ادعاء حق التشريع والتحليل والتحريم
﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤﴾ [الاعراف: ٥٤]
কোন আইন বান্দাদের জন্য উপযোগী তা তিনিই জানেন। অতঃপর সে মোতাবেক আইন তিনি তাদের জন্য প্রণয়ন করেন। যেহেতু তিনি তাদের সকলের রব, তাই তিনি তাদের জন্য আইন ও যাবতীয় বিধান প্রণয়ন করেন। আর যেহেতু তারা সকলেই তাঁর বান্দা, তাই তারা তাঁর প্রণীত বিধানসমূহ মেনে নেয়। আর এ মেনে নেওয়ার যাবতীয় কল্যাণ তাদের দিকেই ফিরে আসে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩﴾ [النساء: ٥٩]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَمَا ٱخۡتَلَفۡتُمۡ فِيهِ مِن شَيۡءٖ فَحُكۡمُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبِّي﴾ [الشورا: ١٠]
আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আর কাউকে ও বিধান দাতা হিসাবে গ্রহণ করার প্রতি তিনি কঠোর অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন। তিনি বলেন,
﴿أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْ شَرَعُواْ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمۡ يَأۡذَنۢ بِهِ ٱللَّهُۚ﴾ [الشورا: ٢١]
অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহর শরী‘আত ব্যতীত অপর কোনো শরী‘আত গ্রহণ করে, সে মূলতঃ আল্লাহর সাথে শরীক করে থাকে। আর যে সব ইবাদাত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অনুমোদিত নয়, তা বিদ‘আত। আর প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ»
«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»
রাজনীতি ও মানুষের মধ্যে বিচার- আচারের ক্ষেত্রে যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ অনুমোদন করেন নি, তা মূলতঃ তাগুত ও জাহেলিয়াতের বিধান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ٥٠﴾ [المائدة: ٥٠]
অনুরূপভাবে হালাল- হারাম নির্ধারণ আল্লাহ তা‘আলারই হক। এতে তাঁর সাথে শরীক হওয়া কারো জন্যই বৈধ নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَأۡكُلُواْ مِمَّا لَمۡ يُذۡكَرِ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ وَإِنَّهُۥ لَفِسۡقٞۗ وَإِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰٓ أَوۡلِيَآئِهِمۡ لِيُجَٰدِلُوكُمۡۖ وَإِنۡ أَطَعۡتُمُوهُمۡ إِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُونَ ١٢١﴾ [الانعام: ١٢١] .
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর হারাম করা কোনো কিছুকে হালাল করার ক্ষেত্রে শয়তান ও তাদের বন্ধুদের আনুগত্য পোষণ করাকে তাঁর সাথে শির্ক বলে সাব্যস্ত করেছেন। অনুরূপভাবে আল্লাহর হালাল করা বস্তুকে হারাম করা কিংবা হারাম করা বস্তুকে হালাল করার ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি আলেমগণ ও শাসকবর্গ এ উভয় প্রকার লোকদের অনুসরণ করে থাকে, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ব্যতীত অন্যদেরকেও রব বানিয়ে নিল। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُوٓاْ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗاۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۚ سُبۡحَٰنَهُۥ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٣١﴾ [التوبة: ٣١]
তিরমিযী ও অন্যান্যদের বর্ণনায় এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি আদী ইবন হাতেম তাঈ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সামনে তিলাওয়াত করলে আদী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো তাদের ইবাদাত করতাম না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তারা যে সব হারাম বস্তুকে হালাল প্রতিপন্ন করতো, তোমরাও কি তাকে হালাল মনে করতে না? আর যে সব হালাল বস্তুকে তারা হারাম সাব্যস্ত করতো, তোমরা কি তাকে হারাম ভাবতে না? উত্তরে আদী বললেন: জী, হ্যাঁ। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, ওটাই তাদের ইবাদাত।
এ অবস্থা যদি সেই লোকদের হয়, যারা আল্লাহর শরীয়তের খেলাপ হালাল-হারাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে উলামা ও আবেদ লোকদের আনুগত্য করে অথচ এ সকল আলেমগণ অন্যদের চেয়ে দীন ও ইলমের অধিক নিকটবর্তী, উপরন্তু তাদের ভুল কখনো ইজতেহাদ ও গবেষণাপ্রসূত হতে পারে, যাতে হক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারলে ও তারা পুণ্যবান বলে গণ্য হবেন। তাহলে সে সব লোকদের কি অবস্থা হবে, যারা কাফির ও নাস্তিকদের রচিত আইন-কানুনের অনুসরণ করে, মুসলিম দেশসমূহে তা আমদানী করে এবং তদনুযায়ী মুসলিমদের মধ্যে শাসনকার্য পরিচালনা করে। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। এরা মূলতঃ আল্লাহর বদলে কাফিদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে, যারা তাদের জন্য আইন ও বিধান রচনা করে এবং তাদের জন্য হারামকে বৈধ করে মানুষের মধ্যে সে অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করে।
সমাপ্ত