16 - An-Nahl ()

|

(1) আল্লাহর (শাস্তি দেয়ার) আদেশ এসে গেছে। সুতরাং তোমরা তার জন্য তাড়াহুড়া করো না। তিনি পবিত্র এবং তারা (কাফিররা) যা শিরক করে, তা থেকে ঊর্ধ্বে।

(2) তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছে স্বীয় নির্দেশে ফিরিশতাদের অহী দিয়ে প্রেরণ করেন এ বলে যে, তোমরা সতর্ক করো যে, আমি ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই। অতএব, তোমরা (আমার আদেশ-নিষেধ মেনে) আমাকেই ভয় করো।

(3) তিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবেই, তারা যা শরীক করে, তা থেকে তিনি ঊর্ধ্বে।

(4) তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ‘নুতফা’ (নগণ্য বীর্য) থেকে; অথচ সে (সামান্য মানুষই স্বীয় স্রষ্টার সাথে ) প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী।

(5) আর চতুষ্পদ জন্তুগুলো তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাতে রয়েছে উষ্ণতার উপকরণ ও বহু উপকার।(১) আর তা থেকে তোমরা আহার গ্রহণ করো।

(6) আর তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে সৌন্দর্য, যখন তোমরা সন্ধ্যায় তা ফিরিয়ে আনো এবং সকালে চারণের জন্যে নিয়ে যাও।

(7) আর এগুলো তোমাদের (পণ্য-সামগ্রীর) বোঝা বহন করে এমন দেশে নিয়ে যায়, ভীষণ কষ্ট ছাড়া যেখানে তোমরা পৌঁছতে পারতে না। নিশ্চয় তোমাদের রব বড়ই দয়াশীল, পরম দয়ালু।

(8) আর (তিনি সৃষ্টি করেছেন) ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা, তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য এবং তিনি (আরোহণের মাধ্যম হিসেবে) সৃষ্টি করবেন এমন কিছু, যা তোমরা জানো না।

(9) আর সঠিক পথের বর্ণনা দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব (যা তাঁর সন্তুষ্টির দিকে পৌঁছিয়ে দিবে) এবং পথের মধ্যে কিছু আছে বক্র পথ (শয়তানের পথ যা আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে পারে না)। আর তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সকলকে হিদায়াত করতেন।

(10) তিনিই সেই সত্ত্বা, যিনি আসমান থেকে পানি (বৃষ্টি) বর্ষণ করেন, যাতে রয়েছে তোমাদের জন্য পানীয় এবং তা থেকে হয় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা জীবজন্তু চরাও।

(11) আল্লাহ এ পানি থেকে তোমাদের জন্য উৎপন্ন করেন ফসল, যাইতুন, খেজুর গাছ, আঙুর এবং সকল প্রকারের ফল-ফলাদি। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে ।

(12) আর তিনি রাত ও দিনকে, সূর্য ও চাঁদকে তোমাদের (কল্যাণের) জন্য নিয়োজিত করেছেন । আর তারকাসমূহও তাঁরই নির্দেশে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত। নিশ্চয় এতে এমন সম্প্রদায়ের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে, যারা বুঝে।

(13) তেমনিভাবে তিনি তোমাদের জন্য জমিনে যা সৃষ্টি করেছেন, বিচিত্র রঙের করে (সেগুলোকেও তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন), নিশ্চয় তাতেও নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে।

(14) আর তিনিই (তোমাদের জন্যে) সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা (মাছের) গোশত খেতে পারো এবং তা থেকে বের করতে পারো অলংকারাদি(১), যা তোমরা পরিধান করো। আর তুমি তাতে নৌযান দেখবে, যা সমুদ্রের (ঢেউগুলোর) বুক চিরে চলছে এবং যাতে তোমরা (ব্যবসায়িক লাভের মাধ্যমে) তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পারো এবং যাতে তোমরা (আল্লাহর নি‘আমতের) কৃতজ্ঞতা আদায় করো।

(15) আর আল্লাহ জমিনে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা, যাতে তোমাদের নিয়ে জমিন (এদিক-সেদিক ) হেলে না যায় এবং তিনিই প্রবাহিত করেছেন নদ-নদী এবং (তোমাদের চলার জন্যে তিনি) তৈরি করেছেন পথসমূহ, যাতে তোমরা (পথভ্রষ্ট না হয়ে সঠিকভাবে) তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারো।

(16) তাছাড়া রয়েছে (দিনের) পথ-নির্দেশক চিহ্নসমূহ। আর (রাতে) তারকারাজির (অবস্থানের) মাধ্যমেও তারা পথনির্দেশ পায়।

(17) কাজেই যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তার মতো, যে কিছুই সৃষ্টি করে না বা করতে পারে না ? অতএব তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না?

