লাতের শর্ত, রুকন ও ওয়াজিবসমূহ
লেখক:
শাইখুল ইসলাম মুজাদ্দিদ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহহাব-রহিমাহুল্লাহ-
(১১১৫-১২০৬) হিজরী
এটি তাহকীক করেছেন, এতে যত্ন নিয়েছেন ও এর হাদীসসমূহের তাখরীজ করেছেন আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মুখাপেক্ষী বান্দা
ড. সাঈদ ইবন আলী ইবন ওয়াহফ আল-কাহতানী
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে
নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তার প্রশংসা করি, তাঁর কাছে সাহায্য চাই এবং তাঁর কাছেই ইস্তেগফার করি। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের নিজেদের নফসের অনিষ্টসমূহ এবং আমাদের কর্মের অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আল্লাহ তা‘আলা যাকে হেদায়াত দান করেন, তাকে পথভ্রষ্টকারী কেউ নেই আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তার কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। আল্লাহ তার উপর, তার পরিবারবর্গ ও তার সাহাবীদের উপর অনেক অনেক সালাত ও সালাম নাযিল করুন। অতঃপর:
মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহহাব কর্তৃক রচিত “সালাতের শর্ত, রুকন ও ওয়াজিবসমূহ” কিতাবটি সবচেয়ে উপকারী কিতাবসমূহের একটি। বিশেষত: প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জন্য, বরং আল্লাহ তার দ্বারা বিশেষ ও সাধারণ উভয় শ্রেণিকে উপকৃত করেছেন, যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তার সমস্ত গ্রন্থ দ্বারা পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তরে উপকৃত করেছেন আর এটি আল্লাহর অনুগ্রহ তার উপর ও সমস্ত মানুষের উপর।
সম্মানিত শাইখ ইমাম আবদুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ তার বাড়ির পাশের মসজিদে বরকতময় এই কিতাবটির ব্যাখ্যা করেছেন। তার সামনে এটি পাঠ করেছেন উক্ত মসজিদের ইমাম শাইখ মুহাম্মদ ইলিয়াস আব্দুল কাদির। আর তা ছিল আনুমানিক ১৪১০ হিজরী। শাইখ এশার সালাতের আযান ও ইকামতের মাঝে পাঁচ দিনের পাঁচটি মজলিসে কিতাবটি মুসল্লিদের জন্য ব্যাখ্যা করেন, যা ছিল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, তাহকীককৃত, সংক্ষিপ্ত ও উপকারী। এই পাঁচটি দারসের সর্বমোট সময় ৯০ মিনিট, যা আনুমানিক ২৫ বছর ১৪৩৫ হিজরী মুহাররম মাস পর্যন্ত একটি ক্যাসেটে আমার কাছে সংরক্ষিত ছিল। এরপর আল্লাহ তা‘আলা তা উন্মুক্তকরণের তাওফীক দান করেছেন।
আর আমার কাজটি ছিল নিম্নরূপ:
১. আমি শাইখ রহিমাহুল্লাহর কথাগুলো ধারণকৃত অডিও হতে যত্ন সহকারে সূক্ষ্মভাবে শব্দে শব্দে তুলনা করেছি, চাই তা মূলপাঠ হোক অথবা ব্যাখ্যা। আর সকল প্রসংশা আল্লাহর জন্যই।
২. ‘সালাতের শর্ত, রুকন ও ওয়াজিবসমূহ’ কিতাবটির মূল পাঠ চারটি পাণ্ডুলিপির মাঝে তুলনা করেছি: শাইখের কাছে পাঠকারী ব্যক্তির পাণ্ডুলিপি, যা তিনি শাইখের কাছে পড়েছিলেন আর শাইখ শুনছিলেন। আর আমি তা মূল বানিয়েছি। আর হাতে লেখা দুইটি পাণ্ডুলিপির ওপর: প্রথম পাণ্ডুলিপি: সুষ্পষ্ট ও সুন্দর লেখার পূর্ণাঙ্গ কপি, যা ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ আদ-দাওয়ীইয়ান ৬/৫/১৩০৭ হিজরী তারিখে লিপিবদ্ধ করেছেন, যা বাদশা ফয়সাল গবেষণা ও ইসলাম শিক্ষা ইন্সটিটিউটের মাইক্রোফিল্ম নং: ৫২৫৮ তে সংরক্ষিত আছে। এর মূল পান্ডুলিপি কাসীম শহরের জামে উনাইযাহর লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। আর এই পাণ্ডুলিপি কয়েকটি পাণ্ডুলিপির সঙ্গে একত্রে ছিল, আর তা হলো: সালাসাতুল উসূল, আল-কাওয়াইদুল আরবাআ ও ‘কাশফুশ শুবুহাত। সবগুলো কিতাবই লেখক রহিমাহুল্লাহর। আর হস্তলিখিত দ্বিতীয় পাণ্ডুলিপিটি বাদশাহ ফয়সাল ইন্সটিটিউটে ৫২৬৫ নং মাইক্রোফিল্মে সংরক্ষিত। এর মূল পান্ডুলিপির স্থান হচ্ছে কাসীম শহরের জামে উনাইযাহর লাইব্রেরী। আর তাও কয়েকটি পাণ্ডুলিপির সঙ্গে রয়েছে, আর তা হলো: সালাসাতুল উসূল, আরবাউ কাওয়াইদ, কিতাবুত তাওহীদ ও আদাবুল মাশই লিস-সালাত’। সবগুলোই লেখক রহিমাহুল্লাহর। আর এর সাথে অনুরূপভাবে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহর ‘আল-আকাদাতুল ওয়াসিতিয়্যাহ’ এর হস্তলিপিও রয়েছে। আর এই দ্বিতীয় পান্ডুলিপিটি লেখা হয়েছে ১৩৩৮ হিজরীতে, কিন্তু তার অনুলিপিকারক নিজের নাম তাতে লেখেননি। আর তাও সুস্পষ্ট ও সুন্দর হাতের লেখা। কিন্তু সেখানে সামান্য ছেঁড়া রয়েছে, যা লেখকের কথা: «والدليل قوله تعالى: «ومن يبتغ غير الإسلام ديناً فلن ... থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: في الوقتين...» পর্যন্ত বিস্তৃত। আর এই পাণ্ডুলিপিটি আমি অন্যান্য পাণ্ডুলিপির সাথে তুলনা করেছি। আর চতুর্থ পাণ্ডুলিপি হচ্ছে: ইমাম মুহাম্মাদ ইবন সা‘ঊদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রকাশিত, যার বিশুদ্ধকরণ ও হস্তলিখিত পান্ডুলিপি ৮৬/২৬৯ এর সাথে তুলনাকরণ করেছেন শাইখ আব্দুল আজিজ ইবন যায়েদ আর-রুমি ও শাইখ সালেহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-হাসান।
৩. আমি পাণ্ডুলিপিগুলোর পার্থক্য হাশিয়াতে (টিকায়) উল্লেখ করেছি।
৪. আয়াতগুলোকে তার সূরাগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছি।
৫. সমস্ত হাদীস ও আছারের তাখরীজ করেছি।
৬. হাদীস, আয়াত ও আছারের জন্য সূচীপত্র তৈরি করেছি।
৭. আমি ব্যাখ্যটির নামকরণ করেছি: “আশ-শারহুল মুমতায লি সামাহাতিশ শাইখ আল-ইমাম ইবন বায।” আমি যখন উল্লিখিত আশ-শারহুল মুমতায সমাপ্ত করেছি ও তা ছাপানো হয়েছে, তখন ইচ্ছা করলাম যে, “সালাতের শর্ত, রুকন ও ওয়াজিবসমূহ” গ্রন্থটির মূল পাঠকে একটি স্বতন্ত্র কিতাবে আশ-শারহুল মুমতায থেকে আলাদা করি, তাতে ব্যয় করা সকল বৈশিষ্ট্যসহ। হয়তো আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা তার দ্বারা উপকৃত করবেন। অধিকন্তু ব্যাখ্যা থেকে তা আলাদা করায় তা মুখস্ত করার জন্যে সহজ হবে, বিশেষভাবে প্রাথমিক শিক্ষার্থী ও অন্যান্যদের জন্য। আর যে উল্লেখিত আশ-শারহুল মুমতায’-এ যেতে চাইবে সে তাতে ফিরে যাবে।
আর আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যে, তিনি আমার এই কাজকে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য গ্রহণ করুন। এর দ্বারা তার লেখক ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওহাহহাব রহিমাহুল্লাহ ও তার ব্যাখ্যকার আমাদের শাইখ ইবনু বাযকে রাহিমাহুল্লাহকে উপকৃত করুন। এবং তাদের দুজনের জন্যই তা উপকারী ইলম করুন। আর তিনি তার দ্বারা আমার জীবনে ও মৃত্যুর পরে আমাকে উপকৃত করুন এবং তা যার কাছে পৌঁছবে তাকেও তার দ্বারা উপকৃত করুন। কেননা তিনিই সর্বোত্তম প্রার্থনার আশ্রয়স্থল, সর্বোত্তম আকাংখাস্থল। তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আর তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক! আর সুউচ্চ ও সুমহান আল্লাহর তাওফীক ব্যতীত (ভালো কাজ করা কিংবা খারাপ কাজ থেকে বাঁচার) কোনো শক্তি ও সামর্থ্য নেই। আল্লাহর পক্ষ হতে রহমত ও সালাম বর্ষিত হোক, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপরে, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর।
লিখেছেন: আবূ আব্দুর রহমান
সা‘ঈদ ইবন আলী ইবন ওয়াহফ আল-কাহতানী
যুহরের সালাতের পর বুধবার ২৫/০৫/১৪৩৫ হিজরীতে লেখা হয়েছে।
ষষ্ঠ পৃষ্ঠাটি বাদশা ফয়সাল সেন্টারে বিদ্যমান ৫২৫৮ ক্রমিকের প্রথম পাণ্ডুলিপি থেকে, যা কাসীম শহরের জামে উনাইযাহর লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে।
