10 - Yunus ()

|

(1) আলিফ-লাম-রা। এগুলো হিকমতপূর্ণ কিতাবের (কুরআনের) আয়াত।

(2) এটা কি মানুষের জন্য আশ্চর্যের বিষয় যে, আমি তাদের মধ্য থেকেই একজনের কাছে অহী প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে, ‘তুমি মানুষকে (আল্লাহর শাস্তি থেকে) সতর্ক করো এবং মু’মিনদেরকে এ সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে উঁচু মর্যাদা।’ (এর পরিপ্রেক্ষিতে) কাফিররা বলতে লাগলো: ‘এ তো এক সুস্পষ্ট যাদুকর!’

(3) (হে আশ্চর্যান্বিতরা!) ‘নিশ্চয় তোমাদের রব হলেন সেই আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও জমিন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি ‘আরশের ওপর উঠলেন। তিনি সব বিষয় একাই সিদ্ধান্ত নেন ও পরিচালনা করেন। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কোন সুপারিশকারী সুপারিশ করতে পারে না। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। সুতরাং তোমরা (একনিষ্ঠভাবে) তাঁরই ইবাদত করো। (তাঁর একত্ববাদের ওপর এতো দলিল-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও) তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?

(4) (কিয়ামতের দিন) তাঁরই কাছে তোমাদের সকলকে ফিরে যেতে হবে।(১) আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। তিনিই (পূর্বের নমুনা ব্যতীত) সৃষ্টিকে প্রথম অস্তিত্বে আনেন, মৃত্যুর পর তিনি আবার তাকে সৃষ্টি করবেন, যাতে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদেরকে ইনসাফপূর্ণ প্রতিদান দিতে পাবেন। আর যারা কুফরি করেছে তাদের জন্য রয়েছে, অত্যন্ত গরম পানীয় (যা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে ফেলবে)। উপরন্তু (আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের সাথে) কুফরি করার কারণে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

(5) তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিমান ও চাঁদকে আলোকময় এবং তার জন্য (আটাশটি) মনযিল(১) নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা (চন্দ্র ও সূর্যের মাধ্যমে) বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এগুলোকে (অনর্থকভাবে নয়; বরং) উদ্দেশ্যমূলকভাবেই সৃষ্টি করেছেন। তিনি জ্ঞানীদের জন্যে এসব নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন।

(6) নিশ্চয় দিন ও রাতের আবর্তনে(১) এবং আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তাতে নিদর্শন রয়েছে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্যকারী মুত্তাকী সম্প্রদায়ের জন্য।

(7) নিশ্চয় যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না, (আখিরাতের স্থায়ী জীবনের পরিবর্তে) দুনিয়ার জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট হয়েছে এবং এতেই পরিতৃপ্ত থাকে, আর যারা আমার নিদর্শনাবললি সম্পর্কে গাফিল।

(8) তাদের (কুফরি এবং কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করার মন্দ) কৃতকর্মের কারণে তাদের আবাসস্থল হবে জাহান্নাম।

(9) (পক্ষান্তরে) নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের রব তাদের ঈমান আনার কারণে তাদেরকে উত্তম আমলের পথ দেখান, (যা তাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে পৌঁছিয়ে দেয়)। উপরন্তু আল্লাহ তাদেরকে (কিয়ামতের দিন) নিয়ামতে ভরপুর স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যেখানে তাদের তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে, নদ-নদী-ঝর্ণাধারা।

(10) সেখানে (জান্নাতে) তাদের দু‘আ হবে: ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা’ (হে আল্লাহ! আপনি মহান, পবিত্র।) এবং সেখানে তাদের অভিবাদন হবে: ‘সালাম’ (শান্তি ও নিরাপত্তা হোক!) আর তাদের দু‘আর পরিসমাপ্তি হবে: ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন (সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর প্রাপ্য)!’

(11) আর (ভেবে দেখো,) আল্লাহ যদি মানুষের (রাগের সময় নিজ, সন্তান ও সম্পদের বিরুদ্ধে করা) অকল্যাণের দু‘আ দ্রুত কবুল করেন, যেভাবে তিনি তাদের কল্যাণের দু‘আ দ্রুত কবুল করেন, তবে অবশ্যই তাদের মৃত্যুর (ধ্বংসের) সময় এসে যেত।(১) কাজেই যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না, তাদেরকে আমি তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়ানোর জন্যে ছেড়ে দেই।

(12) আর মানুষকে যখন দুঃখ-দুর্দশা স্পর্শ করে, তখন সে শুয়ে, বসে বা দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। অতঃপর আমি যখন (প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে)তার দুঃখ-দুর্দশা দূর করি, তখন সে এমনভাবে চলতে থাকে, যেন তাকে দুঃখ-দুর্দশা স্পর্শ করার পর সে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আমাকে ডাকেইনি। এভাবে(১) (কুফরি ও পাপকাজের মাধ্যমে) সীমালংঘনকারীদের কর্মসমূহ তাদের কাছে শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে।(২)

(13) আর (হে মুশরিকরা!) অবশ্যই আমি তোমাদের আগে বহু জাতিকে (আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের অস্বীকার এবং পাপে লিপ্ত হওয়ার কারণে) ধ্বংস করেছি, যখন তারা যুলম করেছিল। আর তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ এসেছিল; কিন্তু তারা ঈমান আনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এভাবে আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়ে থাকি।(১)

(14) তারপর আমি তোমাদেরকে পৃথিবীতে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছি, তোমরা কীরূপ কাজ করো তা দেখার জন্যে।

(15) আর যখন আমার (একত্ববাদ প্রমাণকারী) সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তাদের কাছে পাঠ করা হয়, তখন তাদের মধ্যে যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না, তারা বলে:(হে মুহাম্মাদ! তুমি) এটির পরিবর্তে অন্য এক কুরআন নিয়ে আসো(১) অথবা এর মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন করো।' (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে বলো: ‘নিজে থেকে এটা পরিবর্তন ও রূপান্তর করা আমার কাজ নয়। আমার প্রতি যা অহী নাযিল হয়, আমি শুধু তারই অনুসরণ করি। আমি আমার রবের অবাধ্যতা করলে, অবশ্যই (কিয়ামতের) মহা দিনের শাস্তির আশঙ্কা করি।’

(16) (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে বলো: ‘আল্লাহ যদি চাইতেন, আমিও তোমাদের কাছে এটা তিলাওয়াত করতাম না এবং তিনিও তোমাদেরকে এ বিষয়ে জানাতেন না। আমি তো এর আগে তোমাদের মধ্যে জীবনের দীর্ঘকাল (চল্লিশ বছর) অবস্থান করেছি।(১) তবুও কি তোমরা বুঝতে পার না?’(২)

(17) অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রটায় বা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে! নিশ্চয় (অপবাদের মাধ্যমে আল্লাহর সীমারেখা অতিক্রমকারী) অপরাধীরা সফলকাম হবে না।

(18) আর তারা (মুশরিকরা) আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ‘ইবাদত করছে, যা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। উপরন্তু তারা বলে: ‘এগুলো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী।‘ (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে বলো: ‘তোমরা কি (সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত) আল্লাহকে আসমানসমূহ ও জমিনের এমন কিছুর সংবাদ দিচ্ছো, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে (তাঁর সাথে মিথ্যা) শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।

(19) আর সকল মানুষ একই উম্মত (একত্ববাদী মু’মিন) ছিল। অতঃপর তারা (বিভিন্ন বিষয়ে ) মতানৈক্য সৃষ্টি করে (এবং বহু দলে বিভক্ত হয়ে যায়)(১) আর তোমার রবের (দুনিয়াতে দ্বন্দ্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের মাঝে ফায়সালা না করে বরং কিয়ামত দিবসেই করবেন মর্মে) পূর্ব থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না থাকলে তারা যে বিষয়ে মতানৈক্য ঘটায়, তার মীমাংসা তো (দুনিয়াতেই) হয়েই যেত।(২)

(20) আর তারা (মুশরিকরা) বলে: ‘মুহাম্মাদের ওপর কেন তার রবের পক্ষ থেকে (তার সত্যতা প্রমাণকারী) নিদর্শন নাযিল হয় না?’ (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে বলো: ‘গায়িবের জ্ঞান তো শুধু আল্লাহরই আছে। কাজেই তোমরা (প্রস্তাবিত প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহের) অপেক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি।’

(21) আর (মানুষের স্বভাব হলো) দুঃখ-দুর্দশা তাদেরকে স্পর্শ করার পর যখন আমি মানুষকে (বৃষ্টি ও সজীবতার মাধ্যমে আমার) রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই, তারা তখনই আমার আয়াতসমূহের বিরুদ্ধে কূটকৌশল করে। (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে বলো: ‘কৌশল অবলম্বনে আল্লাহ আরো বেশি দ্রুততর।‘ নিশ্চয় তোমরা যে কূটকৌশল করো, তা আমার (সংরক্ষণকারী) ফিরিশতারা লিখে রাখে।

(22) (হে মানুষ!) একমাত্র আল্লাহই তোমাদেরকে জলে-স্থলে (পদযুগলে, পশুর পিঠে এবং নৌকা বা জাহাজে ) ভ্রমণ করান। এমনকি তোমরা যখন নৌযানে আরোহণ করো এবং সেগুলো তোমাদের নিয়ে অনুকূল আবহাওয়ায় (সাগরে) চলতে থাকলে, আরোহীরা আনন্দিত হয়। তারপর যখন ঝড়-বাতাস বইতে শুরু করে এবং চারদিক থেকে সাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা ধেয়ে আসে, আর তারা নিশ্চিত ধারণা করে যে, এবার তারা ঘেরাও হয়ে পড়েছে (এবং তারা ধ্বংস হবে), তখন নিজেদের আনুগত্যকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্ধারণ করে(১) একমাত্র তাঁকেই ডাকতে থাকে এবং বলে: ‘আপনি যদি আমাদের এ থেকে উদ্ধার করেন, তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবো।’

(23) অতঃপর তিনি যখন (দু‘আ কবুল করে) তাদেরকে বিপদমুক্ত করেন তখন তারা (কুফরি, গুনাহ ও পাপে নিমজ্জিত হয়ে) জমিনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করতে থাকে। হে মানুষ! তোমাদের সীমালঙ্ঘন কেবল তোমাদের নিজেদের ওপরই বর্তাবে।(১) এর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনের সুখ ভোগ করে নাও, পরে (কিয়ামতের দিন) আমারই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। তখন আমি তোমাদেরকে তোমাদের আমলসমূহ জানিয়ে দিবো (এবং প্রতিফল দিবো)

(24) (আসলে) দুনিয়ার জীবনের (আনন্দ-উল্লাস দ্রুত নিঃশেষ হওয়ার) উদাহরণ তো এরূপ যেমন আমি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি, যা দ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদ্‌গত হয়, যা থেকে মানুষ ও জীব-জন্তু খেয়ে থাকে। তারপর যখন জমিন তার সজীবতা ধারণ করে রকমারি উদ্ভিদে সুশোভিত ও নয়নাভিরাম হলো, তখন তার মালিকরা মনে করে যে, সেটা তাদের আয়ত্ত(১), তখন দিনে বা রাতে আমার (ধ্বংসের) নির্দেশ এসে পড়ে। তারপর আমি তা এমনভাবে নির্মূল করে দেই, যেন গতকালও সেটার অস্তিত্ব ছিল না। এভাবে আমি (দুনিয়ার অবস্থা ও তা দ্রুত শেষ হওয়া সংক্রান্ত) আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা চিন্তা-ভাবনা করে।

(25) আর আল্লাহ (মানুষকে) শান্তির আবাস জান্নাতের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছে, সরল পথে পরিচালিত করেন।

(26) যারা ইহসানের সাথে আমল করে (উত্তমরূপে আনুগত্যের কাজ করে এবং হারাম পরিহার করে) তাদের জন্য আছে জান্নাত এবং আরো বেশী (আল্লাহর দর্শন)(কিয়ামতের দিনে) কোনো কলঙ্ক-কালিমা এবং লাঞ্ছনা ও অবমাননা তাদের মুখমণ্ডলকে আচ্ছন্ন করবে না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।

(27) আর যারা মন্দ (কুফরি ও পাপ) কাজ করে, প্রতিটি মন্দের প্রতিফল হবে সমপরিমাণ আল্লাহর শাস্তি। উপরন্তু লাঞ্ছনা ও অবমাননা তাদের চেহারাগুলো ঢেকে ফেলবে। আল্লাহর শাস্তি থেকে তাদের রক্ষা করার কেউ নেই। তাদের চেহারাগুলো যেন অন্ধকার রাতের কালো ছায়ার মতো (আগুনের ধোঁয়া ও কালো রঙের আস্তরণে) আচ্ছাদিত। তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।

(28) আর (হে রাসূল!) তুমি স্মরণ করো, যেদিন (কিয়ামতের দিন) আমি সকল সৃষ্টিকে একত্র করবো, অতঃপর মুশরিকদেরকে বলবো: ‘তোমরা এবং তোমরা যাদেরকে (আমার সাথে) শরীক করেছিলে, তারা নিজ নিজ স্থানে অবস্থান করো।’ অতঃপর আমি তাদেরকে (‘ইবাদতকারী ও তাদের ভ্রান্ত মা’বূদদেরকে) পরস্পর থেকে পৃথক করে দিবো এবং তারা যাদেরকে (যে-সব মা‘বূদদেরকে) শরীক করেছিল তারা বলবে: ‘তোমরা তো (দুনিয়াতে) আমাদের ‘ইবাদাত করতে না।’

(29) (তখন তাদের উপাস্য মূর্তিগুলো এ বলে দায়িত্বমুক্তির ঘোষণা করবে যে,) ‘সুতরাং আল্লাহই আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট যে, তোমরা আমাদের ‘ইবাদাত করতে, এ বিষয়ে তো আমরা গাফিল ছিলাম।’(১)

(30) সেখানেই তারা প্রত্যেকে তাদের (দুনিয়ার জীবনের) নিজ নিজ কৃতকর্ম পরীক্ষা করে নিবে এবং তাদেরকে তাদের প্রকৃত অভিভাবক আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে আনা হবে এবং তখন তারা যে মূর্তিগুলোর সুপারিশের অমূলক দাবি করতো, তা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।

(31) (হে রাসূল!) তুমি (আল্লাহর সাথে শিরককারীদেরকে) বলে দাও:, ‘কে তোমাদেরকে আসমান (থেকে বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে) এবং জমিন থেকে (উদ্ভিদ উৎপন্ন করে) রিযক দেয়? অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বে আছে? কে জীবিতকে মৃত থেকে বের করেন? এবং কে মৃতকে জীবিত হতে বের করেন? আর কে (আসমান ও জমিন এবং এতদুভয়ের মাঝের) সব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন?’ তখন তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’। সুতরাং (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে বলে দাও: ‘তোমরা কি এ ব্যাপারটি জেনেও আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করবে না?’

(32) অতএব, (হে মানুষ! যিনি এসব করেন) তিনিই আল্লাহ, তোমাদের সত্য রব। সত্য জানার পরে তা ত্যাগ করা, বিভ্রান্তি ছাড়া আর কী থাকে? কাজেই (এ সুস্পষ্ট সত্য থেকে) তোমাদেরকে কোথায় ফেরানো হচ্ছে?

(33) (হে নবী! দেখো) এমনিভাবে তোমার রবের বাণী সত্য বলে সাব্যস্ত হয়েছে তাদের ওপর, যারা অবাধ্য হয়েছে, যে তারা কখনো ঈমান আনবে না।

(34) (হে রাসূল! তুমি মুশরিকদেরকে) বলো: ‘তোমাদের শরীকদের কেউ কি আছে, যে (পূর্ব নমুনা ছাড়া) প্রথম সৃষ্টি করে, অতঃপর তার পুনরাবৃত্তি ঘটায়?’(১) বলো: ‘আল্লাহই (পূর্ব নমুনা ছাড়া) প্রথম সৃষ্টি করেন, অতঃপর তার পুনরাবৃত্তি (পুনরুজ্জীবিত) করেন।’ অতএব তোমাদেরকে (সত্য থেকে) কোথায় ফিরানো হচ্ছে?

(35) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘তোমাদের শরীকদের কেউ কি আছে, যে সত্যের পথ দেখায়? বলো: ‘আল্লাহই সত্যের পথ দেখান। অতএব, যিনি সত্যের পথ দেখান, তিনিই কি আনুগত্যের অধিকতর হকদার, নাকি সে (উপাস্য), যাকে পথ দেখানো ছাড়া পথই খুঁজে পায় না? সুতরাং তোমাদের কী হলো? তোমরা কেমন বিচার করছো?(১)

(36) আর তাদের (মুশরিকদের) অধিকাংশ কেবল ধারণার অনুসরণ করে। নিশ্চয় সত্যের বিপরীতে ধারণা কোনো কাজে আসে না। তারা যা করে, সে বিষয়ে নিশ্চয় আল্লাহ সম্যক অবগত।

(37) আর এ আল-কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর রচনা হওয়া সম্ভব নয়। বরং এটি পূর্বের নাযিলকৃত কিতাবগুলোর সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর (সংক্ষিপ্ত বিধানের) বিস্তারিত বর্ণনাকারী। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।

(38) নাকি তারা (মুশরিকরা) বলতে চায় যে, ‘সে (মুহাম্মাদ) এ কুরআন বানিয়েছে? (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘(আমি মানুষ হয়ে নিজ হাতে এ কুরআন রচনা করতে পারলে) তবে তোমরাও তার মতো একটি সূরা (বানিয়ে) নিয়ে আসো এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পারো (এ কাজে নিজেদের সহযোগিতার জন্য) ডাকো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’

(39) বরং তারা এ বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার আগেই তাতে মিথ্যারোপ করেছে।(১) আর এর (শাস্তির) প্রকৃত পরিণতি এখনো তাদের কাছে আসেনি। এভাবেই (তাদের অস্বীকারের ন্যায়) তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যারোপ করেছিল। সুতরাং (হে রাসূল!) তুমি লক্ষ্য করো, কেমন ছিল যালিমদের পরিণাম (শাস্তি)!

(40) আর তাদের (মুশরিকদের) মধ্যে কেউ কেউ (মৃত্যুর পূর্বে) এর (আল-কুরআনের) প্রতি ঈমান আনবে এবং কেউ কেউ (অহংকার ও হঠকারিতা দেখিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত) তাতে ঈমান আনবে না। আর তোমার রব ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের(১) ব্যাপারে অধিক জ্ঞাত।

(41) আর (হে রাসূল!) তারা যদি তোমাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে তুমি তাদেরকে বলো: ‘আমার কর্ম আমার, আর তোমাদের কর্ম তোমাদের। আমি যা আমল করি, তোমরা তা (তার শাস্তি) থেকে দায়মুক্ত এবং তোমরা যা আমল কর, আমি তা (তার শাস্তি) থেকে দায়মুক্ত।’

(42) আর তাদের মধ্যে কিছু আছে, যারা তোমার (পঠিত আল-কুরআন) মনোযোগ দিয়ে শুনে। তবে তুমি কি বধিরদেরকে শুনাতে পারবে, তারা যদি (সত্য শোনার পরে বধিরতার পরিচয় দিয়ে) বুঝতেই না চায়?

(43) আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ তোমার দিকে (বাহ্যিক দৃষ্টিতে) তাকিয়ে থাকে, (অন্তরের চোখ দিয়ে নয়)। তবে তুমি কি অন্ধকে পথ দেখাতে পারবে, যদি তারা না দেখতে চায়?(১)

(44) নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মানষের প্রতি কোনো যুলম করেন না। বরং মানুষই (নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করে) নিজেদের প্রতি যুলম করে থাকে।(১)

(45) আর যেদিন (কিয়ামতের দিন) তিনি তাদেরকে একত্র করবেন, (সেদিন তাদের মনে হবে দুনিয়াতে) যেন তারা দিবসের মুহূর্তকালমাত্র অবস্থান করেছে। তারা একে অপরকে চিনতে পারবে। তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা আল্লাহর সাক্ষাৎ অস্বীকার করেছে। আর তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না।

(46) আর (হে রাসূল!) আমি তাদেরকে যে (শাস্তির) প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তার কিছু যদি তোমাকে (তোমার মৃত্যুর পূর্বেই) দেখিয়ে দেই, অথবা (এর পূর্বেই যদি) তোমাকে মৃত্যু দেই, তবে (উভয় অবস্থায়ই কিয়ামতের দিন) তাদেরকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। অতঃপর আল্লাহই তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সাক্ষী।

(47) আর (পূর্ববর্তী) প্রত্যেক উম্মতের জন্যই ছিলো রাসূল। অতঃপর যখন তাদের রাসূল (অহী নিয়ে উম্মতের কাছে) আসে,(১) তখন তাদের মধ্যে ন্যায়ভিত্তিক মীমাংসা করা হয়(২) এবং (তাদের আমলসমূহের প্রতিদানের ক্ষেত্রে) তাদের প্রতি সামান্যটুকুও যুলম করা হয় না।

(48) আর তারা (কাফিররা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে) বলে: ‘(তোমরা আমাদের সাথে যে শাস্তির ওয়াদা করেছিলে বলো) ‘কখন এর প্রতিশ্রুতি কার্যকর হবে; যদি তোমরা সত্যবাদী হও?

(49) (হে রাসূল!) বলো: ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, তা ছাড়া আমি নিজের কোন ক্ষতি বা উপকারের অধিকার রাখি না।’ প্রত্যেক উম্মতের জন্যে (আল্লাহর ওয়াদাকৃত শাস্তির) নির্দিষ্ট একটি সময় রয়েছে। যখন তাদের (শাস্তির) সময় আসবে, তখন এক মুহূর্তও পিছাতে পারে না এবং আগাতেও পারে না।

(50) (হে রাসূল! তুমি দ্রুত শাস্তি প্রত্যাশীদেরকে) বলো: ‘তোমাদের কি মনে হয় যে, যদি তোমাদের নিকট তাঁর শাস্তি রাতে বা দিনে (আকস্মিকভাবে) এসে পড়ে? (তাহলে তোমরা কি করতে পারবে ? ) তবে অপরাধীরা কীসের আশায় তাড়াহুড়া করছে?

(51) তবে কি তোমরা এটা (তোমাদের সাথে ওয়াদাকৃত শাস্তি) আসার পর তাতে ঈমান আনবে? তাহলে এখন?(১) অথচ তোমরা তো (এ শাস্তির প্রতি মিথ্যারোপ করে) এটাকেই তাড়াতাড়ি পেতে চেয়েছিলে!

(52) তারপর যারা যুলুম করত তাদেরকে বলা হবে, ‘(পরকালে জাহান্নামের) স্থায়ী শাস্তি আস্বাদন করো; তোমরা যে (কুফরি ও গুনাহসমূহ) করতে, তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল দেয়া হচ্ছে।’

(53) আর তারা (মুশরিকরা) তোমার কাছে জানতে চায়, ‘তা (ওয়াদাকৃত শাস্তি) কি সত্য?’ (হে রাসূল!) তুমি বলো: ‘হ্যাঁ, আমার রবের শপথ! নিশ্চয় তা সত্য। আর তোমরা সেটার আগমন ঠেকাতে পারবে না।’(১)

(54) আর যদি (কিয়ামতের দিন শাস্তির সম্মুখীন) প্রত্যেক যুলমকারী (আল্লাহর সাথে শিরককারী) ব্যক্তি জমিনে যা রয়েছে, তার সবকিছুর মালিক হয়ে যায়, তবে (কিয়ামতের দিন আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য) সে তা মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে দিবে এবং যখন তারা শাস্তি দেখবে, তখন তারা (কুফরি করার) লজ্জা গোপন করার চেষ্টা করবে। আর তাদের মধ্যে ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করা হবে এবং তাদেরকে যুলম করা হবে না।

(55) জেনে রেখো, নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে, তা সবই আল্লাহর। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।

(56) তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং তাঁর কাছেই (কিয়ামতের দিন) তোমাদের ফিরে যেতে হবে।

(57) হে তোমরা যারা মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ (আল-কুরআন) এবং অন্তরসমূহের সন্দেহ ও সংশয় ব্যাধির শিফা (আরোগ্য)(১) আর মু’মিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।

(58) (হে রাসূল! তুমি মানুষকে) বলো: ‘( আমি তোমাদের কাছে যে কুরআন নিয়ে এসেছি) এটা আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাঁর রহমতে। কাজেই এতে তারা যেন আনন্দিত হয়।’ এটি তারা যা (দুনিয়াতে যে ধন-সম্পদ) জমা করে, তার চেয়ে উত্তম।

(59) (হে রাসূল! তুমি এ মুশরিকদেরকে) বলো: ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ তোমাদের জন্য যে রিযক দিয়েছেন, তারপর তোমরা (নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো) তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ।’ বলো: ‘আল্লাহ কি তোমাদেরকে এটার অনুমতি দিয়েছেন, নাকি আল্লাহর ওপর তোমরা মিথ্যা রটনা করছ?’

(60) আর যারা আল্লাহর ওপর মিথ্যা রটাচ্ছে, কিয়ামতের দিন (তাদের পরিণতি) সম্পর্কে তাদের কী ধারণা?(১) নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল;(২) কিন্তু তাদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।

(61) আর (হে রাসূল!) তুমি যে অবস্থাতেই থাকো না কেন, আর আল্লাহর পক্ষ হতে আল-কুরআন থেকে যা কিছু তিলাওয়াত করো না কেন এবং (হে মানুষ !) তোমরা যে আমলই করো না কেন, আমি তোমাদের ওপর (যাবতীয় কাজে ) সাক্ষী থাকি, যখন তোমরা তাতে নিমগ্ন হও। আর আসমানসমূহ ও জমিনের অণু পরিমাণও তোমার রবের দৃষ্টির বাইরে নয় এবং তার চেয়ে ক্ষুদ্রতর বা বৃহত্তর কিছুই নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে (সংরক্ষিত) নেই।

(62) জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের (কিয়ামতের ভয়াবহতা নিয়ে) কোনো ভয় নেই, আর তারা (দুনিয়ার কোন সুবিধা হারিয়ে) চিন্তিতও হবে না।

(63) যারা ঈমান এনেছে এবং তারাই (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই) ভয় করতো।

(64) তাদের জন্যই রয়েছে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জীবনের সুসংবাদ। আল্লাহর বাণীসমূহের কোনো পরিবর্তন নেই। এটিই মহা সফলতা।

(65) আর (হে রাসূল!) তাদের কথা (উপহাস ও সমালোচনা) যেনো তোমাকে দুঃখ না দেয়। নিশ্চয় সকল মর্যাদা আল্লাহর। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।(১)

(66) জেনে রেখো, নিশ্চয় আসমানসমূহে যারা আছে এবং জমিনে যারা আছে, তারা সবাই আল্লাহরই এবং যারা (মুশরিকরা) আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে তাঁর শরীক বানিয়ে ডাকে, তারা মূলত কার অনুসরণ করছে? বস্তুত তারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে। আসলেই তারা (শরীকদেরকে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করে) শুধু মিথ্যা কথাই বলে।

(67) তিনিই সে সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য রাতকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা (কর্ম ও ক্লান্তি থেকে) বিশ্রাম নিতে পারো এবং দিনকে করেছেন, আলোকময় (১)। নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শনাবলি এমন সম্প্রদায়ের জন্যে, যারা (শিক্ষা ও সত্য গ্রহণের জন্য নির্দেশনা) শুনে।

(68) তারা (মুশরিকদের একদল) বলে: ‘আল্লাহ (ফিরিশতাদেরকে মেয়ে হিসেবে) সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি (এমন জঘন্য কথা থেকে) পবিত্র মহান! তিনি অভাবমুক্ত! যা কিছু আছে আসমানসমূহে ও যা কিছু আছে জমিনে, তা (সবকিছুর মালিকানা) তাঁরই। তোমাদের কাছে এ ব্যাপারে (আল্লাহ সন্তান গ্রহণের প্রসঙ্গে) কোনো প্রমাণ নেই। তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে (দলিলবিহীন) এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না?

(69) (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে বলো: ‘যারা আল্লাহর প্রসঙ্গে (সন্তান গ্রহণকে সম্পৃক্ত করে) মিথ্যা রটনা করবে, তারা সফলকাম হবে না।‘

(70) দুনিয়াতে তাদের জন্য রয়েছে, কিছু ভোগসামগ্রী। অতঃপর (কিয়ামতের দিন) আমার কাছেই তাদেরকে ফিরে আসতে হবে। তারপর তাদের কুফরির কারণে তাদেরকে কঠোর শাস্তি আস্বাদন করাবো।

(71) আর (হে রাসূল! তুমি) তাদেরকে (এ অস্বীকারকারী মুশরিকদেরকে) নূহের সংবাদ তিলাওয়াত করে শুনাও, যখন সে তার জাতিকে বলেছিল: ‘হে আমার জাতি! (তোমাদের মাঝে ) আমার অবস্থান এবং আল্লাহর আয়াতসমূহের মাধ্যমে আমার উপদেশ দান যদি তোমাদের কাছে দুঃসহ মনে হয়,(১) তবে আমি আল্লাহর ওপরই তাওয়াক্কুল করলাম। সুতরাং তোমরা তোমাদের কর্তব্য স্থির করে নাও এবং (প্রয়োজনে) তোমাদের শরীকদেরও ডেকে নাও। তারপর তোমাদের ষড়যন্ত্রটুকু যেন অস্পষ্ট ও গোপনীয় না হয়। এরপর আমার (হত্যার) ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করো এবং আমাকে অবকাশ দিও না।’

(72) অতঃপর তোমরা যদি (আমার দাওয়াত থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে (তোমরা তো জানোই) আমি তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর কাছেই। আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যই আদিষ্ট হয়েছি ।’

(73) অবশেষে তারা (তার সম্প্রদায়) তাকে মিথ্যাবাদী বললো। তাই আমি তাকে ও তার সাথে থাকা মু’মিনদেরকে নৌকায় চড়িয়ে উদ্ধার করলাম এবং তাদেরকে (ধ্বংসপ্রাপ্তদেরকে) পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত বানালাম। আর ডুবিয়ে দিলাম তাদেরকে, যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছিল। অতএব (হে রাসূল! তুমি) দেখো, কেমন ছিল তাদের পরিণতি, যাদেরকে (ঈমান না আনার পরিণতি সম্পর্কে) সতর্ক করা হয়েছে।

(74) অতঃপর আমরা তার (নূহের) পরে অনেক রাসূলকে তাদের জাতির কাছে পাঠিয়েছি এবং তারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তারা (কাফিররা) আগে যা মিথ্যারোপ করেছিল, তাতে ঈমান আনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। (পূর্ববর্তী রাসূলগণের অনুসারীদের কুফুরির কারণে তাদের অন্তরে যেভাবে আমি মোহর মেরেছি) এমনিভাবে আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তরে মোহর মেরে দেই।

(75) অতঃপর তাদের (এ রাসূলগণের প্রস্থানের কিছুকাল) পরে আমি মূসা ও হারূনকে ফির‘আউন ও তার সভাসদদের কাছে আমার আয়াতসমূহ দিয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা (তাদের আনীত বিধানের প্রতি ঈমান আনার ব্যাপারে) অহংকার করেছে। আর তারা ছিল অপরাধী জাতি।

(76) অতঃপর যখন তাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে সত্য এলো, তারা বললো: ‘নিশ্চয় এটি সুস্পষ্ট যাদু।’

(77) মূসা বললো: ‘তোমরা কি সত্যকে এ রকম (যাদু) বলছো, যখন তা তোমাদের কাছে এলো? এটা কি যাদু? আর যাদুকররা তো কখনো সফলকাম হয় না।’

(78) তারা (ফির‘আউনের সম্প্রদায় মূসাকে) বললো: ‘তুমি কি এসেছো আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাতে (যে ধর্ম ওপর পেয়েছি, তা থেকে আমাদেরকে বিচ্যুত করার জন্যে(১) এবং যেন জমিনে তোমাদের দুজনের (মূসা ও হারূনের ) প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে? আর আমরা তো তোমাদের প্রতি ঈমান আনয়নকারী নই।’

(79) এবং ফির‘আউন (তার সম্প্রদায়কে) বললো: ‘তোমরা প্রত্যেক বিজ্ঞ যাদুকরদেরকে আমার কাছে নিয়ে আসো।’

(80) অতঃপর যখন যাদুকররা (ফির‘আউনের নিকট) এলো, মূসা (নিজের বিজয়ে আস্থাশীল হয়ে) তাদেরকে বললো: ‘(হে যাদুকররা! যাদু হিসেবে) তোমরা যা নিক্ষেপ করতে চাও, তা নিক্ষেপ করো।’

(81) অতঃপর যখন তারা (তাদের যাদুর রশি ও লাঠি) নিক্ষেপ করল, তখন মূসা তাদেরকে বললো: ‘তোমরা যা আনলে, তা মূলত যাদু। নিশ্চয় আল্লাহ সেগুলোকে অসার করে দিবেন। (তোমরা যাদুর মাধ্যমে জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী।) নিশ্চয় আল্লাহ ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের আমল, পরিশুদ্ধ করেন না।’

(82) আর আল্লাহ তাঁর বাণীসমূহের(১) মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন, যদিও (ফির‘আউনের বংশের কাফির) অপরাধীরা, তা অপছন্দ করে।

(83) কিন্তু ফির’আউন এবং তার পরিষদবর্গ নির্যাতন করবে এ আশঙ্কায় মূসার সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র একটি (যুবকের) দল ছাড়া আর কেউ তার প্রতি ঈমান আনেনি। আর নিশ্চয় ফির‘আউন ছিল (মিসরের) জমিনে পরাক্রমশীল এবং নিশ্চয় সে (কুফরি এবং বানূ ইসরাঈলকে হত্যা ও শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে) সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

(84) আর মূসা বললো: ‘হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা (সত্যিকারার্থে) আল্লাহর ওপর ঈমান এনে থাকো, তবে তোমরা তাঁরই ওপর তাওয়াক্কুল করো; যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাকো।’

(85) তখন তারা (মূসার উপদেশের উত্তরে) বললো: ‘আমরা আল্লাহর ওপরই তাওয়াক্কুল করলাম। হে আমাদের রব, তুমি আমাদেরকে যালিম সম্প্রদায়ের নির্যাতনের পাত্র বানাবেন না।’

(86) (তারা আরো বললো:) ‘আর আমাদেরকে আপনার অনুগ্রহে কাফির সম্প্রদায় থেকে রক্ষা করুন।’

(87) আর আমি মূসা ও তার ভাইয়ের (হারূনের) কাছে ওহী পাঠালাম যে, ‘তোমরা তোমাদের জাতির জন্য মিসরে গৃহ তৈরি করো এবং তোমাদের গৃহগুলোকে কিবলা (‘ইবাদাতের স্থান) বানাও।(১) আর সালাত কায়িম করো এবং মু’মিনদেরকে (আল্লাহর সাহায্য-সহযোগিতা, শত্রুদেরকে ধ্বংস করার এবং তাদেরকে জমিনে প্রতিনিধি বানানোর) সুসংবাদ দাও।’

(88) আর মূসা বললো: ‘হে আমাদের রব! আপনি ফির‘আউন ও তার পরিষদবর্গকে দুনিয়ার জীবনে সৌন্দর্য ও ধন-সম্পদ দান করেছেন। হে আমাদের রব! যা দ্বারা তারা মানুষকে আপনার পথ থেকে ভ্রষ্ট করে। হে আমাদের রব! তাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দিন এবং তাদের অন্তরসমূহকে আরো কঠোর করে দিন। ফলে তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনবে না(১)

(89) আল্লাহ বললেন: ‘(হে মূসা ও হারূন!) তোমাদের উভয়ের দু‘আ কবুল করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা (নিজেদের ধর্মের ওপর) অটল থাকো এবং যারা জানে না, তোমরা তাদের পথ অনুসরণ করো না।’

(90) আর আমি বানূ ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে নিলাম। আর ফির‘আউন ও তার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত্য সহকারে ও সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে তাদের পিছু নিল। অবশেষে যখন সে ডুবে যেতে লাগল, তখন সে বলল: ‘আমি ঈমান আনলাম যে, নিশ্চয় তিনি ছাড়া অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই, যার প্রতি বানূ ইসরাঈল ঈমান এনেছে। আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হলাম।’

(91) ‘(তুমি জীবন থেকে নিরাশ হয়ে) এখন ঈমান এনেছো? অথচ (শাস্তি নাযিল হওয়ার) পূর্বে তুমি (আল্লাহর সাথে কুফরি এবং তাঁর পথে বাধা সৃষ্টি করার মাধ্যমে) নাফরমানি করেছো। আর তুমি ছিলে, অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’

(92) ‘সুতরাং (হে ফির‘আউন!) আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক।(১) আর নিশ্চয় অনেক মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে গাফিল।’

(93) আর অবশ্যই আমি বানূ ইসরাঈলকে উৎকৃষ্ট আবাসভূমিতে বসবাস করতে দিলাম এবং তাদেরকে উত্তম রিযক দিলাম। অতঃপর তাদের কাছে জ্ঞান (আল-কুরআন) আসলে তারা (নিজেদের ধর্মকে নিয়ে) বিভেদ সৃষ্টি করল। নিশ্চয় তোমার রব কিয়ামতের দিন সে (দ্বন্দ্বপূর্ণ) বিষয়ে ফয়সালা করবেন, যা নিয়ে তারা মতবিরোধ করতো।

(94) সুতরাং (হে রাসূল!) আমি তোমার নিকট যা নাযিল করেছি, তা নিয়ে যদি তুমি সন্দেহে থাকো, তবে যারা তোমার আগের কিতাব পাঠ করে তাদেরকে (মু’মিন ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদেরকে) জিজ্ঞাসা করো।(১) অবশ্যই তোমার নিকট তোমার রবের পক্ষ থেকে সত্য এসেছে। সুতরাং তুমি সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।

(95) আর তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে। তাহলে তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।(১)

(96) নিশ্চয় যাদের (গোঁয়ার্তুমির কারণে তাদের) ওপর তোমার রবের বাণী সত্য হয়েছে, তারা (কুফরির ওপর নিশ্চিত মারা যাবে, আর কখনোই) ঈমান আনবে না।

(97) যদিও তাদের নিকট (শরীয়ত ও দুনিয়ার) সকল নিদর্শনও এসে উপস্থিত হয়, যতক্ষণ না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে(১)

(98) অতঃপর কোনো জনপদের অধিবাসীরা কেন এমন হলো না যে, তারা ঈমান আনতো এবং তাদের ঈমান তাদের উপকারে আসতো? তবে ইউনুসের সম্প্রদায় ছাড়া, তারা যখন ঈমান আনল, তখন আমি তাদের থেকে দুনিয়ার জীবনের লাঞ্ছনাকর শাস্তি সরিয়ে দিলাম এবং আমি তাদেরকে একটি সময় পর্যন্ত ভোগ-বিলাস করতে দিলাম।

(99) (হে রাসূল!) আর যদি তোমার রব চাইতেন, তবে জমিনের সকলেই ঈমান আনতো। (তিনি যেহেতু তা চাননি) তাহলে তুমি কি মানুষকে মু’মিন হওয়ার জন্যে বাধ্য করবে?

(100) আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারও পক্ষে ঈমান আনা সম্ভব নয়। আর যারা (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ ও প্রমাণাদি) বুঝতে চায় না, তিনি তাদের ওপর তাঁর শাস্তি ও লাঞ্ছনা অবধারিত করেন।

(101) (হে রাসূল! যে মুশরিকরা তোমার নিকট নিদর্শনাবলি চায় তাদেরকে তুমি) বলো: ‘আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে, সেগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখো। আর (কুফরির ওপর গোঁয়ার্তুমির কারণে) যারা ঈমান আনে না, নিদর্শনাবলি ও ভীতি প্রদর্শন এমন সম্প্রদায়ের কোনো কাজে আসে না।’

(102) তবে কি তারা কেবল তাদের আগের (মিথ্যারোপকারী) লোকদের সাথে যা ঘটেছিল সেটার (সে ভয়াবহ দিনগুলোরই) অপেক্ষা করছে? (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: (ঠিক আছে, তাই যদি হয়) ‘তবে তোমরা (আল্লাহর শাস্তির) অপেক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে (আমার রবের ওয়াদার) অপেক্ষা করছি।’

(103) তারপর আমি (তাদের ওপর শাস্তি অবতীর্ণ করি আর) আমার রাসূলগণকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে উদ্ধার করি। এভাবে মু’মিনদেরকে উদ্ধার করা আমার দায়িত্ব।

(104) (হে রাসূল!) বলো: ‘হে মানুষ, তোমরা যদি আমার দীনের (ইসলামের) ব্যাপারে সন্দেহে থাকো, তবে (জেনে রাখো) আল্লাহ ছাড়া তোমরা যার ‘ইবাদত করো, আমি তার ‘ইবাদাত করি না; বরং আমি ‘ইবাদাত করি সেই আল্লাহর, যিনি তোমাদের মৃত্যু দেন। আর আমি মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি।’

(105) আর আমাকে আরো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ‘তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখো এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’

(106) ‘আর (হে রাসূল!) তুমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবে না, যারা তোমার কোন উপকার করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব তুমি যদি সেগুলোর ‘ইবাদাত করো, তাহলে নিশ্চয় তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’

(107) ‘আর (হে রাসূল!) আল্লাহ যদি তোমাকে কোনো ক্ষতির স্পর্শ করান, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের কোনো প্রতিরোধকারী নেই। তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।‘

(108) (হে রাসূল! তুমি) বলো: ‘হে মানুষ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সত্য (আল-কুরআন) এসেছে। সুতরাং যে হিদায়াত গ্রহণ করবে, সে নিজের জন্যই হিদায়াত গ্রহণ করবে। আর যে পথভ্রষ্ট হবে, সে নিজের ক্ষতির জন্য পথভ্রষ্ট হবে। আর আমি তোমাদের অভিভাবক (সংরক্ষক) নই।’

(109) আর (হে রাসূল!) তোমার নিকট যে ওহী নাযিল করা হয়েছে, তুমি তার অনুসরণ করো এবং ধৈর্য ধারণ করো; যতক্ষণ না আল্লাহ ফয়সালা করেন। আর তিনিই সর্বোত্তম ফয়সালা প্রদানকারী।(১)