(18) আর (হে মানুষ!) তোমরা যদি (তোমাদের ওপর) আল্লাহর নি‘আমত গণনা করো, তবে (আধিক্য ও বৈচিত্র্যের কারণে) তার সংখ্যা কখনোই নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(19) আর আল্লাহ জানেন তোমরা যা গোপন করো এবং যা প্রকাশ করো।

(20) আর তারা (মুশরিকরা) আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাকে, তারা কোনো কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না; বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়।

(21) তারা (মূর্তিগুলো) মৃত, জীবিত নয় এবং কখন তাদেরকে (পূজারীদেরসহ) পুনরুত্থিত করা হবে, সে বিষয়ে তাদের কোনো চেতনা নেই।

(22) তোমাদের সত্যিকারের ইলাহ এক ইলাহ (আল্লাহ)। অতঃপর যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর (আল্লাহর একত্ববাদকে) অস্বীকারকারী এবং তারা অহংকারী।

(23) নিঃসন্দেহে তারা যা (যে আমলগুলো) গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে, নিশ্চয় তা আল্লাহ সবই জানেন। নিশ্চয় তিনি অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না।

(24) আর যখন তাদেরকে (আল্লাহর একত্ববাদ ও পুনরুত্থানকে অস্বীকারকারীদেরকে আল-কুরআন সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করা হয়: ‘তোমাদের রব কী নাযিল করেছেন?’ তখন তারা বলে, ‘পূর্ববর্তীদের কল্পকাহিনি (ছাড়া তার ওপর কিছুই নাযিল হয়নি)।’

(25) যেন তাদের পরিণতি এমন হয় যে, তারা কিয়ামতের দিনে নিজেদের পাপের বোঝা পুরোটাই বহন করবে এবং তাদের পাপের বোঝাও যাদেরকে তারা অজ্ঞতাবশত পথভ্রষ্ট করে থাকে। তারা যে গুনাহের বোঝা বহন করবে, তা কতই না নিকৃষ্ট!

(26) অবশ্যই তাদের পূর্ববর্তী কাফিরগণ (রাসূলদের বিরুদ্ধে অনেক) ষড়যন্ত্র করেছিল, অতঃপর আল্লাহ তাদের ইমারতের ভীতে আঘাত করেছিলেন, ফলে তাদের ওপর থেকে তাদের ছাদ ধসে পড়েছিল। আর তাদের ওপর শাস্তি এসেছিল এমনভাবে যে, তারা তা উপলব্ধিই করতে পারেনি।

(27) অতঃপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেন: ‘কোথায় আমার শরীকরা, যাদের ব্যাপারে তোমরা (নবী ও মু’মিনদের) বিরোধিতা করতে?’ যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তারা (আলিমরা) বলবে: ‘নিশ্চয় আজকের লাঞ্ছনা ও অকল্যাণ কাফিরদের ওপর।’

(28) নিজেদের ওপর যুলম করা অবস্থায় ফিরিশতারা যাদের মৃত্যু ঘটাবে। অতঃপর তারা আত্মসমর্পণ করে বলবে: ‘আমরা কোনো পাপ করতাম না।’ হ্যাঁ, নিশ্চয় তোমরা (দুনিয়াতে) যা করতে, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত।

(29) সুতরাং, আজ তোমরা জাহান্নামের দরজাগুলো দিয়ে প্রবেশ করো, তাতে তোমরা চিরকাল থাকবে। অতএব অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট!

(30) আর যারা তাদের রবের আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করেছে, তাদেরকে বলা হবে: ‘তোমাদের রব (তোমাদের নবী মুহাম্মাদের ওপর) কী নাযিল করেছেন?’ তারা বলবে: ‘মহান কল্যাণ’। যারা এই দুনিয়ায় উত্তম কাজ করেছে, তাদের জন্য (দুনিয়াতে) রয়েছে উত্তম প্রতিদান।(১) আর নিশ্চয় আখিরাতের আবাস উত্তম এবং মুত্তাকীদের আবাস কতই না উত্তম!

(31) তা হলো চিরস্থায়ী জান্নাতসমূহ, যাতে তারা প্রবেশ করবে, যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নদ-নদী-ঝর্ণাধারা। তারা যা চাইবে, তাদের জন্য সেখানে তাই থাকবে। এভাবেই আল্লাহ মুত্তাকীদের প্রতিদান দেন।

(32) (এমন মুত্তাকীদের জন্যে পুরস্কার) ফিরিশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় (তাদের আত্মা কুফরি থেকে) উত্তম অবস্থায়, তারা (ফেরেশতারা তাদেরকে) বলবে: ‘তোমাদের ওপর সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক। আজ তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো, (দুনিয়াতে) তোমরা যে (নেক) আমল করতে তার বিনিময়ে।’

(33) তারা (মিথ্যারোপকারী মুশরিকরা) শুধু তাদের কাছে ফিরিশতা আসার অথবা তোমার রবের (শাস্তির) সিদ্ধান্ত আসার অপেক্ষা করছে। তাদের পূর্ববর্তীরা এরূপই করতো। আর আল্লাহ তাদের ওপর যুলম করেননি; বরং তারাই (আল্লাহর সাথে কুফরি করে) নিজেদের ওপর যুলম করেছিল।

(34) ফলে তারা যা (বদ) আমল করেছে, তার মন্দ পরিণতি (শাস্তি) তাদেরকে আক্রান্ত করেছে এবং তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত, তা তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে।