পশ্চম পৃষ্ঠাটি বাদশা ফয়সাল সেন্টারে অবস্থিত ৫২৫৮ ক্রমিকের দ্বিতীয় পাণ্ডুলিপি থেকে।
তাও কাসীম শহরের জামে উনাইযাহর লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে।
[লেখক শাইখুল ইসলাম মুজাদ্দিদ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহহাব -রহিমাহুল্লাহ- বলেন:
ইসলাম, বিবেক, (ভালো-মন্দ) পার্থক্য করার জ্ঞান, অপবিত্রতা হতে মুক্ত হওয়া, নাপাকী দূর করা, সতর ঢাকা, সালাতের ওয়াক্ত হওয়া, ক্বিবলার দিকে মুখ ফিরানো এবং নিয়ত করা।
প্রথম শর্ত: ইসলাম আর তার বিপরীত হলো কুফর। আর কাফিরের আমল প্রত্যাখ্যাত, সে যে আমলই করুক না কেন[১], [২], দলীল হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “মুশরিকরা যখন নিজেরাই নিজেদের কুফরী স্বীকার করে তখন তারা আল্লাহর মসজিদসমূহের আবাদ করবে, এমন হতে পারে না। তারা এমন যাদের সব কাজই নষ্ট হয়েছে এবং তারা আগুনের মধ্যে স্থায়ীভাবে অবস্থান করতে থাকবে।” [৩], আল্লাহ তা‘আলার আরেকটি বাণী: “আর তারা যে কাজ করেছে আমি সেদিকে অগ্রসর হব। অতঃপর তাকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব।” [৪]
দ্বিতীয় (শর্ত) [৫]: বিবেক আর তার বিপরীত হচ্ছে পাগলামী। আর পাগলের উপর হতে কলম তুলে নেওয়া হয়, যতক্ষণ না সে জ্ঞানে ফিরে আসে। দলীল হচ্ছে, এই হাদীস [৬]: “তিন শ্রেণির উপর হতে কলম তুলে নেওয়া হয়েছে: ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, পাগল, যতক্ষণ না সে জ্ঞান ফিরে পায় এবং নাবালক, যতক্ষণ না সে বালিগ হয়।” [৭]
তৃতীয়: তামঈয (ভালো-মন্দ তফাৎ করার শক্তি) আর তার বিপরীত হচ্ছে শিশু হওয়া, যার সীমা হচ্ছে সাত বছর। অতঃপর তাকে সালাতের ব্যাপারে আদেশ করা হবে [৮]; কারণ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সাত বছরে উপনীত হলে, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতের ব্যাপারে আদেশ কর। দশ বছরে উপনীত হলে তাদেরকে সালাতের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।”[৯]
চতুর্থ শর্ত[১০]: অপবিত্রতা দূর করা। আর তা হচ্ছে প্রসিদ্ধ অযু। অপবিত্রতা (হাদাস) অযুকে আবশ্যক করে।
তার শর্ত দশটি: ইসলাম, আকল (বিবেক), তামঈয (ভালো মন্দ পার্থক্যের বয়স), নিয়ত এবং নিয়তের হকুম বলবৎ থাকা অর্থাৎ অযু পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত তা ভাঙ্গার নিয়ত না করা [১১], অযু ওয়াজিব করে এমন কোনো বিষয় না থাকা, অযুর আগে ঢিলা-কুলুপ বা পানি ব্যবহার করা, পানির পবিত্রতা ও বৈধতা অক্ষুন্ন থাকা, চামড়াতে পানি পৌঁছতে বাধা দেয় এমন কিছু থাকলে তা সরিয়ে ফেলা এবং তার ফরযের ওয়াক্ত প্রবেশ করা [১২], এটি ঐ ব্যক্তির ওপর যার হাদাস বা অপবিত্রতা স্থায়ী।
আর অযুর ফরজ ছয়টি: মুখমন্ডল ধোয়া, এর মধ্যে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া অন্তর্ভুক্ত, মুখমন্ডলের দৈর্ঘ্য সীমা হচ্ছে: চুল জন্মানোর স্থান হতে চিবুক পর্যন্ত, আর প্রস্থ সীমা হচ্ছে দুই কানের প্রশাখা পর্যন্ত। দুইহাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া, সমস্ত মাথা মাসেহ করা, যার মধ্যে দুই কান অন্তর্ভুক্ত। দুই পা টাখনুসহ ধোয়া। তারতীব ও অবিচ্ছিন্নতা রক্ষা করা।[১৩] এর দলিল হলো মহান আল্লাহর বাণী: “হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং দুই টাখনু পর্যন্ত [১৪] পা (ধৌত কর)।[১৪]”(আয়াত)[১৫]
আর তারতীবের দলীল হচ্ছে, এই হাদীস: “তোমরা শুরু কর, যেটি দিয়ে আল্লাহ শুরু করেছেন” [১৬]
অবিচ্ছিন্নতার দলীল হচ্ছে: পা শুকনো থাকা ব্যক্তির হাদীস, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি একদা এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, তার পায়ে [১৭] এক দিরহাম পরিমাণ শুকনো একটি জায়গা রয়েছে, যেখানে পানি পৌঁছেনি। তখন তিনি তাকে আদেশ দিলেন [১৮] পুনরায় অযু করার জন্য। [১৯]
এবং অযুর ওয়াজিব হচ্ছে: উচ্চরণসহ তাসমিয়াহ তথা বিসমিল্লাহ পড়া। [২০]
অযু ভঙ্গকারী বিষয় আটটি: পেশাব-পায়খানার রাস্তা হতে কোনো কিছু বের হওয়া, শরীর থেকে কোনো নাপাকী বের হওয়া [২১], জ্ঞান হারানো, উত্তেজনাসহ নারীকে স্পর্শ করা [২২], পিছনের বা সামনের [২৩] গোপনাঙ্গ হাত দ্বারা স্পর্শ করা, উটের গোশত খাওয়া, মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো [২৪], এবং মুরতাদ হয়ে যাওয়া। আল্লাহ আমাদেরকে তা হতে হেফাযত করুন।
পঞ্চম শর্ত [২৫]: তিনটি জিনিস থেকে নাজাসাত (অপবিত্রতা) দূর করতে হবে: শরীর, কাপড় এবং যমীন। দলীল হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আর আপনার পরিচ্ছদ পবিত্ৰ করুন।” [২৬]
ষষ্ঠ শর্ত: সতর ঢাকা: আলেমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, সতর ঢাকতে সামর্থ ব্যক্তি উলঙ্গ হয়ে সালাত আদায় করলে, তার সালাত হবে না। পুরুষের সতরের সীমা হচ্ছে: নাভী হতে হাটু পর্যন্ত। দাসীর সতরও অনুরূপ, আর স্বাধীনা নারীর গোটা শরীরই সতর, শুধু তার মুখমণ্ডল ব্যতীত। দলীল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “হে আদম সন্তান প্রত্যেক মসজিদের কাছে তোমরা তোমাদের সৌন্দর্যকে অবলম্বন করো।” [২৭] তথা প্রতিটি সালাতের সময়ে।
সপ্তম শর্ত: ওয়াক্ত হওয়া। সুন্নাহ থেকে এর দলীল হচ্ছে, জিবরীল-আলাইহিস সালামের হাদীস যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইমামতি করলেন প্রথম এবং শেষ ওয়াক্তে [২৮], এরপর বললেন: “হে মুহাম্মাদ! এই দুই ওয়াক্তের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত আদয় করতে হবে।” [২৯]।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপরে ওয়াক্ত মোতাবেক লিখে দেওয়া হয়েছে।” [৩১]। অর্থাৎ: ওয়াক্তের মধ্যে ফরয করা হয়েছে। ওয়াক্তের দলীল [৩২] হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করুন, এবং ফজরের সালাত। নিশ্চয় ফজরের সালাত উপস্থিতির সময়।” [৩৩]
অষ্টম শর্ত: কিববলার দিকে মুখ করা। দলীল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “আমি অবশ্যই দেখছি আকাশের দিকে বার বার তোমার মুখ ফিরানোকে [৩৪]। অতএব আমি অবশ্যই তোমাকে এমন কিববলার দিকে ফিরাব, যাকে তুমি পছন্দ কর। সুতরাং তোমার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকেই তোমাদের চেহারা ফিরাও।” [৩৫]
নবম শর্ত: নিয়ত করা। নিয়তের স্থান হচ্ছে অন্তর। এর উচ্চারণ করা বিদ‘আত। এর দলীল হচ্ছে এই হাদীস [৩৬]: “নিশ্চয় আমলসমূহ নিয়তের উপরে নির্ভরশীল। আর প্রতিটি ব্যক্তি তার নিয়ত অনুযায়ীই ফল পাবে।” [৩৭]
সালাতের আরকান (রুকনসমূহ) চৌদ্দটি: সামর্থ থাকলে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা, তাকবীরে তাহরীমা বলা, সূরা ফাতিহা পড়া, রুকু করা, রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো, সাতটি অঙ্গের উপরে সিজদাহ করা [৩৭], সিজদা হতে সোজা হওয়া, দুই সিজদার মাঝখানে বসা[৩৯], প্রতিটি রুকনের মধ্যে প্রশান্ত থাকা, সেগুলির তারতীব ঠিক রাখা [৪০], শেষ তাশাহহুদ পড়া এবং তার জন্যে বসা, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপরে দরুদ পড়া এবং দুটি সালাম ফিরানো।
প্রথম রুকন: সামর্থ থাকলে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। দলীল হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ”তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে [৪১], বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা দাঁড়াবে বিনীতভাবে।”[৪২]
দ্বিতীয় [৪৩]: তাকবীরে তাহরীমা বলা। দলীল হচ্ছে এই হাদীস [৪৪]: “সালাতের তাহরীমা হলো তাকবীর [৪৫] আর সালাত থেকে হালাল হওয়া হলো তাসলীম [৪৬]। এরপরে সূচনা করা, সেটি হচ্ছে -সুন্নাত- এ কথা বলা: [৪৭] «سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُكَ، وَلاَ إِلَهَ غَيْرك»যার অর্থ: “হে আল্লাহ! প্রশংসা ও পবিত্রতা আপনারই, আপনার নাম বরকতময়, আপনি সম্মানিত, আপনি ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই।” [৪৮] سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ তথা: আমি আপনার মর্যাদার সাথে উপযুক্ত এমন পবিত্রতা বর্ণনা করছি। [৪৯] وَبِحَمْدِكَ তথা: আপনার নিমিত্তেই প্রশংসা। وَتَبَارَكَ اسْمُكَ [৫০] তথা: আপনার যিকিরের মাধ্যমে বরকত অর্জিত হয়। وتعالى جدك :তথা আপনার সম্মান-মর্যদা উন্নীত হয়েছে। [৫১] ولا إله غيرك তথা: হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া আসমান ও যমীনে সত্য কোনো [৫২] ইলাহ নেই।
আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। [৫৩] أَعُوذُ শব্দটির অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাই, আশ্রয় চাই আর আপনাকেই আঁকড়ে ধরি [৫৪]: الرَّجِيمِ শব্দটির অর্থ: বিতাড়িত, আল্লাহর রহমত হতে বিদূরিত [৫৫], যে আমার দীন ও দুনিয়ার কোনো ক্ষতি করবে না।[৫৬]
প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা একটি রুকন, হাদীসে যেমনটি এসেছে [৫৭]: “যে ব্যক্তি ফাতিহাতুল কিতাব পাঠ করবে না, তার সালাত নেই।” [৫৮], আর সেটি হল উম্মুল কুরআন।
﴾ بسم الله الرحمن الرحيم ﴿ [৫৯], হলো বরকত ও সাহায্য প্রার্থনা।
الحَمْدُ لله “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই” الحَمْدُ শব্দটি প্রশংসা অর্থে। আলিফ ও লামটি সকল প্রকার প্রশংসিত বিষয়কে শামিল করার জন্য ব্যবহৃত। পক্ষান্তরে “الجميل” (সুন্দর) এমন বস্তু যাতে “الجمال” ও তার ন্যায় বিশেষণে বস্তুর নিজের কোনো কর্ম নেই। জামালের কারণে কাউকে প্রশংসা করাকে [৬০] “مدح” বলা হয়, “حمد” নয়।
“رَبِّ العَالمَين” রব হলেন, যিনি [৬১]: মাবূদ, সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা [৬২], মালিক, কর্তৃত্বকারী এবং সমস্ত মাখলুককে নি‘আমাতের মাধ্যমে প্রতিপালনকারী [৬৩]।
العَالَمِينَ (বিশ্বজগত): আল্লাহ ছাড়া যা কিছু আছে, সবই عالم বা বিশ্বজগতের অন্তর্ভুক্ত। আর তিনি হচ্ছেন তাদের সকলের রব বা প্রতিপালনকারী।
الرَّحْمـَنِ “আর-রহমান”: সাধারণ রহমত, সমস্ত [৬৪] মাখলুকাতের জন্য।
الرَّحِيمِ “আর-রহীম”: মুমিনদের জন্য বিশেষ রহমত। দলীল হচ্ছে, আল্লাহর বাণী: “আর তিনি মুমিনদের জন্যই রহীম বা দয়ালু।” [৬৫]
مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ “বিচার দিনের মালিক”: হিসাব ও প্রতিদান দেওয়ার দিন। এমন দিন [৬৬] প্রত্যেকেই তার আমলের অনুপাতে প্রতিদান পাবে, যদি ভাল হয়, তবে ভাল, আর যদি মন্দ হয় তবে মন্দ। দলীল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “আর কিসে আপনাকে জানাবে : প্রতিদান দিবস কী?” “তারপর বলি, কিসে আপনাকে জানাবে : প্রতিদান দিবস কী?”[৬৭] “সেদিন কেউ কারও জন্য কিছু করার মালিক হবে না; আর সেদিন সব বিষয়ের কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর।” [৬৮] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীস হলো: “বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে। [৬৯] আর নির্বোধ ও অকর্মন্য সেই ব্যক্তি যে তার নফসের দাবির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর নিকট বৃথা আশা করে।” [৭০]
