আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” [১] [আলে-ইমরান : ৮৫] আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আর এ পথই আমার সরল পথ। কাজেই তোমরা এর অনুসরণ কর এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে।” [২] [আল-আন‘আম : ১৫৩]
মুজাহিদ বলেন: ‘সুবুল অর্থ: বিদ‘আত ও সন্দেহসমূহ।
‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করল যা তাতে নেই তা প্রত্যাখ্যাত।” [৩] অন্য শব্দে রয়েছে: “যে কেউ এমন কোনো কাজ করবে যার উপরে আমাদের কোনো আদেশ (নির্দেশনা) নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” [৪]
আর বুখারীর বর্ণনাতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করল [সে ব্যতীত]। তারা বলল: কে অস্বীকার করল? তিনি বললেন: যারা আমার অনুসরণ করল তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হল সেই অস্বীকার করল।” [৫]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে সহীহ গ্রন্থে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ”আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ তিনজন: যে হারাম শরীফের মধ্যে অন্যায় করে, ইসলামের মধ্যে থেকেও জাহেলী যুগের রীতি-নীতির অন্বেষণ করে এবং ন্যায় সঙ্গত কারণ ছাড়া কোনো মুসলিমের রক্তপাত ঘটাতে চাওয়া।”[৬] হাদীসটি বুখারী বর্ণনা করেছেন। এর অন্তর্ভুক্ত হবে সাধারণ ও সুনির্দিষ্ট প্রতিটি জাহেলী কর্মকাণ্ড। অর্থাৎ একজন বাদে অপরজনের ভেতর এমন নয়, হোক সে কিতাবী, অথবা মূর্তিপুজক অথবা তাদের ছাড়া রাসূলগণের আনীত দীনের বিরোধিতাকারী যে কেউ।
বুখারীতে হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত: হে কুরআন পাঠকারী লোকেরা! তোমরা সুদৃঢ় থাকো। তোমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছো, যদি তোমরা ডান অথবা বাম দিক গ্রহণ কর, তবে তোমরা অনেক দূরে বিভ্রান্তিতে নিপতিত হবে।
মুহাম্মাদ ইবনু ওয়াদ্বহ হতে বর্ণিত: তিনি মসজিদে যেয়ে হালাকাসমূহের কাছে দাঁড়িয়ে উপদেশ স্বরূপ বলতেন: আমাদেরকে ইবনু উ‘আইনাহ সংবাদ দিয়েছেন মুজালিদ হতে, তিনি শা‘বী হতে, তিনি মাসরূক হতে, তিনি বলেছেন: আব্দুল্লাহ -অর্থাৎ ইবনু মাস‘ঊদ- বলেছেন: এমন কোনো বছর নেই, যার পরের বছর তার তুলনায় খারাপ নয়। আমি এ কথা বলছি না যে, এক বছর অন্য বছরের তুলনায় উর্বর, এক আমীর অন্য আমীরের তুলনায় ভাল, কিন্তু তোমাদের উত্তম মানুষেরা এবং আলিমগণ চলে যাবে, তারপরে এমন সব দলের আগমণ ঘটবে, যারা তাদের রায় বা বিবেকপ্রসূত সিদ্ধান্তের দ্বারা সকল বিষয়কে পরিমাপ করবে, ফলে তারা ইসলামকে ধ্বংস ও ক্ষতবিক্ষত করবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “সুতরাং যদি তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে, তবে তুমি বল: আমি আত্মসমর্পন করেছি এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে, তারাও।” [৭] [আলে ইমরান: আয়াত : ২০]
সহীহ গ্রন্থে ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “ইসলাম হচ্ছে: তুমি এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো ইলাহ নেই আর মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর তুমি সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে, রমাধানে সিয়াম পালন করবে, আর বাইতুল্লায় পৌঁছানোর সামর্থ থাকলে তুমি হজ্জ পালন করবে।” [৮]
এ ব্যাপারে মারফূ হিসেবে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, “প্রকৃত মুসলিম হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে।” [৯]
বাহয ইবনু হাকীম তার দাদার সূত্রে তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন: “তুমি তোমার অন্তরকে আল্লাহর কাছে সপে দেবে, তুমি তোমার চেহারাকে আল্লাহর দিকে ফিরাবে, ফরয সালাত আদয় করবে এবং নির্ধারিত যাকাত প্রদান করবে।” [১০] এটি আহমাদ বর্ণনা করেছেন।
আবূ কিলাবাহ হতে বর্ণিত, তিনি আমর ইবন আবাসা হতে, তিনি শামের অধিবাসী একজন লোক হতে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন: ইসলাম কি? তখন তিনি বললেন: তুমি তোমার অন্তরকে আল্লাহর জন্য সোপর্দ করবে, এবং মুসলিমগণ তোমার মুখ ও হাত থেকে নিরাপদ থাকবে। তখন তিনি বললেন: ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি জবাব দিলেন: ঈমান। তখন তিনি বললেন: ঈমান কি? তিনি বললেন: তুমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখবে, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রসূলগণের প্রতি এবং মৃত্যুর পরে পুনরুত্থানের প্রতি। [১১]
আর আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কিয়ামতের দিন আমলসমূহ আসবে। সুতরাং প্রথমে সালাত আসবে আর সে বলবে: হে আমার রব! আমি হলাম সালাত। তখন তিনি বলবেন: “তুমি তো ভালো অবস্থায়ই আছ।” তারপরে সিয়াম আসবে, তখন তিনি বলবেন: “তুমি তো ভালো অবস্থায়ই আছ।” তারপরে অন্যান্য আমলসমূহ আসতে থাকবে, আর তিনি বলবেন: “তুমি তো ভালো অবস্থায়ই আছ।” এরপরে ইসলাম আসবে, আর সে বলবে: হে আমার রব! নিশ্চয় আপনি ‘আস-সালাম’ আর আমি হলাম ইসলাম। তখন তিনি বলবেন: “তুমি তো ভালো অবস্থায়ই আছ।” তোমার (প্রতি যত্নবান না হওয়ার) কারণেই আমি আজকে পাকড়াও করব (শাস্তি দেব) আর তোমার (প্রতি যত্নবান হওয়ার) কারণেই আমি (নাজাত) দান করব। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” [১২] [আলে-ইমরান : ৮৫] এটি আহমাদ বর্ণনা করেছেন।
সহীহ গ্রন্থে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে কেউ এমন কোনো কাজ করবে যা আমাদের শরী‘আতে নেই তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” [১৩] এটি আহমাদ বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আর তোমার উপরে আমি কিতাব নাযিল করেছি, প্রতিটি বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনা হিসেবে।” [১৪] [আন-নাহাল : ৮৯]
নাসাঈ ও অন্যান্য ইমামগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি উমার ইবনুল খাত্তাবের হাতে তাওরাতের একটি পৃষ্ঠা দেখে বললেন: “আজ যদি মূসা জীবিত থাকতেন, আমার আনুগত্য ছাড়া তারও কোনো গত্যন্তর ছিল না।” [১৫] তখন উমার বললেন: “আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদকে নবী হিসেবে গ্রহণ করলাম।”
আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “তিনিই তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ ইতোপূর্বে এবং এই কিতাবেও।” [১৬] [আল-হজ্জ: ৭৮।
হারিছ আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যার ব্যাপারে আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন: (আমীরের) কথা শুনা, আনুগত্য করা, জিহাদ, হিজরত ও জামা‘আতকে আঁকড়ে ধরা। কেননা, যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণও জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, সে তার গলা থেকে ইসলামের বন্ধন খুলে ফেলে দেবে, যতক্ষণ না সে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। আর যে ব্যক্তি জাহিলী দাবীর দিকে ডাকবে, সে হল জাহান্নামীদের দলভুক্ত। একজন ব্যক্তি তখন বলল: হে রাসূলাল্লাহ্! সে যদি সালাত আদায় করে ও সিয়াম পালন করে তবুও? তিনি বললেন: যদিও সে সালাত আদায় করে এবং সিয়াম পালন করে। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা সেই আল্লাহকে আহ্বান কর যিনি তোমাদের নামকরণ করেছেন মুসলিম ও মুমিন।”[১৭] হাদীসটি আহমাদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। আর তিরমিযী তা হাসান সহীহ বলেছেন।
আর সহীহ গ্রন্থে এসেছে, “যে কেউ জামা‘আত থেকে এক বিঘত দূরে সরে যাবে, তার মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু।” [১৮] তাতে আরো রয়েছে: “আমি তোমাদের মধ্যে থাকা অবস্থায়ও কী জাহেলিয়াতের রীতি-নীতির দ্বারাই চলবে?” আবুল আব্বাস বলেছেন: বংশ অথবা দেশ অথবা জাতি অথবা মাযহাব অথবা ত্বরীকা থেকে যা কিছু ইসলাম ও কুরআনের আহ্বান হতে বের করে দেয় তা সবই জাহিলিয়্যাতের নির্দশন। বরং একজন মুহাজির ও আনসার যখন ঝগড়া করছিলেন, তখন মুহাজির বললেন: ওহে মুহাজিরগণ! আর আনসারী বললেন: ওহে আনসারগণ! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “আমি তোমাদের মধ্যে থাকা অবস্থায়ও কী জাহেলিয়াতের রীতি-নীতির দ্বারাই চলবে?” আর এ কারণে তিনি প্রচণ্ড রাগ করলেন। এখানেই তার বক্তব্য শেষ।
আর আল্লাহর বাণী: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর।” [১৯] (আল-বাক্বারাহ: ২০৮) আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা ধারনা করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার ওপর, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে?” [২০] [আন-নিসা, আয়াত: ৬০] আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “সেদিন কিছু মুখ সাদা হবে আর কিছু মুখ কালো হয়ে যাবে।” [২১] [আলে ইমরান : ১০৬] ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: আহলুস সুন্নাহ ও ই’তিলাফকারীদের (তথা পরষ্পরে মুহাব্বাতকারীদের) মুখমণ্ডল উজ্জল হবে আর আহলুল বিদ‘আহ ও ইখতিলাফকারীদের মুখমণ্ডল কালো হয়ে যাবে।
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “বনী ইসরাঈল যে অবস্থায় উপনীত হয়েছিল, নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতও সেই অবস্থার সম্মুখীন হবে, জুতোর একটি যেভাবে আরেকটির মতো হয়। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করে থাকে, তবে আমার উম্মতের মধ্যে হতেও কেউ কেউ তাই করবে। আর বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মত তিহাত্তর দলে বিভক্ত হবে।” হাদীসটির পূর্ণ অংশ হলো তার বাণী: “এই উম্মত তিহাত্তর দলে বিভক্ত হবে। তাদের সবাই জাহান্নামী হবে শুধু একটি দল ছাড়া। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! সে দলটি কারা? তিনি বললেন: আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপরে রয়েছি।” [২৩] আহ! কতই না অন্তরকে উজ্জীবিত করার মত নসীহত! তিরমিযী এটিকে বর্ণনা করেছেন। আবার তিনি তা আহমাদ ও আবূ দাউদে থাকা মু‘আবিয়ার হাদীস থেকেও বর্ণনা করেছেন আর তাতে রয়েছে: “নিশ্চয় আমার উম্মাতের মধ্য হতে অচিরেই এমন একটি সম্প্রদায় আসবে, যাদের মধ্যে উক্ত প্রবৃত্তি এমনভাবে প্রবাহিত হবে, যেভাবে জলাতঙ্ক রোগ তার রোগীর মধ্যে প্রবাহিত হয় আর তাতে এমন কোনো শিরা-উপশিরা বাকী থাকবে না, যেখানে তা প্রবেশ করবে না।” আর তার বাণী: “ইসলামের মধ্যে থেকেও জাহেলী যুগের রীতি-নীতির অন্বেষণকারী” গত হয়েছে।
যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে কৃত শিরককে ক্ষমা করবেন না, আর এছাড়া সকল কিছুই যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে দিবেন।” [২৪] [আন-নিসা : ৪৮] আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “ফলে কিয়ামতের দিন তারা বহন করবে তাদের পাপের বোঝা পূর্ণ মাত্রায় এবং তাদেরও পাপের বোঝা যাদেরকে তারা অজ্ঞতাবশত বিভ্রান্ত করেছে। দেখ! তারা যা বহন করবে তা কতই না নিকৃষ্ট !” [২৫] [আন-নাহল : ২৫]
সহীহ গ্রন্থে রয়েছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খারিজীদের ব্যাপারে বলেছেন: “তোমরা যেখানেই তাদেরকে দেখবে, তাদেরকে হত্যা করবে।” [২৬]
তাতে রয়েছে: তিনি জালিম শাসকদেরকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন যতক্ষণ তারা সালাত আদায় করবে।
জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি একবার দান করল, তারপরে লোকেরা অনুসরণ করল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “যে ব্যক্তি ইসলামে ভালো রীতি চালু করবে, সে তার নিজের এবং ঐ সমস্ত লোকের সওয়াব পাবে, যারা তার পর তার উপর আমল করবে। তাদের সওয়াবের কিছু পরিমাণও কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতির প্রচলন করবে, তার উপর তার নিজের এবং ঐ লোকদের গোনাহ বর্তাবে, যারা তার পর তার উপর আমল করবে। তাদের গোনাহর কিছু পরিমাণও কম করা হবে না।” [২৭] মুসলিম এটি বর্ণনা করেছেন।
আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মুসলিমের বর্ণনাতে আরো রয়েছে, যার বর্ণিত শব্দ: “যে ব্যক্তি কোনো হিদায়াতের দিকে আহ্বান করবে, - এরপরে তিনি বলেছেন- যে ব্যক্তি কোনো ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে।” [২৮]
অধ্যায়: আল্লাহ বিদ‘আতী ব্যক্তির ওপর তাওবার সুযোগকে বন্ধ করে রেখেছেন।
এই হাদীসটি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, যা হাসান বসরীর মুরসালসমূহের একটি।
ইবনু ওয়াদ্দাহ আইয়ূব হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে একজন লোক ছিল, যে একটি [বিভ্রান্ত] মত পোষণ করত, এরপরে সে তা ত্যাগ করে। তখন আমি মুহাম্মাদ ইবন সীরিনের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম: আপনি কি মনে করেন যে, সে তার মতামত পরিত্যাগ করেছে? তিনি বললেন: আমি কী দেখব? নিশ্চয় তাদের ওপর হাদীসের শেষ অংশ প্রথম অংশের চেয়ে বেশী কঠিন। “তারা ইসলাম হতে বের হয়ে যাবে, তারপরে আর কখনো ফিরে আসবে না।” [২৯] আহমাদ ইবন হাম্বালকে তার অর্থ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি বললেন: তাওবাহর তাওফীক দেওয়া হবে না।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “হে আহলে কিতাবীগণ! তোমরা কেন ইবরাহীমের ব্যাপারে বিতর্কে লিপ্ত হও।” [৩০] [আলে ইমরান : 65] তাঁর এ বাণী পর্যন্ত: “আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।” [৩১] [আলে ইমরান : 67] এবং আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আর নির্বোধ ছাড়া ইবরাহীমের মিল্লাত হতে আর কে বিমুখ হবে? দুনিয়াতে তাকে আমরা মনোনীত করেছি; আর আখেরাতেও সে অবশ্যই সৎ কর্মশীলদের অন্যতম।”[৩২] [আল-বাকারাহ : ১৩০] তাতে রয়েছে খারেজীদের হাদীস যা ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে, সেখানে আছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “অমুকের পিতার বংশধরেরা আমার বন্ধু নয়, আমার বন্ধু তো শুধু মুত্তাকীগণ!” [৩৩] তাতে আরো বর্ণিত হয়েছে আনাস হতে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উল্লেখ করা হল যে, তার কতিপয় সাহাবী বলেছে: আর আমি কখনো গোশত খাব না। অন্য একজন বলেছে: আমি সারারাত্রি সালাতে দাঁড়িয়ে থাকবো আর ঘুমাবো না। আরেকজন বলেছে: আমি সিয়াম পালন করব কখনো তা ভঙ্গ করবো না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “কিন্তু আমি সালাতে দাঁড়াই আবার ঘুমাই। আমি সিয়াম পালন করি এবং তা ভঙ্গও করি এবং আমি নারীদেরকে বিবাহ করি আর আমি গোশতও খাই। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে আমার (উম্মত) থেকে নয়।”[৩৪] সুতরাং গভীরভাবে চিন্তা করো, যখন কতিপয় সাহাবী আল্লাহর প্রতি ইবাদতের আগ্রহের উদ্দেশ্যে এরকম শক্ত কথা বলেছিলেন, তখন তাদের এই কর্মকে সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তাহলে এইগুলো ছাড়া অন্যান্য যত বিদআত রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে তোমার ধারণা কি হতে পারে? আর সাহাবী ছাড়া অন্যান্যদের ব্যাপারেই বা তোমার কি ধারণা হওয়া উচিৎ?
