অবৈধ সম্পর্কের কারণে বেদনা-উৎকণ্ঠা ()

মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

 

একটি প্রশ্নের উত্তের শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ ফাতওয়াটি দিয়েছেন। প্রশ্নটি হলো এক ব্যক্তি মানসিক দিক থেকে খুবই সঙ্কটাপন্ন সময় কাটাচ্ছে। সমস্যাটি হল, কয়েক মাসে ধরে একটি নারীর সাথে সে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। মূলতঃ তার সাথে সম্পর্ক করা তার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। সে নারীটি আত্মহত্যা করবে বলে মনস্থির করেছিল, সে উচ্চমাত্রায় ট্যাবলেট গ্রহণ করত। তাকে আত্মহত্যার পাপ থেকে বাঁচানোর জন্য নানা উপদেশ ও চেষ্টা করা, তাকে জাহান্নাতে নিপতিত হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্যই সম্পর্ক করেছে। তবে যা ঘটল তা হলো, ক্রমান্বয়ে তাদের মাঝে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলো, তবে কখনো অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয় নি। অবশেষে সে বুঝতে পেরেছে যে, তার আত্মহত্যার অভিনয়টি ছিল নিকটবর্তী হওয়ার জন্য নিছক একটি ছলনা। এমতাবস্থায় করণীয় কী ?

    |

    অবৈধ সম্পর্কের কারণে বেদনা-উৎকণ্ঠা

    همٌّ وغمّ نتيجة علاقة محرَّمة

    < বাংলা - بنغالي - Bengali >

    শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ

    الشيخ محمد صالح المنجد

    —™

    অনুবাদক: মু. সাইফুল ইসলাম

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    ترجمة: محمد سيف الإسلام

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    অবৈধ সম্পর্কের কারণে বেদনা-উৎকণ্ঠা

    প্রশ্ন: আমি বর্তমানে মানসিক দিক থেকে খুবই সঙ্কটাপন্ন সময় কাটাচ্ছি। মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে পারছি না। আমি আমার ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত কোনো বিষয়েই ভাবতে পারছি না। মৃত্যু ব্যতীত অন্য কিছু নিয়ে আমি ভাবতে পাচ্ছি না। তা সত্ত্বেও আমি এ মুহূর্তে মরতে চাই না। আল্লাহর কাছে আমার আশা, আমি যে পাপ করেছি তিনি তা ক্ষমা করে দেবেন।

    আমার সমস্যাটা হলো, বিগত কয়েক মাসে একটি নারীর সাথে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি। মূলতঃ তার সাথে সম্পর্ক করা আমার কোনো ইচ্ছাই ছিল না, তবে যে কারণে আমি তার কাছাকাছি এসেছি তা হলো আমি তাকে বুঝাতে চেয়েছি যাতে সে আত্মহত্যার ইচ্ছা থেকে সরে আসে। সে আত্মহত্যা করবে বলে মনস্থির করেছিল। সে উচ্চমাত্রায় ট্যাবলেট গ্রহণ করত। আমি তাকে আত্মহত্যার পাপ থেকে বাঁচানোর জন্য নানা উপদেশ ও চেষ্টা করতাম। আমার ইচ্ছা ছিল তাকে জাহান্নাতে নিপতিত হওয়া থেকে বাঁচানো। তবে যা ঘটল তা হলো, ক্রমান্বয়ে আমাদের মাঝে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলো। তবে আমরা কখনো অসামাজিক কাজে লিপ্ত হই নি। এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার কোনো ইচ্ছাও আমার ছিল না। এ মেয়েটি বিবাহিতা। সমস্যা হলো, সে দাবি করছে, আমি একবার তার সাথে শারীরিকভাবে মিলেছি। আমি তার কথা বিশ্বাস করি না। কেননা আমি কখনো আমার কাপড় খুলে নি। তবে সে ছিল অর্ধনগ্ন। আমার ভয় হচ্ছে, আমি হয়তো কোনো পাপ করে ফেলেছি। যদিও আমি তার সাথে শারীরিকভাবে মিলিত হই নি। তবে যদি সত্যি তার দাবি অনুযায়ী এরূপ কর্ম করে থাকি, তবে তো আমার রক্ষা নেই। আমি তাকে বিশ্বাস করি না। কারণ আমি বুঝতে পেরেছি, সে আমার ভালো চায় না। আর তার আত্মহত্যার অভিনয়টি ছিল আমার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য নিছক একটি ছলনা।

    বর্তমানে আমি খুবই চিন্তিত, উৎকণ্ঠিত। আমি ঘুমাতে পারি না। কোনো কিছু করতেও পারি না। যা হয়েছে তার জন্য আমি লজ্জিত। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি তো শুধু তাকে আগুন থেকে বাঁচাতে চেয়েছি। তবে এখন আমার ভয় হচ্ছে, আমি নিজেকে ধ্বংস করার কারণ হয়েছি।

    উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ

    প্রথমত: ঐ নারীর বন্ধুত্ব থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে। ঐ নারীর সাথে সম্পর্ক করা, মেয়েদের সাথে একাকী হওয়ার ব্যাপারে লাগাম ছেড়ে দিয়ে যে অন্যায়কর্ম আপনি করেছেন তা পাপ ও গুনাহ। এ ধরনের পাপের জন্য আল্লাহর আযাব-শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।

