الله مستو على عرشه وقريب منا بعلمه
﴿ تَعۡرُجُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ إِلَيۡهِ فِي يَوۡمٖ كَانَ مِقۡدَارُهُۥ خَمۡسِينَ أَلۡفَ سَنَةٖ ٤ ﴾ [المعارج: ٤]
“ফিরিশতাগণ ও রূহ এমন এক দিনে আল্লাহর পানে ঊর্ধ্বগামী হয়, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর”। [সূরা আল-মা‘আরিজ, আয়াত: ৪] এ আয়াত কি প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা ‘আরশে থেকে দুনিয়াবী কার্যাদি সম্পাদন করেন? যদি এ এরূপ হয়, তাহলে কিভাবে তিনি গলার ধমনীর চেয়েও আমাদের নিকটবর্তী?
কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তা‘আলা আসমানসমূহের উর্ধ্বে ‘আরশে আরোহণ করেছেন, তিনি সর্বোচ্চ ও মহান। তিনি সবার উপরে, তার উপরে কিছু নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ مَا لَكُم مِّن دُونِهِۦ مِن وَلِيّٖ وَلَا شَفِيعٍۚ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ ٤﴾ [السجدة : ٤]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۖ ٣﴾ [يونس : ٣]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿إِلَيۡهِ يَصۡعَدُ ٱلۡكَلِمُ ٱلطَّيِّبُ وَٱلۡعَمَلُ ٱلصَّٰلِحُ يَرۡفَعُهُۥۚ ١٠ ﴾ [فاطر: ١٠]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿هُوَ ٱلۡأَوَّلُ وَٱلۡأٓخِرُ وَٱلظَّٰهِرُ وَٱلۡبَاطِنُۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٌ ٣ ﴾ [الحديد: ٣]
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ»
“আপনিই সবকিছুর উপরে, সুতরাং আপনার উপরে কিছু নেই”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭১৬) এ বিষয়ে আরো অনেক আয়াত ও হাদিস রয়েছে, এতদসত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে, তিনি বান্দার সাথে আছেন, যেখানেই তারা থাকুক। যেমন, তিনি বলেন:
﴿أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۖ مَا يَكُونُ مِن نَّجۡوَىٰ ثَلَٰثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمۡ وَلَا خَمۡسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُهُمۡ وَلَآ أَدۡنَىٰ مِن ذَٰلِكَ وَلَآ أَكۡثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمۡ أَيۡنَ مَا كَانُواْۖ ٧﴾ [المجادلة: ٧]
“তুমি কি লক্ষ্য কর নি যে, আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন? তিনজনের কোনো গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থজন হিসেবে আল্লাহ থাকেন না, আর পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি থাকেন না। এর চেয়ে কম হোক কিংবা বেশি হোক, তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন।” [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ৭] বরং একই আয়াতে তিনি বলেছেন ‘আরশের উপরে আছেন, আবার বান্দার সাথেও আছেন। যেমন, তিনি বলেন:
﴿هُوَ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يَعۡلَمُ مَا يَلِجُ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَمَا يَخۡرُجُ مِنۡهَا وَمَا يَنزِلُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ وَمَا يَعۡرُجُ فِيهَاۖ وَهُوَ مَعَكُمۡ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ٤﴾ [الحديد: ٤]
আল্লাহ বান্দার সাথে আছেন অর্থ এ নয় যে, তিনি মখলুকের সাথে মিলিত, বরং তার অর্থ তিনি জ্ঞান ও ইলমের দ্বারা বান্দার সাথে আছেন, তিনি ‘আরশের উপরে রয়েছেন, কিন্তু বান্দার কোনো আমল তার নিকট গোপন নয়। আর তিনি যে বলেছেন:
﴿وَنَحۡنُ أَقۡرَبُ إِلَيۡهِ مِنۡ حَبۡلِ ٱلۡوَرِيدِ ١٦﴾ [ق: ١٦]
“আর আমরা তার গলার ধমনী হতেও অধিক কাছে”। [সূরা কাফ, আয়াত: ১৬] অধিকাংশ মুফাসসির এ আয়াত প্রসঙ্গে বলেছেন: এখানে উদ্দেশ্য ফিরিশতাদের সাথে আল্লাহর নৈকট্য, যারা বান্দার আমল সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত। আর যারা বলেছেন, এখানে উদ্দেশ্য বান্দার সাথে আল্লাহর নৈকট্য, তারা এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন আল্লাহর ইলম ও জ্ঞান, অর্থাৎ আল্লাহ ইলম ও জ্ঞান দ্বারা বান্দার নৈকট্যে আছেন। যেমন, ‘আল্লাহ বান্দার সাথে আছেন’ অর্থের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতের অভিমত। তারা বিশ্বাস করেন আল্লাহ ‘আরশের উপর আছেন (বাস্তবিকই), অনুরূপ তিনি বান্দার সাথেও আছেন (জ্ঞানে)। তারা বিশ্বাস করে যে মখলুকের সাথে একাকার কিংবা মখলুকের মাঝে বিলিন হওয়া থেকে আল্লাহ পবিত্র। যারা আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকার করে, যেমন জাহমিয়া ও তাদের অনুসারীগণ আল্লাহর ‘আরশে উঠা ও মখলুকের উপর উর্ধ্বে তাঁর অবস্থানকে অস্বীকার করে। তারা বলে: আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। আল্লাহ তাদেরকে হিদায়েত করুন।
সূত্র