বৈধ অবৈধের মানদণ্ডে পবিত্র মক্কার বিভিন্ন স্থানসমূহের সম্মাননা (⮫)


 বৈধ অবৈধের মানদণ্ডে পবিত্র মক্কার বিভিন্ন স্থানসমূহের সম্মাননা

تعظيم الأماكن في مكة المكرمة بين المشروع والممنوع

 ভূমিকা

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক, আর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর বিশ্বস্ত নবীর প্রতি, তাঁর পরিবারের প্রতি এবং তাঁর সাহাবাগণের প্রতি।

        অতঃপর, আল্লাহ্ তা‘আলা যা ইচ্ছা তা তিনি সৃষ্টি করেন এবং বাছাই করেন। আর তিনি যা বাছাই করেছেন তাতে রয়েছে তাঁর পরিপূর্ণ হিকমতের পরিচয়। মক্কা মোকাররামাকে তিনি তাঁর মহিমান্বিত শহরে পরিণত করেছেন এবং তাঁর আদি গৃহের অবস্থান স্থল হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, এই শহরকে সম্মানিত করেছেন বিশেষ বৈশিষ্ট্য, ফযিলত ও বিধি-বিধান দ্বারা, যার মাধ্যমে এই শহর পৃথিবীর অনান্য শহরের চেয়ে অদ্বিতীয় হয়ে আছে, এটি বরকতময় নগরী, ওহী অবতীর্ণের স্থল, রিসালাতের ভূমি, এই শহরের ফযিলত জ্ঞাত, আর এ ব্যাপারে দলীল প্রমাণ প্রসিদ্ধ এবং অসংখ্য। নিশ্চয়ই আল্লাহ মক্কা মোকাররামাকে কিছু ফযিলতপূর্ণ স্থানের এবং পবিত্র ও স্পষ্ট নিদর্শনাবলীর মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যময় করেছেন আর আমাদের জন্য সেখানে কিছু ইবাদতকে বিধিসম্মত করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা তাঁর নৈকট্য লাভ করব। আমি এই প্রবন্ধে এই সম্মানিত স্থানসমূহের ফযিলত নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী হয়েছি, আল্লাহর এই মহিমান্বিত শহরে হাজী, ওমরাকারী ও যিয়ারতকারীগণকে আহ্বান করার জন্য যে, তারা যেন আরো অধিক প্রচেষ্টা চালায় আল্লাহর ইবাদত এবং নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে; যাতে করে অসংখ্য ছাওয়াব হাসিল করতে পারে। পক্ষান্তরে অন্যান্য স্থানে যে সমস্ত বিদ‘আত ও শির্ক করা হয়, যার ফযিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো সহীহ হাদীস প্রমাণিত নয়, তা থেকে সতর্ক করা যায়।

        নিঃসন্দেহে নিষিদ্ধ স্থানসমূহকে সম্মান করা থেকে বৈধ স্থানসমূহকে সম্মান করাই মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। যে ব্যক্তি নিজেকে বৈধ ইবাদতে ব্যস্ত রাখল তা তাকে সমস্ত বিদ‘আতী তরীকা থেকে যথেষ্ট করবে; বরং সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যে সমস্ত স্থানকে সম্মানিত করেছেন সেখানে এমন স্বাদ, স্বাভাবিকতা এবং বরকত হাসিল করবে যা অন্যত্র পাবে না। অতএব সুন্নাতের মাঝে নিজেকে অটল রাখা বিদ‘আতে কঠোর সাধনা করা থেকে উত্তম।

        আমি আমার হজ্জ এবং ওমরাকারী সে সব মুসলিম ভাই যারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই মহিমান্বিত শহরে এসেছেন, যাদের অন্তরসমূহ এই আদি গৃহের প্রতি আগ্রহী হয়ে আছে, তাদেরকে আহ্বান জানাই তারা যেন তাদের সময়কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের অনুসরণের মাধ্যমে কাজে লাগান এবং তারা যেন নিজেদেরকে এমন কষ্ট না দেয় যা আল্লাহ্ তাদের উপর চাপিয়ে দেন নি এবং তারা যেন সতর্ক থাকে বিদ‘আতে লিপ্ত হওয়া থেকে। আর তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করবে ঐ বিধান মোতাবেক যা আল্লাহ তাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। বস্তুত হেদায়েত ও সাহায্য করার জন্য তোমার রবই যথেষ্ট।

                                                                                                               নিবেদক

                                  সা‘দ ইবন আলী আশ শাহরানী।

 মক্কা মোকাররামার ফযিলত এবং তার অধিবাসী ও সেখানে আগন্তুকদের প্রতি করণীয় জরুরী বিষয়সমূহের বর্ণনা:

        আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর মধ্যে মক্কা মুকাররামাকে বাছাই করেছেন তাঁর মহিমান্বিত ঘরের জন্য, পৃথিবীর সবদিক থেকে মানুষ এখানে আগমন করে। আর এই হারামের রয়েছে মহান আল্লাহর নিকট বিশেষ গুরুত্ব। কুরআনে কারীমে আল্লাহ্ এই নগরীকে বিভিন্ন নামে উল্লেখ করেছেন। আর তা হলো: মক্কা, বাক্কা, উম্মুল কোরা, নিরাপদ শহর, বালাদ (শহর), বালদা (লোকালয়), মসজিদ হারাম, মা‘আদ (প্রত্যাবর্তন স্থল)। এই একাধিক নাম মূলত আল্লাহর নিকট এ শহরের মর্যাদা ও সম্মানের কথা প্রমাণ করে, অবশ্য আলেমগণ মাক্কা মুকাররামার আরো অনেক নাম উল্লেখ করেছেন।

        এই হারাম নগরীর অনেক ফযিলত রয়েছে, যার বর্ণনা আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের বহু স্থানে উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ তার ফযিলতে তাঁর নবীর সুন্নাতও সুশোভিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নিম্নরূপ:

        ১. আল্লাহ এই শহরকে সম্মানিত করেছেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ إِنَّمَآ أُمِرۡتُ أَنۡ أَعۡبُدَ رَبَّ هَٰذِهِ ٱلۡبَلۡدَةِ ٱلَّذِي حَرَّمَهَا وَلَهُۥ كُلُّ شَيۡءٖۖ وَأُمِرۡتُ أَنۡ أَكُونَ مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ٩١ ﴾ [النمل: ٩١]

“আমি তো আদিষ্ট হয়েছি এই নগরীর (মক্কার) প্রভুর ইবাদত করতে, যিনি একে করেছেন সম্মানিত, সবকিছু তাঁরই, আমি আরো আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি মুসলিম (আত্মসমর্পনকারী)-দের অন্তর্ভুক্ত হই।” [সূরা আন-নামল: ৯১]

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত,

«فَإِنَّ هَذَا بَلَدٌ حَرَّمَ اللَّهُ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، وَهُوَ حَرَامٌ بِحُرْمَةِ اللَّهِ إِلَى يَوْمِ القِيَامَة»

“আকাশ এবং পৃথিবী সৃষ্টি করার দিন আল্লাহ এই নগরীকে সম্মানিত তথা মহিমান্বিত করেছেন, অতএব কিয়ামত পর্যন্ত তা আল্লাহর সম্মানদানের কারণে মহিমান্বিত থাকবে।”(বুখারী: ১৮৩৪)

        ২. আল্লাহ তা‘আলা এই নগরীর নামে কসম করেছেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ ٱلۡأَمِينِ ٣﴾ [التين: ٣]

“এবং শপথ এই নিরাপদ শহরের”[সূরা আত-ত্বীন-৩]

﴿ لَآ أُقۡسِمُ بِهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ ١ وَأَنتَ حِلُّۢ بِهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ ٢ ﴾ [البلد: ١، ٢]

“শপথ করছি এই মক্কা নগরীর, আর তুমি এই নগরের বৈধ অধিকারী হবে”[সূরা আল-বালাদ: ১-২]

        ৩. এই শহরের জন্য ইবরাহীম খলীল আলাইহিসসালাম এর দো‘আ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِيمُ رَبِّ ٱجۡعَلۡ هَٰذَا ٱلۡبَلَدَ ءَامِنٗا وَٱجۡنُبۡنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعۡبُدَ ٱلۡأَصۡنَامَ ٣٥ رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضۡلَلۡنَ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلنَّاسِۖ فَمَن تَبِعَنِي فَإِنَّهُۥ مِنِّيۖ وَمَنۡ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣٦ رَّبَّنَآ إِنِّيٓ أَسۡكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيۡرِ ذِي زَرۡعٍ عِندَ بَيۡتِكَ ٱلۡمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱجۡعَلۡ أَفۡ‍ِٔدَةٗ مِّنَ ٱلنَّاسِ تَهۡوِيٓ إِلَيۡهِمۡ وَٱرۡزُقۡهُم مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمۡ يَشۡكُرُونَ ٣٧﴾ [ابراهيم: ٣٥، ٣٧]

‘‘আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম বলেছিলেন: হে আমার প্রতিপালক! এই শহরকে (মক্কাকে) নিরাপদ করুন এবং আমাকে ও আমার পুত্রগণকে প্রতিমা পূজা হতে দূরে রাখুন। হে আমার প্রতিপালক! এসব প্রতিমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে আপনিতো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে নিয়ে বসবাস করালাম এই অনুর্বর উপত্যকায় আপনার পবিত্র গৃহের নিকট। হে আমাদের প্রতিপালক! এই জন্যে যে, তরা যেন সালাত কায়েম করে। সুতরাং আপনি কিছু লোকের অন্তর ওদের প্রতি অনুরাগী করে দিন এবং ফলাদি দ্বারা তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করুন, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।” [সূরা ইবরাহীম ৩৫-৩৭]

        ৪. আল্লাহ এই নগরকে তাঁর নিজের নিকট এবং তাঁর রাসূলের নিকট প্রিয় করেছেন:

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَكَّةَ: «مَا أَطْيَبَكِ مِنْ بَلَدٍ، وَأَحَبَّكِ إِلَيَّ، وَلَوْلَا أَنَّ قَوْمِي أَخْرَجُونِي مِنْكِ مَا سَكَنْتُ غَيْرَكِ»

“ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মক্কাকে লক্ষ্য করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমার চেয়ে অধিক পবিত্র এবং আমার নিকট অধিক প্রিয় আর কোনো নগর নেই, যদি আমার স্বজাতি আমাকে বের করে না দিত তাহলে তোমাকে ব্যতীত অন্য কোথাও আমি বসবাস করতাম না”(তিরমিযী: ৩৯২৬)

«وَاللَّهِ إِنَّكِ لَخَيْرُ أَرْضِ اللَّهِ، وَأَحَبُّ أَرْضِ اللَّهِ إِلَى اللَّهِ، وَلَوْلَا أَنِّي أُخْرِجْتُ مِنْكِ مَا خَرَجْتُ»

“আব্দুল্লাহ্ ইবন আদী ইবন আল-হামরা আযযুহরী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি তিনি হাযওয়ারা নামক স্থানে তাঁর সাওয়ারীর উপর আরোহণ অবস্থায় বলেছেন: “নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহুর পৃথিবীতে সর্বোত্তম নগরী, এবং আল্লাহর নিকট আল্লহর পৃথিবীর অধিক প্রিয় ভূমি, যদি আমি তোমার কাছ থেকে বহিষ্কৃত না হতাম তাহলে আমি বের হতাম না”(তিরমিযী: ৩৯২৫)

        ৫. নিশ্চয়ই আল্লাহ এই নগরীকে ঈমানের প্রত্যাবর্তন স্থান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন:

«إِنَّ الْإِسْلَامَ بَدَأَ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ غَرِيبًا كَمَا بَدَأَ، وَهُوَ يَأْرِزُ بَيْنَ الْمَسْجِدَيْنِ، كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ فِي جُحْرِهَا»

“ইবনে ওমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেছেন: স্বল্প সংখ্যক ও অপরিচিত অবস্থায় ইসলামের সূচনা হয়েছিল, অচিরেই তা আবার সূচনালগ্নের ন্যায় গরিবী অবস্থায় ফিরে আসবে তা উভয় মসজিদের (মক্কা ও মদীনার) মধ্যবর্তী এলাকায় গুটিয়ে আসবে যেমন সাপ তার গর্তের দিকে গুটিয়ে আসে”(মুসলিম: ১৪৬)

৬. এই নগরীকে আল্লাহ দাজ্জালের জন্য হারাম করেছেন:

«لَيْسَ مِنْ بَلَدٍ إِلَّا سَيَطَؤُهُ الدَّجَّالُ، إِلَّا مَكَّةَ، وَالمَدِينَةَ، لَيْسَ لَهُ مِنْ نِقَابِهَا نَقْبٌ، إِلَّا عَلَيْهِ المَلاَئِكَةُ صَافِّينَ يَحْرُسُونَهَا، ثُمَّ تَرْجُفُ المَدِينَةُ بِأَهْلِهَا ثَلاَثَ رَجَفَاتٍ، فَيُخْرِجُ اللَّهُ كُلَّ كَافِرٍ وَمُنَافِقٍ»

“আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন: মক্কা এবং মদীনা ব্যতীত এমন কোনো শহর নেই যা দাজ্জাল পদদলিত করবে না, মক্কা ও মদীনার প্রতিটি প্রবেশ পথেই ফেরেশতারা সারিবদ্ধ হয়ে পাহারারত থাকবে। এরপর মদীনা তার অধিবাসীসহ তিন বার প্রকম্পিত হবে আর এভাবে আল্লাহ ওখান থেকে সমস্ত কাফের ও মুনাফেকদেরকে বের করে দিবেন”(বুখারী: ১৮৮১)

৭. হারামে কোনো অন্যায় বা অপরাধে লিপ্ত হওয়া নিষেধ:

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ ٱلَّذِي جَعَلۡنَٰهُ لِلنَّاسِ سَوَآءً ٱلۡعَٰكِفُ فِيهِ وَٱلۡبَادِۚ وَمَن يُرِدۡ فِيهِ بِإِلۡحَادِۢ بِظُلۡمٖ نُّذِقۡهُ مِنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ٢٥﴾ [الحج: ٢٥]

“নিশ্চয় যারা কুফরী করে ও আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং সেই মসজিদে হারাম থেকে বাধা দেয়, যাকে আমি প্রস্তুত করেছি স্থানীয় ও বহিরাগত সকল মানুষের জন্য সমভাবে এবং যে মসজিদে হারামে অন্যায়ভাবে কোনো দীনবিরোধী কাজ করার ইচ্ছা করে, আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাব”[সূরা আল-হাজ্ব-২৫]

«أَبْغَضُ النَّاسِ إِلَى اللَّهِ ثَلاَثَةٌ: مُلْحِدٌ فِي الحَرَمِ، وَمُبْتَغٍ فِي الإِسْلاَمِ سُنَّةَ الجَاهِلِيَّةِ، وَمُطَّلِبُ دَمِ امْرِئٍ بِغَيْرِ حَقٍّ لِيُهَرِيقَ دَمَهُ»

“ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি তিন জন, যে ব্যক্তি হারামের মধ্যে অন্যায় কাজ করে, যে ব্যক্তি মুসলিম হওয়া সত্বেও জাহেলি যুগের রীতি নীতি তালাশ করে এবং যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো রক্তপাত কামনা করে।” (বুখারী: ৬৮৮২)

হারামের মধ্যে অন্যায় কাজ করার অর্থ হল: সর্বপ্রকার অন্যায় চাই তা আল্লাহর অধিকারের ক্ষেত্রে হোক আর মানুষের অধিকারের ক্ষেত্রে।

        ৮. মাক্কায় হারাম (নিষিদ্ধতাকে) হালাল করতে চাওয়া নিষেধ অনুরূপ সেখানে লড়াই করা, শিকার করা, বৃক্ষ কর্তন করা, হারানো জিনিস উঠিয়ে নেওয়া নিষেধ:

لَمَّا فَتَحَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَّةَ قَامَ فِي النَّاسِ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ حَبَسَ عَنْ مَكَّةَ الفِيلَ، وَسَلَّطَ عَلَيْهَا رَسُولَهُ وَالمُؤْمِنِينَ، فَإِنَّهَا لاَ تَحِلُّ لِأَحَدٍ كَانَ قَبْلِي، وَإِنَّهَا أُحِلَّتْ لِي سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ، وَإِنَّهَا لاَ تَحِلُّ لِأَحَدٍ بَعْدِي، فَلاَ يُنَفَّرُ صَيْدُهَا، وَلاَ يُخْتَلَى شَوْكُهَا، وَلاَ تَحِلُّ سَاقِطَتُهَا إِلَّا لِمُنْشِدٍ، وَمَنْ قُتِلَ لَهُ قَتِيلٌ فَهُوَ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ، إِمَّا أَنْ يُفْدَى وَإِمَّا أَنْ يُقِيدَ»

“আবু হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যখন আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে মক্কা বিজয় করলেন, তখন তিনি মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলেন, তাঁর গুণগান করলেন, অতঃপর বললেন: আল্লাহ মক্কা থেকে হস্তিবাহিনীকে প্রতিহত করেছেন, আর সেখানে তাঁর রাসূল এবং মোমেনদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তা আমার পূর্বে কারো জন্য হালাল করা হয় নাই, আর তা আমার জন্য দিনের কিছু সময়ের জন্য হালাল করা হয়েছিল, আর তা আমার পরেও অন্য কারো জন্য হালাল করা হবে না। অতএব ওখানকার শিকারসমূহকে তাড়ানো যাবে না, বৃক্ষের কাটা ভাঙ্গা যাবে না, তার হারানো জিনিস উঠানো যাবে না, তবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে তা ঘোষণা করে তার হক দারের নিকট পৌঁছাবে। আর যার কোনো আত্মীয়কে ওখনে হত্যা করা হবে সে দু’টি বিষয়ের মধ্যে কোনো একটি ইখতিয়ার করতে পারবে, হয় রক্তপণ আর না হয় হত্যার বদলে হত্যা। (বুখারী: ২৪৩৪)

        উল্লেখিত ফযিলতসমূহ তাঁর অধিবাসী এবং হজ্জ ও উমরার জন্য সেখানে আগমনকারীদের জন্য আবশ্যক করে এই নগরীকে সম্মান করা এবং সর্বপ্রকার অন্যায় ও অপরাধ থেকে সতর্ক থাকা।


 প্রথম অধ্যায় : মক্কার সম্মানযোগ্য স্থানসমূহ

        মক্কা নগরীকে আল্লাহ তা‘আলা সম্মানিত স্থানসমূহ, বরকতময় অবস্থান, পবিত্র ইবাদত, স্পষ্ট নিদর্শনসমূহের মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যময় করেছেন। যা তার মর্যাদা, সম্মান ও ইজ্জতকে বৃদ্ধি করেছে,, কুরআন ও হাদীসে এই বরকতময় স্থানের ফযিলত এবং বিধি-বিধান সম্বলিত ইসলামী দলীলসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং এই স্থানসমূহকে সম্মান করার এবং ওখানে আল্লাহর ইবাদত করার বিধিবদ্ধ নিয়ম ও পদ্ধতিসমূহ স্পষ্ট করা হয়েছে।” এখানে ঐ স্থানসমূহ তার ফযিলতসহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হল:

 ১. মসজিদ হারাম :

আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَوَّلِ مَسْجِدٍ وُضِعَ فِي الْأَرْضِ؟ قَالَ «الْمَسْجِدُ الْحَرَامُ» قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: «الْمَسْجِدُ الْأَقْصَى» قُلْتُ: كَمْ بَيْنَهُمَا؟ قَالَ: «أَرْبَعُونَ عَامًا، ثُمَّ الْأَرْضُ لَكَ مَسْجِدٌ، فَحَيْثُمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلَاةُ فَصَلِّه، فإن الفضل فيه»

“আমি জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসূলুল্লাহ্, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে? তিনি বললেন: মসজিদ হারাম, আমি জিজ্ঞেস করলাম এর পর কোনটি? তিনি বললেন: মসজিদ আকসা, আমি জিজ্ঞেস করলাম এই উভয় মসজিদ নির্মাণের মাঝে সময়ের ব্যবধান কি ছিল? তিনি বললেন: চল্লিশ বছর। অতঃপর সালাতের সময়ে তুমি যেখানেই উপস্থিত হবে সেখানেই সালাত আদায় করবে।” (মুসলিম: ৫২০)

অন্য হাদীসে জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ وَصَلَاةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَفْضَلُ مِنْ مِائَةِ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ»

“আমার এই মসজিদে সালাত আদায় করা মসজিদ হারাম ব্যতীত অন্য যে কোনো মসজিদে এক হাজার রাকাত সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম, আর মসজিদ হারামে এক রাকা‘আত সালাত আদায় করা (মসজিদ নববী ব্যতীত) অন্য যেকোন মসজিদে এক লক্ষ্য রাকাত সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। (সুনান ইবন মাজাহ: ১৪০৬)

        অধিকাংশ আলেমগণের মতে অতিরিক্ত সাওয়াব শুধু কা‘বা ঘরের চারপাশের মসজিদেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং হারামের সম্পূর্ণ এরিয়াকে তা অন্তর্ভুক্ত করে।

 ২. কা‘বা:

·  এটা হল আল্লাহর সম্মাণিত ঘর, মুসলিমদের কেবলা, আল্লাহ তাঁর খলীল ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে তা নির্মাণ ও উঁচু করার নির্দেশ দিয়েছেন, আর তিনি এই ঘরকে বিরাট বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যময় করেছেন।

·  আর এই ঘরের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন ইসলামের দু’টি রুকনকে; তাহলো সালাত ও হজ্ব। তাই এই ঘরের দিকে মুখ করে না দাঁড়ালে সালাত শুদ্ধ হবে না। এমনিভাবে এই ঘরের ত্বাওয়াফ না করা পর্যন্ত হজ্বকারীর হজ্ব কবুল হবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿فَوَلِّ وَجۡهَكَ شَطۡرَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِۚ وَحَيۡثُ مَا كُنتُمۡ فَوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ شَطۡرَهُۥۗ﴾ [البقرة: ١٤٤]

“অতএব তুমি পবিত্রতম মসজিদের দিকে তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও এবং তোমরা যেখানে আছ তোমাদের মুখ সেদিকেই প্রত্যাবর্তিত কর”[সূরা আল-বাক্বারা: ১৪৪]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ﴾ [ال عمران: ٩٧]

“এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্ব করা সেসব মানুষের অবশ্য কর্তব্য যারা শারিরীক ও আর্থিকভবে ঐ পথ অতিক্রমে সমর্থবান”[সূরা আলে ইমরান-৯৭]

·  আল্লাহ্ তা‘আলা কাউকে কা‘বা ঘর ব্যতীত অন্য কোনো ঘরের ত্বাওয়াফের নির্দেশ দেন নি, আর তা প্রত্যেক হাজী এবং উমরাকারীর জন্য রুকন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। কা‘বা ঘরের চতুর্পার্শ্বে ত্বাওয়াফ করা ব্যতীত হজ্ব এবং উমরা শুদ্ধ হবে না।

·  আবার হজ্ব ওমরা ছাড়াও শরীয়ত এই ঘরের ত্বাওয়াফের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছে এবং এতে বিরাট ফযিলত নির্ধারণ করেছে।

«مَنْ طَافَ سَبْعًا، فَهُوَ كَعِدْلِ رَقَبَةٍ»

“আব্দুল্লাহ্ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি (কাবা ঘর) সাতবার ত্বাওয়াফ করল সে যেন একটি ক্রীতদাস আযাদ করল”(নাসাঈ: ২৯১৯)

·  এমনিভাবে শরীয়ত প্রত্যেক হাজ্বী সাহেবের জন্য যখন তিনি মক্কা ছেড়ে চলে যেতে চাইবেন তখন তার জন্য কা‘বা ঘরের ত্বাওয়াফকে ওয়াজিব করেছে।

·  অনুরূপভাবে কা‘বা ঘরের চতুর্পার্শ্বে ত্বাওয়াফকারীগণ যখনই চাইবে তখনই ত্বাওয়াফ করার অধিকার রাখে, তাদেরকে ত্বাওয়াফ করা থেকে বাধা দিতে নিষেধ করা হয়েছে।

·   কা‘বা ঘরের সম্মান ও তাঁর মর্যাদার কথা সুদৃঢ় করতে গিয়ে পায়খানা পেসাবের সময় তা সামনে বা পেছনে রাখা থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।

«إِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الغَائِطَ، فَلاَ يَسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ وَلاَ يُوَلِّهَا ظَهْرَهُ، شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا»

“আবু আইউব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন তোমরা পায়খানা পেসাব খানায় যাবে তখন কেবলাকে সামনে বা পেছনে রাখবে না। বরং পূর্ব বা পশ্চিম দিকে হয়ে বসবে[1]

·  এমনিভাবে কোনো কোনো হাদীসে কেবলার মর্যাদাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে সেদিকে থুতু ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে।

বস্তুত কা‘বা ঘরের সম্মান করতে হবে আল্লাহর দেওয়া বিধানাবলীর অনুসরণের মাধ্যমে যেমন: সেদিকে মুখ করে সালাত আদায় করা, ত্বাওয়াফ করা, তার যে অংশ স্পর্শ করা বিধিসম্মত করা হয়েছে তা স্পর্শ করা, অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ, রুকনুল ইয়ামানী, মুলতাযাম (দরজার) নিকট দো‘আ করা, যার বর্ণনা পরে আসছে।

        এতদ্ব্যতীত যা কিছু করা হয় যেমন: কা‘বা ঘরের গিলাফ ধরে থাকা, তা স্পর্শ করা, গিলাফকে বরকতময় মনে করা, এগুলো সবই নিষিদ্ধ সম্মান এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরীকা বিরোধী কাজ।

 ৩. হাজরে আসওয়াদ :

·  এটি মসজিদ হারামে একটি স্পষ্ট নিদর্শন, একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা প্রমাণ করে যে এটি জান্নাত থেকে আনিত একটি পাথর এবং তা দুধের চেয়েও সাদা ছিল, কিন্তু আদম সন্তানের পাপ এটিকে কালো করে দিয়েছে, তন্মধ্যে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীস:

«نَزَلَ الحَجَرُ الأَسْوَدُ مِنَ الجَنَّةِ، وَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِي آدَمَ»

“হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, তা দুধের চেয়েও সাদা ছিল কিন্ত আদম সন্তানের পাপ এটিকে কালো করে দিয়েছে”(তিরমিযী: ৮৭৭)

·  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজরে আসওয়াদ স্পর্শকারীর সোয়াবের কথা বর্ণনা করেছেন:

يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، إِنَّكَ تُزَاحِمُ عَلَى الرُّكْنَيْنِ زِحَامًا مَا رَأَيْتُ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُزَاحِمُ عَلَيْهِ، فَقَالَ: إِنْ أَفْعَلْ، فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ مَسْحَهُمَا كَفَّارَةٌ لِلْخَطَايَا»

ইবনে ওমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল: হে আবু আব্দুর রহমান কি হয়েছে? আপনাকে শুধু এই দু’টি রুকন স্পর্শ করতে দেখি, তিনি বললেন, এ দু’টির স্পর্শে পাপসমূহ ঝরে যায়।”

·  এমনিভাবে তিনি বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই হাজরে আসওয়াদ তার স্পর্শকারীর ব্যাপারে সত্য সাক্ষী হবে।

 ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«لَيَأْتِيَنَّ هَذَا الْحَجَرُ، يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَهُ عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا، وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِهِ، يَشْهَدُ عَلَى مَنْ يَسْتَلِمُهُ بِحَقٍّ»

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: অবশ্যই কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ এই রুকন (হাজরে আসওয়াদ) কে উত্থিত করবেন, তখন তার দু’টি চোখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখতে পাবে এবং তার একটি জিহ্বা থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে, এবং যে ব্যক্তি তা স্পর্শ করেছে তার ব্যাপারে সত্য সাক্ষী দিবে।” [ইবন মাজাহ, ২৯৪৪; মুসনাদে আহমাদ, ২২১৪]

ত্বাওয়াফকারীর জন্য সুন্নাত হল, প্রত্যেক ত্বাওয়াফের সময় শুরুতে হাজরে আসওয়াদ অতিক্রম করার সময় আল্লাহু আকবার বলা, এমনিভাবে তা চুম্বন করাও সুন্নাত যদি তা সম্ভব হয়, অন্যথায় তা হাতদিয়ে ধরে তার উপর হাত ঘুরাবে, অতঃপর স্বীয় হাতে চুম্বন করবে। অথবা তার কিছু অংশ ধরবে এবং যখন তার নিকট পৌঁছবে তখন চুম্বন করবে, আর যদি ধরা বা চুম্বন করা সম্ভব না হয় বা অন্যদেরকে কষ্ট দেওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে সেদিকে ইশারা করবে এবং এই সবগুলোর ক্ষেত্রে কেবল আল্লাহু আকবার বলবে।

 আর তা করবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের অনুসরণের উদ্দেশ্যে এবং এই বিশ্বাস নিয়ে যে এই পাথরটি উপকার বা অপকার করার কোনো ক্ষমতা রাখে না, তাই ওমার ফারুক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পাথর চুম্বন করার সময় বলেছিলেন:

«إِنِّي أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ، لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ، وَلَوْلاَ أَنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ»

“নিশ্চয়ই আমি অবগত আছি যে তুমি অপকারও করতে পার না আবার উপকারও করতে পার না, যদি আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে না দেখতাম যে তিনি তোমাকে চুম্বন করছেন, তাহলে আমিও তোমাকে চুম্বন করতাম না।” (বুখারী, ১৫৯৭; মুসলিম, ১২৭০)

 ৪. রুকনে ইয়ামানী:

        সম্মানিত মক্কার যে সব সম্মানিত স্থান রয়েছে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘রুকনে ইয়ামানী’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে তা স্পর্শ করতেন এবং তা মাসেহ করতেন। যেমনটি হাদীসে গত হয়েছে যে, ‘‘নিশ্চয়ই রুকনে ইয়ামানী এবং রুকনে আসওয়াদ স্পর্শ করলে পাপসমূহ ঝরে যায়”।

        আলেমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন রুকনে ইয়ামানীকে উভয় হাতে কব্জি দিয়ে বা ডান হাত দিয়ে স্পর্শ করা মুস্তাহাব। আর তা হবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের অনুসরণে, তবে চুম্বন করার ব্যপারে অধিকাংশ আলেমগণ তা চুম্বন করা থেকে নিষেধ করেছেন।

        হাজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানীর ফযিলত সম্পর্কে ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন: পৃথিবীতে এক মাত্র হাজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত এমন কোনো স্থান নেই যা স্পর্শ করা এবং চুম্বন করা শরীয়তসম্মত এবং এর মাধ্যমে পাপ পঙ্কিলতা দূর হবে।

 ৫. হিজর:

        আরবী ‘হ’ অক্ষরে যের দিয়ে কা‘বা ঘরের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত বৃত্তাকার দেয়ালকে বলা হয়, তা রুকনুশ্শামী এবং পশ্চিম পার্শ্বের মাঝে অবস্থিত, তা কা‘বা ঘরেরই একটি অংশ, কুরাইশদের অর্থনৈতিক অনটনের কারণে তারা তা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির উপর পরিপূর্ণভাবে ভিত্তিস্থাপন করতে পারে নি। তবে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তিকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। তাই তাকে হিজর নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হিজরের পরিমাণের কথাও স্পষ্ট করেছেন,

«إِنَّ قَوْمَكِ اسْتَقْصَرُوا مِنْ بُنْيَانِ الْبَيْتِ، وَلَوْلَا حَدَاثَةُ عَهْدِهِمْ بِالشِّرْكِ، أَعَدْتُ مَا تَرَكُوا مِنْهُ، فَإِنْ بَدَا لِقَوْمِكِ مِنْ بَعْدِي أَنْ يَبْنُوهُ فَهَلُمِّي لِأُرِيَكِ مَا تَرَكُوا مِنْهُ»، فَأَرَاهَا قَرِيبًا مِنْ سَبْعَةِ أَذْرُعٍ

“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয়ই তোমার বংশধর কা‘বা ঘরের ভিত্তিস্থাপন করতে গিয়ে তা ছোট করে ফেলেছে, তারা যদি এই মাত্র কুফরী পরিত্যাগকারী না করত (নতুন মুসলিম না হতো) তাহলে তারা যা ছেড়েছে তা আমি পুনঃস্থাপন করতাম, যদি আমার পরে তোমার বংশধররা তা পুনঃনির্মাণ করতে চায় তাহলে আস আমি তোমাকে দেখাই যে তারা কতটুকু অংশ বাদ দিয়েছিল, তখন তিনি তাকে সাত গজ জায়গা দেখালেন”(মুসলিম: ১৩৩৩)

        এর ভিত্তিতে বলা যায় যে, যে ব্যক্তি হিজর (হাতীমে) সালাত আদায় করল সে যেন কা‘বা ঘরের ভিতরে সালাত আদায় করল।

  ৬. মুলতাযাম:

        আরবী মীম অক্ষরে পেশ এবং যা অক্ষরে যবর দিয়ে, আর তা হলো হাজারে আসওয়াদ এবং কা‘বা ঘরের দরজার মধ্যবর্তী স্থান, এভাবেই স্থান নির্ধারণ করেছেন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা। তিনি বলেছেন:

«مَا بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْبَابِ الْمُلْتَزَمُ»

“মুলতাযাম হল রুকন (হাজরে আসওয়াদ) এবং দরজার মধ্যবর্তী স্থান।” (মুওয়াত্তা মালিক, ২৫১)

তাকে মোদ‘আ এবং মোতা‘আওয়াযও বলা হয়ে থাকে। (যার অর্থ ডাকার স্থান ও আশ্রয়ের স্থান)

        ইমাম নববী রহ. বলেন: বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকন (হাজরে আসওয়াদ) এবং দরজার মধ্যবর্তী স্থানে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন, তিনি সেখানে তার বুক, উভয় হাত, উভয় কব্জি প্রশস্ত করে দো‘আ করেছেন, এই হাদীসটি দু’টি দুর্বল বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে, তবে যার ব্যাপারে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি তা করেছেন, তিনি হলেন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা।

        ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাল্লাহ্ বলেন: যদি কেউ পছন্দ করে যে সে মুলতাযামে, যা হাজরে আসওয়াদ এবং দরজার মাঝে অবস্থিত, সেখানে আসবে এবং ওখানে স্বীয় বুক, মুখ, উভয় হাত, উভয় কব্জি রেখে দো‘আ করবে এবং তার প্রয়োজনীয়তার কথা আল্লাহর নিকট পেশ করবে, বিদায় ত্বাওয়াফের পূর্বে সে তা করতে পারে। কেননা এই নিয়ম মেনে চলা বিদায় ত্বাওয়াফ বা অন্য কোনো সময়ে করার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। আর সাহাবীগণ মক্কায় প্রবেশের সময় (ত্বাওয়াফ কুদুমে) তা করতেন।

 ৭.মাকামে ইবরাহীম:

        এটি হল ঐ পাথর যার উপর আল্লাহর খলীল ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দাঁড়িয়েছিলেন যখন কা‘বা ঘর ণির্মানের কাজ উপরে উঠছিল এবং নিচ থেকে পাথর নেওয়া তাঁর জন্য কষ্টকর হচ্ছিল, তখন তিনি এর উপর দাঁড়িয়ে কা‘বা ঘর নির্মাণ করছিলেন আর ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তাঁকে পাথর এগিয়ে দিচ্ছিল। এটি ঐ পাথর যার উপর দাঁড়িয়ে তিনি আযান এবং হজ্বের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

        আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর কুরআনে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহের মধ্যে মাকামে ইবরাহীমের কথাও উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

﴿فِيهِ ءَايَٰتُۢ بَيِّنَٰتٞ مَّقَامُ إِبۡرَٰهِيمَۖ وَمَن دَخَلَهُۥ كَانَ ءَامِنٗاۗ﴾ [ال عمران: ٩٧]

“তার মধ্যে প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বিদ্যমান রয়েছে, মাকামে ইবরাহীম উক্ত নিদর্শনসমূহের অন্যতম। আর যে ওর মধ্যে প্রবেশ করে সে নিরাপত্তা লাভ করবে”[সূরা আলে ইমরান-৯৭]

        ইমাম ত্বাবারী রহ. এ আয়াতের তাফসীরে বলেছেন: নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানব মন্ডলীর জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তা ঐ ঘর যা মক্কায় অবস্থিত, ওটা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথ-প্রদর্শক। এর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর অসীম ক্ষমতার স্পষ্ট নিদর্শন এবং তাঁর খলীল ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্মৃতি, তন্মধ্যে রয়েছে পাথরের গায়ে তাঁর খলীল ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পদচিহ্ন যার উপর তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন।

        আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের জন্য আমাদের মধ্যে যারা কা‘বা ঘরের ত্বাওয়াফ করে তাদের জন্য মাকামে ইবরাহীমকে মোসাল্লা (সালাতের স্থান) হিসেবে গ্রহণ করার জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، " وَافَقْتُ رَبِّي فِي ثَلاَثٍ: فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، لَوِ اتَّخَذْنَا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى، فَنَزَلَتْ: {وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى} [البقرة: 125]

“আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ওমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা আমাদেরও রবের খলীলের মাকাম (স্থান) আমরা কী এটাকে (মাকামে ইবরাহীমকে) মোসাল্লা (সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ) করবনা? তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন: {এবং তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর। [সূরা আল-বাকারা: ১২৫]}(বুখারী: ৪০২)

        নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাকামে ইবরাহীমের পিছনে সালাত আদায় করেছেন, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হজ্বের পদ্ধতি বর্ণনায় জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

«ثُمَّ نَفَذَ إِلَى مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلَام، فَقَرَأَ: {وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى} [البقرة: 125] فَجَعَلَ الْمَقَامَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْبَيْتِ»

তারপর তিনি মাকামে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে গেলেন এবং {وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى} [البقرة: 125] ‘আর তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে মুসাল্লা বা সালাতের স্থান বানাও’ [সূরা আল-বাকারাহ: ১২৫] এটা পড়লেন আর বাইতুল্লাহ ও মাকামে ইবরাহীমকে সামনে রেখে সালাত আদায় করলেন”। (মুসলিম: ১২১৮)

তবে মাকামে ইবরাহীমকে চুম্বন বা স্পর্শ করা যাবে না কেননা তা বিদ‘আত।

        ইবনে তাইমিয়্যা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “সুন্নাতের আলোকে আলেমগণ একমত হয়েছেন যে, মাকামে ইবরাহীমকে স্পর্শ করা বা চুম্বন করা বিধিসম্মত নয়।”

        ইবনুল কাইয়্যেম যাদুল মা‘আদে বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বা ঘরের ত্বাওয়াফ করতে গিয়ে সাত চক্কর দিলেন, এরমধ্যে তিন চক্করে রমল (দ্রুত হাটলেন) এবং চার চক্করে স্বাভাবিকভাবে হাটলেন, অতঃপর মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দুই রাকাত সালাত আদায় করলেন অতঃপর তেলাওয়াত করলেন {وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى} [البقرة: 125] এবং তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসাবে গ্রহণ কর” এই আয়াত তেলওয়াত করার তিনি স্বীয় স্বর উঁচু করলেন মানুষ তা শোনতে পেল।

        তাই ত্বাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমের পেছনে সালাত আদায় করা পছন্দনীয় সুন্নাত, যার পক্ষে তা আদায় করা সম্ভব হয়। অতএব মাকামে ইবরাহীমের বিধি সম্মত সম্মান করা হল তার পেছনে সালাত আদায় করা, যেমন করেছেন সৃষ্টির সরদার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর নিষিদ্ধ এবং বিদ‘আতী সম্মান করা হল তা স্পর্শ করা এবং চুম্বন করা। সালফে সালেহীনগণ তা থেকে নিষেধ করেছেন।

        ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একদল লোকের নিকট আসলেন যারা মাকামে ইবরাহীমকে স্পর্শ করত, অতঃপর তিনি বললেন: তোমরা তা স্পর্শ করতে নির্দেশিত হও নি, বরং তোমরা নির্দেশিত হয়েছ তার নিকট সালাত আদায় করতে।

        ইবনে জুরাইজ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি ‘আতাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, তুমি কি কাউকে দেখেছ যে, সে মাকামে ইবরাহীমকে চুম্বন করে বা স্পর্শ করে? সে বলল: গ্রহণযোগ্য কাউকে দেখি নি।

        কাতাদা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এবং তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর।” মূলত এই আয়াত দ্বারা তারা নির্দেশিত হয়েছে, মাকামে ইবরাহীমের নিকট সালাত আদায় করার জন্য, তা স্পর্শ করার জন্য নির্দেশিত হয় নি। নিশ্চয়ই এই উম্মত তা করার জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছে যা করার জন্য পূর্ববর্তী উম্মত দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছিল।

৮. যমযম:

        যমযম প্রসিদ্ধ বরকতময় কুয়া। যা মসজিদে হারামে হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরের পূর্বে ও মাকামে ইবরাহীমের দক্ষিণে অবস্থিত। এ পানি বের হওয়ার ঘটনা প্রসিদ্ধ এবং তার ফযিলত সম্পর্কেও মানুষ অবগত। আল্লাহ এ পানির এমন অনেক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছেন, যা দ্বারা সকল পানির উপর তার গুরুত্ব ও ফজিলত প্রমাণিত হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো:

        (ক) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্ষ ইসরা ও মিরাজের ঘটনার পূর্বে এ পানি দ্বারা ধৌত করণ। (সহীহ বুখারী: ২/৪৯২)

        (খ) শরীয়ত ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পানি এই যমযম। ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যমীনের উপরি ভাগের সর্বোত্তম পানি হল যমযমের পানি।” (তাবরানী: ১১/৯৮, মুনজেরীর তারগীব ও তারহীব: ২/২০৯)

        (গ) খাদ্যের ন্যায় পানকারীকে পরিতৃপ্ত করে। সহীহ মুসলিমে বর্নিত হয়েছেন, আব্দুল্লাহ ইবন সামেত আবূ যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে তাঁর ইসলাম গ্রহণের খবর বর্ণনা করেন। তাতে রয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ যরকে বলেন: কখন থেকে এখানে রয়েছ? আবূ যর বলেন: আমি বললাম: ৩০ দিবা-রাত এখানে রয়েছি। তিনি বলেন: তোমার খাবার কি ছিল? আবূ যর বলেন: আমি বললাম: আমার যমযম পানি ব্যতীত আর কিছু ছিল না। পরিশেষে এমন মোটা হয়ে গেলাম যে পেটের চামড়া ভাজ হয়ে গেল। কলিজায় ক্ষুধার লেশমাত্র পেতাম না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: নিশ্চয়ই এ পানি বরকতময় নিশ্চয়ই তা খাদ্যের খাদ্য। (মুসলিম: ৪/১৯১৯)

        ইবনুল আসীর বলেন: ‘‘অর্থাৎ: মানুষ যখন এপানি পান করবে তখন সে পরিতৃপ্ত হবে, যেমন খাবার গ্রহণকরে পরিতৃপ্ত হয়। (আন নেহায়া: ৩/১২৫), যাদুল মায়াদে ইমাম ইবনে কায়্যিম (রহিমাহুল্লাহর বাণী দ্র:)

        (ঘ) নিশ্চয়ই আল্লাহর হকুমে যমযম পানি হল রোগের আরোগ্য লাভের উপকরণ। যেমন: ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন: ‘‘যমীনের বুকে সর্বোত্তম পানি হল যমযমের পানি, তার মধ্যে রয়েছে খাদ্যের উপকরণ ও পীড়িতদের জন্য রয়েছে আরোগ্যের উপরকণ।” আল্লাহ তা‘আলা এ বরকতের পানিকে রক্ষা করেছেন। এটি আল্লাহর মহত্বের একটি স্পষ্ট প্রমাণ বা নিদর্শন । সুতরাং তা শতাব্দির পর শতাব্দিতেও বিলুপ্ত হয় নি। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে তা পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাতে তার স্বচ্ছতা-বিশুদ্ধতা ও যাবতীয় দোষ ও মিশ্রণ হতে মুক্ত প্রমাণ হয়। (দেখুন: ইঞ্জিনিয়ার ইয়াহইয়াহ প্রণীত যমযম খাদ্য ও আরোগ্য: ১০৯ পৃষ্টা)

৯. সাফা-মারওয়া: কা‘বার পূর্বে মক্কার দু’টি পাহাড়ের নাম হল সাফা ও মারওয়া। হজ্ব ও উমরার সময় উভয় পাহাড়ের মাঝে সা‘ঈ করা হয়, যা তার রুকনের অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

﴿ ۞إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ فَمَنۡ حَجَّ ٱلۡبَيۡتَ أَوِ ٱعۡتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَاۚ وَمَن تَطَوَّعَ خَيۡرٗا فَإِنَّ ٱللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ ١٥٨ ﴾ [البقرة: ١٥٨]

“‘নিশ্চয় ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত, অতএব যে ব্যক্তি এই গৃহের ‘হজ্ব’অথবা ‘উমরা’করে তার জন্যে এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ করা দোষনীয় নয়, এবং কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করলে আল্লাহ গুণগ্রাহী, সর্বজ্ঞাত”(সূরা আল-বাকারা: ১৫৮)

 ইমাম তাবারী রহ. আল্লাহর বাণী :

 ﴿ ۞إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ﴾ [البقرة: ١٥٨]

এর তাফসীরে বলেন: আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত হল যে, তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সাফা ও মারওয়াকে এমন একটি নিদর্শন ও ঐতিহ্যের প্রতীক বানিয়েছেন যে, তারা এর নিকট দো‘আ, যিকির বা সেখানে যে আমল তাদের জন্য ফরয করা হয়েছে তা পালনের মাধ্যমে তাঁর ইবাদত পূর্ণ করে থাকে। (তাফসীর তাবারী: ২/৭১০)

তার সম্মান মূলত: আল্লাহ তা‘আলা যে উভয়ের মাঝে সা‘ঈ করার বিধান প্রযোজ্য করেছেন তার মধ্যেই। পক্ষান্তরে উভয় পাহাড়কে স্পর্শ করা শরীয়তসম্মত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকা বিরোধী হওয়ার কারণে।

 ১০. মিনা, আরাফাত ও মুযদালিফা:

এ তিনটি স্থান হল সম্মানিত স্থান ও পবিত্র নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। হজ্বে যার অভিমুখী হতে হয় ও কতিপয় বিধান সেখানে পালন করতে হয়।

মিনা: শুধু হজের দিনগুলোতে সেখানের সংশ্লিষ্ট আমলগুলি আদায় করা হয়। যেমন: রাত্রি যাপন, পাথর নিক্ষেপ ও পশু যবাই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿۞وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوۡمَيۡنِ فَلَآ إِثۡمَ عَلَيۡهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلَآ إِثۡمَ عَلَيۡهِۖ لِمَنِ ٱتَّقَىٰۗ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّكُمۡ إِلَيۡهِ تُحۡشَرُونَ ٢٠٣﴾ [البقرة: ٢٠٣]

‘‘এবং নির্ধারিত (তাশরীকের) দিবসসমূহে আল্লাহর বিশেষ) যিকির কর: অতঃপর কেউ যদি দু’দিনের মধ্যে (মক্কায় ফিরে যেতে) তাড়াতাড়ি করে তবে তার জন্যে কোনো পাপ নেই, পক্ষান্তরে কেউ যদি বিলম্ব করে তবে তার জন্যেও পাপ নেই এমনটি মুত্তাকীর জন্য এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর ও জেনে রেখো যে, অবশ্যই তোমাদের সকলকে তাঁরই নিকট সমবেত করা হবে।” [সূরা আল-বাকারা:২০৩]

        মিনা নামকরণ: এজন্যই মিনা বলা হয় যে, সেখানে রক্ত প্রবাহিত করা হয়।

        সীমানা: আকাবা হতে ওয়াদী মুহাসসার পর্যন্ত বিস্তৃত। (দেখুন: মু‘জামুল বুলদান: ৫/১৯৮-১৯৯ পৃষ্ঠা)

        আরাফাত: দো‘আ ও যিকিরের জন্য যিলহজ্ব মাসের নবম তারিখ আরাফা দিবসেই শুধু সেখানে যেতে হয়। ‘‘ইলাল” (ইলাল নামটি এ পাহাড়ের বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নাম। আর ‘‘জাবালে রহমত” নামকরণটি আসলে ভুল। দেখুন: আল্লামা বকর আবূ যায়েদ প্রণীত: ‘‘তাহকীকাত শরয়িয়্যাহ ওয়া তারীখিয়্যাহ: ১৬-২৯ পৃষ্টা) পাহাড়ের পাথরগুলির পাদদেশে সম্ভব হলে হাজী সাহেবানগণ অবস্থান করবেন, তা না হলে সমস্ত আরাফাই অবস্থান স্থল। যেমনভাবে অনেক হাজী পাহাড়টিতে আরোহণ করে থাকে, তার কোনো বিধিবদ্ধতা নেই। পাহাড় স্পর্শ করা বা তার বরকত গ্রহণ করাও শরীয়তসম্মত নয়। আরাফাতের বর্ণনা আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের বাণীতে হয়েছে:

﴿لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَبۡتَغُواْ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكُمۡۚ فَإِذَآ أَفَضۡتُم مِّنۡ عَرَفَٰتٖ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ عِندَ ٱلۡمَشۡعَرِ ٱلۡحَرَامِۖ وَٱذۡكُرُوهُ كَمَا هَدَىٰكُمۡ وَإِن كُنتُم مِّن قَبۡلِهِۦ لَمِنَ ٱلضَّآلِّينَ ١٩٨﴾ [البقرة: ١٩٨]

“তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের অনুগ্রহ লভের চেষ্টা করলে তাতে তোমাদের পক্ষে কোনো অপরাধ নেই; অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত হতে প্রত্যাবর্তিত হও তখন পবিত্র (মাশয়ারে হারাম) স্মৃতি-স্থানের নিকট আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যেরূপ নির্দেশ দিয়েছেন তদ্রূপ তাঁকে স্মরণ করো এবং নিশ্চয় তোমরা এর পূর্বে বিভ্রান্তদের অন্তর্গত ছিলে।” [সূরা আল-বাকারা: ১৯৮]

        ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ আয়েশারাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: কুরাইশ ও যারা তাদের দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত ছিল, মুযদালিফায় তারা অবস্থান নিত ও তার নামকরণ করেছিল ‘‘আলহুমুস” এবং সমস্ত আরব ‘আরাফায় অবস্থান করত। অতঃপর যখন ইসলামের আগমন ঘটল, তখন আল্লাহ্ তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম করলেন: ‘আরাফায় এসে অবস্থান নেওয়ার জন্য। এরপর সেখান থেকে প্রস্থান করার জন্য। তার বর্ণনা যেমন: আল্লাহর বাণীতে এসেছে:

﴿ثُمَّ أَفِيضُواْ مِنۡ حَيۡثُ أَفَاضَ ٱلنَّاسُ وَٱسۡتَغۡفِرُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٩٩﴾ [البقرة: ١٩٩]

“অতঃপর যেখান থেকে লোক প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন কর এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।” [সূরা আল-বাকারা: ১৯৯, বুখারী: ৮/১৮৬]

        মুযদালিফা: আরাফা হতে প্রত্যাবর্তন কুরবানীর পূর্বের রাতে সেখানের মাশ‘য়ারে হারামে রাত্রি যাপন এবং আল্লাহর যিকির ও দো‘আর উদ্দেশ্যে আগমন করা হয়। মুযদালিফার মাঝামাঝি এখানে একটি পাহাড় ছিল যা বর্তমান যুগে প্রশস্ততার প্রয়োজনে বিলুপ্ত করে সেখানে মসিজিদ বানান হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَبۡتَغُواْ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكُمۡۚ فَإِذَآ أَفَضۡتُم مِّنۡ عَرَفَٰتٖ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ عِندَ ٱلۡمَشۡعَرِ ٱلۡحَرَامِۖ وَٱذۡكُرُوهُ كَمَا هَدَىٰكُمۡ وَإِن كُنتُم مِّن قَبۡلِهِۦ لَمِنَ ٱلضَّآلِّينَ ١٩٨﴾ [البقرة: ١٩٨]

“তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা করলে তাতে তোমাদের পক্ষে কোনো অপরাধ নেই; অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত হতে প্রত্যাবর্তিত হও তখন পবিত্র (মাশ‘য়ারে হারাম) স্মৃতি-স্থানের নিকট আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যেরূপ নির্দেশ দিয়েছেন তদ্রূপ তাঁকে স্মরণ করো এবং নিশ্চয় তোমরা এর পূর্বে বিভ্রান্তদের অন্তর্গত ছিলে।” [সূরা আল-বাকারা: ১৯৮]

        সীমানা: মুযদালিফার সীমানা ওয়াদী মুহাসসার হতে শুরু করে মা’যিমা ই আরাফার মাঝামাঝি। অবশ্য এর দু’সীমা মুযদালিফার অন্তর্ভুক্ত নয়; তবে মুযদালিফা সম্পূর্ণটাই হারামের অন্তর্ভুক্ত।” (মু‘জামুল বুলদান: ৫/১৯৮)

        উক্ত তিনটি স্থানের বর্ণনা বিভিন্ন সহীহ হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। যেমন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: “আরাফার সম্পূর্ণটিই অবস্থান স্থল, মিনার সম্পূর্ণটাই যবাইর স্থান, সম্পূর্ণ মুযদালিফা অবস্থান স্থল ও মক্কার সম্পূর্ণ রাস্তাই যবাইর স্থান। (আবু দাঊদ: ১৯৩৬, ইবনে মাজাহ: ৩০৪৮)

        এই তিনটি স্থানের ফযিলত ও এগুলিকে আল্লাহর শরীয়ত মোতাবেক ইবাদতের জন্য খাস করা শরীয়তের সঠিক দলীল-প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত। এগুলি দো‘আ কবূলের উপযুক্ত স্থান।

        ইমাম শাওকানী (রহ.) এসব দো‘আর ফযিলত সম্পর্কে বলেন: ‘‘এসব বরকতময় স্থানের অতিরিক্ত কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সেই সব স্থানের সম্মান ও বরকত থাকার কারণে। আর তার বরকতে ধন্য হবেন যাঁরা তার মধ্যে যথাবিহিত আমল করবেন। আল্লাহ তায়ালার রয়েছে অফুরন্ত অনুগ্রহ ও মহা অবদান। যেমন একটি হাদীসে এসেছে: তাঁরা এমন জাতি যে, তাঁদের সাথে অবস্থানকারীও বঞ্চিত হয় না। অর্থাৎ ঐ জাতির সাথে অবস্থানকারীদেরকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, অথচ তারা তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বরং সেখানে অবস্থানকারীদের বরকত তাদের দিকে এসে পড়েছে যদিও তারা এদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সুতরাং এটি কোনো দূরের বিষয় নয় যে বরকতের স্থানগুলি এমন হতে পারে: যার ফলে ওখানে আল্লাহকে আহ্বানকারী আল্লাহ প্রদত্ত সেখানের বরকতের অন্তর্ভুক্ত হবে; যে কারণে সে এক্ষেত্রে তার দো‘আ কবূল না হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।” (শাওকানীর তুহফাতুয যাকেরীন: ৪৪ পৃষ্ঠা)

 এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিষয়ে সতর্কতা জরুরী:

        প্রথমত: নিশ্চয়ই যে ফজিলতপূর্ণ স্থানের ব্যাপারে আলোচনা ইতোপূর্বে করা হলো সেখানে স্বয়ং যে মূল ইবাদত শরীয়তে দলীল ভিত্তিক ও যে পদ্ধতির তা ব্যতীত আল্লাহর অন্য কোনো ইবাদত করা উচিত হবে না। যেমন: কাবার পার্শ্বে অবস্থিত মাকামে ইবরাহীমের নিকটে তাওয়াফের পর দুই রাক‘আত সালাত আদায় করা; যার প্রথম রাক‘আতে সূরা ফাতেহা ও সূরা কাফেরূন এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা ফাতেহা ও সূরা ইখলাস পড়া।      এখানে ইবাদতের মূল হলো দুই রাক‘আত সালাত আদায়। সুতরাং মাকামে ইবরাহীম স্পর্শ করা, চুম্বন করা ও তা দ্বারা বরকত অর্জন করা যাবে না। তা এ অর্থে যে, সেখানের স্বয়ং যে মূল ইবাদত বর্ণিত হয়েছে তা ব্যতীত সেখানে আল্লাহর জন্য আর কোনো প্রকার ইবাদত করা যাবে না।

        ইতোপূর্বে সালাফে সালেহীনের মাকামে ইবরাহীম স্পর্শ ও তা চুম্বন করার নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কতিপয় উক্তি অতিবাহিত হয়েছে। অনুরূপ সেখানে স্বয়ং যে পদ্ধতির ইবাদত পাওয়া যায় তা হলো তাওয়াফের পর দুই রাক‘আত সালাত আদায় করা। যার প্রথম রাক‘আতে সূরা ফাতিহা ও সূরা কাফেরূন এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা ফাতিহা ও সূরা ইখলাস পড়া।

অতএব এভাবে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই স্বয়ং আসল ইবাদত ও স্বয়ং সে পদ্ধতিটিই অবলম্বন করা জরুরী।

        স্থানগুলির ব্যাপারে সালাফে সালেহীন এমন নীতিই বাস্তবায়ন করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আমল করেছেন তাঁরাও তা করেছেন এবং যে আমল তিনি বর্জন করেছেন, তাঁরাও তা বর্জন করেছেন।

        উক্ত নীতির দৃষ্টান্ত: বর্ণিত আছে ইবনে আব্বাস ও মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এক সাথে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। এ সময় মু‘আবিয়া কাবার চার কর্ণারই স্পর্শ করছিলেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বললেন: নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) ও তার পূর্বের কর্ণার রুকণে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কর্ণার স্পর্শ করেন নি। মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: বায়তুল্লাহর কোনো অংশই পরিতাজ্য নয়। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম বললেন: অবশ্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। তারপর মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু স্বীয় মত পরিবর্তন করেন। (তিরমিযী: ৩/২১৩, ইমাম তিরমিযী বলেন: হাসান সহীহ)

        দ্বিতীয়ত: নিশ্চয়ই এ ফজিলতপূর্ণ স্থানগুলি বিশেষ কতিপয় ইবাদতের জন্যই নির্ধারিত। অতএব এর উপর কিয়াস-অনুমান করে অন্যান্য ইবাদত করা যায় না।

        ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘‘মক্কার নিদর্শনাবলীর (মাশায়েরে হারামে) বিশেষ স্থানগুলি বিশেষ বিশেষ ইবাদতের জন্য নির্ধারিত। তার সাথে অন্যান্য সকল স্থানকে সে সব ইবাদতে যুক্ত করা যাবে না। যেমন: বায়তুল্লাহ তাওয়াফের জন্য নির্ধারিত। সুতরাং সে সব স্থান যার জন্য ও বিধিবদ্ধ সে ক্ষেত্রে একটির কিয়াস অন্যটির উপর চলবে না।” (ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকীম: ২০/৮০৯-৮১০)

        অতএব আল্লাহ যা প্রবর্তন করেন নি তা কারো জন্য প্রবর্তন করা জায়েয নয়। যেমন: কেউ যদি বলে আমি কাবার সাত তাওয়াফের মত কোনো পাথরের চারি পার্শ্বে সাত তাওয়াফ মুস্তাহাব মনে করি বা মাকামে ইবরাহীমকে মুসাল্লা বানাতে চাই এবং এ জাতীয় অন্য কিছু, তবে তার জন্যে তা জায়েয নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা যে জিনিস যে কর্ম, যে বিধি-বিধানের সাথে নির্ধারণ করেছেন, তার সাথে অন্যকে কিয়াস করা নাজায়েয। যার সাথে যা কিছু নির্ধারণ করা হয়েছে তা অন্যের মধ্যে বিরাজমান না থাকার কারণে হতে পারে, যা অধিকাংশ আলেমের মত অথবা নিছক তা যেহেতু নির্ধারণ করে দিয়েছে তার জন্যই, যা কতিপয় আলেমের মত। যেমন: কাবা হজ্ব ও তাওয়াফের জন্য খাস, অনুরূপ আরাফা অবস্থানের জন্য, মিনা পাথর নিক্ষেপের জন্য, চার হারামের মাস তার বিশেষ মর্যাদার জন্য, রমজানের মাস রোযা ও তারাবীহর জন্য এবং এছাড়াও অন্যান্য বিষয়। (মাজমু‘ ফাতোয়া: ৪/৪৮২)


দ্বিতীয় অধ্যায়

 ঐ সমস্ত স্থান যা সম্মান করার ব্যাপারে শরীয়তে কোনো বিশেষ বৈশিষ্টের কথা প্রমাণিত নয়

        কিছু কিছু ঐতিহাসিক এবং লিখকগণ মক্কা মুকাররামার ফযিলত এবং হজ্ব সম্পর্কে লিখতে গিয়ে এমন কিছু কিছু স্থান ও জায়গার কথা উল্লেখ করেছেন, যা হজ্ব আদায়কারী এবং যিয়ারতকারীদের জন্য বরকত লাভের উদ্দেশ্যে যিয়ারত করা এবং সেখানে আল্লাহর ইবাদতের কথা বলেছেন, যা নবী জীবনীর উপর লেখা গ্রন্থগুলোতে উল্লেখ হয়েছে। সেখানে কোথাও এসেছে যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুক স্থানে বসেছেন বা সালাত আদায় করেছেন ইত্যাদি। আবার কিছু মক্কার ইতিহাস লিখকগণ তাদের বিশাল ভলিয়মের গ্রন্থাবলীতে তা অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ সমস্ত স্থানসমূহকে কোনো ইবাদতের জন্য নির্ধারিত করার ব্যাপারে শরীয়াতের নিষেধকারী দলীলসমূহ উল্লেখ করার আগে দু’টি বিষয়ের মাঝে পার্থক্য উল্লেখ করা জরুরী:

        ১ম: যে কোনো স্থান বা জায়গা যেখানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদতসমূহের মধ্যে কোনো একটি ইবাদতের উদ্দেশ্যে গমন করেছেন। অবশ্যই (উম্মতের জন্য) ঐ স্থানে যাওয়া এবং তা অন্বেষণ করা বৈধ, আর তা হবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ এবং সোয়াব ও প্রতিদানের আশায়। ইতোপূর্বে ঐ সমস্ত বরকতময় স্থান এবং তা সম্মান করার দলীল উল্লেখ করা হয়েছে, এর মধ্যে কোনো মতভেদ নেই।

        ২য়: যে কোনো স্থানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো ইবাদত বা অন্য কোনো কিছু করেছেন, কিন্তু ঐ স্থানকে বিশেষভাবে উদ্দেশ্য করে নয় এবং ইচ্ছা করেও নয় (বরং ইবাদত বা কাজের সময় হয়েছে তাই তিনি তা এখানে করেছেন)। এ ধরণের স্থানে কোনো ইবাদত করা বা তা অন্বেষণ করা বিধিসম্মত নয়।

        এর ভিত্তিতে বলা যায় যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদত হিসেবে যা কিছু করেছেন তা ইবাদত গণ্য হবে এবং সেক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করা বিধি সম্মত, আর যদি তিনি কোনো স্থান বা সময়কে ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করে থাকেন তাহলে সে সময় বা স্থানকে ঐ ইবাদতের জন্য নির্ধারিত করা সুন্নাত।

        অতএব সম্মানযোগ্য স্থানসমূহ হলো তা যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদতের উদ্দেশ্যে গমন করেছেন এবং শরীয়তের দলীলসমূহ সে বিষয়ে স্পষ্ট রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনো মতবিরোধ নেই। কিন্তু মক্কা মুকাররামার কিছু কিছু স্থানকে ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করা যা নির্ধারণ করার কথা প্রমাণিত নয় সেখানে ইবাদতের জন্য যাওয়া বৈধ নয়।

 সংক্ষিপ্তভাবে এ সমস্ত স্থানসমূহেকে সম্মান করা নিষিদ্ধকরণের দলীলসমূহ:

        ১. ইবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল নির্দেশমূলক কোনো দলীল না পাওয়া পর্যন্ত ইবাদত করা নিষিদ্ধ। তা এ জন্য যে, দ্বীনের হাকীকত পরিস্ফুটিত হয় দু’টি নীতির মাধ্যমে। তার একটি হল: একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করতে হবে, অপরটি হল: একমাত্র তাঁর নির্ধারিত বিধান মোতাবেক তাঁর ইবাদত করতে হবে।

        অতএব সালাত, দো‘আ, যিকির অনুরূপ নৈকট্য এবং বরকত লাভের উদ্দেশ্যে এই সমস্ত স্থানসমূহে গমন করা ইবাদতের প্রকারসমূহের অন্তর্ভুক্ত। অথচ কুরআন ও হাদীসে এমন কোনো দলীল নেই যা তা জায়েয হওয়ার কথা প্রমাণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْ شَرَعُواْ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمۡ يَأۡذَنۢ بِهِ ٱللَّهُۚ﴾ [الشورى: ٢١]

“তাদের কি এমন কতগুলো দেবতা আছে যারা তাদের জন্য দ্বীনের এমন কিছু বিধান প্রবর্তন করেছে যার অনুমতি আল্লাহ দেন নি”? [সূরা আশ-শুরা-২১]

        ২. সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক এ সমস্ত স্থানসমূহকে ইবাদত বা বরকত লাভের স্থান হিসেবে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা, অথচ তারা ছিলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের ক্ষেত্রে এই উম্মতের মধ্যে সর্বাধিক আগ্রহী। আর তারাও এই সমস্ত স্থানসমূহ সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি তাদের অধিক ভালোবাসা সুসাব্যস্ত বিষয়।

        অতএব ইবাদতসমূহের মধ্যে প্রতিটি ইবাদত যা সালফে সালেহীনগণ পরিত্যাগ করেছেন, (পরবর্তীতে) তা পালন করা বিদ‘আত, অবশ্য তা এই শর্তে যে এই ইবাদতটি করার চাহিদা বিদ্যমান ছিল আর তা করতে কোনো বাধা বিপত্তি ছিল না।

হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন:

"كل عبادة لم يتعبدها أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم؛ فلا تتعبدها؛ فإن الأول لم يدع للآخر مقال فاتقوا يا معشر القراء! وخذوا بطريق من كان قبلكم"

“যে সমস্ত ইবাদত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাগণ করেন নি তা তোমরা ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করবে না, কেননা পূর্ববর্তীগণ পরবর্তীদের জন্য ইবাদত হিসেবে কোনো কথা বাদ রেখে যান নাই। সুতরাং হে শিক্ষার্থীরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তোমাদের পূর্ববর্তীদের রাস্তা অবলম্বন কর।” (তারতুসী, হাওয়াদিস ওয়াল বিদা‘, ১৪৯)

        ৩. এ ধরণের সম্মানকে সালফে সালেহীন তাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছেন এবং প্রতিবাদ করেছেন, তাদের মধে সর্বাগ্রে ছিলেন ফারুক ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। তিনি তাঁর কথার মাধ্যমে প্রতিবাদ করেন:

عَنِ الْمَعْرُورِ بْنِ سُوَيْدٍ , قَالَ: " خَرَجْنَا حُجَّاجًا مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ , فَعَرَضَ لَنَا فِي بَعْضِ الطَّرِيقِ مَسْجِدٌ , فَابْتَدَرَهُ النَّاسُ يُصَلُّونَ فِيهِ , فَقَالَ عُمَرُ: مَا شَأْنُهُمْ؟ فَقَالُوا: هَذَا مَسْجِدٌ صَلَّى فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , [ص:88] فَقَالَ عُمَرُ: «أَيُّهَا النَّاسُ , إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ باتِّبَاعِهِمْ مِثْلَ هَذَا , حَتَّى أَحْدَثُوهَا بِيَعًا , فَمَنْ عَرَضَتْ لَهُ فِيهِ صَلَاةٌ فَلْيُصَلِّ , وَمَنْ لَمْ تَعْرِضْ لَهُ فِيهِ صَلَاةٌ فَلْيَمْضِ»

“মা‘রুর ইবন সুওয়াইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা আমরা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে বের হলাম, পথিমধ্যে আমরা একটি মসজিদ পেলাম, মানুষ সেখানে সালাত আদায়ের জন্য দ্রুত ছুটে গেল, ওমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিজ্ঞেস করলেন তাদের কী হয়েছে? তারা বলল: এই মসজিদটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেছিলেন, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: হে মানবমন্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তীগণ এধরনের অনুসরণের কারণে পথভ্রষ্ট হয়েছিল, এমনকি তারা এগুলো নিয়ে উপাসনালয়ও আবিষ্কার করেছিল; বরং যে সালাতের সময়ে এ সমস্ত স্থানে উপস্থিত হবে সে এখানে সালাত আদায় করবে আর যদি সালাতের সময়ে এই সমস্ত স্থানে উপস্থিত না হয় তাহলে রাস্তা অতিক্রম করে চলে যাবে। (ইবন ওয়াদ্দাহ, আল-বিদা‘: ১০১)

 কাজের মাধ্যমে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর প্রতিবাদ:

অপর এক ঘটনায় ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, যে তিনি জানতে পারলেন,

«أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ بِقَطْعِ الشَّجَرَةِ الَّتِي بُويِعَ تَحْتَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَقَطَعَهَا لِأَنَّ النَّاسَ كَانُوا يَذْهَبُونَ فَيُصَلُّونَ تَحْتَهَا , فَخَافَ عَلَيْهِمُ الْفِتْنَةَ»

“যে কিছু মানুষ ঐ বৃক্ষের নিকট আসে যে বৃক্ষের নিচে সাহাবাগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বাইয়াত করেছিল, তখন তিনি নির্দেশ দিলেন যেন এই বৃক্ষ কেটে ফেলা হয় তখন তা কেটে দেয়া হল”(প্রাগুক্ত)

        এ হল উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কথা এবং কাজ যার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِنَّ اللَّهَ جَعَلَ الحَقَّ عَلَى لِسَانِ عُمَرَ وَقَلْبِهِ»

“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা উমারের যবানে এবং অন্তরে সত্যকে ঢেলে দিয়েছেন”(তিরমিযী, ৩৬৮২)

        ইমাম ইবন ওদ্যাহ আল-কুরতুবী এই দু’টি ঘটনা বর্ণনা করার পর বলেছেন: মালেক ইবন আনাস এবং মদীনার অন্যান্য আলেম এ সমস্ত মসজিদ এবং মদীনার মসজিদ কোবা এবং উহুদ ব্যতীত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহে আগমন করাকে অপছন্দ করতেন। (প্রাগুক্ত, পৃ. ৮৯)

        ৪. নিশ্চয়ই সাহাবীগণ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বাইয়াতে রিদওয়ান করেছিলেন, যার কথা আল্লাহ্ কুরআনে উল্লেখ করেছেন, তখন তাদের সংখ্যা ছিল ১৪০০, পরের বছর যখন তারা এসেছিলেন তখন তাদের কেউ সেই স্থানটি সম্পর্কে কিছু জানত না, ঐ স্থানটি নির্ধারণে তাদের মধ্যে কোনো দু’জন সাহাবী একমতও হয় নি; বরং ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যার কাজকে কিছু মানুষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহকে বরকতময় বলে মনে করার ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে থাকে, তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে এই বৃক্ষের স্থানটি নির্ধারিত নেই, আর এটি তাদের কাছ থেকে গোপন রাখা আল্লাহর একটি দয়া।

ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন:

قَالَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: «رَجَعْنَا مِنَ العَامِ المُقْبِلِ فَمَا اجْتَمَعَ مِنَّا اثْنَانِ عَلَى الشَّجَرَةِ الَّتِي بَايَعْنَا تَحْتَهَا، كَانَتْ رَحْمَةً مِنَ اللَّهِ»

“পরের বছর আমরা আসলাম তখন আমাদের মধ্যে কোনো দু’জন ঐ বৃক্ষের নিচে একত্রিত হয় নি যে বৃক্ষের নিচে আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বাইয়াত করেছিলাম। আর তা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া।” (বুখারী, ২৯৫৮)

        হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেছেন: মাগাযী (যুদ্ধ) অধ্যায়ে আসবে যে, সাঈদের পিতা মুসায়্যিব ইবনে হুযন বৃক্ষের স্থানটি গোপন রাখার বিষয়ে ইবনে উমারকে তার সমর্থনের কথা এবং এর মধ্যে কি হিকমত রয়েছে তার বর্ণনা। আর তাহলো যে ঐ বৃক্ষের নিচে যে কল্যাণকর ঘটনা ঘটেছিল তা নিয়ে যেন কোনো ফেতনা না হয়, যদি বৃক্ষটিকে রেখে দেওয়া হত তাহলে অজ্ঞ লোকদের সম্মান করা থেকে বৃক্ষটি রক্ষা পেত না, এমনকি তারা হয়ত এই বৃক্ষের ব্যাপারে এই বিশ্বাসও পোষণ করত যে তা মানুষের উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখে, যেমন আজ আমরা অন্যান্য স্থানগুলোর অবস্থা প্রত্যক্ষ করছি। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা তার বক্তব্যে একথার প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন যে, ‘‘এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ছিল, অর্থাৎ: ঘটনাটি তাদের সামনে সংঘটিত হওয়ার পরও ঐ বৃক্ষের স্থানটি গোপন রাখা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। (ফাতহুল বারী, ৬/১১৮)

এ বিষয়কে সমর্থন করে কাজী ইয়াদ রহ. বলেন: বৃক্ষের বিষয়টি যে পরবর্তী বছর তারা তা ভুলে গিয়েছিল, কেউ বলেছেন যে, এটা মুমেনদের জন্য রহমত এবং তাদেরকে পাপে পতিত হওয়া থেকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কেননা যদি তার স্থানটি নির্দিষ্ট থাকত তাহলে অনারব এবং জাহেলদের মাধ্যমে ঐ স্থানটিকে সম্মান জানানো এবং সেখানে কোনো ইবাদত করার ভয় ছিল।

        ৫. ঐ সমস্ত স্থানকে সম্মান জানানো যা সম্মান করা বিধি সম্মত নয় তা বিরাট ফেতনা-ফাসাদের কারণ: আর তা বিভিন্নভাবে স্পষ্ট করা সম্ভব:

        (ক) এ সমস্ত স্থানকে সম্মান জানানো থেকে নিষেধ করা শির্কের মাধ্যমকে বন্ধ করা। কেননা তা যিয়ারত এবং সেখানে ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা মানুষকে ঐ স্থানকে সম্মান জানানো এবং তাকে পবিত্র বলে মনে করা এবং তা নিয়ে ফিতনায় পতিত হওয়ার দিকে ঠেলে দিবে, এমনকি বিষয়টি হয়ত কখনো এমনও হতে পারে যে কেউ ঐ স্থানটিকে ইবাদতখানায় পরিণত করবে।

        (খ) এসমস্ত স্থানকে ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করা কবরস্থানে সালাত আদায় করার মত।

        অতএব তা হারামে পতিত হওয়ার মাধ্যমের ন্যায়। ফলে কবরের নিকট সালাত আদায় করা তা ইবাদত করার পথ ও মাধ্যম। তাই এসমস্ত স্থানে সালাত আদায় করা, স্থানটিকে সম্মান জানানো এবং তা ঐ স্থানটিকে ও ঐ স্মৃতিকে কোনো সময় মসজিদে পরিণত করার মাধ্যম। আর শরীয়তের দলীলসমূহ অকাট্যভাবে প্রমাণ করেছে যে নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করা হারাম।

যেমন ইবনে আব্বাস এবং আয়শা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে তারা বলেছেন:

أَنَّ عَائِشَةَ، وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ، قَالاَ: لَمَّا نَزَلَ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَفِقَ يَطْرَحُ خَمِيصَةً لَهُ عَلَى وَجْهِهِ، فَإِذَا اغْتَمَّ بِهَا كَشَفَهَا عَنْ وَجْهِهِ، فَقَالَ وَهُوَ كَذَلِكَ: «لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى اليَهُودِ وَالنَّصَارَى، اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ» يُحَذِّرُ مَا صَنَعُوا

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যু শয্যায় শায়িত তখন তাঁর একটি চাদর দিয়ে তাঁর চেহারাকে ঢেকে দেয়া হচ্ছিল, যখন তিনি আবার হুশ ফিরে পেতেন তখন চাদর সরিয়ে দেয়া হত, তখন তিনি বললেন: ইহুদী নাসারাদের উপর আল্লাহর লা‘নত, কারণ তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করেছিল, তারা যা করেছিল তাথেকে তিনি তাঁর উম্মতকে সতর্ক করছিলেন। এ বিষয়ে আরো অনেক হাদীস রয়েছে।

        (গ) নিশ্চয়ই এসস্ত স্থানসমূহকে সম্মান জানানোর মাঝে রয়েছে আহলে কিতাব (ইয়াহূদী নাসারাদের) সাথে তাদের বিদ‘আতী এবং অন্যান্য কর্মকান্ডে সাদৃশ্যতার মাধ্যম। এমনকি তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহ এবং স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহকে মাজার এবং দর্শনীয় স্থানে পরিণত করেছিল। আর ইসলাম তাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করা থেকে সতর্ক করেছে, তাই ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন:

«أَيُّهَا النَّاسُ , إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ باتِّبَاعِهِمْ مِثْلَ هَذَا , حَتَّى أَحْدَثُوهَا بِيَعًا»

“নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তীগণ এধরণের অনুসরণের কারণে পথভ্রষ্ট হয়েছিল, এমনকি তারা এগুলো নিয়ে উপাসনালয়ও আবিষ্কার করেছিল।”

        ৬. নিশ্চয়ই ইসলাম আমাদের জন্য যে স্থানসমূহকে সম্মান যোগ্য করেছে সে সমস্ত স্থানকে সম্মান করা এবং সেখানে আল্লাহর ইবাদত করা বিধিবদ্ধ, যেমন: কা‘বা ঘরের ত্বাওয়াফ করা, হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ এবং চুম্বন করা। এগুলোতে পার্থিব কোনো বরকত লাভ করা উদ্দেশ্য নয়, তাই হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন:

«إِنِّي أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ، لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ، وَلَوْلاَ أَنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ»

“নিশ্চয়ই আমি অবগত আছি যে তুমি একটি পাথর মাত্র, তুমি অপকারও করতে পার না আবার উপকারও করতে পার না, যদি আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে না দেখতাম যে তিনি তোমাকে চুম্বন করছেন, তাহলে আমিও তোমাকে চুম্বন করতাম না”(বুখারী: ১৫৯৭)

নিশ্চয়ই উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর এই কথার মাঝে কিছু কিছু জাহেলরা যা করে থাকে তার প্রতিবাদ রয়েছে, তারা মনে করে হাজরে আসওয়াদের বিশেষ কোনো ফযিলত রয়েছে, বা তার কোনো স্বকীয়তা রয়েছে বলে প্রমাণ দিতে চেষ্টা করে।

        ৭. নিশ্চয়ই এই সমস্ত স্থানসমূহকে সম্মান জানানো এবং পবিত্র মনে করা প্রকারান্তরে এগুলোকে আনন্দ উৎসবের স্থানে পরিণত করা। কেননা ‘ঈদ সময় এবং স্থানকে অন্তর্ভুক্ত করে।

        ‘ঈদ এমন একটি বিষয়ের নাম মানুষ যা করে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বা যেখানে বার বার মানুষ আসে বিশেষ কিছু করার জন্য। বস্তুত: যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ করেছেন তাঁর কবরকে যেন আমরা ঈদগাহে পরিণত না করি, যখন তিনি বলেছেন:

«وَلَا تَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا»

“আমার কবরকে তোমরা ঈদগাহে পরিণত কর না”। অথচ তাঁর কবরটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্থান, অতএব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সমস্ত স্থান অতিক্রম করেছেন এবং যে সমস্ত স্থানে সালাত আদায় করেছেন সেগুলোকে আনন্দ উৎসবের স্থানে পরিণত না করা আরো বেশি সমীচীন।

        ৮-মদীনার যে স্থানটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় সালাত আদায় করতেন, সালফে সালেহীনগণের কেউ ঐ স্থানটিকে স্পর্শ বা চুম্বন করতেন না, এমনিভাবে মক্কা বা অন্যান্য স্থান যেখানে তিনি সালাত আদায় করেছেন সেগুলোকেও তা করা হত না। অতএব যে স্থানটিকে তাঁর পবিত্র কদমদ্বয় স্পর্শ করত এবং সেখানে তিনি সালাত আদায় করতেন, তা স্পর্শ করা এবং চুম্বন করা তাঁর উম্মতের জন্য বিধি সম্মত করা হয় নি, তাহলে তাঁর রেখে যাওয়া যেসব স্মৃতিসমূহের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানা নেই বা যে বিষয়ে জানা যায় যে এটা মিথ্যা। যেমন, কিছু মানুষ অনেক পাথর সংগ্রহ করে তার উপর পায়েরাগ অংকন করে থাকে আর জাহেলরা মনে করে যে, এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পদচিহ্ন, সেগুলোর ক্ষেত্রে তা কিভাবে হতে পারে? বরং এগুলো পরিত্যাগ করাই উত্তম।

 পরিশেষ:

গবেষণার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে, মক্কা মুকাররামার জন্য যে আল্লাহ তা‘আলা সুউচ্চ মর্যাদা নির্ধারণ করেছেন তিনিই আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তার সম্মান করার জন্য,

﴿ ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢ ﴾ [الحج: ٣٢]

“এবং কেউ আল্লাহ নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের তাকওয়ার বহি:প্রকাশ”[সূরা আল-হাজ্ব-৩২]

        নিশ্চয়ই এ স্থানসমূহ যার সম্মান করা এবং সেখানে ইবাদত করা আমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছে তা বিরাট ফযিলতপূর্ণ, এতেই রয়েছে আমাদের জন্য যথেষ্টতা এবং অমুখাপেক্ষিতা ঐ সমস্ত স্থান থেকে যা ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করা হয় নি। তাই স্পষ্ট হলো যে, সুন্নাতের উপর অটল থাকা বিদআতী পন্থায় কঠোর সাধনা করা থেকে উত্তম।

        আমি আল্লাহর নিকট দো‘আ করি তিনি যেন হাজী, যিয়ারতকারী এবং সমস্ত মুসলিমদেরকে আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করার তাওফিক দান করেন। আর যেন আল্লাহ সালাত, সালাম ও বরকত নাযিল করেন তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবার এবং তাঁর সাথীগণের প্রতি।

সমাপ্ত



[1] নোট: অর্থাৎ যে এলাকা থেকে কেবলা উত্তর বা দক্ষিণ দিকে তারা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ করে বসবে আর যে এলাকা থেকে কেবলা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে তারা উত্তর বা দক্ষিণ দিকে মুখ করে বসবে। (অনুবাদক)