    দ্বিতীয়ত: ঐ নারীর সাথে সকল সম্পর্ক স্থায়ীভাবে কর্তন করতে হবে। অন্য কোনো নারীর সাথেও এ ধরনের সম্পর্ক রাখা যাবে না। কেননা এধরনের অধিকাংশ সম্পর্কের শেষ পরিণতি হলো যিনা-ব্যভিচার অথবা নিষিদ্ধ হারামভাবে স্বাদ গ্রহণ (নাউযুবিল্লাহ)। যদিও শুরুতে, আপনার কথামতো, সম্পর্কটা ছিল নিষ্কলুষ। তবে শয়তান মানুষের মাঝে রক্তের মতোই বিচরণ করে। আর জেনে রাখুন পরনারীর সাথে সম্পর্ককে কখনো নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ বলা যায় না।

    এখন আপনার যা উচিত, তা হলো দ্রুত তাওবা করা। উত্তম তাওবা। আর তার পদ্ধতি হলো যা হয়েছে সে ব্যাপারে লজ্জিত হওয়া। এ সম্পর্ক পরিপূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা। অন্য কোনো হারাম সম্পর্ক কায়েম না করার জন্য সত্যিকার অর্থে দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়া। এ খারাপ মহিলাটি আপনাকে বোঝাতে চাচ্ছে আপনি তার সাথে খারাপ কাজ করেছেন। ভবিষ্যতে যাতে তার সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হন সে জন্য সে এটাকে ছুতা হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। যদি ঐ মহিলার দাবি অনুযায়ী তার সাথে খারাপ কাজ করেও থাকেন, তাহলেও যেন শয়তান এটাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে এবং আল্লাহর রহমত থেকে আপনাকে নিরাশ না করে দেয়। অন্যথায় শয়তান আপনাকে কুপথে টেনে নিয়ে যাবে এবং খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টি তুচ্ছ জ্ঞান করাবে। বারবার এ কাজে লিপ্ত করাবে এবং একপর্যায়ে সে তাওবা করা দুষ্কর হয়ে গিয়েছে বলে প্রবোধ দেবে। শয়তান এ ধরনের অনুভূতি আপনার মধ্যে বদ্ধপরিকর করতে চায়। তবে আল্লাহর রহমত সুপরিব্যাপ্ত। তাই আপনি দ্রুত তাওবা করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣﴾ [الزمر: ٥٣]

    “বল, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”[সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৩]

    যে ব্যক্তি সত্য ও খালেস তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّ‍َٔاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٧٠﴾ [الفرقان: ٦٧، ٦٩]

    “আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফসকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে। তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”[সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৭-৬৯]

    আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, “এক ব্যক্তি এক পরনারীকে চুম্বন করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলো, সে ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, অতঃপর আল-কুরআনের এ আয়াতগুলো নাযিল হলো:

    ﴿وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ طَرَفَيِ ٱلنَّهَارِ وَزُلَفٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِۚ إِنَّ ٱلۡحَسَنَٰتِ يُذۡهِبۡنَ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِۚ ذَٰلِكَ ذِكۡرَىٰ لِلذَّٰكِرِينَ ١١٤﴾ [هود: ١١٤]

    “আর তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে, নিশ্চয় ভালোকাজ মন্দকাজকে মিটিয়ে দেয়। এটি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ”[সূরা হূদ, আয়াত: ১১৪] লোকটি বললেন, এটা কি আমার জন্য হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন: আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি এ অনুযায়ী আমল করবে তার জন্য। (অন্য এক বর্ণনায়) তিনি বললেন: ফাহেশা (অর্থাৎ যৌনাঙ্গে যিনা-ব্যভিচারের পর্যায় ব্যতীত) যে ব্যক্তি পরনারীর সাথে কোনো কিছু করল”। (সহীহ মুসলিম: আত-তাওবা/৪৯৬৪)

    আর আপনি বেশি বেশি সৎ কর্ম, সালাত, ইস্তেগফার ইত্যাদি করুন। ভালো ও ধার্মিক সঙ্গী খোঁজে নিন, যারা এ হারাম সম্পর্কের বিকল্প হতে পারে। আর জেনে রাখুন, তাওবার দরজা সদা উন্মুক্ত, কিয়ামত পর্যন্ত। আল্লাহ তা‘আলা মৃত্যুর গড়গড়া শুরুর আগ পর্যন্ত তাওবা কবুল করেন।

    অবশেষে বলতে চাই, আপনাকে শরী‘আতসিদ্ধ পথ বেছে নিতে হবে, যাতে আল্লাহ চাহে তো নিজেকে হিফাযত করতে পারবেন অর্থাৎ বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে আপনি এ জাতীয় হারাম কর্মে নিপতিত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারবেন।

    আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাকে, তিনি যা পছন্দ করেন ও ভালোবাসেন, তা করার তাওফীক দান করুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষিত হোক।

    উৎস:

    প্রশ্নোত্তরে ইসলাম

    শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