দো‘আ-মোনাজাত: কখন ও কীভাবে? ()

ফায়সাল ইবন আলী আল-বা‘দানী

ইখলাস ও সমর্পিত হৃদয়ে দুআ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে দুআর আদব, দুআ কবুলের সময়, দুআ কেন কবুল হয় না ইত্যাদি বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে।

|

 দো‘আ-মোনাজাত: কখন ও কীভাবে?

الدعاء:فضائله، آدابه، أوقاته، أحواله، موانع إجابته

 অনুবাদকের কথা

স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী সকল মানুষ কম বেশি প্রার্থনা করে। এর মধ্যে কেউ মহান স্রষ্টা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য দেব-দেবী বা মৃত মানুষের কাছে প্রার্থনা করে। অনেকে আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করে তবে প্রার্থনা নিবেদনের ক্ষেত্রে আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে অংশীদার করে। মনে করে আমার কথা আল্লাহ সরাসরি হয়ত নাও শুনতে পারেন। তাই তাঁর ঘনিষ্ট কারো কাছে প্রার্থনা করলে সে তাঁর কাছে পৌঁছে দেবে। আবার অনেকে আল্লাহর কাছে সরাসরি প্রার্থনা করেছেন দীর্ঘ দিন; কিন্তু দো‘আ কবুলের কোনো আলামত না দেখে ক্লান্ত ও হতাশ হয়ে দো‘আ করা ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকে দো‘আ করেন ঠিকই, কিন্তু কীভাবে করলে তা বৃথা যায় না, কখন দো‘আ করলে তা কবুল হতে পারে, কীভাবে করলে কবুল হবে না এ বিষয়ে তেমন একটা খবর রাখেন না। এদের সবার প্রশ্নের উত্তর রয়েছে এ বইতে।


 ভূমিকা

সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালক আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কীভাবে স্থাপিত হতে পারে? মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে কোনো রকম মুখাপেক্ষী নন। তিনি সকল সৃষ্টিজীব থেকে অমুখাপেক্ষী। সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। তিনি মহা শক্তির অধিকারী, তাঁর ওপর কেউ বিজয়ী হতে পারে না। আকাশমণ্ডল ও তাবৎ জগতের প্রতিটি বিষয় তাঁর আয়ত্বাধীন। তাই মানুষ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে, তাঁর কাছে নিজের প্রয়োজন প্রার্থনা করতে, বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে সর্বদা তাঁর কাছেই মুখাপেক্ষী। তিনি কারীম-মহান। তাঁর কাছে প্রার্থনা করলে তিনি খুশি হন। তিনি ভালবাসেন মানুষ তাঁর কাছে তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু চেয়ে নেবে। তিনি তাদের প্রার্থনা কবুল করেন।

দো‘আ কাকে বলে? কীভাবে করতে হয়? কখন করা উচিত? দো‘আ কবুলের অন্তরায় কী? ইত্যাদি বিষয়গুলো কুরআন ও বিশুদ্ধ সুন্নাহর আলোকে আলোচনা করা হয়েছে এ পুস্তকে।


দো‘আ দুই প্রকার

 এক. দো‘আউল ইবাদাহ বা উপাগণামূলক দো‘আ। সকল প্রকার ইবাদতকে এ অর্থে দো‘আ বলা হয়।

 দুই. দো‘আউল মাসআলা অর্থাৎ প্রার্থনাকারী নিজের জন্য যা কল্যাণকর তা চাবে এবং যা ক্ষতিকর তা থেকে মুক্তি প্রার্থনা করবে। (বাদায়ে আল-ফাওয়ায়েদ: ইবনুল কাইয়্যেম)

যেমন, কেউ সালাত আদায় করল। এ সালাতের মধ্যে অনেক প্রার্থনামূলক বাক্য ছিল। এগুলোই দো‘আউল ইবাদাহ বা উপাসনামূলক প্রার্থনা। আবার সে পরীক্ষা দেবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল হে আল্লাহ! তুমি আমার পরীক্ষা সহজ করে দাও এবং কৃতকার্য করে দাও! এটা হলো দো‘আ আল-মাসআলা বা চাওয়া।

দো‘আ ও প্রার্থনার ফযীলত

 ১- দো‘আ এক মহান ইবাদত

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ٦٠﴾ [غافر: ٦٠]

“তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব। যারা অহংকারবশতঃ আমার ইবাদত থেকে বিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে”[সূরা আল-মুমিন, আয়াত: ৬০]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الدُّعَاءُ هُوَ العِبَادَةُ»

“দো‘আ-ই হলো ইবাদত”[1]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«أَفْضَلُ الْعِبَادَةِ هُوَ الدُّعَاءُ»

“সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো দো‘আ”[2]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«لَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللَّهِ تَعَالَى مِنَ الدُّعَاءِ»

“আল্লাহর কাছে দো‘আর চেয়ে উত্তম কোনো ইবাদত নেই”[3]

 ২- দো‘আ অহংকার থেকে দূরে রাখে

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ٦٠﴾ [غافر: ٦٠]

‘তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব। যারা অহংকারবশতঃ আমার ইবাদত হতে বিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে”। [সূরা আল-মুমিন, আয়াত: ৬০]

এ আয়াতে প্রমাণিত হলো, যারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না তারা অহংকারী। অতএব প্রার্থনা করলে অহংকার থেকে মুক্ত থাকা যাবে।

ইমাম শাওকানী রহ. বলেন, এ আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দো‘আ অন্যতম ইবাদত। আর এটা পরিহার করা আল্লাহর সঙ্গে অহংকার করার নামান্তর। এ অহংকারের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো অহংকার হতে পারে না। কীভাবে মানুষ আল্লাহর সঙ্গে অহংকার করতে পারে যে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সব ধরনের জীবনোপকরণ দিয়েছেন, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান এবং ভালো-মন্দের প্রতিদান দিয়ে থাকেন?[4]

 ৩- দো‘আ কখনো বৃথা যায় না

যেমন, হাদীসে এসেছে: আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ لَيْسَ فِيهَا إِثْمٌ، وَلَا قَطِيعَةُ رَحِمٍ، إِلَّا أَعْطَاهُ اللَّهُ بِهَا إِحْدَى ثَلَاثٍ: إِمَّا أَنْ تُعَجَّلَ لَهُ دَعْوَتُهُ، وَإِمَّا أَنْ يَدَّخِرَهَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ، وَإِمَّا أَنْ يَصْرِفَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا " قَالُوا: إِذًا نُكْثِرُ، قَالَ: «اللَّهُ أَكْثَرُ»

“যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দো‘আ করে, যে দো‘আতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দো‘আ অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দো‘আ সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দো‘আর প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দো‘আর মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দো‘আ করতে থাকবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন”[5]

এ হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কোনো মুসলিম ব্যক্তির দো‘আ কখনো বৃথা যায় না।

দো‘আ ও মুনাজাতের আদব

আপনি দেখবেন কোনো মানুষ যখন কারো কাছে কিছু চায় তখন আদব-কায়দা বা শিষ্টাচারের সঙ্গেই তা চায়। সে নিজের কথা সুন্দর করে, উপস্থপনা পদ্ধতি আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করে। এমনিভাবে দরখাস্ত যত গুরুত্বপূর্ণ হবে তার আদব ও উপস্থাপনা ততই সুন্দর ও মার্জিত করা হয়। এ সকল প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য একটাই থাকে, তাহল, সে যা আবেদন করেছে তা যেন পায়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের চেয়ে এমন বড় সত্তা কে আছে যার কাছে আদব-কায়দা ও পূর্ণ শিষ্টাচারসহ প্রার্থনা করা যেতে পারে?

অপরদিকে দো‘আ-মোনাজাত যখন সর্বশ্রেষ্ট ইবাদত তখন অবশ্যই এটা আদায় করতে তার যত বিধি-বিধান, শর্তাবলী, নিয়ম-কানূন, শিষ্টাচার আছে, তার সবই পালন করতে হবে। লক্ষ্য থাকবে যে, আমার এ প্রার্থনা যেন আল্লাহর কাছে কবুল হয়।

প্রার্থনার একটি শর্ত হলো, এটা শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে ও তাঁরই উদ্দেশ্যে নিবেদিত হবে। আল্লাহর সঙ্গে দো‘আর সময় অন্য কোনো কিছুকে অংশীদার করা যাবে না। যেমন করে থাকে খ্রিস্টান ও মুশরিকরা। তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে গিয়ে যিশু ও অন্যান্য দেব-দেবীকে আহ্বান করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [الجن: ١٨]

“এবং এ মসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে তোমরা অন্য কাউকে ডাকবে না”[সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

﴿قُلۡ أَرَءَيۡتَكُمۡ إِنۡ أَتَىٰكُمۡ عَذَابُ ٱللَّهِ أَوۡ أَتَتۡكُمُ ٱلسَّاعَةُ أَغَيۡرَ ٱللَّهِ تَدۡعُونَ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٤٠﴾ [الانعام: ٤٠]

“বল, তোমরা ভেবে দেখ যে, আল্লাহর শাস্তি তোমাদের ওপর আপতিত হলে অথবা তোমাদের নিকট কিয়ামত উপস্থিত হলে তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?” [সূরা আল-‘আনআম, আয়াত: ৪০]

যখন বিপদকালে আমরা তাকে ছাড়া অন্য কাউকে ডাকি না তখন নিরাপদ সময়ে তাকে ছাড়া অন্যকে ডাকব কেন, বিপদের সময় যিনি একাই সাহায্য করতে পারেন তিনি কি অন্য সময় একা সাহায্য করতে পারেন না? তাহলে তখন কেন তার সঙ্গে অন্যকে শরীক করা হবে?

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ عِبَادٌ أَمۡثَالُكُمۡۖ ﴾ [الاعراف: ١٩٤]

“আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যাদের আহ্বান কর তারা তো তোমাদেরই মতো বান্দা”[সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯৪]

আল্লাহ আরো বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ لَا يَسۡتَطِيعُونَ نَصۡرَكُمۡ وَلَآ أَنفُسَهُمۡ يَنصُرُونَ ١٩٧﴾ [الاعراف: ١٩٧]  

“আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যাকে আহ্বান কর তারা তো তোমাদের সাহায্য করতে পারে না এবং নিজেদেরও নয়”[সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯৭]

এ সকল আয়াতে আল্লাহ ব্যতীত কথাটি দ্বারা ওই সকল বস্তু ও ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যাদের কাছে প্রার্থনা করা হয়। হোক তা গাছ-পালা, পাহাড়-পর্বত, চাঁদ-সূর্য, আগুন, নবী, অলী, পীর, দেব-দেবী ও প্রতিমা ইত্যাদি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাচাতো ভাই ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে নসীহত করেছিলেন:

«يَا غُلَامُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ، احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ، إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ، وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ، وَلَوْ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ، رُفِعَتِ الأَقْلَامُ وَجَفَّتْ الصُّحُفُ»

“হে খোকা! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিক্ষা দেব: আল্লাহকে হিফাযত কর আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন। আল্লাহকে হেফাজত কর, তুমি তাকে সামনে পাবে। যখন প্রার্থনা করবে তখন আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে। যখন সাহায্য কামনা করবে তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাবে। জেনে রাখ! পুরো জাতি যদি তোমাকে উপকার করতে একত্র হয় তবুও তোমার কোনো উপকার করতে পারবে না, তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা লিখে রেখেছেন। এমনিভাবে পুরো জাতি যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্র হয় তবুও তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, তবে আল্লাহ যা তোমার বিপক্ষে লিখে রেখেছেন। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে আর দফতর শুকিয়ে গেছে”[6]

প্রার্থনাকারীকে রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানো ভাবনা ও ছুমুআ অর্থাৎ সমাজে প্রচার ভাবনা থেকে সর্বদা মুক্ত থাকতে হবে। দো‘আ নিবেদন হতে হবে কেবলই আল্লাহর উদ্দেশ্যে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেই দিয়েছেন:

«مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهِ، وَمَنْ رَاءَى رَاءَى اللهُ بِهِ»

‘যে মানুষকে শুনানোর জন্য কাজ করল আল্লাহ তা মানুষকে শুনিয়ে দেবেন। আর যে মানুষকে দেখানোর জন্য কাজ করল আল্লাহ তা মানুষকে দেখিয়ে দেবেন। (ফলে সে আল্লাহর কাছে এর কোনো বিনিময় পাবে না।)[7]

দো‘আ করার আদবসমূহ

 ১- দো‘আ করার সময় তা কবুল হওয়ার ব্যাপারে এ দৃঢ় বিশ্বাস রাখা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে দো‘আ করা:

যদি আল্লাহ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান থাকে তাঁর কুদরত, মহত্ত্ব, ওয়াদা পালনের প্রতি ঈমান থাকে তাহলে এ বিষয়টা আয়ত্ব করা সহজ হবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَا يَقُولُ أَحَدُكُمُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي إِنْ شِئْتَ، اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي إِنْ شِئْتَ، لِيَعْزِمُ المَسْأَلَةَ فَإِنَّهُ لَا مُكْرِهَ لَهُ».

“তোমাদের কেউ এ রকম বলবে না: হে আল্লাহ আপনি যদি চান তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিন। যদি আপনি চান তাহলে আমাকে অনুগ্রহ করুন। যদি আপনি চান তাহলে আমাকে জীবিকা দান করুন। বরং দৃঢ়তার সঙ্গে প্রার্থনা করবে এবং মনে রাখবে তিনি যা চান তা-ই করেন, তাকে কেউ বাধ্য করতে পারে না”[8]

অর্থাৎ আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা-ই করে থাকেন। তাই এভাবে প্রার্থনা বা মোনাজাত করার কোনো স্বার্থকতা নেই যে, আপনি চাইলে করেন। ঠিক এমনিভাবে তার কাছে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রার্থনা করলে তাকে বাধ্য করা হয় না। কেননা তাকে কেউ বাধ্য করতে পারে না। এটা প্রার্থনাকারীসহ সকলে জানে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ، وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ»

“প্রার্থনা কবুল হবে এ দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তোমরা প্রার্থনা করবে। এবং জেনে রাখ আল্লাহ কোনো উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা কবুল করেন না”[9]

 ২- বিনয় ও একাগ্রতার সঙ্গে দো‘আ করা এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ ও তার শাস্তি থেকে বাঁচার প্রবল আগ্রহ নিয়ে দো‘আ করা:

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعٗا وَخُفۡيَةًۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِينَ ٥٥﴾ [الاعراف: ٥٥]

“তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবের কাছে দো‘আ করবে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না”[সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৫]

আল্লাহ তাআলা বলেন,  

﴿إِنَّهُمۡ كَانُواْ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِ وَيَدۡعُونَنَا رَغَبٗا وَرَهَبٗاۖ ﴾ [الانبياء: ٩٠]

“তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করে ও তারা আমার কাছে প্রার্থনা করে আশা ও ভীতির সঙ্গে এবং তারা থাকে আমার নিকট বিনীত”[সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৯০]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আর সময় বিনয়, ভীতি ও আশা নিয়ে কীভাবে দো‘আ করতেন তার একটি ছোট দৃষ্টান্ত এ হাদীসে দেখা যায়। আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تَلَا قَوْلَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فِي إِبْرَاهِيمَ: {رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي} [إبراهيم: 36] الْآيَةَ، وَقَالَ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ: {إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ} [المائدة: 118]، فَرَفَعَ يَدَيْهِ وَقَالَ: «اللهُمَّ أُمَّتِي أُمَّتِي»، وَبَكَى، فَقَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: «يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ إِلَى مُحَمَّدٍ، وَرَبُّكَ أَعْلَمُ، فَسَلْهُ مَا يُبْكِيكَ؟» فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، فَسَأَلَهُ فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَا قَالَ، وَهُوَ أَعْلَمُ، فَقَالَ اللهُ: " يَا جِبْرِيلُ، اذْهَبْ إِلَى مُحَمَّدٍ، فَقُلْ: إِنَّا سَنُرْضِيكَ فِي أُمَّتِكَ، وَلَا نَسُوءُكَ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের দো‘আ সম্পর্কে কুরআনের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন, হে আমার রব! এ সকল প্রতিমা তো বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত।’ এবং তিনি ঈসা ‘আলাইহিস সালামের দো‘আ সম্পর্কিত কুরআনের এ আয়াতটিও তিলাওয়াত করলেন, ‘তুমি যদি তাদের শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ তিনি দু’হাত উপরে তুললেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মত! আমার উম্মত!!’ এবং তিনি কাঁদলেন। আল্লাহ বললেন, হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও, জিজ্ঞেস কর (অবশ্য তোমরা রব ভালো জানেন) তাকে কিসে কাঁদিয়েছে। জিবরীল আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তাঁর কাঁদার কারণ (আল্লাহ তো অবশ্যই জানেন)। আল্লাহ বললেন, হে জিবরীল, তুমি মুহাম্মদের কাছে যাও এবং বল, আমি অবশ্যই তার উম্মতের ব্যাপারে তাকে সন্তুষ্ট করব, তাকে এ ব্যাপারে অসম্মান করব না”[10]

 ৩-আল্লাহর কাছে অত্যন্ত বিনীতভাবে ধর্না দেওয়া এবং নিজের দুর্বলতা, অসহায়ত্ব ও বিপদের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করা:

দেখুন আইউব ‘আলাইহিস সালাম কীভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন। আল্লাহ সে সম্পর্কে বলেন,

﴿وَأَيُّوبَ إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥٓ أَنِّي مَسَّنِيَ ٱلضُّرُّ وَأَنتَ أَرۡحَمُ ٱلرَّٰحِمِينَ ٨٣﴾ [الانبياء: ٨٣]

“এবং স্মরণ কর আইউবের কথা, যখন সে তার রবের কাছে প্রার্থনা করে বলেছিল, আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আর তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু”[সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৮৩]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের প্রার্থনা সম্পর্কে বলেন,

﴿قَالَ رَبِّ إِنِّي وَهَنَ ٱلۡعَظۡمُ مِنِّي وَٱشۡتَعَلَ ٱلرَّأۡسُ شَيۡبٗا وَلَمۡ أَكُنۢ بِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِيّٗا ٤ وَإِنِّي خِفۡتُ ٱلۡمَوَٰلِيَ مِن وَرَآءِي وَكَانَتِ ٱمۡرَأَتِي عَاقِرٗا فَهَبۡ لِي مِن لَّدُنكَ وَلِيّٗا ٥﴾ [مريم: ٤، ٥]

“সে বলেছিল, হে আমার রব! আমার অস্থি দুর্বল হয়েছে, বার্ধক্যে আমার মস্তক সাদা হয়ে গেছে। হে আমার রব! তোমার কাছে প্রার্থনা করে আমি কখনো ব্যর্থকাম হই নি। আমি আশংকা করি আমার পর আমার সগোত্রীয়দের সম্পর্কে; আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার নিকট হতে দান কর উত্তরাধিকার”[সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৪-৫]

ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের দো‘আ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

﴿رَّبَّنَآ إِنِّيٓ أَسۡكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيۡرِ ذِي زَرۡعٍ عِندَ بَيۡتِكَ ٱلۡمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱجۡعَلۡ أَفۡ‍ِٔدَةٗ مِّنَ ٱلنَّاسِ تَهۡوِيٓ إِلَيۡهِمۡ وَٱرۡزُقۡهُم مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمۡ يَشۡكُرُونَ ٣٧﴾ [ابراهيم: ٣٧]

“হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করালাম, হে আমাদের রব, যাতে তারা সালাত কায়েম করে। সুতরাং কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদেরকে রিযিক প্রদান করুন ফল-ফলাদি থেকে, আশা করা যায় তারা শুকরিয়া আদায় করবে”[সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৭]

কুরআন কারীমে এ ধরনের বহু আয়াত আছে যাতে তুলে ধরা হয়েছে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম কীভাবে কাতরতা ও বিনয়ের সঙ্গে নিজেদের করুণ অবস্থা আল্লাহর কাছে তুলে ধরেছেন। মুমিনদের কর্তব্য ঠিক এমনিভাবে আল্লাহর কাছে দো‘আ ও প্রার্থনা করা।

 ৪- দো‘আয় আল্লাহর হামদ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দুরূদ পেশ করা:

দো‘আর শুরুতে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দুরূদ পড়া দো‘আ কবুলের সহায়ক বলে হাদীসে এসেছে। ফুযালা ইবন উবাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«سَمِعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا يَدْعُو فِي صَلَاتِهِ لَمْ يُمَجِّدِ اللَّهَ تَعَالَى، وَلَمْ يُصَلِّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَجِلَ هَذَا»، ثُمَّ دَعَاهُ فَقَالَ لَهُ: - أَوْ لِغَيْرِهِ - «إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ، فَلْيَبْدَأْ بِتَمْجِيدِ رَبِّهِ جَلَّ وَعَزَّ، وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ، ثُمَّ يُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يَدْعُو بَعْدُ بِمَا شَاءَ»

“একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন এক ব্যক্তি দো‘আ করছে কিন্তু সে দো‘আতে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূলের প্রতি দুরূদ পাঠ করে নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, সে তাড়াহুড়ো করেছে। অতঃপর সে আবার প্রার্থনা করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অথবা অন্যকে বললেন, যখন তোমাদের কেউ দো‘আ করে তখন সে যেন আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তার গুণগান দিয়ে দো‘আ শুরু করে। অতঃপর রাসূলের প্রতি দুরূদ পাঠ করে। এরপর যা ইচ্ছা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে”[11]

 (৫) আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও তাঁর মহৎ গুণাবলি দ্বারা দো‘আ করা:

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ ﴾ [الاعراف: ١٨٠]

“আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব, তোমরা তাকে সে সকল নাম দিয়ে প্রার্থনা করবে”[সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত: ১৮০]

আল্লাহ তাআলার সুন্দর নাম ও মহান গুণাবলির মাধ্যমে দো‘আ করার কথা আল-কুরআনে ও হাদীসে বহু স্থানে এসেছে। যেমন, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ يَتَهَجَّدُ، قَالَ: " اللَّهُمَّ لَكَ الحَمْدُ، أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الحَمْدُ، أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الحَمْدُ، أَنْتَ الحَقُّ، وَوَعْدُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَالجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ المُقَدِّمُ وَأَنْتَ المُؤَخِّرُ، لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ».

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন তাহাজ্জুদ পড়তে দাঁড়াতেন তখন বলতেন, হে আল্লাহ আপনারই প্রশংসা, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীসমূহে ও তাতে যা কিছু আছে আপনি তার জ্যোতি। আপনারই প্রশংসা, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীসমূহে এবং তাতে যা কিছু আছে আপনি তার ধারক। আপনারই প্রশংসা, আপনি সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, আপনার কথা সত্য, আপনার সঙ্গে সাক্ষাত সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, কিয়ামত সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মদ সত্য। হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আত্মসমর্পন করেছি। আপনার ওপরই নির্ভর করেছি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি। আপনার দিকে ফিরে এসেছি। আপনার জন্য বিবাদ করেছি। আপনাকেই বিচারক মেনেছি। অতএব আপনি আমার পূর্ব ও পরের গোপন ও প্রকাশ্যের পাপগুলো ক্ষমা করে দিন। আপনি শুরু আপনি শেষ। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই”[12]

এ হাদীসে দেখা গেল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আয় কীভাবে আল্লাহর গুণগান করছেন। আল্লাহর সুন্দর নামগুলো উল্লেখ করেছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন শুনলেন এক ব্যক্তি সালাতে আত্তাহিয়্যাতুর বৈঠকে এ বলে দো‘আ করছে:

«اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ يَا اَللَّهُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ، أَنْ تَغْفِرَ لِي ذُنُوبِي، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ، قَالَ: فَقَالَ: «قَدْ غُفِرَ لَهُ، قَدْ غُفِرَ لَهُ»

“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি- আপনি তো এক; অদ্বিতীয়, যিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয় নি। কেউ নেই তাঁর সমকক্ষ- আপনি আমার পাপগুলো ক্ষমা করুন। আপনি পরম ক্ষমাশীল ও দয়াময়। এ প্রার্থনা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে! তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে”[13]

উল্লিখিত ব্যক্তি আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলির মাধ্যমে দো‘আ করার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আ কবুলের সংবাদ দিলেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেক ব্যক্তিকে দেখলেন সালাতে তাশাহহুদে সে এ বলে দো‘আ করছে:

«اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، إِنِّي أَسْأَلُكَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَصْحَابِهِ: «تَدْرُونَ بِمَا دَعَا؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَقَدْ دَعَا اللَّهَ بِاسْمِهِ الْعَظِيمِ، الَّذِي إِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ، وَإِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى»

“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি -এ কথার অসীলায় যে, সকল প্রশংসা আপনার, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনি দানশীল, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা, হে মহিমময় ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব ও সর্ব সত্তার ধারক!- আপনার কাছে জান্নাত চাচ্ছি এবং মুক্তি চাচ্ছি জাহান্নাম থেকে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ প্রার্থনা শুনে তার সাহাবীদের বললেন: তোমরা কি জানো, সে কি দিয়ে দো‘আ করেছে? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেন: সে আল্লাহর মহান নাম দিয়ে দো‘আ করেছে। যে ব্যক্তি এ নামের মাধ্যমে দো‘আ করবে তার দো‘আ তিনি কবুল করবেন। (অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে ইসমে আজম দিয়ে দো‘আ করেছে)[14]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«دَعْوَةُ ذِي النُّونِ إِذْ دَعَا وَهُوَ فِي بَطْنِ الحُوتِ: لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ، فَإِنَّهُ لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلاَّ اسْتَجَابَ اللَّهُ لَهُ».

“ইউনূস ‘আলাইহিস সালামের প্রার্থনা (যখন তিনি মাছের পেটে ছিলেন) তুমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই তুমি পবিত্র, মহান! আমি তো সীমালংঘনকারী। যে কোনো মুসলিম এ কথা দিয়ে প্রার্থনা করবে তার প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করবেন”[15]

 ৬- পাপ ও গুনাহ স্বীকার করে প্রার্থনা করা:

যেমন, হাদীসে এসেছে: সাদ্দাদ ইবন আউস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,

«سَيِّدُ الِاسْتِغْفَارِ أَنْ تَقُولَ: اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ " قَالَ: «وَمَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوقِنًا بِهَا، فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ، وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوقِنٌ بِهَا، فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ»

“সেরা ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনার বাক্য) হলো তুমি এভাবে বলবে, হে আল্লাহ! তুমি আমার রব। তুমি ছাড়া সত্যিকার কোনো মাবুদ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছে। আর আমি তোমার বান্দা। তোমার সঙ্গে কৃত ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতির ওপর আমি আমার সাধ্যমত অটল রয়েছি। আমি যা কিছু করেছি তার অপকারিতা হতে তোমার আশ্রয় নিচ্ছি। আমার প্রতি তোমার যে নি‘আমত তা স্বীকার করছি। আর স্বীকার করছি তোমার কাছে আমার অপরাধ। তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তুমি ছাড়া আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না।

যে সকালে দৃঢ় বিশ্বাসে এটা পাঠ করবে সে যদি ওই দিনে সন্ধ্যার পূর্বে মারা যায় তাহলে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যদি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সন্ধ্যায় পাঠ করে, এবং সকাল হওয়ার পূর্বে সে ইন্তেকাল করে তাহলে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে”।[16]

এ হাদীসে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম ইস্তেগফার শিক্ষা দিয়েছেন। তাতে প্রার্থনাকারী নিজ পাপ স্বীকার করে প্রার্থনা করছেন। এ প্রার্থনা কবুল হওয়ার সুসংবাদও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন।

 ৭- প্রার্থনাকারী নিজের কল্যাণের দো‘আ করবে নিজের বা কোনো মুসলিমের অনিষ্টের দো‘আ করবে না:

নিজের কল্যাণের জন্য দো‘আ করলে তা কবুল হওয়ার ওয়াদা আছে আর অকল্যাণ বা পাপ নিয়ে আসতে পারে এমন দো‘আ করলে তা কবুল হবে না বলে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ لَيْسَ فِيهَا إِثْمٌ، وَلَا قَطِيعَةُ رَحِمٍ، إِلَّا أَعْطَاهُ اللَّهُ بِهَا إِحْدَى ثَلَاثٍ: إِمَّا أَنْ تُعَجَّلَ لَهُ دَعْوَتُهُ، وَإِمَّا أَنْ يَدَّخِرَهَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ، وَإِمَّا أَنْ يَصْرِفَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا " قَالُوا: إِذًا نُكْثِرُ، قَالَ: «اللَّهُ أَكْثَرُ»

“যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দো‘আ করে, যে দো‘আতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দো‘আ অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দো‘আ সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দো‘আর প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দো‘আর মাধ্যমে তার দিকে আগুয়ান কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দো‘আ করতে থাকবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন”[17]

তিনি আরো বলেন,

«لَا يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ، مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ »

“বান্দার দো‘আ কবুল হয় যদি তাতে পাপ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা না থাকে”[18]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেঅ বলেন,

«لَا تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَوْلَادِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَمْوَالِكُمْ»

“তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে দো‘আ করবে না, নিজেদের সন্তানদের বিরুদ্ধে দো‘আ করবে না এবং নিজেদের সম্পদের বিরুদ্ধে দো‘আ করবে না”[19]

 ৮- সৎকাজের অসীলা দিয়ে দো‘আ করা

যেমন, সহীহ হাদীসে বিপদগ্রস্ত তিন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যারা এক ঝড়-বৃষ্টির রাতে পাথর ধসে পড়ার কারণে পাহাড়ের গুহায় আটকে পড়েছিল। তারা তখন প্রত্যেকে নিজ নেক আমলের অসীলা দিয়ে প্রার্থনা করেছিল। একজন মাতা-পিতার উত্তম সেবার কথা বলেছিল। দ্বিতীয়জন ব্যভিচারের সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও এ কাজ থেকে বিরত থেকে ছিল। তৃতীয়জন এক ব্যক্তির আমানত রক্ষা ও তাকে ফেরত দিয়েছিল। এরা প্রত্যেকে বলেছিল, হে আল্লাহ আমি যদি এ কাজটি আপনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য করে থাকি তাহলে এ কাজের অসীলায় আমাকে নিশ্চিত মৃত্যুর এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। আল্লাহ তিনজনের প্রার্থনাই কবুল করে তাদের বিপদ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন”।[20]

এ হাদীসে দেখা যায় যে নেক আমলের অসীলা দিয়ে দো‘আ করলে দো‘আ কবুল হয়।

 ৯- বেশি বেশি করে ও বার বার দো‘আ প্রার্থনা করা:

যেমন হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِذَا سَأَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيُكْثِرْ، فَإِنَّهُ يَسْأَلُ رَبَّهُ»

“তোমাদের কেউ যখন দো‘আ করে সে যেন বেশি করে দো‘আ করে কেননা সে তার প্রভুর কাছে প্রার্থনা কছে”[21]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«لَا يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ، مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ، مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ مَا الِاسْتِعْجَالُ؟ قَالَ: يَقُولُ: «قَدْ دَعَوْتُ وَقَدْ دَعَوْتُ، فَلَمْ أَرَ يَسْتَجِيبُ لِي، فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ وَيَدَعُ الدُّعَاءَ»

“বান্দার দো‘আ কবুল করা হয় যদি সে দো‘আতে পাপ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের ছিন্ন করার কথা না বলে এবং তাড়াহুড়ো না করে। জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াহুড়ো বলতে কি বুঝায়, তিনি বললেন, দো‘আতে তাড়াহুড়া হলো, প্রার্থনাকারী বলে আমিতো দো‘আ করলাম কিন্তু কবুল হতে দেখলাম না। ফলে সে নিরাশ হয় ও দো‘আ করা ছেড়ে দেয়”[22]

দো‘আ কবুল হতে না দেখলে নিরাশ হওয়া উচিৎ নয়। কারণ, মুমিন ব্যক্তির দো‘আ কখনো বৃথা যায় না। হাদীসে এসেছে:

«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ لَيْسَ فِيهَا إِثْمٌ، وَلَا قَطِيعَةُ رَحِمٍ، إِلَّا أَعْطَاهُ اللَّهُ بِهَا إِحْدَى ثَلَاثٍ: إِمَّا أَنْ تُعَجَّلَ لَهُ دَعْوَتُهُ، وَإِمَّا أَنْ يَدَّخِرَهَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ، وَإِمَّا أَنْ يَصْرِفَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا " قَالُوا: إِذًا نُكْثِرُ، قَالَ: «اللَّهُ أَكْثَرُ»

“যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দো‘আ করে, যে দো‘আতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দো‘আ অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দো‘আ সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দো‘আর প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দো‘আর মাধ্যমে তার দিকে আগুয়ান কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দো‘আ করতে থাকবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন”[23]  

এ হাদীসে যেমন দো‘আ কখনো বৃথা যায় না বলে উল্লেখ করা হয়েছে তেমনি বেশি করে দো‘আ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।

 ১০- সুখে দুঃখে সর্বাবস্থায় দো‘আ করা:

মানুষ কখনো সুখের সময় অতিবাহিত করে কখনো দুঃখের সময়। অনেক মানুষ এমন আছে যারা শুধু বিপদে পড়ে আল্লাহকে ডাকেন ও প্রার্থনা করেন। আবার অনেকে এমন আছেন যারা বিপদে পড়লে আল্লাহকে ডাকতে ভুলে যান। কিন্তু সত্যিকার মুমিন ব্যক্তি সুখে ও দুঃখে সর্বদা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَسْتَجِيبَ اللَّهُ لَهُ عِنْدَ الشَّدَائِدِ وَالكَرْبِ فَلْيُكْثِرِ الدُّعَاءَ فِي الرَّخَاءِ»

“যে চায় আল্লাহ বিপদ-মুসীবতে তার প্রার্থনা কবুল করুন সে যেন সুখের সময় আল্লাহর কাছে বেশি করে প্রার্থনা করে”[24]

 ১১- দো‘আর বাক্য তিনবার করে উচ্চারণ করা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি পথ-নির্দেশ হলো তিনি কোনো কোনো দো‘আর বাক্য তিনবার করে উচ্চারণ করতেন। যখন মুশরিকরা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতাবস্থায় উটের নাড়ী-ভুঁড়ি তাঁর পিঠের ওপর রাখল তখন তিনি সালাত শেষ করে দো‘আ করলেন এভাবে:

«اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ، اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ، اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ»، ثُمَّ سَمَّى: «اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِعَمْرِو بْنِ هِشَامٍ، وَعُتْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ، وَشَيْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ، وَالوَلِيدِ بْنِ عُتْبَةَ، وَأُمَيَّةَ بْنِ خَلَفٍ، وَعُقْبَةَ بْنِ أَبِي مُعَيْطٍ وَعُمَارَةَ بْنِ الوَلِيدِ» قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: فَوَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُهُمْ صَرْعَى يَوْمَ بَدْرٍ، ثُمَّ سُحِبُوا إِلَى القَلِيبِ، قَلِيبِ بَدْرٍ، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَأُتْبِعَ أَصْحَابُ القَلِيبِ لَعْنَةً»

“হে আল্লাহ কুরাইশদের তুমি পাকড়াও করো! হে আল্লাহ কুরাইশদের তুমি পাকড়াও করো!! হে আল্লাহ কুরাইশদের তুমি পাকড়াও করো!!! অতঃপর তিনি তাদের নাম উল্লেখ করলেন: হে আল্লাহ তুমি পাকড়াও কর আমর ইবন হিশামকে, উতবা ইবন রাবীয়াকে, শাইবা ইবন রবীয়াকে, অলীদ ইবন উতবাকে, উমাইয়া ইবন খালাফকে, উতবা ইবন আবি মুয়ীত এবং আম্মারা ইবন অলীদকে। আব্দুল্লাহ বলেন, বদর যুদ্ধের দিন এ সকল লোকদের লাশ পড়ে থাকতে দেখলাম। অতঃপর এদের লাশগুলোকে টেনে বদরের কূপে নিক্ষেপ করা হলো। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: কূপবাসীর ওপর অভিশাপ অব্যাহত থাকবে”[25]

দো‘আর বাক্য তিনবার করে উচ্চারণ করলে প্রার্থনাকারীর মনোযোগ ও একাগ্রতা বেশি হয় যা দো‘আ কবুলে সহায়ক হয়।

 ১২- দো‘আয় উচ্চস্বর পরিহার করা

অনেক মানুষকে দেখা যায় তারা দো‘আ করার সময় আওয়াজ উঁচু করেন বা চিৎকার করে দো‘আ করেন। এটা দো‘আর আদবের পরিপন্থী। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعٗا وَخُفۡيَةًۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِينَ ٥٥﴾ [الاعراف: ٥٥]

“তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের প্রতিপালকের কাছে দো‘আ কর। তিনি সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না”[সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৫]

এ আয়াতে গোপনে দো‘আ করতে বলা হয়েছে এবং দো‘আয় সীমালংঘন সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।

প্রায় সকল তাফসীরবিদের অভিমত হলো, এ আয়াতে সীমালংঘনকারী বলতে তাদের বুঝানো হয়েছে যারা উচ্চ আওয়াযে দো‘আ করে।

আল্লাহ তা‘আলা নবী যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের প্রশংসায় বলেছেন:

﴿إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥ نِدَآءً خَفِيّٗا ٣﴾ [مريم: ٣]

“যখন সে তার রবের কাছে প্রার্থনা করেছিল নিভৃতে”[সূরা মারইয়াম, আয়াত: ০৩]

এ আয়াতে গোপনে দো‘আ করতে বলা হয়েছে এবং দো‘আতে সীমালংঘন থেকে সতর্ক করা হয়েছে।

অপর দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، إِنَّكُمْ لَيْسَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا، إِنَّكُمْ تَدْعُونَ سَمِيعًا قَرِيبًا، وَهُوَ مَعَكُمْ»

“হে মানব সকল! তোমরা নিজেদের ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। তোমরা কোনো বধির বা অসুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না। তোমরাতো ডাকছ এমন সত্তাকে যিনি সর্বশ্রোতা ও অতি নিকটে এবং তোমাদেরই সঙ্গে”[26]

যখন একদল সাহাবী উচ্চ আওয়াজে দো‘আ করছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছিলেন।

 ১৩- দো‘আ- প্রার্থনার পূর্বে অযু করা:

আবূ মূসা ‘আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে: তিনি বলেন,

«دَعَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَاءٍ، فَتَوَضَّأَ مِنْهُ، ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: «اللهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِي عَامِرٍ» حَتَّى رَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: «اللهُمَّ اجْعَلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَوْقَ كَثِيرٍ مِنْ خَلْقِكَ، أَوْ مِنَ النَّاسِ» فَقُلْتُ: وَلِي، يَا رَسُولَ اللهِ فَاسْتَغْفِرْ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسٍ ذَنْبَهُ، وَأَدْخِلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُدْخَلًا كَرِيمًا»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দো‘আ করতে ইচ্ছা করলেন তখন পানি চাইলেন, অযু করলেন অতঃপর দু’হাত তুলে বললেন: ‘হে আল্লাহ! তুমি কিয়ামতে তাকে অনেক মানুষের উপরে স্থান দিও। আমি বললাম আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আব্দুল্লাহ ইবন কায়েসের পাপ ক্ষমা কর এবং কিয়ামতের দিন তাকে সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করিও”[27]

এ হাদীসে দেখা গেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আ করার পূর্বে অযূ করে নিলেন। ইবন হাজার রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ হাদীস দ্বারা আমরা জানলাম যে, দো‘আ করার পূর্বে অযূ করে নেওয়া মুস্তাহাব।[28]


 ১৪- দো‘আয় দু’হাত উত্তোলন করা:

যেমন, হাদীসে এসেছে, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«رَفَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدٌ مَرَّتَيْنِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুহাত তুললেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! খালেদ যা করেছে আমি সে ব্যাপারে তোমার কাছে দায়িত্বমুক্ত। দু’বার বললেন”[29]

আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِي عَامِرٍ» وَرَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ»

“অতঃপর, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু হাত তুললেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! তুমি উবাইদ আবি আমেরকে ক্ষমা করে দিও। তিনি এতটা হাত তুললেন যে আমি তার বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম”[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৪০]

 ১৫- কিবলামুখী হওয়া

দো‘আর সময় কিবলামুখী হওয়া মুস্তাহাব। যেমন, হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«اسْتَقْبَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الكَعْبَةَ، " فَدَعَا عَلَى نَفَرٍ مِنْ قُرَيْشٍ»

“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার দিকে মুখ করলেন এবং কতিপয় কুরাইশ নেতাদের বিরুদ্ধে দো‘আ করলেন”[30]

প্রার্থনাকারী যা থেকে দূরে থাকবেন

 এক. আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দো‘আ করা

যখন স্পষ্ট হলো দো‘আ হলো সর্বোত্তম ইবাদত ও সর্বশ্রেষ্ঠ আনুগত্য এবং যা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিবেদন করা মানুষের জন্য কর্তব্য। হোক তা প্রার্থনা অথবা আশ্রয় চাওয়া কিংবা বিপদ-মুক্তি, তা আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো কাছে পেশ করা বৈধ নয়। যে এটা আল্লাহ ব্যতিত অন্যের কাছে পেশ করবে সে কাফির হয়ে যাবে, বের হয়ে যাবে মুসলিম মিল্লাত থেকে। যে সকল বিষয় মানুষ সাহায্য করতে সামর্থ রাখে শুধু সে সকল বিষয় মানুষের কাছে চাওয়া বৈধ। আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা যাবে না হোক নবী বা অলী বা পীর বা গাউছ-কুতুব অথবা ফিরিশতা বা জিন্ন এক কথায় কোনো সৃষ্টিজীবের কাছে দো‘আ করা যাবে না। আল্লাহ বলেন,

﴿وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦ وَإِن يَمۡسَسۡكَ ٱللَّهُ بِضُرّٖ فَلَا كَاشِفَ لَهُۥٓ إِلَّا هُوَۖ وَإِن يُرِدۡكَ بِخَيۡرٖ فَلَا رَآدَّ لِفَضۡلِهِۦۚ يُصِيبُ بِهِۦ مَن يَشَآءُ مِنۡ عِبَادِهِۦۚ وَهُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ١٠٧﴾ [يونس: ١٠٦، ١٠٧]

“এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না, যা তোমার উপকার করে না, অপকারও করতে পারে না। কারণ, এরূপ করলে তুমি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এবং আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দিলে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই এবং আল্লাহ যদি মঙ্গল চান তবে তার অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”[31]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَۘ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۚ كُلُّ شَيۡءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجۡهَهُۥۚ لَهُ ٱلۡحُكۡمُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ٨٨﴾ [القصص: ٨٨]

“তুমি আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো ইলাহকে ডাকবে না, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহর সত্বা ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তারই এবং তারই নিকট তোমরা ফিরে যাবে”[সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৮৮]

আল্লাহ আরো বলেন,

﴿وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّن يَدۡعُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَن لَّا يَسۡتَجِيبُ لَهُۥٓ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَهُمۡ عَن دُعَآئِهِمۡ غَٰفِلُونَ ٥ وَإِذَا حُشِرَ ٱلنَّاسُ كَانُواْ لَهُمۡ أَعۡدَآءٗ وَكَانُواْ بِعِبَادَتِهِمۡ كَٰفِرِينَ ٦﴾ [الاحقاف: ٥، ٦]

“সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তাকে সাড়া দেবে না? এবং এগুলো তাদের প্রার্থনা সম্পর্কেও অবহিত নয়। যখন কিয়ামতের দিন মানুষকে একত্র করা হবে তখন এগুলো হবে তাদের শত্রু এবং এগুলো তাদের ইবাদত স্বীকার করবে”[সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ৫-৬]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [الجن: ١٨]

“এবং এ মসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে তোমরা অন্য কাউকে ডাকবে না”[সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ مَاتَ وَهْوَ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ»

“যে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করল যে জাহান্নামে প্রবেশ করল”[32]

আল্লাহর প্রতি মানুষের সবচেয়ে বড় অবিচার ও সীমালংঘন হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা। এটা হলো শিরক। আর আল্লাহ শির্কের অপরাধ কখনো ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ বলেন,

﴿إِنَّ ٱلشِّرۡكَ لَظُلۡمٌ عَظِيمٞ ١٣﴾ [لقمان: ١٣]

“নিশ্চয় শির্ক চরম যুলুম”[সূরা লুকমান, আয়াত: ১৩]

আল্লাহ আরো বলেন,

﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠﴾ [الكهف: ١١٠]

“সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাত কামনা করে সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে”[সূরা আল-কাহফ, আয়াত: ১১০]

মৃত ব্যক্তির কাছে দো‘আ করা, তার কাছে নিজের প্রয়োজন পেশ করা, বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য তাদের মাযারে ধর্না দেওয়া, তাদের কাছে তাওয়াজ্জুহ লাভের আশা করা, তাদের কবরে যেয়ে দো‘আ করা হলো মারাত্মক শির্কের অন্তর্ভুক্ত।

যারা কবরে শায়িত, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাদের সকল আমল বন্ধ হয়ে গেছে। তারা এখন নিজেদের কোনো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারে না, তাহলে প্রার্থনাকারীর প্রয়োজন পূরণ করবে কীভাবে? যারা তাদের কাছে দো‘আ করে তাদের কোনো ধরনের উপকার বা ক্ষতি তারা কখনো করতে পারে না। অনেকে মনে করেন, তাদের মাযারে যেয়ে নিজেদের প্রয়োজন সম্পর্কে দো‘আ করলে কবরবাসী অলী বা পীর আল্লাহর কাছে দো‘আ কবুলের জন্য সুপারিশ করবেন। আমরাতো এ ধারণা করি না যে তারা নিজেরা আমাদের কোনো কিছু দিতে পারবেন।

ভালো কথা বটে, কিন্তু এ ধারণা করাই তো শিরক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তারাতো দেব-দেবীগুলোকে সৃষ্টিকর্তা বা মৃত্যু দাতা কিংবা রিযিকদাতা মনে করত না। এ সকল ব্যাপারে তারা আল্লাহকে প্রভু বলে স্বীকার করত। কিন্তু তারা মনে করত এ সকল দেব-দেবী আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করবে এবং এগুলোর মাধ্যমে তারা আল্লাহ নৈকট্য ও অনুগ্রহ লাভ করবে। যেমন, তাদের বক্তব্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

﴿مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ﴾ [الزمر: ٣]

(তারা বলে) আমরা এদের উপাসনা এজন্য করি যে, তারা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দেবে”[সূরা আয-যুমার, আয়াত: ০৩]

তাই এ ধারণা পোষণ করা যে নবী বা অলীর মাযারে গিয়ে আল্লাহর কাছে দো‘আ করলে তারা আমাদের দো‘আ কবুলের ব্যাপারে সুপারিশ করবেন- মস্তবড় শির্ক। যদি নবী বা কোনো গাউস-কুতুব বা আওলিয়ার কবরে গিয়ে আল্লাহর কাছে দো‘আ করা শির্ক হয় তাহলে তাদের কাছে দো‘আ করা কত বড় জঘন্য শির্ক! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুগের নিকৃষ্ট মুশরিকরাও এ ধরনের শির্ক করত না। আল্লাহ সকল মুসলিমকে শির্ক থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। তিনি যাকে সঠিক পথ দেখান সে সঠিক পথের দিশা পেয়ে থাকে।

 দুই. দো‘আয় সীমালংঘন করা

আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعٗا وَخُفۡيَةًۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِينَ ٥٥ ﴾ [الاعراف: ٥٥]

“তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবের কাছে দো‘আ কর। তিনি সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না”[সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৫]

এ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তিনি সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না। তাই দো‘আর মধ্যে সীমালংঘন করলে আল্লাহ সে দো‘আ কবুল করবেন না।

দো‘আয় সীমালংঘন কী? এ সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা যেতে পারে:

 (ক) উচ্চস্বরে বা চিৎকার করে দো‘আ করা

একদল সাহাবী অবলম্বন প্রার্থনা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের লক্ষ্য করে বললেন:

«أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، إِنَّكُمْ لَيْسَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا، إِنَّكُمْ تَدْعُونَ سَمِيعًا قَرِيبًا، وَهُوَ مَعَكُمْ»

“হে মানব সকল! তোমরা নিজেদের ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। তোমরা কোনো বধির বা অসুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না। তোমরাতো ডাকছ এমন সত্তাকে যিনি সর্বশ্রোতা ও অতি নিকটে এবং তোমাদেরই সঙ্গে”[33]

 (খ) দো‘আয় শির্ক করা

আল্লাহ ব্যতীত কোনো নবী, অলী বা পীরদের মাজারে দো‘আ করা, গাছ, পাথর, পাহাড়, দেব-দেবী, প্রতিকৃতির সামনে দো‘আ করা শির্ক। এমনিভাবে দো‘আতে এমন অসীলা দেওয়া, কুরআন বা সহীহ হাদীসে যার প্রমাণ নেই তাও শির্ক।

 (গ) বিদ‘আতী পন্থায় দো‘আ করা

এমন পদ্ধতিতে দো‘আ করা যে পদ্ধতি কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। যেমন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর প্রতিদিন জামাআতের সঙ্গে দো‘আ করা এবং এটাকে সুন্নাত মনে করা। এমনিভাবে জানাযার সালাতের সালাম ফিরানোর পরপরই জামা‘আতবদ্ধভাবে দো‘আ করা।

 (ঘ) নিজের মৃত্যু কামনা করে দো‘আ করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ المَوْتَ مِنْ ضُرٍّ أَصَابَهُ، فَإِنْ كَانَ لاَ بُدَّ فَاعِلًا، فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الحَيَاةُ خَيْرًا لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الوَفَاةُ خَيْرًا لِي»

“বিপদ-মুসীবতের কারণে তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি এ সম্পর্কে কোনো দো‘আ করতেই হয় তবে বলবে: হে আল্লাহ! যতক্ষণ আমার জীবন আমার জন্য কল্যাণকর হয় ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখুন। আর যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হবে তখন আমাকে মৃত্যু দান করুন”[34]

হাদীসে আরো এসেছে: কায়েস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلْنَا عَلَى خَبَّابٍ، نَعُودُهُ، وَقَدْ اكْتَوَى سَبْعَ كَيَّاتٍ، فَقَالَ: «لَوْلاَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَانَا أَنْ نَدْعُوَ بِالْمَوْتِ لَدَعَوْتُ بِهِ»

“আমরা খাব্বাব ইবনুল আরতের অসুস্থতা দেখার জন্য গিয়েছিলাম। তাকে সাতটি ছেকা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বললেন, যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করতে নিষেধ না করতেন তাহলে আমি মৃত্যু কামনা করে প্রার্থনা করতাম”[35]

 (ঙ) আখিরাতের শাস্তি দুনিয়াতে কামনা করা

এমনভাবে দো‘আ করা যাবে না যে, হে আল্লাহ! তুমি আমার এ অপরাধের শাস্তি আখিরাতে না দিয়ে দুনিয়াতে দিয়ে দাও। হাদীসে এসেছে:

«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَادَ رَجُلًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ قَدْ خَفَتَ فَصَارَ مِثْلَ الْفَرْخِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ كُنْتَ تَدْعُو بِشَيْءٍ أَوْ تَسْأَلُهُ إِيَّاهُ؟» قَالَ: نَعَمْ، كُنْتُ أَقُولُ: اللهُمَّ مَا كُنْتَ مُعَاقِبِي بِهِ فِي الْآخِرَةِ، فَعَجِّلْهُ لِي فِي الدُّنْيَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " سُبْحَانَ اللهِ لَا تُطِيقُهُ - أَوْ لَا تَسْتَطِيعُهُ - أَفَلَا قُلْتَ: اللهُمَّ آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ " قَالَ: فَدَعَا اللهَ لَهُ، فَشَفَاهُ».

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মুসলমানের অসুস্থতা দেখার জন্য আসলেন। লোকটি খুবই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি আল্লাহর কাছে কোনো দো‘আ করেছিলে বা কিছু চেয়েছিলে?’ সে বলল, হা, আমি দো‘আ করতাম হে আল্লাহ! আপনি যদি আখেরাতে আমাকে ক্ষমা না করেন তাহলে দুনিয়াতেই আমাকে শাস্তি দিয়ে দেন। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সুবহানাল্লাহ! তুমি তা বরদাশ্‌ত করতে পারবে না বা সহ্য করতে পারবে না, বরং তুমি এ রকম প্রার্থনা কেন করলে না যে, হে আল্লাহ! দুনিয়াতে আমাদের কল্যাণ দাও এবং কল্যাণ দাও আখেরাতে। এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের মুক্ত রাখো। এরপর সে আল্লাহর কাছে এ দো‘আ করল। ফলে আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দিলেন”।[36]

 তিন. আল্লাহর রহমতকে সীমিত করার প্রার্থনা:

এমন প্রার্থনা করা, হে আল্লাহ আমার শষ্যক্ষেত্রে আপনি বরকত দিন অন্য কাউকে নয়। আমার সন্তানদের মানুষ করেন অন্যদের নয়। আমাকে রিযিক দেন অন্যকে নয়। এ ধরনের দো‘আ করা নিষেধ। যেমন, হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صَلاَةٍ وَقُمْنَا مَعَهُ، فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ وَهُوَ فِي الصَّلاَةِ: اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي وَمُحَمَّدًا، وَلاَ تَرْحَمْ مَعَنَا أَحَدًا. فَلَمَّا سَلَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِلْأَعْرَابِيِّ: «لَقَدْ حَجَّرْتَ وَاسِعًا»

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আমরা সালাতে দাঁড়ালাম। সালাতের মধ্যে এক গ্রাম্য ব্যক্তি এ বলে দো‘আ কর, হে আল্লাহ! আমার প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং মুহাম্মদ এর প্রতিও। আমাদের মধ্যে অন্য কাউকে অনুগ্রহ করবেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরালেন তখন ওই গ্রাম্য ব্যক্তিকে বললেন, যা ব্যাপক, তাকে তুমি সীমিত করে দিলে”[37]

 চার. নিজের, পরিবারের বা সম্পদের বিরুদ্ধে দো‘আ করা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَا تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَوْلَادِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَمْوَالِكُمْ»

“তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে দো‘আ করবে না, নিজেদের সন্তানদের বিরুদ্ধে দো‘আ করবে না এবং নিজেদের সম্পদের বিরুদ্ধে দো‘আ করবে না”[38]

 পাঁচ. ছন্দ ও সুর সহযোগে দো‘আ করা

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইকারামা রহ.-কে নসীহত করতে গিয়ে বলেছেন:

«فَانْظُرِ السَّجْعَ مِنَ الدُّعَاءِ فَاجْتَنِبْهُ»، فَإِنِّي عَهِدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابَهُ لَا يَفْعَلُونَ إِلَّا ذَلِكَ يَعْنِي لاَ يَفْعَلُونَ إِلَّا ذَلِكَ الِاجْتِنَابَ»

“দো‘আয় ছন্দ ও সুর-সঙ্গীত পরিহার করবে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের যুগ পেয়েছি। তারা সকলে এটা পরিহার করেই চলতেন”[39]

দো‘আ কবুলের অন্তরায়সমূহ

 ১- হারাম খাদ্য হারাম বস্ত্র ও হারাম পানীয়

মানুষের খাদ্য-পানীয় যেমন শরীর গঠনে ভুমিকা রাখে তেমনি প্রাণ ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা আছে। খারাপ-পঁচা খাবার যেমন শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তেমনি অবৈধ পথে উপার্জিত সম্পদ ও খাবারও আত্মা ও প্রাণের ক্ষতি সাধন করে। সুদ, ঘুষ, প্রতারণা, চুরি, ডাকাতি, অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে ভোগ দখল, ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাত প্রভৃতি অবৈধ পদ্ধতিতে অর্জিত খাবার খেয়ে বা পোশাক পড়ে দো‘আ করলে তা আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। হাদীসে এসেছে: আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ} [المؤمنون: 51] وَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ} [البقرة: 172] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟»

 “হে মানব সকল! আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। তিনি এ ব্যাপারে মুমিনদের সে নির্দেশই দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলদেরকে। তিনি বলেছেন: হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর; তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত। এবং তিনি (মুমিনদের উদ্দেশে) বলেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি তা হতে আহার কর। এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা বললেন, যে দীর্ঘ সফর করে মাথার চুলগুলোকে এলোমেলো করেছে এবং পদযুগল ধুলায় ধুসরিত করেছে অতঃপর আকাশের দিকে হাত তুলে দো‘আ করে, হে প্রভু! হে প্রভু! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার শরীর গঠিত হয়েছে হারাম দিয়ে, কীভাবে তার দো‘আ কবুল করা হবে?”[40]

