الحكم بغير ما أنزل الله
আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান রাখা ও তাঁর ইবাদত করার দাবী হলো তাঁর হুকুম মেনে নেওয়া, তাঁর শরী‘আতের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং কথাবার্তা, মৌলিক নীতিমালা, ঝগড়া-ঝাটি ও জান-মালসহ সকল অধিকারের ক্ষেত্রে মতানৈক্যের সৃষ্টি হলে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতের দিকে প্রত্যাবর্তন করা। আল্লাহই প্রধান বিচারক এবং প্রত্যেক ফয়সালার সময় তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করা উচিত। অতএব, সকল শাসনকর্তার দায়িত্ব কর্তব্য হলো আল্লাহর অবতারিত নির্দেশ অনুযায়ী হুকুম পরিচালনা করা। আর প্রজা সাধারণেরও উচিত আল্লাহ স্বীয় গ্রন্থে যে হুকুম অবতীর্ণ করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতে যা কিছু বর্ণিত আছে, সে অনুযায়ী ফয়সালা মেনে নেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা শাসকবর্গের ক্ষেত্রে বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُكُمۡ أَن تُؤَدُّواْ ٱلۡأَمَٰنَٰتِ إِلَىٰٓ أَهۡلِهَا وَإِذَا حَكَمۡتُم بَيۡنَ ٱلنَّاسِ أَن تَحۡكُمُواْ بِٱلۡعَدۡلِۚ إِنَّ ٱللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِۦٓۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ سَمِيعَۢا بَصِيرٗا ٥٨﴾ [النساء: ٥٨].
আর প্রজাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩﴾ [النساء: ٥٩]
এরপর আল্লাহ বর্ণনা করেন যে, তাঁর অবতীর্ণ শরী‘আতের পরিবর্তে অন্য আইনের প্রতি বিচার প্রার্থনা করার সাথে ঈমানের কখনো সখ্য স্থাপিত হয় না। তিনি বলেন,
﴿ أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يَزۡعُمُونَ أَنَّهُمۡ ءَامَنُواْ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓاْ إِلَى ٱلطَّٰغُوتِ وَقَدۡ أُمِرُوٓاْ أَن يَكۡفُرُواْ بِهِۦۖ وَيُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُضِلَّهُمۡ ضَلَٰلَۢا بَعِيدٗا ٦٠ ﴾ [النساء: ٦٠]
এর একটু পরেই আল্লাহ বলেন,
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [النساء: ٦٥]
আল্লাহ তা‘আলা এখানে শপথের দ্বারা দৃঢ় ভাবে ঐ ব্যক্তি থেকে ঈমানের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বিচার চায় না এবং তাঁর হুকুমের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে না ও তা মেনেও নেয় না। অনুরূপভাবে তিনি সেই সব শাসকবর্গকেও কুফুরী, যুলুম ও ফাসেকী প্রভৃতিতে ভূষিত করেছেন যারা আল্লাহর শরী‘আত অনুযায়ী হুকুম পরিচালনা করে না। তিনি বলেন,
﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ٤٤﴾ [المائدة: ٤٤]
﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٤٥﴾ [المائدة: ٤٥]
﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤٧﴾ [المائدة: ٤٧]
আল্লাহর অবতারিত শরী‘আত অনুযায়ী হুকুম পরিচালনা করা এবং উলামাদের মধ্যে ইজতেহাদী যতসব মতভেদ রয়েছে, সকল ক্ষেত্রে হুকুমের জন্য আল্লাহর অবতারিত গ্রন্থের প্রতি প্রত্যাবর্তন করা অত্যাবশ্যক।
ইজতেহাদী এ সকল মাসআলায় সেটিই গ্রহণযোগ্য হবে, যা হবে কুরআন ও সুন্নাহের মুওয়াফিক। তা তারা গ্রহণ করবে এবং যা এতদুভয়ের বিরোধী হবে কোনো গোড়ামী ও পক্ষপাতিত্ব না করেই তা তারা প্রত্যাখ্যান করবে, বিশেষ করে আক্বীদার ক্ষেত্রে। কেননা খোদ ইমামগণই এরূপ অসিয়ত করে গেছেন এবং এটাই ছিল তাদের সকলের মত। অতএব, এখন যারা তাদের সে মতের বিরোধিতা করবে, তারা তাঁদের অনুসারী হতে পারে না। যদিও তারা তাঁদের প্রতি নিজেদেরকে সম্পর্কিত করে থাকে। এ ধরনের লোকদের ব্যাপারেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ﴾ [التوبة: ٣١]
সুতরাং আয়াতটি নাসারাদের সাথে খাস নয়। বরং যারাই তাদের অনুরূপ কাজ করবে তাদের সকলকেই আয়াতটি শামিল করছে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশের বিরোধিতা করে মানুষের মধ্যে আল্লাহর অবতীর্ণ হুকুম ব্যতীত অন্য আইন মোতাবেক ফয়সালা দেয়, অথবা তার প্রবৃত্তি ও ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে তা করে থাকে, সে মূলতঃ তার ঘাড় থেকে ইসলাম ও ঈমানের বন্ধন খুলে ফেলল। যদিও তার ধারণা যে, সে মুমিন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা যারা এরূপ করতে চায় তাদের প্রতি স্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন নি এবং তাদের ঈমানের দাবিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছেন। আয়াতে উল্লিখিত يزعمون শব্দটির ব্যবহার থেকে বুঝা যায় যে, এ দ্বারা তাদের ঈমানকে মূলতঃ অস্বীকার করা হচ্ছে। কেননা يزعمون শব্দটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে কথা ও কাজে বিরোধপূর্ণ মিথ্যা দাবিদারদের জন্যই ব্যবহৃত হয়। এ ব্যাপারেটি নিম্ন বর্ণিত আয়াত দ্বারা আরো সুস্পষ্ট হয়। এ ব্যাপারটি নিম্ন বর্ণিত আয়াত দ্বারা আরো সুস্পষ্ট হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَقَدۡ أُمِرُوٓاْ أَن يَكۡفُرُواْ بِهِۦۖ﴾ [النساء: ٦٠]
যেমন সূরা বাকারার একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿فَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ﴾ [البقرة: ٢٥٦]
যদি মুমিনের হৃদয়ে এ রুকনের অস্তিত্ব না থাকে তাহলে সে একত্ববাদী নয়। বস্তুত্ব তাওহীদ হলো ঈমানের ভিত্তি, যা থাকলে সকল আমল শুদ্ধ হয় এবং না থাকলে সকল আমল বরবাদ হয়ে যায়। নিম্ন বর্ণিত আয়াতটিতে সে কথা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বিধৃত হয়েছে।
﴿فَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ﴾
কেননা তাগুতের কাছে ফায়াসলার জন্য যাওয়া ও তার হুকুম মানা প্রকৃত পক্ষে তাগুতের প্রতি ঈমান আনারই নামান্তর।
আল্লাহর শরী‘আত অনুযায়ী যে ব্যক্তি ফয়সালা গ্রহণ করে না তার ঈমান না থাকাটাই প্রমাণ করে যে, আল্লাহর শরী‘আত অনুযায়ী হুকুম ও ফয়সালা প্রদান করাই হলো ঈমান, আকীদা ও আল্লাহর ইবাদাত। এটা মেনে নেওয়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জরুরি। অন্য দিকে আল্লাহর শরী‘আত অনুযায়ী হুকুম ও ফয়সালা শুধু এজন্য না দেওয়া চাই যে, মানুষের জন্য এটাই সর্বাধিক উপযোগী ও নিরাপত্তার সবচেয়ে বেশি নিশ্চয়তা প্রদানকারী। কিছু লোক এ দিকটির ওপর সম্পূর্ণ গুরুত্ব আরোপ করে এবং শরী‘আত অনুযায়ী ফয়সালা দেওয়া যে ঈমান ও ইবাদাত, এ প্রথম দিকটি ভুলে যায়। অথচ আল্লাহ তা‘আলা নিজে এমন লোকদের সমালোচনা করেছেন যারা তাঁর ইবাদাতের দিকটি বাদ দিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে শরী‘আত অনুযায়ী ফয়সালা গ্রহণ করে। আল্লাহ বলেন,
﴿وَإِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ إِذَا فَرِيقٞ مِّنۡهُم مُّعۡرِضُونَ ٤٨ وَإِن يَكُن لَّهُمُ ٱلۡحَقُّ يَأۡتُوٓاْ إِلَيۡهِ مُذۡعِنِينَ ٤٩﴾ [النور: ٤٨، ٤٩]
তারা তাদের প্রবৃত্তির ঈপ্সিত বস্তুর প্রতিই শুধু গুরুত্ব আরোপ করে এবং যা কিছু তাদের প্রবৃত্তির বিপরীত, তা হতে তারা মুখ ফিরিয়ে রাখে। কেননা তারা মূলত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফয়সালার জন্য যাওয়ার জন্য যাওয়ার দ্বারা আল্লাহর ইবাদাত করে না।
সমাপ্ত