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “অতএব তুমি একনিষ্ঠ হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি, যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।” [৩৫] [সূরা আর-রূম : ৩০]
আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আর ইবরাহীম ও ইয়া’কূব তাদের পূত্রদেরকে এরই নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘হে পুত্রগণ ! আল্লাহ্ই তোমাদের জন্য এ দীনকে মনোনীত করেছেন। কাজেই আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) না হয়ে তোমরা মারা যেও না।” [৩৬]। আল-বাকারা: ১৩২। এবং তাঁর বাণী: “তারপর আমরা তোমার প্রতি অহী নাযিল করলাম যে, ‘তুমি একনিষ্ঠ ইবরাহীমের মিল্লাত (আদর্শ) অনুসরণ কর এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।” [৩৭] (আন-নাহল: ১২৩)
“ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “প্রত্যেক নবীরই নবীগণের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক বন্ধু রয়েছে। আর আমার বন্ধু হচ্ছেন আমার পিতা ও আমার রবের খলীল বা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম। [৩৮] তারপর তিনি তিলাওয়াত করেন: “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে তারাই ইবরাহীমের ঘনিষ্ঠতম, যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এ নবী ও যারা ঈমান এনেছে; আর আল্লাহ্ মুমিনদের অভিভাবক।” [৩৯] [আলে-ইমরান : ৬৮] এটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।
আর আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের দেহ এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলসমূহ দেখেন।” [৪০]
(বুখারী ও মুসলিমে) ইবন মাসউদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি তোমাদের আগেই হাউযের কাছে গিয়ে পৌঁছব। তখন আমার উম্মাতের মধ্য হতে কতিপয় লোককে অবশ্যই আমার সামনে পেশ করা হবে। আর যখনই আমি তাদেরকে পানি পরিবেশনের জন্য অগ্রসর হবো, তখন তাদেরকে আমার সামনে থেকে পর্দার মাধ্যমে পৃথক করে নেওয়া হবে। তখন আমি বলবো: হে আমার রব! এরা তো আমার উম্মাত। তখন বলা হবে: তোমার পরে এরা কি ধরণের নতুন কাজের উদ্ভাবন করেছিল, তা তুমি জানো না।” [৪১]
(বুখারী ও মুসলিমে) আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি আশা পোষণ করি, যদি আমাদের ভাইদেরকে দেখতে পেতাম! সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বললেন: তোমরা হচ্ছ আমার সাহাবী। আর যারা এখনো আগমন করেনি, তারাই আমার ভাই। তখন তারা বললেন: আপনার উম্মাতের মধ্যে যারা এখনো আগমন করেনি, তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেন: “তোমরা কি লক্ষ্য করেছো যে, যদি কোন ব্যাক্তির এমন কোন ঘোড়া থাকে যার কপাল সাদা (উজ্জল) রঙের চিহ্ন বিশিষ্ট হয়, আর সেটি যদি ঘোর কালো বর্ণের ঘোড়ার মধ্যে মিশে যায়, তবে সে কি তার ঘোড়াকে চিনে নিতে পারবে না? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন: সেদিন আমার উম্মাতেরা এমন অবস্থায় আসবে যে, অযুর কারণে তাদের মুখমন্ডল উজ্জল হবে। আর হাউযের নিকটে আমি তাদের আগেই পৌঁছে যাব। জেনে রাখ, সেদিন কিছু সংখ্যক লোককে আমার হাউয থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে, যেমনিভাবে পথহারা উটকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমি তাদেরকে আহ্বান করবো: এসো, এসো। তখন বলা হবে: “এরা আপনার পরে (দীনকে) পরিবর্তন করে ফেলেছিল। তখন আমি বলব: “দূর হও, দূর হও।” [৪২]
আর বুখারীতে রয়েছে: “এক সময় আমি (হাশরের মাঠে) দাঁড়িয়ে থাকব। তখন হঠাৎ একটি দল দেখতে পাব এবং আমি যখন তাদেরকে চিনতে পারব। তখন আমার ও তাদের মধ্য থেকে একটি লোক বেরিয়ে বলবে: আপনি আসুন। আমি বলব: কোথায়? সে বলবে: আল্লাহর কসম! (জাহান্নামের) আগুনের দিকে। আমি বলব: তাদের কী অবস্থা? সে বলবে: নিশ্চয় এরা আপনার মৃত্যুর পর দীন থেকে পেছনে সরে গিয়েছিল। এরপর আরেকটি দল দেখতে পাব। -তিনি অনুরূপ কথপোকথন উল্লেখ করেছেন- তিনি বলেছেন: আমি মনে করি না যে, অতি নগণ্য সংখ্যক ব্যক্তি ছাড়া তাদের কেউ মুক্তি পাবে।” [৪৩]
