ফরয হয়। তেমনিভাবে অদী হচ্ছে প্রস্রাবের আগে-পরে নির্গত শুভ্র বর্ণের ঘোলাটে পানি। এতে গোসল ফরয হয় না।

 ৭. মহিলাদের ঋতুস্রাব:

ঋতুস্রাব বলতে প্রতি মাসে মহিলাদের যোনিদ্বার দিয়ে নির্গত নিয়মিত স্বাভাবিক রক্তস্রাবকে বুঝানো হয়। তা কোনো পোশাকে লেগে গেলে ঘষে-মলে ধুয়ে নিলেই চলবে।

আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জনৈকা মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঋতুস্রাব মিশ্রিত পোশাকের পবিত্রতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন:

«إِحْدَانَا يُصِيْبُ ثَوْبَهَا مِنْ دَمِ الْـحَيْضَةِ، كَيْفَ تَصْنَعُ بِهِ ؟ قَالَ : تَحُتُّهُ، ثُمَّ تَقْرُصُهُ بِالْـمَاءِ، ثُمَّ تَنْضَحُهُ، ثُمَّ تُصَلِّيْ فِيْهِ».

“আমাদের কারো কারোর কাপড়ে কখনো কখনো ঋতুস্রাব লেগে যায়, তখন আমাদের করণীয় কী? তিনি বললেন: বস্ত্রখণ্ডটি ঘষে-মলে পানি দিয়ে ধুয়ে নিবে। অতঃপর তা পরেই সালাত পড়তে পারবে”[68]

তবে যৎসামান্য হলে তা না ধুলেও কোনো অসুবিধে নেই।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَا كَانَ لإِحْدَانَا إِلاَّ ثَوْبٌ وَاحِدٌ تَحِيْضُ فِيْهِ ؛ فَإِنْ أَصَابَهُ شَيْءٌ مِنْ دَمٍ بَلَّتْهُ بِرِيْقِهَا ثُمَّ قَصَعَتْهُ بِرِيْقِهَا».

“আমাদের কারোর একটিমাত্র কাপড় ছিল যা সে ঋতুকালেও পরতো। অতএব, তাতে সামান্যটুকু রক্ত লেগে গেলে থুথু দিয়ে ভিজিয়ে নখ দিয়ে মলে নিতো”[69]

 ঋতুবতী সংক্রান্ত কিছু মাসআলা:

ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাস করা নিষেধ:

ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাস করা মারাত্মক গুনাহ’র কাজ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡمَحِيضِۖ قُلۡ هُوَ أَذٗى فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ وَلَا تَقۡرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطۡهُرۡنَۖ﴾ [البقرة: ٢٢٢]

 “তারা আপনাকে নারীদের ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। আপনি বলে দিন, তা হচ্ছে অশুচিতা। অতএব, তোমরা ঋতুকালে স্ত্রীদের নিকট যাবে না। এমনকি তারা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসেও লিপ্ত হবে না”[সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২২]

তবে ঘটনাচক্রে এমতাবস্থায় কেউ সহবাস করে ফেললে আল্লাহ তা‘আলার পাকড়াও থেকে বাঁচার জন্য তাঁর সন্তুষ্টির আশায় এক দিনার বা অর্ধ দিনার তাঁর রাস্তায় সদকা করে দিবে।

 ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋতুকালীন সহবাসকারী সম্পর্কে বলেন,

«يَتَصَدَّقُ بِدِيْنَارٍأَوْ نِصْفِ دِيْنَارٍ».

“সে এক দিনার (সাড়ে চার মাশা পরিমাণ স্বর্ণ) বা অর্ধ দিনার সদকা করে দিবে”[70]

 ঋতুবতী মহিলার সাথে মেলামেশা:

ঋতুবতী মহিলার সাথে খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসা, মেলামেশা, চুম্বন, উত্তেজনাকর স্পর্শ বা জড়াজড়ি ইত্যাদি জায়েয।

মোট কথা, সহবাস ছাড়া যে কোনো কাজ ঋতুবতী মহিলার সাথে জায়েয।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াহূদী সম্প্রদায় তাদের মধ্যে কোনো মহিলা ঋতুবতী হলে তার সাথে খাওয়া-দাওয়া, মেলামেশা এমনকি একই ঘরে বসবাস করাও বন্ধ করে দিতো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

«اِصْنَعُوْا كُلَّ شَيْءٍ إِلاَّ النِّكَاحَ»

“ঋতুবতীর সাথে সহবাস ছাড়া সব কাজই করতে পারো”[71]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَتْ إِحْدَانَا إِذَا كَانَتْ حَائِضًا، فَأَرَادَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم أَنْ يُبَاشِرَهَا، أَمَرَهَا أَنْ تَتَّزِرَ فِيْ فَوْرِ حَيْضَتِهَا ثُمَّ يُبَاشِرُهَا، قَالَتْ: وَأَيُّكُمْ يَمْلِكُ إِرْبَهُ كَمَا كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَمْلِكُ إِرْبَهُ».

“আমাদের কেউ ঋতুবতী হলে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে মেলামেশা করতে চাইলে ঋতুস্রাব চলমান থাকাবস্থায় তাকে মজবুত করে ইযার (নিম্নবসন) পরতে বলতেন। তখন তিনি তার সাথে মেলামেশা করতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তোমাদের কেউ কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতো নিজ যৌনতাড়নাকে সংবরণ করতে পারবে? অবশ্যই নয়”[72]

এতদসত্ত্বেও যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতো সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন। সরাসরি তিনি স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করতে যান নি। তাহলে আমরা নিজের ওপর কতটুকু ভরসা রাখতে পারবো তা আমরা ভালোভাবেই জানি।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন:

«نَاوِلِيْنِيْ الْـخُمْرَةَ مِنَ الْـمَسْجِدِ، قَالَتْ: فَقُلْتُ: إِنِّيْ حَائِضٌ، فَقَالَ: إِنَّ حَيْضَتَكِ لَيْسَتْ فِيْ يَدِكِ».

“আমাকে মসজিদ থেকে বিছানাটা দাওতো। তিনি বলেন: আমি বলল­ম, আমি তো ঋতুবতী। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: স্রাব তো তোমার হাতে লেগে থাকে নি”[73]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরো বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ-صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ- يَتَّكِئُ فِيْ حِجْرِيْ وَأَنَا حَائِضٌ، فَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কোলে ভর দিয়ে কুরআন শরীফ পড়তেন, অথচ আমি ঋতুবতী ছিলাম”[74]

 ঋতুবতী মহিলার কুরআন পাঠ:

জুনুবী ব্যক্তি ও ঋতুবতী মহিলার জন্য কুরআন শরীফ মুখস্থ তিলাওয়াত করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে বিশুদ্ধ কোনো হাদীস পাওয়া যায় না। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেশাব করার সময় যখন জনৈক সাহাবি তাঁকে সালাম দেন তখন তিনি অযু না করে সালামের উত্তর দেওয়া অপছন্দ করেন। এ থেকে আমাদের বুঝতে অসুবিধে হয় না যে, জুনুবী ব্যক্তি ও ঋতুবতী মহিলার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা অবশ্যই অপছন্দনীয়।

মুহাজির ইবন ক্বুনফুয রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم وَهُـوَ يَبُوْلُ، فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيَّ حَتَّى تَوَضَّأَ، ثُمَّ اعْتَذَرَ إِلَيَّ فَقَالَ: إِنِّيْ كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللهَ -عَزَّ وَجَلَّ- إِلاَّ عَلَى طُهْرٍ».

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম যখন তিনি প্রস্রাব করছিলেন। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলে তিনি অযু না করা পর্যন্ত অত্র সালামের উত্তর দেন নি। এতদ্ কারণে তিনি আমার নিকট এ বলে কৈফিয়ত দিয়েছেন যে, পবিত্র না হয়ে আল্লাহ তা‘আলার নাম উচ্চারণ করা আমার নিকট খুবই অপছন্দনীয়”[75]

তবে কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া অন্য কোনো যিকির করায় কোনো অসুবিধে নেই। কেননা, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজ করতে গিয়ে আমি ঋতুবতী হয়ে গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন:

«اِفْعَلِيْ مَا يَفْعَلُ الْحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوْفِيْ بِالْبَيْتِ حَتَّى تَطْهُرِيْ»

“তুমি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ ব্যতীত সব কাজই করতে পার যা হাজী সাহেবগণ করে থাকেন। তবে তাওয়াফ করবে পবিত্র হয়ে”[76]

উম্মে ‘আতিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم أَنْ نُخْرِجَهُنَّ فِي الْفِطْرِ وَالأَضْحَى، الْعَوَاتِقَ وَالْـحُيَّضَ وَذَوَاتِ الْـخُدُوْرِ، فَأَمَّا الْـحُيَّضُ فَيَعْتَزِلْنَ الصَّلاَةَ وَيَشْهَدْنَ الـْخَيْرَ وَدَعْوَةَ الْـمُسْلِمِيْنَ وَيُكَبِّرْنَ مَعَ النَّاسِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আদেশ করেছেন যেন আমরা বয়স্কা, ঋতুবতী ও পর্দানশীন যুবতী মহিলারদেরকে নিয়ে দু’ ঈদের সালাতে উপস্থিত হই। তবে ঋতুবতীরা সালাতে উপস্থিত হবে না। শুধু তারা মুসলিমদের সাথে দো‘আয় ও কল্যাণকর কাজে অংশ নিবে এবং সবার সাথে তাকবীর বলবে”[77]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَذْكُرُ اللهَ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা আল্লাহ্’র যিকিরে মগ্ন থাকতেন”[78]

উক্ত হাদীসগুলোর প্রতি গভীর দৃষ্টি দিলে এ ব্যাপারটি সহজে উদঘাটিত হয় যে, জুনুবী ও ঋতুবতী মহিলাদের জন্য সাধারণ যিকির করায় কোনো অসুবিধে নেই। তবে কোনো হাফিযা মহিলা যদি কুরআন শরীফ ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা করে তা হলে সে মুখস্থ কুরআন পড়তে ও কাউকে শুনাতে পারে।

 ঋতুবতী মহিলার সালাত-সাওম:

ঋতুবতী মহিলা ঋতু চলাকালীন সময় সালাত-সাওম কিছুই আদায় করবে না। তবে যখন সে পবিত্র হবে তখন শুধু রোযাগুলো কাযা (নিদৃষ্ট সময়ে আদায় করতে না পারা কাজ পরবর্তী সময়ে হুবহু আদায় করা) করে নিবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মহিলাদের ধার্মিকতার ত্রুটি-বিচ্যুতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,

«أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ»

“এমন নয় কি যে, মহিলাদের যখন ঋতুস্রাব হয় তখন তারা সালাত-সাওম কিছুই আদায় করতে পারে না”[79]

মু‘আযা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে জিজ্ঞাসা করলাম: ঋতুবতী মহিলারা শুধু সাওম কাযা করবে, সালাত কাযা করবে না এমন হবে কেন? তিনি বললেন: তুমি কি হারুরী তথা খারেজী মহিলা? (স্বভাবতঃ তারাই শরী‘আতের ব্যাপারে এমন উদ্ভট প্রশ্ন করে থাকে) আমি বললাম: আপনার ধারণা ঠিক নয়, তবে আমার শুধু জানার ইচ্ছে হচ্ছে। তিনি বলেন,

«كَانَ يُصِيْبُنَا ذَلِكَ فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلاَ نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلاَةِ»

“আমাদের ও এমন হতো। তবে আমাদেরকে সাওম কাযা করতে বলা হতো; সালাত নয়”[80]

 ৮. লিকোরিয়া (সাদাস্রাব):

লিকোরিয়া বলতে রোগবশতঃ মহিলাদের যোনিদ্বার দিয়ে নির্গত সাদা স্রাবকে বুঝানো হয়।

 লিকোরিয়ায় গোসল ফরয হয় না:

মহিলাদের লিকোরিয়া হলে গোসল করতে হবে না। তবে তা নাপাক ও অযু বিনষ্টকারী। তাই তা কাপড়ে বা শরীরে লেগে গেলে ধুয়ে নিতে হবে এবং অযু করে নিয়মিত সালাত আদায় করতে হবে।

৯. ইস্তিহাযা:

ইস্তিহাযা বলতে হলদে বা মাটিবর্ণ রক্তস্রাবকে বুঝানো হয় যা রোগবশতঃ ঋতুকাল ছাড়া অন্য সময়ে মহিলাদের যোনিদ্বার দিয়ে নির্গত হয়।

 ইস্তিহাযা সংক্রান্ত মাসআলাসমূহ:

মূলতঃ ইস্তিহাযা এক প্রকার ব্যাধি। তা চলাকালীন সালাত বন্ধ রাখা যাবে না।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে আবু হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন:

«يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ اِمْرَأَةٌ أُسْتَحَاضُ فَلاَ أَطْهُرُ، أَفَأَدَعُ الصَّلاَةَ ؟ فَقَالَ: لاَ إِنَّمَا ذَلِكَ عِرْقٌ وَلَيْسَ بِالْحَيْضَةِ، فَإِذَا أَقْبَلَتِ الْـحَيْضَةُ فَدَعِـي الصَّلاَةَ، وَإِذَا أَدْبَرَتْ فَاغْسِلِيْ عَنْكِ الدَّمَ وَصَلِّيْ، ثُمَّ تَوَضَّئِيْ لِكُلِّ صَلاَةٍ، حَتَّى يَجِيْءَ ذَلِكَ الْوَقْتُ ».

“হে রাসুল! সর্বদা আমার স্রাব লেগেই আছে। কখনো পবিত্র হতে পারছি না। তাই বলে আমি সালাত পড়া বন্ধ রাখবো কি? তিনি বললেন: না, সালাত পড়া বন্ধ রাখবে না। এ হচ্ছে রোগ যা কোনো নাড়ি বা শিরা থেকে বের হচ্ছে। এটা ঋতুস্রাব নয়। তাই যখন ঋতুস্রাব শুরু হবে তখন সালাত পড়া বন্ধ রাখবে। আর যখন সাধারণ নিয়মানুযায়ী ঋতুস্রাব শেষ হয়ে যাবে তখন স্রাব পরিষ্কার করে সালাত পড়বে। তবে প্রতি ওয়াক্ত সালাতের জন্য নতুন অযু করবে”[81]

উক্ত হাদীস থেকে এটাই বুঝা যাচ্ছে যে, মুস্তাহাযা মহিলা পবিত্র মহিলাদের ন্যায়। তবে মুস্তাহাযা মহিলা প্রতি বেলা সালাতের জন্য শুধু নতুন অযু করবে।

জানা থাকা প্রয়োজন যে, ঋতুস্রাবের রক্ত দুর্গন্ধময় গাঢ় কালো এবং ইস্তিহাযার রক্ত মাটিয়া হলদে।

ফাতিমা বিনতে আবু হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মুস্তাহাযা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন:

«إِذَا كَانَ دَمُ الْـحَيْضَةِ ؛ فَإِنَّهُ أَسْوَدُ يُعْرَفُ، فَإِذَا كَانَ ذَلِكَ فَأَمْسِكِيْ عَنِ الصَّلاَةِ، فَإِذَا كَانَ الآخَرُ ؛ فَتَوَضَّئِيْ وَصَلِّيْ ؛ فَإِنَّمَا هُوَ عِرْقٌ».

“ঋতুস্রাবের রং কালো পরিচিত। যখন তা দেখতে পাবে সালাত পড়া বন্ধ রাখবে। তবে অন্য কোনো রং দেখা গেলে অযু করে সালাত আদায় করবে। কারণ, তা হচ্ছে শিরাজনিত”[82]

উম্মে ‘আতিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا لاَ نَعُدُّ الْكُدْرَةَ وَالصُّفْرَةَ بَعْدَ الطُّهْرِ شَيْئًا»

“আমরা নবীযুগে পবিত্রতার পর হলদে বা মাটিয়া স্রাবকে ঋতুস্রাব মনে করতাম না”[83]

 ১০. নিফাস:

সন্তান প্রসবোত্তর স্রাবকে আরবীতে নিফাস বলা হয়। পবিত্রতার ক্ষেত্রে নিফাস ও ঋতুস্রাবের বিধান এক ও অভিন্ন।

 নিফাস সংক্রান্ত বিধান:

নিফাসের সর্বশেষ সময় চল্লিশ দিন। এর চাইতে কম ও হতে পারে। যখনই স্রাব বন্ধ হবে গোসল করে সালাত পড়া শুরু করবে। স্রাব নির্গমন চল্লিশ দিনের বেশি চালু থাকলে তা ইস্তিহাযা হিসেবে গণ্য করা হবে। তখন প্রতি ওয়াক্ত সালাতের জন্য নতুন অযু করে সালাত পড়বে।

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَتِ النُّفَسَاءُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم تَقْعُدُ بَعْدَ نِفَاسِهَا أَرْبَعِيْنَ يَوْمًا».

“নিফাসী মহিলারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে চল্লিশ দিন পর্যন্ত সালাত-সাওম বন্ধ রাখতো। এ ছাড়া অন্যান্য বিধি-বিধানে ঋতুবতী ও নিফাসীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই”[84]

 ১১. জাল্লালা (মল ভক্ষণকারী পশু):

জাল্লালা বলতে মানবমল ভক্ষণকারী সকল পশুকে বুঝানো হয়। এ জাতীয় পশু অপবিত্র। তবে এ জাতীয় পশুকে যখন অতটুকু সময় বেঁধে রাখা হবে যাতে ওদের মাংস ও দুধ থেকে নাপাকীর দুর্গন্ধ চলে যায় তখন ওদের মাংস ও দুধ খাওয়া যাবে। নতুবা নয়।

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَنْ لُحُوْمِ الْـجَلاَّلَةِ وَأَلْبَانِهَا».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মল ভক্ষণকারী পশুর গোশত ও দুধ খেতে নিষেধ করেছেন”[85]

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন,

«نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَنِ الْـجَلاَّلَةِ فِي الإِبِلِ أَنْ يُرْكَبَ عَلَيْهَا، أَوْ يُشْرَبَ مِنْ أَلْبَانِهَا».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মলভক্ষণকারী উটের পিঠে চড়তে ও উহার দুধ পান করতে নিষেধ করেছেন”[86]

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে আরো বর্ণিত:

«كَانَ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَحْبِسُ الدَّجَاجَةَ الجَلاَّلَةَ ثَلاَثًا».

“তিনি মলভক্ষণকারী মুরগীকে (গোশত খেতে ইচ্ছে করলে) তিনদিন বেঁধে রাখতেন”[87]

 ১২. ইঁদুর:

ইঁদুর অপবিত্র। অতএব, জমাট বাঁধা কোনো খাদ্যে ইঁদুর পতিত হলে ইঁদুর ও উহার পার্শ্ববর্তী খাদ্য ফেলে দিবে। অতঃপর অবশিষ্ট খাদ্য খাওয়া যাবে। মাইমূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইঁদুর পড়া ঘিয়ের পবিত্রতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,

«أَلْقُوْهَا وَمَاحَوْلَهَا فَاطْرَحُوْهُ وَكُلُوْا سَمْنَكُمْ».

“ইঁদুর ও উহার পার্শ্ববর্তী ঘিটুকু ফেলে দিয়ে বাকি অংশটুকু খেতে পারবে”[88]

অন্যদিকে ইঁদুর যদি তরল খাদ্য বা পানীয়তে পতিত হয় তা হলে দেখতে হবে; যদি পূর্বের ন্যায় ইঁদুর ও উহার পার্শ্ববর্তী খাদ্য ও পানীয়টুকু ফেলে দেওয়া সম্ভব হয় যাতে অন্য অংশটুকুর স্বাদে, গন্ধে বা রংয়ে ইঁদুরের কোনো আলামত অনুভূত না হয় তাহলে তা পাক হয়ে যাবে, অন্যথায় নয়। খাদ্য-পানীয়তে এ ছাড়া অন্য কোনো নাপাকী পড়লেও তাতে একই বিধান কার্যকর হবে।

 ১৩. গোশত খাওয়া হারাম এমন যে কোনো পশুর মল-মূত্র:

গোশত খাওয়া হারাম এমন যে কোনো পশুর মল-মূত্র নাপাক।

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم الْغَائِطَ فَأَمَرَنِيْ أَنْ آتِيَهُ بِثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ، فَوَجَدْتُ حَجَرَيْنِ وَالْتَمَسْتُ الثَّالِثَ فَلَمْ أَجِدْهُ، فَأَخَذْتُ رَوْثَةً فَأَتَيْتُهُ بِهَا، فَأَخَذَ الْحَجَرَيْنِ وَأَلْقَى الرَّوْثَةَ، وَقَالَ: هَذَا رِكْسٌ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগারে প্রবেশের পূর্বে আমাকে তিনটি ঢিলা উপস্থিত করার আদেশ দেন। অতঃপর আমি দু’টি ঢিলার ব্যবস্থা করলাম এবং অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তৃতীয়টি জোটাতে পারি নি। অতএব, আমি একটি গাধার মল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে উপস্থিত করলে তিনি অপর দু’টি ঢিলা নিয়ে সেটি ফেলে দিলেন এবং বললেন: এটি অপবিত্র”[89]

তবে গোশত খাওয়া হালাল এমন সকল পশুর মল-মূত্র পবিত্র।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা উক্বল বা উরাইনাহ গোত্রের কিছু সংখ্যক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলে হঠাৎ তারা রোগাক্রান্ত হয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন:

«إِنْ شِئْتُمْ أَنْ تَخْرُجُوْا إِلَى إِبِلِ الصَّدَقَةِ فَتَشْرَبُوْا مِنْ أَلْبَانِهَا وَأَبْوَالِهَا».

“তোমাদের ইচ্ছে হলে তোমরা সাদাকার উটের দুধ ও প্রস্রাব পান করতে পার”[90]

আনাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يُصَلِّيْ قَبْلَ أَنْ يُبْنَى الـْمَسْجِدُ فِيْ مَرَابِضِ الْغَنَمِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ নির্মাণের পূর্বে ছাগল রাখার জায়গায় সালাত পড়তেন”[91]

 ১৪. মদ:

বিশুদ্ধ মতানুযায়ী মদ অপবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠﴾ [المائ‍دة: ٩٠]

“হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মদ, জুয়া, মূর্তি এবং লটারীর তীর এসব অপবিত্র। শয়তানের কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং তোমরা এ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকবে। তা হলে তোমরা সফলকাম হবে”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯০]

 সালাত আদায়কারী ব্যক্তির নাপাকী থেকে পবিত্রতা:

যদি কোনো সালাত আদায়কারী ব্যক্তি সালাতের মধ্যে বা পরে নিজ কাপড়ে, শরীরে বা সালাতের স্থানে নাপাকী আছে বলে অবগত হয় তখন তা তিনের এক অবস্থা থেকে খালি হবে না:

ক. সালাত আদায়কারী ব্যক্তি যদি সালাতের মধ্যেই নাপাকী সম্পর্কে অবগত হয় এবং তা তখনই দূরীকরণ সম্ভবপর হয়। যেমন, কোনো একটি কাপড়খণ্ডে নাপাকী রয়েছে এবং সতর খোলা ছাড়াই তা ফেলে দেওয়া সম্ভব তা হলে তখনই তা ফেলে দিবে। এতেই তার সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে।

খ. আর যদি সালাতের মধ্যেই তা দূরীকরণ সম্ভবপর না হয়। যেমন, কাপড়েই নাপাকী রয়েছে, তবে তা ফেলে দিলে সতর খুলে যাবে অথবা নাপাকী শরীরে রয়েছে যা দূর করতে গেলে সতর খুলতে হবে। এমতাবস্থায় সালাত ছেড়ে দিয়ে নাপাকী দূর করবে এবং পুনরায় সালাত আদায় করে নিবে।

গ. আর যদি সালাত শেষে অবগত হয় যে, সালাতরত অবস্থায় তার শরীরে, কাপড়ে বা সালাতের স্থানে নাপাকী ছিল তাহলে তার আদায়কৃত সালাত সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ।

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে সালাত পড়ছিলেন। ইতোমধ্যে হঠাৎ তিনি নিজ জুতাদ্বয় পা থেকে খুলে নিজের বাম পার্শ্বে রাখলেন। তা দেখে সাহাবীগণও নিজ নিজ জুতাগুলো পা থেকে খুলে ফেললেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে সাহাবীগণকে বললেন:

«مَا بَالُكُمْ أَلْقَيْتُمْ نِعَالَكُمْ».

“তোমাদের কী হলো? তোমরা জুতাগুলো খুলে ফেললে কেন? সাহাবীগণ বললেন: আপনাকে জুতা খুলতে দেখে আমরাও তা খুলে ফেললাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

«أَتَانِيْ جِبْرِيْلُ فَأَخْبَرَنِيْ أَنَّ فِيْهِمَا قَذَرًا أَوْ قَالَ: أَذًى، فَأَلْقَيْتُهُمَا، فَإِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ إِلَى الـْمَسْجِدِ فَلْيَنْظُرْ فِيْ نَعْلَيْهِ فَإِنْ رَأَى فِيْهِمَا قَذَرًا أَوْ أَذًى فَلْيَمْسَحْهُمَا وَلْيُصَلِّ فِيْهِمَا».

“জিবরীল আলাইহিস সালাম আমার নিকট এসে সংবাদ দিলেন যে, জুতাদ্বয়ে নাপাকী রয়েছে। তাই আমি জুতাদ্বয় খুলে ফেললাম। অতএব, তোমাদের কেউ মসজিদে আসলে নিজ জুতাদ্বয় ভালোভাবে দেখে নিবে। যদি তাতে নাপাকী পরিলক্ষিত হয় তা হলে তা মুছে ফেলে তাতেই সালাত পড়বে”[92]

তবে কোনো ব্যক্তি যদি সালাত শেষে জানতে পারে যে, সে অযু বা ফরয গোসল বিহীন সালাত পড়েছে তাহলে তার সালাত কখনো শুদ্ধ হবে না যতক্ষণ না সে অযু বা ফরয গোসল সেরে সালাত পড়ে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ بِغَيْرِطُهُوْرٍ».

“পবিত্রতা বিহীন কোনো সালাতই কবুল করা হয় না”[93]

 পবিত্রতা সংক্রান্ত বিশেষ সূত্র:

যে কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে, এটি পবিত্র ও এর ভোজন-ব্যবহার জায়েয, যতক্ষণ না এর বিপরীত শরঈ কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলে যায়। অতএব, উক্ত সূত্রানুসারে যদি কোনো মুসলিম কোনো কাপড়, পানি ও স্থানের পবিত্রতা-অপবিত্রতা নিয়ে সন্দেহ করে তা হলে তা পবিত্র বলেই গণ্য হবে। তেমনিভাবে উক্ত সূত্রানুযায়ী যে কোনো থালা-বাসনে পানাহার জায়েয। তবে স্বর্ণরৌপ্য দিয়ে তৈরি থালা-বাসনে পানাহার জায়েয নয়।

হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ تَشْرِبُوْا فِيْ آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلاَ تَأْكُلُوْا فِيْ صِحَافِهَا، فَإِنَّهَا لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَلَنَا فِي الآخِرَةِ».

“তোমরা স্বর্ণরৌপ্য দিয়ে তৈরী থালা-বাসনে পানাহার করবে না। কারণ, সেগুলো দুনিয়াতে কাফিরদের জন্য আর পরকালে আমাদের জন্য”[94]

 সন্দেহ ঝেড়ে মুছে নিশ্চিত অতীতের দিকে প্রত্যাবর্তন:

আরেকটি সূত্র হচ্ছে; সন্দেহ পরিত্যাগ করে নিশ্চিত অতীতাবস্থার দিকে ফিরে যাওয়া। যেমন, কেউ ইতিপূর্বে পবিত্রতা অর্জন করেছে বলে নিশ্চিত। তবে বর্তমানে সে পবিত্র কি না এ ব্যাপারে সন্দিহান তা হলে সে উক্ত সূত্রানুযায়ী পবিত্র বলেই গণ্য। তেমনিভাবে কেউ যদি নিজের অপবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত। তবে কিছুক্ষণ পর সে নিজকে পবিত্র বলে সন্দেহ করছে তা হলে সে উক্ত সূত্রানুসারে অপবিত্র বলেই গণ্য হবে।

একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে যিনি সর্বদা সালাতরত অবস্থায় অযু নষ্ট হয়েছে বলে সন্দেহ করে থাকে অভিযোগ করা হলে তিনি বলেন,

«لاَ يَنْصَرِفُ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا، أَوْ يَجِدَ رِيْحًا»

“সালাত ছেড়ে দিবে না যতক্ষণ না সে বায়ু নির্গমনধ্বনি শুনতে পায় অথবা দুর্গন্ধ অনুভব করে”[95]

কোনো জিনিসে নাপাকী লেগে গেলে নাপাকী দূর হয়েছে নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত ধুতে হবে। তবে নাপাকীর কোনো দাগ থেকে গেলে তাতে কোনো অসুবিধে নেই। খাওলা বিনতে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম: হে রাসূল! ঋতুস্রাব মিশ্রিত কাপড় ধোয়ার পরও দাগ থেকে যায় তখন কি করতে হবে? তিনি বললেন:

«يَكْفِيْكِ غَسْلُ الدَّمِ، وَلاَ يَضُرُّكِ أَثَرُهُ».

“ঋতুস্রাবের রক্ত ধুয়ে ফেলাই তোমার জন্য যথেষ্ট। দাগ থেকে গেলে তাতে কোনো অসুবিধে নেই”[96]

 বিড়ালে মুখ দেওয়া থালা-বাসন:

বিড়াল কোনো থালা-বাসনে মুখ দিলে তা অপবিত্র হয় না।

আবু ক্বাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّهَا لَيْسَتْ بِنَجَسٍ، إِنَّهَا مِنَ الطَّوَّافِيْنَ عَلَيْكُمْ وَالطَّوَّافَاتِ»

“বিড়াল নাপাক নয়। কারণ, বিড়াল-বিড়ালী তোমাদের আশেপাশেই থাকে। ওদের নাগাল থেকে বাঁচা তোমাদের পক্ষে সম্ভবপর নয়”[97]

 সুনানুল ফিত্বরাহ (প্রকৃতি সম্মত ক্রিয়াকলাপ):

এমন কিছু ক্রিয়াকলাপ রয়েছে যা মানুষের স্বভাবগত ও প্রকৃতিসম্মত এবং সকল নবীদের নিকট তা ছিল পছন্দনীয়। সেগুলো নিম্নরূপ:

 ১. খাৎনা বা মুসলমানি করা:

খাৎনা বলতে পুরুষের লিঙ্গাগ্র ঢেকে রাখে এমন ত্বক ছেদনকেই বুঝানো হয়। তাতে পুরো লিঙ্গাগ্রটি উন্মুক্ত হয়ে যায়। তা পুরুষের জন্য ওয়াজিব।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক নবমুসলিমকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

«أَلْقِ عَنْكَ شَعْرَ الْكُفْرِ وَاخْتَتِنْ».

“কুফুরীর কেশ ফেলে দিয়ে খাৎনা করে নাও”[98]

এ কারণেই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আশি বছর বয়সে নিজ খাৎনাকর্ম সম্পাদন করেন।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اِخْتَتَنَ إِبْرَاهِيْمُ وَهُوَ اِبْنُ ثَمَانِيْنَ سَنَةً بِالْقَدُّوْمِ».

“ইবরাহীম আলাইহিস আশি বছর বয়সে কুড়াল দিয়ে নিজ খাৎনাকর্ম সম্পাদন করেন”[99]

ইসলামী শরী‘আতে মহিলাদের খাৎনারও বিধান রয়েছে। তবে তা তাদের জন্য মুস্তাহাব। মহিলাদের খাৎনা বলতে ভগাঙ্কুরের উপরিভাগ একটুখানি কেটে দেওয়াকেই বুঝানো হয়।

উম্মে ‘আতিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈকা মহিলা মদীনা শহরে মেয়েদের খাৎনা করাতো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

«لاَ تُنْهِكِيْ، فَإِنَّ ذَلِكَ أَحْظَى لِلْمَرْأَةِ، وَأَحَبُّ إِلَى الْبَعْلِ».

“ভগাঙ্কুরাগ্র একটু করে কেটে দিবে, বেশি নয়। কারণ, ভগাঙ্কুরটি মহিলাদের জন্য আনন্দদায়ক ও সুখকর এবং স্বামীর নিকট অধিক পছন্দনীয়”[100]

১. নাভীর নিম্নাংশের লোম মুণ্ডন:

২. বগলের লোম ছেঁড়া।

৩. নখ কাটা।

৪. মোচ কাটা:

মোচ কাটা ওয়াজিব।

যায়েদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ لَمْ يَأْخُذْ مِنْ شَارِبِهِ فَلَيْسَ مِنَّا».

“যে মোচ কাটবে না সে আমার উম্মত নয়”[101]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«اِنْهَكُوْا الشَّوَارِبَ، وَأَعْفُوْا اللِّحَى».

“তোমরা মোচ এমনভাবে ছোট করবে যাতে ত্বকের রং পরিলক্ষিত হয় এবং দাড়ি লম্বা কর”[102]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ: الْخِتَانُ، وَالاِسْتِحْدَادُ، وَنَتْفُ الإِبِطِ، وَتَقْلِيْمُ الأَظْفَارِ، وَقَصُّ الشَّارِبِ».

“পাঁচটি বস্তু প্রকৃতিসম্মত: খাৎনা করা, নাভির নিচের লোম মুণ্ডন, বগলের নিচের লোম ছেঁড়া, নখ ও মোচ কাটা”[103]

উক্ত কাজগুলো সর্বোচ্চ চল্লিশ দিনের মধ্যেই সম্পাদন করতে হবে।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«وُقِّتَ لَنَا فِيْ قَصِّ الشَّارِبِ، وَتَقْلِيْمِ الأَظْفَارِ، وَنَتْفِ الإِبِطِ، وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِيْنَ لَيْلَةٍ».

“মোচ কাটা, নখ কাটা, বগলের লোম ছেঁড়া ও নাভিনিম্ন লোম মুণ্ডনের ব্যাপারে আমাদেরকে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যেন আমরা চল্লিশ দিনের বেশি এ কর্মগুলো সম্পাদন থেকে বিরত না থাকি”[104]

 ৫. দাড়ি লম্বা করা:

দাড়ি লম্বা করা ওয়াজিব।

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«خَالِفُوْا الْـمُشْرِكِيْنَ : وَفِّرُوْا اللِّحَى، وَأَحْفُوْا الشَّوَارِبَ».

“তোমরা আচার-আচরণে মুশরিকদের বিরোধিতা কর। অতএব, তোমরা দাড়ি লম্বা কর এবং মোচ এতটুকু ছোট কর যাতে ত্বকের রং পরিলক্ষিত হয়”[105]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«أَحْفُوْا الشَّوَارِبَ، وَأَعْفُوْا اللِّحَى».

“তোমরা মোছকে গোড়া থেকেই কেটে ফেল এবং দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দাও”[106]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«جُزُّوْا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوْا اللِّحَى، خَالِفُوْا الْمَجُوْسَ».

“তোমরা মোচ কেটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর। এভাবে অগ্নিপূজকদের সাথে বিরোধিতা কর”[107]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«خَالِفُوْا الْـمُشْرِكِيْنَ : أَحْفُوْا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوْا اللِّحَى».

“তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর। অতএব, মোচ মূল থেকে কেটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর”[108]

উক্ত হাদীসসমূহ থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার চার বার চার ধরনের শব্দ দিয়ে দাড়ি লম্বা করার আদেশ দিয়েছেন। এ থেকে ইসলামে দাড়ির কতটুকু গুরুত্ব তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।

 ৬. মিসওয়াক করা:

সর্বদা মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ، مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ».

“মিসওয়াক মুখের পরিচ্ছন্নতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্তির একটি বিশেষ মাধ্যম”[109]

 মিসওয়াক করার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সময়:

 (ক) ঘুম থেকে জেগে:

ঘুম থেকে জেগে মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।

হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوْصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে মিসওয়াক করতেন”[110]

 (খ) প্রত্যেক অযুর সময়:

প্রত্যেক অযুর সময় মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِيْ لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ وُضُوْءٍ».

“আমার উম্মতের জন্য আদেশটি মানা যদি কষ্টকর না হতো তাহলে আমি ওদেরকে প্রত্যেক অযুর সময় মিসওয়াক করতে আদেশ করতাম”[111]

 (গ) প্রত্যেক সালাতের সময়:

প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِيْ أَوْ عَلَى النَّاسِ لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاَةٍ».

“আমার উম্মত বা সকলের জন্য আদেশটি মানা যদি কষ্টকর না হতো তাহলে আমি ওদেরকে প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করতে আদেশ করতাম”[112]

 (ঘ) ঘরে ঢুকার সময়:

ঘরে বা মাসজিদে ঢুকার সময় মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ بَدَأَ بِالسِّوَاكِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করেই মিসওয়াক করা আরম্ভ করতেন”[113]

 (ঙ) মুখ দুর্গন্ধ, রুচি পরিবর্তন কিংবা দীর্ঘকাল পানাহারবশত দাঁত হলুদবর্ণ হলে:

উক্ত মুহূর্তগুলোতে মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। কারণ, মিসওয়াকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুখগহবরকে পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখা। তেমনিভাবে যদি ঘুম থেকে জাগার পর মিসওয়াক করতে হয় তাহলে এ মুহূর্তগুলোতেও মিসওয়াক করা অবশ্যই কর্তব্য।

 (চ) কুরআন মাজীদ পড়ার সময়:

কুরআন মাজীদ পড়ার সময়ও মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।

‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا تَسَوَّكَ ثُمَّ قَامَ يُصَلِّيْ قَامَ الْـمَلَكُ خَلْفَهُ فَيَسْتَمِعُ لِقِرَاءَتِهِ فَيَدْنُوْ مِنْهُ – أَوْ كَلِمَةٌ نَحْوُهَا – حَتَّى يَضَعَ فَاهُ عَلَى فِيْهِ فَمَا يَخْرُجُ مِنْ فِيْهِ شَيْءٌ مِنَ الْقُرْآنِ إِلاَّ صَارَ فِيْ جَوْفِ الْـمَلَكِ، فَطَهِّرُوْا أَفْوَاهَكُمْ لِلْقُرْآنِ».

“বান্দা যখন মিসওয়াক করে সালাতে দাঁড়ায় তখন একজন ফিরিস্তা তার পেছনে দাঁড়িয়ে কিরাআত শ্রবণ করতে থাকে। এমনকি ফিরিস্তা নামাযীর খুব নিকটে গিয়ে নিজ মুখ নামাযীর মুখে রাখে। তাতে করে নামাযীর মুখ থেকে কুর‘আনের কোনো অক্ষর বেরুতেই তা ফিরিস্তার পেটে চলে যায়। তাই তোমরা কুরআন পাঠের উদ্দেশ্যে নিজ মুখগহবর পরিচ্ছন্ন কর”[114]

জিহ্বার উপর মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।

আবু মূসা আশ্‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَتَيْنَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم نَسْتَحْمِلُهُ فَرَأَيْتُهُ يَسْتَاكُ عَلَى لِسَانِهِ».

“আমরা কিছু সংখ্যক সাহাবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যুদ্ধারোহণ চাওয়ার জন্যে উপস্থিত হলাম। তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিহ‌বার উপর মিসওয়াক করতে দেখেছি”[115]

মিসওয়াক ডান দিক থেকে করা মুস্তাহাব।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِيْ تَنَعُّلِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَطُهُوْرِهِ وَفِيْ شَأْنِهِ كُلِّهِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি কাজই ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। এমনকি জুতা পরা, মাথা আঁচড়ানো, পবিত্রতার্জন তথা সর্ব ব্যাপারই”[116]

মিসওয়াক করার পর মিসওয়াকটি ধুয়ে নিতে হয়।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَسْتَاكُ، فَيُعْطِيْنِي السِّـوَاكَ لأَغْسِلَهُ، فَأَبْدَأُ بِهِ فَأَسْتَاكُ، ثُمَّ أَغْسِلُهُ وَأَدْفَعُهُ إِلَيْهِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক করে মিসওয়াকটি আমাকে ধোয়ার জন্য দিতেন। কিন্তু আমি মিসওয়াকটি না ধুয়ে বরং তা দিয়ে মিসওয়াক করতাম। পরিশেষে মিসওয়াকটি ধুয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফেরত দিতাম”[117]

উপরন্তু এ হাদীস থেকে একে অপরের মিসওয়াক ধোয়া ছাড়াই ব্যবহার করতে পারে বুঝা যায়।

 (৭) আঙ্গুলের সন্ধিস্থলগুলো ভালোভাবে ধৌত করা:

আঙ্গুলের সন্ধিস্থলগুলোর উপর ও ভেতর উভয় দিক ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হয়। তেমনিভাবে কানের ভাঁজ তথা শরীরের যে কোনো স্থানে ময়লা জমে গেলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হয়।

১. অযুর  সময় নাকে পানি ব্যবহার করা।

২. ইস্তিঞ্জা করা।

উপরোক্ত সবগুলো বিষয় একই সাথে একই হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ : قَصُّ الشَّارِبِ، وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ، وَالسِّوَاكُ، وَاسْتِنْشَاقُ الْـمَاءِ، وَقَصُّ الأَظْفَارِ، وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ، وَنَتْفُ الإِبِطِ، وَحَلْقُ الْعَانَةِ، وَانْتِقَاصُ الْـمَاءِ، قَالَ زَكَرِيَّا: قَالَ مُصْعَبٌ: وَنَسِيْتُ الْعَاشِرَةَ ؛ إِلاَّ أَنْ تَكُوْنَ الْمَضْمَضَةَ».

“দশটি কাজ স্বভাব ও প্রকৃতিসম্মত: মোচ কাটা, দাড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, অযুর সময় নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা, আঙ্গুলের সন্ধিস্থলগুলো ধৌত করা, বগলের লোম ছিঁড়ে ফেলা, নাভিনিম্ন লোম মুণ্ডন ও ইস্তিঞ্জা করা। হাদীস বর্ণনাকারী যাকারিয়া বলেন, ঊর্ধ্বতন হাদীস বর্ণনাকারী মুস‘আব বলেছেন: আমি দশম কর্মটি স্মরণ করতে পারছি না। সম্ভবতঃ দশম কর্মটি কুল্লি করা”[118]

ফিতরাত বা প্রকৃতির প্রকারভেদ: ফিতরাত দু’প্রকার:

১. হৃদয়গত: হৃদয়গত ফিতরাত বলতে আল্লাহ তা‘আলার পরিচয়, ভালোবাসা এবং তাঁকে তিনি ভিন্ন অন্য সকল বস্তুর উপর অগ্রাধিকার দেওয়াকে বুঝানো হয়। এ জাতীয় ফিতরাত অন্তরাত্মা ও রূহকে নির্মল এবং বিশুদ্ধ করে তোলে।

২. শরীরগত: শরীরগত ফিত্রাত বলতে উপরোক্ত দশটি বিষয় তথা এ জাতীয় সকল প্রকৃতিসম্মত কর্মকে বুঝানো হয়। এ জাতীয় ফিত্রাত শরীরকে পাক ও পরিচ্ছন্ন করে। তবে উভয় ফিতরাত একে অপরের সহযোগী ও পরিপূরক।

 ঘুম থেকে জেগে যা করতে হয়:

 ১. উভয় হাত তিনবার ধোয়া:

ঘুম থেকে জেগেই প্রথমে উভয় হাত তিনবার ধুয়ে নিতে হয়।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلاَ يَغْمِسْ يَدَهُ فِي الإِنَاءِ حَتَّى يَغْسِلَهَا ثَلاَثًا، فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِيْ أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ».

“তোমাদের কেউ যেন ঘুম থেকে জেগেই তার হাত খানা তিনবার না ধুয়ে কোনো পানি ভর্তি পাত্রে প্রবেশ না করায়। কারণ, সে তো আর জানে না রাত্রি বেলায় তার হাত খানা কোথায় ছিলো”[119]

 ২. তিনবার নাক পরিষ্কার করা:

ঘুম থেকে জেগে দ্বিতীয়তঃ যে কাজটি করতে হয় তা হচ্ছে তিনবার ভালোভাবে নাক ঝেড়ে পরিষ্কার করা।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ مَنَامِهِ فَلْيَسْتَنْثِرْ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَبِيْتُ عَلَى خَيَاشِيْمِهِ».

“তোমাদের কেউ ঘুম থেকে জেগে যেন তিনবার নাক ঝেড়ে নেয়। কারণ, শয়তান নাকের বাঁশিতে রাত্রিযাপন করে”[120]

 অযু:

অযু বলতে ছোট নাপাকী যেমন, মল-মূত্র ও বায়ুত্যাগ, গভীর নিদ্রা, উটের গোশত ভক্ষণ ইত্যাদির পর পবিত্রতার্জনের অনিবার্য পন্থাকে বুঝানো হয়।

 কী জন্য অযু করতে হয়:

শরী‘আতের দৃষ্টিতে তিনটি কর্ম যথারীতি সম্পাদনের জন্যই অযু করতে হয়।

 ১. যে কোনো ধরনের সালাত আদায়ের জন্য:

ফরয, নফল তথা যে কোনো ধরনের সালাত আদায়ের জন্য অযু করতে হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ وَأَيۡدِيَكُمۡ إِلَى ٱلۡمَرَافِقِ وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَى ٱلۡكَعۡبَيۡنِ﴾ [المائ‍دة: ٦] 

“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হবে (অথচ তোমাদের অযু নেই) তখন তোমরা তোমাদের সমস্ত মুখমণ্ডল এবং হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে। আর মাথা মাসাহ করবে ও পাগুলো টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ تُقْبَلُ صَلاَةُ أَحَدِكُمْ إِذَا أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ»

“তোমাদের মধ্যকার কোনো অযুহীন ব্যক্তির সালাত গ্রহণ করা হবে না যতক্ষণ না সে অযু করে”[121]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلاَ صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ».

“পবিত্রতা ব্যতীত কোনো সালাত কবুল করা হবে না। তেমনিভাবে আত্মসাৎ করা গণিমতের মাল থেকে কোনো সদকা গ্রাহ্য হবে না”[122]

‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مِفْتَاحُ الصَّلاَةِ الطُّهُوْرُ، وَتَحْرِيْمُهَا التَّكْبِيْرُ، وَتَحْلِيْلُهَا التَّسْلِيْمُ».

“পবিত্রতা সালাতের চাবি তথা পূর্বশর্ত। তাকবীর সালাতের ভেতর সালাত ভিন্ন অন্য কর্ম হারামকারী এবং সালাম সালাত শেষে সালাত আদায়কারীর জন্য সকল হারামকৃত কর্ম হালালকারী”[123]

 ২. কা‘বা শরীফ তাওয়াফের জন্য:

কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করার জন্য পবিত্রতা আবশ্যক।

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الطَّوَافُ حَوْلَ الْبَيْتِ مِثْلُ الصَّلاَةِ، إِلاَّ أَنَّكُمْ تَتَكَلَّمُوْنَ فِيْهِ، فَمَنْ تَكَلَّمَ فِيْهِ فَلاَ يَتَكَلَّمَنَّ إِلاَّ بِخَيْرٍ».

“কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করা সালাত পড়ার ন্যায়। তবে তাওয়াফের সময় কথা বলা যায়। সুতরাং তোমাদের কেউ এ সময় কথা বললে সে যেন কল্যাণমূলক কথাই বলে”[124]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজের সময় আমার ঋতুস্রাব হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

«هَذَا شَيْءٌ كَتَبَهُ اللهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ، فَافْعَلِيْ مَايَفْعَلُ الْحَاجُّ، غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوْفِيْ بِالْبَيْتِ حَتَّى تَطْهُرِيْ».

“এটি তোমার হস্তার্জিত কিছু নয়। তা আল্লাহর পক্ষ থেকে মহিলাদের জন্য একান্ত অবধারিত। তাই হাজী সাহেবগণ যা করেন তুমিও তাই করবে। তবে তাওয়াফ করবে না যতক্ষণ না তুমি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যাও”[125]

উক্ত হাদীস তাওয়াফের জন্য পবিত্রতা অনিবার্য হওয়াকে বুঝায়। বড় পবিত্রতার প্রয়োজন হলে তো তা অবশ্যই করতে হবে। নতুবা ছোট পবিত্রতাই তাওয়াফের জন্য যথেষ্ট।

 ২. কুরআন মাজীদ স্পর্শ করার জন্য:

কুরআন মাজীদ স্পর্শ করার জন্যও পবিত্রতা আবশ্যক।

‘আমর ইবন হাযম, হাকিম ইবন হিযাম ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلاَّ طَاهِرٌ».

“পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ যেন কুরআন স্পর্শ না করে”[126]

 অযুর  ফযীলত:

অযুর ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে উহার কিয়দংশ নিম্নরূপ:

ক. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«إِنَّ أُمَّتِيْ يَأْتُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُّحَجَّلِيْنَ مِنْ أَثَرِ الْوُضُوْءِ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيْلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ».

“কিয়ামতের দিবসে আমার উম্মতের অযুর স্থানগুলো দীপ্তিমান ও শুভ্রোজ্জ্বল হয়ে দেখা দিবে। তাই তোমাদের কেউ নিজ ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে সক্ষম হলে সে যেন তা করে”[127]

খ. উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি উপস্থিত সকলকে ভালোরূপে অযু দেখিয়ে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমনিভাবে অযু করতে দেখেছি। তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوْئِيْ هَذَا ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحْدِثُ فِيْهِمَا نَفْسَهُ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».

“যে ব্যক্তি আমার অযুর ন্যায় অযু করে কায়মনোবাক্যে দু’ রাকাত সালাত আদায় করবে আল্লাহ তা‘আলা তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন”[128]

গ. উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لاَ يَتَوَضَّأُ رَجُلٌ مُسْلِمٌ فَيُحْسِنُ الْوُضُوْءَ، فَيُصَلِّيْ صَلاَةً إِلاَّ غَفَرَاللهُ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الصَّلاَةِ الَّتِيْ تَلِيْهَا».

“কোনো মুসলিম ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে সালাত আদায় করলে আল্লাহ তা‘আলা সে সালাত ও পরবর্তী সালাতের মধ্যকার সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন”[129]

ঘ. উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«مَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُهُ صَلاَةٌ مَكْتُوْبَةٌ، فَيُحْسِنُ وُضُوْءَ هَا وَخُشُوْعَهَا وَرُكُوْعَهَا إِلاَّ كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوْبِ، مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيْرَةً، وَذَلِكَ الدَّهْرَ كُلَّهُ».

“যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি যে কোনো ফরয সালাতের সময় ভালোভাবে অযু করে কায়মনোবাক্যে রুকু-সাজদাহ সঠিকভাবে আদায় করে সালাতটি সম্পন্ন করে তখন অত্র সালাতটি তার অতীত সকল গুনাহ’র কাফ্‌ফরা (ক্ষতিপূরণ) হয়ে যায়, যতক্ষণ সে কবীরা গুনাহ (বড় পাপ) না করে। আর এ নিয়মটি আজীবন কার্যকর হবে”[130]

ঙ. উক্ববা ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَامِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوْءَهُ، ثُمَّ يَقُوْمُ فَيُصَلِّيْ رَكْعَتَيْنِ، مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلاَّ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ».

“যখন কোনো মুসলিম ভালোভাবে অযু করে কায়মনোবাক্যে দু’ রাকাত সালাত আদায় করে তখন তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়”[131]

চ. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ أَوِالْمُؤْمِنُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيْئَةٍ نَظَرَ  إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِقَطْرِ الْمَاءِ، فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيْئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ، فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيْئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلاَهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوْبِ».

“যখন কোনো মুসলিম বা মুমিন ব্যক্তি অযু করে তখন তার মুখমণ্ডল ধোয়ার সাথে সাথেই চোখ দ্বারা কৃত সকল গুনাহ পানি বা পানির শেষ ফোঁটার সাথে বের হয়ে যায়। আর যখন সে দু’হাত ধুয়ে ফেলে তখন উভয় হাত দ্বারা কৃত সকল গুনাহ পানি বা পানির শেষ ফোঁটার সাথে বের হয়ে যায়। আর যখন সে দু’পা ধুয়ে ফেলে তখন পা দ্বারা কৃত সকল গুনাহ পানি বা পানির শেষ ফোঁটার সাথে বের হয়ে যায়। অতএব, অযুশেষে সে ব্যক্তি সকল পাপপঙ্কিলতা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পেয়ে যায়”[132]

ছ. উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ».

“যে ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে তার সকল গুনাহ শরীর থেকে বের হয়ে যায় এমনকি তার নখের নীচ থেকেও”[133]

জ. ‘আমর ইবন আবাসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَا مِنْكُمْ رَجُلٌ يُقَرِّبُ وَضُوْءَهُ فَيَتَمَضْمَضُ وَيَسْتَنْشِقُ فَيَنْتَثِرُ إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ وَفِيْهِ وَخَيَاشِيْمِهِ، ثُمَّ إِذَا غَسَلَ وَجْهَهَ كَمَا أَمَرَهُ اللهُ إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ مِنْ أَطْرَافِ لِحْيَتِهِ مَعَ الـْمَاءِ، ثُمَّ يَغْسِلُ يَدَيْهِ إِلَى الـْمِرْفَقَيْنِ إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا يَدَيْهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الْـمَاءِ، ثُمَّ يَمْسَحُ رَأْسَهُ إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا رَأْسِهِ مِنْ أَطْرَافِ شَعْرِهِ مَعَ الـْمَـاءِ، ثُمَّ يَغْسِلُ قَدَمَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا رِجْلَيْهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الـْمَاءِ، فَإِنْ هُوَ قَامَ فَصَلَّى، فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَمَجَّدَهُ بِالَّذِيْ هُوَ لَهُ أَهْلٌ، وَفَرَّغَ قَلْبَهُ للهِ، إِلاَّ انْصَرَفَ مِنْ خَطِيْئَتِهِ كَهَيْئَةِ يَوْمَ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ».

“যখন তোমাদের কেউ অযুর পানি হাতে নিয়ে কুলি করে, নাকে পানি দেয় ও নাক ঝেড়ে নেয় তখন তার মুখমণ্ডল, মুখগহ্বর ও নাসিকাছিদ্র থেকে সকল গুনাহ ঝরে পড়ে। আর যখন সে নিয়মানুযায়ী মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন তার মুখমণ্ডলের সকল গুনাহ দাড়ির অগ্রভাগ দিয়ে পানির সাথে ঝরে পড়ে। আর যখন সে কুনুই পর্যন্ত উভয় হাত ধৌত করে তখন তার উভয় হাতের গুনাহগুলো আঙ্গুলাগ্র দিয়ে পানির সাথে ঝরে পড়ে। আর যখন সে মাথা মাসাহ করে তখন তার মাথার গুনাহ্গুলো কেশাগ্র দিয়ে পানির সাথে ঝরে পড়ে। অনন্তর যখন সে পদযুগল উপরের গ্রন্থিসহ ধৌত করে তখন তার উভয় পায়ের গুনাহগুলো আঙ্গুলাগ্র দিয়ে পানির সাথে ঝরে পড়ে। এরপর সে যখন সালাত পড়ে আল্লাহর প্রশংসা, গুণাগুণ ও কায়মনোবাক্যে আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে দাঁড়িয়ে যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করে তখন সে সম্পূর্ণরূপে পাপমুক্ত হয়ে যায় যেমনিভাবে সে পাপমুক্ত ছিল জন্মলগ্নে”[134]

ঝ. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُوْ اللهُ بِهِ الْـخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ قَالُوْا: بَلَى، يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: إِسْبَاغُ الْوُضُوْءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْـخُطَا إِلَى الْـمَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ».

“আমি তোমাদেরকে এমন কিছু ‘আমলের সংবাদ দেবো কি? যা সম্পাদন করলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন ও মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। সাহাবীগণ বললেন: হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! উত্তরে তিনি বললেন: কষ্টের সময় অযুর অঙ্গগুলো ভালোভাবে ধৌত করবে, মসজিদের প্রতি অধিক পদক্ষেপ দেবে এবং এক সালাত শেষে অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষায় থাকবে। পরিশেষে তিনি বলেন, এগুলো (সাওয়াবে) সীমান্ত প্রহরার ন্যায়। এগুলো (সাওয়াবে) সীমান্ত প্রহরার ন্যায়”[135]

 নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে অযু করতেন:

 ১. অযুর শুরুতে নিয়্যাত করতেন

নিয়্যাত বলতে কোনো কর্ম সম্পাদনের দৃঢ় মনোপ্রতিজ্ঞাকে বুঝানো হয়। তা মুখে উচ্চারণ করার কিছু নয়। যে কোনো পুণ্যময় কর্ম সম্পাদনের পূর্বে নিয়্যাত আবশ্যক। নিয়্যাত ব্যতীত কোনো পুণ্যময় কর্ম আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হয় না এবং নিয়্যাতের উপরই প্রতিটি কর্মের ফলাফল নির্ভরশীল। ভালোয় ভালো মন্দে মন্দ।

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنيِّاَّتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيْبُهَا أَوْ إِلَى اِمْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ».

“প্রতিটি কর্ম নিয়্যাতের ওপর নির্ভরশীল। যেমন নিয়্যাত তেমনই ফল। যেমন, কেউ যদি দুনিয়ার্জন বা কোনো রমণীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হিজরত (নিজ আবাসভূমি ত্যাগ) করে সে তাই পাবে যে জন্য সে হিজরত করেছে”[136]

 ২. “বিসমিল্লাহ” পড়ে অযু শুরু করতেন।

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ وَضُوْءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللهِ عَلَيْهِ»

“আল্লাহর নাম উচ্চারণ তথা বিসমিল্লাহ পড়া ব্যতিরেকে অযু করা হলে তা আল্লাহ তা‘আলার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না”[137]

 ৩. ডান দিক থেকে অযু শুরু করতেন।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِيْ تَنَعُّلِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَطُهُوْرِهِ وَفِيْ شَأْنِهِ كُلِّهِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্ব কাজই ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। এমনকি জুতা পরা, মাথা আঁচড়ানো, পবিত্রতা অর্জন তথা সর্ব ব্যাপারই”[138]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا تَوَضَّأْتُمْ فَابْدَؤُوا بِمَيَامِنِكُمْ»

“যখন তোমরা অযু করবে তখন তা ডান দিক থেকে শুরু করবে”[139]

 ৪. দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধুয়ে নিতেন

হুমরান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَفْرَغَ عُثْمَانُ  صلى الله عليه وسلم عَلَى كَفَّيْهِ ثَلاَثَ مِرَارٍ فَغَسَلَهُمَا».

“উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযু দেখাতে গিয়ে) হাতে পানি ঢেলে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধুয়েছেন”[140]

৫. হাত ও পদযুগল ধোয়ার সময় আঙ্গুলগুলোর মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাগুলো কনিষ্ঠাঙ্গুলি দিয়ে খিলাল করে নিতেন।

লাক্বীত ইবন সাবিরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَخَلِّلْ بَيْنَ الأَصَابِعِ»

“আঙ্গুলগুলোর মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাগুলো মলে নাও”[141]

মুস্তাওরিদ ইবন শাদ্দাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم تَوَضَّأَ فَخَلَّلَ أَصَابِعَ رِجْلَيْهِ بِخِنْصَرِهِ».

“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অযু করার সময় কনিষ্ঠাঙ্গুলি দিয়ে দু’পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করতে দেখেছি”[142]

 ৬. এক বা তিন চিল্লু (করতলভর্তি পরিমাণ) পানি ডান হাতে নিয়ে তিন তিন বার একই সাথে কুল্লি করতেন ও নাকে পানি দিতেন এবং বাম হাত দিয়ে নাকের ছিদ্রদ্বয় ভালোভাবে ঝেড়ে নিতেন।

‘আমর ইবন আবু হাসান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَضْمَضَ عَبْدُ اللهِ بْنُ زَيْدٍ رضي الله عنه وَاسْتَنْثَرَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ مِنْ غَرْفَةٍ وَاحِدَةٍ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: مَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ مِنْ كَفَّةٍ وَاحِدَةٍ، فَفَعَلَ ذَلِكَ ثَلاَثًا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: مَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَاسْتَنْثَرَ ثَلاَثَ غَرَفَاتٍ» .

“আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযু দেখাতে গিয়ে) এক বা তিন করতলভর্তি পানি দিয়ে একই সাথে তিনবার কুল্লি ও নাক পরিষ্কার করেছেন”[143]

‘আবদে খায়ের থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَضْمَضَ عَلِيٌّ رضي الله عنه وَنَثَرَ مِنَ الْكَفِّ الَّذِيْ يَأْخُذُ فِيْهِ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: ثُمَّ تَمَضْمَضَ مَعَ الاِسْتِنْشَاقِ بِمَاءٍ وَاحِدٍ».

“আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযু দেখাতে গিয়ে) একই করতলভর্তি পানি দিয়ে একইসাথে কুল্লি করেছেন ও নাক ঝেড়ে নিয়েছেন”[144]

‘আবদে খায়ের থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَعَا عَلِيٌّ رضي الله عنه بِوَضُوْءٍ فَتَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَنَثَرَ بِيَدِهِ الْيُسْرَى، فَفَعَلَ هَذَا ثَلاَثًا، ثُمَّ قَالَ: هَذَا طُهُوْرُ نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم»

“আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু পানি চাইলে তা আনা হয়। অতঃপর তিনি তা দিয়ে কুল্লি করেন ও নাকে পানি দেন এবং বাম হাত দিয়ে নাক পরিষ্কার করেন। এ কাজগুলো তিনি তিন তিন বার করেন। অতঃপর তিনি বলেন, এ হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্রতা”[145]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালোরূপে অযু করতেন ও নাকে পানি দিতেন। তবে সাওম পালনকারী হলে তিনি শুধু প্রয়োজন মাফিক কুল্লি করতেন ও নাকে পানি দিতেন- এর চেয়ে বেশি নয়।

লাক্বীত ইবন সাবিরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أَسْبِغِ الْوُضُوْءَ، وَخَلِّلْ بَيْنَ الأَصَابِعِ، وَبَالِغْ فِي الاِسْتِنْشَاقِ إِلاَّ أَنْ تَكُوْنَ صَائِمًا».

“ভালোভাবে অযু কর। আঙ্গুলগুলোর মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাগুলো মলে নাও এবং ভালোভাবে নাকে পানি দাও। তবে সাওম পালনকারী হলে তখন তা করতে যাবে না”[146]

৭. তিনবার সমস্ত মুখমণ্ডল (কান থেকে কান এবং মাথার সম্মুখবর্তী চুলের গোড়া থেকে চিবুক ও দাড়ির নীচ পর্যন্ত) ধুয়ে নিতেন

‘আমর ইবন আবু হাসান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«غَسَلَ عَبْدُ اللهِ بْنُ زَيْدٍ رضي الله عنه وَجْهَهُ ثَلاَثًا».

“আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযু দেখাতে গিয়ে) সমস্ত মুখমণ্ডল তিনবার ধুয়েছেন”[147]

 ৮. দাড়ি খেলাল করতেন

উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يُخَلِّلُ لِحْيَتَهُ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি খেলাল করতেন”[148]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا تَوَضَّأَ أَخَذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ، فَأَدْخَلَهُ تَحْتَ حَنَكِهِ، فَخَلَّلَ بِهِ لِحْيَتَهُ وَقَالَ: هَكَذَا أَمَرَنِيْ رَبِّيْ عَزَّوَجَلَّ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অযু করতেন তখন এক চিল্লু পানি নিয়ে থুতনির নিচে প্রবাহিত করে দাড়ি খেলাল করতেন এবং বলতেন: আমার রব আমাকে এমনই করতে আদেশ করেছেন”[149]

 ৯. উভয় হাত কনুইসহ তিনবার ধুয়ে নিতেন

হুমরান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«غَسَلَ عُثْمَانُ رضي الله عنه يَدَيْهِ إِلَى الْـمِرْفَقَيْنِ ثَلاَثًا».

“উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযু দেখাতে গিয়ে) নিজ হস্তযুগল কনুইসহ তিনবার ধুয়েছেন”[150]

নু‘আইম ইবন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«غَسَلَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ رضي الله عنه يَدَهُ الْيُمْنَى حَتَّى أَشْرَعَ فِي الْعَضُدِ، ثُمَّ يَدَهُ الْيُسْرى حَتَّى أَشْرَعَ فِي الْعَضُدِ».

“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযু দেখাতে গিয়ে) ডান হাত ধুয়েছেন এমনকি তিনি বাহু ধোয়া শুরু করেছেন। তেমনিভাবে তিনি বাম হাত ধুয়েছেন এমনকি তিনি বাহু ধোয়া শুরু করেছেন”[151]

 ১০. সম্পূর্ণ মাথা একবার মাসাহ করতেন

মাসাহের নিয়ম হচ্ছে উভয় হাত পানিতে ভিজিয়ে মাথার অগ্রভাগে স্থাপন করে তা ঘাড়ের দিকে টেনে নিবে। তেমনিভাবে পুনরায় উভয় হাত ঘাড় থেকে মাথার অগ্রভাগের দিকে টেনে আনবে। অতঃপর উভয় হাতের তর্জনী কর্ণযুগলে প্রবেশ করাবে এবং উভয় কর্ণের পৃষ্ঠদেশে বৃদ্ধাঙ্গুলি বুলিয়ে দিবে। ‘আমর ইবন আবু হাসান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَسَحَ عَبْدُ اللهِ بْنُ زَيْدٍ رضي الله عنه رَأْسَهُ بِيَدَيْهِ، فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ، وَفِيْ رِوَايَةٍ : مَرَّةً وَاحِدَةً، بَدَأَ بِمُقَدَّمِ رَأْسِهِ حَتَّى ذَهَبَ بِهِمَا إِلَى قَفَاهُ ثُمَّ رَدَّهُمَا إِلَى الْـمَكَانِ الَّذِيْ بَدَأَ مِنْهُ».

“আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয় হাত আগে পিছে টেনে একবার মাথা মাসাহ করেছেন। মাথার অগ্রভাগ থেকে শুরু করে উভয় হাত ঘাড়ের দিকে টেনে নিয়েছেন। পুনরায় উভয় হাত ঘাড় থেকে মাথার অগ্রভাগের দিকে টেনে এনেছেন”[152]

মিকদাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَسَحَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم بِرَأْسِهِ وَأُذُنَيْهِ ظَاهِرِهِمَا وَبَاطِنِهِمَا، وَفِيْ رِوَايَةٍ : وَأَدْخَلَ أَصَابِعَهُ فِيْ صِمَاخِ أُذُنَيْهِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা ও কর্ণদ্বয়ের ভেতর ও উপরিভাগ মাসাহ করেছেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ অঙ্গুলীটি কর্ণগহবরে প্রবেশ করিয়েছেন”[153]

 ১১. উভয় পা টাখনুসহ তিনবার ধুয়ে নিতেন

হুমরান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«غَسَلَ عُثْمَانُ رضي الله عنه رِجْلَهُ الْيُمْنَى إِلَى الْكَعْبَيْنِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ غَسَلَ الْيُسْرَى مِثْلَ ذَلِكَ».

“উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযু দেখাতে গিয়ে) ডান পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুয়েছেন। তেমনিভাবে বাম পাও”[154]

নু‘আইম ইবন ‘আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«غَسَلَ أَبُوْ هُرَيْرةَ رضي الله عنه رِجْلَهُ الْيُمْنَى حَتَّى أَشْرَعَ فِي السَّاقِ، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى حَتَّى أَشْرَعَ فِي السَّاقِ».

“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযু দেখাতে গিয়ে) ডান পা ধুয়েছেন। এমনকি তিনি তাঁর পায়ের জঙ্ঘাটুকুও ধোয়া শুরু করেছেন। তেমনিভাবে তিনি বাম পা ধুয়েছেন এমনকি তিনি তাঁর পায়ের জঙ্ঘাটুকুও ধোয়া শুরু করেছেন”[155]

 ১২. অযু শেষে নিচের পরিধেয় বস্ত্রে পানি ছিঁটিয়ে দিতেন।

তাতে করে পবিত্রতা সংক্রান্ত মনের সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর হয়ে যায়।

হাকাম ইবন সুফ্ইয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا بَالَ يَتَوَضَّأُ وَيَنْتَضِحُ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাব করে অযু করতেন এবং নিচের পরিধেয় বস্ত্রে পানি ছিঁটিয়ে দিতেন”[156]

 ১৩. অযু শেষে নিম্নোক্ত দো‘আসমূহ পাঠ করতেন।

উক্বা ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ أَوْ فَيُسْبِغُ الْوُضُوْءَ ثُمَّ يَقُوْلُ: أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ، إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ، يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ».

“তোমাদের কেউ ভালোভাবে অযু করে যখন পড়বে: “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুল্লাহি ওয়া রাসূলুহু” (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল) তখন তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা উন্মুক্ত করা হবে। তখন তার ইচ্ছে সে যে কোনো দরজা দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন”।[157]

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ثُمَّ قَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْـمُتَطَهِّرِيْنَ ؛ فُتِحَتْ لَهُ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ، يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ»

“যে ব্যক্তি অযু করে পড়বে : “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু। আল্লাহুম্মাজ ‘আলনী মিনাত তাওআবীনা ওয়াজ আলনী মিনাল মুতাতাহ্‌হিরীন (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন) তখন তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা উন্মুক্ত করা হবে। তার ইচ্ছে সে যে কোনো দরজা দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন”[158]

এ ছাড়াও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়তেন।

«سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ».

উচ্চারণ: “সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আন্তা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক।

“হে আল্লাহ! আপনি পাক-পবিত্র এবং সকল প্রশংসা আপনার জন্যই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া সত্যিকার কোনো উপাস্য নেই। উপরন্তু আমি আপনার নিকট তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি”[159]

 ১৪. অযু শেষে তিনি দু’ রাকাত সালাত পড়তেন

যে ব্যক্তি অযু শেষে কায়মনোবাক্যে দু’ রাকাত সালাত আদায় করবে আল্লাহ তা‘আলা তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং জান্নাত হবে তার জন্য অবধারিত।

উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوْئِي هَذَا ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ فِيْهِمَا نَفْسَهُ غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».

“যে ব্যক্তি আমার অযুর ন্যায় অযু করে কায়মনোবাক্যে দু’ রাকাত সালাত আদায় করবে আল্লাহ তা‘আলা তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন”[160]

উক্বা ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوْءَهُ، ثُمَّ يَقُوْمُ فَيُصَلِّيْ رَكْعَتَيْنِ، مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلاَّ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ» .

“যে কোনো মুসলিম যখন ভালোভাবে অযু করে কায়মনোবাক্যে দু’ রাকাত সালাত আদায় করে তখন তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়”[161]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু কে ফজরের সময় বললেন:

«يَابِلاَلُ! حَدِّثْنِيْ بِأَرْجَى عَمَلٍ عَمِلْتَهُ فِي الإِسْلاَمِ، فَإِنِّيْ سَمِعْتُ دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِي الْجَنَّةِ، قَالَ بِلاَلُ: مَاعَمِلْتُ عَمَلًا فِي الإِسْلاَمِ أَرْجَى عِنْدِيْ مَنْفَعَةً، مِنْ أَنِّيْ لاَ أَتَطَهَّرُ طُهُوْرًا تَامًّا فِيْ سَاعَةٍ مِنْ لَيْلٍ وَلاَ نَهَارٍ إِلاَّ صَلَّيْتُ بِذَالِكَ الطُّهُوْرِ مَا كَتَبَ اللهُ لِيْ أَنْ أُصَلِّيَ» .

“হে বিলাল! তুমি ইসলাম গ্রহণ করার পর সবচেয়ে বড় আশাব্যঞ্জক এমন কি আমল করলে তা আমাকে বল। কারণ, আমি জান্নাতের মধ্যে আমার সম্মুখ দিক থেকে তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর এমন কোনো অধিক আশাব্যঞ্জক ও লাভজনক কাজ করেছি বলে মনে হয় না। তবে একটি কাজ করেছি বলে মনে পড়ে তা হলো আমি দিবারাত্রি যখনই ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করেছি তখনই সে পবিত্রতা দিয়ে যথাসাধ্য সালাত পড়েছি”[162]

 অযুর  অঙ্গগুলো দু’ একবারও ধোয়া যায়:

অযুর অঙ্গগুলো তিন তিন বার ধোয়া পরিপূর্ণ অযুর নিয়ম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম) সাধারণত প্রতিটি অঙ্গ তিন তিন বার ধুতেন। এ কারণেই অধিকাংশ অযুর বর্ণনায় তিন বারের কথাই উল্লিখিত হয়েছে। তবে কেউ প্রতিটি অঙ্গ এক এক বার বা দু’ দু’ বার অথবা কোনো অঙ্গ দু’বার আবার কোনো অঙ্গ তিনবার ধুলেও তার অযু হয়ে যাবে।

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم مَرَّةً مَرَّةً ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি অঙ্গ এক এক বার ধুয়ে অযু করেছেন”[163]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি অঙ্গ দু’ দু’ বার ধুয়ে অযু করেছেন”[164]

আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَغَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا، وَغَسَلَ يَدَيْهِ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ، وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ، وَغَسَلَ رِجْلَيْهِ مَرَّتَيْنِ ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে অযু করেছেন ; নিজ মুখমণ্ডল তিন বার ধুয়েছেন। উভয় হাত দু’ দু’ বার ধুয়েছেন। মাথা মাসাহ করেছেন এবং পদযুগল দু’ দু’ বার ধুয়েছেন”[165]

তবে প্রতিটি অঙ্গ তিন তিন বার ধুলেই অযু পরিপূর্ণ হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।

আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَتَى رَجُلٌ النَّبِيَّ  صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! كَيْفَ الطُّهُوْرُ؟ فَدَعَا بِمَاءٍ فِي إِنَاءٍ فَغَسَلَ كَفَّيْهِ ثَلاَثًا، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا، ثُمَّ غَسَلَ ذِرَاعَيْهِ ثَلاَثًا، ثُمَّ مَسَحَ بِرَأْسِهِ فَأَدْخَلَ إِصْبَعَيْهِ السَّبَّاحَتَيْنِ فِيْ أُذُنَيْهِ، وَمَسَحَ بِإِبْهَامَيْهِ عَلَى ظَاهِرِأُذُنَيْهِ وَبِالسَّبَّاحَتَيْنِ بَاطِنَ أُذُنَيْهِ، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ ثَلاَثًا ثَلاَثًا، ثُمَّ قَالَ: هَكَذَا الْوُضُوْءُ، فَمَنْ زَادَ عَلَى هَذَا أَوْ نَقَصَ فَقَدْ أَسَاءَ وَظَلَمَ، أَوْ ظَلَمَ وَأَسَاءَ ».

“জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পবিত্রতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি পানি আনতে বলেন। পানি আনা হলে হস্তদ্বয় তিন তিন বার ধৌত করেন। অতঃপর মুখমণ্ডল তিন বার ও হস্তযুগল তিন তিন বার ধৌত করেন। এরপর মাথা মাসাহ করেন। পুনরায় শাহাদাত আঙ্গুল দু’টি উভয়কানে ঢুকিয়ে কান মাসাহ করেন। উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে দু’কানের উপরিভাগ ও দুই শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে দু’কানের ভেতরের অংশ মাসাহ করেন। তারপর দুই পা তিন তিন বার ধৌত করেন। অতঃপর তিনি বলেন, এভাবেই অযু করতে হয়। যে ব্যক্তি এর চেয়ে কম বা বেশি করল সে নিজের ওপর অত্যাচার ও অন্যায় করল”[166]

উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশে রচিত কোনো কোনো বই-পুস্তকে অযুর প্রতিটি অঙ্গ ধোয়ার সময় নির্দিষ্টভাবে পাঠ্য কিছু দো‘আর উল্লেখ রয়েছে যা পাঠ করা কুরআন ও সহীহ হাদীসের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে বিদ‘আত। কারণ, তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের কোনো স্বর্ণ যুগে প্রচলিত ছিল না।

 অযুর  কোনো অঙ্গ ধোয়ার সময় চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনা রাখা যাবে না:

অযুর কোনো অঙ্গ ধোয়ার সময় চুল পরিমাণ জায়গাও যদি শুকনা থেকে যায় তাহলে অযু কোনোভাবেই শুদ্ধ হবে না।

আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মক্কা থেকে মদিনা রওয়ানা করেছিলাম। পথিমধ্যে পানি মিলে গেলে কেউ কেউ তড়িঘড়ি আসরের সালাতের জন্য অযু সেরে নেয়। অথচ আমরা তাদের পায়ের কিছু অংশ শুকনা দেখতে পাচ্ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَيْلٌ لِلأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ، أَسْبِغُوْا الْوُضُوْءَ» .

“ধ্বংস! এই গোড়ালিগুলোর জন্যে তা জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে। অতএব, তোমরা ভালোভাবে অযু কর”[167]

উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«تَوَضَّأَ رَجُلٌ فَتَرَكَ مَوْضِعَ ظُفُرٍ عَلَى قَدَمِهِ فَأَبْصَرَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَقَالَ: اِرْجِعْ فَأَحْسِنْ وُضُوْءَكَ، فَرَجَعَ ثُمَّ صَلَّى» .

“অযু করার সময় জনৈক ব্যক্তির পায়ে নখ পরিমাণ জায়গা শুকনা থেকে গেলে তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যাও ভালোভাবে অযু করে এসো। অতঃপর সে অযু করে এসে পুনরায় সালাত আদায় করল”[168]

 এক অযু দিয়ে কয়েক ওয়াক্ত সালাত আদায় করা যায়:

এক অযু দিয়ে কয়েক ওয়াক্ত সালাত আদায় করা যায়।

বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم الصَّلَوَاتِ يَوْمَ الْفَتْحِ بِوُضُوْءٍ وَاحَدٍ وَمَسَحَ عَلَى خُفَّيْهِ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: لَقَدْ صَنَعْتَ الْيَوْمَ شَيْئًا لَمْ تَكُنْ تَصْنَعُهُ، قَالَ: عَمْدًا صَنَعْتُهُ يَا عُمَرُ!» .

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন একই অযু দিয়ে কয়েক ওয়াক্ত সালাত আদায় করেছেন এবং দুই মোজার উপর মাসাহ করেছেন। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন: আজ আপনি এমন কাজ করেছেন যা ইতোপূর্বে কখনো করেন নি। তিনি বললেন: হে উমার! আমি তা ইচ্ছা করেই করেছি”[169]

 অযুর  ফরয ও রুকনসমূহ:

ধর্মীয় কোনো কাজ বা আমলের ফরয বা রুকন বলতে এমন কিছু ক্রিয়াকর্মকে বুঝানো হয় যা না করা হলে ঐ কাজ বা আমলটি সম্পাদিত হয়েছে বলে গণ্য করা হয় না যতক্ষণ না সে ঐ কর্মগুলো সম্পাদন করে। অযুর ফরয বা রুকন ছয়টি যা নিম্নরূপ:

 ১. সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করা:

কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া এবং নাক ঝেড়ে পরিষ্কার করা এরই অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ﴾ [المائ‍دة: ٦]

“তোমরা নিজ মুখমণ্ডল ধৌত কর”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]

লাক্বীত ইবন সাবিরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَبَالِغْ فِي الاِسْتِنْشَاقِ إِلاَّ أَنْ تَكُوْنَ صَائِمًا».

“খুব ভালোভাবে নাকে পানি দিবে। তবে সাওম পালনকারী হলে একটু কম করে দিবে”[170]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে:

«إِذَا تَوَضَّأْتَ فَمَضْمِضْ».

“অযু করার সময় কুলি করবে”[171]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ تَوَضَّأَ فَلْيَسْتَنْثِرْ».

“যে ব্যক্তি অযু করবে তার জন্য আবশ্যক সে যেন নাক ঝেড়ে নেয়”[172]

অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা কুলি করতেন ও নাকে পানি দিতেন।

 ২. কনুইসহ উভয় হাত ধৌত করা:

প্রথমে ডান হাত অতঃপর বাম হাত ধৌত করবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَيۡدِيَكُمۡ إِلَى ٱلۡمَرَافِقِ﴾ [المائ‍دة: ٦]

“তোমরা উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]

হুম্রান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«غَسَلَ عُثْمَانُ رضي الله عنه يَدَيْهِ إِلَى الْـمِرْفَقَيْنِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ».

“উস্মান রাদিয়াল্লাহু আনহু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযু দেখাতে গিয়ে) উভয় হাত কনুইসহ তিনবার ধৌত করেন”[173]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا تَوَضَّأْتُمْ فَابْدَؤُوْا بِمَيَامِنِكُمْ» .

“তোমরা ডান হাত ধোয়ার মাধ্যমে অযু শুরু করবে”[174]

 ৩. সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করা:

সম্পূর্ণ মাথা একবার মাসাহ করা অযুর রুকন। এ ছাড়া মাথা মাসাহ করার ক্ষেত্রে কানদ্বয় মাথার অধীন হিসেবে গণ্য করা হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ﴾ [المائ‍دة: ٦]

“তোমরা মাথা মাসাহ কর”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]

আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الأُذُنَانِ مِنَ الرَّأْسِ».

“উভয় কান (মাসাহ করার ক্ষেত্রে) মাথার অন্তর্ভুক্ত”[175]

অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা মাথা মাসাহ করার সাথে সাথে উভয় কানও মাসাহ করতেন।

হাদীসে মাথা মাসাহ করার তিনটি ধরণ উল্লেখ হয়েছে, তা নিম্নরূপ:

 ক. সরাসরি সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করা

আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَسَحَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم رَأْسَهُ بِيَدَيْهِ فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ، بَدَأَ بِمُقَدَّمِ رَأْسِهِ حَتَّى ذَهَبَ بِهِمَا إِلَى قَفَاهُ، ثُمَّ رَدَّهُمَا إِلَى الْمَكَانِ الَّذِيْ بَدَأَ مِنْهُ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় হাত দিয়ে নিজ মাথা মাসাহ করেন। উভয় হাত মাথার উপর রেখে সামনে ও পেছনে টেনে নেন। অর্থাৎ মাসাহ এভাবে করেন; উভয় হাত মাথার অগ্রভাগে রেখে ঘাড়ের দিকে টেনে নিয়েছেন। পুনরায় হস্তদ্বয় পেছন দিক থেকে সামনের দিকে টেনে এনেছেন”[176]

 খ. মাথায় দৃঢ়ভাবে বাঁধা পাগড়ীর উপর মাসাহ করা

‘আমর ইবন উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَمْسَحُ عَلَى عِمَامَتِهِ».

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাগড়ীর উপর মাসাহ করতে দেখেছি”[177]

তবে পাগড়ীর উপর মাসাহ করা শর্ত সাপেক্ষ যেমনিভাবে মোজা মাসাহ করা শর্ত সাপেক্ষ।

 গ. পাগড়ি ও কপাল উভয়টি মাসাহ করা

মুগীরা ইবন শো‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَمَسَحَ بِنَاصِيَتِهِ وَعَلَى الْعِمَامَةِ وَعَلَى الْـخُفَّيْنِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করার সময় কপাল, পাগড়ি ও মোজা মাসাহ করেছেন”[178]

বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَسَحَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَلَى الْـخُفَّيْنِ وَالْخِمَارِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মোজাদ্বয় ও মস্তকাবরণ মাসাহ করেছেন”[179]

 ৪. উভয় পা টাখনুসহ ধৌত করা:

পদযুগল ধোয়ার সময় গোড়ালির প্রতি সযত্ন দৃষ্টি রাখবে। যেন তা ভালোভাবে ধোয়া হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَى ٱلۡكَعۡبَيۡنِ﴾ [المائ‍دة: ٦]

“তোমরা পদযুগল টাখনুসহ ধেŠত কর”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]

আবু হুরায়রা, আব্দুল্লাহ ইবন উমার এবং আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَيْلٌ لِلأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ» .

“ধ্বংস! গোড়ালিগুলোর জন্যে তা জাহান্নামের আগুনে বিদগ্ধ হবে”[180]

অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা পাযুগল গোড়ালি ও টাখনুসহ ধৌত করতেন।

 ৫. ধোয়ার সময় অঙ্গগুলোর মাঝে পর্যায়ক্রম বজায় রাখা:

ধোয়ার সময় অঙ্গগুলোর মাঝে পর্যায়ক্রম বজায় রাখা অযুর রুকন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদের মধ্যে অযুর অঙ্গগুলো সারিবদ্ধভাবে উল্লেখ করেছেন এবং এ পর্যায়ক্রম বজায় রাখার জন্যই মাসাহ’র অঙ্গটি পরিশেষে উল্লেখ না করে ধোয়ার অঙ্গগুলোর মাঝেই উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ وَأَيۡدِيَكُمۡ إِلَى ٱلۡمَرَافِقِ وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَى ٱلۡكَعۡبَيۡنِ﴾ [المائ‍دة: ٦] 

“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশ্যে দন্ডায়মান হবে (অথচ তোমাদের অযু নেই) তখন সমস্ত মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কনুইসহ ধৌত করবে এবং মাথা মাসাহ করবে ও পদযুগল টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অঙ্গগুলোর পর্যায়ক্রম বজায় রেখে অযু করতেন।

তিনি বলতেন:

«أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللهُ بِهِ»

“আমি শুরু করছি যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা শুরু করেছেন”[181]

 ৬. অযুর সময় অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর মাঝে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা:

অযুর  সময় অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর মাঝে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা বলতে একটি অঙ্গ ধোয়ার পর অন্য অঙ্গ ধুতে এতটুকু দেরী না করাকে বুঝানো হয় যাতে করে প্রথম অঙ্গটি শুকিয়ে যায়। কোনো কারণে এতটুকু দেরী হয়ে গেলে আবার নতুনভাবে অযু করবে।

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«تَوَضَّأَ رَجُلٌ فَتَرَكَ مَوْضِعَ ظُفُرٍعَلَى قَدَمِهِ، فَأَبْصَرَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَقَالَ: اِرْجِعْ فَأَحْسِنْ وُضُوْءَكَ، فَرَجَعَ ثُمَّ صَلَّى».

“জনৈক ব্যক্তি অযু করেছে ঠিকই তবে তার পায়ে নখ সমপরিমাণ জায়গা শুষ্ক থেকে যায়। তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যাও ভালোভাবে অযু করে আসো। অতঃপর সে ভালোভাবে অযু করে পুনরায় সালাত আদায় করল”[182]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে:

«رَأَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم رَجُلًا يُصَلِّي، وَفِيْ ظَهْرِ قَدَمِهِ لُـمْعَةٌ قَدْرُ الدِّرْهَمِ لَمْ يُصِبْهَا الْـمَاءُ، فَأَمَرَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم أَنْ يُعِيْدَ الْوُضُوْءَ وَالصَّلاَةَ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে সালাত পড়তে দেখলেন, অথচ তার পায়ের উপরিভাগে এক দিরহাম সমপরিমাণ জায়গা শুষ্ক দেখা যাচ্ছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পুনরায় অযু করে সালাত আদায় করতে আদেশ করেন”[183]

যদি অযুর অঙ্গগুলোর মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ওয়াজিব না হতো তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু শুষ্ক স্থানটি ধোয়ার আদেশ করতেন। সম্পূর্ণ অযু পুনরাবৃত্ত করার আদেশ করতেন না। তাহলে আমরা সহজেই বুঝতে পারলাম, অযুর অঙ্গগুলোর মাঝে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ফরয বা রুকন।

 অযুর  শর্তসমূহ:

অযু শুদ্ধ হওয়ার জন্য দশটি শর্ত রয়েছে তা নিম্নরূপ:

১. অযুকারী মুসলিম হতে হবে। অতএব, কাফির বা মুশরিক অযু করলেও তার অযু শুদ্ধ হবে না। তাই সে অযু বা গোসল করে কখনোই পবিত্র হতে পারবে না।

২. অযুকারী জ্ঞানসম্পন্ন থাকতে হবে। অতএব, পাগল ও মাতালের অযু শুদ্ধ হবে না যতক্ষণনা তাদের চেতনা ফিরে আসে।

৩. অযুকারী ভালোমন্দ ভেদাভেদজ্ঞান রাখে এমন হতে হবে। অতএব, বাচ্চাদের অযু শরী‘আতে ধর্তব্য নয়। তাদের অযু করা না করা সমান।

৪. নিয়্যাত করতে হবে। অতএব, নিয়্যাত ব্যতীত অযু গ্রহণযোগ্য হবে না।

৫. অযু শেষ হওয়া পর্যন্ত পবিত্রতা অর্জনের নিয়্যাত বহাল থাকতে হবে। অতএব, অযু চলাকালীন নিয়্যাত ভঙ্গ করলে অযু শুদ্ধ হবে না।

৬. অযু চলাকালীন অযু ভঙ্গের কোনো কারণ যেন পাওয়া না যায়। তা না হলে অযু তৎক্ষণাৎই ভেঙ্গে যাবে।

৭. অযুর পূর্বে মলমূত্র ত্যাগ করে থাকলে ঢিলাকুলুপ বা পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে হবে।

৮. অযুর পানি পবিত্র ও জায়েয পন্থায় সংগৃহীত হতে হবে।

৯. অযুর অঙ্গগুলোতে পানি পৌঁছুতে বাধা প্রদান করে এমন বস্তু অপসারণ করতে হবে।

১০. অযু ভঙ্গের কারণ সর্বদা পাওয়া যাচ্ছে এমন ব্যক্তির জন্য সালাতের ওয়াক্ত উপস্থিত হতে হবে।

“মূলতঃ সালাতের সময় হলেই কেবল এমন ব্যক্তিরা অযু করবে”

 অযুর  সুন্নাতসমূহ:

অযুর  মধ্যে যেমন ফরয রয়েছে তেমনিভাবে সুন্নাতও রয়েছে। অযুর সুন্নাতগুলো নিম্নরূপ:

 ১. মিসওয়াক করা:

অযু করার সময় মিসওয়াক করা সুন্নাত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِيْ لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ وُضُوْءٍ».

“আমার উম্মতের জন্য আদেশটি মানা যদি কষ্টকর না হতো তাহলে আমি ওদেরকে প্রত্যেক অযুর সময় মিসওয়াক করতে আদেশ করতাম”[184]

 ২. অযু করার পূর্বে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা:

তবে ঘুম থেকে জেগে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া ওয়াজিব। এ সংক্রান্ত হাদীস পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।

 ৩. অযুর অঙ্গগুলো ঘষেমলে ধৌত করা:

আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم بِثُلُثَيْ مُدٍّ فَجَعَلَ يَدْلُكُ ذِرَاعَهُ».

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এক মুদ (দু করতলভর্তি সমপরিমাণ) এর দু তৃতীয়াংশ পানি আনা হলে তিনি তা দিয়ে নিজ হস্ত মর্দন করেন[185]

. অযুর প্রতিটি অঙ্গ তিন তিন বার ধোয়া। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযুর অঙ্গগুলো বেশির ভাগ সময় তিন তিন বার ধুয়েছেন। তেমনিভাবে তিনি কখনো অযুর অঙ্গগুলো দু দুবার আবার কখনো এক একবার এবং কখনো কোনো অঙ্গ দুবার আবার কোনো অঙ্গ তিনবার ধুয়েছেন। সম্পর্কীয় সকল হাদীস পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।

. অযুর শেষে দো পড়া। সম্পর্কীয় হাদীস পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।

. অযুশেষে দু রাকাত (তাহিয়্যাতুল উযু) সালাত আদায় করা। সম্পর্কীয় হাদীসও পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।

. কোনো বাড়াবাড়ি ব্যতীত স্বাভাবিক পন্থায় ভালোভাবে অযু করা। অতএব, উত্তম পন্থা হচ্ছে ; বাড়াবাড়ি ছাড়া প্রতিটি অঙ্গ তিন তিনবার ধোয়া। চাই তা অযুর মধ্যে হোক বা গোসলে।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَغْتَسِلُ مِنْ إِنَاءٍ – هُوَالْفَرَقُ - مِنَ الْـجَنَابَةِ، قَالَ سُفْيَانُ: وَالْفَرَقُ ثَلاَثَةُ آصُعٍ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন সা’ তথা সাড়ে সাথ লিটার সমপরিমাণ পানি দিয়ে ফরয গোসল করতেন”[186]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَتَوَضَّأُ بِالْـمُدِّ وَيَغْتَسِلُ بِالصَّاعِ إِلَى خَمْسَةِ أَمْدَادٍ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মুদ দিয়ে অযু এবং চার বা পাঁচ মুদ দিয়ে গোসল করতেন”[187]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَتْ تَغْتَسِلُ هِيَ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فِيْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ يَسَعُ ثَلاَثَةَ أَمْدَادٍ أَوْ قَرِيْبًا مِنْ ذَلِكَ».

“তিনি ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কমবেশি তিন মুদ পানি দিয়ে একত্রে গোসল করতেন”[188]

উম্মে উমারাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَأُتِيَ بِإِنَاءٍ فِيْهِ مَاءٌ قَدْرُ ثُلُثَيِ الْـمُدِّ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এক মুদের দু’ তৃতীয়াংশ পানি আনা হলে তিনি তা দিয়ে অযু করেন”[189]

এ হাদীসগুলো থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ভালোভাবে অযু করতে হবে ঠিকই তবে পানি ব্যবহারে কোনো ধরণের বাড়াবাড়ি করা যাবে না।

আব্দুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بِتُّ عِنْدَ خَالَتِيْ مَيْمُوْنَةَ لَيْلَةً، فَلَمَّا كَانَ فِيْ بَعْضِ اللَّيْلِ قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَتَوَضَّأَ مِنْ شَنٍّ مُعَلَّقٍ وُضُوْءًا خَفِيْفًا وَقَامَ يُصَلَّيْ».

“একদা আমি আমার খালা মাইমূনাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট রাত্রিযাপন করেছিলাম। রাত্রের কিছু অংশ পেরিয়ে গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে টাঙ্গানো এক পুরাতন মশক থেকে পানি নিয়ে হালকাভাবে অযু করে সালাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান”[190]

‘আমর ইবন শু‘আইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার দাদা বলেছেন:

«جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ  صلى الله عليه وسلم يَسْأَلُهُ عَنِ الْوُضُوْءِ فَأَرَاهُ الْوُضُـوْءَ ثَلاَثًا ثَلاَثًا، ثُمَّ قَالَ: هَكَذَا الْوُضُوْءُ، فَمَنْ زَادَ عَلَى هَذَا فَقَدْ أَسَاءَ وَتَعَدَّى وَظَلَمَ».

“জনৈক গ্রাম্য সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাকে প্রতিটি অঙ্গ তিন তিন বার ধুয়ে অযু করে দেখিয়েছেন। এর পর বললেন: এভাবেই অযু করতে হয়। যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করল সে যেন অন্যায়, সীমাতিক্রম ও নিজের উপর অত্যাচার করল”[191]

আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফ্ফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«إِنَّهُ سَيَكُوْنُ فِيْ هَذِهِ الأُمَّةِ قَوْمٌ يَعْتَدُوْنَ فِي الطُّهُوْرِ وَالدُّعَاءِ».

“আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায় জন্ম নিবে যারা পবিত্রতা ও দো‘আর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে”[192]

 যে যে কারণে অযু নষ্ট হয়:

অযু করার পর নিম্নোক্ত কারণগুলোর কোনো একটি কারণ সংঘটিত হলে অযু বিনষ্ট হয়ে যাবে। কারণগুলো নিম্নরূপ:

 ১. মল-মূত্রদ্বার দিয়ে কোনো কিছু বের হলে:

বায়ু, বীর্য, মযী, ওদী, ঋতুস্রাব, নিফাস ইত্যাদি এরই অন্তর্ভুক্ত। এ সকল বস্তু মল বা মূত্রদ্বার দিয়ে বের হলে অযু ইবনষ্ট হয়ে যায়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَوۡ جَآءَ أَحَدٞ مِّنكُم مِّنَ ٱلۡغَآئِطِ أَوۡ لَٰمَسۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا﴾ [المائ‍دة: ٦]

“তোমাদের কেউ শৌচাগার থেকে মলমূত্র ত্যাগ করে আসলে অথবা স্ত্রী সহবাস করলে (পানি পেলে অযু বা গোসল করে নিবে) অতঃপর পানি না পেলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে”[সূরা আল-মায়েদাহ, আায়াত: ৬]

সাফওয়ান ইবন ‘আস্‌সাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَأْمُرُنَا إِذَا كُنَّا سَفْرًا أَنْ لاَ نَنْزِعَ خِفَافَنَا ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيْهِنَّ إِلاَّ مِنْ جَنَابَةٍ ؛ وَلَكِنْ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ وَنَوْمٍ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরে রওয়ানা করলে তিনি আমাদেরকে তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মলমূত্র ত্যাগ বা ঘুম যাওয়ার কারণে মোজা না খুলতে আদেশ করতেন। বরং মোজার উপর মাসাহ করতে বলতেন। তবে শুধু জানাবাতের গোসলের জন্য মোজা খুলতে বলতেন”[193]

‘আববাদ ইবন তামীম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার চাচা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অভিযোগ করলেন যে, কারো কারোর ধারণা হয় সালাতের মধ্যে অযু নষ্ট হয়েছে বলে। তখন তাকে কি করতে হবে? তিনি বললেন:

«لاَ يَنْصَرِفُ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيْحًا».

“সে সালাত ছেড়ে দিবে না যতক্ষণ না সে বায়ু নির্গমনধ্বনি বা দুর্গন্ধ পায়”[194]

মিকদাদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মযী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا وَجَدَ أَحَدُكُمْ ذَلِكَ فَلْيَنْضَحْ فَرْجَهُ وَلْيَتَوَضَّأْ وُضُوْءَهُ لِلصَّلاَةِ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: يَغْسِلُ ذَكَرَهُ وَيَتَوَضَّأُ».

“তোমাদের কারোর এমন হলে সে তার লজ্জাস্থান ধুয়ে সালাতের অযুর ন্যায় অযু করে নিবে”[195]

ইস্তিহাযা হলেও অযু করতে হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা বিনতে আবু হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা কে তার ইস্তিহাযা হলে বলেন,

«ثُمَّ تَوَضَّئِيْ لِكُلِّ صَلاَةٍ».

“অতঃপর প্রতি সালাতের জন্য অযু করবে”[196]

 ২. ঘুম বা অন্য যে কোনো কারণে অচেতন হলে:

বিশুদ্ধ মতে গভীর নিদ্রায় অযু ভেঙ্গে যায়। এ ব্যাপারে সাফ্ওয়ান ইবন ‘আস্সালের হাদীস পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।

‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وِكَاءُ السَّهِ الْعَيْنَانِ، فَمَنْ نَامَ فَلْيَتَوَضَّأْ».

“চক্ষুদ্বয় গুহ্যদ্বারের পাহারাদার। অতএব, যে ব্যক্তি ঘুমাবে তাকে অবশ্যই অযু করতে হবে”[197]

এ ছাড়া উন্মাদনা, সংজ্ঞাহীনতা ও মত্ততা ইত্যাদির কারণে চেতনাশূন্যতা দেখা দিলেও সকল আলেমের ঐকমত্যে অযু ভেঙ্গে যাবে।

৩. কোনো আবরণ ছাড়াই হাত দিয়ে লিঙ্গ বা গুহ্যদ্বার স্পর্শ করলে:

বুসরা বিনতে সাফওয়ান ও জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ».

“যে ব্যক্তি নিজ লিঙ্গ স্পর্শ করল সে যেন অযু করে নেয়”[198]

উম্মে হাবিবা ও আবু আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ

«مَنْ مَسَّ فَرْجَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ».

“যে ব্যক্তি নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ করল সে যেন অযু করে নেয়”[199]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا أَفْضَى أَحَدُكُمْ بِيَدِهِ إِلَى فَرْجِهِ وَلَيْسَ بَيْنَهُمَا سِتْرٌ وَلاَحِجَابٌ فَلْيَتَوَضَّأْ».

“তোমাদের কেউ কোনো আবরণ ছাড়াই নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে সে যেন অযু করে নেয়”

আরবীতে গুহ্যদ্বারকেও ফার্জ বলা হয়। তাই লিঙ্গ ও গুহ্যদ্বারের বিধান একই।[200]

 ৪. উটের গোশত খেলে:

বারা’ ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَنِ الْوُضُوْءِ مِنْ لُـحُـوْمِ الإِبِلِ؟ فَقَالَ: تَوَضَّؤُوْا مِنْهَا، وَسُئِلَ عَنْ لُحُوْمِ الْغَنَمِ؟ فَقَالَ: لاَ تَوَضَّؤُوْا مِنْهَا».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উটের গোশত খেয়ে অযু করতে হবে কিনা এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, উটের গোশত খেলে অযু করতে হবে। তেমনিভাবে তাঁকে ছাগলের গোশত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ছাগলের গোশত খেলে অযু করতে হবে না”[201]

 ৫. মুরতাদ (যে ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করেছে) হয়ে গেলে:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلۡإِيمَٰنِ فَقَدۡ حَبِطَ عَمَلُهُۥ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ﴾ [المائ‍دة: ٥]

“যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর কুফরি করবে তার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে পরকালে সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ﴾ [الزمر: ٦٥]

“আপনি যদি শির্ক করেন তাহলে আপনার সকল কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে”[সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৫]

 শরীর থেকে রক্ত বের হলে অযু নষ্ট হয় না:

শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্ত বের হলে অযু নষ্ট হবে না।

জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«خَرَجْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فِيْ غَزْوَةِ ذَاتِ الرِّقَاعِ، فَأَصَابَ رَجُلٌ اِمْرَأَةَ رَجُلٍ مِنَ الْـمُشْرِكِيْنَ، فَحَلَفَ أَنْ لاَ أَنْتَهِيَ حَتَّى أُهْرِيْقَ دَمًا فِيْ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ، فَخَرَجَ يَتْبَعُ أَثَرَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَنَزَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم مَنْزِلًا، فَقَالَ: مَنْ رَجُلٌ يَكْلَؤُنَا؟ فَانْتَدَبَ رَجُلٌ مِنَ الْـمُهَاجِرِيْنَ وَرَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ، فَقَالَ: كُوْنَا بِفَمِ الشِّعْبِ قَالَ: فَلَمَّا خَرَجَ الرَّجُلاَنِ إِلَى فَمِ الشِّعْبِ اِضْطَجَعَ الْـمُهَاجِرِيُّ، وَقَامَ الأَنْصَارِيُّ يُصَلِّي، وَأَتَى الرَّجُلُ، فَلَمَّا رَأَى شَخْصَهُ عَرَفَ أَنَّهُ رَبِيْئَةٌ لِلْقَوْمِ فَرَمَاهُ بِسَهْمٍ فَوَضَعَهُ فِيْهِ فَنَزَعَـهُ، حَتَّى رَمَاهُ بِثَلاَثَةِ أَسْهُمٍ، ثُمَّ رَكَعَ وَسَجَـدَ، ثُمَّ انْتَبَهَ صَاحِبُهُ، فَلَمَّا عَرَفَ أَنَّهُمْ قَدْ نَذِرُوْا بِهِ هَرَبَ، وَلَمَّا رَأَى الْـمُهَاجِرِيُّ مَا بِالأَنْصَارِيِّ مِنَ الدَّمِ قَالَ: سُبْحَانَ اللهِ! أَلاَ أَنْبَهْتَنِيْ أَوَّلَ مَا رَمَى؟ قَالَ: كُنْتُ فِيْ سُوْرَةٍ أَقْرَأُهَا، فَلَمْ أُحِبَّ أَنْ أَقْطَعَهَا».

“আমরা রাসূল এর সাথে যাতুর্ রিকা’ যুদ্ধে গিয়েছিলাম। অতঃপর জনৈক সাহাবী জনৈক মুশরিকের স্ত্রীকে আঘাত করলে মুশরিকটি কসম করে বসে এ কথা বলে যে, সাহাবীদের রক্ত প্রবাহিত না করা পর্যন্ত আমি কখনো ক্ষান্ত হবো না। এতটুকু বলেই সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছু নিয়েছে। ইতোমধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক গুহায় অবস্থান নিয়ে বললেন: তোমরা কে আছো আমাদের পাহারাদারী করবে? মুহূর্তেই জনৈক মুহাজির ও জনৈক আনসারী এ কাজের জন্য প্রস্ত্তত হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা উভয়ে গুহার মুখে অবস্থান কর। তারা উভয়ে গুহার মুখে পৌঁছলে মুহাজির সাহাবী ঘুমিয়ে পড়েন এবং আনসারী সাহাবী সালাত পড়তে শুরু করেন। ইতোমধ্যে মুশরিকটি পৌঁছল। সে আনসারী সাহাবীকে দেখেই বুঝতে পারল যে, সে পাহারাদার। তাই সে সাহাবীকে লক্ষ্য করে পাকা হাতে একটি তীর ছুঁড়তেই তা সাহাবীর শরীরে বিঁধে গেল। তবে বীর সাহাবী তীরটি হাতে টেনে খুলে ফেলতে সক্ষম হলেন। এমনকি মুশরিকটি তাকে তিনটি তীর মারতে সক্ষম হয়। অতঃপর তিনি দ্রুত রুকু সাজদাহ আদায় করেন। ইতোমধ্যে মুহাজির সাহাবী জেগে যান। মুশরিকটি সাহাবীদ্বয় তার অবস্থান সম্পর্কে অবগত হয়েছে বুঝতে পেরে দ্রুত পালিয়ে যায়। তখন মুহাজির সাহাবী আনসারী সাহাবীর গায়ে রক্ত দেখে বললেন: আশ্চর্য! প্রথম তীরের আঘাতের পরপরই আমাকে জাগালে না কেন? আনসারী বললেন: আমি একটি সূরাহ পড়ায় মগ্ন ছিলাম। তাই তা মাঝ পথে বন্ধ করে দেওয়া পছন্দ করি নি”[202]

এমন হতে পারে না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কে কিছুই জানেন নি অথবা জেনে থাকলেও রক্ত বের হলে যে অযু চলে যায় তা তাকে বলে দেন নি বা বলে থাকলেও তা আমাদের নিকট এখনো পৌঁছেনি। এ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, শরীর থেকে রক্ত নির্গমন অযু ভঙ্গ করে না।

 সালাতে অযু বিনষ্ট হলে কী করতে হবে:

সালাতে কারোর অযু ইবনষ্ট হলে সে নাকে হাত রেখে সালাতের কাতার থেকে বের হয়ে পুনরায় অযু করে সালাত আদায় করবে।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا أَحْدَثَ أَحَدُكُمْ فِيْ صَلاَتِهِ ؛ فَلْيَأْخُذْ بِأَنْفِهِ ثُمَّ لِيَنْصَرِفْ».

“সালাতে তোমাদের কারোর অযু বিনষ্ট হলে সে নিজের নাকের উপর হাত রেখে সালাত থেকে বের হয়ে যাবে”[203]

 যখন অযু করা মুস্তাহাব:

কতিপয় কারণ বা প্রয়োজনে অযু করা মুস্তাহাব। সে কারণ ও প্রয়োজনগুলো নিম্নরূপ:

 ১. যিকির ও দো‘আর জন্য:

যিকির ও দো‘আর জন্য অযু করা মুস্তাহাব।

আবু মূসা ‘আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আমি আবু ‘আমেরকে দেওয়া ওয়াদানুযায়ী তার পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সালাম, আল্লাহর নিকট তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন ও তার শাহাদাত সংবাদ পৌঁছালাম তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনতে বললেন। পানি আনা হলে তিনি দু’হাত উঁচিয়ে বললেন:

«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِيْ عَامِرٍ وَرَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَوْقَ كَثِيْرٍ مِنْ خَلْقِكَ مِنَ النَّاسِ».

“হে আল্লাহ! আপনি উবাইদ আবু ‘আমেরকে ক্ষমা করে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত খানা খুব উচিয়ে দো‘আ করেন। এমনকি তার বগলের শুভ্রতাও তখন দেখা যাচ্ছিল। অতঃপর তিনি দো‘আয় আরো বললেন: হে আল্লাহ! আপনি তাকে কিয়ামতের দিবসে অনেক মানুষের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করুন”[204]

 ২. ঘুমানোর পূর্বে:

ঘুমানোর আগে অযু করা মুস্তাহাব।

বারা’ ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوْءَكَ لِلصَّلاَةِ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الأَيْمَنِ».

“যখন তুমি শোয়ার ইচ্ছে করবে তখন সালাতের অযুর ন্যায় অযু করবে। অতঃপর ডান কাত হয়ে শয়ন করবে”[205]

 ৩. অযু নষ্ট হলে:

অযু ভঙ্গ হলেই অযু করা মুস্তাহাব।

বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَصْبَحَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَوْمًا فَدَعَا بِلاَلًا فَقَالَ: يَابِلاَلُ! بِمَ سَبَقْتَنِيْ إِلَى الْجَنَّةِ؟ إِنَّنِيْ دَخَلْتُ الْبَارِحَةَ الـْجَنَّةَ، فَسَمِعْتُ خَشْخَشَتَكَ أَمَامِيْ فَقَالَ بِلاَلُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! مَا أَذَّنْتُ قَطُّ إِلاَّ صَلَّيْتُ رَكْعَتَيْنِ، وَلاَ أَصَابَنِيْ حَدَثٌ قَطُّ إِلاَّ تَوَضَّأْتُ عِنْدَهُ».

“একদা ভোর বেলায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু কে ডেকে বললেন: হে বেলাল! কীভাবে তুমি আমার আগে জান্নাতে পদার্পণ করলে? গত রাত্রিতে আমি জান্নাতে প্রবেশ করে আমার সম্মুখ থেকে তোমার পদধ্বনি শুনেছি। বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: হে রাসুল! আমি যখনই আযান দিয়েছি তখনই দু’ রাকাত সালাত পড়েছি। আর যখনই অযু নষ্ট হয়েছে তখনই অযু করেছি”[206]

 ৪. প্রতি ওয়াক্ত সালাতের জন্য:

অযু থাকাবস্থায় প্রতি ওয়াক্ত সালাতের জন্য আবারো অযু করা মুস্তাহাব।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِيْ لأَمَرْتُهُمْ عِنْدَ كُلِّ صَلاَةٍ بِوُضُوْءٍ، وَمَعَ كُلِّ وُضُوْءٍ بِسِوَاكٍ»

“আদেশটি মানা যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর না হতো তাহলে আমি ওদেরকে প্রতি ওয়াক্ত সালাতের জন্য অযু করতে আদেশ করতাম। তেমনিভাবে প্রত্যেক অযুর সঙ্গে মিসওয়াক”[207]

 ৫. মৃত ব্যক্তিকে কবরমুখে বহন করার পর:

মৃত ব্যক্তিকে কবরমুখে বহন করার পর অযু করা মুস্তাহাব।

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ غَسَّلَ الْـمَيِّتَ فَلْيَغْتَسِلْ، وَمَنْ حَمَلَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ».

“যে ব্যক্তি মৃতকে গোসল দেয় তার জন্য উচিত এই যে, সে যেন গোসল করে। আর যে ব্যক্তি মৃতকে বহন করে তার উচিত সে যেন অযু করে”[208]

 ৬. বমি হলে:

বমি হলে অযু করা মুস্তাহাব।

আবু দারদা’ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَاءَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَأَفْطَرَ، فَتَوَضَّأَ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বমি করার পর সাওম ভেঙ্গে ফেলেন। অতঃপর অযু করেন”[209]

 ৭. আগুনে পাকানো কোনো খাবার খেলে:

আগুনে পাকানো কোনো খাবার খেয়ে অযু করা মুস্তাহাব।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«تَوَضَّؤُوْا مِمَّا مَسَّتِ النَّارُ»

“তোমরা আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে কিন্তু অযু করবে”[210]

এর বিপরীতে আব্দুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস, ‘আমর ইবন উমাইয়া, মাইমূনা ও আবু রাফি’ থেকে বর্ণিত, তারা বলেন,

«أَكَلَ رَسُوْلُ اللهِ  صلى الله عليه وسلمكَتِفَ شَاةٍ ثُمَّ صَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাগলের উপরিস্থ মাংসল বাহুমূল খেয়ে অযু না করে সালাত পড়েছেন”[211]

উক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আগুনে পাকানো কোনো খাবার খেয়ে অযু করা মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়।

 ৮. জুনুবী ব্যক্তি কোনো খাবার খেতে ইচ্ছে করলে:

জুনুবী (সহবাসের কারণে অপবিত্র) ব্যক্তি কোনো খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছে করলে তার জন্য অযু করা মুস্তাহাব।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا كَانَ جُنُبًا فَأَرَادَ أَنْ يَأْكُلَ أَوْ يَنَامَ تَوَضَّأَ وُضُوْءَهُ لِلصَّلاَةِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুনুবী হলে এবং তিনি ঘুমানো বা খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছে করলে সালাতের অযুর ন্যায় অযু করতেন”[212]

 ৯. দ্বিতীয়বার সহবাসের জন্য:

একবার স্ত্রী সহবাস করে গোসল না সেরে দ্বিতীয়বার সহবাস করতে চাইলে অযু করে নেওয়া মুস্তাহাব।

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُوْدَ فَلْيَتَوَضَّأْ»

“তোমাদের কেউ স্ত্রী সহবাস করে পুনর্বার সহবাস করতে চাইলে অযু করে নিবে”[213]

উপরন্তু প্রতিবার সহবাসের জন্য গোসল করতে হয় না। পরিশেষে শুধু একবার গোসলই যথেষ্ট।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَطُوْفُ عَلَى نِسَائِهِ بِغُسْلٍ وَاحِدٍ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল বিবিদের সাথে সহবাস করে একবারই গোসল করতেন”[214]

 ১০. জুনুবী ব্যক্তি গোসল না করে শোয়ার ইচ্ছে করলে:

জুনুবী ব্যক্তি গোসল না করে শোয়ার ইচ্ছে করলে তার জন্য অযু করা মুস্তাহাব।

আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম :

«أَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَرْقُدُ وَهُوَ جُنُبٌ؟ قَالَتْ: نَعَمْ، وَيَتَوَضَّأُ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জুনুবী অবস্থায় ঘুমাতেন? তিনি বললেন: হাঁ, তবে অযু করে নিতেন”[215]

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ

«أَيَرْقُدُ أَحَدُنَا وَهُوَ جُنُبٌ؟ قَالَ: نَعَمْ، لِيَتَوَضَّأْ ثُمَّ لِيَنَمْ حَتَّى يَغْتَسِلَ إِذَا شَاءَ».

“আমাদের কেউ জুনুবী অবস্থায় ঘুমাতে পারবে কি? তিনি বললেন: হাঁ, তবে অযু করে ঘুমাবে। পরে যখন মন চায় গোসল করে নিবে”[216]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো সহবাস করে ঘুমানোর পূর্বে গোসল করে নিতেন।

আব্দুল্লাহ ইবন আবু কাইস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম:

«كَيْفَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَصْنَعُ فِي الْـجَنَابَةِ؟ أَكَانَ يَغْتَسِلُ قَبْلَ أَنْ يَنَامَ أَمْ يَنَامُ قَبْلَ أَنْ يَغْتَسِلَ؟ قَالَتْ: كُلُّ ذَلِكَ قَدْ كَانَ يَفْعَلُ، رُبَّمَا اغْتَسَلَ فَنَامَ، وَرُبَّمَا تَوَضَّأَ فَنَامَ، قُلْتُ: اَلْـحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ جَعَلَ فِي الأَمْرِسَعَةً».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুনুবী হলে কি করতেন? ঘুমানোর আগে গোসল করতেন নাকি গোসলের আগে ঘুমাতেন। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, উভয়টাই করতেন। কখনো গোসল করে ঘুমাতেন। আর কখনো অযু করে ঘুমাতেন। আমি বললাম: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি দীন ইসলামে সহজতা রেখেছেন”[217]

উক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ঘুমানোর পূর্বে জুনুবী ব্যক্তির তিনের এক অবস্থা :

ক. জুনুবী ব্যক্তি অযু-গোসল ছাড়াই ঘুমুবে। তা সুন্নাত বহির্ভূত ও মাকরূহ।

খ. ইস্তিঞ্জা ও সালাতের অযুর ন্যায় অযু করে ঘুমুবে। এটি সুন্নাত সম্মত।

গ. অযু ও গোসল করে ঘুমুবে। এটি সুন্নাত সম্মত ও সর্বোত্তম পন্থা।

 মোজা, পাগড়ী ও ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ:

 ক. মোজার উপর মাসাহ করার বিধান:

মোজার উপর মাসাহ করা কুরআন, হাদীস ও ইজমা’ কর্তৃক প্রমাণিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَى ٱلۡكَعۡبَيۡنِ﴾ [المائ‍دة: ٦]

“তোমরা মাথা ও পদযুগল টাখনু পর্যন্ত মাসাহ কর”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬, লামের নিচে যেরের ক্বিরাত অনুযায়ী]

সা‘দ ইবন আবু ওয়াক্কাস, মুগীরা ইবন শো‘বা, ‘আমর ইবন উমাইয়া, জারীর, হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন,

«مَسَحَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَلَى الخُفَّيْنِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোজা জোড়ার উপর মাসাহ করেছেন”[218]

এ ছাড়াও কমবেশি সত্তর জন সাহাবা মোজা মাসাহ সংক্রান্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে যার জন্য যা সহজ তার জন্য তাই করা উত্তম। অতএব, যে ব্যক্তি মোজা পরিধান করাবস্থায় রয়েছে এবং তার মোজায় মোজা মাসাহ’র শর্তগুলোও পাওয়া যাচ্ছে তার জন্য উচিত মোজা জোড়া না খুলে মোজার উপর মাসাহ করা। কারণ, তাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের অনুসরণ ও অনুকরণ পাওয়া যাচ্ছে। আর যে ব্যক্তির পা উন্মুক্ত মোজা পরিহিতাবস্থায় নয় তার জন্য উচিত পদযুগল ধুয়ে ফেলা।

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ اللهَ يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى رُخَصُهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ تُؤْتَى مَعْصِيَتُهُ».

“আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন তাঁর দেওয়া সুবিধাদি গ্রহণ করা। যেমনিভাবে তিনি অপছন্দ করেন তাঁর শানে কোনো পাপ সংঘটন করা”[219]

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ ও ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ اللهَ يُحِبُّ أَنْ تُقْبَلَ رُخَصُهُ كَمَا يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى عَزَائِمُهُ».

“আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন তাঁর দেওয়া সুবিধাদি গ্রহণ করা। যেমনিভাবে তিনি পছন্দ করেন তাঁর দেওয়া ফরযগুলো পালন করা”[220]

 খ. মোজা মাসাহ করার শর্তসমূহ:

 ১. সম্পূর্ণ পবিত্রতাবস্থায় (অযু অবস্থায়) মোজা জোড়া পরিধান করতে হবে:

মুগীরা ইবন শো‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيْ سَفَرٍ، فَأَهْوَيْتُ لأَنْزِعَ خُفَّيْهِ فَقَالَ: دَعْهُمَا، فَإِنِّيْ أَدْخَلْتُهُمَا طَاهِرَتَيْنِ. فَمَسَحَ عَلَيْهِمَا».

“আমি কোনো এক সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে থাকাবস্থায় তিনি অযু করার সময় তাঁর মোজা জোড়া খুলতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, খুলো না। কারণ, আমি মোজাদ্বয় পবিত্রতাবস্থায়ই পরেছি। অতঃপর তিনি মোজা জোড়ার উপর মাসাহ করেন”[221]

 ২. ছোট অপবিত্রতার জন্য মোজা মাসাহ করবে:

বড় অপবিত্রতার জন্যে নয়। অতএব, গোসল ফরয হলে মোজার উপর মাসাহ করা যাবে না। বরং মোজাদ্বয় খুলে পদযুগল ধুয়ে নিতে হবে।

সাফওয়ান ইবন ‘আসসাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَأْمُرُنَا إِذَا كُنَّا سَفْرًا أَنْ لاَ نَنْزِعَ خِفَافَنَا ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيْهِنَّ إِلاَّ مِنْ جَنَابَةٍ وَلَكِنْ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ وَنَوْمٍ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরে রওয়ানা করলে তিনি আমাদেরকে তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মলমূত্র ত্যাগ ও ঘুমের কারণে মোজা না খুলতে আদেশ করতেন। বরং মোজার উপর মাসাহ করতে বলতেন। তবে জুনুবী হলে মোজা খুলতে বলতেন”[222]

 ৩. শুধু শরী‘আত নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মাসাহ করবে:

তা হচ্ছে মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুক্বীমের (যিনি আশি বা ততোধিক কিলোমিটার পথ ভ্রমণের নিয়্যাত করে ঘর থেকে বের হন নি) জন্য এক দিন এক রাত।

‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«جَعَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيْهِنَّ لِلْمُسَافِرِ، وَيَوْمًا وَلَيْلَةً لِلْمُقِيْمِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোজা মাসাহ’র সময়সীমা মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুক্বীম বা গৃহবাসীর জন্য এক দিন এক রাত নির্ধারণ করেছেন”[223]

আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«رَخَّصَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم لِلْمُسَافِرِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيْـهِنَّ، وَلِلْمُقِيْمِ يَوْمًا وَلَيْلَةً، إِذَا تَطَهَّرَ فَلَبِسَ خُفَّيْهِ أَنْ يَمْسَحَ عَلَيْهِمَا».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাফিরকে তিন দিন তিন রাত এবং মুক্বীমকে এক দিন এক রাত মোজা মাসাহ করার অনুমতি দিয়েছেন যখন তা পবিত্রতাবস্থায় পরা হয়”[224]

তবে এ সময়সীমা শুরু হবে মাসাহ’র পর অযু ভাঙলে পুনরায় অযু করার পর থেকে। তখন থেকে মুক্বীমের জন্য ২৪ ঘন্টা এবং মুসাফিরের জন্য ৭২ ঘন্টা মাসাহ’র জন্য নির্ধারিত।

৪. মোজা জোড়া সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হতে হবে:

অপবিত্র হলে তা যদি মূলগত হয় যেমন, মোজাগুলো গাধার চামড়া দিয়ে তৈরি, তাহলে এগুলোর উপর মাসাহ চলবে না। আর যদি মূলগত না হয় তাহলে নাপাকী দূরীকরণের পর এগুলোর উপর মাসাহ করা যাবে।

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَيْنَمَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يُصَلِّيْ بِأَصْحَابِهِ إِذْ خَلَعَ نَعْلَيْهِ فَوَضَعَهُمَا عَنْ يَسَارِهِ، فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ الْقَوْمُ أَلْقَوْا نِعَالَهُمْ، فَلَمَّا قَضَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم صَلاَتَهُ قَالَ: مَاحَمَلَكُمْ عَلَى إِلْقَاءِ نِعَالِكُمْ؟ قَالُوْا: رَأَيْنَاكَ أَلْقَيْتَ نَعْلَيْكَ فَأَلْقَيْنَا نِعَالَنَا، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم : إِنَّ جِبْرِيْلَ أَتَانِيْ فَأَخْبَرَنِيْ أَنَّ فِيْهِمَا قَذَرًا أَوْ قَالَ: أَذىً، وَقَالَ: إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ إِلَى الـْمَسْـجِدِ فَلْيَنْظُرْ، فَإِنْ رَأَى فِيْ نَعْلَيْهِ قَذَرًا أَوْ أَذَىً، فَلْيَمْسَحْهُ وَلْيُصَلِّ فِيْهِمَا».

“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে সঙ্গে নিয়ে সালাত পড়ছিলেন। হঠাৎ তিনি সালাতের মধ্যেই নিজ জুতা জোড়া পা থেকে খুলে নিজের বাঁ দিকে রাখলেন। তা দেখে সাহাবীগণও নিজ নিজ জুতাগুলো খুলে ফেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন: তোমাদের কী হলো, জুতাগুলো খুলে ফেললে কেন? সাহাবীগণ বললেন: আপনাকে খুলতে দেখে আমরাও খুলে ফেলেছি। তা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আমার জুতা জোড়ায় ময়লা (নাপাকী) রয়েছে। তাই আমি জুতা জোড়া খুলে ফেললাম। অতএব, তোমাদের কেউ মসজিদে আসলে প্রথমে নিজ জুতা জোড়া ভালোভাবে দেখে নিবে। অতঃপর তাতে কোনো ময়লা বা নাপাকী পরিলক্ষিত হলে তা জমিনে ঘষে নিবে এবং তা পরেই সালাত আদায় করবে”[225]

উক্ত হাদীস থেকে আমরা এটাই বুঝতে পারলাম যে, অপবিত্র কোনো পোশাক-পরিচ্ছদ পরে সালাত আদায় করলে সালাত আদায় হবে না। বরং তা যে কোনো ভাবে পবিত্র করে নিতে হবে। আর মোজা মাসাহ কিন্তু বাহ্যিক নাপাকী দূরীকরণের জন্য কোনোমতেই যথেষ্ট নয়।

৫. মোজা জোড়া টাখনু পর্যন্ত পদযুগল ঢেকে রাখতে হবে:

তেমনিভাবে ঘন সুতার হতে হবে যাতে পায়ের রং বুঝা না যায়। চামড়ার মোজা হলে তো আরো ভালো। কারণ, তাতে মাসাহ’র ব্যাপারে বিজ্ঞ আলিমদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। তবে তা শর্ত করা অমূলক। কারণ, মোজা মাসাহ শরী‘আতে যে সুবিধার জন্য চালু করা হয়েছে তা অন্য মোজার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে ঘন সুতার হওয়ার শর্ত এ জন্যই করা হয়েছে যে, যেন তা প্রয়োজনের কারণেই পরা হয়েছে তা বুঝা যায়। শুধু ফ্যাশনের জন্য শরী‘আত এ সুযোগ দিতে পারে না। মোজা সামান্য ছেঁড়া থাকলে তাতে কোনো অসুবিধে নেই। তবে বেশি ছেঁড়া হলে চলবে না।

 ৬. মোজা জোড়া জায়েয পন্থায় সংগৃহীত ও শরী‘আত সম্মত হতে হবে:

এ জন্যেই চোরিত, অপহৃত, জীবন্ত পশুপাখির ছবি বিশিষ্ট ও পুরুষের জন্য রেশমি কাপড়ের তৈরি মোজার উপর মাসাহ করা যাবে না। কারণ, মোজার উপর মাসাহ করা শরী‘আত প্রদত্ত একটি সুবিধা। তাই এ সুবিধা গ্রহণের জন্য কোনো অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা যাবে না। তেমনিভাবে হারাম মোজা খুলে ফেলা আবশ্যক। কারণ, উহার উপর মাসাহ করার সুবিধে দেওয়া মানে হারাম কাজে রত থাকায় সহযোগিতা করা। আর তা কখনোই ইসলামী শরী‘আত সমর্থন করে না।

৭. মাসাহ’র সময়সীমা পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মোজা খোলা যাবে না:

মোজা খুলে ফেললে পুনরায় পা ধুয়ে অযু করতে হবে। মাসাহ করা চলবে না।

 যখন মাসাহ ভঙ্গ হয়:

১. গোসল ফরয হলে। তখন গোসলই করতে হবে। মাসাহ’র কোনো প্রশ্নই আসে না।

২. মাসাহ’র পর মোজা জোড়া খুলে ফেললে। তখন পা ধুয়ে অযু করতে হবে। মাসাহ করা যাবে না।

 ৩. মাসাহ’র নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে।

 মাসাহ করার পদ্ধতি:

মোজা বা জাওরাবের উপরিভাগ মাসাহ করবে। তলা নয়।

‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لَوْ كَانَ الدِّيْنُ بِالرَّأْيِ لَكَانَ أَسْفَلُ الْـخُفِّ أَوْلَى بِالْـمَسْحِ مِنْ أَعْلاَهُ، وَقَدْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَمْسَحُ عَلَى ظَاهِرِ خُفَّيْهِ».

“যদি দীন ইসলাম মানব বুদ্ধিপ্রসূত হতো তাহলে মোজার উপরিভাগের চাইতে নিম্নভাগই মাসাহ’র জন্য উত্তম বিবেচিত হতো। কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মোজার উপরিভাগ মাসাহ করতে দেখেছি”[226]

মুগীরা ইবন শো‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَمْسَحُ عَلَى ظَهْرِالْـخُفَّيْنِ».

“রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোজার উপরিভাগ মাসাহ করতেন”[227]

মোজা মাসাহ’র নিয়ম হচ্ছে: ডান হাত ডান পায়ের অগ্রভাগে এবং বাম হাত বাম পায়ের অগ্রভাগে রেখে উভয় হাত জঙ্ঘার দিকে একবার টেনে নিবে।

 জাওরাবের উপর মাসাহ:

আরবী ভাষায় জাওরাব বলতে মোজার পরিবর্তে পায়ের উপর পরা বস্তুকে বুঝানো হয়। মোজা মাসাহ’র ন্যায় জাওরাবের উপরও মাসাহ করা যায়। মুগীরা ইবন শো‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«تَوَضَّأَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم وَمَسَحَ عَلَى الْجَوْرَبَيْنِ وَالنَّعْلَيْنِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করার সময় জাওরাব ও জুতার উপর মাসাহ করেছেন”[228]

 পাগড়ীর উপর মাসাহ:

চিবুকের নিচ দিয়ে পেঁচিয়ে মজবুত করে মাথায় বাঁধা পাগড়ীর উপরও মাসাহ করা যায়।

‘আমর ইবন উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَمْسَحُ عَلَى عِمَامَتِهِ».

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাগড়ীর উপর মাসাহ করতে দেখেছি”[229]

বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَسَحَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَلَى الْـخُفَّيْنِ وَالْخِمَارِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোজা ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করেছেন”[230]

সাউবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم سَرِيَّةً فَأَصَابَهُمُ الْبَرْدُ، فَلَمَّا قَدِمُوْا عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم أَمَرَهُمْ أَنْ يَسْمَحُوْا عَلَى الْعَصَائِبِ وَالتَّسَاخِيْنِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সেনাবাহিনীকে যুদ্ধে পাঠালে (মাথা ও পা উন্মুক্ত করে মাথা মাসাহ ও পা ধোয়ার কারণে) তাদের ঠাণ্ডা লেগে যায়। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলে তিনি তাদেরকে পাগড়ী ও জাওরাবের উপর মাসাহ করার আদেশ করেন”[231]

পাগড়ীর উপর মাসাহ করার নিয়ম হচ্ছে: পুরো পাগড়ীর উপর মাসাহ করবে অথবা কপাল ও পাগড়ী উভয়টাই মাসাহ করবে।

মুগীরা ইবন শো‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَمَسَحَ بِنَاصِيَتِهِ وَعَلَى الْعِمَامَةِ وَعَلَى الْـخُفَّيْنِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করার সময় কপাল, পাগড়ী ও মোজা মাসাহ করেছেন”[232]

জাওরাব ও পাগড়ী মাসাহ’র ক্ষেত্রে মোজা মাসাহ’র শর্তগুলো প্রযোজ্য।

 ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ:

ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করার হাদীসগুলো দুর্বল হলেও উহাকে মোজা মাসাহ’র সাথে তুলনামূলক বিবেচনা করলে ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করার যুক্তিযুক্ততা সুস্পষ্ট হয়ে যায়। কারণ, মোজা মাসাহ’র চাইতে ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। অতএব, সহজতার জন্য যদি শরী‘আতে মোজা মাস্হের বিধান থাকতে পারে তাহলে ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করার বিধানও শরী‘আতে অবশ্যই রয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মোজা ও ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তা নিম্নরূপ:

১. ব্যান্ডেজ খোলা ক্ষতিকর হলেই উহার উপর মাসাহ করা যায়। নতুবা নয়। মোজা মাসাহ’র ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রযোজ্য নয়।

২. ব্যান্ডেজ পুরোটার উপরই মাসাহ করতে হয়। তবে ধোয়া আবশ্যক এমন স্থানে ব্যান্ডেজটি বাঁধা না হলে উহার উপর মাসাহ করতে হবে না। কারণ, ব্যান্ডেজ পুরোটা মাসাহ করতে কোনো অসুবিধে নেই। এর বিপরীতে মোজা পুরোটা মাসাহ করা কষ্টকর। এ জন্য সুন্নাত অনুযায়ী মোজার উপরিভাগ মাসাহ করলেই চলে।

৩. ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করার নির্ধারিত কোনো সময়সীমা নেই। কারণ, তা প্রয়োজন বলেই করতে হয়। সে জন্য প্রয়োজন যতক্ষণই থাকবে ততক্ষণই মাসাহ করবে।

. উভয় নাপাকীর সময় ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করা যায়। কিন্তু মোজা মাসাহ শুধু ছোট নাপাকীর জন্যে।

. পবিত্রতার বহুপূর্বে ব্যান্ডেজ বাঁধা হলেও উহার উপর মাসাহ করা যাবে। কিন্তু মোজা মাসাহ জন্য পবিত্রতার পরেই মোজা পরতে হয়।

৬. ব্যান্ডেজ প্রয়োজনানুসারে যে কোনো অঙ্গে বাঁধা যায়। কিন্তু মোজা শুধু পায়েই পরতে হয়। অন্য কোথাও নয়।

 ক্ষত-বিক্ষত স্থানের শরঈ বিধান:

ধোয়া আবশ্যক এমন কোনো অঙ্গ ক্ষত বিক্ষত হলে তা চারের এক অবস্থা থেকে খালি হবে না। তা নিম্নরূপঃ

১. ক্ষত স্থানটি এখনো উন্মুক্ত এবং তা ধোয়া ক্ষতিকরও নয়। তা হলে অঙ্গটি ধুতে হবে।

২. ক্ষত স্থানটি এখনো উন্মুক্ত তবে তা ধোয়া ক্ষতিকর।

এমতাবস্থায় উহার উপর মাসাহ করতে হবে।

 ৩. ক্ষত স্থানটি এখনো উন্মুক্ত তবে উহা ধোয়া বা মাসাহ করা উভয়ই ক্ষতিকর।

এমতাবস্থায় উহার উপর ব্যান্ডেজ বেঁধে মাসাহ করতে হবে। তাও সম্ভবপর না হলে তায়াম্মুম করবে।

 ৪. ক্ষত স্থানটি ব্যান্ডেজ করা আছে।

এমতাবস্থায় উহার উপর মাসাহ করবে। ধুতে হবে না। তেমনিভাবে কোনো অঙ্গ মাসাহ করলে উহার বিকল্প তায়াম্মুমের কোনো প্রয়োজন থাকে না।


গোসল

 যখন গোসল করা ফরয:

নিম্নোক্ত চারটি কারণের যে কোনো একটি কারণ সংঘটিত হলে যে কোনো পুরুষ বা মহিলার উপর গোসল করা ফরয। উপরন্তু মহিলাদের গোসল ফরয হওয়ার জন্য আরো দু’টি বাড়তি কারণ রয়েছে। সে কারণগুলো নিম্নরূপ:

 ১. উত্তেজনাসহ বীর্যপাত হলে:

উত্তেজনাসহ বীর্যপাত হলে গোসল ফরয হয়ে যায়। তেমনিভাবে স্বপ্নদোষ হলেও। তবে তাতে উত্তেজনার শর্ত নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِن كُنتُمۡ جُنُبٗا فَٱطَّهَّرُواْۚ﴾ [المائ‍دة: ٦]

“তোমরা জুনুবী হলে ভালোভাবে গোসল করে নিবে”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّمَا الْـمَاءُ مِنَ الْـمَاءِ».

“বীর্যপাত হলেই গোসল করতে হয়”[233]

‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا رَأَيْتَ الْمَذْيَ فَاغْسِلْ ذَكَرَكَ، وَتَوَضَّأْ وُضُوْءَكَ لِلصَّلاَةِ، فَإِذَا فَضَخْتَ الْمَاءَ فَاغْتَسِلْ».

“মযি দেখতে পেলে লিঙ্গটি ধুয়ে সালাতের অযুর ন্যায় অযু করবে। আর বীর্যপাত হলে গোসল করে নিবে”[234]

 স্বপ্নদোষ:

যে কোনো ব্যক্তির (পুরুষ হোক বা মহিলা) স্বপ্নদোষ হলে তদুপরি কাপড়ে বা শরীরে বীর্যের কোনো দাগ পরিলক্ষিত হলে তাকে গোসল করতে হবে। তবে কোনো দাগ পরিলক্ষিত না হলে তাকে গোসল করতে হবে না। যদিও স্বপ্নদোষের পুরো চিত্রটি তার মনে পড়ে। পুরুষের যেমন স্বপ্নদোষ হয় তেমনিভাবে মহিলাদেরও হয়।

উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একদা উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন: মহিলাদের স্বপ্নদোষ হলে গোসল করতে হবে কি? তিনি বললেন:

«نَعَمْ، إِذَا رَأَتِ الْـمَاءَ»

“হ্যাঁ, যদি সে (কাপড়ে বা শরীরে) বীর্য দেখতে পায়। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা এ কথা শুনে লজ্জায় মুখ ঢেকে নিলেন এবং বলেন, হে রাসুল! মেয়েদেরও কি স্বপ্নদোষ হয়? তখন তিনি বললেন”:

«نَعَمْ، تَرِبَتْ يَمِيْنُكِ، فَبِمَ يُشْبِهُهَا وَلَدُهَا»

“হ্যাঁ, তোমার হাত ধূলিধূসরিত হোক, (যদি তাদের স্বপ্নদোষ নাই হয়) তাহলে সন্তান কীভাবে তাদের রং ও রূপ ধারণ করে”[235]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে:

«إِنَّ مَاءَ الرَّجُلِ غَلِيْظٌ أَبْيَضُ، وَمَاءُ الـْمَرْأَةِ رَقِيْقٌ أَصْفَرُ فَإِذَا عَلاَ مَاؤُهَا مَاءَ الرَّجُلِ أَشْبَهَ الْوَلَدُ أَخْوَالَهُ، وَإِذَا عَلاَ مَاءُ الرَّجُلِ مَاءَهَا أَشْبَهَ أَعْمَامَهُ».

“পুরুষের বীর্য গাঢ় শুভ্র। আর মেয়েদের বীর্য পাতলা হলদে। যদি মহিলার বীর্য পুরুষের বীর্যের আগে ও অধিকহারে পতিত হয় তাহলে বাচ্চাটি মামাদের রং ও গঠন ধারণ করবে। আর যদি পুরুষের বীর্য মহিলার বীর্যের আগে ও অধিকহারে পতিত হয় তাহলে বাচ্চাটি চাচাদের রং ও গঠন ধারণ করবে”[236]

 ঘুম থেকে জেগে পোশাকে আর্দ্রতা দেখতে পেলে:

কেউ ঘুম থেকে জেগে নিজ পোশাকে আর্দ্রতা দেখতে পেলে তা তিনের এক অবস্থা থেকে খালি হবে না। তা নিম্নরূপ:

 ১. সে নিশ্চিত যে, এ আর্দ্রতা বীর্যের।

এমতাবস্থায় তাকে গোসল করতে হবে। স্বপ্নদোষের কথা স্মরণে আসুক বা নাই আসুক।

যুবাইদ ইবন সাল্ত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ رضي الله عنهما إِلَى الْـجُـرُفِ، فَنَظَرَ فَإِذَا هُوَ قَدِ احْتَلَمَ، وَصَلَّى، وَلَمْ يَغْتَسِلْ فَقَالَ: وَاللهِ مَا أُرَانِيْ إِلاَّ قَدِ احْتَلَمْتُ وَمَا شَعَرْتُ، وَصَلَّيْتُ، وَمَا اغْتَسَلْتُ، فَاغْتَسَلَ، وَغَسَـلَ مَا رَأَى فِيْ ثَوْبِهِ، وَنَضَحَ مَا لَمْ يَرَ، وَأَذَّنَ، وَأَقَامَ، ثُمَّ صَلَّى بَعْدَ اِرْتِفَاعِ الضُّحَى».

“উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে জুরুফের দিকে রওয়ানা হলাম। হঠাৎ তিনি পোশাকের দিকে লক্ষ্য করে বুঝতে পারলেন যে, স্বপ্নদোষ হওয়ার পরও তিনি গোসল না করে সালাত পড়েছেন। অতঃপর তিনি বললেন: আল্লাহর কসম! আমার স্বপ্নদোষ হয়েছে; অথচ আমার খবর নেই। এমতাবস্থায় আমি গোসল না করে সালাত পড়েছি। এরপর তিনি গোসল করেন এবং কাপড়ের দৃষ্ট নাপাকীটুকু ধুয়ে ফেলেন ও অদৃষ্ট নাপাকীটুকুর জন্য পানি ছিঁটিয়ে দেন। পরিশেষে তিনি দ্বিপ্রহরের পূর্ব মুহূর্তে আযান-ইকামাত দিয়ে উক্ত সালাত আদায় করেন”[237]

 ২. সে নিশ্চিত যে, এ আর্দ্রতা বীর্যের নয়।

এমতাবস্থায় তাকে গোসল করতে হবে না। বরং দৃষ্ট নাপাকীটুকু ধুয়ে ফেলবে।

 ৩. সে নিশ্চিতভাবে জানে না যে, এ আর্দ্রতা বীর্যের না মযির।

এ প্রকার আবার দু’য়ের এক অবস্থা থেকে খালি নয়। তা নিম্নরূপঃ

ক. সে স্মরণ করতে পারছে যে, সে ঘুমানোর পূর্বে নিজ স্ত্রীর সাথে কোলাকুলি, চুমাচুমি ইত্যাদি করেছে অথবা সে সহবাসের চিন্তা ও কামোত্তেজনার সহিত স্ত্রীর দিকে তাকিয়েছে। এমতাবস্থায় তাকে গোসল করতে হবে না। বরং সে লিঙ্গ ও অন্ডকোষ ধুয়ে সালাতের অযুর ন্যায় অযু করবে। কারণ, সাধারণত এ সকল পরিস্থিতিতে মযিই বের হয়ে থাকে।

খ. সে স্মরণ করতে পারছে যে, সে ঘুমের পূর্বে উপরোক্ত আচরণ করে নি; যাতে মযি বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমতাবস্থায় তাকে গোসল করতে হবে।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَنِ الرَّجُلِ يَجِدُ الْبَلَلَ، وَلاَ يَذْكُرُ اِحْتِلاَمًا ؟ قَالَ: يَغْتَسِلُ، وَعَنِ الرَّجُلِ يَرَى أَنَّهُ قَدِ احْتَلَمَ، وَلاَ يَجِدُ الْبَلَلَ ؟ قَالَ: لاَ غُسْلَ عَلَيْهِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, জনৈক ব্যক্তি নিজ পোশাকে আর্দ্রতা পেয়েছে। তবে স্বপ্নদোষের কথা তার স্মরণে নেই। সে কি করবে? তিনি বললেন: গোসল করবে। অন্য ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, তার স্বপ্নদোষ হয়েছে ঠিকই। তবে সে নিজ পোশাকে আর্দ্রতা দেখতে পায় নি। সে কি করবে? তিনি বললেন: তাকে গোসল করতে হবে না”[238]

 ২. স্ত্রীসহবাস করলে:

স্ত্রীসঙ্গম করলে গোসল করতে হয়। বীর্যপাত হোক বা নাই হোক।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِن كُنتُمۡ جُنُبٗا فَٱطَّهَّرُواْ﴾ [المائ‍دة: ٦]

“তোমরা জুনুবী হলে ভালোভাবে গোসল করে নিবে”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا جَلَسَ بَيْنَ شُعَبِهَا الأَرْبَعِ، وَمَسَّ الْخِتَانُ الْخِتَانَ، فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ»

“যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীসঙ্গমের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে নেয় এবং পুরুষের লিঙ্গাগ্র স্ত্রীর যোনিদ্বারকে অতিক্রম করে (বীর্যপাত হোক বা নাই হোক) তখন গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়”[239]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا جَلَسَ بَيْنَ شُعَبِهَا الأَرْبَعِ ثُمَّ جَهَدَهَا، فَقَدْ وَجَبَ الْغَسْلُ».

“যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীসঙ্গমের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে নেয়। অতঃপর রমণের মাধ্যমে নিজ স্ত্রীকে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত করে দেয়। এমতাবস্থায় তার বীর্যপাত হোক বা নাই হোক তাকে অবশ্যই গোসল করতে হবে”[240]

 জানাবত (বীর্যপাত সংক্রান্ত অপবিত্রতা) বিষয়ক বিধান :

 জুনুবী মহিলার কেশ সংক্রান্ত মাসআলা:

জানাবতের গোসলের সময় মহিলাদের (মজবুত করে বাঁধা) বেণী খুলতে হয় না।

উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম: হে আল্লাহর রাসুল! আমি খুব মজবুত করে বেণী বেঁধে থাকি। জানাবতের গোসলের সময় তা খুলতে হবে কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তদুত্তরে বললেন:

«لاَ، إِنَّمَا يَكْفِيْكِ أَنْ تَحْثِيَ عَلَىْ رَأْسِكِ ثَلاَثَ حَثَيَاتٍ، ثُمَّ تُفِيْضِيْنَ عَلَيْكِ الـْمَاءَ فَتَطْهُرِيْنَ».

“বেণী খুলতে হবে না। তোমার জন্য এটিই যথেষ্ট যে, মাথার উপর তিন কোষ পানি ঢেলে দিবে। অতঃপর পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করবে। তাতেই পবিত্র হয়ে যাবে। তবে ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য যে গোসল করা হয় তাতে বেণী খোলা মুস্তাহাব”[241]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ঋতুশেষে গোসল করার সময় আদেশ করের।

«اُنْقُضِيْ شَعْرَكِ، وَاغْتَسِلِي»

“বেণী খুলে গোসল সেরে নাও”[242]

 জুনুবী ব্যক্তির সাথে মেলামেশা বা মোসাফাহা:

জুনুবী ব্যক্তি বাস্তবিকপক্ষে এমনভাবে নাপাক হয় না যে, তাকে ছোঁয়া যাবে না। শুধু এতটুকু যে, ইসলামী শরী‘আত তাকে বিধানগতভাবে নাপাক সাব্যস্ত করে গোসল করা ফরয করে দিয়েছে। সুতরাং তার সাথে উঠা-বসা, মেলামেশা, খাওয়া-পান করা, মোসাফাহা ইত্যাদি জায়েয।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لَقِيَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم وَأَنَا جُنُبٌ، فَأَخَذَ بِيَدِيْ فَمَشَيْتُ مَعَهُ حَتَّى قَعَدَ فَانْسَلَلْتُ فَأَتَيْتُ الرَّحْلَ فَاغْتَسَلْتُ ثُمَّ جِئْتُ وَهُوَ قَاعِدٌ، فَقَالَ: أَيْنَ كُنْتَ يَا أَبَا هِرٍّ؟ فَقُلْتُ لَهُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! لَقِيْتَنِيْ وَأَنَا جُنُبٌ، فَكَرِهْتُ أَنْ أُجَالِسَكَ حَتَّى أَغْتَسِلَ، فَقَالَ: سُبْحَانَ اللهِ يَا أَبَا هِرٍّ، إِنَّ الْـمُؤْمِنَ لاَ يَنْجُسُ».

“একদা জুনুবী অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তিনি আমার হাত ধরলে আমি তাঁর সাথে চলতে থাকি। অতঃপর তিনি এক জায়গায় বসলেন। ইত্যবসরে আমি চুপে চুপে ঘরে এসে গোসল সেরে তাঁর নিকট উপস্থিত হই। তিনি তখনো বসা ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন: হে আবু হুরায়রা! তুমি কোথায় ছিলে? আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন; অথচ আমি জুনুবী। অতএব, গোসল করার পূর্বেই আপনার সাথে উঠাবসা করবো তা আমি পছন্দ করি নি। তিনি বললেন: সুবহানাল্লাহ্! (আশ্চর্য) মুমিন ব্যক্তি (বাস্তবিকপক্ষে) কখনো নাপাক হয় না”[243]

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَرْسَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِلَىْ رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ، فَجَاءَ وَرَأْسُهُ يَقْطُرُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم لَعَلَّنَا أَعْجَلْنَاكَ، فَقَالَ: نَعَمْ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا أُعْجِلْتَ أَوْ قُحِطْتَ فَعَلَيْكَ الْوَضُوْءَ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক আনসারীকে ডেকে পাঠালে সে দ্রুত গোসল সেরে তাঁর নিকট উপস্থিত হয়। তখনো তার মাথা থেকে পানি ঝরছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে বললেন: মনে হয় আমি তোমাকে তাড়াহুড়োয় ফেলে দিয়েছি। সে বললো: জী হ্যাঁ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যখন সঙ্গম সম্পন্ন অথবা বীর্যপাত না হয় তখন অযু করলেই চলবে গোসল করতে হবে না। তবে সালাতের জন্য অবশ্যই গোসল করতে হবে”[244]

 জুনুবী ব্যক্তির পানাহার, নিদ্রা ও পুনঃসহবাস:

জুনুবী ব্যক্তি লজ্জাস্থান ধৌত করে শুধু অযু সেরেই ঘুমুতে বা কোনো খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।

একদা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেনঃ আমরা কেউ জুনুবী অবস্থায় ঘুমাতে পারবো কি? তিনি বললেন:

«نَعَمْ، إِذَا تَوَضَّأَ»

“হ্যাঁ, তবে অযু করে নিলে”[245]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا كَانَ جُنُبًا، فَأَرَادَ أَنْ يَأْكُلَ أَوْ يَنَامَ، تَوَضَّأَ وُضُوْءَهُ لِلصَّلاَةِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুনুবী অবস্থায় যখন ঘুমুতে অথবা কিছু খেতে ইচ্ছে করতেন তখন সালাতের অযুর ন্যায় অযু করে নিতেন”[246]

জুনুবী অবস্থায় আবারো সহবাস করতে চাইলে অযু করে নিতে হয়।

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا أَتَىْ أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ، ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُوْدَ، فَلْيَتَوَضَّأْ».

“তোমাদের কেউ একবার স্ত্রীসহবাস করে আবারো করতে চাইলে তখন সে অযু করে নিবে”[247]

৩. কোনো কাফির ব্যক্তি মুসলিম হলে। চাই সে আদতেই কাফির থেকে থাকুক অতঃপর মুসলিম হয়েছে অথবা ইসলাম গ্রহণ করার পর মুরতাদ (পুনরায় কাফির) হয়ে অতঃপর মুসলিম হয়েছে।

ক্বাইস ইবন ‘আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم أُرِيْدُ الإِسْلاَمَ، فَأَمَرَنِيْ أَنْ أَغْتَسِلَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ».

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ইসলাম গ্রহণের জন্য আসলে তিনি আমাকে বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করতে আদেশ করেন”[248]

তেমনিভাবে যখন কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে নিজ অন্তরকে নিষ্কলুষ করে নিল তখন তার শরীরকেও গোসলের মাধ্যমে পবিত্র করে নিতে হবে।

 ৪. যুদ্ধক্ষেত্রের শহীদ ব্যতীত যে কোনো মুসলিম ইন্তেকাল করলে।

আব্দুল্লাহ ইবন ‘আববাস্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَيْنَمَا رَجُلٌ وَاقِفٌ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم بِعَرَفَـةَ، إِذْ وَقَعَ مِنْ رَاحِلَتِهِ، فَوَقَصَتْهُ فَمَاتَ، فَذُكِرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَقَالَ: اِغْسِلُوْهُ بِمَاءٍ، وَ سِدْرٍ، وَكَفِّنُوْهُ فِيْ ثَوْبَيْنِ، وَلاَ تُحَنِّطُوْهُ، وَلاَ تُخَمِّرُوْا رَأْسَهُ، فَإِنَّ اللهَ يَبْعَثُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُلَبِّيًا».

“একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথেই হজ মৌসুমে আরাফায় অবস্থান করছিল। এমতাবস্থায় হঠাৎ সে উট থেকে পড়ে গেলে তার ঘাড় ভেঙ্গে যায়। কিছুক্ষণ পর সে মারা গেলে তার ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ণগোচরে আনা হলে তিনি বললেন: তাকে বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও। অতঃপর তাকে খোশবু লাগিয়ে ইহরামের কাপড় দু’টিতেই কাফন দিয়ে দাও। কিন্তু তার মাথা ঢেকে দিবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিবসে তালবিয়্যাহ্ পড়াবস্থায়ই পুনরুত্থিত করবে”[249]

উম্মে ‘আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم وَ نَحْنُ نَغْسِلُ اِبْنَتَهُ فَقَالَ: اِغْسِلْنَهَا ثَلاَثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ إِنْ رَأَيْتُنَّ ذَلِكَ بِمَاءٍ وَ سِدْرٍ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এসেছেন যখন আমরা তাঁর মেয়েকে গোসল দিচ্ছিলাম। অতঃপর তিনি বললেন: তোমরা ওকে বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে তিন বার, পাঁচ বার অথবা যতবার প্রয়োজন গোসল দাও”[250]

৫. মহিলাদের ঋতুস্রাব হলে। তবে গোসল বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া পূর্ব শর্ত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡمَحِيضِۖ قُلۡ هُوَ أَذٗى فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ وَلَا تَقۡرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطۡهُرۡنَۖ فَإِذَا تَطَهَّرۡنَ فَأۡتُوهُنَّ مِنۡ حَيۡثُ أَمَرَكُمُ ٱللَّهُۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ ٢٢٢﴾ [البقرة: ٢٢٢]

“তারা (সাহাবীগণ) আপনাকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে ; আপনি বলুনঃ তা হচ্ছে অশুচিতা। অতএব, তোমরা ঋতুকালে স্ত্রীদের নিকট যাবে না ও তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না যতক্ষণ না তারা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায়। তবে যখন তারা (গোসল করে) ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হয়ে যাবে তখনই তোমরা তাদের সাথে সম্মুখ পথে সহবাস করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাওবাকারী ও পবিত্রতা অন্বেষণকারীদের ভালোবাসেন”[সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২২]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَتْ فَاطِمَةُ بِنْتُ أَبِيْ حُبَيْشٍ تُسْتَحَاضُ، فَسَأَلَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَقَالَ: ذَلِكَ عِرْقٌ وَلَيْسَتْ بِالْـحَيْضَةِ، فَإِذَا أَقْبَلَتِ الْـحَيْضَةُ فَدَعِي الصَّلاَةَ، وَإِذَا أَدْبَرَتْ فَاغْتَسِلِيْ وَصَلِّيْ».

“ফাতিমা বিনতে আবু হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহার ইস্তিহাযা হতো। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ হচ্ছে রোগ যা কোনো নাড়ি বা শিরা থেকে বের হচ্ছে। ঋতুস্রাব নয়। তাই যখন ঋতুস্রাব শুরু হবে তখন সালাত বন্ধ রাখবে। আর যখন সাধারণ নিয়মানুযায়ী ঋতুস্রাব শেষ হয়ে যাবে তখন গোসল করে সালাত পড়বে।”[251]

৬. নিফাস বা সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব নির্গত হলে। তবে নিফাস থেকে গোসল শুদ্ধ হওয়ার জন্য তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়া পূর্ব শর্ত। নিফাস ঋতুস্রাবের ন্যায়। বরং তা ঋতুস্রাবই বটে। বাচ্চাটি মায়ের পেটে থাকাবস্থায় তার নাভিকূপের মধ্য দিয়ে তন্ত্রী যোগে এ ঋতুস্রাবই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতো। তাই বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ঋতুস্রাবটুকু কোনো বিতরণক্ষেত্র না পাওয়ার দরুন যোনিপথে বের হয়ে আসছে। নিফাস সন্তান প্রসবের সাথে সাথে অথবা উহার পরপরই বের হয়। তেমনিভাবে তা সন্তান প্রসবের এক দু’ তিন দিন পূর্ব থেকেও প্রসব বেদনার সাথে বের হয়। শরী‘আতের পরিভাষায় ঋতুস্রাবকেও নিফাস বলা হয়।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم ، وَلاَ نَرَى إِلاَّ الْـحَجَّ، حَتَّى إِذَا كُنَّا بِسَرِفَ أَوْ قَرِيْبًا مِنْهَا حِضْتُ فَدَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم، وَ أَنَا أَبْكِيْ فَقَالَ: مَا لَكِ أَنُفِسْتِ؟ قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: إِنَّ هَذَا شَيْءٌ كَتَبَهُ اللهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ، فَاقْضِيْ مَا يَقْضِي الْـحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوْفِيْ بِالْبَيْتِ حَتَّى تَغْتَسِلِيْ».

“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। ইতোমধ্যে আমরা সারিফ নামক স্থানে পৌঁছুলে আমার ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কাঁদতে দেখে বললেন: কী হলো, তোমার কি নিফাস্ তথা ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে? আমি বললামঃ জি হ্যাঁ! তিনি বললেন: এ ব্যাপারটি পূর্ব থেকেই আল্লাহ তা‘আলা মহিলাদের জন্য অবধারিত করে রেখেছেন। অতএব, তুমি হাজী সাহেবানরা যাই করে তাই করবে। তবে তুমি পবিত্র হয়ে গোসলের পূর্বে তাওয়াফ করবে না”[252]

উক্ত হাদীসে ঋতুস্রাবকে নিফাস্ বলা হয়েছে। অতএব, বুঝা গেলো, উভয়ের বিধান একই।

সমস্ত আলিম সম্প্রদায় নিফাসের পর গোসল করা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে একমত।

 জুনুবী অবস্থায় যা করা নিষেধ:

জুনুবী ব্যক্তি পাঁচটি কাজ করতে পারবে না যতক্ষণ না সে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায়। সে কাজগুলো নিম্নরূপ:

 ১. সালাত পড়া:

জুনুবী অবস্থায় সালাত পড়া জায়েয নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَقۡرَبُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنتُمۡ سُكَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَعۡلَمُواْ مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغۡتَسِلُواْ﴾ [النساء: ٤٣]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত বা জুনুবী অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হবে না যতক্ষণ না তোমরা বোধ শক্তি ফিরে পাও এবং গোসল কর। তবে পথ অতিক্রমের উদ্দেশ্যে তোমরা মসজিদের উপর দিয়ে চলতে পার”[সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৩] 

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ تُقْبَلُ صَلاَةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ».

“অযু ভঙ্গকারী কোনো ব্যক্তির সালাত আদায় হবে না যতক্ষণ না সে অযু করে”[253]

 ২. কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করা:

জুনুবী অবস্থায় কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করা নাজায়েয।

আব্দুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الطَّوَافُ حَوْلَ الْبَيْتِ مِثْلُ الصَّلاَةِ، إِلاَّ أَنَّكُمْ تَتَكَلَّمُوْنَ فِيْهِ، فَمَنْ تَكَلَّمَ فِيْهِ فَلاَ يَتَكَلَّمَنَّ إِلاَّ بِخَيْرٍ».

“কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করা সালাতের ন্যায়। তবে তাতে কথা বলা যায়। অতএব, তোমরা কথা বলতে চাইলে কল্যাণকর কথাই বলবে”[254]

 ৩. কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা:

জুনুবী অবস্থায় কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা নাজায়েয।

‘আমর ইবন হাযম, হাকীম ইবন হিযাম ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ يَمَسُّ الْقُرآنَ إِلاَّ طَاهِرٌ».

“পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া তোমাদের কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না”[255]

 ৪. কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা:

জুনুবী অবস্থায় কুরআন মাজীদ পড়া যাবে না।

‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ عَلَى كُلِّ حَالٍ مَا لَمْ يَكُنْ جُنُبًا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: كَانَ يَخْرُجُ مِنَ الْـخَلاَءِ فَيُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ، وَيَأْكُـلُ مَعَنَا اللَّحْمَ، وَ لَمْ يَكُنْ يَحْجُبُهُ أَوْ قَالَ: يَحْجِزُهُ عَنِ الْقُرْآنِ شَيْءٌ سِوَى الْـجَنَابَةِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুনুবী অবস্থা ছাড়া যে কোনো সময় আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগার সেরে আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন ও গোশত খেতেন। অর্থাৎ জুনুবী অবস্থা ছাড়া তিনি কখনো আমাদেরকে কুরআন পড়ানো বন্ধ করতেন না”[256]

‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি অযু শেষে বললেন: এভাবেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করেছেন। অতঃপর তিনি সামান্যটুকু কুরআন পাঠ করলেন। এরপর বললেন:

«هَذَا لِمَنْ لَيْسَ بِجُنُبٍ، فَأَمَّا الْـجُنُبُ فَلاَ، وَلاَ آيَةً».

“জুনুবী ব্যক্তি ছাড়া সবাই কুরআন পড়তে পারবে। তবে জুনুবী ব্যক্তি একেবারেই পড়তে পারবে না। এমনকি একটি আয়াতও নয়”[257]

 ৫. মসজিদে অবস্থান করা:

জুনুবী অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করা না জায়েয।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَقۡرَبُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنتُمۡ سُكَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَعۡلَمُواْ مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغۡتَسِلُواْ﴾ [النساء: ٤٣]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত বা জুনুবী অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হবে না যতক্ষণ না তোমরা বোধ শক্তি ফিরে পাও এবং গোসল কর। তবে পথ অতিক্রমের উদ্দেশ্যে তোমরা মসজিদের উপর দিয়ে চলতে পার”[সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৩]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَجِّهُوْا هَذِهِ الْبُيُوْتَ عَنِ الـْمَسْجِدِ ؛ فَإِنِّيْ لاَ أُحِلُّ الـْمَسْجِدَ لِحَائِضٍ وَلاَ جُنُبٍ».

“তোমরা মসজিদমুখী ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করে দাও। কারণ, ঋতুবতী বা জুনুবী ব্যক্তির জন্য মসজিদে অবস্থান করা জায়েয নয়”[258]

হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে দুর্বল। তবে উহার শেষাংশের সমর্থন উক্ত আয়াতে রয়েছে।

তবে জুনুবী ব্যক্তি মসজিদের উপর দিয়ে পথ অতিক্রম করতে পারে যা পূর্বের আয়াতে উল্লেখ হয়েছে।

ঋতুবতী এবং নিফাসী মহিলাও মসজিদের উপর দিয়ে পথ অতিক্রম করতে পারে। যদি মসজিদ নাপাক হওয়ার ভয় না থাকে।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم : نَاوِلِيْنِي الْـخُمْرَةَ مِنَ الْـمَسْجِدِ، قَالَتْ فَقُلْتُ: إِنِّيْ حَائِضٌ فَقَالَ: تَنَاوَلِيْهَا فَإِنَّ الْـحَيْضَةَ لَيْسَتْ فِيْ يَدِكِ».

“আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: মসজিদ থেকে সালাতের বিছানাটি দাও দেখি। আমি বললাম: আমি ঋতুবতী। তিনি বললেন: দাও, ঋতুস্রাব তো আর তোমার হাতে লাগেনি”[259]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَيْنَمَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فِي الْـمَسْجِدِ فَقَالَ: يَا عَائِشَةُ! نَاوِلِيْنِي الثَّوْبَ فَقَالَتْ: إِنِّيْ حَائِضٌ فَقَالَ: إِنَّ حَيْضَتَكِ لَيْسَتْ فِيْ يَدِكِ».

“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে অবস্থান করছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেন: হে ‘আয়েশা! (মসজিদ থেকে) আমাকে কাপড়টি দাও দেখি। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন: আমি ঋতুবতী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ঋতুস্রাব তো আর তোমার হাতে লাগে নি”[260]

মাইমূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَدْخُلُ عَلَى إِحْدَانَا، وَهِيَ حَائِضٌ فَيَضَعُ رَأْسَهُ فِيْ حِجْرِهَا فَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ، ثُمَّ تَقُوْمُ إِحْدَانَا بِخُمْرَتِهِ فَتَضَعُهَا فِي الْـمَسْجِدِ وَهِيَ حَائِضٌ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কোনো একজন ঋতুবতী থাকাবস্থায় তার নিকট এসে কোলে মাথা রেখে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তেমনিভাবে আমাদের কোনো একজন ঋতুবতী থাকাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের বিছানাটি মসজিদে রেখে আসতো”[261]

 গোসলের শর্তসমূহ:

গোসলের শর্ত আটটি, তা নিম্নরূপঃ

১. নিয়্যাত করতে হবে। অতএব, নিয়্যাত ব্যতীত গোসল শুদ্ধ হবে না।

২. গোসলকারী মুসলিম হতে হবে। অতএব, কাফিরের গোসল শুদ্ধ হবে না যতক্ষণ না সে মুসলিম হয়।

৩. গোসলকারী জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে। অতএব, পাগল ও মাতালের গোসল শুদ্ধ হবে না যতক্ষণ না তার চেতনা ফিরে আসে।

৪. গোসলকারী ভালোমন্দ ভেদাভেদ জ্ঞান রাখে এমন হতে হবে। অতএব, বাচ্চাদের গোসল শরী‘আতের দৃষ্টিতে ধর্তব্য নয়। তাদের গোসল করা বা না করা সমান।

৫. গোসল শেষ হওয়া পর্যন্ত পবিত্রতার্জনের নিয়্যাত স্থির থাকতে হবে। অতএব, গোসল চলাকালীন নিয়্যাত ভঙ্গ করলে গোসল শুদ্ধ হবে না।

৬. গোসল চলাকালীন গোসল ওয়াজিব হয় এমন কোনো কারণ যেন পাওয়া না যায়। তা না হলে গোসল তৎক্ষণাৎই নষ্ট হয়ে যাবে।

৭. গোসলের পানি পবিত্র ও জায়েয পন্থায় সংগৃহীত হতে হবে।

৮. গোসলের অঙ্গগুলোতে পানি পৌঁছুতে বাধা প্রদান করে এমন বস্তু অপসারণ করতে হবে।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে গোসল করতেন

পরিপূর্ণ গোসলের বর্ণনা নিম্নরূপ:

 ১. প্রথমে গোসলের নিয়্যাত করতেন।

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنيِّاَّتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيْبُهَا أَوْ إِلَى اِمْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ».

“প্রতিটি কর্ম নিয়্যাত নির্ভরশীল। যেমন নিয়্যাত তেমনই ফল। যেমন, কেউ যদি দুনিয়ার্জন বা কোনো রমণীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হিজরত (নিজ আবাসভূমি ত্যাগ) করে তাহলে সে তাই পাবে যে জন্য সে হিজরত করেছে।”[262]

২. “বিসমিল্লাহ” বলে গোসল শুরু করতেন। যেমনিভাবে তা বলে অযু শুরু করতেন।

 ৩. উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধুয়ে নিতেন।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النّبِيُّ  صلى الله عليه وسلم إِذَا اغْتَسَلَ مِنَ الْـجَنَابَةِ، بَدَأَ فَغَسَلَ يَدَيْهِ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: غَسَلَ كَفَّيْهِ ثَلاَثًا ثُمَّ أَفْرَغَ بِيَمِيْنِهِ عَلَى شِمَالِهِ، فَغَسَلَ فَرْجَهُ ثُمَّ يَتَوَضَّأُ كَمَا يَتَوَضَّأُ لِلصَّلاَةِ، ثُمَّ يُدْخِلُ أَصَابِعَهُ فِي الْـمَاءِ فَيُخَلِّلُ بِهَا أُصُوْلَ شَعْرِهِ، ثُمَّ يَصُبُّ عَلَى رَأْسِهِ ثَلاَثَ غُرَفٍ بِيَدَيْهِ، ثُمَّ يُفِيْضُ الْـمَاءَ عَلَى جِلْدِهِ كُلِّهِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবাতের গোসল করতেন তখন প্রথমে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধুয়ে নিতেন। অতঃপর বাম হাতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করতেন। এরপর সালাতের অযুর ন্যায় অযু করতেন। অতঃপর আঙ্গুলসমূহ পানিতে ভিজিয়ে কেশমূল খেলাল করতেন। অনন্তর মাথায় তিন চিল্লু পানি ঢালতেন। পরিশেষে পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করতেন”[263]

মায়মূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَدْنَيْتُ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم غُسْلَهُ مِنَ الْـجَنَابَةِ، فَغَسَلَ كَفَّيْهِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا، ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ فِي الإِنَاءِ، ثُمَّ أَفْرَغَ بِهِ عَلَى فَرْجِهِ وَغَسَلَهُ بِشِمَالِـهِ، ثُمَّ ضَرَبَ بِشِمَالِهِ الأَرْضَ فَدَلَكَهَا دَلْكًا شَدِيْدًا، ثُمَّ تَوَضَّأَ وُضُوْءَهُ لِلصَّلاَةِ غَيْرَ رِجْلَيْهِ، ثُمَّ أَفْرَغَ عَلَى رَأْسِهِ ثَلاَثَ حَفَنَاتٍ مِلْءَ كَفِّهِ، ثُمَّ غَسَلَ سَائِرَ جَسَدِهِ، ثُمَّ تَنَحَّى عَنْ مَقَامِهِ ذَلِكَ، فَغَسَلَ رِجْلَيْهِ ثُمَّ أَتَيْتُهُ بِالْمِنْدِيْلِ فَرَدَّهُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَجَعَلَ يَقُوْلُ: بِالـْمَاءِ هَكَذَا يَعْنِيْ يَنْفُضُهُ».

“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানাবাতের গোসলের জন্য পানি দিলে তিনি নিজ হস্তযুগল দু’ বা তিন বার ধৌত করেন। অতঃপর পাত্র থেকে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে নিজ লজ্জাস্থান পরিষ্কার করেন। এরপর ভূমিতে হস্তস্থাপন করে তা ভালোভাবে ঘষে নেন। অতঃপর সালাতের অযুর ন্যায় অযু করেন। তবে পদযুগল ধোন নি। অনন্তর তিনি নিজ মাথায় তিন চিল্লু পানি ঢেলে দেন এবং পুরো শরীর ভালোভাবে ধৌত করেন। অতঃপর পূর্বস্থান থেকে একটু সরে গিয়ে পদযুগল ধুয়ে ফেলেন। পরিশেষে আমি তাঁর নিকট তোয়ালে নিয়ে আসলে তিনি তা গ্রহণ করেন নি; বরং হাত দিয়ে পানিটুকু ঝেড়ে ফেলেন”[264]

 ৪. বাম হাতে পানি ঢেলে নিজ লজ্জাস্থান পরিষ্কার করতেন।

মায়মূনাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَفْرَغَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَلَى شِمَالِهِ فَغَسَلَ مَذَاكِيْرَهُ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বাম হাতে পানি ঢেলে নিজ লজ্জাস্থান ধৌত করেন”[265]

 ৫. বাম হাতটি পবিত্র মাটি দিয়ে বা দেওয়ালে ঘষে নিতেন অথবা পানি দ্বারা ভালোভাবে ধুয়ে নিতেন ।

মায়মূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَفْرَغَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم بِيَمِيْنِهِ عَلَى شِمَالِهِ فَغَسَلَ فَرْجَهُ، ثُمَّ دَلَكَ يَدَهُ بِالأَرْضِ أَوْ بِالْـحَائِطِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বাম হাতে পানি ঢেলে নিজ লজ্জাস্থান ধৌত করেন। অতঃপর হাত খানা ভূমিতে বা দেওয়ালে ঘষে নেন”[266]

৬. সালাতের অযুর ন্যায় ভালোভাবে পূর্ণাঙ্গরূপে অযু করতেন অথবা অযুর সময় পদযুগল না ধুয়ে গোসল শেষে তা ধৌত করতেন। তবে অযু করার সময় মাথা মাসাহ করেন নি।

মায়মূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«غَسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَدَيْهِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا، ثُمَّ مَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ، وَغَسَلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ وَغَسَلَ رَأْسَهُ ثَلاَثًا، ثُمَّ أَفْرَغَ عَلَى جَسَدِهِ، ثُمَّ تَنَحَّى مِنْ مَقَامِهِ فَغَسَلَ قَدَمَيْهِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (গোসল করার সময়) উভয় হাত দু’ বা তিন বার ধুয়েছেন। অতঃপর কুলি করেছেন। নাকে পানি দিয়েছেন। মুখ মণ্ডল ও হস্তদ্বয় ধৌত করেছেন। মাথা তিন বার ধুয়েছেন। পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করেছেন। অতঃপর পূর্বস্থান ছেড়ে অন্যত্র সরে গিয়ে পদযুগল ধুয়েছেন”[267]

‘আয়েশা ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَغْسِلُ يَدَيْهِ ثَلاَثًا، وَيُمَضْمِضُ، وَيَسْتَنْشِقُ، وَيَغْسِلُ وَجْهَهُ وَذِرَاعَيْهِ ثَلاَثًا ثَلاَثًا حَتَّى إِذَا بَلَغَ رَأْسَهُ لَمْ يَمْسَحْ، وَأَفْرَغَ عَلَيْهِ الْـمَاءَ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (গোসল করার সময়) উভয় হাত তিনবার ধুয়ে নিতেন। তিনবার কুলি করতেন ও নাকে পানি দিতেন। তিনবার মুখ মণ্ডল ও হস্তযুগল ধৌত করতেন। তবে মাথা মাসাহ না করে তৎপরিবর্তে তিনি মাথায় পানি ঢেলে দিতেন”[268]

৭. পানি দ্বারা হাতের আঙ্গুলগুলো ভিজিয়ে তা দিয়ে চুল খেলাল করতেন। যাতে কেশমূল তথা চর্ম পর্যন্ত পানি পৌঁছে যায়। অতঃপর দু’হাতে তিন চিল্লু পানি নিয়ে তা মাথায় ঢেলে দিতেন। প্রথমে মাথার ডান ভাগ অতঃপর মাথার বাম অংশ এবং পরিশেষে মাথার মধ্য ভাগে পানি প্রবাহিত করতেন।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا اغْتَسَـلَ مِنَ الْجَنَابَةِ، دَعَا بِشَيْءٍ نَحْوَ الْحِلاَبِ، فَأَخَذَ بِكَفِّهِ، بَدَأَ بِشِقِّ رَأْسِهِ الأَيْمَنِ، ثُمَّ الأَيْسَرِ ثُمَّ أَخَذَ بِكَفَّيْهِ فَقَالَ بِهِمَا عَلَى رَأْسِهِ».

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবাতের গোসলের ইচ্ছে করতেন তখন দুগ্ধদোহনপাত্রের ন্যায় এক পাত্র পানি আনতে বলতেন। এরপর তিনি হাতে পানি নিয়ে প্রথমে মাথার ডান পার্শ্বে অতঃপর বাম পার্শ্বে প্রবাহিত করতেন। পুনরায় দু’ হাতে পানি নিয়ে তা মাথায় ঢেলে দিতেন।[269]

জানাবাতের গোসলের সময় মহিলাদের মাথার বেণী খুলতে হবে না।

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قُلْتُ: يَارَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ اِمْرَأَةٌ أَشُدُّ ضَفْرَ رَأْسِيْ فَأَنْقُضُهُ لِغُسْـلِ الْـجَنَابَةِ؟، وَفِيْ رِوَايَةٍ: فَأَنْقُضُهُ لِلْحَيْضَةِ وَالْـجَنَابَةِ؟ قَالَ: لاَ، إِنَّمَا يَكْفِيْكِ أَنْ تَحْثِيَ عَلَى رَأْسِكِ ثَلاَثَ حَثَيَاتٍ، ثُمَّ تُفِيْضِيْنَ عَلَيْكِ الْـمَاءَ فَتَطْهُرِيْنَ».

“আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভালোভাবে মাথায় বেণী বেঁধে থাকি। তা জানাবাতের গোসলের সময় খুলতে হবে কি? অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তা জানাবাত ও ঋতুস্রাবের গোসলের সময় খুলতে হবে কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: বেণী খুলতে হবে না। তোমার জন্য যথেষ্ট এই যে, তুমি তোমার মাথায় তিন চিল্লু পানি ঢেলে দিবে। পুনরায় পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করবে। তাতেই তুমি পবিত্র হয়ে যাবে। তবে ঋতুস্রাব পরবর্তী গোসলের সময় বেণী খোলা মুস্তাহাব”[270]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ঋতুশেষে গোসল করার সময় আদেশ করেন:

«اُنْقُضِيْ شَعْرَكِ، وَاغْتَسِلِيْ»

(হে আয়েশা!) তুমি বেণী খুলে গোসল সেরে নাও”[271]

৮. পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করতেন। প্রথমে ডান পার্শ্বে অতঃপর বাম পার্শ্বে প্রবাহিত করতেন।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِيْ تَنَعُّلِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَطُهُوْرِهِ وَفِيْ شَأْنِهِ كُلِّهِ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্ব কাজই ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। এমনকি জুতা পরা, মাথা আঁচড়ানো, পবিত্রতার্জন তথা সর্ব ব্যাপারই”

বিশেষকরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বগল, কুঁচকি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভাঁজসমূহ ভালোভাবে ধুয়ে নিতেন।[272]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا أَرَادَ أَنْ يَّغْتَسِلَ مِـنَ الْـجَنَابَةِ بَدَأَ بِكَفَّيْهِ فَغَسَلَهُمَا، ثُمَّ غَسَلَ مَرَافِغَهُ، وَأَفَاضَ عَلَيْهِ الْـمَاءَ، فَإِذَا أَنْقَاهُمَا أَهْوَى بِهِمَا إِلَى حَائِطٍ، ثُمَّ يَسْتَقْبِلُ الْوُضُوْءَ، وَيُفِيْضُ الـْمَاءَ عَلَى رَأْسِهِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাবাতের গোসল করার ইচ্ছে করলে প্রথমে দু’হাত ধুয়ে নিতেন। অতঃপর পানি ঢেলে বগল ও কুঁচকি ধৌত করতেন। এরপর উভয় হাত পরিষ্কার করে দেওয়ালে ঘঁষে নিতেন। অনন্তর অযু করে মাথায় পানি ঢালতেন”[273]

ঘষা মলার প্রয়োজন হলে তা করে নিবে।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আস্মা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঋতুস্রাব পরবর্তী গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,

«تَأْخُذُ إِحْدَاكُنَّ مَاءَهَا وَسِدْرَتَهَا فَتَطَهَّرُ، فَتُحْسِنُ الطُّهُوْرَ، ثُمَّ تَصُبُّ عَلَى رأْسِهَا فَتَدْلُكُهُ دَلْكًا شَدِيْدًا».

“বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে খুব ভালোভাবে পবিত্রতার্জন করবে। অতঃপর মাথায় পানি ঢেলে খুব ভালোভাবে মলবে”[274]

৯. পূর্বের জায়গা ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে উভয় পা ধুয়ে নিতেন। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসল শেষে তোয়ালে দিয়ে শরীর শুকিয়ে নিতেন না। এ সংক্রান্ত হাদীস ইতোঃপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

 খোলা জায়গায় গোসল করা নিষেধ:

খোলামেলা জায়গায় গোসল করা অনুচিত, বরং পর্দার ভেতরে গোসল করবে।

উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«ذَهَبْتُ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَامَ الْفَتْحِ، فَوَجَدْتُهُ يَغْتَسِلُ، وَفَاطِمَةُ تَسْتُرُهُ».

“আমি মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। তখন তিনি গোসল করছিলেন এবং ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁকে পর্দা দিয়ে আড়াল করে রেখেছিলেন।”[275]

মায়মূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«سَتَرْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَغْتَسِلُ مِنَ الْـجَنَابَةِ».

“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পর্দা দিয়ে ঢেকে রেখেছি। এমতাবস্থায় তিনি জানাবাতের গোসল করেছেন”[276]

 গোসলের অযু দিয়েই সালাত পড়া যায়:

গোসলের অযু দিয়ে সালাত পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা ইত্যাদি সম্ভব। এ জন্য নতুন অযু করতে হবে না।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَغْتَسِلُ، وَيُصَلِّيْ الرَّكْعَتَيْنِ، وَصَلاَةَ الْغَدَاةِ، وَلاَ أَرَاهُ يُحْدِثُ وُضُوْءًا بَعْدَ الْغُسْلِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসল সেরে দু’ রাকআত সুন্নাত ও ফজরের ফরয সালাত পড়তেন। কিন্তু তিনি গোসলের পর নতুন অযু করতেন না”[277]

 যখন গোসল করা মুস্তাহাব:

কিছু কিছু কারণ ও সময়ে গোসল করা মুস্তাহাব। তা নিম্নরূপ:

 ১. জুমু‘আর দিন গোসল করা:

জুমু‘আর দিন গোসল করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«غُسْلُ يَوْمِ الْـجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ

“জুমু‘আর দিন গোসল করা প্রত্যেক সাবালকের উপর ওয়াজিব”[278]

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمُ الْـجُمُعَةَ فَلْيَغْتَسِلْ».

“তোমাদের কেউ জুমু‘আ পড়ার ইচ্ছে করলে সে যেন গোসল করে নেয়”[279]

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الْغُسْلُ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ واجبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ، وَأَنْ يَّسْتَنَّ، وَأَنْ يَّمَسَّ طِيْبًا إِنْ وَجَدَ».

“জুমু‘আর দিন গোসল করা প্রত্যেক সাবালকের ওপর ওয়াজিব। সম্ভব হলে মিসওয়াক ও খোশবু গ্রহণ করবে”[280]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«حَقٌّ لِلَّه تَعَالَى عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ أَنْ يَّغْتَسِلَ فِيْ كُلِّ سَبْعَةِ أَيَّامٍ يَوْمًا، يَغْسِلُ فِيْهِ رَأْسَهُ وَجَسَدَهُ».

“প্রত্যেক মুসলিমের ওপর আল্লাহর অধিকার এই যে, সে প্রতি সপ্তাহে একদিন গোসল করবে। তখন সে নিজ মাথা ও পুরো শরীর ধৌত করবে”[281]

উক্ত হাদীসগুলো থেকে জুমু‘আর দিন গোসল ওয়াজিব হওয়া বুঝা যাচ্ছে এবং তা ইব্নুল জাওযী, ইবন হায্ম্ ও ইমাম শাওকানীর নিজস্ব মত। তবে এর বিপরীত হাদীসগুলোর প্রতি লক্ষ্য করলে জুমু‘আর দিন গোসল করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত হিসেবেই প্রমাণিত হয়।

সামুরা এবং আনাস  রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ تَوَضَّأَ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ فَبِهَا وَنِعْمَتْ، وَمَنِ اغْتَسَلَ فَالْغُسْلُ أَفْضَلُ».

“জুমু‘আর দিন অযু করা যথেষ্ট এবং ভালো কাজ। তবে গোসল করা আরো ভালো”[282]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ثُمَّ أَتَى الْـجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْـجُمُعَةِ وَزِيَادَةُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ، وَمَنْ مَسَّ الْـحَصَى فَقَدْ لَغَا».

“যে ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে জুমু‘আয় উপস্থিত হয়। অতঃপর নীরবে খুতবা শ্রবণ করে আল্লাহ তা‘আলা গত জুমু‘আ থেকে এ জুমু‘আ পর্যন্ত এবং বাড়তি আরো তিন দিনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কঙ্কর স্পর্শ করল সে যেন অযথা কর্মে লিপ্ত হল”[283]

জুমু‘আর দিন গোসল করা ওয়াজিব না হলেও তাতে অনেক ফযীলত রয়েছে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنِ اغْتَسَلَ ثُمَّ أَتَى الْـجُمُعَةَ فَصَلَّى مَا قُدِّرَ لَهُ ثُمَّ أَنْصَتَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ، ثُمَّ يُصَلِّيْ مَعَهُ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْـجُمُعَةِ الأُخْرَى وَفَضْلُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ».