(35) আর যারা শিরক করে, তারা বলে: যদি আল্লাহ চাইতেন তবে আমরা তাঁকে ছাড়া কোনো কিছুর ইবাদাত করতাম না এবং আমাদের পিতৃপুরুষরাও না। আর তাঁর হুকুম ছাড়া আমরা কোনো কিছু হারামও করতাম না। তাদের পূর্ববর্তীরা এরূপই (বাতিল যুক্তি পেশ) করতো। সুতরাং (আল্লাহর বাণী তাদের কাছে) স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া ছাড়া, রাসূলগণের কি আর কোনো কর্তব্য আছে?(১)

(36) আর অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির কাছে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাগূতকে বর্জন করো।(১) অতঃপর তাদের মধ্য থেকে আল্লাহ কাউকে হিদায়াত দিয়েছেন এবং তাদের মধ্য থেকে কারো ওপর পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়েছে। সুতরাং তোমরা জমিনে ভ্রমণ করো, অতঃপর দেখো, মিথ্যারোপকারীদের (ওপর শাস্তি ও ধ্বংস নেমে আসার পর তাদের) পরিণাম কী হয়েছিল?

(37) (হে রাসূল!) যদিও তুমি তাদের হিদায়াতের ব্যাপারে অতি আগ্রহ দেখাও; কিন্তু নিশ্চয় আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে হিদায়াত দেন না এবং তাদের জন্য (আল্লাহর শাস্তি প্রতিরোধে) কোনো সাহায্যকারীও নেই।

(38) আর তারা (পুনরুত্থান অস্বীকারকারীরা) আল্লাহর নামে কঠিন শপথ করে বলে, যে ব্যক্তি মারা যায়, আল্লাহ তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না। অবশ্যই হ্যাঁ (তিনি প্রত্যেক মৃতকে পুনরুত্থিত করবেন), তার নিজের ওপর কৃত প্রতিশ্রুতি তিনি সত্যে রূপ দিবেন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই জানে না।

(39) (আল্লাহ কিয়ামতের দিন সবাইকে পুনরুত্থিত করবেন এ জন্যে,) যাতে তিনি তাদের জন্য স্পষ্ট করবেন, যা নিয়ে তারা (দুনিয়াতে) মতানৈক্য করছিল। আর কাফিররাও জানতে পারবে যে, নিশ্চয় তারা (পুনরুত্থানকে অস্বীকারের ক্ষেত্রে) মিথ্যাবাদী ছিল।

(40) যখন আমি কোনো কিছুর ইচ্ছা করি(১), তখন আমি সেটিকে বলি, ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়।

(41) আর যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হিজরত করেছে, আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়াতে উত্তম আবাস দান করবো। আর আখিরাতের প্রতিদান তো বিশাল, যদি তারা জানত!

(42) যারা (নিজেদের সম্প্রদায়ের দেয়া কষ্টের ও আল্লাহর আনুগত্যের ওপর) ধৈর্যধারণ করেছে এবং তাদের রবের ওপরই তাওয়াক্কুল (ভরসা) করেছে।(১)

(43) আর (হে রাসূল!) আমি তোমার পূর্বে কেবল পুরুষ মানুষদেরকেই রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছি, যাদের প্রতি আমি অহী পাঠিয়েছি।(১) সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করো, যদি তোমরা না জানো।(২)

(44) (এ মানুষ রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি) সুস্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ সহকারে এবং (একইভাবে এখন ) তোমার প্রতি নাযিল করেছি আল-কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করতে পারে।

(45) যারা (আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে) মন্দ কর্মের(১) ষড়যন্ত্র করে তারা কি নিরাপদ হয়ে গেছে যে, আল্লাহ তাদেরসহ জমিন ধসিয়ে দিবেন না?(২) অথবা এমন জায়গা থেকে তাদের ওপর শাস্তি আসবে না যে, তারা উপলব্ধিও করবে না?

(46) অথবা তিনি কি তাদের চলাফেরা (সফর ও কর্মব্যস্ত) অবস্থায় তাদেরকে পাকড়াও করবেন না? অতঃপর (শাস্তি যখন এসে যাবে, তখন) তারা তা ব্যর্থ করতে পারবে না (এবং তা থেকে রক্ষাও পাবেনা)

(47) কিংবা তিনি তাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় পাকড়াও করবেন না?(১) নিশ্চয় তোমাদের রব অতিশয় দয়াশীল, পরম দয়ালু।(২)

(48) আল্লাহ যে সকল বস্তু সৃষ্টি করেছেন, তারা কি সে দিকে (চিন্তাশীল দৃষ্টিতে) তাকায়নি, যার ছায়াসমূহ ডানে ও বামে হেলে পড়ে আল্লাহর প্রতি সাজদাবনত হয়, আর তারা একান্ত বিনীত?

(49) আর আসমানসমূহে যা আছে এবং জমিনে যে সব প্রাণী আছে, সবাই আল্লাহকেই সাজদাহ করে। আর ফিরিশতাগণও (তাঁরই সাজদাহ করে) এবং তারা (তাঁর ইবাদাত ও আনুগত্য করতে) অহংকার করে না।

(50) তারা তাদের রবকে ভয় করে, যিনি (নিজ সত্তা, প্রতিপত্তি ও ক্ষমতায়) তাদের সবার ওপরে আছেন এবং তাদেরকে যা নির্দেশ দেয়া হয়, তারা তা-ই করে।

(51) আর আল্লাহ (তাঁর সকল বান্দাদেরকে) বলেছেন: ‘তোমরা দুই ইলাহ গ্রহণ করো না। তিনি তো কেবল এক ইলাহ। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো।’

(52) আর আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে, তা সবই তাঁর এবং সার্বক্ষণিক আনুগত্য তাঁরই প্রাপ্য। তারপরও কি তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করছো?

(53) আর (হে মানুষ!) তোমাদের কাছে যে সব নি‘আমত আছে, তা সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। অতঃপর যখন তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা স্পর্শ করে, তখন (তা দূর করতে) তোমরা ব্যাকুল হয়ে কেবল তাঁকেই ডাকো।(১)

(54) অতঃপর তিনি যখন (দু‘আ কবুল করে) তোমাদের থেকে দুঃখ-দুর্দশা দূর করে দেন, তখন তোমাদের মধ্যে একদল তাদের রবের সাথে শিরক করে।

(55) আমি তাদেরকে যা (যে নি‘আমতরাজি) দিয়েছি, তা অস্বীকার করার জন্য। অতএব (হে মানুষ!) তোমরা (আল্লাহর নি‘আমতরাজি) ভোগ করতে থাকো, অচিরেই (অকৃতজ্ঞতার শাস্তি সম্পর্কে) তোমরা জানতে পারবে ।

(56) আর আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি, তার একটি অংশ তারা নির্ধারণ করে এমন (অক্ষম ও অজ্ঞ) মূর্তিগুলোর জন্য, যার ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না। আল্লাহর শপথ! (কিয়ামতের দিন) অবশ্যই তোমাদেরকে তোমরা যে মিথ্যা রটাচ্ছ, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে ।

(57) আর তারা (মুশরিকরা) আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান নির্ধারণ করে, যা থেকে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র। আর তারা নিজেদের জন্য তা-ই নির্ধারণ করে (পুত্র সন্তান), যা তারা কামনা করে।

(58) আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়; তখন (দুঃখে-অপছন্দে) তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত।(১)

(59) তাকে (কন্যা সন্তানের) যে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, সে দুঃখে স্বজাতির লোকসমাজ থেকে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে, অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দিবে, না কি (জীবন্ত কবর দিয়ে) মাটিতে পুঁতে ফেলবে? জেনে রেখো, তারা যা সিদ্ধান্ত করে, তা কতই না নিকৃষ্ট!

(60) যারা আখিরাতে ঈমান রাখে না, তাদের জন্য রয়েছে যাবতীয় মন্দ গুণাবলি (১) এবং আল্লাহর জন্য রয়েছে যাবতীয় মহান গুণাবলি।(২) আর তিনিই মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(61) আর আল্লাহ যদি মানবজাতিকে তাদের যুলমের কারণে (শাস্তি দিয়ে) পাকড়াও করতেন, তবে তাতে (জমিনে) কোনো বিচরণকারী প্রাণীকেই ছাড়তেন না। তবে আল্লাহ তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (শাস্তি না দিয়ে) অবকাশ দেন। যখন তাদের নির্দিষ্ট সময় চলে আসে, তখন (তাদের মৃত্যুর সময়ের) এক মুহূর্তও বিলম্ব করতে পারে না এবং আগাতেও পারে না।

(62) আর তারা যা (যে কন্যা সন্তান) অপছন্দ করে, তাই তারা আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে। তাদের জিহ্বা মিথ্যা বর্ণনা করে যে, (তারা সত্যিই পুনরুত্থিত হলে) নিশ্চয় তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম। নিঃসন্দেহে তাদের জন্য রয়েছে, জাহান্নামের আগুন এবং নিশ্চয় তাদেরকেই সবার আগে তাতে নিক্ষেপ করা হবে।

(63) আল্লাহর শপথ! (হে রাসূল!) আমি তোমার পূর্বে বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি; কিন্তু শয়তান ঐসব জাতির (নিকৃষ্ট) আমলসমূহকে(১) তাদের কাছে সুশোভিত করেছে। তাই সে আজ তাদের অভিভাবক। আর তাদেরই জন্য রয়েছে, (কিয়ামতের দিন) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

(64) আর (হে রাসূল!) আমি তোমার ওপর কিতাব (আল-কুরআন) নাযিল করেছি, শুধু এ জন্য যে, তারা যে বিষয়ে বিতর্ক করছে, তা তাদের জন্য তুমি স্পষ্ট করে দিবে এবং (এটি) হিদায়াত ও রহমত সেই জাতির জন্য যারা ঈমান আনে।

(65) আর আল্লাহ আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দিয়ে জমিনকে তার মৃত্যুর পর উজ্জীবিত করেন।(১) নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে সেই সম্প্রদায়ের জন্য, যারা (আল্লাহর বাণী) শুনে।

(66) আর নিশ্চয় চতুষ্পদ জন্তুতে রয়েছে, তোমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়। তার পেটের ভেতরের (নোংরা) গোবর ও (অপবিত্র) রক্তের মধ্যখান থেকে তোমাদেরকে আমি খাঁটি দুধ পান করাই এবং যা পানকারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যকর।

(67) আর (তোমাদের জন্য আরো শিক্ষা রয়েছে যে,) তোমরা খেজুর গাছের ফল ও আঙুর থেকে মাদক ও উত্তম রিযক গ্রহণ কর। নিশ্চয় এতে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।(১)

(68) আর (হে রাসূল!) তোমার রব মৌমাছিকে (তার অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা) নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন যে, ‘তুমি পাহাড়েরগায়ে ও গাছের ডালে এবং তারা (মানুষ) যে গৃহ নির্মাণ করে, তাতে ঘর বানাও।’

(69) অতঃপর তুমি প্রত্যেক ফল থেকে আহার করো এবং তুমি তোমার রবের সহজ পথে চলো। তার পেট থেকে এমন পানীয় বের হয়, যার রং ভিন্ন ভিন্ন, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগ নিরাময়। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা (আল্লাহর অসীম শক্তি এবং তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে) চিন্তা-ভাবনা করে।

(70) জেনে রেখো, আল্লাহই তোমাদের (পূর্বের নমুনা ছাড়াই) সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর (তোমাদের বয়স শেষে) তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন। আর তোমাদের মধ্যে কাউকে চরম বার্ধক্য বয়স পর্যন্ত উপনীত করা হবে, যাতে সে জ্ঞান লাভের পরেও তার সবকিছু অজানা হয়ে যায়।(১) আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।

(71) আর আল্লাহ তোমাদেরকে রিযক দেয়ার ক্ষেত্রে তোমাদের মধ্যে কাউকে কারো ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন; কিন্তু যাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, তারা তাদের রিযক অধীনস্থ দাসদাসীদেরকে এমনভাবে ফিরিয়ে দেয় না যে, তারা তাতে (মালিকানায়) সমান হয়ে যাবে।(১) তবে তারা কি আল্লাহর নি‘আমতকে অস্বীকার করছে?

(72) আর (হে মানুষ!) আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই জোড়া (স্ত্রীদেরকে) সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের সেই জোড়া (স্বামী-স্ত্রী) থেকে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি তোমাদেরকে পবিত্র রিযক দান করেছেন। তবুও তারা কি বাতিলে (মূর্তি ও প্রতিমাতে) বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর নি‘আমতকে অস্বীকার করেই যাবে?

(73) আর তারা (এ মুশরিকরা) আল্লাহ ছাড়া এমন কিছু মূর্তির উপাসনা করে, যারা আসমানসমূহ ও জমিনে তাদের কোনো রিযকের মালিক নয়। আর তাদের পক্ষ থেকে এ মালিকানা অর্জন সম্ভবও নয়।(১)

(74) সুতরাং তোমরা আল্লাহর জন্য কোনো দৃষ্টান্ত (সদৃশ) স্থাপন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জান না।

(75) আল্লাহ উপমা দিচ্ছেন অন্যের অধিকারভুক্ত একজন দাসের, যে কোনো কিছুর ওপর ক্ষমতা রাখে না এবং একজন (স্বাধীন লোকের) যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে উত্তম রিযক দিয়েছি, অতঃপর সে তা থেকে (ইচ্ছেমতো) গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে। তারা কি উভয়ে সমান হতে পারে?(১) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। বরং তাদের (মুশরিকদের) অধিকাংশই (আল্লাহর একক উপাস্য হওয়ার ব্যাপারটি) জানে না।

(76) আর আল্লাহ (তাদের প্রসঙ্গে আরেকটি) উপমা দিচ্ছেন, দু’জন ব্যক্তির: তাদের একজন বোবা, যে কোন কিছুর ওপর ক্ষমতা রাখে না, উপরন্তু সে তার মনিবের ওপর বোঝা। তাকে যেখানেই পাঠানো হয়, কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। সে কি ঐ ব্যক্তির সমতুল্য, যে ন্যায়ের আদেশ করে এবং সরল-সঠিক পথের ওপর বিদ্যমান রয়েছে?(১)

(77) আর আসমানসমূহ ও জমিনের গায়িবী বিষয় আল্লাহরই। আর কিয়ামতের ব্যাপারটি শুধু চোখের পলকের ন্যায় (অতিদ্রুত সংঘটিত হয়ে যাবে); কিংবা তা আরো সন্নিকটে। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।

(78) আর আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এমন অবস্থায় বের করে এনেছেন যে, তোমরা তখন কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তর, যাতে তোমরা (আল্লাহর নি‘আমতের) কৃতজ্ঞতা আদায় করো।

(79) তারা (মুশরিকরা) কি শূন্য আকাশে (উড়ন্ত অবস্থায়) নিয়ন্ত্রণাধীন পাখিগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে না? আল্লাহ ছাড়া কেউ তাদেরকে (পড়ে যাওয়া থেকে বাতাসে) ধরে রাখেন না। নিশ্চয় এতে মু’মিনদের জন্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে ।

(80) আর আল্লাহই তোমাদের ঘরগুলোকে তোমাদের জন্য করেছেন প্রশান্তির আবাসস্থল এবং তোমাদের পশুর চামড়া দিয়ে তাঁবুর ব্যবস্থা করেছেন, যা খুব সহজেই তোমরা ভ্রমণকালে ও অবস্থানকালে বহন করতে পার। আর তাদের পশম, লোম ও চুল দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (উপকৃত হতে) গৃহসামগ্রী ও ভোগ-উপকরণ তিনি বানিয়েছেন।

(81) আর আল্লাহ (গাছপালা ও ঘরবাড়ি) যা সৃষ্টি করেছেন, তা থেকে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং পাহাড়ের মাঝে (সুড়ঙ্গ পথ, গর্ত ও গুহা তৈরি করে) তোমাদের জন্য আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন। আর ব্যবস্থা করেছেন পোশাকের, যা তোমাদেরকে গরম থেকে রক্ষা করে এবং বর্মেরও ব্যবস্থা করেছেন যা তোমাদেরকে তোমাদের যুদ্ধে সময় রক্ষা করে । এভাবেই তিনি তোমাদের ওপর তার নি‘আমতকে পূর্ণ করবেন, যাতে তোমরা অনুগত হও।

(82) সুতরাং (হে রাসূল!) তারা যদি (ঈমান আনা থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমার দায়িত্ব তো শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া।

(83) তারা (মুশরিকরা) আল্লাহর নি‘আমত(১) ভালোভাবেই চিনে; তারপরও তারা তা অস্বীকার করে। আর তাদের অধিকাংশই কাফির।

(84) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো, যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজনকে (রাসূলকে) সাক্ষী হিসেবে উত্থিত করবো। তারপর যারা কুফরী করেছে, তাদেরকে (ওযর পেশের) অনুমতি দেয়া হবে না এবং (দুনিয়াতে ফিরে আমল করে আল্লাহকে) সন্তুষ্ট করতেও তাদেরকে বলা হবে না।

(85) আর যারা যুলম করেছে, তারা যখন (সেদিন চোখের সামনে ) শাস্তি দেখবে, তখন তাদের ওপর থেকে শাস্তি সামান্যও কমানো হবে না এবং তাদেরকে (শাস্তি বিলম্বে দিতে কোন) অবকাশও দেয়া হবে না।

(86) আর যারা শিরক করেছে, তারা যখন (পরকালে) তাদের শরীকদের দেখবে, তখন বলবে: ‘হে আমাদের রব! এরা হলো আমাদের শরীক, (দুনিয়াতে) যাদেরকে আমরা আপনার পরিবর্তে ইবাদাত করতাম।’ অতঃপর তারা (উপাস্যগুলো) তাদের প্রতি উত্তরে বলবে: ‘নিশ্চয় তোমরা মিথ্যাবাদী।’(১)

(87) সেদিন তারা (মুশরিকরা) আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং তারা যে মিথ্যা রটাত(১), তা উধাও হয়ে যাবে।

(88) যারা কুফরী করেছে এবং (অন্যদেরকে) আল্লাহর পথে বাধা দিয়েছে, আমি (সেদিন ) তাদেরকে শাস্তির ওপর শাস্তি বাড়িয়ে দিবো। কারণ তারা (নিজেদেরকে ও অন্যদেরকে পথভ্রষ্ট করে) ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতো।

(89) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো, যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মতের কাছে, তাদের থেকেই তাদের বিরুদ্ধে একজন (রাসূলকে) সাক্ষী হিসেবে উত্থিত করব এবং তোমাকে তাদের সকলের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে হাযির করব। আর আমি তোমার ওপর কিতাব (আল-কুরআন) নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য (অপেক্ষমাণ স্থায়ী জান্নাতের) সুসংবাদস্বরূপ।

(90) নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ(১), সদাচার(২) ও নিকট আত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারো।

(91) আর তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ করো যখন পরস্পর অঙ্গীকার করো। আর তোমরা কোন অঙ্গীকার আল্লাহর শপথ করে পাকাপোক্ত করার পর তা ভঙ্গ করো না, যেহেতু তোমরা (অঙ্গীকার পূরণের ক্ষেত্রে) নিজেদের জন্য আল্লাহকে জিম্মাদার বানিয়েছ। নিশ্চয় আল্লাহ জানেন, যা তোমরা করো।

(92) আর তোমরা (অঙ্গীকার ভঙ্গের ব্যাপারে) সে (বোকা-নির্বোধ) নারীর মত হয়ো না, যে তার পাকানো সূতো শক্ত করে পাকানোর পর পাক খুলে (আগের ন্যায় বানিয়ে) নষ্ট করে দেয়। তোমরা তোমাদের ওপর অঙ্গীকারকে নিজেদের মধ্যে প্রতারণা হিসেবে গ্রহণ করছ (এই উদ্দেশ্যে) যে, একদল অপর দলের চেয়ে বেশী লাভবান হয়। আসলে আল্লাহ তো এর মাধ্যমে তোমাদের পরীক্ষা করেন। আর নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের জন্য কিয়ামতের দিনে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিবেন সেসব বিষয়, যা নিয়ে তোমরা (দুনিয়াতে) মতবিরোধ করতে।

(93) আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে (সত্যের ওপর ঐক্যমত্য) এক জাতিতে পরিণত করতে পারবেন; কিন্তু আল্লাহ (নিজ ইনসাফের ভিত্তিতে) যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন, আর যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন। তোমরা যা করতে, সে সম্পর্কে অবশ্যই তোমাদেরকে (কিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসা করা হবে।

(94) আর তোমরা তোমাদের অঙ্গীকারগুলোকে তোমাদের পরস্পর প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করো না। (যদি এরূপ করো) তাহলে (সঠিক পথের ওপর) পা অবিচল হওয়ার পরও তা পিছলে যাবে এবং তোমরা আল্লাহর রাস্তায় (মানুষকে) বাধা দেওয়ার কারণে শাস্তি আস্বাদন করতে হবে। আর তোমাদের জন্য রয়েছে, (জাহান্নামের) মহা শাস্তি।

(95) আর তোমরা তুচ্ছ মূল্যে আল্লাহর সাথে কৃৎ অঙ্গীকার বিক্রি (ভঙ্গ) করো না। আল্লাহর কাছে যা আছে(১), তা-ই তোমাদের জন্যে উত্তম, যদি তোমরা জানতে।

(96) (হে মানুষ!) তোমাদের কাছে (পার্থিব ধন-সম্পদ, ভোগ-বিলাস) যা আছে, তা নিঃশেষ হয়ে যাবে (তা যতোই বেশি হোক)। আর আল্লাহর কাছে যা আছে, তা চিরস্থায়ী। আর যারা ধৈর্যধারণ করেছে, তারা যা (নেক আমল) করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিবো।(১)

(97) যে মু’মিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন(১) দান করবো এবং (দুনিয়াতে) তারা যা (নেক আমল) করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি (পরকালে) তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিবো।(২)

(98) সুতরাং (হে মু’মিন!) যখন তুমি আল-কুরআন তিলাওয়াত করবে, তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত (অভিশপ্ত) শয়তান হতে আশ্রয় চাও।

(99) নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং তারা তাদের রবের ওপর তাওয়াক্কুল করেছে, তাদের ওপর শয়তানের কোনো আধিপত্য নেই।

(100) তার (শয়তানের) আধিপত্য তো কেবল তাদের ওপর, যারা তাকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে এবং যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে।

(101) আর আমি যখন (আল-কুরআনের) একটি আয়াতের স্থানে পরিবর্তন করে আরেকটি আয়াত দেই- আল্লাহই ভালো জানেন সে সম্পর্কে, যা তিনি নাযিল করবেন- তখন তারা বলে: ‘তুমি তো কেবল মিথ্যা রটনাকারী।’ রবং (আয়াত রহিত হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর চূড়ান্ত হিকমত সম্পর্কে) তাদের অধিকাংশই জানে না।

(102) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘রূহুল কুদুস (জিবরীল) একে তোমার রবের পক্ষ হতে যথাযথভাবে নাযিল করেছেন, যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে (ঈমানের ওপর) সুদৃঢ় করার জন্যে, উপরন্তু এটি (তাদের জন্যে) হিদায়াত ও মুসলিমদের জন্যে সুসংবাদস্বরূপ।

(103) আর (হে নবী,) আমি অবশ্যই জানি যে, (তোমার এবং আল-কুরআনের বিষয়ে এদের ধারণা কী ?) তারা (মুশরিকরা) বলে, তাকে তো শিক্ষা দেয় একজন মানুষ(১), যার দিকে তারা ইঙ্গিত করছে, তার ভাষা হচ্ছে অনারবী। অথচ এটা (আল-কুরআন) হচ্ছে, সুস্পষ্ট আরবী ভাষা।

(104) নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে না, আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত করেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে (জাহান্নামের) যন্ত্রদায়ক শাস্তি।

(105) শুধু তারাই মিথ্যা রটায়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে না। আর এ কাফিররাই মিথ্যাবাদী।

(106) যে (একবার) ঈমান আনার পর (ফের) আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে এবং কুফরীর জন্য তার হৃদয়কে উন্মুক্ত রেখেছে, (অর্থাৎ সে মনেপ্রাণে কুফুরীকে পছন্দ করে) তাদের ওপর আপতিত হবে আল্লাহর ক্রোধ এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। ঐ ব্যক্তি ছাড়া যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়েছে; অথচ তার অন্তর থাকে ঈমানে পরিতৃপ্ত (অবিচলিত)

(107) এটা (১) এ জন্য যে, তারা আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে পছন্দ করেছে। আর নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।

(108) এরাই তারা, আল্লাহ যাদের অন্তরসমূহ, শ্রবণসমূহ ও দৃষ্টিসমূহের ওপর মোহর করে দিয়েছেন এবং তারাই হচ্ছে (আল্লাহর শাস্তি থেকে) গাফিল।

(109) নিঃসন্দেহ, তারাই আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত।

(110) তারপর যারা নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরত করেছে, অতঃপর জিহাদ করেছে এবং (কষ্ট-ক্লেশে) ধৈর্যধারণ করেছে, নিশ্চয় তোমার রব তাদের জন্য এ সবের পর(১), অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(111) (হে রাসূল! স্মরণ করো সে দিনের কথা) যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের পক্ষে যুক্তি-তর্ক নিয়ে উপস্থিত হবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার (ভালো-মন্দ) আমলের প্রতিদান পরিপূর্ণরূপে দেয়া হবে; অথচ (সাওয়াব কমিয়ে ও গুনাহ বাড়িয়ে) তাদের প্রতি কোন যুলম করা হবে না।

(112) আর আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন একটি জনপদের (মক্কার), যা ছিল নিরাপদ ও শান্ত। সেখানে সবদিক থেকে প্রচুর জীবনোপকরণ আসতো। অতঃপর সে (জনপদের অধিবাসীরা) আল্লাহর নি‘আমত অস্বীকার করলো। তখন তারা যা (যে কুফরী) করতো তার কারণে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষুধা ও ভয়ের পোশাক পরালেন।

(113) আর অবশ্যই তাদের (মক্কার অধিবাসীদের) কাছে তাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল (মুহাম্মাদ) এসেছিল। কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করেছিল। ফলে (ক্ষুধা ও ভয়ের ন্যায় আল্লাহর ) শাস্তি তাদের পাকড়াও করেছিল এমতাবস্থায় যে, তারা (তখন) ছিল যুলমকারী।

(114) অতএব (হে বান্দারা!) আল্লাহ তোমাদেরকে যে হালাল ও পবিত্র রিযক দিয়েছেন, তোমরা তা থেকে আহার করো এবং আল্লাহর নি‘আমতের শুকরিয়া আদায় করো, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদাত করে থাকো।

(115) আল্লাহ তো তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং যে জন্তুর যবহকালে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নাম নেয়া হয়েছে। কিন্তু যে নিরুপায় হয়ে, অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে, (প্রয়োজন মোতাবেক গ্রহণ করলে, তবে তার কোন গুনাহ হবে না) কারণ, আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(116) আর (হে মুশরিকরা!) তোমাদের জিহ্বা যে মিথ্যা বিবৃত করে তার ওপর নির্ভর করে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা রটানোর উদ্দেশ্যে বলো না যে, ‘এটা হালাল এবং এটা হারাম।’ নিশ্চয় যারা আল্লাহর ওপর মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না।

(117) (দুনিয়াতে) তাদের সুখ-সম্ভোগ সামান্যই এবং (পরকালে) তাদের জন্য রয়েছে, যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

(118) আর ইয়াহুদীদের ওপরও আমি তা-ই হারাম করেছি, যা আমি ইতঃপূর্বে(১) তোমার কাছে বর্ণনা করেছি এবং আমি তাদের ওপর যুলম করিনি; বরং তারাই (শাস্তিযোগ্য কাজ করে) নিজেদের ওপর যুলম করতো।

(119) তারপর যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করেছে, এরপর তারা (আল্লাহর নিকট) তাওবা করেছে এবং (মন্দ আমলগুলো) সংশোধন করেছে, নিশ্চয় তোমার রব তাওবা করার পর তাদের জন্য পরম ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।

(120) নিশ্চয় ইবরাহীম ছিলো একাই একটি উম্মাহ(১), আল্লাহর একান্ত অনুগত ও একনিষ্ঠ। সে কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিলো না।

(121) সে ছিল আল্লাহর নি‘আমতরাজির কৃতজ্ঞতা আদায়কারী। তিনি তাকে (নবুওয়াতের জন্য) বাছাই করেছেন এবং তাকে সরল-সঠিক পথে (ইসলামের দিকে) পরিচালিত করেছেন।

(122) আর আমি তাকে দুনিয়াতে কল্যাণ(১) দান করেছি এবং নিঃসন্দেহে সে আখিরাতে নেককারদের(২) দলভুক্ত।

(123) অতঃপর (হে রাসূল!) আমি তোমার প্রতি অহী প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে, তুমি ইবরাহীমকে অনুসরণ করো, যে ছিলো একনিষ্ঠ এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

(124) (হে রাসূল, ) শনিবার (পালন) তো তাদের (ইয়াহুদীদের) ওপর বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, যারা তাতে মতবিরোধ করেছে। আর নিশ্চয় তোমার রব কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে বিচার ফয়সালা করে দিবেন, যে বিষয়ে তারা মতভেদ করতো।

(125) (হে রাসূল!) তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে দাওয়াত দাও এবং (প্রয়োজনে কথা, চিন্তা ও শিষ্টাচারের) উত্তম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক করো। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন, কে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং তিনিই হিদায়াতপ্রাপ্তদের খুব ভালো করেই জানেন।

(126) আর যদি তোমরা (শত্রুদেরকে) শাস্তি দিতে দাও, তবে ঠিক ততটুকু শাস্তি দাও যতটুকু (শাস্তি ইতঃপূর্বে) তোমাদের দেয়া হয়েছে। আর যদি (শক্তি থাকা সত্ত্বেও শাস্তি না দিয়ে) তোমরা ধৈর্যধারণ করো, তবে ধৈর্যশীলদের জন্য সেটাই উত্তম।

(127) আর (হে রাসূল! তাদের দেয়া কষ্টের উপর) তুমি ধৈর্যধারণ করো। তোমার ধৈর্যধারণ তো শুধু আল্লাহর তাওফীকেই। তুমি তাদের জন্য দুঃখ করোনা এবং তারা যে সব ষড়যন্ত্র করছে তুমি সে বিষয়ে মনঃক্ষুণ্ণও হয়ো না।

(128) (জেনে রেখো,) নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে) তাদের সাথে আছেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল।