কবীরা গুনাহ ()

শামছুদ্দীন আয-যাহাবী

 

কবীরা গুনাহ : ইমাম শামসুদ্দীন আয যাহবী সংকলিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ মুখতাসার আল কাবায়ের, যা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে নাম দেয়া হয়েছে কবীরা গুনাহ। এ বইটি মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। মানুষ এ বইয়ের সাহায্যো প্রমাণসহ জানতে পারে আল্লাহ কি কি বিষয় নিষিদ্ধ করেছেন। বড় বড় গুনাহ চিহ্নিত করা ও সেগুলো থেকে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে এ বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক।

|

 কবীরা গুনাহ

مختصر كتاب الكبائر

 ভূমিকা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। আমরা শুধু তাঁরই প্রশংসা করি এবং তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি ও তাঁর নিকট ক্ষমা চাই। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দিবেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারবে না। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না এবং আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢[ال عمران: ١٠٢] 

“হে ঈামনদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাকে ভয় কর আর সাবধান, মুসলিম না হয়ে মারা যেও না।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২]

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسٖ وَٰحِدَةٖ وَخَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَبَثَّ مِنۡهُمَا ٗا كَثِيرٗا وَنِسَآءٗۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَٱلۡأَرۡحَامَۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَيۡكُمۡ رَقِيبٗا ١﴾ [النساء: ١]

 “হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী, আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচনা করে থাক এবং আত্মীয়- জ্ঞাতীদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন।” [সূরা আন-­নিসা, আয়াত: ১]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ٧٠ يُصۡلِحۡ لَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۗ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا ٧١﴾ [الاحزاب: ٧٠،  ٧١]

“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক সত্য কথা বল, তিনি তোমাদের আমল সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৭০-৭১]

নিশ্চয় সর্বোত্তম কথা হলো আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আর্দশ হলো রাসূলের আদর্শ। আর সর্ব নিকৃষ্ট বিষয় হলো মনগড়া ও নব প্রবর্তিত বিষয় তথা বিদ‘আত, আর প্রতিটি বিদ‘আতই হলো গোমরাহী। আর প্রতিটি গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِن تَجۡتَنِبُواْ كَبَآئِرَ مَا تُنۡهَوۡنَ عَنۡهُ نُكَفِّرۡ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ وَنُدۡخِلۡكُم مُّدۡخَلٗا كَرِيمٗا ٣١﴾ [النساء: ٣١] 

“যে সকল বড় গুনাহ সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সে সব বড় গুনাহ থেকে বেচে থাকতে পার, তবে আমরা তোমাদের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দিব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩১]

উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যারা কবীরা গুনাহ থেকে বেচে থাকবে তাদেরকে দয়া ও অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। কারণ, সগীরা গুনাহ বিভিন্ন নেক আমল যেমন, সালাত, সাওম, জুমু‘আ, রমযান ইত্যাদির মাধ্যমে মাফ হয়ে যাবে।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة ورمضان إلي رمضان مكفرات لما بينهن إذا اجتنبت الكبائر».

“পাচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু‘আ থেকে অন্য জুমু‘আ এবং এক রমযান থেকে অন্য রমযান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করিয়ে দেয়, যদি বড় গুনাহ থেকে বেচে থাকা যায়।”[1]

উল্লিখিত হাদীসের দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কবীরা গুনাহ থেকে বেচে থাকা অতীব জরুরি। যদিও জ্ঞানীরা বলেন, তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে কোনো কবীরা গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না। আর একই গুনাহ বার বার করলে তা সগীরা থাকে না।

অতএব, কবীরা গুনাহ থেকে বেচে থাকতে হলে তা সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।

হুযাইফা ইবনুল ইয়ামন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালো ভালো বিষয়গুলো জিজ্ঞাসা করত এবং আমি খারাপ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এজন্য যে, যাতে আমাকে খারাপ বিষয়গুলো স্পর্শ করতে না পারে। কবি বলেন,

عرفت الشر لا للشر لكن لتوقيه

ومن لم يعرف الخير من الشر يقع فيه

“আমি খারাপ সম্পর্কে জেনেছি তা করার উদ্দেশে নয়, বরং খারাপি থেকে রক্ষা পেতে। কারণ, যে লোক মন্দ সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখে না সে তাতে পতিত হয়।”

বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ মনে করে যে সব কবীরা গুনাহ হাফেয ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহাবী তার প্রসিদ্ধ কিতাব “আল-কাবায়ের” এ উল্লেখ করেছেন সেগুলোসহ আরো কিছু কবীরা গুনাহের আলোচনা করা হয়েছে।

এসব কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জানা থাকলে হয়ত এ গুনাহ থেকে বেচে থাকাও সম্ভব হবে।

এখানে প্রতিটি কবীরা গুনাহের আলোচনার সাথে একটি বা দু’টি করে কুরআন ও হাদীসের বিশুদ্ধ প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুসারে কোনো কোনো স্থানে বিষয়টির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আল্লাহর নিকটই আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি।

আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ এবং মহৎ গুণাবলীর মাধ্যমে র্প্রাথনা করছি যে, এই রিসালার মধ্যে যে বিষয়গুলো রয়েছে তার দ্বারা আমাকে এবং সমস্ত মুসলিমকে প্রতিদান দিবেন ঐ দিন যে দিন কোনো ধন সম্পদ ও সন্তান কারো উপকারে আসবে না। একমাত্র ঐ ব্যক্তি উপকৃত হবে যে আল্লাহর নিকট সরল মন নিয়ে উপস্থিত হবেন। আর এই আমল সহ অন্য সমস্ত আমল একমাত্র আল্লাহর জন্য। তিনি তার সন্তুষ্টি অর্জন ও কুরআন, হাদীসের অনুসৃত পথ নির্দেশনা অনুসলরণ করার তাওফীক দিন।

وآخر دعوانا ان الحمد لله رب العالمين.


 কবীরা গুনাহ কী?

অনেকেই মনে করেন, কবীরা গুনাহ মাত্র সাতটি যার বর্ণনা একটি হাদীসে এসেছে। মূলতঃ কথাটি ঠিক নয়। কারণ, হাদীসে বলা হয়েছে, উল্লিখিত সাতটি গুনাহ কবীরা গুনাহের অর্ন্তভুক্ত। এ কথা উল্লেখ করা হয় নি যে, কেবল এ সাতটি গুনাহই কবীরা গুনাহ, আর কোনো কবীরা গুনাহ নেই।

একারণেই আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, কবীরা গুনাহ সাত হতে সত্তর পর্যন্ত (তাবারী বিশুদ্ধ সনদে)

ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহাবী বলেন, উক্ত হাদীসে কবীরা গুনাহের নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা করা হয় নি।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা রহ. বলেন, কবীরা গুনাহ হলো: যে সব গুনাহের কারণে দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক শাস্তির বিধান আছে এবং আখিরাতে শাস্তির ধমক দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যে সব গুনাহের কারণে কুরআন ও হাদীসে ঈমান চলে যাওয়ার হুমকি বা অভিশাপ ইত্যাদি এসেছে তাকেও কবীরা গুনাহ বলে।

উলামায়ে কিরাম বলেন, তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে কোনো কবীরা গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না আবার একই সগীরা গুনাহ বার বার কারার কারণে তা সগীরা (ছোট) গুনাহ থাকে না।

উলামায়ে কিরাম কবীরা গুনাহের সংখ্যা সত্তরটির অধিক উল্লেখ করেছেন। যা নিচে তুলে ধরা হলো:

 ১ নং কবীরা গুনাহ

 الشرك بالله ‘আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা’

শির্ক দুই প্রকার:

১. শির্কে আকবার, আল্লাহর সাথে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো কিছুর ইবাদত করা। অথবা যে কোনো প্রকারের ইবাদতকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর জন্য নিবেদন করা যেমন, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে প্রাণী যবেহ করা ইত্যাদি।

যদি কোনো ব্যক্তি ইবাদতের কিছু অংশে গাইরুল্লাহকে শরীক করার মুহূর্তে আল্লাহর ইবাদত করে তবুও তা শির্ক।

দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ﴾ [النساء: ٤٨]

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শির্ক ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]

২. শির্কে আসগার বা ছোট শির্ক: রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে আমল করা ইত্যাদি।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَوَيۡلٞ لِّلۡمُصَلِّينَ ٤ ٱلَّذِينَ هُمۡ عَن صَلَاتِهِمۡ سَاهُونَ ٥ ٱلَّذِينَ هُمۡ يُرَآءُونَ ٦﴾ [الماعون: ٤،  ٦]

“অতএব, দুর্ভোগ সে সব মুসল্লীর যারা তাদের সালাত সম্পর্কে বে-খবর যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে।” [সূরা আল-মা‘উন, আয়াত: ৪-৬]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

«أٍنا أغنى الشركاء عن الشرك من عمل عملا اشرك معي فيه غيري تركته وشركه».

“আমি অংশিদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোনো কাজ করে আর ঐ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে, আমি ঐ ব্যক্তিকে তার শির্কে ছেড়ে দেই।”[2]

 ২ নং কবীরা গুনাহ

 ‘মানুষ হত্যা করা’ قتل النفس

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ إِذَآ أَنفَقُواْ لَمۡ يُسۡرِفُواْ وَلَمۡ يَقۡتُرُواْ وَكَانَ بَيۡنَ ذَٰلِكَ قَوَامٗا ٦٧ وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا ٧٠﴾ [الفرقان: ٦٦،  ٦٩]

“এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যারা এসব কাজ করে তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামত দিবসে তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং লাঞ্চিত অবস্থায় সেথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু তারা নয়, যারা তাওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৬-৭০]

উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আর যারা হত্যা করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং শরী‘আত অনুমোদিত কারণ ছাড়া মানুষ হত্যা করা কবীরা গুনাহ।

 ৩ নং কবীরা গুনাহ

 السحر ‘যাদু’

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَٰكِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ ٱلسِّحۡرَ﴾ [البقرة: ١٠٢]

“কিন্তু শয়তানেরা কুফুরী করে মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১০২]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اجتنبوا السبع الموبقات الشرك بالله والسحر وقتل النفس التي حرم الله إلا بالحق وأكل الرباء وأكل مال اليتيم والتولي يوم الزحف وقذف المحصنات المؤمنات الغافلات».

“তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেচে থাকবে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! ঐ ধ্বংসাত্মাক বিষয়গুলো কী? তিনি জবাবে বলেন, (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা, (২) যাদু করা, (৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ তা‘আলা হারাম করে দিয়েছেন, (৪) সুদ খাওয়া, (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, (৬) জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা, (৭) সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেওয়া।”[3]

 ৪ নং কবীরা গুনাহ

 ترك الصلاة  বা (সালাত ত্যাগ করা)

আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

﴿فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ أَضَاعُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُواْ ٱلشَّهَوَٰتِۖ فَسَوۡفَ يَلۡقَوۡنَ غَيًّا ٥٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ٦٠﴾ [مريم: ٥٩،  ٦٠]

“তাদের পর আসলো (অপদার্থ) বংশধর। তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসার বশবর্তী হলো। সুতরাং তারা অচিরেই কু-কর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে; কিন্তু তারা নয় যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৯-৬০]

হাদীসে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«بين الرجل وبين الشرك والكفر ةرك الصلاة».

“কোনো মুমিন ব্যক্তি এবং শির্ক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা।”[4]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر».

“আমাদের ও তাদের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত, যে তা পরিত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল।”[5]

 ৫ নং কাবীরা গুনাহ

 منع الزكاة বা যাকাত আদায় না করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا يَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ يَبۡخَلُونَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ هُوَ خَيۡرٗا لَّهُمۖ بَلۡ هُوَ شَرّٞ لَّهُمۡۖ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُواْ بِهِۦ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ وَلِلَّهِ مِيرَٰثُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١٨٠﴾ [ال عمران: ١٨٠]

“আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে। এই কার্পণ্য তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে, বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর হবে। যাতে তারা কার্পণ্য করবে সে সকল ধন সম্পদ কিয়ামতের দিনে তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮০]

 ৬নং কবীরা গুনাহ

إفطار يوم من رمضان بلا عذر

 সঙ্গত কারণ ছাড়া রমযানের সাওম ভঙ্গ করা বা না রাখা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«بني الإسلام على خمس شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله وإقام الصلوة وإيناء الزكاة وحج البيت وصوم رمضان».

“ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (১) এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্যিকার উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, (২) সালাত প্রতিষ্ঠা করা, (৩) যাকাত দেওয়া, (৪) হজ করা, (৫) রামযান মাসের সাওম রাখা।”[6]

 ৭ নং কবীরা গুনাহ

ترك الحج مع القدرة عليه

 সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করা

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾ [ال عمران: ٩٧]

“আর এ ঘরের হজ করা সে সকল মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য যারা সেথায় যাওয়ার সামর্থ্য রাখে। আর যে প্রত্যাখ্যান করবে সে জেনে রাখুক আল্লাহ সারা বিশ্বের কোনো কিছুরই মখোপেক্ষী নয়।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭]

 ৮ নং কবীরা গুনাহ

 عقوق الوالدين ‘মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া’

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الا أنيئكم بأكبر الكبائر الإشراك بالله وعقوق الوالدين وقول الزور».

“আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ কি তা বলে দিব না? আর তা হলো আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা-পিাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।”[7]

 ৯ নং কবীরা গুনাহ

هجر الأقارب وتقطيع الأرحام

 আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং নিকট আত্মীয়দের পরিত্যাগ করা

 আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فَأَصَمَّهُمۡ وَأَعۡمَىٰٓ أَبۡصَٰرَهُمۡ ٢٣﴾ [محمد: ٢٢،  ٢٣] 

“ক্ষমতা লাভের পর সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিহীন করেন।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২২-২৩]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لايدخل الجنة قاطع رحم».

“আত্মীয়তার ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”[8]

 ১০ নং কবীরা গুনাহ

 الزنا ‘ব্যভিচার করা’

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢﴾ [الاسراء: ٣٢]

“তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ ও অতি মন্দ পথ।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩২]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إذا زنى العبد خرج منه الإيمان فكان على رأسه كالظلة فإذا أقلع رجع إليه»

“যখন কোনো মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার থেকে ঈমান বের হয়ে যায়। ঈমান তার মাথার উপর ছায়ার মতো অবস্থান করে যাখন সে বিরত থাকে ঈমান আবার ফিরে আসে।”[9]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«كتب على ابن آدم نصيبه من الزنا مدرك ذلك لا محالة فالعينان زناهما النظر والأذنان زناهما الاستماع واللسان زناهما الكلام واليد زناهما البطش والرجل زناهما الخطى والقلب يهوي ويتمنى ويصدق ذلك الفرج».

“আদম সন্তানের ওপর ব্যভিচারের কিছু অংশ লিপিবদ্ধ হয়েছে সে অবশ্যই তার মধ্যে লিপ্ত হবে। দুই চক্ষুর ব্যভিচার হলো দৃষ্টি এবং তার দুই কানের ব্যভিচার শ্রবণ, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা ও পায়ের ব্যভিচার হলো পদক্ষেপ আর অন্তরে ব্যভিচারের আশা ও ইচ্ছার সঞ্চার হয়, অবশেষে লজ্জাস্থান একে সত্যে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।”[10]

 ১১ নং কবীরা গুনাহ

اللواط وإتيان المرأة في الدبر

 পুং মৈথুন এবং স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করা

 আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلُوطًا إِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهِۦٓ أَتَأۡتُونَ ٱلۡفَٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنۡ أَحَدٖ مِّنَ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٠ إِنَّكُمۡ لَتَأۡتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهۡوَةٗ مِّن دُونِ ٱلنِّسَآءِۚ بَلۡ أَنتُمۡ قَوۡمٞ مُّسۡرِفُونَ ٨١﴾ [الاعراف: ٨٠،  ٨١]

“এবং লূতকেও পাঠিয়েছিলাম, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করে নি। তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের নিকট গমন কর, তোমরা তো সীমালঙ্গনকারী সম্প্রদায়’।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৮০-৮১]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من وجدتموه يعمل عمل قوم لوط فاقتلوا الفاعل والمفعول».

“তোমরা কাউকে লূত সম্প্রদায়ের কাজ (সমকাম) করতে দেখলে যে করে এবং যার সাথে করা হয় উভয়কে হত্যা কর।”[11]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«لا ينظر الله إلى رجل اتى رجلا او إمرآة في الدبر».

“আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, যে কোনো পুরুষের সাথে সমাকামিতায় লিপ্ত হয় অথবা কোনো মহিলার পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করে।”[12]

 ১২ নং কবীরা গুনাহ

 أكل الربا ‘সুদ খাওয়া’

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ٱلَّذِينَ يَأۡكُلُونَ ٱلرِّبَوٰاْ لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ ٱلَّذِي يَتَخَبَّطُهُ ٱلشَّيۡطَٰنُ مِنَ ٱلۡمَسِّۚ﴾ [البقرة: ٢٧٥]

“যারা সুদ খায় তারা দাঁড়াবে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দেয়।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৭৫]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«الربا ثلاثة وسبعون بابا أيسرها مثل أن ينكح الرجل أمه وإن أربى الربي عرض الرجل المسلم».

“সুদের গুনাহের ৭৩টি স্তর রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে হাল্কা হলো নিজ মাতাকে বিবাহ করা। সর্বনিম্ন স্তর হলো কোনো মুসলিমের ইজ্জত সম্ভ্রম হরণ করা।”[13]

 ১৩ নং কবীরা গুনাহ

 أكل مال اليتيم ‘ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করা’

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَأۡكُلُونَ أَمۡوَٰلَ ٱلۡيَتَٰمَىٰ ظُلۡمًا إِنَّمَا يَأۡكُلُونَ فِي بُطُونِهِمۡ نَارٗاۖ وَسَيَصۡلَوۡنَ سَعِيرٗا ١٠﴾ [النساء: ١٠] 

“যারা ইয়াতীমের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্তরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০]

 ১৪ নং কবীরা গুনাহ

الكذب على الله عز وجل وعلى رسوله

 আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের ওপর মিথ্যারোপ করা

 আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ تَرَى ٱلَّذِينَ كَذَبُواْ عَلَى ٱللَّهِ وُجُوهُهُم مُّسۡوَدَّةٌۚ﴾ [الزمر: ٦٠]

“যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে কিয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কালো দেখবেন।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬০]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من كذب علي متعمدا فليتبوأ مقعده من النار».

“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন তার অবস্থান জাহান্নাম করে নেয়।”[14]

হাসান রহ. বলেন, স্মরণ রাখতে হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূল যা হারাম করেন নি তা হারাম করল, আর যা হালাল বলেন নি তা হালাল বলল, সে আল্লাহ ও তার রাসূল এর প্রতি মিথ্যারোপ করল এবং কুফুরী করল।”

 ১৫ নং কবীরা গুনাহ

 الفرار من الزحف  ‘যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা’

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن يُوَلِّهِمۡ يَوۡمَئِذٖ دُبُرَهُۥٓ إِلَّا مُتَحَرِّفٗا لِّقِتَالٍ أَوۡ مُتَحَيِّزًا إِلَىٰ فِئَةٖ فَقَدۡ بَآءَ بِغَضَبٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَمَأۡوَىٰهُ جَهَنَّمُۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ١٦﴾ [الانفال: ١٦] 

“আর যে ব্যক্তি লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছু হটে যাবে সে আল্লাহর গযব সাথে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে অবশ্য যে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তন করতে কিংবা নিজ সৈন্যদের নিকট স্থান নিতে আসে সে ব্যতীত।” [সূরা আল-আনফাল. আয়াত: ১৬]

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্তমান যুগে মুসলিমরা শুধু যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে না, বরং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে কোনো ধরনের অংশই নিতেই চায় না। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।

 ১৬নং কবীরা গুনাহ

غش الإمام للرعية وظلمه لهم

 শাসক ব্যক্তি কর্তৃক প্রজাদেরকে ধোকা দেওয়া এবং তাদের ওপর অত্যাচার করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّمَا ٱلسَّبِيلُ عَلَى ٱلَّذِينَ يَظۡلِمُونَ ٱلنَّاسَ وَيَبۡغُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّۚ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٤٢﴾ [الشورا: ٤٢]

“শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৪২]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من غشنا فليس منا»

“যে আমাদেরকে ধোকা দেয় সে আমাদের অন্তভুক্ত নয়।”[15]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«الظلم ظلماة يوم القيامة».

“অত্যাচার কিয়ামতের দিন চরম অন্ধকার হবে।”[16]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أيما راع غش رعيته فهو في النار».

“যে শাসক তার অধীনস্থদের ধোকা দেয়, তার ঠিকানা জাহান্নাম।”[17]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من ولي من أمنور المسلمين شيئا فاحتجت دون خلتهم وحاجتهم وفقرهم وفاقتهم احجتب الله عنه يوم القيامة دون خلته وفاقته».

“যে ব্যক্তি কোনো বিষয়ে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব পান, অতঃপর সে তাদের অভাব-অনটন ও প্রয়োজনের সময় নিজেকে গোপন করে রাখে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার অভাব দূর করণের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন না।”[18]

বর্তমানে আমাদের অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ, আমরা আমাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করি। আর বাতিলের ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ, নির্বিকার এবং অন্যায়ের কোনো প্রতিকার নেই।

 ১৭ নং কবীরা গুনাহ

 গর্ব, অহংকার, আত্মম্ভরিতা, হট-ধর্মিতা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡتَكۡبِرِينَ﴾ [النحل: ٢٣]

“নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না”[সূরা আন-নাহল, আয়াত: ২৩]

যে ব্যক্তি সত্যের বিরুদ্ধে অহংকার করে তার ঈমান তার কোনো উপকার করতে পারে না। ইবলিসের অবস্থা এর জ্বলন্ত প্রমাণ।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لايدخل الجنة من كان في قلبه مثقال ذرة من كبر، قال رجل إن الرجل يحب أن يكون ثوبه حسنا ونعله حسنة؟ قال صلى الله هليه وسلم: فإن الله جميل يحب الجمال، الكبر بطر الحق وغمط الناس».

“যার অন্তরে এক বিন্দু পরিমান অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জনৈক ব্যক্তি বললেন, কোনো ব্যক্তি চায় তার জামা-কাপড়, জুতা-সেন্ডেল সুন্দর হোম তাহলে এটাও কি অহংকার? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, আল্লাহ নিজে সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। (অর্থাৎ এগুলো অহংকারের অর্ন্তভুক্ত নয়) অহংকার হলো সত্যকে গোপন করা আর মানূষকে অবজ্ঞা করা।”[19]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَلَا تُصَعِّرۡ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمۡشِ فِي ٱلۡأَرۡضِ مَرَحًاۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخۡتَالٖ فَخُورٖ ١٨ ﴾ [لقمان: ١٨] 

“অহংকার বশে তুমি মানুকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে অহংকারের সাথে পদচারণা করো না। কখনো আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” [সূরা লোকমান, আয়াত: ১৮]

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«يقول الله تبارك وتعالى: العظمة إزاري والكبرياء ردائي فمن نازعني فيهما القيته في النار».

“আল্লাহ তা‘আলা বলেন, মহত্ব আমার পরিচয় আর অহংকার আমার চাদর, যে ব্যক্তি এ দু’টি নিয়ে টানা হেচাড়া করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।”[20]

 ১৮ নং কবীরা গুনাহ

 شهادة الزور ‘মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া’

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ﴾ [الفرقان:72]

“তারা মিথ্যা ও বাতিল কাজে যোগদান করে না।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭২]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ألا أنبئكم بأكبر الكبائر؟ الإشراك بالله وعقوق الوالدين وقول الزور».

“আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে অবগত করব না? তা হলো আল্লাহর সাথে শির্ক করা, মাত-পিতার অবাধ্য হওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা।”[21]

 ১৯ নং কবীরা গুনাহ

 شرب الخمر মাদক দ্রব্য সেবন করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠﴾ [المائ‍دة: ٩٠]

“হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নিধারক শরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছু নায়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯০]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«كل مسكر خمر وكل خمر حرام».

“প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্য হোল মদ আর সকল প্রকার মদ হারাম।”[22]

«لعن الله الخمر وشاربها سافيها وبائعها ومتبائعنا وعاصرها ومعتصرها وحاملها والمحمولة إليه وآكل ثمنها».

“আল্লাহ মদ পানকারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, প্রস্তুতকারী, বহনকারী এবং যার জন্য বহন করা হয় সকলকে অভিসম্পাত দিয়েছেন।”[23]

 ২০নং কবীরা গুনাহ

 القمار জুয়া খেলা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠﴾ [المائ‍دة: ٩٠]

“হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নিধারক শরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। অতএব, তোমরা এগুলো থেকে বেচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯০]

 ২১নং কবীরা গুনাহ

قذف المحصنات

 সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ٱلۡغَٰفِلَٰتِ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ لُعِنُواْ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ٢٣﴾ [النور: ٢٣]

“যারা সতী-সাধ্বী ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকাল ও পরকালে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২৩]

কোনো সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়াকে কযফ বলে (قذف) বলে।

 ২২ নং কবীরা গুনাহ

الغلول من الغنيمة

 গনীমতের মাল আত্মসাৎ করা

যে ব্যক্তি গনীমতের মাল পাওনাদেরদের মধ্যে বন্টন পূর্বে কোনো কিছু আত্মসাৎ করে করে, সে কিয়ামতের দিন ঐ সম্পদকে বহন করা অবস্থায় উপস্থিত হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن يَغۡلُلۡ يَأۡتِ بِمَا غَلَّ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۚ﴾ [ال عمران: ١٦١]

“আর যে ব্যক্তি গনীমাতের মালে খেয়ানত করল সে কিয়ামতের দিবসে সেই খেয়ানতকৃত বস্তু বহন করে উপস্থিত হবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬১]

শুধু যুদ্ধলব্ধ সম্পদে নয় এমন সকল সম্পদ যাতে অন্যের অধিকার আছে তা আত্মসাৎ বা তাতে খেয়ানত এ শাস্তির অন্তর্ভুক্ত হবে।

 ২৩ নং কবীরা গুনাহ

 السرقة চুরি করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱلسَّارِقُ وَٱلسَّارِقَةُ فَٱقۡطَعُوٓاْ أَيۡدِيَهُمَا جَزَآءَۢ بِمَا كَسَبَا نَكَٰلٗا مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٣٨﴾ [المائ‍دة: ٣٨]

“যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও এটা তাদের কৃতকর্মের ফল ও আল্লাহর নির্ধারিত আদর্শ দণ্ড, আল্লাহ পরাক্রান্ত জ্ঞানময়।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩৮]

 ২৪ নং কবীরা গুনাহ

 قطع الطريق ডাকাতি করা

অর্থাৎ মানুষের সম্পদ ছিনতাই এবং চুরি করা অথবা বল প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের থেকে নিয়ে নেওয়া বা তাদের পিছু নিয়ে তাদের ইজ্জত সভ্রম বিনষ্ট করা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّمَا جَزَٰٓؤُاْ ٱلَّذِينَ يُحَارِبُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَسۡعَوۡنَ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوٓاْ أَوۡ يُصَلَّبُوٓاْ أَوۡ تُقَطَّعَ أَيۡدِيهِمۡ وَأَرۡجُلُهُم مِّنۡ خِلَٰفٍ أَوۡ يُنفَوۡاْ مِنَ ٱلۡأَرۡضِۚ ذَٰلِكَ لَهُمۡ خِزۡيٞ فِي ٱلدُّنۡيَاۖ وَلَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ ٣٣﴾ [المائ‍دة: ٣٣]

“আর যারা আল্লাহ, তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করেতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে কিংবা দেশান্তর করা হবে। এটা হলো তাদের পাথির্ব লাঞ্ছনা, আর পরকালের তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩৩]

 ২৫ নং কবীরা গুনাহ

  মিথ্যা শপথاليمين الغموس

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من خلف على يمين صبر يقطع بها مال امرئ مسلم وهو فيها فاجر لقي الله وهو عليه غضبان»

“যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে এবং তা দ্বারা কোনো মুসলিমের সম্পদকে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহ তার ওপর ক্রোধান্বিত।”[24]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الكبائر : الإشراك بالله وعقوق الوالدين وقتل النفس واليمين الغموس».

“কবীরা গুনাহ হলো আল্লাহর সাথে শরীক করা । মাতা-পিতার নাফরমানী করা, হত্যা করা ও মিথ্যা শপথ করা”[25]

 ২৬ নং কবীরা গুনাহ

 الظلم যুলুম, অত্যাচারা করা

যুলুম বিভিন্ন ভাবে হতে পারে। মানুষের সম্পদ অন্যায় ভাবে ভক্ষণ করা অন্যায়ভাবে প্রহার করা, গালি দেওয়া, তাদের ওপর বাড়াবাড়ি করা, দুর্বলদের ওপর চড়াও হওয়া ও অন্যান্য যে সকল কাজে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা সবই যুলুম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَسَيَعۡلَمُ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوٓاْ أَيَّ مُنقَلَبٖ يَنقَلِبُونَ﴾ [الشعراء: ٢٢٧]

“অত্যাচারীরা শীঘ্রই জানবে তাদের গন্তব্য স্থল কোথায়।” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ২২৭।)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اتقوا الظلم فانه يوم القيامة».

“তোমরা যুলুম করা থেকে বেচে থাক। কারণ, যুলুম কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকার পরিণতি হবে”[26]

 ২৭ নং কবীরা গুনাহ

 المكاس চাঁদাবাজী ও অন্যায় টোল আদায়

বাস্তবিক পক্ষে এটি এক ধরনের ডাকাতি। কারণ, এতে মানুষের ওপর এক ধরনের জরিমানা নির্ধারণ করা হয়। চাঁদা উসূলকারী, লেখক এবং গ্রহণকারী গুনাহের মধ্যে সমানভাবে শামিল। এরা সবাই হারাম ভক্ষণকারী চাঁদাবাজ মূলতঃ যুলুমের বড় সহযোগি শুধু তাই নয় বরং সে যুলুমকারী ও অত্যাচারী।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّمَا ٱلسَّبِيلُ عَلَى ٱلَّذِينَ يَظۡلِمُونَ ٱلنَّاسَ وَيَبۡغُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّۚ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٤٢﴾ [الشورا: ٤٢] 

“ব্যবস্থা নেওয়া হবে শুধু তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের ওপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৪২]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أتدرون من المفلس ؟ إن المفلس من أمتي من يأتي يوم القيامة بصلاة وصيام وزكاة ويأتي وقد شتم هذا وقذف هذا وأكل مال هذا وسفك دم هذا وضرب هذا فيعطي هذا من حسناته وهذا من حسناته فان فنيت حسناته قبل أن يقضى ما عليه أخذ من خطايا هم فطرحت عليه ثم طرح في النار».

“তোমরা কি জান প্রকৃত দরিদ্র কে আমার উম্মতের মধ্যে? প্রকৃত দরিদ্র ঐ ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন অনেক সালাত, সাওম, যাকাত, নিয়ে উপস্থিত হবে। তবে সে দুনিয়াতে কাউকে হত্যা করেছে, মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কাউকে গাল-মন্দ করেছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কাউকে মেরেছে অথবা কাউকে প্রহার করেছে। কিয়ামতের দিন এ ব্যক্তির নেক আমল বা সাওয়াব তাদের (তার দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে) দেওয়া হবে। যদি তার নেক আমলের সাওয়াব পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করার পূর্বেই শেষ হয়ে যায় তাখন তাদের গুনাহগুলোকে তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে এবং তার পর তাকের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”[27]

 ২৮ নং কবীরা গুনাহ

اكل الحرام وتناوله على أي وجه كان

 হারাম খাওয়া, তা যে কোনো উপায়ে হোক না কেন

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَلَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ﴾ [البقرة: ١٨٨]

“তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৮]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«الرجل يطيل السفر أشعث أغبر يمد يده إلى السماء يا رب يا رب ومطعمه حرام ومشربه حرام وملبسه حرام وغذي بالحرام فأنى يستجاب لذلك».

“কোনো ব্যক্তি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করলো, বিক্ষিপ্ত চুল, ধূলা-বালিযুক্ত শরীর, দুই হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে দো‘আ করতে থাকে আর বলতে থাকে: হে আমার রব! হে আসার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারাম দ্বারা শক্তি সঞ্চয় করা হয়েছে। তাহলে কীভাবে তার দো‘আ কবুল করা হবে?”[28]

 ২৯ নং কবীরা গুনাহ

 الانتحار  আত্মাহত্যা করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ٢٩ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ عُدۡوَٰنٗا وَظُلۡمٗا فَسَوۡفَ نُصۡلِيهِ نَارٗاۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًا ٣٠﴾ [النساء: ٢٩،  ٣٠]

“তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু আর যে কেউ সীমালংঘন কিংবা যুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে তাকে খুব শীঘ্র আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯-৩০]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من قتل نفسه بحديد فحديدته في يده يتوجأ به في بطنه في نار جهنم خالدا مخلدا أبدا، ومن شرب سما فقتل نفسه فهو يتحساه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا، ومن تردى من جبل فقتل نفسه فهو يتردى في نار جهنم خالد مخلدا فيها أبدا».

“যে ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দ্বারা নিজেকে হত্যা করে সে উক্ত অস্ত্র দ্বারা জাহান্নামের আগুনে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। সে চিরদিন এই জাহান্নামে অবস্থান করবে। যে বিষ পান করে নিজেকে হত্যা করল সে চিরদিন জাহান্নামে অবস্থানকালে হত্যা করতে থাকবে। আর যে নিজেকে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করবে সেও চিরদিন জাহান্নামে অবস্থান করবে এবং পাহাড় থেকে নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে[29]

 ৩০ নং কবীরা গুনাহ

الكذب في غالب أقواله

 অধিকাংশ সময় মিথ্যা বলা

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وإن الكذب يهدي إلى الفجور، وإن الفجور يهدي إلى النار، وإن الرجل ليكذب حتى يكتب عند الله كذابا».

“মিথ্যা পাপাচারের দিকে পথ দেখায়। আর পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যা বলতে থাকলে আল্লাহর নিকট মিথ্যুক হিসেবে তার নাম লেখা হয়।”[30]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَنَجۡعَل لَّعۡنَتَ ٱللَّهِ عَلَى ٱلۡكَٰذِبِينَ﴾ [ال عمران: ٦١]

“এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত যারা মিথ্যাবাদী।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬১]

 ৩১ নং কবীরা গুনাহ

الحكم بغير ما أنزل الله

 মানব রচিত বিধানে দেশ পরিচালনা ও বিচার ফয়সালা করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ﴾ [المائ‍دة: ٤٤]

“এবং যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারা কাফির।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৪]

তিনি আরো বলেন,               

﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ﴾ [المائ‍دة: ٤٥]

এবং যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারা যালিম।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৪]

তিনি আরো বলেন,

﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ﴾ [المائ‍دة: ٤٧] 

“যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারা ফাসেক।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৭]

 ৩২ নং কবীরা গুনাহ

أخذ الرشوة على الحكم

 বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণ করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ وَتُدۡلُواْ بِهَآ إِلَى ٱلۡحُكَّامِ لِتَأۡكُلُواْ فَرِيقٗا مِّنۡ أَمۡوَٰلِ ٱلنَّاسِ بِٱلۡإِثۡمِ وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١٨٨﴾ [البقرة: ١٨٨] 

“তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দাংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণের কাছে পেশ করো না।” [সূরা আল-বাকারাহ আয়াত: ১৮৮]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لعنة الله على الراشي والمرتشي».

“আল্লাহ তা‘আলা ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপর অভিশাপ করেছেন।”[31]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من شفع لأخيه شفاعة فأهدى له هدية فقبلها منه فقد أتى بابا عظيما من أبواب الربا».

“যদি কোনো ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য কোনো বিষয় সুপারিশ করে, পরে তার জন্য হাদিয়া বা উপটোকন প্রেরণ করা হয়, সে তা গ্রহণ করে। তাহলে উক্ত ব্যক্তি এক মারাত্মক ধরনের সুদের দ্বারে প্রবেশ করল।”[32]

 ৩২ নং কবীরা গুনাহ

تشبه النساء بالرجال وتشبه الرجال بالنساء

 মহিলা পুরুষের বেশ ধারণ করা এবং পুরুষের মহিলার বেশ ধারণ করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«لعن الله المتشبهات من النساء بالرجال والمتشبهين من الرجال بالنساء».

“আল্লাহ তা‘আলা পুরুষের বেশ ধারকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন এবং মহিলাদের বেশ ধারনকারী পুরুষের উপর অভিশাপ করেছেন।”[33]

 ৩৪ নং কবীরা গুনাহ

الديوث المستحسن على أهله

 আপন স্ত্রীকে ব্যভিচারে সুযোগ দেওয়া

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ثلاثة قد حرم الله عليهم الجنة مدمن الخمر والعاق والديوث الذي يقر في أهله الخبث».

“তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহর জন্য জান্নাত হারাম করেছেন, (১) যে মদ তৈরী করে (২) যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে (৩) ঐ চরিত্রহীন ব্যক্তি যে নিজ স্ত্রীকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচারে করতে সুযোগ দেয়।”[34]

দাইউস ঐ ব্যক্তিকে বলে যে তার স্ত্রী অশ্লীল কাজ বা ব্যভিচার করলে সে ভালো মনে করে গ্রহণ করে অথবা প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে।

 ৩৫ নং কবীরা গুনাহ

المحلل والمحلل له

 হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ে গুনাহগার

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لعن الله المحلل والمحلل له».

“হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।”[35]

এর ব্যাখ্যা হলো: কেউ কারো তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিবাহ করে যে, সে সহবাস করে আবার তালাক দিয়ে দিবে, যাতে প্রথম স্বামী পুণরায় বিবাহ করতে পারে, এই ব্যক্তিকে মুহাল্লিল বা হালালকারী বলে।

 ৩৬ নং কবীরা গুনাহ

 عدم التنزه من البول পেশাব থেকে বেঁচে না থাকা

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مر النبي صلى الله عليه وسلم بقبرين فقال إنهما ليعذبان وما يعذبان في كبير أما أحدهما فكان لايسةةر من البول وأما الآخر فكان يمشي النميمة».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন এবং বলেন, এ দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো বড় বড় ধরনের কাজের জন্যে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের একজনের অভ্যাস ছিল সে প্রসাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করতো না। আর অন্যজন মানুষের একজনের দোষ অন্যের কাছে বলে বেড়াত।”[36]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤﴾ [المدثر: ٤]

“এবং তোমার কাপড়কে তুমি পবিত্র করা।” [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৪]

অতএব, আপনাদের কাপড়ে ও শরীরে যেন পেশাব না জড়ায়। যদি কোনো কারণে জড়িয়েও যায় তাহলে তা সাথে সাথে পবিত্র করে নিবেন।

আমরা আমাদের নিজের জন্য ও আপনাদের জন্য এই বিপদ থেকে মহান আল্লাহর দয়া ও রহমতের দ্বারা পরিত্রাণ কামনা করছি।


 ৩৭ নং কবীরা গুনাহ

من وسم دابة في الوجه

 চতুষ্পদ জন্তুর চেহারা বিকৃতি করা

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أما بلغكم أني لعنت من وسم البهيمة في وجهها أو ضربها في وجهها»

“তোমাদের নিকট কি পৌছে নাই যে, যে ব্যক্তি চতুষ্পদ জন্তুর চেহারা বিকৃত করে অথবা চেহারার উপর আঘাত করে আমি তার উপর অভিশাপ করছি।”[37]

 ৩৮ নং কবীরা গুনাহ

التعلم للدنيا وكتمان العلم

 দুনিয়া অর্জনের লক্ষ্যে ইলমে দীন শিক্ষা করা এবং সত্যেকে গোপন করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡتُمُونَ مَآ أَنزَلۡنَا مِنَ ٱلۡبَيِّنَٰتِ وَٱلۡهُدَىٰ مِنۢ بَعۡدِ مَا بَيَّنَّٰهُ لِلنَّاسِ فِي ٱلۡكِتَٰبِ أُوْلَٰٓئِكَ يَلۡعَنُهُمُ ٱللَّهُ وَيَلۡعَنُهُمُ ٱللَّٰعِنُونَ ١٥٩ إِلَّا ٱلَّذِينَ تَابُواْ وَأَصۡلَحُواْ وَبَيَّنُواْ فَأُوْلَٰٓئِكَ أَتُوبُ عَلَيۡهِمۡ وَأَنَا ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٦٠﴾ [البقرة: ١٥٩،  ١٦٠]

“আমরা যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ তাদের অভিসম্পাত দেন এবং অভিশাপকারীরাও তাদের অভিশাপ দেয়। কিন্তু যারা তাওবা করে ও নিজেদের সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে। তাদেরই প্রতি আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৯-১৩০।)

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من تعلم العلم ليباهي به العلماء أو يماري به السفهاو أو يصرف به وجوه الناس إليه أدخله الله جهنم»

“যে ব্যক্তি জ্ঞানীদের ওপর প্রধান্য বিস্তার করার লক্ষ্যে অথবা মূর্খের সাথে বিতর্কের উদ্দেশ্যে অথবা মানুষের দৃষ্টি তার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।”[38]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من تعلم علما مما يبتغي به وجه الله لا يةعلمه الا ليصيب به عرضا من الدنيا لم يجد عرف الجنة يوم القيامة».

“যে ব্যক্তি দীনি ইলম শিক্ষা করল ধন সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।” (আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১৭৯।)

 ৩৯ নং কবীরা গুনাহ

 الخيانة  খিয়ানত করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَخُونُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ وَتَخُونُوٓاْ أَمَٰنَٰتِكُمۡ وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٢٧﴾ [الانفال: ٢٧]

“ঈমানদারগণ আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে খেয়ানত করো না এবং জেনে-শুনে নিজেদের পারস্পরিক আমানতের খেয়ানত করো না।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২৭]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاايمان لمن لا امانة له، ولا دين لمن لا عهد له».

“যার আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই, আর যার প্রতিজ্ঞা পূরণ নেই তার ধর্ম নেই।”[39]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أربع من كن فيه كان ممنافقا خالصا ومن كانت فيه خصلة منهن كانت فيه خصلة من النفاق حتى يدعها، اذا ائتمن خان».

“চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে হবে প্রকৃত মুনাফিক। আর যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে নিফাকের একটি দোষ পাওয়া গেল, যতক্ষণ না সে ঐ দোষ বর্জন করবে যখন তার নিকট আমানত রাখা হয় সে তা খেয়ানত করে।”[40]

 ৪০ নং কবীরা গুনাহ

  المن খোটা দেওয়া

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُبۡطِلُواْ صَدَقَٰتِكُم بِٱلۡمَنِّ وَٱلۡأَذَىٰ﴾ [البقرة: ٢٦٤]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদকা ধংস করো না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৬৪]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ثلاثة لا يكلمهم الله يوم القيامة ولا ينظر إليهم ولا يزكيهم ولهم عذاب أليم، المسبل إزاره والمنان الذي لا يعطي شيئا الا منه، المنفق سلعته بالحلف الكذب».

“তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন কোনো কথা বলবেন না, তাদের প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রদায়ক শাস্তি। (১) যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টখনু-গিরার নিচে ঝুলিয়ে দেয়, (২) খোটাদানকারী, যে কোনো কিছূ দান করে খোটা দেয় (৩) যে মিথ্যা শপথ করে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করে।”[41]

 ৪১ নং কবীরা গুনাহ

 التكذيب بالقدر তাকদীরকে অস্বীকার করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لو ان الله تعالى عذب أهل سماواته وأرضيه لعذبهم وهو غير ظالم لهم ولورحمهم كانت رحمته خيرا لهم من أعمالهم ولوكان لرجل أحد أو مثل احد ذهبا ينفقه في سبيل الله لا يقبله الله عزوجل منه حتى يؤمن بالقدر خيره شره ويعلم أن ما أصابه لم يكن ليخظئه وما أخطأه لم يكن ليصيبه وإنك إن مت على غير هذا ادخلت النار».

“যদি আল্লাহ তা‘আলা আসামান ও যমীনের সকল অধিবাসীকে আযাব দেন তাহলে তার আযাব দেওয়াটা কোনো প্রকার অন্যায় হবে না। আর যদি দয়া করেন তবে তা তাদের আমলের তুলনায় অনেক বেশি হবে। যাদি কোনো ব্যক্তির নিকট ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে আল্লাহ তার এ দান বিন্দু পরিমাণও গ্রহণ করবেন না, যতক্ষন পর্যন্ত না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে আর এ কথা বিশ্বাস করবে যে, কোনো ব্যক্তি সঠিক কাজ করল সে তা তকদীর অনুযায়ী করেছে এট ভুল করা তার জন্য নির্ধারিত ছিল না। আর যে ভুল করল এটা সঠিকভাবে করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। যদি তুমি এ বিশ্বাসের বাইরে মারা যাও তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”[42]

 ৪২ নং কবীরা গুনাহ

المتسمع على الناس ما يسرونه

 মানুষের নিকট অন্যের গোপন তথ্য ফাঁস করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَ لَا تَجَسَّسُواْ﴾ [الحجرات: ١٢]

“তোমরা মানুষের ত্রুটি বিচ্যুতি খুজে বেড়াবে না।” [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত: ১২]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من استمع الى حديث قوم وهم له كارهون أو يفرون منه صب في أذنه الانك يوم القيامة ومن صور صورة عذب وكلف ان ينفخ فيها وليس بنافخ ومن تحلم يحلم لم يره كلف ان يعقد بين شعيرتين ولن يفعل».

“যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের লোকের কথা শ্রবণ করার চেষ্টা করে তাদের অনচ্ছিা সত্ত্বেও, তাহলে কিয়ামতের দিন তার কানে গলিত শীশা ঢালা হবে, আর যে ব্যক্তি কোনো জীবজন্তুর ছবি অংকন করে তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। তাকে বলা হবে তুমি এ ছবিতে প্রাণ সঞ্চার কর, কিন্তু সে পারবে না। আর যে ব্যক্তি এমন স্বপ্ন বর্ণনা করল যা সে দেখে নি তাকে শাস্তি হিসেবে দু’টি যবের দানাকে একত্রে জোড়া লাগাতে বলা হবে, কিন্তু তা সে মোটেই পারবে না।”[43]

 ৪৩ নং কবীরা গুনাহ

 النميمة পরনিন্দা করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تُطِعۡ كُلَّ حَلَّافٖ مَّهِينٍ ١٠ هَمَّازٖ مَّشَّآءِۢ بِنَمِيمٖ ١١﴾ [القلم: ١٠،  ١١]

“যে বেশি শপথ করে এবং যে পশ্চাতে নিন্দা করে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে ফিরে আপনি তার আনুগত্য করবে না।” [সূরা আল-ক্বালম, আয়াত: ১০-১১]

নমীমাহ বলা হয, যে ব্যক্তি একের কথা অপরের নিকট বলে বেড়ায় পারস্পরিক ঝগড়া-ফাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং বললেন: এ কবরবাসীদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে কোনো বড় ব্যাপারে নয়, তাদের একজন এমন ব্যক্তি যে একের কথা অন্যের নিকট লাগাতো। (সহীহ বুখারী)

 ৪৪ নং কবীরা গুনাহ

 اللعن অভিশাপ করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«سباب المسلم فسوق وقتاله كفر».

“মুসলিমদের অভিশাপ করা অন্যায় এবং তাকে হত্যা করা কুফর।”[44]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ان العبد اذا لعن شيئ صعدت اللعنة الى السماء فتغلق أبواب السماء دونها ثم تهبط الى الأرض فتغلق أبوابها دونها ثم تأخذ يمينا وشالا فاذا لم تجد مساغا رجعت الى الذي لعن فان كان لذلك أهلا والا رجعت الى قائلها».

“কোনো লোক যখন অন্য কাউকে অভিশাপ করে তথন অভিশাপটি আকাশে উঠতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার জন্য আকাশের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর যমীনের দিকে অবতরণ করে। কিন্তু যমীনের দরজাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। অহতঃপর অভিশাপটি ডানে বামে ঘুরতে থাকে। কোথাও যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে যার উপর করা হলো তার নিকট যায়, যদি সে অভিশাপের উপযুক্ত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর উপর প্রত্যাবর্তন করে।”[45]

যে কারণেই হোক কোনো মুসলিম ভইয়ের ওপর অভিশাপ করা সম্পূর্ণ হারাম। খারাপ দোষে দুষ্ট ব্যক্তিদের ওপর তাদের দোষ উল্লেখ করে অভিশাপ করা যায়। যেমন, অত্যাচারীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ, কাফিরদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ, প্রাণীর ছবি অংকনকারীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ ইত্যাদি।

 ৪৫ নং কবীরা গুনাহ

الوفاء وعدم الوفاء بالعهد

 গাদ্দারী করা, ওয়াদা পালন না করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أربع من كن فيه ان ممنافقا خالصا ومن كانت فيه خصلة منهن كانت فيه خصلة من النقثاق حتى يدعها إذا ائتمن خان وإذا حدث كذب وإذا عاهد غدر واذا خاصم فجر».

“চারটি দোষ যার মথ্যে পাওয়া যাবে সে খাঁটি মুনাফিক হবে। আর যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে মুনাফিকের একটি চরিত্র পাওয়া গেল। যতক্ষণ পর্যন্ত যে উক্ত অভ্যাস ত্যাগ না করে। যখন আমানত রাখার হয় সে খেয়ানত করে আর যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন প্রতিজ্ঞা করে তখন গাদ্দারী করে আর যখন ঝগড়া করে তখন গালি দেয়।”[46]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لكل غادر لواء يوم القيامة، يرفع له بقدر غدرةه، ألا ولا غادر أعظم غدرا من أمير عامة».

“প্রত্যেক ওয়াদা অঙ্গকারীর জন্যে কিয়ামতের দিন একটি নিদর্শন থাকবে তার গাদ্দারীর পরিমাণ অনুযায়ী তাকে উচ্চ করা হবে। তবে জনগণের সাথে প্রতারণাকারী শাসকে চেয়ে বড় গাদ্দার আর কেউ হবে না।”[47]

 ৪৬ নং কবীর গুনাহ

تصديق الكاهن والمنجم

 গণক ও জ্যোতির্বিদদের বিশ্বাস করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من اتى عرافا أو كاهنا فصدقه يما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد».

“যে ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষীর নিকট আসলো এবং তারা যা বললো তা সত্য বলে গ্রহণ করলো সে মূলতঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যা নযিল করা হয়েছে তাকেই অস্বীকার করলো।”[48]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من أتى عرافا فاسأله عن شيئ لم تقبل له صلاة أربعين ليلة»

“যে ব্যক্তি কোনো গণকের নিকট আসলো তার পর তাকে ভাগ্য সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করল চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল হবে না।”[49]

 ৪৭ নং কবীরা গুনাহ

  স্বামীর অবাধ্য হওয়াنشوز المرأة على زوجها

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا﴾ [النساء: ٣٤]

“আর তাদের স্ত্রীদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদের সদুপদেশ দাও তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা অনুগত হয়ে যায় তবে তাদের জন্যে কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার ওপর শ্রেষ্ঠ।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اذا دعا الرجل امرأته الى فراشه فأبت فباتت غضبان عليها لعنتها الملائكة حتى تصبح».

“যদি কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে আর স্ত্রী অস্বীকার করার ফলে স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে তখন ঐ স্ত্রীর ওপর ফিরিশতারা অভিশাপ করতে থাকে।”[50]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لو كنت آمر أحدا أن يسجد لغير الله لآمرت المرأة أن تسجد لزوجها والذي نفس محمد بيده لا تؤدي المرأة حق ربها حتى تؤدي حق زوجها كله لو سألها نفسها وهي على قتب لم تمنعه».

“যদি তাদেরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সাজদাহ করার আদেশ দিতাম তাহলে নারীদের প্রতি আদেশ দিতাম আরা যেন তাদের স্বামীদের সাজদাহ করে। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে, এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পৃষ্ঠেও তাকেও আহ্বান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।”[51]

সুতরাং তাদেরকে আল্লাহর ছাড়া অন্য কাউকে সাজদাহ করার আদেশ দিতাম তাহলে নারীদের প্রতি আদেশ দিতাম তারা যেন তাদের স্বামীদের সাজদাহ করে। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে, এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পিঠেও তাকে আহ্বান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।”[52]

সুতরাং নারীদের কর্তব্য, তারা সর্বাবস্থায় স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হবে এবং তার অসন্তুষ্টি থেকে বেচে থাকবে, কখনো স্বামীকে জৈবিক চাহিদা পূরণে বাধা দেবে না। তবে যদি শর‘ঈ কোনো আপত্তি থাকে তবে যেমন, হায়েয নিফাস অথবা ফরয সাওম ইত্যাদি অবস্থায় শুধু সহবাস থেকে নিষেধ করতে পারে। মহিলাদের জন্য কর্তব্য হল সর্বদা স্বামীর নিকট লজ্জাবতী হওয়া, তার আদেশের আনুগত্য করা, তার সকল প্রকার অপছন্দনীয় কাজ হতে বিরত থাকা।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اطلعت في الجنة فرأيت أكثرها أهلها الفقراء واطلعت في النار فرايت أكثر أهلها النساء».

“আমি জান্নাতে উকি মেরে দেখি, জান্নাতে অধিকাংশ অধিবাসী দরিদ্র এবং জাহান্নামে উকি মেরে দেখি, তার অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা।”[53]

অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম হাফেয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী বলেন, মহিলাদের আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি আনুগত্যের অভাব। স্বামীর অবাধ্যতা এবং পর্দাহীনতাই এর মূল কারণ। মহিলারা যখন ঘর থেকে বের হয় তখন সর্বোচ্চ সুন্দর পোশাক পরে বিশেষ সাজ-সজ্জা অবলম্ভন করে, যা মানুষকে ফিৎনায় পড়তে বাধ্য করে। সে নিজে নিরাপদে থাকলেও মানুষ তার থেকে নিরাপদ থাকে না।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«المرأة عورة، فإذا خرجت استشرفها الشيطان»

“মহিলারা আবরণীয়, কিন্তু যখন তারা রাস্তায় বের হয় তখন শয়তান তাকে মাথা উঁচু করে দেখে।”[54]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«المرأة عورة، وإنها إذا خرجت من بيتها اسبشرفها الشيطان، وإنها لا تكون أقرب الى الله منها في قعر بيتها».

“মহিলারা হলো আবরণীয়, তারা যখন ঘর হতে বের হয় তখন শয়তান তাদেরকে মাথা উচু করে দেখে। তারা যত বেশি ঘরের কোণে অবস্থান করবে ততই আল্লার নৈকট্য লাভ করবে।”[55]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ما تركت بعدي في الناس فتنة أضر على الرجال من النساء».

“আমার পরে পুরুষদের ওপর মহিলাদের মতো ক্ষতিকর আর কোনো ফিৎনা আমি রেখে যাই নি।”[56]

মহিলাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ তার ঘর অবস্থান করা। আল্লাহর ইবাদত, স্বামীর আনুগত্য, তার অধিকার সর্ম্পকে সচেতন থাকা, স্বামীর ওপর কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি না করা এবং আপন চরিত্রে কোনো প্রকার কলঙ্ক না জড়ানো।

উল্লিখিত প্রতিটি হাদীসে স্ত্রীর কাছে স্বামীর অধিকার যে কত বড় তা বুঝানো হয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করার কারণে বর্তমানে এটি মহিলাদের জন্যে মহা প্রলয়ংকারী বিপদে পরিণত হয়েছে।

 হে মুসলিম ভাইয়েরা! আপনাদের প্রতি আমার বিনীত উপদেশ এই যে, আপনারা এমন নারীদের বিবাহ করবেন যারা মুমিনা, পর্দানশীল, স্বামীর অনুগত, আপনার ধন স্পদ রক্ষাকারিণী এবং সে পর্দাহীনভাবে সাজ-সজ্জা গ্রহণ করে রাস্তায় বের হবে না, আর আপনার আনুগত্য করবে।

যদি আপনার স্ত্রী মুমিনা ও অনুগতা মহিলা হয় তাহলে আপনি হিতাকাঙ্খী হবেন, তার সাথে কোনো রকমের হঠকারিতাপূর্ণ আচরণ করবেন না।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«استوصوا بالنساء خيرا، فإن المرأة خلقت من ضلع، وان أعوج شيئ في الضلع أعلاه، فإن ذهبت تقيمه كسرته، وان تركته لم يزل أعوج، فاستوصوا بالنساء خيرا».

“তোমরা মেয়েদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তাদেরকে বাম পাজরের হাড় হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাজরের হাড় সবচেয়ে বাকা হয়, যদি তুমি সোজা করতে চেষ্টা কর ভেঙ্গে যাবে, আর যদি ছেড়ে তাও তাহলে সর্বদা বাকা তাকবে। সুতরাং তাদের সাথে সৎ ব্যবহার করতে থাক।”[57]

তাদের সাথে সৎ ব্যবহার হলো, আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়া এবং নিষেধ কাজ থেকে বিরত থাকতে আদেশ করা। এগুলো তাদেরকে জান্নাতের পথের নিয়ে যায়।

 ৪৮ নং কবীরাগুনাহ

التصوير في الثياب والحيطان والحجر وغيره

 কাপড় , দেওয়াল ও পাথর ইত্যাদিতে প্রাণীর ছবি আঁকা

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إن الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيامة، يقال لهم: أحيوا ما خلقتم».

“যারা চিত্রাংকন করে তাদেরকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে। আর তাদেরকে বলা হবে তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে তাদের আত্মা ও জীবন দান কর।”[58]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دخل علي رسول الله صلى الله عليه وسلم : وقد سترت سهوة لي بقرام فيه تماثيل، فلما رآه هتكه، وتلون وجهه، قال يا عائشة: أشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يضاهون بخلق الله، قالت عائشة: فقطعناه، وسادة أو وسادتين»

“একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন ঘরের দরজায় এমন একটি পর্দা টানানো ছিল যার মধ্যে প্রাণীর ছবি আকা ছিল। তিনি দেখা মাত্র পর্দাটি ছিড়ে ফেললেন ও তার চেহারার বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে আয়েশা! কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হবে ঐ সব লোকদের যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃর্শ অবলম্বন করে কিছু তৈরি করে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি উক্ত পর্দা কেটে একটি অথবা দু’টি বালিশ তৈরি করি।”[59]

 ৪৯ নং কবীরা গুনাহ

اللطم والنياحة وشق الثوب وحلق الرأس ونتفه والدعاء بالويل والثبور عند المصيبة

 শোক প্রকাশার্থে চেহারার উপর আঘাত করা, মাতম করা, কাপড় ছেড়া, মাথা মুণ্ডানো বা চুল উঠানো, বিপদের সময় ধ্বংসের জন্য দো‘আ করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ليس منا من لطم الخدود وشق الجيوب ودعا بدعوى الجاهلية».

“শোক প্রকাশ করতে যেয়ে যে চেহারার উপর প্রহার করে এবং কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং জাহেলিয়্যাতের অভ্যাসের অনুসরন করে সে আমার উম্মতের অর্ন্তভুক্ত নয়।”[60]

 ৫০ নং কবীরা গুনাহ

 البغي অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّمَا ٱلسَّبِيلُ عَلَى ٱلَّذِينَ يَظۡلِمُونَ ٱلنَّاسَ وَيَبۡغُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّۚ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٤٢﴾ [الشورا: ٤٢]

“ব্যবস্থা নেওয়া হবে কেবল তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহকরে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। “ [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৪২]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ان الله اوحى إلي أن تواضعوا حتى لا يفخر أحد على أحد، ولا يبغي أحد على أحد».

“আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট অহী প্রেরণ করেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, কেউ যেন কারো ওপর গর্ব না করে আর কোউ যেন কারো ওপর অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ না করে।”[61]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ما من ذنب أجدر أن يعجل الله تعالى لصاحبه العقوبة في الدنيا مع ما يدخره له في الاخرة من البغي وقطيعة الرحم».

“আত্মীয়তা ছিন্ন করা এবং অন্যায় ভাবে বিদ্রোহ করা এমন দু’টি মারাত্বক অপরাধ যার শাস্তি আখেরাতে নির্ধারিত থাকা সত্বেও দুনিয়াতে দেওয়া হবে।”[62]

 ৫১ নং কবীরা গুনাহ

الاسةطالة على الضعيف والمملوك والجارية والزوجة والدابة

 দুর্বল, চাকর-চাকরানী, স্ত্রী ও চতুষ্পদ জন্তুর ওপর অত্যাচার করা

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من ضرب غلاما له حدا لم يأته، أو لطمه، فان كفارته أن يعتقه».

“যে ব্যক্তি তার গোলামকে শাস্তি দিল এমন কোনো অভিযোগে যা সে করে নাই, তার প্রতিকার হলো তাকে মুক্ত করে দেওয়া।”[63]

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ان الله يعذب الذين يعذبون الناس في الدنيا».

“আল্লাহ তা‘আলা ঐ সব লোকদের শাস্তি দিবেন যারা দুনিয়াতে মানুষদের কষ্ট দিত।”[64]

 ৫২ নং কবীরা গুনাহ

 أذى الجار প্রতিবেশীদের কষ্ট দেওয়া

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لايدخل الجنة من لا يأمن جاره بوائقه».

“ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার থেকে নিরাপদ থাকে না।”[65]

 ৫৩ নং কবীরা গুনাহ

أذى المسلمين وشتمهم

 মুসলিমদের কষ্ট দেওয়া ও গালি দেওয়া

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ بِغَيۡرِ مَا ٱكۡتَسَبُواْ فَقَدِ ٱحۡتَمَلُواْ بُهۡتَٰنٗا وَإِثۡمٗا مُّبِينٗا ٥٨﴾ [الاحزاب: ٥٨]

“যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৮]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إن الشر الناس عند الله منـزلة يوم القيامة من تركه الناس اتقاء شره»

“কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদার দিকে দিয়ে ঐ ব্যক্তি সর্ব নিকৃষ্ট, যাকে মানুষ তার অনিষ্টতা থেকে বাঁচার লক্ষ্যে এড়িয়ে চলে।”[66]

 ৫৪ নং কবীরা গুনাহ

إسبال الإزار والثوب تعززا وخيلاو ونحوه

 অহংকার করে লুঙ্গি কাপড় ইত্যাদি ঝুলিয়ে পরিধান করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ما أسفل من الكعبين من الإزار في النار».

“গোড়ালির নিচে যে কাপড় পরা হবে, তা জাহান্নামে যাবে।”[67]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاينظر الله إلى من جر إزاره بطرا».

“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির দিকে রহমতের দৃষ্টি দিবেন না যে অহংকার করে কাপড় পরিধান করে।”[68]

বর্তমানে এ ব্যধি একেবারে সাধারণ হয়েছে। প্রায় সবার মধ্যে এ সমস্যাটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেকেই দেখা যায় তারা গোড়ালির নিচে কাপড় পরধিান করে, অনেক সময় মাটি পর্যন্ত কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে বিপদ থেকে রক্ষা করুন। অবশ্য এ নিষেধাজ্ঞা পুরুষদের জন্য।

 ৫৫ নং কবীরা গুনাহ

الأكل والشرب في آنية الذهب أو الفضة

 স্বর্ণ রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إن الذي يأكل أو يشرب في إناء الذهب أو الفضة إنما يجرجر في بطنه نار جهنم».

“যে ব্যক্তি স্বর্ণ ও রূপার প্লেটে খায় বা পান করে সে মূলতঃ তার পেটে জাহান্নামের আগুনকেই স্থান দেয়।”[69]

 ৫৯ নং কবীরা গুনাহ

لبس الحرير والذهب للرجال

 পুরুষের স্বর্ণ ও রেশমী কাপড় পরিধান করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«انما يلبس الحرير في الدنيا من لا خلاق له في الآخرة».

“দুনিয়াতে যে ব্যক্তি রেশমী কাপড় পরে তার জন্যে আখিরাতে কোনো অংশই নেই”[70]

 ৫৭ নং কবীরা গুনাহ

 إباق العبد গোলামের পলায়ন করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إذا أبق العبد لم يقبل له صلاة».

“গোলাম যখন পলায়ন করে তখন তার কোনো সালাত-ই গ্রহণ করা হয় না।”[71]

অন্য বর্ণনায় আছে, যতক্ষণ না সে তার মনিবের নিকট প্রত্যাবর্তন করে।

 ৫৮ নং কবীরা গুনাহ

الذبح لغير الله عز وجل

 আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশে পশু যবেহ করা

 রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لعن الله من ذبح لغير الله»

“যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর জন্য যবেহ করে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।”[72]

গাইরুল্লাহর জন্য যবেহ করা দৃষ্টান্ত যেমন, কেউ যবেহ করার সময় বলে, আমি শয়তানের নামে যবেহ করাছি অথবা দেব-দেবীর নামে অথবা পীর সাহেবদের নামে যবেহ করছি ইত্যাদি।

 ৫৯ নং কবীরা গুনাহ

من ادعى إلى غير أبيه وهو يعلم

 জেনে শুনে অন্যকে পিতা বলে স্বীকৃতি দেওয়া

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من ادعى إلى غير أبيه وهو يعلم، فالجنة عليه حرام».

“যে ব্যক্তি জেনে শুনে নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অন্যকে পিতা বলে ঘোষণা দেয় তার ওপর জান্নাত হারাম করা হয়েছে।”[73]

 ৬০ নং কবীরা গুনাহ

الجدل والمراء واللد

 তর্ক-বির্তক, ঝগড়া এবং শত্রুতা পোষণ করা

অর্থাৎ কারো কথার ভুল-ভ্রান্তি প্রকাশের দোষ তালাশ করা । একটি দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত আছে,

«من خاصم في باطل وهو يعلمه لم يزل في سخط الله حتى ينـزع»

“যে ব্যক্তি অনর্থক কোনো বিষয়ে জেনে-শুনে বির্তক করে সে ঐ পর্যন্ত আল্লাহর অসন্তুষ্টি জীবন যাপন করে যতক্ষণ না সে বির্তক থেকে ফিরে আসে।”[74]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ما ضل قوم بعد هدي كانوا عليه إلا أوتو الجدال».

“কোনো জাতি সঠিক পথের ওপর থাকার পর পথভ্রষ্ট হয় নাই, কিন্তু যখনই তারা বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে তখনই পথভ্রষ্ট হযেছে।”[75]

অর্থাৎ সত্য অন্বেষণ বা উদঘাটনের জন্য নয়, বিতর্ক করার জন্য বিতর্কে লিপ্ত হয়।

 ৬১ নং কবীরা গুনাহ

منع فضل الماء

 প্রয়োজনের অতিক্তি পানি দান করতে অস্বীকার করা

 রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من منع فضل ماء أوكلا منعه الله فضله يوم القيامة».

“যে ব্যক্তি অতিরিক্ত পানি ও অতিরিক্ত ঘাস দান করা থেকে বিরত থাকে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন দয়া ও সাওয়াবের দিতে অস্বীকার করবেন।”[76]

 ৬২ নং কবীরা গুনাহ

 نقص الكيل و الميزان  ওজনে ও মাপে কম দেওয়া

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيۡلٞ لِّلۡمُطَفِّفِينَ ١﴾ [المطففين: ١]

“যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য দুভোর্গ।” [সূরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত: ১]

 ৬৩ নং কবীরা গুনাহ

الأمن من مكر الله

 আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিত হওয়া

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি বেশি বলতেন-

«يا مقلب القلوب ثبت قلوبنا على دينك فقيل له يا رسول الله أتخاف علينا فقال رسول الله : إن القلوب بين إصبعين من أصابع الرحمن. يقبلها كيف يشاء».

“হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আপনি আমাদের অন্তরকে আপনার দীনের ওপর অটল রাখুন । অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি কি আমাদের ঈমানের ব্যাপারে আশংকা করেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, মানুষের অন্তর দয়াময় আল্লাহরই দুই আঙ্গুলের মাঝে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে পরিবর্তন করেন।”[77]

সুতরাং হে মুসলিম ভাইয়েরা! আপনাদের ঈমান, আমল, সালাত ও সকল প্রকার নেক আমল যতই বেশি ও সুন্দর হোক না কেন অহংকার করবেন না। কারণ, এগুলো আল্লাহর দয়া ছাড়া আর কিছু নয়। যদি কোনো না কোনো সময় তিনি এগুলো আপনার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তখন আপনি উটের পেটের চেয়েও বেশি খালী হয়ে যাবেন। আপনি আপনার আমলের কারণে গর্ব করা থেক বিরত থাকুন এবং এমন কথা বলবেন না যা অজ্ঞ ও মূর্খরা বলে, যেমন আমরা অমুকের চেয়ে ভালো। আমার আল্লাহ তো মানুষের অন্তরের গোপন প্রকাশ্য সকল বিষয়ে অবগত। আপনার দুর্বলতা, গুনাহের আধিক্য, আমল কম হওয়ার অনুভুতি অন্তরে স্থান দিয়ে সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকুন এবং এমন একটি অবস্থায় থাকুন যে অবস্থার বর্ণনা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে দিয়েছেন:

তিনি বলেন,

«أملك عليك لسانك، وليسعك بيتك، وابك على خطيئتك».

“তোমার সংসারে ব্যস্তাতা সত্ত্বেও তুমি জিহবাকে সংযত রাখবে, গুনাহের কাজের ওপর কান্নাকাটি করবে।”[78]

ঐসব লোকদের মতো হয়ো না যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَفَأَمِنُواْ مَكۡرَ ٱللَّهِۚ فَلَا يَأۡمَنُ مَكۡرَ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ ٩٩﴾ [الاعراف: ٩٩]

“তারা কি আল্লাহর পাকড়াও-এর ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে?  ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ব্যতীত কেউ আল্লাহর পাকড়াও থেকে নির্ভয় হয় না।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৯৯]

বস্তুতঃ আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রাথনা কর এবং সর্বদা এ কথাগুলো বলতে থাক-

«يا مقلب القلوب ثبت قلوبنا على دينك».

“হে অন্তরের পরিবর্তকারী! তুমি আমাদের অন্তরকে তোমার দীনের ওপর অটল অবিচল রাখ।”

 ৬৪ নং কবীরা গুনাহ

اكل الميتة والدم ولحم الخنزير

 মৃত জন্তু, প্রবহিত রক্ত এবং শুকরের গোশত খাওয়া

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُل لَّآ أَجِدُ فِي مَآ أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَىٰ طَاعِمٖ يَطۡعَمُهُۥٓ إِلَّآ أَن يَكُونَ مَيۡتَةً أَوۡ دَمٗا مَّسۡفُوحًا أَوۡ لَحۡمَ خِنزِيرٖ فَإِنَّهُۥ رِجۡسٌ﴾ [الانعام: ١٤٥]

“আপনি বলে দিন, যে বিধান অহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌছেছে, তন্মধ্যে আমি কোনো ভক্ষণকারীর জন্যে কোনো হারাম খাদ্য পাই নি। মৃত ও প্রবাহিত রক্ত এবং শুকরের গোশত ব্যতীত। এটা অপবিত্র।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৪৫]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من لعب بالنردشير، فكأنما صبغ يده في لحم الخنـزير ودمه».

“যে ব্যক্তি চওসর (দাবা জাতীয়) খেলায় প্রবৃত হয়, সে যেন তার হাতকে শুকরের রক্তে রঞ্জিত করার মতো অন্যায় করে।”[79]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুকরের রক্ত ও গোশত হাতে নেওয়াকে গুনাহ সাব্যস্ত করেছেন। শুধু তাই নয় বরং বড় গুনাহ বলে অভিহিত করেছেন। সুতরাং শুকরের গোশত খাওয়া যে কাত বড় গুনাহ তা সহজেই অনুমান করা যায়। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ বিপদ থেকে রাক্ষা করুন।

 ৬৫ নং কবীর গুনাহ

تارك صلاة الجمعة والجماعة فيصلى وحده من غير عذر

 জুমু‘আর সালাত ও জামা‘আত চেড়ে দিয়ে বিনা কারণে একা একা সালাত আদায় করা

 রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ليتهين أقوام عن ودعهم الجمعات أو ليختمن الله على قلوبهم ثم ليكونن من الغافلين».

“যদি মানুষ জুমু‘আর সালাত পরিত্যাগ করা থেকে বিরত না থাকে তাহলে আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিবেন যার ফলে তারা অলস ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”[80]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من سمع النداء فلم يأته فلا صلاة له الا من عذر».

“যে ব্যক্তি আযান শুনল অথচ কোনো প্রকার ওযর ছাড়া সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হলো না তার সালাত আল্লাহর নিকট কবুল হয় না।”[81]

 ৬৬ নং কবীরা গুনাহ

اليأس من روح الله تعالى والقنوط

 আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَاْيۡ‍َٔسُواْ مِن رَّوۡحِ ٱللَّهِۖ إِنَّهُۥ لَا يَاْيۡ‍َٔسُ مِن رَّوۡحِ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ﴾ [يوسف: ٨٧]

“তোমরা আল্লার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ রহমত থে একমাত্রকে কাফির সম্প্রাদায়ই নিরাশ হয়।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৭]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لايموتن أحدكم إلا وهو يحسن الظن بالله».

“তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর প্রতি ভালো ধারণা পোষণ ছাড়া মারা না যায়।”[82]

 ৬৭ নং কবীরা গুনাহ

تكفير المسلم

 মুসলিমকে কাফির বলে আখ্যায়িত করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من قال لأخيه كافر فقد باء بها أحدهما».

“যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলিম ভাইকে বলে, হে কাফির! এর পরিণাম তাদের কোনো না কোনো একজনের ওপর বর্তাবেই।”[83]

 ৬৮ নং কবীরা গুনাহ

 ষড়যন্ত্র করা এবং ধোক দেওয়া المكر والخديعة

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا يَحِيقُ ٱلۡمَكۡرُ ٱلسَّيِّئُ إِلَّا بِأَهۡلِهِۦۚ﴾ [فاطر: ٤٣]

“কুচক্রের শাস্তি কারও ওপর পতিত হয় না, কুচক্রীর ওপরই পতিত হয়।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ৪৩]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«المكر اوالخديعة في النار».

“কুচক্র এবং ধোকাবাজীর স্থান জাহান্নাম।”[84]

 ৬৯ নং কবীরা গুনাহ

من تجسس على المسلمين ودل على عوارتهم

 মুসলিমদের ত্রুটি-বিচ্যুতি তালাশ করা এবং তাদের গোপন তথ্য প্রকাশ করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تُطِعۡ كُلَّ حَلَّافٖ مَّهِينٍ ١٠ هَمَّازٖ مَّشَّآءِۢ بِنَمِيمٖ ١١﴾ [القلم: ١٠،  ١١]

“আপনি আনুগত্য করবেন না ঐ ব্যক্তির যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে অন্যকে দোষারোপ করে ও পশ্চাতে নিন্দা করে, যে একের কথা অপরের নিকট বলে বেড়ায়।” [সূরা আল-ক্বালম, আয়াত: ১০-১১]

একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ومن قال في مؤمن ما ليس فيه، أسكنه الله ردغه الخبال حتى يخرج ما قال، وليس بخارج».

“যে ব্যক্তি কোনো মুমিন সম্পর্কে এমন দোষ বর্ণনা করে যা তার মধ্যে আদৌ নেই, আল্লাহ জাহান্নামীদের নির্গত পচা গলা পুজের মধ্যে তার স্থান নির্ধারন করে দিবেন। সে যা বলেছে তা বের করে দিতে চাবে, কিন্তু পারবে না”[85]


 ৭০ নং কবীরা গুনাহ

سب احد من الصحابة رضوان الله عليهم

 কোনো সাহাবীকে গালি দেওয়া

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاتسبوا أصحابي، فوالذي نفسي بيده لو أنفق أحدكم مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولانصيفه».

“তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিও না। যদি তোমাদের কেউ ওহুদ পাহাড় পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় দান করে তবুও তাদের কারো একটি মুটি বা আধা মুটি পরিমাণ দানের সমান হবে না।”[86]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من سب أصحابي فعليه لعنة الله و الملائكة والناس أجمعين».

“যে ব্যক্তি আমার সাহাবীকে গালি দেয় তার ওপর আল্লাহ তা‘আলা, ফিরিশতা এবং সমস্ত মানুষের অভিশাপ।”[87]

 ৭১ নং কবীরা গুনাহ

 القضاء السوء  অন্যায় বিচার

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«قاضيان في النار وقاض في الجنة، قاض عرف الحق فقضى به فهو في اللجنة، وقاض عرف الحق فجار متعمدا أو قضى بغير علم فهما في النار».

“দু’জন বিচারক জাহান্নামে যাবে এবং একজন বিচারক জান্নাতে যাবে। যে বিচারক মূল সত্যকে উদঘাটন করে এবং তদনুসারে বিচার করে সে জান্নাতে যাবে। আর একজন বিচারকার্যে সত্যকে উদঘাটন করার পর জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে বিচার করছে সে জাহান্নামে যাবে অথবা যে না জেনে-শুনে বিচার করে সে জাহান্নামে যাবে।”[88]

 ৭২ নং কবীরা গুনাহ

الفجور عند الخصومة

 ঝগড়া করার সময় অতিরিক্ত গালি দেওয়া

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أربع من كن فيه كان منافقا خالصا، ومن كانت فيه خصلة منهن كانت فيه خصلة من النفاق حتى يدعها: إذا ائتمن خان وإذا حدث كذب وإذا عاهد غدر. وإذاخاصم فجر».

“চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সেই প্রকৃত মুনাফিক। যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার নিকট মুনাফিকের একটি চরিত্র পাওয়া গেল। যখন আমানত রাখা হয় সে খেয়ানত করে, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন চুক্তি করে তা ভঙ্গ করে আর যখন ঝগড়া করে গাল-মন্দ করে।”[89]

 ৭৩ নং কবীরা গুনাহ

الطعن في الأنساب

 কোনো বংশ বা তার লোকদের খারাপ গুণে অভিহিত করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اثنتان في الناس هما بهم كفر: الطعن في الأنساب و النياحة على الميت».

“দু’টি দোষ মানুষের মধ্যে কুফর সমতুল্য । (১) বংশের কুৎসা রটানো। (২) মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক কান্নাকাটি করা।”[90]

 ৭৪ নং কবীরা গুনাহ

النياحت على الميت

 মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক ও উচ্চ শব্দে কান্নাকাটি করা

যেমন পূর্বের হাদীসে এ সম্পর্কে পরোপুরি নিষেধ এসেছে।

 ৭৫ নং কবীরা গুনাহ

تغيير منار الارض

 যমীনের সীমানা উঠিয়ে ফেলা বা পরিবর্তন করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لعن الله من غير منار الأرض».

“আল্লাহর অভিশাপ করেছেন ঐ ব্যক্তির ওপর যে যমীনের সীমানা পরিবর্তন করে।”[91]

 ৭৬ নং কবীরা গুনাহ

من سن سنة سيئة أو دعا الى ضلالة

 অপসংস্কৃতি ও কু-প্রথার প্রচলন করা অথবা বিভ্রান্তির দিকে আহ্বান করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ومن سن في الإسلام سنة سيئة فعليه وزرها ووزر من عمل بها من بعده من غير أن ينقص من أوزارهم شيئ».

“যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো কু-প্রথা বা বিদ‘আত চালু করল সে নিজেতো গুনাহগার হবেই এবং তার পরে যে ব্যক্তি ঐ কু-প্রথার ওপর আমল কররবে তার গুনাহ ও তার ওপর বর্তাবে, তবে এ কারণে ঐ ব্যক্তির গুনাহের অংশ বিন্দু পরিমাণ ও কমানো হবে না।”[92]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ومن دعا إلى ضلالة، كان عليه في الإثم مثل آثام من تبعه لاينقص ذلك من آثامهم شيئا».

“যে ব্যক্তি কোনো গোমরাহীর প্রতি মানুষকে আহ্বান করে ঐ ব্যক্তি গুনাহের মধ্যে ঐ পরিমাণ অংশীদার হবে যে পরিমাণ গুনাহ ঐ গোমরাহীর অনুসারীদের হবে। তবে এ কারণে তাদের গুনাহের পরিমাণ একটু ও কমানো হবে না”[93]

 ৭৭ নং কবীরা গুনাহ

الواصلة لشعرها والنامصة والمةنمصة والمةفلجة والواشمة

 নারী অন্যের চুল ব্যবহার করা, শরীরে উলকি আকা, ভ্রু উপড়ানো, দাত ফাক করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لعن الله الواشمات والمستوشمات والنامصات والمتنمصات والمتفلجات للحسن المغيرات خلق الله».

“আল্লাহ তা‘আলা অভিশাপ করেন এমন সব নারীদের যারা অন্যের অঙ্গ খোদাই করে নিজের শরীরে তা করাতে চায়, যারা ভ্রু উঠিয়ে ফেলে এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাত সরু ও উহার ফাক বড় করে, যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বদলে নেয়।”[94]

তিনি আরো বলেন,

«لعن الله الواصلة والمسةوصلة والواشمة والمسةوشمة».

“সে নারীর ওপর আল্লাহর অভিশাপ যে অন্য নারীর মাথায় কৃত্রিম চুল স্থাপন করে কিংবা নিজ মাথায় মেকী চুল স্থাপন করে এবং যে অন্যের গাত্রে উল্কি করে অথবা নিজের গাত্রে উল্কি করায়।”[95]


 ৭৮ নং কবীরা গুানাহ

أشار إلى أخيه بحديدة

 ধারালো অস্ত্র দিয়ে কারো দিকে ইশারা করা

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من أشار إلى إخيه بحديدة، فإن الملائكة تلعنه، وإن كان أخاه لأبيه وأمه».

“যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের দিকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে ফিরিশতাগণ তার ওপর অভিশাপ করতে থাকে, যদিও সে তার আপন ভাই হয়।”[96]

অন্য একটি হাদীসের কঠোর ধমকির কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«فإنه لا يدري أحدكم لعل الشيطان ينـزع في يده فيقع في حفرة من النار».

“হতে পারে শয়তান তার হাতে থেকে অস্ত্র নিয়ে ব্যবহার করবে। ফলে সে জাহান্নামের গুহায় নিপতিত হবে।”[97]

 ৭৯ নং কবীরা গুনাহ

الإلحاد في الحرم

 হারাম শরীফে ধর্মদ্রোহী কাজ করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ ٱلَّذِي جَعَلۡنَٰهُ لِلنَّاسِ سَوَآءً ٱلۡعَٰكِفُ فِيهِ وَٱلۡبَادِۚ وَمَن يُرِدۡ فِيهِ بِإِلۡحَادِۢ بِظُلۡمٖ نُّذِقۡهُ مِنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ٢٥﴾ [الحج: ٢٥]

“এবং মসজিদে হারাম যা আমরা করেছি স্থায়ী ও বহিরাগত সকলের জন্য সমান। আর তাতে যে অন্যায়ভাবে কোনো ধর্মদ্রোহী কাজ করার ইচ্ছা করে, আমি তাকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি আস্বাদান করাবো।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ২৫]

এ বিষয় যা আলোচিত হলো এগুলো মারাত্বক কবীরা গুনাহ, যা পবিত্র কুরআনর হাদীসের আলোকে উলামায়ে কিরাম উল্লেখ করেছেন এবং বিশেষ করে ইমাম হাফেয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী রহ, আল-কাবায়ের কিতাবে সংকলন করেছেন। আল্লাহ যেন এ সকল গুনাহ থেকে বেচে থাকতে সাহায্য করেন এবং আমাদেরকে তাওফীক দিবেন, যে সব কাজ তিনি পছন্দ করেন না এবং সন্তুষ্ট হন না, এসব কাজ থেকে বেচে থাকতে এবং আমরা ঐ সব গুনাহ যা আমাদের থেকে প্রকাশ পেয়েছে আল্লাহ যেন আমাদের ঐ সকল পাপ ক্ষমা করেন এবং আল্লার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের ঐসব লোকদের অর্ন্তভুক্ত না করেন যাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اتدرون من المفلس إن المفلس من أمتي من يأتي يوم القيامة بصلاة وصيام وزكاة ويأتي وقدشتم هذا وقذف هذا».

“তোমরা কি জান আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র কে? মনে রাখবে আমার উম্মতের মধ্যে দিরদ্র হলো ঐ লোক যে কিয়ামতের দিন অনেক সালাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে অথচ সে দুনিয়াতে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ ভক্ষণ করেছে আবার কাউকে রক্তাক্ত বা প্রহার করেছে, অতঃপর আল্লাহ তার পুণ্য হতে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত, অত্যাচারিত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করে দিবেন। যখন পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করার পূর্বেই তার পুণ্য শেষ হয়ে যাবে, তখন তাদের পাপগুলো তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”[98]

সমাপ্ত

কবীরা গুনাহ: ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহবী সংকলিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ মুখতাসার আল-কাবায়ের, যা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে নাম দেওয়া হয়েছে কবীরা গুনাহ। এ বইটি মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বড় বড় গুনাহ চিহ্নিত করা ও সেগুলো থেকে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে এ বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ-নির্দেশক।



[1] সহীহ মুসলিম।

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩০০।

[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫৬।

[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬।

[5] আহমদ, হাদীস নং ২১৮৫৯।

[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭।

[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৬।

[8] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৩৩।

[9] তিরমিযী, হাদীস নং ২৫৪৯।

[10] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮০২।

[11] তিরমিযী, হাদীস নং ১২৭৬।

[12] তিরমিযী, হাদীস নং ১৮৬, সহীহ আল-জামে।

[13] হাকেম, সহীহ আল-জামে।

[14] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৭।

[15] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৬৭।

[16] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৬৭।

[17] ইবন আসাকির, সহীহ আল-জামে।

[18] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৫৫৯।

[19] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩১।

[20] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৬০।

[21] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৬০।

[22] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭৩৪।

[23] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১৮৯।

[24] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬৪৭।

[25] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৮২।

[26] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৭৫।

[27] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৮৬।

[28] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৮৬।

[29] সহীহ মসলিম, হাদীস নং ১৫৮।

[30] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৬২৯।

[31] আহমদ

[32] আহমদ, হাদীস নং ৬৬৮৯।

[33] আবু দাউদ, হাদীস নং  ৩৫৭৪।

[34] আহমদ , হাদীস নং ৫৮৩৯।

[35] আহমদ, হাদীস নং ৭৯৩৭

[36] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬১১।

[37] আবু দাউদ, হাদীস নং ২২০১।

[38] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৬।

[39] আহমদ, হাদীস নং ১১৯৩৫।

[40] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩।

[41] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৫।

[42] কিতাবুস সুন্নাহ: ইবন আবী আসিম আশ-শায়বানী

[43] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫২০।

[44] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৬।

[45] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫৯।

[46] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩।

[47] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২৭২।

[48] আহমদ, হাদীস নং ১২৫।

[49] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৩৭।

[50] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৯৮।

[51] আহমদ, হাদীস নং ১০৭৯।

[52] আহমদ, সহীহ আল-জামে।

[53] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০০২।

[54] তিরমিযী, হাদীস নং ১০৯৩।

[55] তিরমিযী, হাদীস নং ১০৯৩; সহীহ আল-জামে।

[56] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪০৬।

[57] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৮৪।

[58] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৭৮৩।

[59] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪৯৮।

[60] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২১২।

[61] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪২৫০।

[62] আহমদ, হাদীস নং ৪২০১।

[63] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৩১।

[64] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৩৪।

[65] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬।

[66] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৭২।

[67] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৩৪১।

[68] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৩৪২।

[69] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২০৩।

[70] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৫৫।

[71] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৩।

[72] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬৫৭।

[73] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯৮২।

[74] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১২৩।

[75] তিরমিযী, হাদীস নং ৩১৭; সহীহ আল-জামে।

[76] আহমদ, হাদীস নং ৬৩৮২উ

[77] তিরমিযী, হাদীস নং ২০৬৬

[78] তিরমিযী।

[79] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৯৪।

[80] দারেমী, হাদীস নং ১৫২৪।

[81] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৭৮৫।

[82] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫১২৫।

[83] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৩৮।

[84] বায়হাকী, সিলসিলাতুত সহীহাহ।

[85] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১২৩।

[86] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৯৮।

[87] তাবারানী, সহীহ আল-জামে।

[88] জামে তিরমিযী, হাদীস নং ১২৪৪।

[89] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩।

[90] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০।

[91] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬৫৭।

[92] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯১।

[93] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৩১।

[94] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৬৬।

[95] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪৭৭।

[96] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৪১।

[97] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৪২।

[98] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৮২।