إِيَّاكَ نَعْبُدُ “আমরা আপনারই ইবাদাত করি”, তথা: আমরা আপনাকে ছাড়া কারো ইবাদাত করি না। এটি হচ্ছে বান্দা ও তার রবের মধ্যকার একটি চুক্তি, এ মর্মে যে: বান্দা আল্লাহকে ছাড়া কারো ইবাদাত করবে না। [৭১]
وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ “আমরা আপনারই সাহায্য চাই”: এটিও হচ্ছে বান্দা ও তার রবের [৭২] মধ্যকার একটি চুক্তি, এ মর্মে যে, সে আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে না।
اهْدِنَا الصِّرَاطَ المُسْتَقِيمَ ”আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দিন।” اهْدِنَا অর্থ: আমাদেরকে দেখিয়ে দিন, পথ বাতলে দিন আর আমাদেরকে দৃঢ় রাখুন, [৭৩], الصِّرَاطُ হলো: ইসলাম, কেউ বলেন, রাসূল [৭৪], কেউ বলেন, কুরআন, আর সব অর্থই সঠিক। المُسْتَقِيَم: যাতে কোনো বক্রতা নেই।
صِرَاطَ الذِّينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ “যাদের উপরে আপনি নি‘আমাত দান করেছেন, তাদের পথ” অর্থাৎ নি‘আমাতপ্রাপ্তদের পথ।” দলীল [৭৫] হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আর যে আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করবে সে নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ, –যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন –তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী।” [৭৬]
غير المغضوب عليهم অর্থ: ‘যাদের উপরে গযব দেওয়া হয়নি।’: এরা হচ্ছে ইহুদী, তাদের কাছে ইলম বা জ্ঞান ছিল তবে তারা সে অনুযায়ী আমল করেনি। [৭৭] তুমি আল্লাহর কাছে তাদের পথ হতে দূরে রাখার জন্য প্রার্থনা করবে।
وَلاَ الضَّالِّينَ অর্থ: “আর তারা পথভ্রষ্টও নয়।”: এরা হচ্ছে: খৃস্টান। যারা আল্লাহর ইবাদাত করেছে [৭৮] মূর্খতা ও ভ্রষ্টতার উপরে থেকে। তুমি আল্লাহর কাছে তাদের পথ হতে দূরে রাখার জন্য প্রার্থনা করবে। আর [তারা] পথভ্রষ্ট, এ কথার দলীল হচ্ছে: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالاً অর্থ: বল! আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের ব্যাপারে সংবাদ দেব না?” “ওরাই তারা, ‘পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়েগেছে [৭৯], যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকাজই করছে।[৮০]”[৮১] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীস হলো [৮২]: “তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেদের রীতি-নীতির অনুসরণ করবে। যেমন এক পালক অন্য পালকের সমান হয়। এমনকি তারা যদি দব্ব (গুইসাঁপ সদৃশ প্রাণীর) গর্তে ঢুকে, তাহলে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কি ইয়াহূদী ও খৃস্টান? তিনি বললেন, আর কারা?” ইমাম বুখারী ও মুসলিম এটি বর্ণনা করেছেন [৮৩]।
আর দ্বিতীয় হাদীস [৮৪]: “ইহুদীরা একাত্তরটি ফিরকাতে বিভক্ত হয়েছে, নাসারাগণ বাহাত্তরটি ফিরকাতে বিভক্ত হয়েছে আর অচিরেই এই উম্মাত তিহাত্তরটি ফিরকাতে বিভক্ত হবে। তাদের একটি ছাড়া সকলেই জাহান্নামী। আমরা বললাম: [মুক্তিপ্রাপ্তরা] তারা কারা হে [৮৫] আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন: যারা আমি ও আমার সাহাবাগণ যার উপরে রয়েছি[৮৬] অনুরুপ বিষয়ের উপরে থাকবে।” [৮৭]