“যে ব্যক্তি গোসল করে জুমু‘আ উপস্থিত হয়েছে। অতঃপর যতটুকু সম্ভব সালাত পড়ে খুৎবা শেষ হওয়া পর্যন্ত নিশ্চুপ থেকেছে। এরপর ইমাম সাহেবের সাথে সালাত পড়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তার এ জুমু‘আ থেকে অন্য জুমু‘আ পর্যন্ত এবং আরো বাড়তি তিন দিনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন”[284]

আবু হুরায়রা ও আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنِ اغْتَسَلَ يَوْمَ الـْجُمُعَةِ وَلَبِسَ مِنْ أَحْسَنِ ثِيَابِهِ وَمَسَّ مِنْ طِيْبٍ – إِنْ كَانَ عِنْدَهُ - ثُمَّ أَتَى الـْجُمُعَةَ، فَلَمْ يَتَخَطَّ أَعْنَاقَ النَّاسِ، ثُمَّ صَلَّى مَا كَتَبَ اللهُ لَهُ، ثُمَّ أَنْصَتَ إِذَا خَرَجَ إِمَامُهُ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ صَلاَتِهِ، كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ جُمُعَتِهِ الَّتِيْ قَبْلَهَا وَزِيَادَةُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ».

“যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে, সুন্দর পোষাক-পরিচ্ছদ পরে এবং খোশবু থাকলে তা ব্যবহার করে জুমু‘আয় উপস্থিত হয়েছে। অতঃপর সে মানুষের ঘাড় মাড়িয়ে সামনে যেতে চায় নি এবং যতটুকু সম্ভব নফল সালাত পড়েছে। অনন্তর ইমাম সাহেব মিম্বারে উঠার পর হতে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত নিশ্চুপ থেকেছে। তার এ কর্মকলাপ পূর্ববর্তী জুমু‘আ থেকে এ জুমু‘আ পর্যন্ত এবং বাড়তি আরো তিন দিনের গুনাহ মোচনের জন্য যথেষ্ট হবে”[285]

আউস ইবন আউস সাক্বাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«مَنْ غَسَّلَ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ وَاغْتَسَلَ، ثُمَّ بَكَّرَ وَابْتَـكَرَ، وَمَشَى وَلَمْ يَرْكَبْ، وَدَنَا مِنَ الإِمَامِ فَاسْتَمَعَ وَلَمْ يَلْغُ ؛ كَانَ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ عَمَلُ سَنَةٍ، أَجْرُ صِيَامِهَا وَقِيَامِهَا».

“যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভালোভাবে ধৌত করে গোসল করেছে। অতঃপর খুব সকাল-সকাল ঘর থেকে বের হয়ে পায়ে হেঁটে মসজিদে উপস্থিত হয়েছে। এরপর ইমামের নিকটবর্তী হয়ে অনর্থ কর্মে মগ্ন না হয়ে সর্বান্তঃকরণে খুতবা শুনেছে, তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা এক বছর যাবৎ সালাত-সাওম পালনের সাওয়াব দিবেন”[286]

 ২. হজ বা উমরার ইহরামের জন্য গোসল করা:

হজ বা উমরার ইহরামের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব।

যায়েদ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم  تَجَرَّدَ لإِهْلاَلِهِ، وَاغْتَسَلَ».

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইহরাম বাঁধার জন্য জামা-কাপড় খুলে গোসল করতে দেখেছি”[287]

 ৩. মক্কায় প্রবেশের পূর্বে গোসল করা:

মক্কায় প্রবেশের পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব। নাফি’ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ عَبْدُ اللهِ بْنِ عُمَرَ – رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا - إِذَا دَخَلَ أَدْنَى الـْحَـرَمِ أَمْسَكَ عَنِ التَّلْبِيَةِ، ثُمَّ يَبِيْتُ بِذِيْ طُوًى، ثُمَّ يُصَلِّيْ بِهِ الصُّبْـحَ وَيَغْتَسِلُ، وَيُحَدِّثُ أَنَّ نَبِيَّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم كَانَ يَفْعَلُ ذَلِكَ».

“আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হারাম শরীফের নিকটবর্তী হলে তাল্বিয়্যা পড়া বন্ধ করে যু-ত্বুয়া নামক স্থানে রাত্রিযাপন করতেন। অতঃপর ভোরের সালাত পড়ে সেখানে গোসল করতেন এবং বলতেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবেই করতেন”[288]

 ৪. প্রতিবার স্ত্রীসঙ্গমের জন্য গোসল করা:

প্রতিবার স্ত্রীসহবাসের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব।

আবু রাফি’ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে একে সকল বিবিদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছেন। প্রত্যেক সঙ্গমের পর গোসল করেছেন। তখন আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি শুধু একবার গোসল করতেন! তখন তিনি বললেন:

«هَذَا أَزْكَى، وَأَطْيَبُ، وَأَطْهَرُ».

“এটি অধিকতর নির্মল, পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন কর্ম”[289]

 ৫. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পর গোসল করা:

মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পর গোসল করা মুস্তাহাব।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ غَسَّلَ الْـمَيِّتَ فَلْيَغْتَسِلْ».

“যে ব্যক্তি মৃতকে গোসল দিয়েছে সে যেন গোসল করে নেয়”[290]

আসমা বিনতে উমাইস রাদিয়াল্লাহু আনহা নিজ স্বামী আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মৃতের গোসল দিয়ে উপস্থিত মুহাজিরদেরকে এ বলে প্রশ্ন করেন যে, আমি রোযাদার। অন্যদিকে আজকের দিনটি সীমাতিরিক্ত হিমশীতল। এমতাবস্থায় আমাকে গোসল করতে হবে কি? উত্তরে মুহাজিররা বললেন: না, গোসল করতে হবে না।[291]

 ৬. মুশরিক ও কাফির ব্যক্তিকে মাটিচাপা দিয়ে গোসল করা:

মুশরিক ও কাফির ব্যক্তিকে মাটিচাপা দিয়ে গোসল করা মুস্তাহাব।

‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قُلْتُ لِلنَّبِيِّ  صلى الله عليه وسلم: إِنَّ عَمَّكَ الشَّيْخَ الضَّالَّ قَدْ مَاتَ!، قَالَ: اِذْهَبْ فَوَارِ أَبَاكَ، ثُمَّ لاَ تُحْدِثَنَّ شَيْئًا حَتَّى تَأْتِيَنِيْ، فَذَهَبْتُ فَوَارَيْتُهُ، وَجِئْتُهُ فَأَمَرَنِيْ فَاغْتَسَلْتُ وَدَعَا لِيْ».

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সংবাদ দিলাম যে, আপনার পথভ্রষ্ট বৃদ্ধ চাচা মারা গেছে। তখন তিনি বললেন: যাও, তাকে মাটিচাপা দিয়ে আসো এবং আমার নিকট আসা পর্যন্ত নতুন করে কিছু করতে যাবে না। ‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: আমি মাটিচাপা দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলে তিনি আমাকে গোসল করতে আদেশ করেন এবং আমার জন্য দো‘আ করেন”[292]

 ৭. মুস্তাহাযা মহিলার ক্ষেত্রে প্রতি ওয়াক্ত সালাতের জন্য অথবা দু’ ওয়াক্ত সালাত একত্রে পড়ার জন্য গোসল করা:

মুস্তাহাযাহ্ মহিলার ক্ষেত্রে প্রতি বেলা সালাতের জন্য অথবা দু’বেলা সালাত একত্রে পড়ার জন্য গোসল করা মুস্তাহাব।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«اسْتُحِيْضَتْ أُمُّ حَبِيْبَةَ بِنْتُ جَحْشٍ فِيْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَأَمَرَهَا بِالْغُسْلِ لِكُلِّ صَلاَةٍ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে উম্মু হাবীবা বিনতে জাহ্শ্ মুস্তাহাযা হলে তিনি তাকে প্রতি বেলা সালাতের জন্য গোসল করতে আদেশ করেন”[293]

হাম্না বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার ইস্তিহাযা হলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার করণীয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,

«سَآمُرُكِ بِأَمْرَيْنِ أَيَّهُمَا فَعَلْتِ أَجْزَأَ عَنْكِ مِنَ الآخَرِ، وَإِنْ قَوِيْتِ عَلَيْهِمَا فَأَنْتِ أَعْلَـمُ، حَتَّى أَنْ قَالَ: وَإِنْ قَوِيْتِ عَلَى أَنْ تُؤَخِّرِيْ الظُّهْرَ وَتُعَجِّلِيْ الْعَصْرَ فَتَغْتَسِلِيْنِ وَتَجْمَعِيْنَ بَيْنَ الصَّلاَتَيْنِ ؛ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ، وَتُؤَخِّرِيْنَ الْمَغْرِبَ وَتُعَجِّلِيْنَ الْعِشَاءَ، ثُمَّ تَغْتَسِلِيْنَ وَتَجْمَعِيْنَ بَيْنَ الصَّلاَتَيْنِ فَافْعَلِيْ، وَتَغْتَسِلِيْنَ مَعَ الْفَجْـرِ فَافْعَلِيْ، وَصُوْمِيْ إِنْ قَدِرْتِ عَلَى ذَلِكِ، وَهَذَا أَعْجَبُ الأَمْرَيْنِ إِلَيَّ».

“আমি তোমাকে দু’টি কাজের আদেশ করবো। তার মধ্য হতে যে কাজটিই তুমি করো না কেন তা তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। আর যদি তুমি উভয়টাই করতে পার সে ব্যাপারে তুমিই ভালো জানো। পরিশেষে তিনি বলেন, আর যদি তুমি জোহরকে পিছিয়ে এবং আসরকে এগিয়ে একবার গোসল করে উভয় সালাত একত্রে পড়তে পার তাহলে তা করবে। তেমনিভাবে যদি মাগরিবকে পিছিয়ে এবং ইশাকে এগিয়ে একবার গোসল করে উভয় সালাত একত্রে পড়তে পার তাহলে তা করবে। অনুরূপভাবে যদি ফজরের জন্য গোসল করে ফজরের সালাতটুকু পড়তে পার তাহলে তা করবে এবং সম্ভব হলে সাওম রাখবে। তবে উভয় কাজের মধ্যে এটিই আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়”[294]

জানা আবশ্যক যে, মুস্তাহাযা মহিলার জন্য ঋতুস্রাবের নির্ধারিত সময়টি পার হয়ে গেলে একবার গোসল করা ওয়াজিব। এরপর প্রতি বেলা সালাত অথবা দু’বেলা সালাত একত্রে পড়ার জন্য গোসল করা মুস্তাহাব। তা না করলে প্রতি বেলা সালাতের জন্য অবশ্যই অযু করতে হবে।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«اسْتُحِيْضَتْ أُمُّ حَبِيْبَةَ بِنْتُ جَحْشٍ وَهِيَ تَحْتَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ سَبْعَ سِنِيْنَ فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: إِذَا أَقْبَلَتِ الْـحَيْضَةُ فَدَعِي الصَّلاَةَ، وَإِذَا أَدْبَرَتْ فَاغْتَسِلِيْ وَصَلِّيْ».

“আব্দুর রহমান ইবন ‘আউফের স্ত্রী উম্মু হাবীবা বিনতে জাহ্শ সাত বছর যাবৎ ইস্তিহাযার পীড়ায় পীড়িত ছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: ঋতুস্রাবের নির্ধারিত সময় আসলে তুমি সালাত বন্ধ রাখবে। আর যখন ঋতুস্রাবের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যায় তখন গোসল করে সালাত পড়বে”[295]

যায়নাব বিনতে আবী সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم أُمَّ حَبِيْبَةَ أَنْ تَغْتَسِلَ عِنْدَ كُلِّ صَلاَةٍ وَتُصَلِّيَ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: إِنْ قَوِيْتِ فَاغْتَسِلِيْ لِكُلِّ صَلاَةٍ ؛ وَإِلاَّ فَاجْمَعِيْ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু হাবীবাকে প্রতি বেলা সালাতের জন্য গোসল করে সালাত আদায় করতে আদেশ করেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ যদি পার তাহলে প্রতি বেলা সালাতের জন্য গোসল করবে। তা না পারলে দু’ বেলা সালাতের জন্য একবার গোসল করে তা একসঙ্গে আদায় করবে”[296]

ফাতিমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মুস্তাহাযা থাকাবস্থায় বলেন,

«إِذَا كَانَ دَمُ الْحَيْضِ فَإِنَّهُ دَمٌ أَسْوَدُ يُعْرَفُ، فَإِذَا كَانَ ذَلِكَ فَأَمْسِكِيْ عَنِ الصَّلاَةِ، فَإِذَا كَانَ الآخَرُ فَتَوَضَّئِيْ وَصَلِّيْ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: اغْتَسِلِيْ، ثُمَّ تَوَضَّئِيْ لِكُلِّ صَلاَةٍ وَصَلِّيْ».

“ঋতুস্রাব মহিলাদের নিকট পরিচিত। তা কালো বর্ণের। অতএব, ঋতুস্রাব চলাকালীন সালাত বন্ধ রাখবে। আর ইস্তিহাযা হলে অযু করে সালাত পড়বে। অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ ঋতুস্রাব শেষে গোসল করবে। এরপর প্রতি বেলা সালাতের জন্য অযু করে সালাত আদায় করবে”[297]

 ৮. বেঁহুশ হওয়ার পর চেতনা ফিরে পেলে:

বেঁহুশ হওয়ার পর চেতনা ফিরে পেলে গোসল করা মুস্তাহাব।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«ثَقُلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَقَالَ: أَصَلَّى النَّاسُ ؟ قُلْنَا: لاَ، هُمْ يَنْتَظِرُوْنَكَ، قَال: ضَعُوْا لِيْ مَاءً فِي الْمِخْضَبِ قَالَتْ: فَفَعَلْنَا فَاغْتَسَلَ، فَذَهَبَ لِيَنُوْءَ فَأُغْمِيَ عَلَيْهِ، ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ: أَصَلَّى النَّاسُ؟ قُلْنَا: لاَ، هُمْ يَنْتَظِرُوْنَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، قَالَ: ضَعُوْا لِيْ مَاءً فِي الْمِخْضَبِ، قَالَتْ: فَقَعَدَ فَاغْتَسَلَ، ثُمَّ ذَهَبَ لِيَنُوْءَ فَأُغْمِيَ عَلَيْهِ، ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ: أَصَلَّى النَّاسُ؟ قُلْنَا: لاَ، هُمْ يَنْتَظِرُوْنَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، فَقَالَ: ضَعُوْا لِيْ مَاءً فِي الْمِخْضَبِ فَقَعَدَ فَاغْتَسَلَ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রোগ যখন বেড়ে গেল তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ সাহাবীগণ সালাত পড়েছে কি? আমরা বললামঃ পড়েনি, তবে আপনার অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বললেন: পাত্রের মধ্যে আমার জন্য একটু পানি রেখে দাও। আমরা তাই করলাম। অতঃপর তিনি গোসল সেরে দাঁড়াতে চাইলে চেতনা হারিয়ে ফেলেন। পুনরায় চেতনা ফিরে পেয়ে আবারো তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ সাহাবীগণ সালাত পড়েছে কি? আমরা বললাম: পড়ে নি, তবে আপনার অপেক্ষায় রয়েছে হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন: পাত্রের মধ্যে আমার জন্য একটু পানি রেখে দাও। অতঃপর তিনি বসাবস্থায় গোসল সেরে দাঁড়াতে চাইলে আবারো অবচেতন হয়ে পড়েন। পুনরায় চেতনা ফিরে পেয়ে আবারো জিজ্ঞাসা করলেনঃ সাহাবীগণ সালাত পড়েছে কি? আমরা বললামঃ পড়ে নি, তবে আপনার অপেক্ষায় রয়েছে হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন: পাত্রের মধ্যে আমার জন্য একটু পানি রেখে দাও। অতঃপর তিনি বসাবস্থায় গোসল সেরে নেন।”[298]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন বার অবচেতন হয়ে তিন বার গোসল করেন। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, অবচেতন হওয়ার পর চেতনা ফিরে পেলে গোসল করা মুস্তাহাব।

 ৯. কাফির ব্যক্তি মুসলমান হলে:

কাফির ব্যক্তি মুসলমান হলে কোনো কোনো আলেমের মতে গোসল করা মুস্তাহাব। তবে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে এমন ব্যক্তির জন্য গোসল করা ওয়াজিব। ক্বাইস ইবন ‘আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أُرِيْدُ الإِسْلاَمَ، فَأَمَرَنِيْ أَنْ أَغْتَسِلَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ».

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ইসলাম গ্রহণের জন্য আসলে তিনি আমাকে বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করতে আদেশ করেন”[299]

তেমনিভাবে যখন কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে নিজ অন্তরকে নিষ্কলুষ করে নিল তখন তার শরীরকেও গোসলের মাধ্যমে পবিত্র করে নিতে হবে।

 ১০. দু’ ঈদের সালাতের জন্য গোসল করা:

দু’ ঈদের সালাতের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব। যাযান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«سَأَلَ رَجُلٌ عَلِيًّا رضي الله عنه عَنِ الْغُسْلِ، قَالَ: اِغْتَسِلْ كُلَّ يَوْمٍ إِنْ شِئْتَ، فَقَالَ: لاَ، الْغُسْلَ الَّذِيْ هُوَ الْغُسْلُ، قَالَ: يَوْمَ الْـجُمُعَةِ، وَيَوْمَ عَرَفَةَ، وَيَوْمَ النَّحْرِ، وَيَوْمَ الْفِطْرِ».

“জনৈক ব্যক্তি ‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তোমার ইচ্ছে হলে প্রতিদিনই গোসল করতে পার। সে বললঃ সাধারণ গোসল সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হয় নি; বরং জিজ্ঞাসা করা হয়েছে এমন গোসল সম্পর্কে যা অবশ্যই করতে হয়। তিনি বললেন: জুমু‘আ, ‘আরাফাহ, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর দিবসে গোসল করতে হয়”[300]

নাফে’ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ – رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا - يَغْتَسِلُ يَوْمَ الْفِطْرِ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: فِي الْعِيْدَيْنِ الأَضْحَى وَالْفِطْرِ، قَبْلَ أَنْ يَّغْدُوَ إِلَى الْـمُصَلَّى».

“আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা দিবসে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করে নিতেন”[301]

সাঈদ ইবন মুসাইয়িব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«سُنَّةُ الْفِطْرِ ثَلاَثٌ: الْـمَشْيُ إِلَى الـْمُصَلَّى، وَالأَكْلُ قَبْلَ الْـخُرُوْجِ، وَالاِغْتِسَالُ».

“ঈদুল ফিতর দিবসের সুন্নাত তিনটি: ঈদগাহের দিকে হেঁটে যাওয়া, বের হওয়ার পূর্বে যৎসামান্য আহার গ্রহণ ও গোসল করা”[302]

 ১১. আরাফার দিন গোসল করা:

হাজীদের জন্য আরাফার দিন গোসল করা মুস্তাহাব।

নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ – رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا - يَغْتَسِلُ لإِحْرَامِـهِ قَبْلَ أَنْ يُّحْرِمَ، وَلِدُخُوْلِ مَكَّةَ، وَلِوُقُوْفِهِ عَشِيَّةَ عَرَفَةَ».

“আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা ইহরাম বাঁধার পূর্বে, মক্কায় প্রবেশ ও আরাফার ময়দানে অবস্থানের জন্য গোসল করতেন”[303]


তায়াম্মুম

আরবী ভাষায় তায়াম্মুম শব্দটি ইচ্ছা পোষণের অর্থে ব্যবহৃত হয়। শরী‘আতের পরিভাষায় তায়াম্মুম বলতে পানি না পেলে অথবা তা ব্যবহারে অপারগ হলে সাওয়াবের নিয়্যাতে এবং নাপাকী দূরীকরণের উদ্দেশ্যে পবিত্র মাটি দিয়ে সমস্ত মুখ মণ্ডল ও উভয় হাত কব্জিসহ ভালোভাবে মর্দন করাকে বুঝানো হয়।

 তায়াম্মুমের বিধান:

তায়াম্মুমের বিধানটি কুরআন, হাদীস ও ইজমা’ কর্তৃক প্রমাণিত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِن كُنتُم مَّرۡضَىٰٓ أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوۡ جَآءَ أَحَدٞ مِّنكُم مِّنَ ٱلۡغَآئِطِ أَوۡ لَٰمَسۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا فَٱمۡسَحُواْ بِوُجُوهِكُمۡ وَأَيۡدِيكُم مِّنۡهُۚ مَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيَجۡعَلَ عَلَيۡكُم مِّنۡ حَرَجٖ وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمۡ وَلِيُتِمَّ نِعۡمَتَهُۥ عَلَيۡكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ﴾ [المائ‍دة: ٦]

“তোমরা রোগাক্রান্ত বা মুসাফির হলে কিংবা স্ত্রী সহবাস করলে অতঃপর পানি না পেলে পবিত্র মাটি দিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল ও উভয় হাত (কব্জিসহ) মাসাহ করবে। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে সমস্যায় ফেলতে চান না। বরং তিনি চান তোমাদেরকে পবিত্র করতে এবং তোমাদের উপর নিজ নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিতে যেন তোমরা তাঁর নিকট কৃতজ্ঞ হতে পার”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]

ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا فِيْ سَفَرٍ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم  فَصَلَّى بِالنَّاسِ فَلَمَّا انْفَتَلَ مِنْ صَلاَتِهِ إِذَا هُوَ بِرَجُلٍ مُعْتَزِلٍ لَمْ يُصَلِّ مَعَ الْقَوْمِ، قَالَ: مَا مَنَعَكَ يَا فُلاَنُ أَنْ تُصَلِّيَ مَعَ الْقَوْمِ ؟ قَالَ: أَصَابَتْنِيْ جَنَابَةٌ وَلاَ مَاءَ، قَالَ: عَلَيْكَ بِالصَّعِيْدِ فَإِنَّهُ يَكْفِيْكَ».

“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় তিনি সকলকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে তিনি দেখলেন, জনৈক ব্যক্তি সবার সাথে সালাত আদায় না করে সামান্য দূরে অবস্থান করছে। তখন তিনি বললেন: তোমার কি হয়েছে, সবার সঙ্গে সালাত পড়োনি কেন? সে বলল: আমি জুনুবী, অথচ পানি নেই। তিনি বললেন: মাটি ব্যবহার (তায়াম্মুম) কর। তোমার জন্য মাটিই যথেষ্ট”[304]

জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أُعْطِيْتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ قَبْلِيْ : جُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُوْرًا».

“আমাকে পাঁচটি বস্তু দেওয়া হয়েছে যা ইতিপূর্বে কাউকে দেওয়া হয়নি। তম্মধ্য হতে একটি হচ্ছে: মাটিকে আমার জন্য পবিত্রতার্জনের মাধ্যম ও মসজিদ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে”[305]

অনুরূপভাবে সকল আলিমের ঐকমত্যে ইসলামী শরী‘আতে তায়াম্মুমের বিধান রয়েছে।

মুসলিমদের জন্য পবিত্রতার্জনের মাধ্যম দু’টিঃ একটি পানি, অপরটি মাটি। আর তা পানি না পেলে অথবা পানি ব্যবহারে অপারগ হলে। অতএব, যে ব্যক্তি পানি পেল এবং সে তা ব্যবহারে সক্ষমও বটে তখন তাকে অবশ্যই পানি দিয়ে পবিত্রতার্জন করতে হবে। আর যে ব্যক্তি পানি পেল না অথবা সে তা ব্যবহারে একান্ত অপারগ তখন সে অযুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে। বিশুদ্ধ মতে তার এ তায়াম্মুমটি পানি না পাওয়া পর্যন্ত নাপাকী দূরীকরণে সম্পূর্ণরূপে যথেষ্ট। সুতরাং যে ইবাদাতের জন্য পানি দিয়ে পবিত্রতার্জন ওয়াজিব সে ইবাদাত সম্পাদনের জন্য পানির অবর্তমানে মাটি দিয়ে পবিত্রতার্জন আবশ্যক। তেমনিভাবে যে ইবাদাতের জন্য পানি দিয়ে পবিত্রতার্জন মুস্তাহাব সে ইবাদাত সম্পাদনের জন্য পানির অবর্তমানে মাটি দিয়ে পবিত্রতার্জনও মুস্তাহাব। বিশুদ্ধ মতে কোনো ব্যক্তি পানি না পেলে বা পানি ব্যবহারে অপারগ হলে যখন ইচ্ছে তায়াম্মুম করতে পারে এবং তার এ তায়াম্মুমটি যে কোনো ইবাদাত সংঘটনের জন্য যথেষ্ট যতক্ষণ না সে পানি পায় অথবা অযু কিংবা গোসল ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া না যায়। তেমনিভাবে একটি তায়াম্মুম নিয়্যাতানুসারে যে কোনো ছোটবড় নাপাকী দূরীকরণে একান্ত যথেষ্ট।

 যখন তায়াম্মুম জায়েয:

মুসাফির বা মুক্বীম থাকাবস্থায় যে কোনো কারণে কারোর অযু বা গোসল ভঙ্গ হলে নিম্নোক্ত অবস্থাগুলোতে তায়াম্মুম করা জায়েয:

 ১. পানি না পেলে:

পানি না পেলে তায়াম্মুম করা জায়েয। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا﴾ [المائ‍دة: ٦]

“অতঃপর তোমরা পানি না পেলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]

এ সম্পর্কীয় হাদীস পূর্বে উল্লেখ হয়েছে।

 ২. অযু বা গোসলের জন্য যথেষ্ট এতটুকু পানি না পেলে:

অযু বা গোসলের জন্য যথেষ্ট এতটুকু পানি না পেলে তায়াম্মুম করা জায়েয। অতএব, যতটুকু পানি আছে তা দিয়ে অযু বা গোসল করবে এবং বাকী অঙ্গগুলোর জন্য তায়াম্মুম করবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ﴾ [التغابن: ١٦]

“তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর”[সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ فَأْتُوْا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ، وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَدَعُوْهُ».

“যখন আমি তোমাদেরকে কোনো কাজের আদেশ করব তখন তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করবে। আর যখন তোমাদেরকে কোনো কাজ করতে নিষেধ করব তখন তা হতে তোমরা অবশ্যই বিরত থাকবে”[306]

 ৩. পানি অত্যন্ত ঠাণ্ডা হলে:

যখন পানি অতিশয় ঠান্ডা যা ব্যবহারে নিশ্চিত ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে এবং গরম করারও কোনো ব্যবস্থা নেই এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করা জায়েয।

‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«اِحْتَلَمْتُ فِيْ لَيْلَةٍ بَارِدَةٍ غَزْوَةِ ذَاتِ السَّلاَسِلِ، فَأَشْفَقْتُ إِنِ اغْتَسَلْتُ أَنْ أَهْلِكَ ! فَتَيَمَّمْتُ، ثُمَّ صَلَّيْتُ بِأَصْحَابِيْ الصُّبْحَ، فَذَكَرُوْا ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: يَا عَمْرُو! صَلَّيْتَ بِأَصْحَابِكَ وَأَنْتَ جُنُبٌ ؟ فَأَخْبَرْتُهُ بِالَّذِيْ مَنَعَنِيْ مِنَ الاِغْتِسَالِ وَقُلْتُ: إِنِّيْ سَمِعْتُ اللهَ يَقُوْلُ: ﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا﴾ [النساء: ٢٩] فَضَحِكَ رَسُوْلُ اللهِ  صلى الله عليه وسلم، وَلَمْ يَقُلْ شَيْئًا».

“যাতুস সালাসিল” নামক গাযওয়ায় থাকাবস্থায় এক হিমশীতল রাত্রিতে অকস্মাৎ আমার স্বপ্নদোষ হয়ে গেলে মৃত্যুর আশঙ্কায় গোসল না করে আমি তায়াম্মুম করেছি। এমতাবস্থায় আমি সাথীদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করেছি। অতঃপর আমার সাথীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ ব্যাপারে অবগত করালে তিনি আমাকে ডেকে বললেন: হে ‘আমর! তুমি কি জুনুবী থাকাবস্থায় নিজ সাথীদেরকে নিয়ে সালাত পড়েছ? তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার গোসল না করার কারণটি জানিয়েছি এবং কৈফিয়ত স্বরূপ বলেছি: আমি কুরআন মাজীদে পেয়েছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা নিজে নিজকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু। তাই আমি গোসল করিনি। কৈফিয়তটি শুনা মাত্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন এবং আমাকে আর কিছুই বলেন নি”।[307]

 ৪. রোগাক্রান্ত বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে:

রোগাক্রান্ত বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে এবং পানি ব্যবহারে রোগ বেড়ে যাওয়া বা আরোগ্য হতে বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে তখন তায়াম্মুম করা জায়েয। জাবির ইবন আব্দুল্লাহ ও আব্দুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন,

«خَرَجْنَا فِيْ سَفَرٍ فَأَصَابَ رَجُلًا مِّنَّا حَجَرٌ فَشَجَّهُ فِيْ رَأْسِهِ ثُمَّ احْتَلَمَ، فَسَأَلَ أَصْحَابَهُ فَقَالَ: هَلْ تَجِدُوْنَ لِيْ رُخْصَةً فِي التَّيَمُّمِ؟ فَقَالُوْا: مَا نَجِدُ لَكَ رُخْصَةً، وَأَنْتَ تَقْدِرُ عَلَى الْـمَاءِ، فَاغْتَسَلَ فَمَاتَ، فَلَمَّا قَدِمْنَا عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم  أُخْبِرَ بِذَلِكَ فَقَالَ: قَتَلُوْهُ قَتَلَهُمُ اللهُ! أَلاَ سَأَلُوْا إِذْ لَمْ يَعْلَمُوْا، فَإِنَّمَا شِفَاءُ الْعِيِّ السُّؤَالُ، إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْهِ أَنْ يَتَيَمَّمَ وَيَعْصِرَ أَوْ يَعْصِبَ عَلَى جُرْحِهِ خِرْقَةً ثُمَّ يَمْسَحَ عَلَيْهَا وَيَغْسِلَ سَائِرَ جَسَدِهِ».

“আমরা সফরে বের হলে আমাদের একজনের মাথায় পাথর পড়ে তার মাথা ফেটে যায়। ইতোমধ্যে তার স্বপ্নদোষ হয়। তখন সে তার সাথীদেরকে এ মর্মে জিজ্ঞাসা করে যে, তোমরা শরী‘আতে আমার জন্য তায়াম্মুম করার কোনো সুযোগ খুঁজে পাচ্ছো কি? তারা বললঃ না, তোমার জন্য তায়াম্মুমের কোনো সুযোগ নেই। কারণ, তুমি পানি ব্যবহারে সক্ষম। অতঃপর সে গোসল করার সাথে সাথেই মারা যায়। এরপর আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছুলে তাঁকে এ সম্পর্কে জানানো হলে তিনি (তিরস্কার স্বরূপ) বললেন: ওরা বেচারাকে মেরে ফেলেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধ্বংস করুক। তারা যখন ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত নয় তখন তারা কাউকে জিজ্ঞাসা করে নি কেন? কারণ, জিজ্ঞাসাই হচ্ছে অজ্ঞানতার উপশম। তায়াম্মুমই তার জন্য যথেষ্ট ছিল। ক্ষতের উপর ব্যান্ডেজবেঁধে তাতে মাসাহ এবং বাকী শরীর ধৌত করে নিলেই চলতো”[308]

 ৪. পানি সংগ্রহে অপারগতা প্রমাণিত হলে:

পানি সংগ্রহে অপারগতা প্রমাণিত হলে তায়াম্মুম করা জায়েয। যেমন, শত্রু, চোর-ডাকাত বা অগ্নিকাণ্ডের হাতে নিজ মান-সম্মান, ধন-সম্পদ বা জীবন হারানোর ভয়। তেমনিভাবে সে খুবই অসুস্থ নড়চড়ে অক্ষম এবং পানি এনে দেওয়ার মতো আশেপাশে কেউ নেই।

 ৫. মজুদ পানি ব্যবহার করলে কঠিন পিপাসায় মৃত্যুর ভয় হলে:

পানি সামান্য যা ব্যবহার করলে কঠিন পিপাসায় মৃত্যুর ভয় হয় এমতাবস্থায় পানি ব্যবহার না করে প্রয়োজনের জন্য মজুদ রেখে তায়াম্মুম করা জায়েয। এ ব্যাপারে আলিমদের ঐকমত্য রয়েছে। মোট কথা, যে কোনো কারণে পানি সংগ্রহে অক্ষম বা পানি না পেলে কিংবা পানি ব্যবহারে নিশ্চিত অসুবিধে দেখা দিলে তায়াম্মুম করা জায়েয।

 তায়াম্মুমের শর্তসমূহ:

তায়াম্মুমের শর্ত আটটি তা নিম্নরূপ:

১. নিয়্যাত করতে হবে। অতএব, নিয়্যাত ব্যতীত তায়াম্মুম শুদ্ধ হবেনা।

২. তায়াম্মুমকারী মুসলিম হতে হবে। অতএব, কাফিরের তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে না যতক্ষণ না সে মুসলিম হয়।

৩. তায়াম্মুমকারী জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে। অতএব, পাগল ও মাতালের তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে না যতক্ষণ না তার চেতনা ফিরে আসে।

৪. তায়াম্মুমকারী ভালোমন্দ ভেদাভেদ জ্ঞান রাখে এমন হতে হবে। অতএব, বাচ্চাদের তায়াম্মুম শরী‘আতের দৃষ্টিতে ধর্তব্য নয়। তাদের তায়াম্মুম করা বা না করা সমান।

৫. তায়াম্মুম শেষ হওয়া পর্যন্ত পবিত্রতার্জনের নিয়্যাত স্থির থাকতে হবে। অতএব, তায়াম্মুম চলাকালীন নিয়্যাত ভেঙ্গে দিলে তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে না।

৬. তায়াম্মুম চলাকালীন অযু বা গোসল ওয়াজিব হয় এমন কোনো কারণ অবর্তমান থাকতে হবে। তা না হলে তায়াম্মুম তৎক্ষণাৎই নষ্ট হয়ে যাবে।

৭. তায়াম্মুমের মাটি পবিত্র ও জায়েয পন্থায় সংগৃহীত হতে হবে।

৮. তায়াম্মুমের পূর্বে মল-মূত্র ত্যাগ করে থাকলে ইস্তিঞ্জা করতে হবে।


 নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে তায়াম্মুম করতেন

 ২. প্রথমে নিয়্যাত করতেন।

এ সম্পর্কীয় হাদীস পূর্বে উল্লেখ হয়েছে।

 ২. “বিসমিল্লাহ” বলে তায়াম্মুম শুরু করতেন।

 ৩. উভয় হাত মাটিতে প্রক্ষেপণ করে ধুলো ঝেড়ে প্রথমে সমস্ত মুখমণ্ডল অতঃপর উভয় হাত কব্জিসহ মাসাহ করতেন।

‘আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَعَثَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فِيْ حَاجَةٍ فَأَجْنَبْتُ، فَلَمْ أَجِدِ الْـمَاءَ، فَتَمَرَّغْتُ فِي الصَّعِيْدِ كَمَا تَمَرَّغُ الدَّابَّةُ، ثُمَّ أَتَيْتُ النَّبِيَّ  صلى الله عليه وسلم فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ: إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْكَ أَنْ تَقُوْلَ بِيَدَيْكَ هَكَذَا، فَضَرَبَ بِكَفَّيْهِ الأَرْضَ ضَرْبَةً وَاحِدَةً وَنَفَخَ فِيْهِمَا، ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ وَكَفَّيْهِ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَضَرَبَ بِيَدَيْهِ إِلَى الأَرْضِ فَنَفَضَ يَدَيْهِ فَمَسَحَ وَجْهَهُ وَكَفَّيْهِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কোনো এক প্রয়োজনে সফরে পাঠালে অকস্মাৎ আমার স্বপ্নদোষ হয়ে যায়। পানি না পেয়ে আমি পশুর ন্যায় মাটিতে গড়াগড়ি দিয়েছি। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে জানালে তিনি বললেন: মাটিতে দু’হাত মেরে তায়াম্মুম করাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় হাত একবার মাটিতে প্রক্ষেপণ করে তাতে ফুঁ মেরে তা দিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল ও হস্তযুগল কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ তিনি উভয় হাত মাটিতে প্রক্ষেপণ করে ঝেড়েমেড়ে তা দিয়ে মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করেন”[309]

 তায়াম্মুমের রুকনসমূহ:

তায়াম্মুমের রুকন তিনটিঃ

১. যে জন্য তায়াম্মুম করা হচ্ছে উহার সুস্পষ্ট ও নির্দিষ্ট নিয়্যাত করা।

অর্থাৎ সে ব্যক্তি যদি দৃশ্যমান নাপাকী থেকে তায়াম্মুম করতে চায় তাহলে তায়াম্মুমের সময় তাকে তাই নিয়্যাত করতে হবে। তেমনিভাবে সে যদি অযু বা গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করতে চায় তাহলে তায়াম্মুমের সময় তাকে তাই নিয়্যাত করতে হবে।

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنيِّاَّتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيْبُهَا أَوْ إِلَى اِمْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ».

“প্রতিটি কর্ম নিয়্যাত নির্ভরশীল। যেমন নিয়্যাত তেমনই ফল। যেমন, কেউ যদি দুনিয়ার্জন বা কোনো রমণীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হিজরত (নিজ আবাসভূমি ত্যাগ) করে সে তাই পাবে যে জন্য সে হিজরত করেছে”[310]

 ২. সমস্ত মুখমণ্ডল একবার মাসাহ করা।

 ৩. উভয় হাত কব্জি সহ একবার মাসাহ করা।

এ সম্পর্কীয় হাদীস ইতোপূর্বে উল্লেখ হয়েছে।   

 তায়াম্মুম ভঙ্গকারী কারণসমূহ :

এমন দু’টি কারণ রয়েছে যা তায়াম্মুমকে ইবনষ্ট করে দেয়। কারণ দু’টি নিম্নরূপ:

১. যে কারণগুলো অযু বিনষ্ট করে তা তায়াম্মুমকেও বিনষ্ট করে। কারণ, তায়াম্মুম অযু বা গোসলের স্থলাভিষিক্ত। তাই অযু বা গোসল যে যে কারণে ইবনষ্ট হয় সে সে কারণে তায়াম্মুমও বিনষ্ট হয়।

২. পানি পাওয়া গেলে তায়াম্মুম বিনষ্ট হয়ে যাবে। অতএব, যে ব্যক্তি পানি না পাওয়ার দরুন তায়াম্মুম করেছে সে পানি পেলেই তার তায়াম্মুম ভেঙ্গে যাবে।

আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ الصَّعِيْدَ الطَّيِّبَ طَهُوْرُ الـمُسْلِمِ ؛ وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْـمَاءَ عَشْرَ سِنِيْنَ، فَإِذَا وَجَدَ الْـمَاءَ فَلْيُمِسَّهُ بَشَرَتَهُ».

“পবিত্র মাটি মুসলিমের পবিত্রতার জন্য নিশ্চিত মাধ্যম যদিও সে দশ বছর যাবত পানি না পায়। যখনই সে পানি পাবে তখনই অযু বা গোসল করে নিবে। তবে কোনো কারণে পানি ব্যবহারে অক্ষম হওয়ার দরুন তায়াম্মুম করে থাকলে পানি থাকা সত্ত্বেও তার তায়াম্মুম বহাল থাকবে। তবে যখনই সে পানি ব্যবহারে সক্ষম হবে তখনই তার তায়াম্মুম ভেঙ্গে যাবে”[311]

 পানিও নেই মাটিও নেই এমতাবস্থায় কী করতে হবে:

পানিও নেই মাটিও নেই এবং এর কোনো একটি সংগ্রহ করাও সম্ভবপর হয়নি অথবা পেয়েছে তবে অযু বা তায়াম্মুম করা তার পক্ষে অসম্ভব এমতাবস্থায় সে অযু বা তায়াম্মুম না করেই সালাত আদায় করবে। যেমন, কোনো ব্যক্তির হাত-পা সম্পূর্ণরূপে বাঁধা। অযু বা তায়াম্মুম করা কোনোমতেই তার পক্ষে সম্ভবপর নয়। এমতাবস্থায় সে অযু বা তায়াম্মুম ছাড়াই সালাত আদায় করবে।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«اسْتَعَرْتُ مِنْ أَسْمَاءَ قِلاَدَةً فَهَلَكَتْ، فَأَرْسَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم نَاسًا مِّنْ أَصْحَابِهِ فِيْ طَلَبِهَا فَأَدْرَكَتْهُمُ الصَّلاَةُ فَصَلُّوْا بِغَيْرِ وُضُوْءٍ، فَلَمَّا أَتَوْا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم شَكَوْا ذَلِكَ إِلَيْهِ، فَنَزَلَتْ آيَةُ التَّيَمُّمِ، فَقَالَ أُسَيْدُ بْنُ حُضَيْرٍ: جَزَاكِ اللهُ خَيْرًا، فَوَاللهِ! مَا نَزَلَ بِكِ أَمْرٌ قَطُّ إِلاَّ جَعَلَ اللهُ لَكِ مِنْهُ مَخْرَجًا، وَجَعَلَ لِلْمُسْلِمِيْنَ فِيْهِ بَرَكَةً».

“আমি আমার বোন আসমা থেকে একটি হার ধার নিয়ে সফরে রওয়ানা করলে অকস্মাৎ তা হারিয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে হারের খোঁজে কিছু সংখ্যক সাহাবীকে পাঠালেন। ইতোমধ্যে সালাতের সময় হলে পানি না পাওয়ার দরুন তারা অযু না করেই সালাত আদায় করেন। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ব্যাপারটি জানানোর পরপরই তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ হয়। তখন উসাইদ ইবন হুযাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘আয়েশাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: আল্লাহ তা‘আলা আপনার কল্যাণ করুক! আল্লাহর কসম! আপনার কোনো সমস্যা হলেই আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে সে সমস্যা থেকে উদ্ধার করেন এবং তাতে নিহিত রাখেন মুসলিমদের জন্য প্রচুর কল্যাণ ও সমৃদ্ধি”[312]

উক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে পুনরায় সালাত আদায় করতে আদেশ করেন নি। এ থেকে বুঝা যায় পানি বা মাটি না পেলে নাপাক অবস্থায় সালাত পড়া জায়েয।

অতএব, পানি পেলে অযু করবে। পানি না পেলে বা পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে তায়াম্মুম করবে। পানি বা মাটি কিছুই না পেলে নাপাক অবস্থায় সালাত পড়ে নিবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ﴾ [التغابن: ١٦]

“তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর”[সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَجٖ﴾ [الحج: ٧٨]

“আল্লাহ তা‘আলা ধর্মীয় ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেন নি”[সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭৮]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ فَأْتُوْا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ، وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَدَعُوْهُ».

“যখন আমি তোমাদেরকে কোনো কাজের আদেশ করব তখন তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করবে। আর যখন আমি তোমাদেরকে কোনো কাজ করতে নিষেধ করব তখন তা হতে তোমরা বিরত থাকবে”[313]

 তায়াম্মুম করে সালাত পড়ার পর সময় থাকতে পানি পেলে:

যে কোনো কারণে তায়াম্মুম করে সালাত পড়ার পর সময় থাকতে পানি পেলে অথবা পানি ব্যবহারে সক্ষম হলে পুনরায় অযু করে সালাত আদায় করতে হবে না। যদিও উক্ত সালাত দ্বিতীয়বার পড়ার সময় থাকে। তেমনিভাবে যদি কোনো ব্যক্তি পানি বা মাটি পায়নি অথবা তা ব্যবহারে অক্ষম তখন সে পবিত্রতা ছাড়াই সালাত পড়েছে। পুনরায় সালাতের সময় থাকতেই সে পানি বা মাটি পেয়েছে অথবা তা ব্যবহারে সক্ষম হয়েছে এমতাবস্থায় আদায়কৃত সালাত তাকে দ্বিতীয়বার আদায় করতে হবে না।

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«خَرَجَ رَجُلاَنِ فِيْ سَفَرٍ فَحَضَرَتِ الصَّلاَةُ وَلَيْسَ مَعَهُمَا مَاءٌ، فَتَيَمَّمَا صَعِيْدًا طَيِّبًا، فَصَلَّيَا ثُمَّ وَجَدَا الْمَاءَ فِي الْوَقْتِ، فَأَعَادَ أَحَدُهُمَا الصَّلاَةَ وَالْوُضُوْءَ، وَلَمْ يُعِدِ الآخَرُ ثُمَّ أَتَيَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَذَكَرَا ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ لِلَّذِيْ لَمْ يُعِدْ: أَصَبْتَ السُّنَّةَ وَأَجْزَأَتْكَ صَلاَتُكَ، وَقَالَ لِلَّذِيْ تَوَضَّأَ وَأَعَادَ: لَكَ الأَجْرُ مَرَّتَيْنِ».

“দু’ ব্যক্তি সফরে বের হয়েছে। অতঃপর সালাতের সময় হলে পানি না পাওয়ার দরুন তারা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে সালাত আদায়ের পরপরই ওয়াক্ত থাকতে পানি পেয়েছে। এমতাবস্থায় তাদের একজন অযু করে উক্ত সালাত দ্বিতীয়বার আদায় করে এবং অন্যজন তা করে নি। এরপর উভয় ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে ব্যাপারটি তাঁকে জানালে তিনি যে ব্যক্তি অযু করে সালাত পুনর্বার আদায় করে নি তাকে বললেন: তুমি সুন্নাহ অনুযায়ী কাজ করেছ এবং তোমার পূর্বের সালাতই তোমার জন্য যথেষ্ট। দ্বিতীয়জনকে বললেন: তোমার দু’বার সালাত পড়ার সাওয়াব হয়েছে”[314]

সালাত পুনর্বার আদায় না করা যখন সুন্নাহ তখন দ্বিতীয়বার সালাত আদায় করা অবশ্যই সুন্নাহ বিরোধী।

وَصَلَّى اللهُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى اٰلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ.

 সমাপ্ত

আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনের পরপরই ইসলামের দ্বিতীয় রুকন ও বিধান হচ্ছে সালাত। এটি ইসলামের বিশেষ স্তম্ভ। সালাত নবীদের ভূষণ ও নেককারদের অলঙ্কার, বান্দা ও প্রভুর মাঝে গভীর সংযোগ স্থাপনকারী, অপরাধ ও অপকর্ম থেকে হিফাযতকারী। তবে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা থেকে যথাসাধ্য পবিত্রতা অর্জন ছাড়া কোনো সালাতই আল্লাহ তা‘আলার দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণেই পবিত্রতার ব্যাপারটি ইসলামী শরী‘আতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অত্র গ্রন্থে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে পবিত্রতা অর্জন করতেন তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।



[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১, ৩১১৬ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৩৭।

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭১।

[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৩।

[4]  আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৭; তিরমিযী, হাদীস নং ৬৬; নাসাঈ, হাদীস নং ৩২৫।

[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৫, ৬৯৫৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৫।

[6] আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৬; তিরমিযী, হাদীস নং ৬৬।

[7] আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৩; তিরমিযী, হাদীস নং ৬৯; নাসাঈ, হাদীস নং ৩৩১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৯২, ৩৯৩, ৩৯৪; আহমাদ ৭১৯২।

[8] আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৩; তিরমিযী, হাদীস নং ৬৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৫২৩।

[9] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৩।

[10] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩৯।

[11] তিরমিযী, হাদীস নং ৬৮।

[12] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৮।

[13] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।

[14] তিরমিযী, হাদীস নং ২৫১৮।

[15] তিরমিযী, হাদীস নং ১২৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৩২, ৩৩৩; নাসাঈ, হাদীস নং ৩২১।

[16] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১৬, ২১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯২।

[17] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭৫।

[18] আবু দাউদ, হাদীস নং ৬; ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ৬৯।

[19] তিরমিযী, হাদীস নং ৬০৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯৭।

[20] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩০; তিরমিযী, হাদীস নং ৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩০০।

[21] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৪।

[22] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬২।

[23] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮৬০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫০।

[24] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৯।

[25] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩২৮।

[26] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৭।

[27] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৭।

[28] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬১, ১৬২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৭।

[29] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬২; আবু দাউদ, হাদীস নং ৭।

[30] আবু দাউদ, হাদীস নং ২।

[31] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০, ১৫১, ১৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০, ২৭১।

[32] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৬৩।

[33] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭০।

[34] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭।

[35] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৭।

[36] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৫।

[37] সহীহ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬০।

[38] তিরমিযী, হাদীস নং ১৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪।

[39] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩৯ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮২।

[40] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৫৮।

[41] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১৬, ২১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯২।

[42] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪।

[43] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৫৮৯।

[44] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২০, ৬১২৮ মুসলিম; ২৮৪, ২৮৫।

[45] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৫।

[46]সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৭, ৩০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯১।

[47] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৩; তিরমিযী, হাদীস নং ১৪৩।

[48] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৭৪।

[49] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৫২৮; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৭৫।

[50] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৭৭।

[51] আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৫০।

[52] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৫।

[53] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৯।

[54] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৯।

[55] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩২৭৮, ৩৩৭৭।

[56] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭২।

[57] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩২০।

[58] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬৩; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৯২, ২২২১।

[59] বুখারী, হাদীস ৬৬৮৬।

[60] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬৬।

[61] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৩২; তিরমিযী, হাদীস নং ১৭৭১।

[62] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৮।

[63] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯০।

[64] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৯, ২৩০, ২৩১, ২৩২।

[65] বুখারী, হাদীস ১৩২, ১৭৮, ২৬৯ মুসলিম, হাদীস ৩০৩।

[66] আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৬, ২০৭, ২০৮।

[67] তিরমিযী, হাদীস নং ১১৫ আবু দাউদ, হাদীস নং ২১০।

[68] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৭, ৩০৭ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯১।

[69] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৮।

[70] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৬৪।

[71] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০২।

[72] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০২, ৩০৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৩, ২৯৪।

[73] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৮।

[74] সহীহ সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৭; সহীহ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০১।

[75] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৮৫।

[76] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৪, ১৬৫০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১১।

[77] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৯০।

[78] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭৩।

[79] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৪ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৯।

[80] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৫।

[81] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৮, ৩০৬, ৩২০, ৩২৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৩।

[82] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮৬।

[83] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩০৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬৫৩।

[84] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১১; তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬৫৪।

[85] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৭৮৫, ৩৭৮৬; তিরমিযী, হাদীস নং ১৮২৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩২৪৯।

[86] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৭৮৭।

[87] ইবন আবী শায়বাহ, হাদীস নং ২৫০৫।

[88] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩৫, ২৩৬, ৫৫৩৮, ৫৫৩৯, ৫৫৪০।

[89] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৬।

[90] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৭১।

[91] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫২৪।

[92] আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৫০।

[93] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৪।

[94] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪২৬, ৫৬৩২, ৫৬৩৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৬৭।

[95] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৭ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬১।

[96] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৬৫।

[97] আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৫; তিরমিযী, হাদীস নং ৯২।

[98] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৬।

[99] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৫৬, ৬২৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৭০।

[100] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫২৭১।

[101] তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৬১; নাসাঈ, হাদীস নং ১৩।

[102] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৯৩।

[103] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৮৯, ৫৮৯১, ৬২৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৭; তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৫৬; নাসাঈ, হাদীস নং ৯, ১০, ১১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯৪।

[104] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৮; তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৫৮, ২৭৫৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯৭।

[105] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৯

[106] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৯; তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৬৩, ২৭৬৪।

[107] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬০।

[108] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৯।

[109] নাসাঈ, হাদীস নং ৫।

[110] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫।

[111] মালিক, হাদীস নং ১১৫; আহমাদ, হাদীস নং ৪০০, ৪৬০।

[112] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৮৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫২; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬, ৪৭।

[113] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১।

[114] সাহীহুত তারগীব, হাদীস নং ২১৫; সিলসিলা সাহীহা, হাদীস নং ১২১৩।

[115] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯।

[116] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৮।

[117] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫।

[118] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬১; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৩; তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৫৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯৫।

[119] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৮।

[120] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২৯৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৮।

[121] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ৬০।

[122] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৭১, ২৭৩, ২৭৪, ২৭৫।

[123] তিরমিযী, হাদীস নং ৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ৬১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৭৬, ২৭৭।

[124] তিরমিযী, হাদীস নং ৯৬০; নাসাঈ, হাদীস নং ২৯২৫, ২৯২৬।

[125] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৫ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১১।

[126] মালিক, হাদীস নং ১; দারুকুতনী, হাদীস ৪৩১, ৪৩২, ৪৩৩।

[127] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৬।

[128] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৯, ১৬৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬।

[129] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৭।

[130] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৮।

[131] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৪।

[132] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৪, ৮৩২।

[133] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৫।

[134] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৩২।

[135] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫১ তিরমিযী, হাদীস নং ৫১ ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৩৩।

[136] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯০৭।

[137] তিরমিযী, হাদীস নং ২৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ১০১; নাসাঈ, হাদীস নং ৭৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০৩, ৪০৪, ৪০৫, ৪০৬।

[138] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬৮ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৮।

[139] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০৮।

[140] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৯, ১৬৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬।

[141] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৫৪।

[142] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৮; তিরমিযী, হাদীস নং ৪০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৫২।

[143] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৬, ১৯১, ১৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৫।

[144] আবু দাউদ, হাদীস নং ১১১, ১১৩।

[145] নাসাঈ, হাদীস নং ৯১।

[146] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২।

[147] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৫, ১৮৬, ১৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৫।

[148] তিরমিযী, হাদীস নং ৩১ ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৩৬।

[149] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৫।

[150] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬৪ , ১৯৩৪ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬।

[151] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৬।

[152] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৫, ১৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ১১৮; তিরমিযী, হাদীস নং ৩২, ৩৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৪০, ৪৪১, ৪৪২, ৪৪৩।

[153] আবু দাউদ, হাদীস নং ১২১, ১২২, ১২৩ তিরমিযী, হাদীস নং ৩৬ ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৪৫, ৪৪৬, ৪৪৭, ৪৪৮।

[154] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬।

[155] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৬।

[156] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৬।

[157] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৭৫।

[158] তিরমিযী, হাদীস নং ৫৫।

[159] আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ ৮১।

[160] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬।

[161] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৪।

[162] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৫৮।

[163] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৭; তিরমিযী, হাদীস নং ৪২; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪১৭।

[164] তিরমিযী, হাদীস নং ৪৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৬।

[165] তিরমিযী, হাদীস নং ৪৭।

[166] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৫।

[167] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০, ৯৬, ১৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৫৬।

[168] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৩।

[169] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৭।

[170] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২।

[171] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৪।

[172] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৭।

[173] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬।

[174] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৪১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০৮।

[175] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৪৯, ৪৫০, ৪৫১।

[176] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৫।

[177] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৫।

[178] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৪।

[179] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৫।

[180] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০, ৯৬, ১৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৫৬।

[181] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮

[182] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৩।

[183] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭৫।

[184] মালিক ১১৫।

[185] ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ১১৮।

[186] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫০ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৯।

[187] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২৫।

[188] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২১।

[189] আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৪।

[190] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৮।

[191] নাসাঈ, হাদীস নং ১৪০ ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪২৮।

[192] আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৬।

[193] তিরমিযী, হাদীস নং ৯৬ ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৮৩।

[194] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৭ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬১ ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৫১৯।

[195] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩২, ১৭৮, ২৬৯ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০৩ আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৬, ২০৭।

[196] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৮।

[197] আবু দাউদ ২০৩; ইবন মাজাহ ৪৮২।

[198] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৮১ নাসাঈ, হাদীস নং ১৬৩ তিরমিযী, হাদীস নং ৮২ ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৮৪, ৪৮৫।

[199] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৮৬, ৪৮৭ ইবন হিববান ১১১৪, ১১১৫, ১১১৭।

[200] ইব্নু হিববান ১১১৮ মাওয়ারিদ ২১০ দারাক্বুত্বনী ৬ বায়হাকী ৬৩০।

[201] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৮৪ ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৯৯।

[202] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৯৮।

[203] আবু দাউদ, হাদীস নং ১১১৪।

[204] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯৮।

[205] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩১১ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭১০।

[206] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৬৮৯; তারগীব, হাদীস নং ২০১।

[207] তারগীব, হাদীস নং ২০০।

[208] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১৬১; তিরমিযী, হাদীস নং ৯৯৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৪৮৫।

[209] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৮১; তিরমিযী, হাদীস নং ৮৭।

[210] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫৩।

[211] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৭, ২০৮, ২১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫৪, ৩৫৫, ৩৫৬, ৩৫৭।

[212] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০৫।

[213] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০৮।

[214] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৮, ২৮৪, ৫০৬৮, ৫২১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০৯।

[215] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০৫।

[216] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৭, ২৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০৬।

[217] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০৭।

[218] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২।

[219] ইবন খুযাইমাহ ৯৫০, ২০২৭।

[220] ইবন হিব্বান ৩৫৬৮।

[221] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৬, ৫৭৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৪।

[222] তিরমিযী, হাদীস নং ৯৬; নাসাঈ, হাদীস নং ১২৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৮৩।

[223] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬।

[224] ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ১৯২; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ১৩২৪।

[225] আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৫০।

[226] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬২।

[227] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬১।

[228] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৯।

[229] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৫।

[230] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৫।

[231] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৬।

[232] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৪ আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫০।

[233] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪৩।

[234] আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৬।

[235] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩০, ২৮২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৩।

[236] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১১,৩১৪।

[237] বায়হাকী, হাদীস নং ৭৭২।

[238] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৬; তিরমিযী, হাদীস নং ১১৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬১৭।

[239] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪৯।

[240] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯১ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪৮।

[241] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩০।

[242] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬৪৬।

[243] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৩, ২৮৫ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭১।

[244] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪৫।

[245] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০৬।

[246] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০৫।

[247] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০৮।

[248] আবু দাউদ ৩৫৫; তিরমিযী ৬০৫; নাসাঈ ১৮৮।

[249] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২০৬।

[250] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৩৯।

[251] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৪।

[252] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১১।

[253] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৫।

[254] তিরমিযী, হাদীস নং ৯৬০; নাসাঈ, হাদীস নং ২৯২৫।

[255] মালিক ১; দারাক্বুত্বনী ৪৩১, ৪৩২, ৪৩৩।

[256] তিরমিযী, হাদীস নং ১৪৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ২২৯; নাসাঈ, হাদীস নং ২৬৬, ২৬৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬০০।

[257] আহমদ, হাদীস নং ৮৮২।

[258] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩২।

[259] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৮; নাসাঈ, হাদীস নং ২৭২।

[260] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৯; নাসাঈ, হাদীস নং ২৭১।

[261] নাসাঈ, হাদীস নং ২৭৪, ৩৮৫ হুমাইদী ৩১০।

[262] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯০৭।

[263] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৬।

[264] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৯, ২৭৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৭।

[265] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫৭।

[266] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৬, ২৭৪।

[267] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫৭, ২৫৯, ২৬৫, ২৭৪, ২৭৬।

[268] নাসাঈ, হাদীস নং ৪২২।

[269] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৮।

[270] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩০।

[271] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬৪৬।

[272] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৮।

[273] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৩।

[274] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩২।

[275] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৬।

[276] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৭।

[277] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৫০; তিরমিযী, হাদীস নং ১০৭; নাসাঈ, হাদীস নং ২৫৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৫৮৫।

[278] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৪৬।

[279] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৭৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৪৪।

[280] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৮০ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৪৬।

[281] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৯৭, ৮৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৪৯।

[282] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৪; তিরমিযী, হাদীস নং ৪৯৭; নাসাঈ, হাদীস নং ১৩৮১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১০০।

[283] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫৭ তিরমিযী, হাদীস নং ৪৯৮।

[284] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫৭।

[285] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৪৩।

[286] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৪৫; তিরমিযী, হাদীস নং ৪৯৬; নাসাঈ, হাদীস নং ১৩৮২।

[287] তিরমিযী, হাদীস নং ৮৩০; দারামী ১৮০১; ইবন খুযাইমাহ ২৫৯৫।

[288] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৫৭।

[289] আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৫৯৬।

[290] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১৬১; তিরমিযী, হাদীস নং ৯৯৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৪৮৫।

[291] মুয়াত্তা মালিক ৩।

[292] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩২১৪; নাসাঈ, হাদীস নং ১৯০, ২০০৮।

[293] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৯২।

[294] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮৭।

[295] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮৫।

[296] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৯৩।

[297] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৯৮, ৩০৪।

[298] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৮৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৮।

[299] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৫; তিরমিযী, হাদীস নং ৬০৫; নাসাঈ, হাদীস নং ১৮৮।

[300] বায়হাকী, হাদীস নং ৫৯১৯।

[301] বায়হাকী, হাদীস নং ৫৯২০।

[302] ফিরয়াবী।

[303] মালিক ৩২৪।

[304] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৮২।

[305] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫২১।

[306] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৩৭।

[307] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৩৪; দারাক্বুত্বনী ৬৭০।

[308] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৩৬, ৩৩৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৫৭৮।

[309] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬৮।

[310] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯০৭।

[311] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৩২, ৩৩৩; তিরমিযী, হাদীস নং ১২৪ নাসাঈ, হাদীস নং ৩২৩।

[312] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬৭।

[313] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৩৭।

[314] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৩৮; নাসাঈ, হাদীস নং ৪৩৩।