এ হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যে হারাম খাদ্য খায়, হারাম পন্থায় উপার্জন করে, হারাম উপার্জনের কাপড় পড়ে তার দো‘আ কবুল হতে পারে না। সে যত বড় লম্বা সফর করুক এবং দো‘আ কবুলের যত অনুকূল পরিবেশে থাকুক।

 ২- সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ বর্জন করা

প্রতিটি মুসলিমের ওপর আল্লাহ ও তার রাসূল প্রদত্ত দায়িত্ব হলো সমাজে সে সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখবে। যদি এ দায়িত্ব পালন করা না হয় তবে দো‘আ কবুল করা হবে না। হাদীসে এসেছে: হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ المُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ»

“যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের প্রতি শাস্তি নাযিল করবেন অতঃপর তোমরা দো‘আ করবে কিন্তু তিনি তা কবুল করবেন না”[41]

 ৩- দো‘আ কবুলে তাড়াহুড়ো করা

যেমন হাদীসে এসেছে: আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَا يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ، مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ، مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ مَا الِاسْتِعْجَالُ؟ قَالَ: يَقُولُ: «قَدْ دَعَوْتُ وَقَدْ دَعَوْتُ، فَلَمْ أَرَ يَسْتَجِيبُ لِي، فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ وَيَدَعُ الدُّعَاءَ»

“বান্দার দো‘আ সর্বদা কবুল করা হয় যদি সে দো‘আতে পাপ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের ছিন্ন করার কথা না বলে এবং তাড়াহুড়ো না করে। জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াহুড়ো বলতে কি বুঝায়? তিনি বললেন, দো‘আতে তাড়াহুড়া হলো, প্রার্থনাকারী বলে আমিতো দো‘আ করলাম কিন্তু কবুল হতে দেখলাম না। ফলে সে নিরাশ হয় ও ক্লান্ত হয়ে দো‘আ করা ছেড়ে দেয়”[42]

দো‘আয় এ ধরনের ত্বরা করা আল্লাহ অপছন্দ করেন। যেমন, তিনি বলেন,

﴿وَيَدۡعُ ٱلۡإِنسَٰنُ بِٱلشَّرِّ دُعَآءَهُۥ بِٱلۡخَيۡرِۖ وَكَانَ ٱلۡإِنسَٰنُ عَجُولٗا ١١﴾ [الاسراء: ١١]

“আর মানুষ অকল্যাণের দো‘আ করে; যেভাবে সে কল্যাণের দো‘আ করে, তবে মানুষ তো অতিমাত্রায় ত্বরা প্রিয়”[সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১১]

তবে দো‘আয় এ কথা বলা নিষেধ নয় যে, হে আল্লাহ এটা আমাকে খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও। দো‘আতে ত্বরা করার অর্থ হলো দো‘আ করে কেন এখনো দো‘আ কবুল হলো না এমন ভাবনা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে দো‘আ করা ছেড়ে দেওয়া।

 ৪- অন্তরের উদাসীনতা

মুখে দো‘আ করে আর যদি দো‘আর প্রতি অন্তর উদাসীন থাকে তাহলে দো‘আ কবুল হয় না। যেমন, হাদীসে এসেছে:

«ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ، وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ»

“প্রার্থনা কবুল হবে এ দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তোমরা প্রার্থনা করবে। এবং জেনে রাখ আল্লাহ কোনো উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা কবুল করেন না”[43]

অতএব, দো‘আয় যা কিছু বলা হবে তার প্রতি অন্তরের একনিষ্ঠভাব থাকতে হবে। মুখে যা বলা হলো, মন তার কিছুই বুঝল না। আবার অন্তর বুঝল ঠিকই, কিন্তু তার কথার প্রতি একাগ্রতা ছিল না, মনে ছিল অন্য চিন্তা-ভাবনা। তাহলে এ দো‘আকে বলা হবে উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা। যা আল্লাহ কবুল করেন না।

 ৫- ব্যক্তিত্বের এক বিশেষ ধরনের দুর্বলতা

 দো‘আ কবুলের অন্তরায়

যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

ثَلَاثَةٌ يَدْعُونَ اللَّهَ فَلَا يُسْتَجَابُ لَهُمْ: رَجُلٌ كَانَتْ تَحْتَهُ امْرَأَةٌ سَيِّئَةَ الْخُلُقِ فَلَمْ يُطَلِّقْهَا، وَرَجُلٌ كَانَ لَهُ عَلَى رَجُلٍ مَالٌ فَلَمْ يُشْهِدْ عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ آتَى سَفِيهًا مَالَهُ وَقَدْ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ {وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمْ} [النساء: 5]

“তিন ব্যক্তি এমন যে তাদের দো‘আ কবুল করা হয় না। এক. যে ব্যক্তির অধীনে দুশ্চরিত্রা নারী আছে কিন্তু সে তাকে তালাক দেয় না। দুই. যে ব্যক্তি অন্য লোকের কাছে তার পাওনা আছে কিন্তু সে তার স্বাক্ষী রাখে নি। তিন. যে ব্যক্তি নির্বোধ ব্যক্তিকে সম্পদ দিয়ে দেয় অথচ আল্লাহ বলেন, তোমরা নির্বোধদেরকে তোমাদের সম্পদ দিও না”[44]

দো‘আ কবুলের অনুকূল অবস্থা ও সময়

কিছু সময় রয়েছে যাতে দো‘আ কবুল করা হয়। এমনি মানুষের কিছু অবস্থা আছে যা দো‘আ কবুলের উপযোগী বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনি কিছু সময়ের কথা নীচে আলোচনা করা হলো।

 ১- আযানের সময় এবং যুদ্ধের ময়দানে যখন মুজাহিদগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান। হাদীসে এসেছে: সাহাল ইবন সা‘আদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«ثِنْتَانِ لَا تُرَدَّانِ، أَوْ قَلَّمَا تُرَدَّانِ الدُّعَاءُ عِنْدَ النِّدَاءِ، وَعِنْدَ الْبَأْسِ حِينَ يُلْحِمُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا»

“দুটো সময় এমন যাতে দো‘আ ফেরত দেওয়া হয় না অথবা খুব কম ফেরত দেওয়া হয়। আযানের সময়ের দো‘আ এবং যখন যুদ্ধের জন্য মুজাহিদগণ শক্রের মুখোমুখি হন”[45]

 ২- আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِنَّ الدُّعَاءَ لَا يُرَدُّ بَيْنَ الْأَذَانِ وَالْإِقَامَةِ، فَادْعُوا»

“আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দো‘আ ফেরত দেওয়া হয় না। সুতরাং তোমরা দো‘আ কর”[46]

 ৩- সাজদাহ’র মধ্যে

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ، وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ»

“বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় যখন সে সাজদাহরত থাকে। সুতরাং তোমরা এ সময় বেশি করে দো‘আ কর”[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮২]

 ৪- ফরয সালাতের শেষে

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো:

أَيُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ؟ قَالَ: «جَوْفَ اللَّيْلِ الآخِرِ، وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ المَكْتُوبَاتِ».

“কোন দো‘আ সবচেয়ে বেশি কবুল করা হয়? তিনি বললেন, শেষ রাতে এবং ফরয সালাতের শেষে”[47]

 ৫- জুমু‘আর দিনের শেষ অংশে

জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«يَوْمُ الْجُمُعَةِ اثْنَتَا عَشْرَةَ سَاعَةً، لَا يُوجَدُ فِيهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللَّهَ شَيْئًا إِلَّا آتَاهُ إِيَّاهُ، فَالْتَمِسُوهَا آخِرَ سَاعَةٍ بَعْدَ الْعَصْرِ».

“জুমু‘আর দিন বারটি ঘন্টা। এর মধ্যে এমন একটি সময় আছে, সে সময় একজন মুসলিম বান্দা যা আল্লাহর কাছে চায়, তা-ই তিনি দিয়ে দেন। তোমরা সে সময়টি আছরের পর শেষ অংশে তালাশ কর”[48]

 ৬- রাতের শেষ তৃতীয়াংশে

রাত এমন একটা সময় যখন প্রত্যেকে তার আপনজনের সঙ্গে অবস্থান করে। এ সময় একজন মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীরতর করার সুযোগ গ্রহণ করে থাকে। আর এটা এমন এক সময় যখন দো‘আ কবুল করার জন্য আল্লাহর ঘোষণা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِنَّ فِي اللَّيْلِ لَسَاعَةً لَا يُوَافِقُهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ، يَسْأَلُ اللهَ خَيْرًا مِنْ أَمْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، إِلَّا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ، وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ»

“রাতের এমন একটা অংশ আছে যখন মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের যা কিছু চায় আল্লাহ তা দিয়ে দেন। আর এ সময়টা প্রতি রাতে”[49]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِي، فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ»

“আমাদের রব প্রতি রাতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন, যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে। তখন তিনি বলেন, কে আছে আমার কাছে দো‘আ করবে আমি কবুল করব? কে আমার কাছে তার যা দরকার প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দিয়ে দেব? কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি ক্ষমা কেও দেব”[50]

 ৭- দো‘আ ইউনুস দ্বারা প্রার্থনা করলে

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«دَعْوَةُ ذِي النُّونِ إِذْ دَعَا بِهَا وَهُوَ فِي بَطْنِ الْحُوتِ: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ، فَإِنَّهُ لَنْ يَدْعُوَ بِهَا مُسْلِمٌ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا اسْتَجَابَ لَهُ»

‘মাছওয়ালা (ইউনুস ‘আলাইহিস সালাম)-এর দো‘আ হলো যা সে মাছের পেটে থাকা অবস্থায় করেছে; লাইলাহা ইল্লা আনতা ছুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলিমীন। (আপনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র, সুমহান। আমিই তো অত্যাচারী”।[51]

 ৮- মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দো‘আ করা

আল-কুরআনুল কারীম ও হাদীসে সকল মুসলিমের জন্য দো‘আ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিপদগ্রস্ত মুসলিমদের জন্য দো‘আ করা আমাদের দায়িত্ব। হাদীসে এসেছে, আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন:

«دَعْوَةُ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ، عِنْدَ رَأْسِهِ مَلَكٌ مُوَكَّلٌ كُلَّمَا دَعَا لِأَخِيهِ بِخَيْرٍ، قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ: آمِينَ وَلَكَ بِمِثْلٍ»

“মুসলিম ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দো‘আ করলে তা কবুল করা হয়। দো‘আকারীর মাথার কাছে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতা থাকে। যখনই তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দো‘আ করে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতা তার দো‘আ শুনে আমীন বলতে থাকে এবং বলে তুমি যে কল্যাণের জন্য দো‘আ করলে আল্লাহ অনুরূপ কল্যাণ তোমাকেও দান করুন”[52]

এ হাদীস দ্বারা যেমন আমরা দো‘আ কবুলের বিষয়টি বুঝেছি, এমনিভাবে অপর মুসলিম ভাইদের জন্য দো‘আ করার বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়ার কথা শিখেছি। এতে যার জন্য দো‘আ করা হবে তার যেমন কল্যাণ হবে, তেমনি যিনি দো‘আ করবেন তিনি লাভবান হবেন দুদিক দিয়ে, প্রথমত তিনি দো‘আ করার সওয়াব পাবেন। দ্বিতীয়ত তিনি যা দো‘আ করবেন তা নিজের জন্যও লাভ করবেন।

 ৯- সিয়ামপালনকারী, মুসাফির, মজলুমের দো‘আ এবং সন্তানের বিরুদ্ধে মাতা-পিতার দো‘আ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«ثَلَاثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ: دَعْوَةُ المَظْلُومِ، وَدَعْوَةُ المُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ».

“তিনটি দো‘আ কবুল হবে; এতে কোনো সন্দেহ নেই। সন্তানের বিপক্ষে মাতা-পিতার দো‘আ, মুসাফিরের দো‘আ এবং মযলুম বা অত্যাচারিত ব্যক্তির দো‘আ”[53]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মু‘আয ইবন জাবালকে ইয়েমেনে গভর্নর করে পাঠান তখন তাকে কয়েকটি নির্দেশ দেন। তার একটি ছিল:

«اتَّقِ دَعْوَةَ المَظْلُومِ، فَإِنَّهَا لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ»

“সাবধান থাকবে মযলুম বা অত্যাচারিত ব্যক্তির দো‘আ হতে। জেনে রেখ! তার দো‘আ ও আল্লাহর মধ্যে কোনো অন্তরায় নেই”[54]

মযলুমের বদ দো‘আ থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে সর্বদা। এর অর্থ এটা নয় যে, মজলুমকে দো‘আ করতে দেওয়া যাবে না। বরং রাসূলের বাণীর উদ্দেশ্য হলো, কখনো কাউকে সামান্যতম অত্যাচার করা যাবে না। নিজের কাজ-কর্ম, কথা দ্বারা কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এটার প্রতি সতর্ক থাকা হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীসের উদ্দেশ্য। যদি আমার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সে হবে মযলুম বা অত্যাচারিত। সে আমার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে দো‘আ করলে তা অবশ্যই কবুল হবে। এটা ভয় করে চলতে পারলে এ হাদীস স্বার্থক হবে আমাদের জন্য।

 ১০- ‘আরাফা দিবসের দো‘আ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ»

“সর্বোত্তম দো‘আ হলো ‘আরাফার দো‘আ”[55]

জিলহজ্ব মাসের নয় তারিখে যারা ‘আরফাতে অবস্থান করেন তাদের দো‘আ কবুল হয়। এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু সংখ্যক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

 ১১- বিপদগ্রস্ত অসহায় ব্যক্তির দো‘আ

বিপদগ্রস্ত অসহায় তথা আর্তের দো‘আ কবুল করা হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যখন মুশরিক আর্ত মানুষের দো‘আ কবুল করেন তখন মুসলমানের দো‘আ কেন কবুল করবেন না। আবার যদি সে মুসলিম ঈমানদার ও মুত্তাকী হয় তখন তার দো‘আ কবুলে বাধা কি হতে পারে?

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿ أَمَّن يُجِيبُ ٱلۡمُضۡطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكۡشِفُ ٱلسُّوٓءَ ﴾ [النمل: ٦٢]

“কে আর্তের প্রার্থনায় সাড়া দেয়? যখন সে তাঁকে ডাকে এবং কে বিপদাপদ দূর করেন”[সূরা আন-নামল, আয়াত: ৬২]

 ১২- হজ ও উমরাকারীর দো‘আ এবং আল্লাহর পথে জিহাদে অংশগ্রহণকারীর দো‘আ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«الْغَازِي فِي سَبِيلِ اللَّهِ، وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ، وَفْدُ اللَّهِ، دَعَاهُمْ، فَأَجَابُوهُ، وَسَأَلُوهُ، فَأَعْطَاهُمْ»

“আল্লাহর পথে জিহাদকারী যোদ্ধা, হজ্বকারী এবং উমরাহকারী আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা দো‘আ করলে আল্লাহ কবুল করেন এবং প্রার্থনা করলে আল্লাহ দিয়ে থাকেন”[56]

 পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর মোনাজাত

আমাদের দেশে বলতে গেলে ভারতীয় উপমহাদেশে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর দো‘আ-মোনাজাতের প্রচলন দেখা যায়। এ বিষয় এখন কিছু আলোচনা করার ইচ্ছা করছি।

পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত শেষে দো‘আ কবুল হওয়ার কথা বহু সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত। তাহলে এ নিয়ে বিতর্ক কেন? আসলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দো‘আ নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক হলো এর পদ্ধতি নিয়ে। যে পদ্ধতিতে দো‘আ করা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এভাবে দো‘আ করেছিলেন কি-না? তাই আমি এখানে আলোচনা করব সে দো‘আ-মোনাজাত নিয়ে যার মধ্যে নিম্নোক্ত সবকটি শর্ত বিদ্যমান:

এক. পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দো‘আ করা।

দুই. যে দো‘আ-মোনাজাত জামাআতের সঙ্গে করা হয়।

তিন. প্রতিদিন প্রতি ফরয সালাত শেষে দো‘আ-মুনাজাত করা।

এ শর্তাবলী বিশিষ্ট দো‘আ-মোনাজাত কতটুকু সুন্নাতসম্মত সেটাই এ অধ্যায়ের মূল আলোচ্য বিষয়।

পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত আদায়ের পর প্রচলিত মোনাজাত করা না করার ব্যাপারে আমাদের দেশের লোকদের সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত দেখা যায়।

এক. যারা সালাম ফিরানোর পর বসে বসে কিছুক্ষণ যিকর-আযকার আদায় করেন, যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

দুই. যারা সালাম ফিরানোর পর যিকির-আযকার না করে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান সুন্নাত নামায আদায়ের জন্য।

তিন. যারা সালাম ফিরানোর পর সর্বদা ইমাম সাহেবের সঙ্গে একত্রে মোনাজাত করেন। এবং মোনাজাত শেষ হওয়ার পর সুন্নাত সালাত আদায় করেন।

আর এ তিন ধরনের লোকদেরই এ সকল আমলের সমর্থনে কোনো না কোনো দলীল প্রমাণ রয়েছে। হোক তা শুদ্ধ বা অশুদ্ধ। স্পষ্ট বা অস্পষ্ট।

প্রথম দলের দলীল-প্রমাণ স্পষ্ট। তাহল বুখারী ও মুসলিমসহ বহু হাদীসের কিতাবে সালাতের পর যিকির-আযকার অধ্যায়ে বিভিন্ন যিকিরের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে, যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম আমল করেছেন। অনেক ইমাম ও উলামায়ে কেরাম এ যিকির-আযকার সম্পর্কে স্বতন্ত্র পুস্তক সংকলন করেছেন।

আর দ্বিতীয় দলের প্রমাণ হলো এই হাদীস: ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَلَّمَ لَمْ يَقْعُدْ إِلَّا مِقْدَارَ مَا يَقُولُ: «اللهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন তখন আল্লাহুম্মা আনতাচ্ছালাম ওয়ামিনকাচ্ছালাম তাবারাকতা ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম পড়তে যতটুকু সময় লাগে তার চেয়ে বেশি সময় বসতেন না”[57]

তারা এ হাদীস দ্বারা বুঝে নিয়েছেন যে, এ যিকিরটুকু আদায় করতে যতটুকু সময় লাগে এর চেয়ে বেশি বসা ঠিক নয়। তাই তাড়াতাড়ি সুন্নাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যেতে হবে। আসলে এ হাদীস দ্বারা তারা যা বুঝেছেন তা সঠিক নয়।

হাদীসটির ব্যাখ্যা হলো, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু ইমাম ছিলেন তাই তিনি সালাম ফিরানোর পর এতটুকু সময় মাত্র কিবলামুখী হয়ে বসতেন এরপর তিনি মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। আর তিনি যে প্রত্যেক ফরয সালাতের পর মুসল্লীদের দিকে মুখ করে বসতেন তা বহু সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।[58]

এ হাদীস দ্বারা কখনো প্রমাণিত হয় না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরিয়ে এ দো‘আটুকু পড়ে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যেতেন সুন্নাত সালাত আদায়ের জন্য। ফরয সালাত আদায়ের পর যিকির, তাছবীহ, তাহলীল বর্জন করে তাড়াতাড়ি সুন্নাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া মোটেও সুন্নাত নয়। বরং সুন্নাত হলো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যিকির, দো‘আ, তাছবীহ, তাহলীল সাধ্যমত আদায় করে তারপর সুন্নাত আদায় করা।

তৃতীয় দল যারা ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে (জামা‘আতের সঙ্গে) মোনাজাত করেন তাদের দলীল হলো ওই সকল হাদীস যাতে সালাত শেষে দো‘আ কবুলের কথা বলা হয়েছে এবং দো‘আ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ সকল হাদীস ছাড়া তাদের এ কাজের সমর্থনে হাদীস থেকে সরাসরি কোনো প্রমাণ নেই। এমন কোনো হাদীস তারা পেশ করতে পারবেন না যাতে দেখা যাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সালাত জামা‘আতের সঙ্গে আদায় শেষে সকলকে নিয়ে সর্বদা হাত তুলে মোনাজাত করেছেন।

তারা যে সকল হাদীস প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে চান তার শিরোনাম হলো:

الدعاء عقيب الصلوات، الدعاء دبر الصلوات

“তারা মনে করে নিয়েছেন আকীবাস সালাত ও দুবুরাস সালাত অর্থ সালাম ফিরানোর পর। আসলে তা নয়। এর অর্থ হলো সালাতের শেষ অংশে। এ সকল হাদীসে সালাতের শেষ অংশে অর্থাৎ শেষ বৈঠকে দুরূদ পাঠ করার পর সালাম ফিরানোর পূর্বে দো‘আ করার কথা বলা হয়েছে। পরিভাষায় যা দো‘আয়ে মাছুরা হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। সালাত শেষে দো‘আ কবুল সম্পর্কে যত হাদীস এসেছে তা সবগুলো দো‘আ মাছুরা সম্পর্কে। যার সময় হলো সালাম ফিরানোর পূর্বে। আর দো‘আ মাছুরা শুধু একটা নয়, অনেক। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সালাতের শেষে দো‘আ সংক্রান্ত এ সকল হাদীসে বাদাস সালাত বলা হয়নি। হাদীস গ্রন্থে এ সকল দো‘আকে:

«الأدعياء دبر الصلوات أو الدعاء عقيب الصلاة»

(সালাত শেষের দো‘আ) অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে দুটো বিষয়; প্রথমটা হলো সালাত শেষের দো‘আ। দ্বিতীয়টা হলো সালাত শেষের যিকির। প্রথমটির স্থান হলো সালাম ফিরানোর পূর্বে। আর দ্বিতীয়টির স্থান হলো সালাম ফিরানোর পর। ইমাম ইবন তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ প্রমুখ উলামায়ে কেরামের মত এটাই।

এ মতটা কুরআন ও হাদীসের আলোকে বেশি যুক্তিগ্রাহ্য। বান্দা যখন সালাতে থাকে তখন সে আল্লাহর নিকটে অবস্থান করে। দো‘আ মুনাজাতের সময় তখনই। যখন সালাতের সমাপ্তি ঘোষিত হলো তখন নয়। তখন সময় হলো আল্লাহর যিকিরের, যেমন আল্লাহ বলেন,

﴿فَإِذَا قَضَيۡتُمُ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِكُمۡۚ﴾ [النساء: ١٠٣]

“যখন তোমরা সালাত শেষ করলে তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে”[সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০২]

এ সম্পর্কিত হাদীসগুলোর ভাষা এবং সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলসমূহ গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে এ বিষয়টিই বুঝে আসে সালাম ফিরানোর পরের সময়টা দো‘আ করার সময় নয়, যিকির করার সময়।

তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয সালাতের পর কখনো কি দো‘আ করেননি? হ্যা করেছেন। তবে তা সম্মিলিতভাবে নয়। যেমন হাদীসে এসেছে: বারা ইবন আযেব বলেন,

«كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا خَلْفَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَحْبَبْنَا أَنْ نَكُونَ عَنْ يَمِينِهِ، يُقْبِلُ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ، قَالَ: فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: «رَبِّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ- أَوْ تَجْمَعُ- عِبَادَكَ».

“আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে সালাত আদায় করতাম, তিনি আমাদের দিকে মুখ করতেন, কখনো কখনো শুনতাম তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! আপনার শাস্তি থেকে আমাকে বাঁচান যেদিন আপনি আপনার বান্দাদের উঠাবেন।[59]

জামা‘আতের সঙ্গে তিনি মুসল্লীদের নিয়ে দো‘আ করেছেন, এমন কোনো বর্ণনা নেই। যা আছে তা তার বিপরীত। যেমন, বর্ণিত হাদীসটির প্রতি লক্ষ্য করুন! সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন। বলেছেন আমাকে বাঁচান...। সকলকে সঙ্গে নিয়ে দো‘আটি করলে বলতেন আমাদেরকে বাঁচান।

আরেকটি হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করুন:

«أُوصِيكَ يَا مُعَاذُ لَا تَدَعَنَّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ تَقُولُ: اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আজ ইবন জাবালকে বলেছেন, তুমি অবশ্যই প্রত্যেক সালাতের পর বলবে, হে আল্লাহ! আপনার যিকির, আপনার শোকর, আপনার জন্য উত্তম ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন”[60]

দেখুন! প্রখ্যাত সাহাবী মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কওমের ইমাম ছিলেন। রাসূল তাঁকে ইয়েমেনের গভর্নর, শিক্ষক ও ইমাম হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। তিনি সালাতে ইমামতী করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এ দো‘আটি সকলকে নিয়ে করার নির্দেশ দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা দেননি। তিনি তাঁকে একা একা দো‘আটি করার জন্য বলেছেন। হাদীসের ভাষাই তার প্রমাণ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরনোর পর তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলেছেন। তিনি যদি এটা সকলকে নিয়ে করতেন তাহলে নাস্তাগফিরুল্লাহ (আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলতেন।

যারা ফরয সালাত শেষে কোনো যিকির-আযকার না করে উঠে গেল তারা একটা সুন্নাত (মুস্তাহাব) ছেড়ে দিল। আবার যারা সালাত শেষে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করে উঠে গেল তারা একটা সুন্নাত বাদ দিয়ে সে স্থানে অন্য একটি বিদ‘আত আমল করল।

তাই সারকথা হলো, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের পর সব সময় জামা‘আতের সঙ্গে মোনাজাত করা একটি বিদ‘আত। যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেন নি। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈ‘গণ করেছেন বলেও কোনো প্রমাণ নেই।

তবে যদি কেউ জামা‘আতে সালাত আদায়ের পর একা একা দো‘আ মোনাজাত করেন তা সুন্নাতের খেলাফ হবে না। এমনিভাবে ইমাম সাহেব যদি সকলকে নিয়ে বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে কোনো কোনো সময় দো‘আ-মোনাজাত করেন তবে তা নাজায়েয হবে না।

ইমাম ইবন তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়্যেম, মুফতীয়ে আযম ফয়জুল্লাহ রহ.সহ অনেক আলেম-উলামা এ মত ব্যক্ত করেছেন।

সালাত শেষে যে সকল দো‘আ ও যিকির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত

আমি এখানে সালাত শেষে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসকল দো‘আ ও যিকির আদায় করেছেন ও করতে বলেছেন তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করতে চাই। যাতে পাঠক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই সুন্নাতকে আমল হিসেবে গ্রহণ করেন এবং এ সম্পর্কিত বিদআত পরিহার করেন। সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلَاتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلَاثًا وَقَالَ: «اللهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ» قَالَ الْوَلِيدُ: فَقُلْتُ لِلْأَوْزَاعِيِّ: " كَيْفَ الْاسْتِغْفَارُ؟ قَالَ: تَقُولُ: أَسْتَغْفِرُ اللهَ، أَسْتَغْفِرُ اللهَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যখন সালাত শেষ করতেন তখন তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং বলতেন, আল্লাহুম্মা আনতাচ্ছালাম... (হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময় এবং তোমার নিকট হতে শান্তির আগমন, তুমি কল্যাণময়, হে মর্যাদাবান, মহানুভব!

ইমাম আওযায়ীকে জিজ্ঞেস করা হলো -যিনি এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন কীভাবে? বললেন, তিনি বলতেন, আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি)”।[61]

«كَتَبَ الْمُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَ إِلَى مُعَاوِيَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ، إِذَا فَرَغَ مِنَ الصَّلَاةِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ»

“মুগীরা ইবন শোবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে লিখেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করে সালাম ফিরাতেন তখন বলতেন, লা-ইলাহা ইল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, আল্লাহুম্মা লা- মানেআ লিমা আতাইতা ওয়ালা মুতিয়া লিমা মানাতা ওয়ালা ইয়ান ফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ আপনি যা দান করেন তা বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আর আপনি যা বাধা দেবেন তা দেওয়ার মতো কেউ নেই। আর আযাবের মুকাবেলায় ধনবানকে তার ধন কোনো উপকার করতে পারে না।)[62]

আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি প্রত্যেক সালাতের শেষে সালাম ফিরানোর পর বলতেন,

«لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ، وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ» وَقَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُهَلِّلُ بِهِنَّ دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ»

“লা-ইলাহা ইল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহ, লাহুন নিমাতু ওয়ালাহু ফজলু ওয়ালাহুছ ছানাউল হাসান, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিছীনা লাহুদ্দীন ওয়ালাও কারিহাল কাফিরূন। (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত গুনাহ থেকে বিরত থাকার ও ইবাদত করার শক্তি কারো নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আমরা তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করি না। সমস্ত অনুগ্রহ ও শ্রেষ্ঠত্ব তাঁরই। সকল সুন্দর ও ভালো প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনি ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই। আমরা ধর্মকে একমাত্র তাঁরই জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছি, যদিও কাফিরা তা পছন্দ করে না)

ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সালাতের শেষে এ বাক্যগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর ইলাহিয়্যাতের ঘোষণা দিতেন”।[63]

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ سَبَّحَ اللهَ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَحَمِدَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَكَبَّرَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، فَتْلِكَ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ، وَقَالَ: تَمَامَ الْمِائَةِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ»

“যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশবার ছুবহানাল্লাহ বলবে, তেত্রিশবার আলহামদুলিল্লাহ বলবে ও তেত্রিশবার আল্লাহু আকবার বলবে এরপর লা-ইলাহা ইল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই। তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান) বলে একশ বাক্য পূর্ণ করবে তার পাপগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়”[64]

এ ছাড়াও সালাতের পর আরো অনেক যিকির ও দো‘আর কথা হাদীসে এসেছে। সেগুলো আদায় করা যেতে পারে। যেমন সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক, সূরা নাছ পাঠ করার কথা এসেছে। আয়াতুল কুরসী পাঠ করার বর্ণনা এসেছে।

এ সকল দো‘আ যে সবগুলো একইসঙ্গে আদায় করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সময় ও সুযোগ মত যা সহজ সেগুলো আদায় করা যেতে পারে। মোটকথা হলো, এ সুন্নাতটি যেন আমরা কোনো কারণে ভুলে না যাই সে বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। অনেককে সালাত শেষে এমন কিছু আমল করতে দেখা যায় যেগুলো হাদীসে পাওয়া যায় না, সেগুলো বর্জন করা উচিৎ। যেমন, মাথায় হাত দিয়ে কিছু পাঠ করা বা কিছু পাঠ করে চোখে ফুঁক দেওয়া ইত্যাদি।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সঠিক পথের হিদায়াত দান করুন!

সমাপ্ত


স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী সকল মানুষ কম বেশি প্রার্থনা করে। এর মধ্যে কেউ মহান স্রষ্টা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য দেব-দেবী বা মৃত মানুষের কাছে প্রার্থনা করে। অনেকে আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করে তবে প্রার্থনা নিবেদনের ক্ষেত্রে আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে অংশীদার করে। আবার অনেকে আল্লাহর কাছে সরাসরি প্রার্থনা করেছেন দীর্ঘ দিন; কিন্তু দো‘আ কবুলের কোনো আলামত না দেখে ক্লান্ত ও হতাশ হয়ে দো‘আ করা ছেড়ে দিয়েছেন। তাই দো‘আ কাকে বলে? কীভাবে করতে হয়? কখন করা উচিৎ? দো‘আ কবুলের অন্তরায় কী? ইত্যাদি বিষয়গুলো কুরআন ও বিশুদ্ধ সুন্নাহর আলোকে আলোচনা করা হয়েছে এই পুস্তকটিতে।



[1] আবূ দাউদ, হাদীস নং ১৪৭৯; তিরমিযী, হাদীস নং ২৯৬৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৮২৮

[2] হাকেম, হাদীস নং ১৮০৫

[3] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৩৭০

[4] তুহফাতুয যাকিরীন: আশ-শাওকানী

[5] মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১১১৩৩

[6] তিরমিযী, হাদীস নং ২৫১৬

[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৬৮

[8] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৯৭

[9] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৭৯; হাকেম, হাদীস নং ১৮১৭

[10] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০২

[11] আবূ দাউদ, হাদীস নং ১৪৮১; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৭৭

[12] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৯

[13] আবূ দাউদ, হাদীস নং ৯৮৫; নাসাঈ, হাদীস নং ১২২৫

[14] আবূ দাউদ, হাদীস নং ১৪৯৫; নাসাঈ, হাদীস নং ১৩০০

[15] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫০৩

[16] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩০৬

[17] আহমদ, হাদীস নং ১১১৩৩

[18] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৩৫

[19] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০০৯

[20] সহীহ বুখারী ও মুসলিম

[21] সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস ৮৮৯

[22] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৩৫

[23] আহমদ, হাদীস নং ১১১৩৩

[24] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৩৮২

[25] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২০

[26] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৪

[27] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯৮

[28] ফাতহুল বারী

[29] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৩৯

[30] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯৬০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৯৪

[31] সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৬-১০৭

[32] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪৯৭

[33] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৪

[34] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৬৭১

[35] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৬৭২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৮১

[36] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৮৮

[37] সহীহ বুখারী

[38] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০০৯

[39] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৩৭

[40] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৫

[41] তিরমিযী, হাদীস নং ২১৬৯

[42] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৩৫

[43] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৭৯; হাকেম, হাদীস নং ১৮১৭

[44] মুস্তাদরাক হাকেম, হাদীস নং ৩১৮১

[45] আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৫৪০

[46] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১২৫৮৪; তিরমিযী, হাদীস নং ২১২

[47] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৯৯

[48] নাসাঈ, হাদীস নং ১৩৮৯

[49] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৭

[50] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫

[51] তিরমিযী, হাদীস নং ১০৪১৭

[52] মুসলিম, হাদীস নং ২৭৩৩

[53] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৪৮

[54] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯

[55] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৮৫

[56] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৮৯৩

[57] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯২

[58] মজমু আল-ফাতাওয়া: ইমাম ইবন তাইমিয়া

[59] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭০৯

[60] আবূ দাউদ, হাদীস নং ১৫২২; নাসাঈ, হাদীস নং ১৩০৩

[61] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭৯১

[62] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৩

[63] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৪

[64] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৭