نواقض الإسلام
এমন কিছু আমল আছে, যার কোনো একটিও যদি কোনো মুসলিম সম্পাদন করে তবে সে দীন থেকে বের হয়ে গেছে বলে বিবেচিত হবে। ফলে তার সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে যাবে এবং চিরস্থায়ীভাবে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করবে। সেসব গুনাহ মহান আল্লাহ তাওবা ব্যতীত ক্ষমা করেন না। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে আমলগুলো সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হয়েছে।
এমন কিছু কাজ আছে, তার কোনো একটিও যদি কোনো মুসলিম সম্পাদন করে তবে সে ইসলাম গ্রহণ করার পর দীন থেকে বের হয়ে গেছে বলে বিবেচিত হবে। ফলে তার সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে যাবে এবং চিরস্থায়ীভাবে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করবে। মহান আল্লাহ তাওবা ব্যতীত তাকে ক্ষমা করবেন না। নিম্নে সেসব কাজের কিছু বর্ণনা দেওয়া হলো:
﴿وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦﴾ [يونس: ١٠٦]
“আর তাঁকে ছেড়ে এমন কাউকে ডেকো না, যে না তোমার উপকার করতে পারে, না কোনো ক্ষতি করতে পারে। আর যদি তা কর, তবে অবশ্যই তুমি যালিমদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৬]
«منْ مَاتَ وَهُوَ يَدْعُو مِنْ دُوْنِ اللهِ نِدًّا دخَلَ النَّارَ»
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার কোনো সমকক্ষকে ডাকা অবস্থায় মারা যাবে তাহলে সে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করবে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪৯৭)
﴿وَإِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَحۡدَهُ ٱشۡمَأَزَّتۡ قُلُوبُ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِٱلۡأٓخِرَةِۖ وَإِذَا ذُكِرَ ٱلَّذِينَ مِن دُونِهِۦٓ إِذَا هُمۡ يَسۡتَبۡشِرُونَ ٤٥﴾ [الزمر: ٤٥]
“যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, এক আল্লাহর কথা বলা হলে তাদের অন্তর সঙ্কুচিত হয়ে যায়। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যগুলোর কথা বলা হলে তখনই তারা আনন্দে উৎফুল্ল হয়।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪৫]
এ আয়াত সেসব লোকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যারা একমাত্র আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনাকারীদের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হয়। তাদেরকে তারা (তথাকথিত) ওহাবী বলে সম্বোধন করে।
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ ﴾ [الكوثر: ٢]
“তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও জবাই কর। [সূরা আল-কাওসার, আয়াত: ২]
«لَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নামে জবাই করে, আল্লাহ তার উপর লা‘নত করেন।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৮)
﴿رَبِّ إِنِّي نَذَرۡتُ لَكَ مَا فِي بَطۡنِي مُحَرَّرٗا﴾ [ال عمران: ٣٥]
“হে আমার রব, আমার গর্ভে যা আছে নিশ্চয় আমি তা খাসভাবে আপনার জন্য মানত করলাম।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৫]
﴿وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ﴾ [الحج: ٢٩]
“আর তারা যেন তওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ২৯]
﴿فَعَلَيۡهِ تَوَكَّلُوٓاْ إِن كُنتُم مُّسۡلِمِينَ ٨٤﴾ [يونس: ٨٤]
“সুতরাং একমাত্র তাঁরই ওপর তায়াক্কুল কর, যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাক। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৮৪]
﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَرِهُواْ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأَحۡبَطَ أَعۡمَٰلَهُمۡ ٩﴾ [محمد: ٩]
“তা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। অতএব, তিনি তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করে দিয়েছেন।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৯]
﴿قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ,لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ﴾ [التوبة: ٦٥، ٦٦]
“বল, আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে? তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফুরী করেছ।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬৫-৬৬]
﴿لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِ﴾ [البقرة: ٢٨٥]
“আমরা তাঁর রাসূলদের কারো মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫]
﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ٤٤﴾ [المائدة: ٤٤]
“আর যারা আল্লাহ প্রদত্ত আইনে বিচার করে না তারাই কাফের।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৪]
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [النساء: ٦٥]
“অতএব, তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে। তারপর তুমি যে ফয়সালা দিবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]
﴿أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْ شَرَعُواْ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمۡ يَأۡذَنۢ بِهِ ٱللَّهُۚ﴾ [الشورى: ٢١]
“তাদের কি এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য দীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেন নি?” [সূরা আল-ক্বালাম, আয়াত: ৪১]
﴿وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلۡبَيۡعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰاْۚ ﴾ [البقرة: ٢٧٥]
“আর আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৭৫]
﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ال عمران: ٨٥]
“আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]
﴿وَمَن يَرۡتَدِدۡ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَيَمُتۡ وَهُوَ كَافِرٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢١٧ ﴾ [البقرة: ٢١٧]
“আর যে তোমাদের মধ্য থেকে তাঁর দীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মারা যাবে, বস্তুত এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২১৭]
অনুরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্বন্ধে বলেন,
«مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فاقْتُلُوهُ»
“যে নিজ দীনকে পরিত্যাগ করবে, তাকে হত্যা করে ফেল।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০১৭, ৬৯২২)
﴿لَّا يَتَّخِذِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلۡكَٰفِرِينَ أَوۡلِيَآءَ مِن دُونِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَۖ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ فَلَيۡسَ مِنَ ٱللَّهِ فِي شَيۡءٍ إِلَّآ أَن تَتَّقُواْ مِنۡهُمۡ تُقَىٰةٗۗ﴾ [ال عمران: ٢٨]
“মুমিনরা যেন মুমিনদের ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধু না বানায়। আর যে কেউ এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে যদি তাদের পক্ষ থেকে তোমাদের কোনো ভয়ের আশঙ্কা থাকে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের ব্যাপারে সতর্ক করছেন এবং আল্লাহর নিকটই প্রত্যাবর্তন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২৮]
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ وَٱلۡمُشۡرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمۡ شَرُّ ٱلۡبَرِيَّةِ ٦﴾ [البينة: ٦]
“নিশ্চয় কিতাবীদের মাধ্যে যারা কুফুরী করেছে ও মুশরিকরা, জাহান্নামের আগুনে থাকবে স্থায়ীভাবে। তারাই হলো নিকৃষ্ট সৃষ্টি।” [সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত: ৬]
২৩। সূফী বা পীর নামে খ্যাত কিছু লোক আছে যারা অদ্বৈতবাদের কথা বলে। তারা বলে জগতে আল্লাহ ছাড়া কিছুই নেই। তাদের প্রসিদ্ধ একজন এমন কথাও বলে, কুকুর শূকর সবই আমাদের মা‘বুদ। সে আরও বলে, আল্লাহতো গির্জার পাদ্রি ছাড়া কেউ নন! এদের নেতা হুসাইন ইবন মনসুর হাল্লাজ বলত, ‘আমি-ই তিনি, তিনি-ই আমি’। ফলে আলেমরা তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তাকে হত্যা করা হয়েছিল। এ ধরনের আকীদা পোষণ করাও ইসলাম থেকে বিচ্যুতির কারণ।
﴿لَّهُۥ مَقَالِيدُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۗ﴾ [الزمر: ٦٣]
“তাঁর হাতেই রয়েছে আসমান ও যমীন পরিচালনার ক্ষমতা।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৩]
﴿لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ﴾ [الزمر: ٦٥]
“যদি তুমি শির্ক কর তবে তোমার আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে যাবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে এ দো‘আ শিখিয়েছেন,
اللّهمَّ انّا نَعُوذُبِكَ مِنْ اَنْ نُشْرِكَ بِكَ شيئاً نَعْلَمُهُ وَنَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لا نَعْلَمُ
সমাপ্ত