সূরাতুল বিলায়াহ নামে কোনো সূরা আছে বলে বিশ্বাস করার বিধান ()

মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

শিয়ারা বলে থাকে, কুরআনে সূরাতুল বিলায়াহ নামে একটি সূরা আছে। সাহাবীরা সেটিকে বাদ দিয়েছে। এ ধরনের আকীদা পোষণকারীদের বিধান কী ফতোয়াটিতে তা আলোচনা করা হয়েছে।

    |

    সূরাতুল বিলায়াহ নামে কোনো সূরা আছে বলে বিশ্বাস করার বিধান

    حكم من اعتقد أن في القرآن سورة يسمى بالولاية

    < بنغالي >

    শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জেদ

    الشيخ صالح المنجد

    —™

    অনুবাদক: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    ترجمة: ذاكر الله أبو الخير

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    সূরাতুল বিলায়াহ নামে কোন সূরা আছে বলে বিশ্বাস করার বিধান

    প্রশ্ন: আমি আমার একজন শিয়া সহপাঠি থেকে শুনলাম। তাদের নিকট কুরআন রয়েছে যাতে সূরাতুল বিলায়াহ নামে একটি সূরা রয়েছে, যে সূরাটি আমাদের কুরআনে নেই। এ কথাটি কতটুকু সঠিক?

    উত্তর:

    আলহামদু লিল্লাহ।

    শিয়া আলেমগণ ও তাদের ইমামরা সূরাতুল বিলায়াহ নামে একটি সূরা আছে বলে দাবি করে থাকেন। আর তাদের মধ্য থেকে যারা তা অস্বীকার করে তারাও তা করেন তাকিয়া (মুনাফিকী) নীতি অবলম্বন করে। । এ সূরাতুল বিলায়ার সবচেয়ে বড় দাবিদার, মির্জা হুসাইন মুহাম্মদ ত্বকী আন-নূরী আত-তাবরাসী। তিনি ১৩২০ হিজরীতে মারা যান। তার মৃত্যুর পর রাফেযীরা তাকে নাজাফ নামক স্থানে সসম্মানে দাফন করেন। তিনি একটি কিতাব লিখেন, তাতে তিনি বলেন, কুরআনকে বিকৃতি করা হয়েছে। সাহাবীগণ কুরআনের কিছু অংশ গোপন করে দিয়েছেন। যে অংশটুকু গোপন করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে সূরাতুল বিলায়া। ১২৯৮ হিজরীতে তার লিখিত বইটি ছাপানো হয়। এ কিতাবটি ছাপানোর সময় তাকে কেন্দ্র করে অনেক চিল্লা-পাল্লা ও বিরোধিতা হয়। কারণ, তারা চেয়েছিল কুরআনের শুদ্ধতা বিষয়ে সংশয় ও সংশোধনীটি তাদের নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক এবং তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য শত শত কিতাবে তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে রাখা হউক। বিষয়টি কোনো একটি কিতাবে একত্র করা হোক তা তারা চায় নি। তিনি তার কিতাবের শুরুতে সূরাতুল বিলায়াহ সম্পর্কে লিখেন:

    “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সূক্ষ্ম ও সম্মানী কিতাব। এ কিতাবের নাম রাখা হয়েছে, ‘ফাসলুল খিতাব ফী ইসবাতে তাহরীফে কিতাবি রাব্বিল আরবাব’।” তিনি এ কিতাবে কতক আয়াত ও সূরা উল্লেখ করেন এবং তিনি বলেন, সাহাবীগণ এ আয়াত ও সূরাগুলোকে কুরআন থেকে বাদ দিয়েছেন এবং কুরআনের কিছু অংশ গোপন করেছেন। তার মধ্য হতে গুরুত্বপূর্ণ সূরা হলো, সূরাতুল বিলায়া। সূরাতুল বিলায়ার আয়াতগুলো নিম্নরূপ:

    «يا أيها الذين آمنوا آمنوا بالنبي والولي الذين بعثناهما يهديانكم إلى الصراط المستقيم نبي وولي بعضهما من بعض وأنا العليم الخبير ...»

    অপর একটি সূরা তাদের নিকট রয়েছে তার নাম সূরাতুন নূ-রাইন। এ সূরার আয়াতগুলো নিম্নরূপ-

    «يأيها الذين آمَنوا آمِنوا بالنورين أنزلناهما يتلوان عليكم آياتي ويحذرانكم عذاب يوم عظيم . بعضهما من بعض وأنا السميع العليم . إن الذين يوفون بعهد الله ورسوله في آيات لهم جنات النعيم . والذين كفروا من بعد ما آمنوا بنقضهم ميثاقهم وما عاهدهم الرسول عليه يقذفون في الجحيم . ظلموا أنفسهم وعصوا وصية الرسول أولئك يسقون من حمي...»

