জাহেলিয়াতের যে সব রীতিনীতির বিরোধিতা রাসূল করেছেন (⮫)


 জাহেলিয়াতের যে সব রীতিনীতির বিরোধিতা রাসূল করেছেন

  

المسائل التي خالف فيها رسول الله ﷺ أهل الجاهلية

গ্রন্থকারের কথা

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

নিম্নেবর্ণিত বিষয়সমূহে আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম জাহেলী যুগের আরবদের এবং আহলে কিতাব তথা ইয়াহূদী নাসারাদের বিরোধিতা করেছিলেন। নিম্নোক্ত বিষয়গুলি প্রত্যেক মুসলিমের জেনে রাখা অবশ্য প্রয়োজন। কেননা,

বিপরীত বস্তুই তার বিপরীতটির সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে, অনুরূপভাবে বিপরীত বস্তু সম্পর্কে জানা থাকলেই কেবল সে বস্তুর আসল চেহারা ফুটে উঠে।

তবে এখানে সর্বাপেক্ষা ভয়ঙ্কর ব্যাপার যেটি, সেটি হলো সরাসরি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম আনীত দ্বীন সম্পর্কেই আন্তরিক ঈমান না থাকা। আর ঐ সংগে যদি কেউ জাহেলিয়াতের দ্বীনকেই ভালবাসে এবং তার উপরেই ঈমান আনে, তাহলে তো ক্ষতির আর শেষ থাকে না। (আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন)। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱلۡبَٰطِلِ وَكَفَرُواْ بِٱللَّهِ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ ٥٢﴾ [العنكبوت: ٥٢] 

‘যারা বাতিলের উপর ঈমান আনলো এবং আল্লাহর সাথে কুফরী করলো, তারাই সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সূরা আনকাবুত : ২৯ : আয়াত ৫২)

১। ওলী ও সৎলোকদেরকে আহ্বান করা।

জাহেলী যুগে আরবের লোকেরা মহান আল্লাহকে আহ্বান ও তার ইবাদত করার সময় নেককার লোকদেরকে শরীক করার মাধ্যমে সেটা সম্পন্ন করতো। তারা (একে নেককার লোকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন মনে করতো এবং) এর দ্বারা তারা আল্লাহর নিকট তাদের শাফা‘আত বা সুপারিশ কামনা করতো। তারা মনে করতো যে, আল্লাহ তা‘আলা এ কাজটি ভালোবাসেন আর নেককার বান্দাগণও সেটা ভালোবাসেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَيَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمۡ وَلَا يَنفَعُهُمۡ وَيَقُولُونَ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ ﴾ [يونس: ١٨] 

“ওরা আল্লাহকে ছেড়ে এমন কিছুর ইবাদত করে, যারা তাদের না কোন ক্ষতি করতে পারে, না কোন উপকার করতে পারে এবং ওরা বলে এরাই আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট শাফা‘আতকারী।” (সূরা ইউনুস, ১০ : আয়াত ১৮)

আরও বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَ مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ﴾ [الزمر: ٣] 

“যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে অলী-বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে, তারা বলে আমরা ওদের ইবাদত করি কেবল মাত্র এই জন্য যে, ওরা আমাদেরকে আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে পৌঁছে দেবে।’ (সূরা  যুমার, ৩৯ : আয়াত-৩)

ঐটি ছিল সবচেয়ে বড় বিষয় যে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফিরদের বিরোধিতা করেছিলেন। অতঃপর  তিনি ইখলাস নিয়ে এলেন এবং লোকদের বলে দিলেন যে, এটা আল্লাহর দ্বীন; যা দিয়ে তিনি সকল নবী-রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন। আর তিনি একান্তভাবে তাঁর জন্য কোনো কিছু না হলে সেটা গ্রহণ করেন না। তিনি আরও জানিয়ে দিলেন যে, যেসব লোকেরা নিজেদের ইচ্ছামত কাজ করতে চায়, তার জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন এবং তার ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম।

এটিই এমন এক মাসআলা যার কারণে মানুষ ‘মুমিন’ ও ‘কাফির’ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই বিষয়টিকেই শত্রুতার মানদণ্ড ধরা হয়েছে এবং এরই কারণে জিহাদ আইন সংগত করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَقَٰتِلُوهُمۡ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتۡنَةٞ وَيَكُونَ ٱلدِّينُ لِلَّهِۖ﴾ [البقرة: ١٩٣]

‘তোমরা ওদের বিরুদ্ধে লড়াই করো যতক্ষণ পর্যন্ত না ফিৎনা বাকী থাকে এবং দ্বীন কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য খালেস হয়ে যায়।’ (সূরা বাক্বারাহ ২ : আয়াত ১৯৩)

২। অনৈক্য করা ছিল জাহেলী যুগের লোকদের রীতি-নীতি

জাহেলী যুগে আরবের লোকেরা তাদের দ্বীনের ব্যপারে অনৈক্যে লিপ্ত ছিল। যেমন আল্লাহ বলেন,

﴿كُلُّ حِزۡبِۢ بِمَا لَدَيۡهِمۡ فَرِحُونَ ٣٢ ﴾ [الروم: ٣٢] 

“প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে তা নিয়ে আত্মপ্রসাদে লিপ্ত”[সূরা আর-রূম:৩২]

অনুরূপভাবে তারা তাদের দুনিয়ার ব্যাপারেও ছিল চরম অনৈক্যে। আর তারা এটাকেই সঠিক মত ও পথ মনে করত। তখন আল্লাহ তাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকার আদেশ দিলেন। তিনি বলেন,

﴿ ۞شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحٗا وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ وَمَا وَصَّيۡنَا بِهِۦٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓۖ أَنۡ أَقِيمُواْ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُواْ فِيهِۚ﴾ [الشورى: ١٣] 

“তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে, আর যা আমরা ওহী করেছি আপনাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ‘ঈসাকে, এ বলে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে বিভেদ সৃষ্টি কর না।”

তিনি আরও বলেন,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِي شَيۡءٍۚ ﴾ [الانعام: ١٥٩] 

“নিশ্চয় যারা তাদের দ্বীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন দায়িত্ব আপনার নয়”। আর আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কাফের-মুশরিকদের মত হতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,

﴿وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَٱخۡتَلَفُواْ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ﴾ [ال عمران: ١٠٥] 

“তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে”

আর তিনি আমাদেরকে দুনিয়ার ব্যাপারেও অনৈক্য করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,

﴿ وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ ﴾ [ال عمران: ١٠٣] 

“আর তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধরো। পরস্পর বিভক্ত হয়ো না।” [সূরা আলে ইমরান: ১০৩]

৩। শাসকের বিরোধিতা

জাহেলী যুগের আরবরা শাসন কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে ফযীলতের কাজ মনে করত। পক্ষান্তরে মেনে নেওয়া ও আনুগত্য করাকে অপমান ও লাঞ্ছনার বিষয় মনে করত। আল্লাহর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এই বদ-স্বভাবের বিরোধিতা করে তাদেরকে শাসনকর্তাদের নির্দেশনা মেনে নেওয়া, তাদের আনুগত্য করা ও তাদের প্রতি কল্যাণকামী হওয়ার নির্দেশ দিলেন। আর তিনি শাসকদের অত্যাচারকে সহ্য করার নির্দেশ দিলেন এবং এ ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করলেন, নিজের ক্রোধ প্রকাশ করলেন এবং বারবার তাকিদ করলেন।

বস্তুত উপরোক্ত তিনটি বিষয় এমন গুরুত্বপূর্ণ যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে বুখারী ও মুসলিমে সহীহ হাদীসে নির্দেশ করা হয়েছে যে,

«إِنَّ اللَّهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلَاثًا ... أَنْ تَعْبُدُوهُ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَأَنْ تَعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا، وَأَنْ تُنَاصِحُوا مَنْ وَلَّاهُ اللَّهُ أَمْرَكُمْ»

“আল্লাহ তোমাদের উপর তিনটি ব্যাপারে খুশী হন : (১) তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সংগে কাউকে শরীক করবে না। (২) তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জুকে মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। আর (৩) আল্লাহ যাদেরকে তোমাদের উপর শাসন ক্ষমতা দান করেন, তাদেরকে সৎ পরামর্শ দান করো।”[1]

রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোক্ত তিনটি বা তার কোনো একটি নির্দেশের প্রতি অবহেলা প্রদর্শনের কারণেই আজ মানুষের দ্বীন- দুনিয়া সকল ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকারের অশান্তি- বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।