(বুখারী ও মুসলিমে) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার হাদীস হতে বর্ণিত: “তখন আমি তাই বলব, যা সৎকর্মশীল ব্যক্তি (ঈসা) বলেছেন: ‘এবং আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের কাজকর্মের সাক্ষী; কিন্তু যখন আপনি আমাকে তুলে নিলেন, তখন আপনিই তো ছিলেন তাদের কাজকর্মের পর্যবেক্ষক এবং আপনিই সকল বিষয়ে সাক্ষী।” [৪৪] (আল-মায়িদাহ: ১১৭)
বুখারী ও মুসলিমে তার থেকে মারফূ হিসেবে বর্ণিত, “সকল মানব শিশুরই ফিতরাত (ইসলাম) -এর উপর জন্মগ্রহণ করে। তারপর তার পিতা ও মাতা তাকে ইয়াহূদী বা খৃস্টান বা অগ্নি উপাসক বানায়। যেমন পশু পূর্ণ বাচ্চার জন্ম দেয়। তোমরা কি তার মধ্যে কোনো (কানকাটা) ত্রুটি দেখতে পাও? যতক্ষণ না তোমরা (তার কান কেটে) তাকে ত্রুটিযুক্ত করে ফেল।” [৪৫] অতঃপর আবূ হুরায়রা তিলাওয়াত করলেন: “আল্লাহর ফিতরাত, যার উপরে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।” [৪৬] [আর-রূম : ৩০] মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি
হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “মানুষেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতো, আর আমি তাকে অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম; এই ভয়ে যেন তা আমাকে পেয়ে না বসে। আর তাই আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা অকল্যাণ ও জাহেলিয়াতের মধ্যে ছিলাম। এরপর আল্লাহ তা‘আলা আমাদের কাছে এই কল্যাণকে নিয়ে এসেছেন। আর তাই এই কল্যাণের পরে কোন অকল্যাণ আছে কিনা? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তখন আমি বললাম: ঐ অকল্যাণের পরে কোন কল্যাণ আছে কিনা? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তবে তার মধ্যে ধুম্রজাল মিশ্রিত থাকবে। আমি বললাম: সেই ধুম্রজাল কী? তিনি বললেন: এমন একটি সম্প্রদায় যারা আমার সুন্নাতকে ছেড়ে অন্য সুন্নাতকে গ্রহণ করবে এবং আমার পথ ছাড়া অন্য পথে চলবে, তাদের মধ্যে তুমি যেমন ভালো কিছু পাবে অনুরূপ মন্দ কিছুও পাবে। আমি বললাম: উক্ত কল্যাণের পরে আর কোন অকল্যাণ আছে কি? তিনি বললেন: হ্যাঁ, এমন একটি অন্ধ ফিতনা এবং জাহান্নামের দরজাসমূহের দিকে আহ্বানকারী সম্প্রদায়, যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তারা সেখানে (জাহান্নামে) পৌঁছে যাবে। আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! তাদের বৈশিষ্ট্য আমাদেরকে বলে দিন। তিনি বললেন: তারা এমন এক সম্প্রদায়, যারা আমাদের চামড়ারই হবে এবং আমাদের ভাষাতেই কথা বলবে। আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে কি আদেশ করবেন, যদি আমি ঐ যামানা পেয়ে যাই? তিনি বললেন: মুসলিমদের একক জামা‘আতকে আঁকড়ে ধরবে এবং তাদের ইমামকেও। আমি বললাম: যদি তাদের কোনো জামা‘আত অথবা ইমাম না থাকে? তিনি বললেন: তাহলে উক্ত ছোট ছোট সকল দল-উপদলকে তুমি ছুড়ে ফেলে দিবে। যদিও তোমাকে গাছের শিকড় কামড়ে ধরে থাকতে হয়, আর তুমি ঐ অবস্থাতেই থাকবে, যতক্ষণ না তোমার কাছে মৃত্যু এসে যায়।” [৪৭] বুখারী ও মুসলিম এটিকে বর্ণনা করেছেন আর মুসলিম আরও বৃদ্ধি করেছেন: “তারপরে কী হবে? তিনি বললেন: দাজ্জাল বের হবে, তার সাথে থাকবে একটি নদী এবং আগুন। যে ব্যক্তি তার আগুনে পতিত হবে, তার জন্য পুরস্কার নির্ধারিত হয়ে যাবে। আমি বললাম: তারপরে কী হবে? তিনি বললেন: কিয়ামত কায়েম হবে।” [৪৮] আবুল আলিয়া বলেন: তোমরা ইসলাম শিক্ষা করতে থাকো। যখন তোমরা তা শিক্ষা করবে, তখন তার থেকে কখনো মুখ ফিরিয়ে নেবে না। আর তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে সিরাতুল মুস্তাকিম আঁকড়ে ধরা; কেননা সেটাই হচ্ছে ইসলাম। এবং এই সিরাত (পথ) থেকে তোমরা ডানে-বাঁয়ে কখনো নড়াচড়া করো না। আর তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে: তোমাদের নবীর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা, আর এই সমস্ত প্রবৃত্তির অনুসরণকে এড়িয়ে চলা। আবুল আলিয়ার কথা শেষ হল. .।
আবুল আলিয়ার এই কথার মধ্যে চিন্তা করো যে, কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি তাঁর যামানা সম্পর্কে কতটা অবগত ছিলেন যে, সেই যুগেই এমন প্রবৃত্তি থেকে সতর্ক করছেন, যে কেউ তার অনুসরণ করবে সে ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। আরো চিন্তা কর সুন্নাহ দ্বারা ইসলামের ব্যাখ্যা করার ভেতর এবং বিশিষ্ট তাবিঈন এবং তাদের আলেমগণের কিতাব ও সুন্নাহ থেকে বের হয়ে যাওয়ার তাঁর ভয়ের ওপর, যা তোমার কাছে আল্লাহ তা‘আলার এই বাণীর অর্থ স্পষ্ট করবে: “যখন তার রব তাকে বলেছিল তুমি আত্মসমর্পন করো।” [৪৯] (আল-বাকারাহ: ১৩১)। এবং আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আর ইবরাহীম ও ইয়া’কূব তাদের পূত্রদেরকে এরই নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘হে পুত্রগণ ! আল্লাহ্ই তোমাদের জন্য এ দীনকে মনোনীত করেছেন। কাজেই আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) না হয়ে তোমরা মারা যেও না।” [৫০] (আল-বাকারা, ১৩২। আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আর যে নিজেকে নির্বোধ করেছে সে ছাড়া ইবরাহীমের মিল্লাত হতে আর কে বিমুখ হবে !” [৫১] [আল-বাকারাহ : ১৩০] আর এ সকল বড় বড় মূলনীতি, যা কি না অন্যান্য মূলনীতিসমূহের মূল, তা হতে মানুষেরা গাফিলতির মধ্যে রয়েছে। আর এ গুলো জানার মাধ্যমেই এসব হাদীস ও এ জাতীয় অন্যান্য হাদীসের অর্থ সুস্পষ্ট হবে। আর যে মানুষ এগুলো বা অনুরূপ কিছু পড়ে, আর সে নিশ্চিত ধারণা করে যে, এগুলো তাকে স্পর্শ করবে না। আর সে তা এমন কওমের জন্য প্রযোজ্য মনে করে, যারা আল্লাহর কৌশল থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করেছে। অথচ আল্লাহর কৌশল থেকে ক্ষতিগ্রস্তরা ছাড়া কেউই নিরাপদ বোধ করে না।
আর ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা একটি সরল রেখা টানলেন এবং বললেন: এটা আল্লাহর পথ। এরপর তিনি এ রেখার ডানে ও বামে আরো অনেকগুলি রেখা টানলেন আর বললেন: এগুলো হচ্ছে এমন পথ, যার প্রতিটি পথের উপর শয়তান রয়েছে। আর তারা উক্ত পথের দিকে আহবান করতে থাকে, এরপরে তিনি পড়লেন: “আর এ পথই আমার সরল পথ। কাজেই তোমরা এর অনুসরণ কর এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে।” [৫২] [আল-আন‘আম : ১৫৩] এটি আহমাদ ও নাসাঈ বর্ণনা করেছেন।
আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “অতএব তোমাদের পূর্বের প্রজন্মসমুহের মধ্যে এমন প্রজ্ঞাবান কেন হয়নি, যারা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি থেকে নিষেধ করত? অল্প সংখ্যক ছাড়া, যাদেরকে আমরা তাদের মধ্যে নাজাত দিয়েছিলাম।” [৫৩] [হূদ: আয়াত: ১১৬]। আবূ হুরায়রাহ থেকে মারফূ হিসেবে বর্ণিত, “ইসলাম অপরিচিত অবস্থাতে শুরু হয়েছে, আর অচিরেই তা অপরিচিত হয়ে যাবে, যেভাবে তা শুরু হয়েছিল। সুতরাং অপরিচিতদের জন্য সুসংবাদ।” [৫৪] হাদীসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন। আর আহমাদ বর্ণনা করেছেন ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহর ‘আনহুরর সূত্রে, তাতে বর্ণিত হয়েছে: “অপরিচিত কারা? তিনি বললেন: বিভিন্ন গোত্র হতে আগত এমন ব্যক্তিরা, মানুষেরা সুন্নাহকে যখন ধংস করে ফেলবে, তখন তারা ইসলাহের কাজ করবে।” [৫৫]
তিরমিযী কাছীর ইবন আব্দুল্লাহ হতে, তিনি তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে: “অপরিচিতদের জন্য সুসংবাদ, যারা সুন্নাতকে মানুষ ধংস করে ফেলার পরে ইসলাহের কাজে নিয়োজিত থাকবে।” [৫৬]
এবং আবু উমাইয়াহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: আমি আবূ ছা‘লাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এই আয়াতের ব্যাখ্যাতে আপনি কী বলবেন: “হে ঈমানদারগণ, তোমরা তোমাদের নিজেরদেরকে রক্ষা করো। যদি তোমরা হিদায়াতের ওপর থাকো তবে যে গোমরাহ হলো সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।” [৫৭] (আল-মায়িদাহ: ১০৫) তিনি বললেন: আল্লাহর কসম! অবশ্যই তুমি এ ব্যাপারে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকেই জিজ্ঞাসা করেছ, “এ আয়াত সম্পর্কে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেছেন: তোমরা একে অপরকে সঠিক কাজের আদেশ দাও এবং একে অপরকে অন্যায় থেকে বিরত রাখো। এমনকি যখন দেখবে যে, কৃপণতার আনুগত্য করা হচ্ছে, কুপ্রবৃত্তিকে অনুসরণ করা হচ্ছে ও পার্থিব জীবনকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে এবং প্রত্যেকে নিজের মতকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। তখন তুমি নিজের ব্যাপারে যত্নবান হও এবং জনসাধারণকে পরিত্যাগ করো। কেননা তোমাদের সামনে অচিরেই এমন কঠিন সময় আসবে, যখন ধৈর্য ধারণকারী জ্বলন্ত আগুনকে মুষ্টিতে ধারণকারীর ন্যায় হবে। এ সময় (সুন্নাহ মোতাবেক) কাজ সম্পদানকারীকে তোমাদের পঞ্চাশজনের সমান পুরস্কার দেওয়া হবে। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম: আমাদের নাকি তাদের? তিনি বললেন: বরং তোমাদের মধ্যকার (পঞ্চাশজনের সমান সওয়াব দেয়া হবে)।” [৫৮] এটি আবূ দাঊদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।
তার (উক্ত হাদীসের) অর্থ ইবন ‘উমারের হাদীস হতে ইবন ওয়াদ্দাহ বর্ণনা করেছেন, যার শব্দ নিম্নরূপ: “নিশ্চয় তোমাদের পরে এমন সময় আসবে, যখন স্বীয় দীনকে আঁকড়ে ধরে থাকা ধৈর্যশীল ব্যক্তির উদাহরণ এমন হবে, যার উপরে আজকে তোমরা অবস্থান করছো। তার জন্য রয়েছে তোমাদের পঞ্চাশজনের সমপরিমাণ পুরষ্কার।” [৫৯] এরপরে তিনি বলেন: আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন মুহাম্মাদ ইবন সা‘ঈদ, তিনি বলেন: আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন আসাদ, (তিনি বলেন) সুফিয়ান ইবন উয়ায়না বলেছেন বাসরী হতে, তিনি হাসান বাসরীর ভাই সাঈদ হতে, তিনি মারফূ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন: “নিশ্চয়ই তোমরা আজকে তোমাদের রবের পক্ষ হতে এক সুস্পষ্ট প্রমাণের উপরে রয়েছো। তোমরা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করছো আর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করছো। আর তোমাদের মধ্যে দুটি বিপদ এখনো আপতিত হয়নি: অজ্ঞতার বিপদ এবং দুনিয়াকে ভালোবাসার বিপদ। তবে অচিরেই তোমরা তা থেকে পরিবর্তন হয়ে যাবে। সেদিন কিতাব ও সুন্নাহকে আঁকড়ে থাকা ব্যক্তির জন্য পঞ্চাশ জনের সমান পুরষ্কার রয়েছে। বলা হল: তাদের মধ্য হতে? তিনি বললেন: বরং তোমাদের মধ্য হতে।” মা‘আফিরীর সনদে এটি আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “অপরিচিতদের জন্য সুসংবাদ, যারা কিতাবকে যখন পরিত্যাগ করা হবে, তখন তারা আঁকড়ে ধরবে, আর যখন সুন্নাহ নিভে যাবে, তখন সুন্নাহ মোতাবেক আমল করবে।” [৬০]
‘ইরবাদ ইবন সারিয়াহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাদেরকে অতি উত্তম ভাষায় উপদেশ দিলেন। আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটি আপনার বিদায়ী ভাষণ। সুতরাং আপনি আমাদেরকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন: “আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহকে ভয় করার ব্যাপারে, শ্রবণ করা ও আনুগত্য করার ব্যাপারে, যদিও তোমাদের উপরে একজন ক্রীতদাসকে আমীর বানানো হয়। আমার পরে তোমাদের মধ্য হতে যে বেঁচে থাকবে, সে অচিরেই অসংখ্য মতানৈক্য দেখতে পাবে। তখন তোমাদের উপরে আবশ্যক হবে আমার সুন্নাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত পালন করা। আর তোমরা তা দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে ধরবে। অবশ্যই তোমরা নতুন সৃষ্ট (বিদ‘আতী) কাজ পরিহার করবে। কারণ প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।” [৬১] তিরমিযী বলেছেন: হাদীসটি হাসান সহীহ।
হুযাইফা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: প্রতিটি এমন ইবাদাত, যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ ইবাদাত মনে করেননি, তোমরা উক্ত ইবাদাত করবে না। কেননা প্রথম যুগের মানুষেরা পরবর্তীদের জন্য কোন কথাই বাদ দেননি। সুতরাং হে কারী সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর তোমাদের পূর্ববর্তীদের পথকেই গ্রহণ করো। আবু দাঊদ এটি বর্ণনা করেছেন। দারিমী বলেছেন: আমাদেরকে হাকাম ইবনুল মুবারাক সংবাদ দিয়েছেন, তিনি বলেছেন: আমর ইবন ইয়াহইয়া আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন, তিনি বলেছেন: আমি আমার পিতাকে তার পিতা হতে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি, একদা আমরা আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের দরজার কাছে বসেছিলাম ফজরের সালাতের পূর্বে, যখন তিনি বের হবেন আমরাও তার সাথে বের হব মসজিদের দিকে। এমন সময় আবু মুসা আল-আশআরী আমাদের কাছে আসলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন: আবু আব্দুর রহমান কি বের হয়েছেন? আমরা বললাম: না, তখন তিনিও আমাদের সাথে বসলেন। যখন তিনি বের হলেন, তখন বললেন: হে আবু আব্দুর রহমান, নিশ্চয় আমি মসজিদে এমন একটি কাজ দেখেছি, যা আমি অপছন্দ করেছি, তবে আল-হামদুলিল্লাহ আমি তাতে ভালো ছাড়া খারাপ কিছু দেখিনি। তখন তিনি বললেন: সেটা কী? তখন তিনি (আবু মূসা আশ‘আরী) বললেন: আপনি মসজিদে গেলে তাদেরকে দেখতে পাবেন। তারপর তিনি বললেন: আমি মসজিদের মধ্যে দেখেছি একটি সম্প্রদায়কে যারা গোল হয়ে বসে সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের প্রত্যেকটি চক্রের মধ্যে একজন লোক রয়েছে এবং তাদের হাতে কিছু পাথর রয়েছে, আর সে বলছে: তোমরা সকলে ১০০ বার আল্লাহু আকবার বলো, তখন তারা আল্লাহু আকবার বলছে। তখন সে আবার বলল: তোমরা ১০০ বার লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ বলো, তখন তারা ১০০ বার লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ বলল। তারপর সে বলল: তোমরা ১০০ বার সুবাহানাল্লাহ বলো, তখন তারা ১০০ বার সুবহানাল্লাহ বলল। তিনি বললেন: তুমি তাদেরকে কী বলেছো? তিনি জবাব দিলেন: আমি তাদেরকে কিছুই বলিনি; কারণ আমি আপনার আদেশের অপেক্ষায় ছিলাম। তিনি বললেন: তুমি কি তাদেরকে এই আদেশ করনি যে, তারা যেন তাদের মন্দ কাজগুলিকে গুনে রাখে, আর তাদেরকে নিশ্চয়তা দাওনি যে, উক্ত কাজ তাদের ভালো কাজকে ধ্বংস করবে না? তারপরে কিছু সময় অতিবাহিত হল আর তিনি উক্ত মজলিসগুলোর কাছে এসে উপস্থিত হলেন, আর বললেন: এটা কী? তারা বলল:পাথর, আমরা এটার মাধ্যমে তাকবীর, তাহলীল এবং তাসবীহ গণনা করে থাকি। তিনি বললেন: তোমরা বরং তোমাদের মন্দ কাজগুলোকে গুনে রাখ, আর আমি এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিচ্ছি যে, তোমাদের ভালো কাজগুলো থেকে কিছুই নষ্ট করা হবে না। হে উম্মাতে মুহাম্মদ, তোমাদের উপরে আফসোস, তোমাদেরকে কোন জিনিস এত দ্রুত ধ্বংস করে দিল? তোমাদের নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে বেঁচে রয়েছেন। এটা হচ্ছে তার কাপড়, যা এখনো ভিজে যায়নি। এবং তার পানপাত্রগুলোও এখনো ভেঙে যায়নি। ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা কী এমন এক মিল্লাতের উপর রয়েছো যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিল্লাত হতে অধিকতর হিদায়াতপ্রাপ্ত নাকি তোমরা গোমরাহীর পথকে উম্মুক্ত করছো? তখন তারা বলল: হে আবূ আব্দুর রহমান! আমরা এটার দ্বারা ভালো ছাড়া অন্য কিছু আশা করিনি। তিনি বললেন: কত ভালো কাজের আশা পোষণকারী ভালো স্পর্শ করতে পারেনি। নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন যে, একটি সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে, যারা কুরআন তেলাওয়াত করবে; কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীকে অতিক্রম করবে না। আল্লাহর কসম! তাদের অধিকাংশ লোকই তোমাদের মধ্য থেকেই মনে হয়। তারপর আবূ সালামাহ বলেন: আমরা তাদের (প্রায়) সকলকেই দেখেছি নাহরাওয়ানের দিনে খারেজীদের সঙ্গে মিলে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে।