দু‘আর ফযীলত, আদব ও দু‘আর মুস্তাহাব সময়
فضل الدعاء وآدابه والأوقات التي يستحب فيها الدعاء
সকল প্রসংশা আল্লাহর জন্য আর সালাত ও সালাম তাঁর রাসূলের ওপর। অতঃপর:
বান্দা যেসব উপায় দ্বারা তার রবের নৈকট্য হাসিল করে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় উপায় দু‘আ। এটি বান্দার স্বীয় রবের সামনে বিনয়ী হওয়া, নিজের দূর্বলতা ও মুখাপেক্ষীতা স্বীকার করা ও স্বীয় মনিবের সামনে নিজের চরম বিনয়াবনতা প্রকাশ করার দলিল। আর তার রবের সাহায্য ও নির্দেশনা ছাড়া তার কোনো শক্তি ও অবলম্বন নেই। এ কারণে যে দু‘আ ত্যাগ করে মহান আল্লাহ তাকে স্বীয় বাণীতে অহংকারী বলে বিশেষিত করেছেন:
“আর তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দিবো। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”
[গাফির (মু‘মিন) : ৬০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন যে, দু‘আ-ই হলো ইবাদত। এটি মু‘মিনের হাতিয়ার যার দ্বারা সে সকল বিপদে ও কাঠিন্যে এবং যে উপায়ে বান্দা ও তার পরিবারের অবস্থা দুনিয়া ও আখিরাতে উন্নত হয় তাতে সাহায্য তলব করে।
এ হচ্ছে একগুচ্ছ কুরআনী ও নবুওয়াতী সহীহ দু‘আ এবং (আল্লাহর কাছে) আশ্রয় চাওয়া ও বরকতপূর্ণ কতক নববী যিকিরের সমাহার। মুসলিমের প্রতি মুহুর্তে এসব দু‘আর খুব প্রয়োজন হয়, তাই এই কয়েক পৃষ্ঠায় আমি তা আহরণ করেছি। আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করি যে, তিনি এর দ্বারা তার সংকলক ও পাঠককে উপকৃত করুন।
আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদের ওপর, তার পরিবার ও তার সকল সাহাবীর ওপর সালাত, সালাম ও বরকত নাযিল করুন।
প্রথমত: দু‘আর ফযীলত:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।”
[গাফির (মু‘মিন) : ৬০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
(তোমাদের উপাস্যরা উত্তম) নাকি তিনি যিনি নিরুপায়কে সাড়া দেন যখন সে তাকে ডাকে এবং বিপদ দূরীভূত করেন আর তোমাদেরকে জমিনের প্রতিনিধি বানান। আল্লাহর সাথে কোনো ইলাহ আছে কি? তোমরা উপদেশ অতি সামান্যই গ্রহণ করে থাকো।”
[আন-নামাল : ৬২]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“নিশ্চয় দু‘আই ইবাদত।”
তারপর তিনি তিলাওয়াত করেন,
“আর তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দিবো।”
[গাফির (মু‘মিন) : ৬০]
[সহীহ]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
“আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আর চেয়ে অধিক সম্মানীত কোনো বস্তু নেই।”
[হাসান]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
“নিশ্চয় তোমাদের রব চিরঞ্জীব, অতি দানশীল। তাঁর নিকট তাঁর কোনো বান্দা স্বীয় দু‘হাত উঠালে তিনি তা খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।”
[সহীহ]
দ্বিতীয়ত: দু‘আর আদব ও কবুলের উপায়সমূহ:
১- আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ থাকা আর তিনি ব্যতীত কারো প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা।
২- আল্লাহর প্রসংশা ও তাঁর গুণগান দ্বারা দু‘আ শুরু করা। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাত (দুরূদ) পাঠ করা এবং এভাবেই শেষ করা।
৩- নিশ্চিতভাবে চাওয়া ও দু‘আতে মনোযোগী থাকা আর কবুল হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা।
৪- দু‘আতে বার বার চাওয়া এবং তাড়াহুড়া না করা। কারণ, হাদীসে এসেছে,
“আমার বান্দার আমার সম্পর্কে ধারণা মোতাবিক আমি। সুতরাং সে তার ইচ্ছানুযায়ী আমার সম্পর্কে ধারণা করুক।”
[সহীহ]
৫- নিজের খাদ্য, পানীয় ও পোশাকের ক্ষেত্রে হালালকে নির্বাচন করা।
৬- পরিবার, সন্তান, সম্পদ ও নফসের উপর বদ-দু‘আ না করা।
৭- দু‘আর ক্ষেত্রে আওয়াজকে নিঃশব্দ ও স্বশব্দের মাঝামাঝি নিচু করা।
৮- গুনাহ স্বীকার করা ও তার থেকে ক্ষমা প্রার্থণা করা আর নি‘আমাত স্বীকার করা ও তার শুকরিয়া আদায় করা।
৯- দু‘আ কবুলের সময়গুলো তালাশ করা এবং যেসব অবস্থা ও স্থান দু‘আ কবুল হওয়ার অধিক সম্ভাবনাময় সেগুলোকে লুফে নেয়া।
১০- কিবলামুখী হওয়া ও দু‘আতে দু’হাত উত্তোলন করা।
১১- পাপের অথবা আত্মীয়তা ছিন্ন করার দু’আ না করা।
১২- তাওবা করার সঙ্গে সঙ্গে মাজলুমের হক ফেরত দেয়া।
১৩- দু’আ করার সময় আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলী দ্বারা তাঁর নৈকট্য তলব করা।
১৪- ছোট ও বড় প্রত্যেক বস্তু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।
১৫- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু‘আ দ্বারা দু’আ করার চেষ্টা করা। কেননা তা সব বিষয় সম্বলিত দু‘আ।
তৃতীয়ত: দু‘আ কবুলের সময়, অবস্থা ও স্থানসমূহ:
১- আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“আমাদের মহান ও বরকতময় রব প্রতি রাতে যখন তার শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করেন আর বলেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দিবো, কে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দান করব, কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব?”
[সহীহ]
২- ফরয সালাতসমূহের আযান এবং আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়।
৩- অযুর শেষে হাদীসে বর্ণিত দু‘আ করার সময়।
৪- সালাতের হালতে সাজদাতে। কারণ, হাদীসে এসেছে,
“বান্দা সাজদাবস্থায় স্বীয় রবের সর্বাধিক নিকটবর্তী হয়। সুতরাং (তাতে) তোমরা অধিক দু‘আ করো।”
[সহীহ]
৫- পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে সালামের পূর্বে ও পরে।
৬- জুমু‘আর দিনের এক বিশেষ মুহূর্তে। অধিকগ্রাহ্য মতে সেটি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের ওয়াক্তের শেষ সময়।
৭- খাটি নিয়তে যমযমের পানি পান করার সময়।
৮- মোষল ধারার বৃষ্টি বর্ষণের সময়।
৯- আল্লাহর ইসমে আ‘যম দ্বারা দু‘আ করার সময়। যার দ্বারা দু‘আ করলে তিনি সাড়া দেন এবং যার দ্বারা প্রার্থনা করলে তিনি দান করেন।
১০- হজ ও উমরা পালনকারীর দু‘আ।
১১- হজে ছোট ও মধ্যম জামরায় পাথর নিক্ষেপ করার পর দু‘আ।
১২- তাওয়াফে, সাফা ও মারওয়ার ওপরে এবং তাদের মাঝে সা‘ঈ করার সময় দু‘আ।
১৩- আরাফার মাঠে আরাফার দিনের দু‘আ।
১৪- মুসাফিরের দু‘আ।
১৫- সাওম পালনকারীর ইফতার না করা পর্যন্ত ও ইফতারের সময়কার দু‘আ।
১৬- নিরুপায়ের দু‘আ।
১৭- পিতা-মাতার জন্য নেক সন্তানের দু‘আ।
চতুর্থত: কুরআনী দু‘আসমূহ:
“হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (127) হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (১২৮)
[আল-বাকারাহ : ১২৭—১২৮]
“হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিন। আর আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।”
[আল-বাকারাহ : ২০১]
“হে আমাদের রব, আপনি হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহানদাতা।”
[আলু ইমরান : ৮]
“হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা ঈমান আনলাম। অতএব, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।”
[আলু ইমরান : ১৬]
“হে আমাদের রব, আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং বিদূরিত করুন আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি, আর আমাদেরকে মৃত্যু দিন নেককারদের সাথে। হে আমাদের রব, আর আপনি আমাদেরকে তা প্রদান করুন যার ওয়াদা আপনি আমাদেরকে আপনার রাসূলগণের মাধ্যমে দিয়েছেন। আর কিয়ামতের দিনে আপনি আমাদেরকে অপমান করবেন না। নিশ্চয় আপনি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না।”
[আলু ইমরান : ১৯৩ - ১৯৪]
“হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর যুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।”
[আল-‘আরাফ : ২৩]
“হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন।”
[আল-ফুরকান : ৭৪]
“হে আমার রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।”
[আলু ইমরান : ৩৮]
“হে আমার রব, আপনি ক্ষমা করুন ও দয়া করুন আর আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।”
[আল-মু’মিনূন : ১১৮]
“হে আমার রব, আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের রব, আর আমার দু‘আ কবূল করুন। হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করুন।”
[ইবরাহীম : ৪০-৪১]
“হে আমার রব, আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই’। আর হে আমার রব, আপনার নিকট আমার কাছে তাদের উপস্থিতি হতে পানাহ চাই।”
[আল-মু’মিনূন : 97-98]
“হে আমার রব, আপনি আমাকে নেককার সন্তান দান করুন।”
[আস-সাফফাত : ১০০]
“নিশ্চয় আমাকে কষ্ট স্পর্শ করেছে। আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।”
[আল-আম্বিয়া : ৮৩]
“হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দিন, যেন আমি আপনার সে নি‘আমতের শোকর আদায় করতে পারি যে নি‘আমত আপনি আমার উপর ও আমার পিতা-মাতার উপর দান করেছেন এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন। আর আমার জন্য আপনি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দিন। নিশ্চয় আমি আপনার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’।”
[আল-আহকাফ : ১৫]
পঞ্চমত: হাদীসের দু‘আসমুহ:
“হে আল্লাহ! আপনি আমার দীনকে শুধরে দিন যা আমার সকল কর্মের হিফাযতকারী। আমার পার্থিব জীবনকে শুধরে দিন যাতে আমার জীবিকা রয়েছে। আমার পরকালকে শুধরে দিন যাতে আমার প্রত্যাবর্তনস্থল রয়েছে। আমার জন্য হায়াতকে প্রত্যেক কল্যাণে বৃদ্ধি করুন এবং মৃত্যুকে প্রত্যেক অকল্যাণ থেকে পরিত্রাণদায়ক করুন।”
[সহীহ]
“হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের ওপর অনেক যুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া কেউ গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারে না। অতএব, আপনার পক্ষ থেকে আমাকে বিশেষভাবে ক্ষমা করে দিন, আর আমার প্রতি দয়া করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাকারী, পরম দয়ালু।”
[সহীহ] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর সিদ্দীককে তার সালাতে এ দু‘আ করতে শিখিয়েছেন।
“হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে নূর দান করুন, আমার চোখে নূর দান করুন, আমার শ্রবণশক্তিতে নূর দান করুন, আমার ডানে নূর দান করুন, আমার বামে নূর দান করুন, আমার উপরে নূর দান করুন, আমার নিচে নূর দান করুন, আমার সামনে নূর দান করুন, আমার পেছনে নূর দান করুন, আমার জন্য নূর দান করুন।”
[মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বারা তাঁর সালাতে বা সাজদায় দু‘আ করতেন।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আমার জানা-অজানা ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণ প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আমার জানা-অজানা ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও আপনার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার নিকট যেসব কল্যাণ প্রার্থনা করেছেন আমিও আপনার নিকট সেসব কল্যাণ প্রার্থনা করি। আর আপনার বান্দা ও নবী যে সব ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন আমিও আপনার নিকট সে সব ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট জান্নাত এবং যেসব কথা ও কাজ জান্নাতের নিকটবর্তী করে দেয় তা প্রার্থনা করি। আর আমি আপনার নিকট জাহান্নাম থেকে এবং যে সব কথা ও কাজ জাহান্নামের নিকটবর্তী করে দেয় তা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আপনার কাছে চাই যে, আপনি আমার জন্য যেসব ফায়সালা করেন তার প্রত্যেকটিকে কল্যাণকর করুন।”
[সহীহ] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মুল মু‘মিনীন ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে এটি শিখিয়েছেন। এটি সকল প্রয়োজন সম্বলিত দু‘আর অন্যতম।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার নিআমত নিঃশেষ হওয়া থেকে, আপনার নিরাপত্তা পরিবর্তন হওয়া থেকে, আপনার আকস্মিক পাকড়াও থেকে ও আপনার সকল গোস্বা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।”
[সহীহ]
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট যাবতীয় ভালো কাজ করা, খারাপ কাজ ত্যাগ করা ও মিসকিনদের ভালোবাসা প্রার্থনা করি। আর যখন কোনো কাওমকে ফেতনায় ফেলতে চান, আমাকে ফিতনা ছাড়াই আপনার নিকট তুলে নিন। আমি আপনার নিকট আপনার ভালোবাসা, যারা আপনাকে ভালোবাসে তাদের ভালোবাসা এবং এমন আমলের ভালোবাসা যা আপনার ভালোবাসার দিকে নিয়ে যায় প্রার্থনা করি।”
[হাসান সহীহ] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু‘আ শিখাতে ও শিখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
“হে আল্লাহ! (আপনি) আকাশসমূহের রব, যমীনের রব, মহান ‘আরশের রব, আমাদের রব ও প্রত্যেক বস্তুর রব। (হে) শস্য-বীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী, তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআন নাযিলকারী, আমি আপনার নিকট এমন প্রত্যেক বস্তুর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি, আপনি যার অগ্রভাগ (মাথা) ধরে রেখেছেন। হে আল্লাহ! আপনিই প্রথম আপনার পূর্বে কিছুই নেই, আপনি সর্বশেষ আপনার পরে কিছুই নেই, আপনি সব কিছুর উপরে আপনার উপরে কিছুই নেই; আপনি সর্বনিকটে, আপনার চেয়ে নিকটবর্তী কিছু নেই, আপনি আমাদের সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে দিন এবং আমাদেরকে অভাব থেকে মুক্ত করুন।”
[সহীহ] এটি ঋণ পরিশোধ ও প্রশস্ত রিযিকের দু‘আ।
“হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্যে বণ্টন করুন আপনার ভয় থেকে এতটুকু যা আমাদের মাঝে ও আপনার নাফরমানির মাঝে প্রতিবন্ধক হয়; আর আপনার আনুগত্য (ইবাদত) থেকে এতটুকু যা আমাদেরকে আপনার জান্নাতে পৌঁছে দেয়; আর বিশ্বাস থেকে এতটুকু যা আমাদের ওপর দুনিয়ার মুসিবত সহজ করে দেয়। হে আল্লাহ যতদিন আমাদেরকে জীবিত রাখেন ততদিন আমাদের কর্ণ, চক্ষু ও শক্তিকে উপভোগ করতে দিন। আর আপনি এগুলোকে আমাদের উত্তরসূরী করে দিন। যে আমাদের ওপর জুলুম করে আপনি আমাদের মুসিবত তার ওপর আরোপ করুন। আর যে আমাদের সাথে দুশমনি করে তার ওপর আমাদের বিজয় দান করুন। আমাদের মুসিবত আমাদের দীনে না করুন। দুনিয়াকে আমাদের সর্বাধিক বড় বিষয় ও আমাদের ইলমের চূড়ান্ত লক্ষ্য না করুন। আর যে আমাদের প্রতি দয়া না করে তাকে আমাদের উপর চাপিয়ে না দিন।”
[হাসান] ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের জন্য এসব দু‘আ দ্বারা দু‘আ না করে মজলিস থেকে খুব কমই উঠতেন।
“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় ইসলাম দ্বারা হিফাযত করুন, বসাবস্থায় ইসলাম দ্বারা হিফাযত করুন ও শোয়াবস্থায় ইসলাম দ্বারা হিফাযত করুন। আর আপনি হিংসুক দুশমনকে আমার দ্বারা খুশি করবেন না। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সকল কল্যাণ প্রার্থনা করি যার খাযানাহ আপনার হাতে রয়েছে আর আমি আপনার কাছে সকল অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই যার ভান্ডার আপনার হাতে রয়েছে।”
[হাসান]
“হে আল্লাহ! (হে) অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী, আমাদের অন্তরসমূহকে আপনার ইবাদাতের ওপর ফিরিয়ে দিন।”
[সহীহ]
“হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে আপনার দীনের ওপর স্থির রাখুন।”
[সহীহ] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা অনেক বেশি বলতেন।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি যে, আপনার জন্যই সকল প্রসংশা। অনুগ্রহকারী, আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্ট্রা আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। হে মহিমান্বিত ও মহাসম্মানিত, হে চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী সত্ত্বা।”
[সহীহ] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে তার সালাতে এ দু‘আ দ্বারা দু‘আ করতে শুনলেন। তখন বললেন, “সে আল্লাহকে তাঁর ইসমে আ‘যম দ্বারা ডেকেছে, যার দ্বারা ডাকা হলে তিনি উত্তর দেন এবং যার দ্বারা চাওয়া হলে তিনি দান করেন।”
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ, আপনি একক, এক, অমুখাপেক্ষি। যিনি জন্ম দেননি এবং যাকে জন্ম দেয়া হয়নি। আর কেউ তার সমকক্ষ নয়। আপনি আমার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয় আপনি অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
[সহীহ] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে এ দু‘আটি তাশাহহুদে বলতে শুনলেন। তখন তিনি বললেন, “তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো।”
“হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট হেদায়াত, তাকওয়া, অশ্লীলতা হতে পবিত্রতা এবং সচ্ছলতা প্রার্থনা করি।”
[সহীহ] আল-আফাফ: বৈধ নয় এমন বস্তু থেকে পবিত্র ও বিরত থাকা। আর আল-গিনা: মানুষ ও তাদের হাতে যা রয়েছে তা থেকে অমুখাপেক্ষী থাকা।
“হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহ, আমার মূর্খতা, আমার কর্মে আমারই সীমালঙ্ঘন এবং আপনি আমার সম্পর্কে যা আমার চেয়ে বেশী জানেন ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমার হাসি-ঠাট্টায়, জেনে-বুঝে, ভুলে ও স্বেচ্ছায় কৃত সকল পাপ ক্ষমা করুন। এসবই আমার মধ্যে রয়েছে। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করুন যা আমি অগ্রে প্রেরণ করেছি ও যা পশ্চাতে ছেড়ে এসেছি, যা আমি গোপন করেছি ও যা জাহির করেছি আর যা আপনি আমার চেয়ে বেশী জানেন। আপনি আদি এবং আপনিই অন্ত। আপনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।”
[সহীহ]
“হে আল্লাহ! হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিন। আর আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।”
[সহীহ] দুনিয়ার কল্যাণ: এটি একজন বান্দা দুনিয়াতে যত কল্যাণ লাভ করে তার সমষ্টির নাম। আর আখিরাতের কল্যাণ: এর উদ্দেশ্য জান্নাত। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর সংবাদ মতে এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশীবার পঠিত দু‘আর একটি। আর আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন দু‘আ করার ইচ্ছা করতেন তখন এ দু‘আ দ্বারা দু‘আ করতেন। এ সংক্ষিপ্ত বাক্যগুলো দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কল্যাণকে জমা করার সঙ্গে সবচেয়ে বড় অনিষ্ট জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপত্তা তলবকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে।
“হে আল্লাহ, আপনি আমার রব, আপনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার বান্দা এবং আমি যথাসম্ভব আপনার অঙ্গীকার ও ওয়াদার ওপর আছি। আমি যা করেছি তার অনিষ্ট থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমি আমার ওপর আপনার নি‘আমত এবং আপনার সামনে আমার পাপ স্বীকার করছি, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা আপনি ব্যতীত কেউ পাপ ক্ষমা করার নেই। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে তার প্রতি দৃঢ় আস্থা রেখে দিনের কোনো অংশে তা বলে, অতঃপর সেদিন সন্ধার আগেই সে মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতবাসী। আর যে তার প্রতি দৃঢ় আস্থা রেখে রাতের কোনো অংশে তা বলে, অতঃপর সকাল হওয়ার আগেই সে মারা যায় তাহলে সে জান্নাতবাসী।”
[সহীহ]
“হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।”
[সহীহ]
“হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার যিকির, আপনার শোকর ও আপনার সুন্দর ইবাদত করতে সাহায্য করুন।”
[সহীহ]
ষষ্ঠত: দুশ্চিন্তা, পেরেশানী, সংকীর্ণতা ও মুসিবত থেকে মুক্তির দু‘আসমূহ:
“হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা এবং আপনারই এক বান্দা ও এক বাঁদীর পুত্র। আমার কপাল (নিয়ন্ত্রণ) আপনার হাতে, আপনার নির্দেশ আমার ওপর কার্যকর, আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালা ইনসাফপূর্ণ। আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি আপনার প্রতিটি নামের উসীলায়, যার দ্বারা আপনি নিজে নিজেকে ভূষিত করেছেন অথবা যা আপনার সৃষ্টজীবের কাউকে শিখিয়েছেন অথবা যা আপনার কিতাবে নাযিল করেছেন অথবা যা আপনার কাছে গায়েবী ইলমে সংরক্ষণ করেছেন- আপনি কুরআনকে আমার হৃদয়ের প্রশান্তি, আমার বক্ষের নূর, আমার দুঃখ অপসারণকারী ও আমার দুশ্চিন্তা দূরকারী বানিয়ে দিন।”
[সহীহ] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করেন, যে এই দু‘আ শুনবে তার তা শিখে নেয়া উচিত।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমত আশা করি, সুতরাং আপনি আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না। আর আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন, আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।”
[সহীহ] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করেন, এটি বিপথগ্রস্তদের দু‘আ।
“মহান ও সহিষ্ণু আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। মহান ‘আরশের রব আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই। আসমানসমূহের রব, জমিনের রব ও মর্যাদাবান ‘আরশের রব আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই।”
[সহীহ] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসিবতের সময় এটি বলতেন তারপর দু‘আ করতেন।
“আপনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। আপনি অতি পবিত্র। নিশ্চয় আমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।”
[সহীহ] এটি যুননূনের দু‘আ যখন তিনি মাছের পেটে ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো মুসলিম কোনো বিষয়ে এর দ্বারা দু‘আ করলে তার দু‘আ অবশ্যই কবুল হবে।”
সপ্তমত: নববী আশ্রয় প্রার্থনাসমূহ:
“হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি দ্বারা আপনার অসন্তুষ্টি থেকে ও আপনার নিরাপত্তা দ্বারা আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই। আমি আপনার দ্বারা আপনার থেকে আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা গণনা করতে সক্ষম নই। আপনি নিজের প্রশংসা যেরূপ করেছেন আপনি ঠিক সেরূপই।”
[সহীহ] ইমাম নববী এ দু‘আয় একটি সূক্ষ্ম অর্থ উল্লেখ করেছেন। আর তা হলো, তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন যে, তিনি যেন তাকে তার সন্তুষ্টি দ্বারা তার অসন্তুষ্টি থেকে ও তার নিরাপত্তা দ্বারা তার শাস্তি থেকে সুরক্ষা দান করেন। সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি অনুরূপভাবে নিরাপত্তা ও শাস্তি দু’টি বিপরীত বস্তু। এর অর্থ, আল্লাহর প্রসংশা ও তার ইবাদতের হক আদায়ে ঘাটতি থেকে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট মুসীবতের কাঠিন্য, অনিষ্টের স্পর্শ, খারাপ তাকদীর ও শত্রুর উপহাস থেকে পানাহ চাই।”
[সহীহ] (জাহদুল বালা): মানুষকে স্পর্শকারী সকল কষ্ট যা সে বহন করতে ও নিজের থেকে প্রতিহত করতে সক্ষম নয়। (দারকুশ শাকা): বিপদ ও মুসিবতে জড়িয়ে যাওয়া এবং ধ্বংসের কারণগুলোতে আক্রান্ত হওয়া। (সূ-উল কাধা): মানুষকে অপ্রসন্নকারী কৃত ফয়সালা। (শামাতাতুল আ‘দা): ব্যক্তির ওপর নেমে আসা মুসিবতে শত্রুর খুশি হওয়া। এমন হলে তারা আমার দুঃখে খুশি হবে।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কছে অক্ষমতা, অলসতা, কৃপণতা, বার্ধক্য এবং কবরের ‘আযাব থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে তাকওয়া দান করুন এবং তাকে পরিশুদ্ধ করুন। আপনিই তার সর্বোত্তম পরিশুদ্ধকারী। আপনিই তার অভিভাবক ও আশ্রয়স্থল। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই এমন ইলম থেকে যা উপকারী নয়, এমন অন্তর থেকে যা ভীত হয় না, এমন নফস থেকে যা পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন দু‘আ থেকে যা কবুল হয় না।”
[সহীহ] (যাক্কিহা): অর্থাৎ তাকে পবিত্র করুন। আপনি ছাড়া তাকে পবিত্র করার কেউ নেই। আপনি পবিত্র।
“হে আল্লাহ! আমরা আপনার দ্বারা জাহান্নামের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। আমি আপনার দ্বারা কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। আমি আপনার দ্বারা মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই এবং আমি আপনার দ্বারা জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।”
[সহীহ] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে যেভাবে কুরআনের সূরা শেখাতেন সেভাবে এ দু‘আও শেখাতেন।
অষ্টমত: নববী যিকিরসমূহ:
“(আমি ঘোষণা করি) আল্লাহর পবিত্রতা ও তার প্রশংসা। মহান আল্লাহর পবিত্রতা।
[সহীহ] বর্ণিত আছে যে, এই যিকির নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সূর্য্য যার ওপর উদয় হয় তা থেকে উত্তম।
আল্লাহর পবিত্রতা এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে। আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো ইলাহ নেই আর আল্লাহ সবচেয়ে বড়।
[সহীহ] বর্ণিত আছে যে, এটি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় বাক্য (যিকির)।
জুওয়াইরিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত:
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে ভোরে তার নিকট থেকে বের হলেন। এমন অবস্থায় যে, তিনি তার সালাতের জায়গায় ছিলেন। তারপর দোহার (চাশতের) সময় তিনি ফিরে আসলেন। তখনও তিনি বসাবস্থায় ছিলেন। তিনি বললেন, “আমি যে অবস্থায় তোমাকে রেখে গেছি সে অবস্থায় এখনো আছো?” তিনি বললেন, হ্যাঁ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি তোমার অবর্তমানে চারটি বাক্য তিনবার বলেছি। তুমি আজ পর্যন্ত যা বলেছো যদি তা ওজন দাও, তাহলে বাক্য চারটি সেগুলোকে হালকা করে দেবে। [বাক্যগুলোর অর্থ] “আমি আল্লাহর পবিত্রতা ও তার প্রশংসা বর্ণনা করছি- তাঁর সৃষ্ট বস্তুসমূহের সংখ্যার সমান, তাঁর নিজের সন্তুষ্টির সমান, তাঁর ‘আরশের ওজনের সমান ও তাঁর বাণীসমূহের কালির সমান (অগণিত অসংখ্য)।”
[সহীহ] এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
“আল্লাহর তাওফীক ব্যতীত ভালো কাজ করার সামর্থ্য ও খারাপ থেকে বিরত থাকার কোনো শক্তি নেই।”
[সহীহ] বর্ণিত আছে যে, এটি জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের একটি ভাণ্ডার।
“আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দীন হিসেবে এবং মুহাম্মদকে নবী হিসেবে গ্রহণ করলাম।”
[সহীহ] বর্ণিত আছে, যে এগুলো বলবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব।
“আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসাও তাঁর। তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।”
[সহীহ] যে তা দিনে একশোবার বলবে তার জন্য দশটি গোলাম আযাদ করার সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে। আর তার জন্য একশোটি সাওয়াব লেখা হবে ও তার থেকে একশোটি গুনাহ মোচন করা হবে। আর সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য রয়েছে শয়তান থেকে নিরাপত্তা। সে যা আমল করল আর কেউ তার চেয়ে উত্তম আমল করল না, তবে সে ব্যতীত যে এটি তার চেয়ে অধিক আমল করল।
“হে আল্লাহ! হে আমাদের রব আপনার জন্য সমস্ত প্রশংসা, আপনি আসমান ও যমীনের নিয়ামক। আপনার জন্য সমস্ত প্রশংসা, আপনি আসমান, যমীন ও তাদের মাঝে বিদ্যমান সবকিছুর রব। আপনার জন্য সমস্ত প্রশংসা, আপনি আসমান, যমীন ও তাদের মধ্যবর্তী সবকিছুর নূর। আপনি সত্য; আপনার কথা সত্য; আপনার ওয়াদা সত্য; আপনার সাক্ষাৎ সত্য; জান্নাত সত্য; জাহান্নাম সত্য; কিয়ামত সত্য। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আত্মসমর্পণ করলাম; আপনার প্রতি ঈমান আনলাম; আপনার উপরেই তাওয়াক্কুল করলাম, আপনার সাহায্যেই তর্কে লিপ্ত হলাম এবং আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। অতএব আমি যা অগ্রে প্রেরণ করেছি ও যা পেছনে ছেড়ে এসেছি, যা প্রকাশ করেছি ও যা গোপন করেছি তা সব ক্ষমা করে দিন। আপনি আদি এবং আপনিই অন্ত। আপনি ব্যতীত সত্য কোনো ইলাহ নেই।”
[সহীহ] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠে দু‘আটি বলতেন।
“হে আল্লাহ! আমি আপনাতে সমর্পিত হলাম, আপনার প্রতি ঈমান আনলাম, আপনার উপর তাওয়াক্কুল করলাম, আপনার কাছে প্রত্যাবর্তন করলাম ও আপনার দ্বারাই তর্ক করলাম। হে আল্লাহ! আপনার ইজ্জতের অসীলায় আমি আশ্রয় চাই, আপনি ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করবেন না। আপনি সেই চিরঞ্জীব যে মরবে না। জিন ও মানব সকলেই মারা যাবে।”
[সহীহ]
“আল্লাহর নামে, যার নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো বস্তু কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।”
[সহীহ] যে তা সন্ধ্যায় তিনবার বলবে সকাল পর্যন্ত কোনো বস্তু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আবার যে তা সকাল বেলায় তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো বস্তু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।