৪। তাকলীদ বা অন্ধ অনুকরণ

জাহেলী আরবদের দ্বীন যে কয়টি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, তন্মধ্যে সেরাটি হচ্ছে ‘তাকলীদ’ তথা অন্ধ অনুকরণ। বস্তুত  এটিই হচ্ছে মানব সৃষ্টির সেই প্রাচীন যুগ থেকে এ যাবৎ সকল কাফির, মুশরিকদের লালিত বড় মূলনীতি। যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,  

﴿ وَكَذَٰلِكَ مَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ فِي قَرۡيَةٖ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتۡرَفُوهَآ إِنَّا وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا عَلَىٰٓ أُمَّةٖ وَإِنَّا عَلَىٰٓ ءَاثَٰرِهِم مُّقۡتَدُونَ ٢٣ ﴾ [الزخرف: ٢٣] 

“এমনিভাবে আপনার পূর্বে আমরা যখনই কোনো জনপদে ভয় প্রদর্শনকারী পাঠিয়েছি সেখানকার বড়লোক বা মাতব্বর শ্রেণীর লোকেরা বলেছে, আমরা আমাদের বাপ- দাদাদেরকে একটি জীবনাদর্শে পেয়েছি অতএব আমরা তাদেরই পথ-পন্থা অনুসরণ-অনুকরণ করবো।” [সূরা আয-যুখরুফ, ৪৩: আয়াত ২৩]

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ ٱتَّبِعُواْ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ قَالُواْ بَلۡ نَتَّبِعُ مَا وَجَدۡنَا عَلَيۡهِ ءَابَآءَنَآۚ أَوَلَوۡ كَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ يَدۡعُوهُمۡ إِلَىٰ عَذَابِ ٱلسَّعِيرِ ٢١ ﴾ [لقمان: ٢١] 

“আর তাদেরকে যখন বলা হয়, ‘আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তোমরা তা অনুসরণ কর।’ তারা বলে, ‘বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তারই অনুসরণ করব।’ শয়তান যদি তাদেরকে জ্বলন্ত আগুনের দিকে ডাকে, তবুও কি? (তারা পিতৃপুরুষদের অনুসরণ করবে?)[সূরা লুকমান: ২১]

কাফিরদের উপরোক্ত কথার জওয়াবে আল্লাহ তা‘আলা নিম্নোক্ত আয়াত প্রদান করলেন,

﴿ ۞قُلۡ إِنَّمَآ أَعِظُكُم بِوَٰحِدَةٍۖ أَن تَقُومُواْ لِلَّهِ مَثۡنَىٰ وَفُرَٰدَىٰ ثُمَّ تَتَفَكَّرُواْۚ مَا بِصَاحِبِكُم مِّن جِنَّةٍۚ﴾ [سبا: ٤٦] 

“বলুন, ‘আমি তোমাদেরকে কেবল একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছিঃ তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু-দুজন অথবা এক-একজন করে দাঁড়াও, তারপর তোমরা চিন্তা করে দেখ---তোমাদের সাথীর মধ্যে কোন উন্মাদনা নেই।”[সূরা সাবা: ৪৬]

আরও প্রদান করলেন,  

﴿ ٱتَّبِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَۗ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ ٣ ﴾ [الاعراف: ٣] 

“তোমাদের রবের কাছ থেকে যা কিছু পাঠানো হয়েছে, তোমরা কেবল তারই অনুসরণ করো। তাকে ছেড়ে অন্য কোন আউলিয়া বা বন্ধুদের অনুসরণ করো না। তোমরা খুব কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো।’ [সূরা আল-আ‘রাফ ৭: আয়াত ৩]

৫। অনুসারীদের আধিক্য দিয়ে সত্য নির্ধারণ:

তাদের আর একটি বড় নিয়ম ছিল এই যে, তারা অধিকাংশ মানুষ কী করছে সেটার উপর ধোঁকা খেত। তারা অধিকাংশের মতের ভিত্তিতে সত্য-সঠিক হওয়া নির্ধারণ করত[2]। পক্ষান্তরে কোনো মত অশুদ্ধ বা বাতিল হওয়ার পক্ষে এ মতের অনুসারীদের স্বল্পতা ও তা অপ্রসিদ্ধ হওয়াকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করত। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ বিষয়ে তাদের বিপরীত কথা নিয়ে আসলেন এবং কুরআনে কারীমে বহু স্থানে সেটাকে স্পষ্ট করে দিলেন।

৬। বাপ-দাদার দোহাই

সঠিক কোনো যুক্তি ছাড়াই বিগত যুগের লোকদের দোহাই দিয়ে কাজ করা জাহেলী যুগের লোকদের অন্যতম স্বভাব ছিল। যেমন আল্লাহ তাআলা (ফির‘আউনের কথা বর্ণনা করে) বলেন,

﴿فَمَا بَالُ ٱلۡقُرُونِ ٱلۡأُولَىٰ ٥١ ﴾ [طه: ٥١] 

“তাহলে আগেকার প্রজন্মগুলোর কী হবে?”[সূরা ত্বা-হা: ৫১]

কাফেররা আরও বলত,

﴿مَّا سَمِعۡنَا بِهَٰذَا فِيٓ ءَابَآئِنَا ٱلۡأَوَّلِينَ ٢٤ ﴾ [المؤمنون: ٢٤] 

“এ ব্যক্তির এসব কথা তো আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের নিকট শুনি নি।”[সূরা আল-মুমিনূন: ২৪]

৭। শক্তি ও বুদ্ধিমত্তার ধোকা

সমাজে যে সব লোক বুদ্ধিজীবী, কর্মকাণ্ডে প্রগতিবাণ কিংবা কর্তৃত্বশীল, সম্পদশালী ও প্রভাব প্রতিপ্রত্তির মালিক ছিল, জাহেলী যুগের লোকেরা তাদেরকে ভাবতো যে, এরা কখনোই ভ্রান্ত পথের পথিক হতে পারে না।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের এই ভুল ধারণা নিরসনে (আদ জাতির ধ্বংস হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে) বলেন,

﴿وَلَقَدۡ مَكَّنَّٰهُمۡ فِيمَآ إِن مَّكَّنَّٰكُمۡ فِيهِ﴾ [الاحقاف: ٢٦] 

“আমরা অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়ায় এমন প্রভাব ও প্রতিষ্ঠা প্রদান করেছিলাম, যাতে তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করিনি”[সূরা আল-আহকাফ, ৪৬ : আয়াত ২৬]

অনুরূপ আল্লাহর অন্য বাণী,

﴿وَلَمَّا جَآءَهُمۡ كِتَٰبٞ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ مُصَدِّقٞ لِّمَا مَعَهُمۡ وَكَانُواْ مِن قَبۡلُ يَسۡتَفۡتِحُونَ عَلَى ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ فَلَمَّا جَآءَهُم مَّا عَرَفُواْ كَفَرُواْ بِهِۦۚ فَلَعۡنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ ٨٩ ﴾ [البقرة: ٨٩] 

“আর যখন তাদের কাছে যা আছে আল্লাহর কাছ থেকে তার সত্যায়নকারী কিতাব আসলো; অথচ পূর্বে তারা এর সাহায্যে কাফেরদের বিরুদ্ধে বিজয় প্রার্থনা করত, তারপর তারা যা চিনত যখন তা তাদের কাছে আসল, তখন তারা সেটার সাথে কুফরী করল। কাজেই কাফেরদের উপর আল্লাহর লা‘নত।” [সূরা আল-বাকারাহ: ৮৯]

অন্য আয়াতে বলেন,

﴿يَعۡرِفُونَهُۥ كَمَا يَعۡرِفُونَ أَبۡنَآءَهُمۡۖ﴾ [البقرة: ١٤٦] 

“তারা তাকে চিনে যেমন তারা তাদের সন্তানদেরকে চিনে”[সূরা আল-বাকারাহ: ১৪৬]

৮। দুর্বল অনুসারীদের উপর বিচার করে সত্য নির্ধারণ

জাহেলী যুগের আরবরা কোনো মত ও পথের অসারতা প্রমাণের জন্য সে মত ও পথের অনুসারীদের দুর্বলতা ও দৈন্য-দশাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথা বর্ণনা করে বলেন,

﴿ ۞قَالُوٓاْ أَنُؤۡمِنُ لَكَ وَٱتَّبَعَكَ ٱلۡأَرۡذَلُونَ ١١١ ﴾ [الشعراء: ١١١] 

“তারা বলল, ‘আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব অথচ ইতরজনেরা তোমার অনুসরণ করছে?”[সূরা আশ-শু‘আরা: ১১১]

তেমনি তাদের অন্য কথা বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন,

﴿أَهَٰٓؤُلَآءِ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنۢ بَيۡنِنَآۗ ﴾ [الانعام: ٥٣] 

“আমাদের মধ্যে কি এদের প্রতিই আল্লাহ্ অনুগ্রহ করলেন”[সূরা আল-আন‘আম: ৫৩]

তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের এসব যুক্তি-প্রমাণ খণ্ডন করে বলেন,

﴿أَلَيۡسَ ٱللَّهُ بِأَعۡلَمَ بِٱلشَّٰكِرِينَ ٥٣ ﴾ [الانعام: ٥٣] 

“তবে কি আল্লাহ কারা কৃতজ্ঞ তাদের সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত নন?”[সূরা আল-আন‘আম: ৫৩]

৯। ফাসেক আলেম ও ইবাদতকারীদের অনুসরণ:

জাহেলী যুগের আরবরা তাদের ফাসেক-ফাজের খারাপ কর্মকাণ্ডের অধিকারী জ্ঞান-পাপী এবং তথাকথিত আল্লাহওয়ালাদের অনুসরণ করত, যা তাদেরকে পথভ্রষ্টতায় নিয়ে যেতো। যেমন আল্লাহ বলেন,

﴿ ۞يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلۡأَحۡبَارِ وَٱلرُّهۡبَانِ لَيَأۡكُلُونَ أَمۡوَٰلَ ٱلنَّاسِ بِٱلۡبَٰطِلِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۗ﴾ [التوبة: ٣٤] 

“হে ঈমানদারগণ! পণ্ডিত এবং সংসার-বিরাগীদের মধ্যে অনেকেই তো জনসাধারণের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায় এবং মানুষকে আল্লাহ্‌র পথ থেকে নিবৃত্ত করে।”[সূরা আত-তাওবাহ: ৩৪]

অনুরূপ আল্লাহর অন্য বাণী,

﴿لَا تَغۡلُواْ فِي دِينِكُمۡ غَيۡرَ ٱلۡحَقِّ وَلَا تَتَّبِعُوٓاْ أَهۡوَآءَ قَوۡمٖ قَدۡ ضَلُّواْ مِن قَبۡلُ وَأَضَلُّواْ كَثِيرٗا وَضَلُّواْ عَن سَوَآءِ ٱلسَّبِيلِ ٧٧ ﴾ [المائ‍دة: ٧٧] 

“বলুন, ‘হে কিতাবীরা! তোমরা তোমাদের দ্বীনে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না। আর যে সম্প্রদায় ইতোপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে ও অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না”[সূরা আল-মায়িদাহ: ৭৭]

১০। সত্যপন্থীদের মত-প্রদানে দুর্বলতা ও স্মরণ শক্তিতে দুর্বল হওয়া দিয়ে সেটাকে বাতিল করার ব্যাপারে প্রমাণ উপস্থাপন:

কাফের-মুশরিকরা সবসময় সত্যপন্থীদের মত-প্রকাশে দুর্বলতা এবং স্মরণশক্তির দুর্বলতা দেখিয়ে তাদের গ্রহণ করা মতকে বাতিল প্রমাণে সচেষ্ট হতো, যেমন তাদের কথা (যা আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন),

﴿بَادِيَ ٱلرَّأۡيِ﴾ [هود: ٢٧] 

‘কথা বলতে পটু নয়”। [সূরা হূদ, ২৭]

১১। দলীল-প্রমাণ পেশের সময় ত্রুটিপূর্ণ কিয়াসের আশ্রয় গ্রহণ

জাহেলী যুগের লোকেরা নিজেদের অন্যায় দাবীর সমর্থন অযৌক্তিক কিয়াসের আশ্রয় নিত এবং সঠিক কিয়াসকে প্রত্যাখ্যান করতো। পবিত্র কুর‘আনুল কারীমে তাদের এই বদ অভ্যাসের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنۡ أَنتُمۡ إِلَّا بَشَرٞ مِّثۡلُنَا﴾ [ابراهيم: ١٠] 

“তোমরা তো কেবল আমাদের মতই মানুষ”[সূরা ইবরাহীম: ১০]

১২। দলীল-প্রমাণ প্রদর্শিত হলে বিশুদ্ধ কিয়াস (যুক্তি)কে অস্বীকারকরণ:

কাফের-মুশরিকদের অন্যতম রীতি ছিল যে, তাদের সামনে হকের পক্ষে প্রমাণ পেশ করা হলে বিশুদ্ধ কিয়াস বা সঠিক যুক্তিকে তারা মেনে নিতে অস্বীকার করত।

বস্তুত কাফেরদের পক্ষ থেকে ত্রুটিপূর্ণ কিয়াস দিয়ে দলীল প্রদান আর মুমিনদের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ কিয়াস প্রদানের পর তা অস্বীকারকরণের মূল কারণ হচ্ছে তারা যুক্তি-তর্কের মধ্যে কোথায় মিল হলো আর কোথায় অমিল হলো সেটা বুঝতো না। 

১৩। সৎ লোকদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি

আল্লাহ বলেন-

﴿ يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ لَا تَغۡلُواْ فِي دِينِكُمۡ وَلَا تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡحَقَّۚ﴾ [النساء: ١٧١] 

‘হে আহলে কিতাবরা, তোমরা তোমাদের দ্বীনে বাড়াবাড়ি করো না, আর আল্লাহর উপর হক ব্যতীত আর কিছু বলো না’। [সূরা আন-নিসা: ১৭১]

১৪। পূর্বে যা বর্ণিত হয়েছে, তা একটি নিয়মনীতিতে বাঁধা। আর সেটি হচ্ছে, হাঁ বাচক বা না বাচক যা কিছু এসেছে, সেগুলোতে তারা নিজেদের প্রবৃত্তি ও আন্দাজ-অনুমানের অনুসরণ করত, আল্লাহ তাদের জন্য যা দিয়েছে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকত।

১৫। আল্লাহ যা তাদের দিয়েছেন তা ন মানার ব্যাপারে ‘না বুঝা’কে ওজর হিসেবে পেশ করত। যেমন আল্লাহর বাণী,

﴿قُلُوبُنَا غُلۡفُۢ﴾ [النساء: 155] 

“আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত”[সূরা আন-নিসা: ১৫৫]

আরও বলেছিল,

﴿يَٰشُعَيۡبُ مَا نَفۡقَهُ كَثِيرٗا مِّمَّا تَقُولُ﴾ [هود: ٩١] 

“হে শু‘আইব, তুমি যা বল তার অনেক কিছুই আমরা ভালো করে বুঝতে পারি না”[সূরা হূদ: ৯১]

আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ কথাকে মিথ্যা হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, এ তো কেবল এ জন্য যে, তাদের অন্তরে মোহর রয়েছে, আর মোহর পড়েছে তাদের কুফরির কারণে।

১৬। আল্লাহ তাদেরকে যা দিয়েছেন সেগুলোর বিনিময়ে তারা জাদুর কিতাবকে গ্রহণ করে নিয়েছে।[3] যেমন আল্লাহ তা‘আলা তার নিম্নোক্ত বাণীতে বর্ণনা করেছেন,

﴿نَبَذَ فَرِيقٞ مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَرَآءَ ظُهُورِهِمۡ كَأَنَّهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ١٠١ وَٱتَّبَعُواْ مَا تَتۡلُواْ ٱلشَّيَٰطِينُ عَلَىٰ مُلۡكِ سُلَيۡمَٰنَۖ﴾ [البقرة: ١٠١،  ١٠٢] 

“যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের একটি দল আল্লাহর কিতাবকে পিঠের পিছনে নিক্ষেপ করেছিল। আর তারা সুলাইমানের রাজত্বে শয়তান যা তেলাওয়াত করত তারই অনুসরণ করেছে”[সূরা আল-বাকারাহ: ১০১-১০২]

১৭। তারা তাদের বাতিল ও অসার কাজকে নবীদের দিকে সম্পর্কযুক্ত করত।[4] যেমন আল্লাহ তা‘আলা তাদের দাবী খণ্ডন করে বলেন,

﴿وَمَا كَفَرَ سُلَيۡمَٰنُ﴾ [البقرة: ١٠٢] 

“আরও সুলাইমান কুফরি করেন নি”[সূরা আল-বাকারাহ: ১০২]

আরও বলেন,

﴿ مَا كَانَ إِبۡرَٰهِيمُ يَهُودِيّٗا وَلَا نَصۡرَانِيّٗا﴾ [ال عمران: ٦٧] 

“ইবরাহীম ইয়াহূদী কিংবা নাসরানী ছিলেন না”[সূরা আলে ইমরান: ৬৭]

১৮। তারা সম্পর্ক প্রদর্শনের ক্ষেত্রে স্ববিরোধিতায় লিপ্ত হতো, তারা ইবরাহীমের অনুসারী হওয়ার দাবী করা সত্ত্বেও তাঁর আনুগত্য পরিত্যাগ করত[5]

১৯। সৎলোকদের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন লোকদের কোনো কোনো ভুলের দায়ভার তারা সৎলোকদের উপর চাপিয়ে তারা দুর্নাম করে বেড়াতো। যেমন, ইয়াহূদীরা ‘ঈসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে করে থাকে এবং ইয়াহূদী ও নাসারারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে করে থাকে।

২০। জাদুকরদের অলৌকিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদিকে তারা সৎলোকদের কারামত বলে বিশ্বাস করতো, এমনকি তারা এগুলোকে নবীদের সাথে সম্পর্কযুক্ত করত, যেমনটি তারা করেছিল সুলাইমান আলাইহিস সালামের ক্ষেত্রে।

২১। শীস ও হাততালির মাধ্যমে ইবাদত করা।

২২। নিজেদের দ্বীনকে খেল-তামাশায় রুপান্তরিত করা।

২৩। দুনিয়ার জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। ফলে তারা মনে করছে যে, আল্লাহ যেহেতু তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে অনেক দান করেছেন সেহেতু এটা প্রমাণ করছে যে তিনি তাদের উপর সন্তুষ্ট। যেমন তারা বলেছিল,

﴿نَحۡنُ أَكۡثَرُ أَمۡوَٰلٗا وَأَوۡلَٰدٗا وَمَا نَحۡنُ بِمُعَذَّبِينَ ٣٥ ﴾ [سبا: ٣٥] 

“আমরা সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অধিক, আর আমাদের তো আযাব দেওয়া হবে না”[সূরা সাবা: ৩৫]

২৪। যদি হক তথা সত্য গ্রহণে দুর্বল ও অসহায় শ্রেণির লোকেরা অগ্রগামী হতো, তখন তারা অহঙ্কার ও ঘৃণাবশত হকের গণ্ডিতে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকত। আর তাই তো আল্লাহ নাযিল করলেন,

﴿ وَلَا تَطۡرُدِ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم﴾ [الانعام: ٥٢] 

“আর যারা তাদের রবকে আহ্বান করে তুমি তাদের তাড়িয়ে দিও না”[সূরা আল-আন‘আম: ৫২]

২৫। হকের অসারতা প্রমাণ করার জন্য তারা দুর্বল ও অসহায়গণ কর্তৃক সেটা গ্রহণ করাকে দলীল-প্রমাণ হিসেবে পেশ করত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তাদের বক্তব্য বর্ণনা করে বলেন,

﴿لَوۡ كَانَ خَيۡرٗا مَّا سَبَقُونَآ إِلَيۡهِۚ﴾ [الاحقاف: ١١] 

“যদি এটা কল্যাণকর হতো তবে এরা এর প্রতি আমাদের আগে অগ্রণী হতে পারতো না”[সূরা আল-আহকাফ: ১১]

২৬। আল্লাহর কিতাবকে অনুধাবন করার পর জেনে-শুনে তাতে বিকৃতিসাধন[6]

২৭। বাতিল গ্রন্থ রচনা করে সেগুলোকে আল্লাহর দিকে সম্পর্কযুক্ত করত[7]। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্মকাণ্ড বর্ণনা করে বলেন,

﴿ فَوَيۡلٞ لِّلَّذِينَ يَكۡتُبُونَ ٱلۡكِتَٰبَ بِأَيۡدِيهِمۡ ثُمَّ يَقُولُونَ هَٰذَا مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ لِيَشۡتَرُواْ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلٗاۖ فَوَيۡلٞ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتۡ أَيۡدِيهِمۡ وَوَيۡلٞ لَّهُم مِّمَّا يَكۡسِبُونَ ٧٩ ﴾ [البقرة: ٧٩] 

“কাজেই দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে অতঃপর সামান্য মূল্য পাওয়ার জন্য বলে, ‘এটা আল্লাহর কাছ থেকে’। অতএব, তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য তাদের ধ্বংস এবং যা তারা উপার্জন করেছে তার জন্য তাদের ধ্বংস।”[সূরা আল-বাকারাহ: ৭৯]

২৮।  প্রত্যেক দলের এই দাবী করা যে, সত্য কেবল তার মাঝেই নিহিত।[8] যেমন,

﴿قَالُواْ نُؤۡمِنُ بِمَآ أُنزِلَ عَلَيۡنَا﴾ [البقرة: ٩١] 

“তারা বলত, যা আমাদের উপর নাযিল হয়েছে আমরা কেবল তারই উপর ঈমান আনব”[সূরা আল-বাকারাহ: ৯১]

২৯। এতদসত্ত্বেও তারা তাদের দলের কথা কি সেটাও জানে না[9]। যে ব্যাপারে সাবধান করে আল্লাহ বলেন,

﴿قُلۡ فَلِمَ تَقۡتُلُونَ أَنۢبِيَآءَ ٱللَّهِ مِن قَبۡلُ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٩١ ﴾ [البقرة: ٩١] 

“বলুন, তবে কেনো ইতোপূর্বে তোমরা আল্লাহর নবীগণকে হত্যা করতে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক (তবে বল)[সূরা আল-বাকারাহ: ৯১][10]

৩০। আর তা আল্লাহর এক অনন্য নিদর্শন যে, তারা যখন ঐক্যবদ্ধ থাকার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশনার বিপরীত করে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো, তখন প্রত্যেকে দলই তার কাছে যা আছে তা নিয়ে আত্মম্ভরিতায় ও খুশি হয়ে গেল।

৩১। আর এটাও এক আশ্চর্য নিদর্শন যে, তারা যে দ্বীনের দিকে নিজেদেরকে সম্পর্কযুক্ত করার দাবী করত সে দ্বীনের সাথেই কঠোর শত্রুতা আরম্ভ করে দিল। অপরদিকে তারা কাফেরদের দ্বীনকে ভালবাসতে আরম্ভ করল, যে কাফেররা তাদের ও তাদের নবীর সাথে কঠোর শত্রুতা পোষণ করত। আর তারা কাফের দলের লোকদেরকেও ভালোবাসত শুরু করলো[11]। যেমনটি করেছিল তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যখন তিনি আহলে কিতাবদের কাছে মূসা আলাইহিস সালামের দ্বীনই নিয়ে আসলেন। উপরন্তু তারা জাদুর কিতাবের অনুসরণ করল, যা ছিল ফির‘আউন বংশীয়দের দ্বীন।

৩২। যখন তাদের অপছন্দনীয় ব্যক্তির কাছে কোনো হক বা সত্য থাকে তখন তারা তা অস্বীকার করত[12]। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَقَالَتِ ٱلۡيَهُودُ لَيۡسَتِ ٱلنَّصَٰرَىٰ عَلَىٰ شَيۡءٖ وَقَالَتِ ٱلنَّصَٰرَىٰ لَيۡسَتِ ٱلۡيَهُودُ عَلَىٰ شَيۡءٖ﴾ [البقرة: ١١٣] 

“ইয়াহূদীরা বলে, নাসারারা দ্বীনে হকের কিছুর উপরই নেই, আর নাসারারা বলে, ইয়াহূদীরা দ্বীনে হকের কিছুর উপরই নেই”[সূরা আল-বাকারাহ: ১১৩]

৩৩। যেটাকে তারা তাদের দ্বীনের অংশ বলে স্বীকার করে নিয়েছে সেটাকেও তারা অস্বীকার করত। যেমন তার আল্লাহর ঘরের হজের বিষয়টি তাদের দ্বীনের অংশ হিসেবে মানার পরও সেটার ব্যাপারে ইবরাহীমের দেখানো পদ্ধতি মানতে অস্বীকার করত। আল্লাহ বলেন,

﴿ وَمَن يَرۡغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ إِلَّا مَن سَفِهَ نَفۡسَهُۥ﴾ [البقرة: ١٣٠] 

“আর নিজেকে বেকুফ বানিয়েছে সে ব্যতীত কে ইবরাহীমের দেখানো মত ও পথ থেকে বিমুখ হতে পারে?”[সূরা আল-বাকারাহ: ১৩০]

৩৪। তাদের প্রত্যেকেই নিজেদেরকে ফিরকায়ে নাজিয়া বা ‘মুক্তিপ্রাপ্ত দল’ বলে দাবী করত। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে সাব্যস্ত করলেন, তিনি বললেন,

﴿قُلۡ هَاتُواْ بُرۡهَٰنَكُمۡ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ١١١ ﴾ [البقرة: ١١١] 

“বলুন, দাও তোমাদের দলীল-প্রমাণাদি, যদি তোমরা সত্যবাদি হও”[সূরা আল-বাকারাহ: ১১১]

তারপর আল্লাহ তা‘আলা কোনটি সঠিক তা বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন,

﴿بَلَىٰۚ مَنۡ أَسۡلَمَ وَجۡهَهُۥ لِلَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ﴾ [البقرة: ١١٢] 

“বরং তারাই নাজাতপ্রাপ্ত, যারা তাদের চেহারাকে কেবল আল্লাহর জন্য নিবদ্ধ রাখে, এমতাবস্থায় যে সে ইহসানকারী তথা রাসূলের অনুসরণকারী”[সূরা আল-বাকারাহ: ১১২]

৩৫। উলঙ্গপনার মাধ্যমে ইবাদত করার। যেমন আল্লাহ বলেন,

﴿وَإِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةٗ قَالُواْ وَجَدۡنَا عَلَيۡهَآ ءَابَآءَنَا وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِهَاۗ﴾ [الاعراف: ٢٨] 

“আর যখন তারা কোনো অশ্লীল কাজ করে তখন বলে, আমরা এটার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদের পেয়েছি, আর আল্লাহ এটার নির্দেশ দিয়েছেন”[সূরা আল-আ‘রাফ: ২৮]

৩৬। হালালকে হারাম করা ইবাদত মনে করা যেমনটি তারা শির্ককে ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করেছিল।

৩৭। আল্লাহ ছাড়া পাদ্রী ও সংসারবিরাগী দরবেশদেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করাকে ইবাদত মনে করা।

৩৮। আল্লাহর গুণাগুণ অস্বীকার করা, যেমন আল্লাহর বাণীতে রয়েছে,

﴿وَلَٰكِن ظَنَنتُمۡ أَنَّ ٱللَّهَ لَا يَعۡلَمُ كَثِيرٗا مِّمَّا تَعۡمَلُونَ ٢٢ ﴾ [فصلت: ٢٢] 

“বরং তোমরা মনে করেছিলে যে, আল্লাহ তোমাদের কৃত অনেক আমলই জানেন না”[সূরা ফুসসিলাত: ২২]

৩৯। আল্লাহর নাম অস্বীকার করা। যেমন আল্লাহর বাণী,

﴿وَهُمۡ يَكۡفُرُونَ بِٱلرَّحۡمَٰنِۚ﴾ [الرعد: ٣٠] 

“আর তারা রহমানের সাথে কুফরী করে”[সূরা আর-রা‘দ: ৩০]

৪০। তা‘তীল তথা সৃষ্টিকে স্রষ্টাশূণ্য মনে করা। যেমনটি ফির‘আউন বংশীয়রা করেছিল।

৪১। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলার দিকে দোষ-ত্রুটি, কলঙ্ক, খুঁতজনিত বিষয়াদির সম্পর্কিত করা। যেমন তাঁর জন্য সন্তান, তাকে কোনো কিছুর প্রতি মুখাপেক্ষী, ক্লান্তি ইত্যাদি বিষয়াদি সাব্যস্ত করা। অথচ তারা তাদের ওলী-দরবেশদেরকে এগুলোর সামান্য কিছু থেকেও পবিত্র মনে করে।

৪২। আল্লাহর সার্বভৌমত্বে শির্ক করা। যেমন মাজুস বা অগ্নিউপাসকরা করত।

৪৩। তাকদীর (তথা আল্লাহ কর্তৃক সবকিছু পূর্বনির্ধারণ) অস্বীকার করা।

৪৪। তাকদীর দ্বারা আল্লাহর বিরুদ্ধে প্রমাণ উপস্থাপন করা।

৪৫। আল্লাহর শরীয়তকে তাঁর তাকদীরের মুখোমুখি দাঁড় করানো।

৪৬। কালকে গালি দেওয়া। যেমন তাদের কথা,

﴿وَمَا يُهۡلِكُنَآ إِلَّا ٱلدَّهۡرُۚ﴾ [الجاثية: ٢٤] 

“আমাদেরকে তো কেবল কালই ধ্বংস করে।”[সূরা আল-জাসিয়াহ: ২৪]

৪৭। আল্লাহর নেয়ামতকে অন্যের দিকে সম্পর্কযুক্ত করা। যেমন আল্লাহর বাণী,

﴿ يَعۡرِفُونَ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ ثُمَّ يُنكِرُونَهَا﴾ [النحل: ٨٣] 

“তারা আল্লাহর নেয়ামতকে চিনতে পারে, তারপর তারা সেটাকে না চেনার ভান করে”[সূরা আন-নাহল: ৮৩]

৪৮। আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী।

৪৯। আল্লাহর কোনো আয়াতকে অস্বীকার।

৫০। তাদের একথা বলা যে,

﴿مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَىٰ بَشَرٖ مِّن شَيۡءٖ﴾ [الانعام: ٩١] 

“আল্লাহ মানুষের উপর কোনো কিছুই নাযিল করেন নি”[সূরা আল-আন‘আম: ৯১]

৫১। কুরআনের ব্যাপারে তাদের মন্তব্য,

﴿ إِنۡ هَٰذَآ إِلَّا قَوۡلُ ٱلۡبَشَرِ ٢٥ ﴾ [المدثر: ٢٥] 

“এতো মানুষের কথা ব্যতীত কিছু নয়”[সূরা আল-মুদ্দাসসির: ২৫]

৫২। আল্লাহর হিকমত বা প্রজ্ঞায় কলঙ্কজনক কথা বলা।

৫৩। রাসূলগণ সাল্লাল্লাহু আলাইহিম ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন সেটার প্রতিরোধকল্পে প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য বাহানা তালাশে ব্যাপৃত থাকা। যেমন আল্লাহর বাণী,

﴿ وَمَكَرُواْ وَمَكَرَ ٱللَّهُ﴾ [ال عمران: ٥٤] 

“আর তারা ষড়যন্ত্র করেছিল আমিও কৌশল অবলম্বন করেছিলাম”[সূরা আলে ইমরান: ৫৪] অনুরূপ আল্লাহর অন্য বাণী,

﴿ وَقَالَت طَّآئِفَةٞ مِّنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ ءَامِنُواْ بِٱلَّذِيٓ أُنزِلَ عَلَى ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَجۡهَ ٱلنَّهَارِ وَٱكۡفُرُوٓاْ ءَاخِرَهُۥ﴾ [ال عمران: ٧٢] 

“আর কিতাবীদের একদল বলল, ‘যারা ঈমান এনেছে তাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তোমরা দিনের শুরুতে তাতে ঈমান আন এবং দিনের শেষে কুফরী কর”[সূরা আলে ইমরান: ৭২]

৫৪। তাদের অন্যতম নীতি ছিল যে, তারা কখনও কখনও হক মেনে নিত তবে সেটা ছিল হককে প্রতিরোধ করার পন্থা হিসেবে। যেমনটি পূর্বোক্ত আয়াতে বিবৃত হয়েছে।

৫৫। নিজের মতের জন্য গোঁড়ামী করা। যেমন উপরোক্ত আয়াতে তারা বলেছিল,

﴿وَلَا تُؤۡمِنُوٓاْ إِلَّا لِمَن تَبِعَ دِينَكُمۡ﴾ [ال عمران: ٧٣] 

“আর তোমরা কেবল তাদের উপরই বিশ্বাস স্থাপন করবে, যারা তোমাদের দ্বীনের অনুসরণ করবে”[সূরা আলে ইমরান: ৭৩]

৫৬। জাহেলী যুগের আহলে কিতাবদের একটি খারাপ নীতি এই ছিল যে, তারা ইসলামের অনুসরণ করাকে শির্ক নামে অভিহিত করত। (যাতে করে মানুষদেরকে তা থেকে ঘৃণার মাধ্যমে দূরে রাখতে পারে) যেমন আল্লাহর বাণী,

﴿مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤۡتِيَهُ ٱللَّهُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحُكۡمَ وَٱلنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُواْ عِبَادٗا لِّي مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَٰكِن كُونُواْ رَبَّٰنِيِّ‍ۧنَ بِمَا كُنتُمۡ تُعَلِّمُونَ ٱلۡكِتَٰبَ وَبِمَا كُنتُمۡ تَدۡرُسُونَ ٧٩ وَلَا يَأۡمُرَكُمۡ أَن تَتَّخِذُواْ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةَ وَٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ أَرۡبَابًاۗ أَيَأۡمُرُكُم بِٱلۡكُفۡرِ بَعۡدَ إِذۡ أَنتُم مُّسۡلِمُونَ ٨٠ ﴾ [ال عمران: ٧٩،  ٨٠] 

“কোনো ব্যক্তির জন্য সঙ্গত নয় যে, আল্লাহ্ তাকে কিতাব, হেকমত ও নবুওয়াত দান করার পর তিনি মানুষকে বলবেন, ‘আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা আমার দাস হয়ে যাও’, বরং তিনি বলবেন, ‘তোমরা রববানী হয়ে যাও, যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দাও এবং যেহেতু তোমরা অধ্যয়ন কর।’ অনুরূপভাবে ফেরেশ্তাগণ ও নবীগণকে রবরূপে গ্রহণ করতে তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দেন না। তোমাদের মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দেবেন?”[সূরা আলে ইমরান, ৭৯, ৮০]

কারণ, এ আয়াতদ্বয়ের শানে নুযুল বা অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসেবে এসেছে যে, আহলে কিতাবরা বলতে আরম্ভ করল যে, মুহাম্মাদ তার নিজের ইবাদতের দিকে আমাদের আহ্বান করছে।[13]  

৫৭। আল্লাহর বাণীর বাক্যসমূহকে তার (শব্দ, অবস্থান কিংবা অর্থগত) স্থানচ্যুত করে বিকৃত করা।

৫৮। কিতাবের আয়াতসমূহকে মুখ বাঁকিয়ে পড়া।

৫৯। হক ও হেদায়াতপন্থীদেরকে ধর্মত্যাগী কিংবা নির্বোধ ইত্যাদি উপাধি প্রদান।

৬০। আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করা।

৬১। হকের উপর মিথ্যারোপ করা।

৬২। যখন তারা দলীল-প্রমাণাদির মাধ্যমে তাদের মত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম না হত তখন তারা ক্ষমতাসীনদের কাছে নালিশ করে শাস্তির ব্যবস্থা করত। যেমনটি তারা বলেছিল ফের‘আউনকে,

﴿ وَقَالَ ٱلۡمَلَأُ مِن قَوۡمِ فِرۡعَوۡنَ أَتَذَرُ مُوسَىٰ وَقَوۡمَهُۥ لِيُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ﴾ [الاعراف: ١٢٧] 

“আর ফির‘আউন সম্প্রদায়ের নেতারা বলল, ‘আপনি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে দেবেন?”[সূরা আল-আ‘রাফ: ১২৭]

৬৩। হকপন্থীদেরকে যমীনে ফিতনাসৃষ্টিকারী হিসেবে অভিহিতকরণ। যেমনটি পূর্বোক্ত আয়াতে তারা করেছিল।

৬৪। হকপন্থীদেরকে তারা বাদশা তথা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবমাননা, রাষ্ট্রের রীতি-নীতির অবমাননাকারী হিসেবে অভিহিত করা। যেমন তারা বলেছিল,

﴿وَيَذَرَكَ وَءَالِهَتَكَ﴾ [الاعراف: ١٢٧] 

“আর তারা তোমাকে এবং তোমার ইলাহকে পরিত্যাগ করে চলেছে”[সূরা আল-আ‘রাফ: ১২৭]

অন্য আয়াতে আল্লাহ আরও বলেন,

﴿إِنِّيٓ أَخَافُ أَن يُبَدِّلَ دِينَكُمۡ﴾ [غافر: ٢٦] 

“নিশ্চয় আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীন পরিবর্তন করে দেবে”[সূরা গাফির: ২৬]

৬৫। তারা হকপন্থীদের এ বলে অপবাদ দিত যে, এরা ক্ষমতাশীনদের মা‘বুদদের অসম্মান করে। যেমন উপরোক্ত আয়াতে তারা ফের‘আউনকে বলেছিল।

৬৬। তারা হকপন্থীদের এ বলে অপবাদ দিত যে, এরা দ্বীন পরিবর্তন করতে চায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ফের‘আউনের কথা বর্ণনা করে বলেন,

﴿إِنِّيٓ أَخَافُ أَن يُبَدِّلَ دِينَكُمۡ أَوۡ أَن يُظۡهِرَ فِي ٱلۡأَرۡضِ ٱلۡفَسَادَ ٢٦ ﴾ [غافر: ٢٦] 

“নিশ্চয় আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীন পরিবর্তন করে দেবে অথবা সে যমীনে বিপর্যয় ছড়িয়ে দেবে।” [সূরা গাফির: ২৬]

৬৭। তারা হকপন্থীদের এ বলে দোষারোপ করত যে, এরা বাদশা বা ক্ষমতাসীনদের অসম্মান করছে, তাদের মানহানি করছে। যেমন তারা বলেছিল,

﴿وَيَذَرَكَ وَءَالِهَتَكَ﴾ [الاعراف: ١٢٧] 

“আর তারা তোমাকে এবং তোমার ইলাহকে পরিত্যাগ করে চলেছে”[সূরা আল-আ‘রাফ: ১২৭]

৬৮। তাদের দাবী ছিল যে, তারা তাদের কাছে যে হক আছে সেটার উপর আমল করছে, অথচ তারা সেটাকে ত্যাগ করে চলেছে। যেমন তারা বলত,

﴿نُؤۡمِنُ بِمَآ أُنزِلَ عَلَيۡنَا﴾ [البقرة: ٩١] 

“আমরা কেবল তাতেই ঈমান আনব যা আমাদের উপর নাযিল হয়েছে”[সূরা আল-বাকারাহ: ৯১]

৬৯। ইবাদতের ক্ষেত্রে বর্ধিতকরণ, যেমন তারা করেছিল আশুরার দিনে (ঈদ পালনের মাধ্যমে)

৭০। ইবাদতের ক্ষেত্রে সংকোচন। যেমন তারা আরাফাতের ময়দানে ওকুফ তথা অবস্থান করা ছেড়ে দিয়েছিল।

৭১। পরহেযগারী বা সাবধানতার নামে ওয়াজিব পরিত্যাগ করা। (যেমন যে কাপড় দিয়ে অন্যায় করেছে তা দিয়ে তাওয়াফ না করার পরহেযগারীর মাধ্যমে উলঙ্গ তাওয়াফ করা। অথচ গোপনাঙ্গ ঢাকার মত ওয়াজিব পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে)

৭২। পবিত্র রিযক পরিত্যাগ করাকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা। (তারা কোনো কোনো পবিত্র হালাল বস্তুর পরিত্যাগকে ইবাদত মনে করত।)

৭৩। আল্লাহর হালাল করা সৌন্দর্য পরিত্যাগ করাকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা।

৭৪। না জেনে মানুষদেরকে পথভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান জানানো।

৭৫। জেনে-শুনে মানুষদেরকে কুফরির দিকে আহ্বান জানানো।

৭৬। বড় ধরণের ষড়যন্ত্র করা। যেমনটি করেছিল নূহের জাতি।

৭৭। তাদের নেতারা হয় জ্ঞান-পাপী নতুবা অজ্ঞ-তাপস। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَقَدۡ كَانَ فَرِيقٞ مِّنۡهُمۡ يَسۡمَعُونَ كَلَٰمَ ٱللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُۥ مِنۢ بَعۡدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ٧٥ وَإِذَا لَقُواْ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قَالُوٓاْ ءَامَنَّا وَإِذَا خَلَا بَعۡضُهُمۡ إِلَىٰ بَعۡضٖ قَالُوٓاْ أَتُحَدِّثُونَهُم بِمَا فَتَحَ ٱللَّهُ عَلَيۡكُمۡ لِيُحَآجُّوكُم بِهِۦ عِندَ رَبِّكُمۡۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ٧٦ أَوَ لَا يَعۡلَمُونَ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعۡلِنُونَ ٧٧ وَمِنۡهُمۡ أُمِّيُّونَ لَا يَعۡلَمُونَ ٱلۡكِتَٰبَ إِلَّآ أَمَانِيَّ﴾ [البقرة: ٧٥،  ٧٨] 

“তোমরা কি এ আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? অথচ তাদের একদল আল্লাহর বাণী শ্রবণ করে, তারপর তারা তা অনুধাবন করার পর বিকৃত করে, অথচ তারা জানে। আর তারা যখন মুমিনদের সাথে সাক্ষাত করে তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’। আবার যখন তারা গোপনে একে অন্যের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, তোমরা কি তাদেরকে তা বলে দাও, যা আল্লাহ্ তোমাদের কাছে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন; যাতে তারা এর মাধ্যমে তোমাদের রব-এর নিকট তোমাদের বিরুদ্ধে দলীল পেশ করবে ? তবে তোমরা কি বুঝ না?’ তারা কি জানে না যে, তারা যা গোপন রাখে এবং যা ব্যক্ত করে, নিশ্চয় আল্লাহ্ তা জানেন? আর তাদের মধ্যে এমন কিছু নিরক্ষর লোক আছে যারা মিথ্যা আশা ছাড়া কিতাব সম্পর্কে কিছুই জানে না, তারা শুধু অমূলক ধারণা পোষণ করে।”[সূরা আল-বাকারাহ: ৭৫-৭৮]

৭৮। এ দাবী করা যে তারাই আল্লাহর ওলী অন্যরা নয়।

৭৯। আল্লাহর শরী‘আত পরিত্যাগ করার পরও আল্লাহর মহব্বতের দাবী করা। আর তখনই আল্লাহ তাদেরকে এ বিষয়টি প্রমাণের আহ্বান জানালেন,

﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ال عمران: ٣١] 

“বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আলে ইমরান: ৩১]

৮০। মিথ্যা দুরাশার মধ্যে লিপ্ত থাকা। যেমন তারা বলত,  

﴿لَن تَمَسَّنَا ٱلنَّارُ إِلَّآ أَيَّامٗا مَّعۡدُودَةٗۚ﴾ [البقرة: ٨٠] 

“সামান্য হাতে গোনা কিছু দিন ব্যতীত আমাদেরকে কখনও আগুন স্পর্শ করবে না”[সূরা আল-বাকারাহ: ৮০] ও অন্য আয়াতে এসেছে, তারা বলত,

﴿لَن يَدۡخُلَ ٱلۡجَنَّةَ إِلَّا مَن كَانَ هُودًا أَوۡ نَصَٰرَىٰ﴾ [البقرة: ١١١] 

“আর তারা বলে ইয়াহূদী ও নাসারা ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না”[14]

৮১। তাদের নবী ও সৎলোকদের কবরকে মাসজিদ তথা সাজদার স্থান হিসেবে গ্রহণ করা।

৮২। তাদের নবীদের বিবিধ চিহ্ন ও স্মৃতিবিজড়িত স্থানকে মাসজিদে রূপান্তর করা, যেমনটি উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে।

৮৩। কবরের উপর চেরাগ (মোমবাতি) জালানো।

৮৪। কবরকে ঈদ তথা সম্মেলনস্থল ও জমায়েত স্থান হিসেবে গ্রহণ।

৮৫। কবরের কাছে যবেহ করা।

৮৬। মহান ব্যক্তিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানকে বরকতময় মনে করা, যেমন ‘দারুন নাদওয়া’[15], আর যার হাতে সেটা থাকবে তা নিয়ে অহঙ্কার করা, যেমন হাকীম ইবন হিযামকে বলা হয়েছিল যে, তুমি তো মক্কার সম্মান বিক্রয় করে দিয়েছ, তখন তিনি জবাবে বলেছিলেন, “যত তথাকথিত সম্মান ছিল তা তিরোহিত হয়েছে, কেবল তাকওয়ার মাধ্যমেই সম্মান নির্ধারিত হবে”

৮৭। বংশ নিয়ে গর্ব-অহঙ্কার করা।

৮৮। মানুষের নসব বা পিতৃ-পুরুষ নিয়ে কাউকে অপমান করা বা অপবাদ দেওয়া।

৮৯। তারকারাজির মাধ্যমে বৃষ্টি হওয়া নির্ধারণ করা। অথবা তারকারাজির কারণে বৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্বাস করা।

৯০। মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদা।

৯১। সীমালঙ্গন ছিল তাদের সবচেয়ে বড় খারাপ অভ্যাস। তাই আল্লাহ তা‘আলা এ সীমালঙ্গনের ব্যাপারে যা বলার তা বলেছেন।

৯২। গর্ব-অহঙ্কার করা তাদের সবচেয়ে বড় ফযিলতের বিষয় বলে বিবেচিত হতো, যদিও সেটা যথার্থতার কারণেই ছিল। তখন আল্লাহ তাদেরকে তা থেকে নিষেধ করেন।

৯৩। একজন মানুষ তার দল, হক কিংবা বাতিল যে পথেই থাকুক না কেন, সে দলের পক্ষে গোড়ামী করবে এটাই ছিল তাদের অলঙ্ঘনীয় নীতি। তাই আল্লাহ তাদের এ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যা বলার তা বললেন।

৯৪। তাদের নিয়ম ছিল যে একের অপরাধে অন্যকে আক্রমন করা, তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন,

﴿وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰۚ﴾ [الانعام: ١٦٤] 

“আর কোনে বোঝাবহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না”[সূরা আল-আন‘আম, ১৬৪; আল-ইসরা: ১৫; ফাতির, ১৮; আয-যুমার, ৭; আন-নাজম: ৩৮]

৯৫। কোনো লোককে অন্যের দোষে অপমান করা। আর তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি কি তাকে তার মায়ের কারণে দোষ-নিন্দা করলে? তুমি তো এমন লোক যার মধ্যে জাহিলিয়াত রয়েছে।”[16]

৯৬। বাইতুল্লাহর তথা মসজিদের মুতাওয়াল্লী হওয়া নিয়ে অহঙ্কার করা। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিন্দা করে বললেন,

﴿ مُسۡتَكۡبِرِينَ بِهِۦ سَٰمِرٗا تَهۡجُرُونَ ٦٧ ﴾ [المؤمنون: ٦٧] 

“”। [সূরা আল-মুমিনূন, ৬৭। ]

৯৭। নবী বংশের লোক বলে গর্ব করা। তখন আল্লাহ তাদের সে গর্বের বিরুদ্ধে আয়াত পাঠিয়ে জানালেন যে,

﴿تِلۡكَ أُمَّةٞ قَدۡ خَلَتۡۖ لَهَا مَا كَسَبَتۡ ﴾ [البقرة: ١٣٤] 

“এ হচ্ছে এক গোষ্ঠী, যারা চলে গেছে, তাদের জন্য তা-ই থাকবে যা তারা অর্জন করেছে”[সূরা আল-বাকারাহ: ১৩৪, ১৪১]

৯৮। নিজেদের শিল্প ও কর্মকাণ্ড নিয়ে গর্ব করা। যেমনটি করেছিল দুই সফরের অধিবাসী (বনিক) কুরাইশরা সাধারণ ক্ষেত-খামারে লিপ্ত লোকদের উপর।

৯৯। দুনিয়া (দুনিয়াতে যারা ধনী ও ঐশ্বর্যপূর্ণ তারাই) তাদের নিকট সবচেয়ে বড় হিসেবে বিবেচিত হতো। যেমন তারা বলেছিল,

﴿ وَقَالُواْ لَوۡلَا نُزِّلَ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانُ عَلَىٰ رَجُلٖ مِّنَ ٱلۡقَرۡيَتَيۡنِ عَظِيمٍ ٣١ ﴾ [الزخرف: ٣١] 

“আর তারা বলে, এ কুরআন কেন নাযিল করা হল না দুই জনপদের কোনো মহান ব্যক্তির উপর?”[সূরা আয-যুখরুফ: ৩১]

১০০। আল্লাহর উপর নিজেদের মতামত চাপিয়ে দেওয়ার মত ধৃষ্টতা। যেমনটি তারা উপরোক্ত আয়াতে করেছিল[17]

১০১। ফকীর-দরিদ্রদের নিয়ে উপহাস করা। তখন আল্লাহ তাদের কর্মকাণ্ডের উত্তরে নবীকে বললেন,

﴿ وَلَا تَطۡرُدِ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ﴾ [الانعام: ٥٢] 

“আর যারা সকাল-সন্ধায় তাদের রবকে ডাকে আপনি তাদেরকে তাড়িয়ে দিবেন না”[সূরা আল-আন‘আম: ৫২]

১০২। নবীর অনুসারীদেরকে ইখলাসশূণ্যতা, নিষ্ঠাহীনতা এবং দুনিয়াদার বলে অপবাদ দেওয়া। আর তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্মকাণ্ডের জবাবে বললেন,

﴿مَا عَلَيۡكَ مِنۡ حِسَابِهِم مِّن شَيۡءٖ﴾ [الانعام: ٥٢] 

“তাদের হিসাব-নিকাশের ভার আপনার নয়”[সূরা আল-আন‘আম: ৫২] অনুরূপ আরও আয়াতে তার জবাব রয়েছে।

১০৩। ফিরিশতাদের ব্যাপারটিতে কুফরি বা তাদের বিভিন্ন বিষয়ে ঈমান আনতে অস্বীকার করা।

১০৪। রাসূলদের বিষয়ে কুফরি করা বা তাদেরকে সত্য বলে মানতে অস্বীকার করা।

১০৫। আল্লাহর কিতাবসমূহের সাথে কুফরি করা তথা সেগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা ও সেগুলোর দেওয়া সংবাদ, বিধান ও নির্দেশনা সত্যতা মানতে অস্বীকার করা।

১০৬। আল্লাহর পক্ষ থেকে যা এসেছে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।

১০৭। শেষ দিবসের উপর কুফরি করা, তথা শেষ দিবস ও তাতে যা যা হবে বলে ঈমান আনতে হয়, তা অস্বীকার করা।

১০৮। আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের বিষয়টিতে মিথ্যারোপ করা।

১০৯। রাসূলগণ শেষ দিবস কিয়ামতে যা যা সংঘটিত হবে বলে সংবাদ দিয়েছেন তার কিছু অংশে মিথ্যারোপ করা। যেমন আল্লাহর বাণীতে এসেছে,

﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِ‍َٔايَٰتِ رَبِّهِمۡ وَلِقَآئِهِۦ﴾ [الكهف: ١٠٥] 

“তারাই তো কুফরি করেছে আল্লাহর আয়াতসমূহে এবং তাঁর সাক্ষাতের সাথে”[সূরা আল-কাহাফ: ১০৫] আবার তারা মিথ্যারোপও করত, সেজন্য আল্লাহ সেগুলোর জবাবে বলেছেন,

﴿ مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤ ﴾ [الفاتحة: ٤] 

“বিচার দিনের মালিক”[সূরা আল-ফাতেহা: ৪] অনুরূপ,

﴿لَّا بَيۡعٞ فِيهِ وَلَا خُلَّةٞ وَلَا شَفَٰعَةٞۗ ﴾ [البقرة: ٢٥٤] 

“যেদিন থাকবে না কোনো বেচা-কেনা, কোনো বন্ধুত্ব, কোনো সুপারিশ”[সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৪] তদ্রূপ,

﴿إِلَّا مَن شَهِدَ بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ٨٦ ﴾ [الزخرف: ٨٦] 

“তবে যে হকের সাক্ষ্য দেবে এমতাবস্থায় যে তারা তা জানে (সেই কেবল সুপারিশের মালিক হবে)[সূরা আয-যুখরুফ: ৮৬]

১১০। মানুষদের মধ্যে যারা ইনসাফপূর্ণ কথা ও কাজের আদেশ দেয় তাদের হত্যা করা।

১১১। মূর্তি, জাদুকর ও তাগুত তথা আল্লাহবিরোধী শক্তির উপর বিশ্বাস রাখা[18]

১১২। মুশরিকদের ধর্মকে মুসলিমদের দ্বীনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা।

১১৩। হককে বাতিলের সাথে সংমিশ্রণকারী[19]। 

১১৪। হক জানার পরও তা গোপন করা।

১১৫। পথভ্রষ্টতার সবচেয়ে ভিত্তি, আর তা হচ্ছে, না জেনে আল্লাহর উপর কথা বলা।

১১৬। হককে অস্বীকার তথা মিথ্যারোপ করার কারণে তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রকাশ্য স্ববিরোধিতায় লিপ্ত থাকা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ بَلۡ كَذَّبُواْ بِٱلۡحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمۡ فَهُمۡ فِيٓ أَمۡرٖ مَّرِيجٍ ٥ ﴾ [ق: ٥] 

“বরং তাদের কাছে সত্য আসার পর তারা তাতে মিথ্যারোপ করেছে, ফলে তারা প্রচণ্ড সন্দেহপূর্ণ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে”[সূরা ক্বাফ:৫]

১১৭। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিধি-বিধানের কিছুর উপর ঈমান আনা, অপর কিছুর উপর না আনা।

১১৮। রাসূলগণের উপর ঈমানের ক্ষেত্রে তারতম্য করা।

১১৯। যে বিষয়ে জ্ঞান নেই সে বিষয়ে বিবাদ-বিসম্বাদে লিপ্ত থাকা।

১২০। স্পষ্টভাবে পূর্বসূরীদের বিরোধিতা সত্বেও তাদের অনুসরণের দাবী করা।

১২১। যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বাধা দেওয়া।

১২২। কুফরি ও কাফেরদের সাথে সখ্যতা।

১২৩, ১২৪, ১২৫, ১২৬, ১২৭। পাখি তাড়িয়ে ধারণা প্রসূত ভালো-মন্দ নির্ধারণ করা, আঁকাজোকা করে ভালো-মন্দ নির্ধারণ করা, কোনো পাখি দেখে কুলক্ষণ নেওয়া, গণকবাজি করা এবং তাগুতের কাছে বিচার-ফয়সালা করা।

১২৮। অনুরূপভাবে দু’ ঈদের মাঝখানের সময়ে বিয়ে-শাদি হওয়া অপছন্দ করা।

আল্লাহই ভালো জানেন।

আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ, তার পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবী-সঙ্গী-সাথীদের উপর সালাত ও সালাম পেশ করুন।

----------------------



[1] মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৮৭০৩। যদিও গ্রন্থকার হাদীসটিকে বুখারী ও মুসলিমের দিকে সম্পর্কযুক্ত করেছেন। বস্তুত: বুখারী ও মুসলিমে এ অর্থে অনেক হাদীস থাকলেও এ শব্দে হাদীস আসে নি। [অনুবাদক ও সম্পাদক]

[2] যেমন সূরা সাবা এর ৩৫ নং আয়াত, অনুরূপ সূরা আল-কামার, ৩৪; সূরা আশ-শু‘আরা: ৫৪; সূরা আল-আন‘আম: ১১৬, সূরা ইউসুফ: ১০৩; সূরা আশ-শু‘আরা: ৮, ৬৭, ১০৩, ১২১, ১৩৯, ১৫৮, ১৭৪, ১৯০। সূরা সাবা, ১৩। [অনুবাদক ও সম্পাদক]

[3] উল্লেখ্য যে এ অভ্যাসটি জাহেলী যুগের আহলে কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত।

[4] উল্লেখ্য যে এ অভ্যাসটি জাহেলী যুগের আহলে কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত।

[5] উল্লেখ্য যে এ অভ্যাসটি জাহেলী যুগের সাধারণ কাফের ও আহলে কিতাব উভয় দলের সাথেই সম্পৃক্ত।

[6] উল্লেখ্য যে এ অভ্যাসটি জাহেলী যুগের আহলে কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত।

[7] উল্লেখ্য যে এ অভ্যাসটি জাহেলী যুগের আহলে কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত।

[8] উল্লেখ্য যে এ অভ্যাসটি জাহেলী যুগের আহলে কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত।

[9] উল্লেখ্য যে এ অভ্যাসটি জাহেলী যুগের আহলে কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত।

[10] উল্লেখ্য যে এ অভ্যাসটি জাহেলী যুগের আহলে কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত।

[11] উল্লেখ্য যে এ অভ্যাসটি জাহেলী যুগের আহলে কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত।

[12] উল্লেখ্য যে এ অভ্যাসটি জাহেলী যুগের আহলে কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত।

[13] ইবন ইসহাক, দেখুন, মুখতাসারু সীরাতিন নবুবিয়্যাহ, ইবন হিশাম, ১/৫৫৪; ইবন জারীর তাবারী, আত-তাফসীর, ৩/৩২৫; ইবন আবী হাতেম, তাফসীর, ২/৩৬৯, ৩৭০; বায়হাকী, দালায়েলুন নাবুওয়াহ, ৫/৩৮৪।

[14] আল্লাহ তাদের কথার জবাবে বলেছেন, ﴿تِلۡكَ أَمَانِيُّهُمۡۗ[البقرة: ١١١]   অর্থাৎ এগুলো তাদের অন্যায় প্রত্যাশা।

[15] যেমন বর্তমান কালের ক্লাব, হোটেল লন, স্মৃতিসংসদ ইত্যাদি।

[16] বুখারী, ৩০; মুসলিম, ১৬৬১।

[17] উপরোক্ত আয়াতে তারা নবুওয়তের জন্য দুনিয়ার ধনীদের কেন গ্রহণ করা হলো না, সেটা যেন আল্লাহর উপর চাপিয়ে দিতে চায়।

[18] অর্থাৎ যে কাজগুলো আল্লাহর বলে একান্ত বলে স্বীকৃত, যেগুলো বান্দার নয়, সেগুলো দ্বারা বান্দার সীমালঙ্ঘন করে সেগুলো তাদের জন্য সাব্যস্ত করা। যেমন, শয়তান, গায়েবী ইলমের দাবীদার, আল্লাহ ব্যতীত অন্য বিধান প্রদানকারী, নিজের ইবাদতের দিকে আহ্বানকারী কোনো সৃষ্টজীব, এমন প্রত্যেক জীব, তাকে কেউ ইবাদত করতে দেখলে তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশকারী। 

[19] যেমন বর্তমানে সকল ধর্মকে একই মুখী বলে ধারণা পোষণকারী। যারা ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মকে একই নিক্তিতে পরিমাপ করে থাকে।