এবং রুকু করা, রুকু হতে উঠা, সাতটি অঙ্গের উপরে সিজদা করা, তার থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো, দুই সিজদার মাঝখানে বসা। দলীল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকু এবং সিজদা কর।” [৮৮] [৮৯] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত হাদীস হলো[৯০]: “সাতটি হাঁড়ের উপরে সিজদাহ করার জন্য আমাকে আদেশ করা হয়েছে।”[৯১] [৯২] প্রশান্ত থাকা [৯৩] প্রতিটি কাজে [৯৪] আর রুকনগুলো ধারাবাহিকভাবে আঞ্জাম দেয়া। দলীল হচ্ছে আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত সালাতে ভুল করা ব্যক্তির হাদীস, তিনি বলেছেন: “একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম, তখন একটি লোক প্রবেশ করল [৯৫], এরপরে সে সালাত আদায় করল, [এরপরে সে দাঁড়ালো] [৯৬], তারপরে সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল, তখন তিনি বললেন [৯৭]: “তুমি যাও সালাত আদায় কর কারণ, তুমি সালাত আদায় করোনি।” সে তা তিনবার করলেন, এরপরে বলল: ঐ সত্তার কাসম! যিনি আপনাকে সত্য দীনসহ নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন, আমি এর থেকে[৯৯] আর সুন্দর করে সালাত আদায় করতে পারি না। তাই আমাকে শিক্ষা দিন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন [১০০]: “যখন তুমি সালাতে দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। অতঃপর কুরআন হতে যা তোমার পক্ষে সহজ তা পড়বে। অতঃপর রুকু‘তে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকূ‘ করবে। অতঃপর ওঠবে ও স্থিরভাবে দাঁড়াবে। অতঃপর সাজদাহ করবে ও সাজদাতে স্থির হবে। অতঃপর ওঠবে ও স্থির হয়ে বসবে। আর তোমার পুরো সলাতে তা বাস্তবায়ন করবে।” [১০২] আর শেষ তাশাহহুদ একটি অত্যাবশ্যক রুকন [১০৩], যেমনটি ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেছেন: আমাদের উপরে তাশাহহুদ ফরয হওয়ার আগে আমরা বলতাম: আল্লাহর উপরে তাঁর বান্দাদের পক্ষ হতে সালাম বর্ষিত হোক! জিবরীলের উপরে ও মিকাইলের উপরে সালাম বর্ষিত হোক! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন [১০৪]: “তোমরা বলবে না: আল্লাহর উপরে [১০৫] তাঁর বান্দাদের পক্ষ হতে সালাম বর্ষিত হোক! কেননা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই সালাম [১০৬], বরং তোমরা বলবে: التَّحِيَّاتُ لله وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ الله وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ الله الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَن لاَ إِلَهَ إِلاَّ الله، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ ورَسُولُهُ» অর্থ: ‘‘সমস্ত সন্মান-মর্যাদা[১০৭], সালাত এবং ভাল কাজ আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাগণের প্রতি। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোনো মাবূদ নাই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।’’ [১০৮] التَّحِيَّاتُ অর্থ হলো: সকল ধরণের সন্মান আল্লাহর জন্যই [১০৯], মালিকানা ও উপযুক্ততার দিক থেকে, যেমন: বিনত হওয়া, রুকু করা [১১০], সিজদা করা, অবস্থান করা, ধারাবাহিকতা এবং সমস্ত [১১১] এমন কিছু যা দ্বারা বিশ্ব প্রতিপালক রবকে সম্মান করা হয়, তাঁর সকলটুকুই আল্লাহর জন্যে। যে এগুলো থেকে কোনো কিছু আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য বরাদ্দ করবে, সে মুশরিক ও কাফির [১১২], وَالصَّلَوَاتُ অর্থ: সমস্ত দো‘আ। কেউ বলেছেন: পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। وَالطَّيِّبَاتُ لله [১১৩] আল্লাহ পবিত্র, আর তিনি কথা ও কাজের মধ্য হতে যা ভালো ও পবিত্র তা ছাড়া অন্য কিছুই গ্রহণ করেন না [১১৪]। السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيّ وَرَحْمَةُ الله وَبَرَكَاتُهُ: তুমি এটা দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য সালাম, রহমত [১১৫] ও বরকতের [১১৬] দু‘আ করবে। আর যার জন্য দু‘আ করা হবে, তাকে আল্লাহর সাথে ডাকা যাবে না। السَّلاَمُ[1]عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ الله الصَّالِحِينَ তুমি তোমার জন্য সালামের দু‘আ করবে এবং আসমান [১১৮] ও যমীনের সকল নেককার বান্দাদের জন্য। সালাম হচ্ছে একটি দু‘আ, আর নেককারদের জন্য দু‘আ করা হয়, আর তাই তাদেরকে আল্লাহর সাথে আহবান করা যাবে না।
أَشْهَدُ أَن لاَ إِلَهَ إِلاَّ الله وَحْدَهُ[2] لاَ شَرِيكَ لَهُ
[120 আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ এক [১১৯], তিনি ব্যতীত আর কোনো মাবূদ নাই, তাঁর কোনো শরীকও নেই [১২০]: তুমি সাক্ষ্য প্রদান করবে, দৃঢ়তার সাথে যে, আসমানে এবং যমীনে [১২১] আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারভাবে অন্য কোনো মাবূদের ইবাদাত করা যাবে না। এবং এটারও সাক্ষ্য প্রদান করা যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল, সেটা এভাবে যে, [১২২] তিনি একজন বান্দা, তাই তার ইবাদাত করা যাবে না, তিনি একজন রসূল, যাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা যাবে না, বরং তার অনুগত হতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ তাকে [তাঁর] বান্দা হওয়ার মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন। দলীল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “তিনি বরকতময় যিনি তাঁর বান্দার উপর [১২৩] ফুরকান নাযিল করেছেন যেন সে জগতবাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে।[১২৪] اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وعلى آل إبراهيم إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ [অর্থ:] “হে আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপর [১২৫] সালাত বর্ষণ করুন! যেমন আপনি ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের [১২৬] উপরে সালাত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও মর্যাদাবান [১২৭]। আল্লাহর পক্ষ হতে সালাত হচ্ছে: কোনো বান্দার ব্যাপারে ফেরেশতাদের কাছে তাঁর প্রশংসা [১২৮], যেমনটি বুখারী রহিমাহুল্লাহ তার সহীহ গ্রন্থে আবুল আলিয়াহ হতে বর্ণনা করেছেন: তিনি বলেছেন, আল্লাহর সালাত হচ্ছে: কোনো বান্দার ব্যাপারে ফেরেশতাদের কাছে তাঁর প্রশংসা [১২৯] [১৩০], কেউ বলেছেন, রহমত, তবে প্রথম মতটিই সঠিক। আর ফেরেশতাদের পক্ষ হতে সালাত হচ্ছে: গোনাহ মাফের দু‘আ করা, আর মানুষের পক্ষ হতে সালাত হচ্ছে: দু‘আ। আর وَبَارِكْ ও তার পরবর্তী অংশ হচ্ছে [১৩১] কথা ও কাজের সুন্নাহসমূহ।[3]
(সালাতের) ওয়াাজিব আটটি: তাকবীরে তাহরীমা বাদে অন্য সকল তাকবীর, রুকুতে سُبْحَانَ رَبِيَ العَظِيمِ বলা, (অর্থ: আমার সুমহান রবের পবিত্রতা ঘোাষণা করছি।) ইমাম ও একাকী সালাত আদায়কারীর জন্য سَمِعَ الله لِمَنْ َحِمدَهُ বলা, (অর্থ: যে আল্লাহর প্রশংসা করেছে, তার প্রশংসা আল্লাহ শুনেছেন।) সবার জন্যই رَبَنَا وَلَكَ الحَمْدُ বলা, (অর্থ: হে আমাদের রব! প্রশংসা আপনারই।) সিজদাতে سُبْحَانَ رَبِيَ الأَعْلَى বলা, (অর্থ: আমার সুউচ্চ রবের পবিত্রতা ঘোাষণা করছি।) দুই সিজদার মাঝখানে رَبِّ اغْفِرْ لِي বলা, (অর্থ: হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন!) প্রথম তাশাহহুদ পাঠ করা এবং তার জন্যে প্রথম বৈঠক করা।
আর রুকনসমূহ [১৩২] হচ্ছে এমন: যার থেকে ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃত কোনো কিছু ছুটে গেলে সালাত বাতিল হয়ে যায়। আর ওয়াজিব হচ্ছে এমন: যার থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু ছুটে গেলে সালাত বাতিল হয়ে যায়, আর ভুলক্রমে হলে সাহু সিজদা তার ক্ষতিপূরণ করবে[১৩৩]। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। [আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর, তার পরিবার ও তার সাহাবীদের উপর আল্লাহর অসংখ্য সালাত ও সালাম নাযিল হোক।] [১৩৪]