    এ ধরনের বাজে অসংলগ্ন কথাকে তারা কুরআনের আয়াত জ্ঞান করছে। (নাউযুবিল্লাহ)

    মুহাম্মাদ আলী সাউদী যিনি মিসরের আইন মন্ত্রণালয়ের বড় মাপের একজন তথ্য সচিব ছিলেন। তিনি প্রাচ্যবিদ ব্রাইন এর কাছে সংরক্ষিত থাকা একটি ইরানী কুরআনের পাণ্ডুলিপি সম্পর্কে জানতে পারেন। ঐকুরআন থেকে টেলিগ্রাফের মাধ্যমে এ সূরাগুলোর কপি তিনি নকল করেন। কিতাবটিতে উক্ত (তথাকথিত) সূরাগুলোর আরবির সাথে ইরানি ভাষার অনুবাদও প্রদত্ত রয়েছে।

    আত-তাবরাসী তার স্বীয় ‘ফাসলুল খিতাব ফী ইসবাতে তাহরীফে কিতাবি রাব্বিল আরবাব’ কিতাবে যে কথাগুলো দাবি করেন -একই দাবি শিয়াদের অন্যান্য লেখকও করেছেন। যেমন মুহসিন ফানী আল-কাশমীরি কর্তৃক ইরানী ভাষায় লিখিত কিতাব -দাবস্তানে মাযাহেব গ্রন্থেও তা রয়েছে। এ বইটি ইরানে একাধিক বার মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়েছে। অনুরূপভাবে প্রাচ্যবিদ নলদিকা (‘নাবেল দাক’) তার রচিত ‘তারিখুল মাসাহেফ’ কিতাবেও এ মিথ্যা সূরাগুলো উল্লেখ করেছে। আর ‘এশিয়া-ফ্রান্সিক পত্রিকা তার ১৮৪২ বর্ষের সংখ্যায় তা প্রকাশ করেছে। (পৃ: ৪৩১-৪৩৯)

    অনুরূপভাবে মির্জা হাবিবুল্লাহ আল-হাশেমী আল খুওয়ী তার কিতাব ‘মিনহাজুল বারা‘আহ ফী শরহে নাহজীল বালাগাহ’ (২১৭/২) তে এবং মুহাম্মাদ বাকের আল-মাজলিসি তার কিতাব ‘তাযকিরাতুল আয়িম্মাহ’ (পৃ: ১৯,২০)-তে ফার্সি ভাষায় তা উল্লেখ করেছেন। যা ইরানের মাওলানা প্রকাশনী কর্তৃক প্রচারিত ও প্রসারিত।

    বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন- মুহিব্বুদ্দিন আল-খতীবএর রচিত কিতাব ‘আল-খুতুতুল ‘আরিদ্বা লিল উসুলিল-লাতি ক্বামা ‘আলাইহা দ্বীনুশ-শিয়া।

    শিয়াদের এ ধরনের আকীদা পোষন করা আল্লাহর তা‘আলার বাণীতে সরাসরি মিথ্যারোপ, কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [الحجر: ٩]

    “নিশ্চয় আমরা কুরআন নাযিল করেছি, আর আমরা স্বয়ং তার হিফাযত-কারী”[সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯] এ কারণে সকল মুসলিম এ বিষয়ে একমত, যে ব্যক্তি এ ধরনের আকীদা পোষণ করে, কুরআনের মধ্যে পরিবর্তন ও বিকৃতি রয়েছে বলে বিশ্বাস করে, সে কাফির, ইসলামের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

    শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যা রহ. বলেন, অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি এ কথা বিশ্বাস করে, কুরআনের কিছু আয়াত কমানো বা গোপন করা হয়েছে অথবা এ কথা বলে, কুরআনের একটি বাতেনী ব্যাখ্যা রয়েছে, যাতে বাহ্যিক আমলের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। এদের বলা হয় ক্বারামিতা ও বাতেনিয়া, আর তানাসুখিয়্যারাও তাদের অন্তর্ভুক্ত। এরা সবাই কাফির। তাদের কাফির হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। দেখুন- আস-সারেমুল মাসলুল: (১১০৮-১১১০/৩)

    আল্লামা ইবন হাযম রহ. বলেন, কুরআনের কোনো পরিবর্তন আছে এ কথা বলা সু-স্পষ্ট কুফরি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মিথ্যারোপ করা। (আল-ফাসলু ফিল-আহওয়ায়ি ওয়াল মিলাল ওয়ান নিহাল: ১৩৯/৪)

    আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন।