21 - Al-Anbiyaa ()

|

(1) মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় (কিয়ামত) আসন্ন; অথচ তারা উদাসীনতায় (আখিরাত হতে) মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।

(2) যখনই তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের নিকট (আলকুরআনের) কোনো নতুন উপদেশ আসে, তখন তারা তা কৌতুক ভরে (তামাশার ছলে) শ্রবণ করে।

(3) (তারা তা শুনে অথচ;) তাদের অন্তর থাকে অমনোযোগী এবং যালিমরা গোপনে পরামর্শ করে, ‘এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। এরপরও কি তোমরা দেখে শুনে যাদুর কবলে পড়বে?’

(4) সে (রাসূলুল্লাহ) বললো: ‘আমার রব আসমানসমূহ ও জমিনের সমস্ত কথাই জানেন এবং তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’

(5) বরং তারা (কাফিররা) বলে: ‘এগুলো অলীক কল্পনা, হয় সে এটি মন থেকে বানিয়েছে, নয়তো সে একজন কবি। অতএব সে আমাদের কাছে এমন নিদর্শন নিয়ে আসুকو যেরূপ নিদর্শনসহ প্রেরিত হয়েছিল পূর্ববর্তীগণ।’

(6) তাদের পূর্বে যে জনপদই (তাদের প্রস্তাবকৃত নিদর্শন নাযিলের পরেও) ঈমান আনেনি, তাদেরকে আমি ধ্বংস করেছি। তবে কি এরা ঈমান আনবে?

(7) আর (হে রাসূল!) আমি তোমার পূর্বে শুধু পুরুষ মানুষদের নিকটই ওয়াহী পাঠিয়েছি।(১) সুতরাং তোমরা (পূর্বেকার কিতাবধারী) জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করোو যদি তোমরা না জানো।

(8) আর আমি তাদেরকে (প্রেরিত রাসূলদেরকে) এমন দেহবিশিষ্ট করিনি যে, তারা খাদ্য গ্রহণ করত না, আর তারা (দুনিয়াতে) চিরস্থায়ীও ছিল না।

(9) অতঃপর আমি রাসূলদের সাথে কৃত (সাহায্য ও বিজয়ের) ওয়াদা পূর্ণ করলাম। আর আমি তাদেরকে ও যাদেরকে ইচ্ছে রক্ষা করলাম এবং (আল্লাহর সাথে কুফরীকারী ও অন্যান্য পাপাচারী) সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে ধ্বংস করে দিলাম।

(10) (হে মানুষ) নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি এমন এক কিতাব (আলকুরআন) নাযিল করেছি, যাতে তোমাদের জন্য সম্মান ও গৌরব রয়েছে।(১) তবুও কি তোমরা বুঝবে না?

(11) আর আমি কত জনপদকে ধ্বংস করেছি, যারা ছিলো যালিম এবং তাদের পরবর্তীতে সেখানে অন্য জাতিকে সৃষ্টি করেছি।

(12) অতঃপর তারা যখন আমার শাস্তি দেখল, তখনই তারা (ধ্বংস থেকে বাঁচার জন্য) জনপদ ছেড়ে পালাতে লাগলো।

(13) (তাদেরকে তিরস্কারের সুরে বলা হলো) ‘পলায়ন করো না; বরং তোমরা যে আনন্দ-ফুর্তি আস্বাদনে মত্ত ছিলে তাতে এবং নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরে যাও। সম্ভবত তোমাদেরকে (তোমাদের দুনিয়া সম্পর্কে) আজ কিছু জিজ্ঞাসা করা হবে।’

(14) তারা বললো: ‘হায় আমাদের দুর্ভোগ! আমরা তো (আল্লাহর সাথে কুফরী করার কারণে) আসলেই যালিম ছিলাম।’

(15) অতঃপর তাদের এই বিলাপ(১) চলতে থাকে যতক্ষণ না আমি তাদেরকে কেটে ফেলা শস্য ও নিভে যাওয়া আগুন সদৃশ ( সমূলে ধ্বংস ) করে দিলাম।

(16) আর আসমানসমূহ, জমিন ও এতদুভয়ের মাঝখানে যা কিছু আছে, তার কোনো কিছুই আমি খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।(১)

(17) আমি যদি খেলার উপকরণ(১) গ্রহণ করতে চাইতাম, তবে আমার কাছে যা আছে, তা দিয়েই করতাম; কিন্তু আমি তা করিনি।(২)

(18) বরং আমি (রাসূলের নিকট ওয়াহী করা) সত্যকে দিয়ে (কাফিরদের বাতিলের) মিথ্যার ওপর আঘাত হানি; ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং নিমিষেই তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আর তোমরা (আল্লাহকে যে গুণে গুণান্বিত করে) যা কিছু বলছো, (১) তার জন্য তোমাদের রয়েছে দুর্ভোগ।

(19) আর আসমানসমূহে ও জমিনে যারা আছে, তারা সবাই তাঁর; আর তাঁর কাছে যারা (যেসব ফিরিশতারা) আছে তারা অহংকারবশত তাঁর ইবাদাত হতে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।

(20) তারা দিন-রাত তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে, তারা শিথিলতা দেখায় না (এবং বিরক্তও হয় না )

(21) তারা (মুশরিকরা) মাটি দিয়ে যেসব দেবতা বানিয়েছে, সেগুলো কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম?

(22) যদি আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া বহু ইলাহ থাকতো, তবে (তাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে) উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেতো। সুতরাং তারা যা বলে, আরশের রব আল্লাহ তা থেকে পূত-পবিত্র।

(23) তিনি যা করেন, সে ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকেই (তাদের আমল সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করা হবে।

(24) তারা কি আল্লাহকে ছাড়া অনেক ইলাহ গ্রহণ করেছে? (হে রাসূল! তুমি মুশরিকদেরকে) বলো: ‘তোমরা তোমাদের প্রমাণ নিয়ে আসো। আমার সাথে যারা আছে, এটি তাদের জন্য উপদেশ এবং আমার পূর্বে যারা ছিল, তাদের জন্যও এটাই ছিল উপদেশ।’ কিন্তু তাদের অধিকাংশই প্রকৃত সত্যকে জানে না; ফলে তারা (সত্য গ্রহণ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়।

(25) আর (হে রাসূল!) আমি তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই মর্মে ওয়াহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি (আল্লাহ) ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কর।’

(26) আর মুশরিকরা বলে: ‘পরম করুণাময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ (পক্ষান্তরে তাদের মিথ্যা উক্তি থেকে) তিনি পূত-পবিত্র। বরং তারা (ফিরিশতাগণ) সম্মানিত বান্দা।

(27) তারা তাঁর আগ বাড়িয়ে কোনো কথা বলে না, আর তারা তাঁর নির্দেশেই কাজ করে।

(28) তাদের সামনে ও পেছনে যা কিছু আছে, সবই তিনি (আল্লাহ) জানেন। আর তারা (ফিরিশতারা) শুধু তাদের জন্যই সুপারিশ করে, যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট। আর তারা তাঁর ভয়ে সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে।

(29) আর তাদের (ফিরিশতাদের) মধ্যে কেউ যদি বলে: ‘আল্লাহ নয়, আমিও একজন ইলাহ’, তাকেই আমি প্রতিদান হিসেবে জাহান্নাম দিবো। এভাবেই আমি যালিমদের (শাস্তির) প্রতিদান দিয়ে থাকি।

(30) যারা কুফরী করে, তারা কি ভেবে দেখে না যে, আসমানসমূহ ও জমিন (প্রথমেই) একটির সাথে অন্যটি লাগানো ছিলো, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম। আর আমি সকল প্রাণবান জিনিসকে পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি তারা (এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে) ঈমান আনবে না?

(31) আর আমি জমিনে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বতমালা, যাতে জমিন পর্বতসমূহ নিয়ে এদিক-ওদিক ঢলে না যায়। আর আমি তার মধ্যে তৈরি করেছি অনেকগুলো চলার পথ ও প্রশস্ত রাস্তা, যেন তারা (চলাফেরা ও ভ্রমণের) পথ খুঁজে পায়।

(32) আর আমি আসমানকে করেছি (খুঁটিবিহীন) সুরক্ষিত ছাদ; কিন্তু তারা তার নিদর্শনাবলি হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

(33) আর একমাত্র আল্লাহই রাত ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে।

(34) আর তোমার পূর্বে কোনো মানুষকে আমি স্থায়ী জীবন দান করিনি। সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে, তারা কি (এ দুনিয়াতে) অনন্ত জীবনসম্পন্ন হয়ে (বেচে) থাকবে?

(35) প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর ভালো ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং (মৃত্যুর পরে) তোমাদেরকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে।

(36) আর (হে রাসূল!) কাফিররা যখনই তোমাকে দেখে, তখন তারা তোমাকে কেবল উপহাসের পাত্র হিসেবে গ্রহণ করে। তারা বলে: ‘এ-ই কি সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের দেবতাদের সমালোচনা করে?’ অথচ তারাই (আলকুরআনকে অস্বীকার করে) ‘রহমান’-এর স্মরণকে অস্বীকার (কুফরী) করে।

(37) মানুষকে তাড়াহুড়া প্রবণ করে সৃষ্টি করা হয়েছে। অচিরেই আমি তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলি দেখাব। সুতরাং তোমরা (আমার শাস্তি নেমে আসার জন্যে) তাড়াহুড়া করো না।

(38) আর তারা বলে: ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে বল, ‘এ প্রতিশ্রুতি (পুনরুত্থান দিবসের আগমন ) কখন পূর্ণ হবে?’

(39) হায়! কাফিররা যদি সে সময়ের কথা জানতো, যখন তারা তাদের সামনে ও পেছন থেকে (জাহান্নামের) আগুন প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না (তাহলে তারা দ্রুত শাস্তি কামনা করত না);

(40) বরং (সে শাস্তি) আকস্মিকভাবে তাদের ওপর এসে পড়বে এবং তা তাদেরকে হতভম্ব করে দিবে। ফলে তারা তা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে না এবং তাদেরকে (তাওবার জন্য) অবকাশও দেয়া হবে না।

(41) আর (হে মুহাম্মাদ!) তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলের প্রতি (এভাবেই) ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়েছিলো। পরিণামে বিদ্রুপকারীরা যে অকাট্য সত্য নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছিল, অবশেষে সেটাই (অস্বীকারকৃত শাস্তির কারণে) তাদের ওপর চেপে বসেছিলো।

(42) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: (শাস্তি যখন এসে পড়বে তখন ) ‘রাতে এবং দিনে পরম করুণাময়ের শাস্তি থেকে কে তোমাদেরকে রক্ষা করবে?’ তবুও তারা তাদের রবের স্মরণ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

(43) আমি ছাড়া তাদের কি এমন কোনো দেব-দেবী আছে যারা তাদেরকে আমার (শাস্তি থেকে) রক্ষা করতে পারে? তারা তো নিজেদেরকেই সাহায্য করতে সক্ষম নয়(১) এবং আমার বিরুদ্ধে তারা কোনো সঙ্গীও পাবে না।

(44) বরং আমিই তাদেরকে ও তাদের পূর্বপুরুষদেরকে উপভোগ করতে দিয়েছিলাম; উপরন্তু তাদের আয়ুষ্কালও হয়েছিল দীর্ঘ।(১) তারা কি দেখে না যে, আমি চতুর্দিক থেকে তাদের দেশকে সংকুচিত করে দিচ্ছি?(২) তবুও কি তারা বিজয়ী হবে?

(45) (হে রাসূল! তুমি মানুষদেরকে) বলো: ‘আমি তো কেবল (আমার নিকট প্রেরিত) ওয়াহী দ্বারাই তোমাদেরকে (আল্লাহর শাস্তিকে) সতর্ক করি।’ কিন্তু যারা বধির তাদেরকে যখন সতর্ক করা হয়, তখন তারা সে ডাক শোনে না।

(46) আর তোমার রবের শাস্তির সামান্য কিছুও যদি তাদেরকে স্পর্শ করে, তবে তারা অবশ্যই বলে উঠবে: ‘হায় দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো অবশ্যই যালিম ছিলাম।’

(47) আর কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করবো। সুতরাং (সাওয়াব ও গুনাহে কমবেশি করে) কারো প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না। কারো আমল যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়, তবুও আমি তা উপস্থিত করবো। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।

(48) আর আমি তো মূসা ও হারূনকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী (তাওরাত) দিয়েছিলাম এবং মুত্তাকীদের জন্য দিয়েছিলাম জ্যোতি (হিদায়াত) ও উপদেশ।

(49) যারা না দেখেও তাদের রবকে ভয় করে এবং তারা কিয়ামত সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে।

(50) আর এটা (আলকুরআন) বরকতময় উপদেশ, যা আমি নাযিল করেছি। তবুও কি তোমরা তা অস্বীকার করবে?

(51) আর আমি তো ইতঃপূর্বে ইবরাহীমকে সঠিক পথের জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং আমি তার সম্পর্কে ছিলাম সম্যক অবগত।

(52) যখন সে (ইব্রাহীম ) তার পিতা (আযর) ও তার জাতিকে বললো: ‘যেগুলোর পূজায় তোমরা রত রয়েছ, এ মূর্তিগুলো আসলে কী?’

(53) তারা বললো: ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এদের পূজা করতে দেখেছি।’(১)

(54) সে বললো: ‘তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা সবাই স্পষ্ট পথভ্রষ্টায় রয়েছ।’

(55) তারা বললো: ‘তুমি কি আমাদের নিকট সত্য নিয়ে এসেছো, নাকি তুমি তামাশাকারী?’

(56) সে বললো: ‘না; বরং তোমাদের রব তো আসমানসমূহ ও জমিনের রব; যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন। আর এ বিষয়ে আমি অন্যতম সাক্ষী।’

(57) (সে মনে মনে আরো বললো:) ‘ আল্লাহর শপথ! তোমরা (ঈদের দিকে) চলে যাওয়ার পর আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর (ধ্বংসের ) ব্যাপারে অবশ্যই কৌশল অবলম্বন করব।’

(58) অতঃপর সে বড়টিকে বাদ রেখে তাদের মূর্তিগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল , যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে।(১)

(59) তারা (ফিরে এসে মূর্তিগুলোকে ভাঙ্গা দেখে) বললো: ‘আমাদের দেব-দেবীগুলোর সাথে কে এমনটি করলো? নিশ্চয় সে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।’

(60) লোকেরা বললো: ‘আমরা শুনেছি, ‘এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয়, ইবরাহীম।’

(61) তারা (নেতৃস্থানীয়রা) বললো: ‘তাহলে তাকে লোকজনের সামনে ধরে নিয়ে এসো, যাতে তারা তার কর্মকাণ্ডের স্বীকারোক্তির ওপর সাক্ষী হতে পারে।’

(62) তারা জিজ্ঞাসা করলো: ‘হে ইবরাহীম, তুমিই কি আমাদের দেবদেবীগুলোর সাথে এরূপ করেছ?’

(63) ইবরাহীম (মূর্তিগুলোর অক্ষমতা প্রকাশ করে) বললো: ‘বরং তাদের এ বড়টিই এ কাজ করেছে। তাই এদেরকেই জিজ্ঞাসা করো, যদি এরা কথা বলতে পারে।’

(64) তখন তারা (চিন্তা-ভাবনা করতে করতে) নিজেদের দিকে ফিরে গেল এবং একে অন্যকে বলতে লাগল, ‘তোমরাই তো যালিম।’(১)

(65) অতঃপর তাদের মাথা অবনত হয়ে গেলো এবং বললো: ‘তুমি তো জানোই যে, এরা কথা বলতে পারে না।’(১)

(66) ইবরাহীম (তাদের কথা প্রত্যাখ্যান করে) বললো: ‘তাহলে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত করো, যা তোমাদের কোনো উপকার করতে পারে না এবং কোনো ক্ষতিও করতে পারে না?’

(67) ‘ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যেসব মূর্তির ইবাদাত করো তাদেরকেও! ‘তবুও কি তোমরা বুঝো না?’

(68) তারা বললো: ‘তাকে (ইবরাহীমকে) আগুনে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের দেবদেবীদেরকে সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও।’

(69) আমি (আল্লাহ) বললাম: ‘হে আগুন! তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও শান্তিময় হয়ে যাও।’

(70) আর তারা তার বিরুদ্ধে (আগুনে জ্বালানোর) চক্রান্ত করেছিল; কিন্তু আমি তাদেরকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলাম।

(71) আর আমি তাকে (ইরবাহীমকে) ও লূতকে (অবিশ্বাসীদের কবল থেকে) উদ্ধার করে সে দেশে (সিরিয়ায়) নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি বিশ্ববাসীর জন্য বরকত ও কল্যাণ রেখেছি।

(72) আর আমি তাকে (তার রবের কাছে দু‘আর বদৌলতে) দান করেছিলাম ইসহাককে এবং বাড়তি হিসেবে ইয়াকূবকে দান করলাম। আর তাদের প্রত্যেককেই আমি সৎকর্মশীল করেছিলাম।

(73) আর আমি তাদেরকে নেতা বানিয়েছিলাম, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে সঠিক পথ দেখাতো। আমি তাদের প্রতি এ মর্মে ওয়াহী প্রেরণ করেছিলাম যে, তোমরা কল্যাণকর কাজ করো, সালাত কায়িম কর এবং যাকাত প্রদান কর। আর তারা আমারই ইবাদাত করতো।

(74) আর লূতকে আমি প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করেছিলাম। আমি তাকে এমন এক জনপদ থেকে উদ্ধার করেছিলাম, যার অধিবাসীরা (সমকামিতার ন্যায়) নিকৃষ্টতম কাজে লিপ্ত ছিলো। তারা ছিলো এক মন্দ ও পাপাচারী জাতি।

(75) আর আমি তাকে আমার রহমতের মধ্যে শামিল করে নিয়েছিলাম। সে ছিলো সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।

(76) আর (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ করো নূহের কথা, ইতঃপূর্বে যখন সে আমাকে ডেকেছিল, তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। অতঃপর তাকে ও তার পরিবারবর্গকে আমি মহাবিপদ (মহাপ্লাবন) থেকে উদ্ধার করেছিলাম।

(77) আর আমি তাকে সেই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করেছিলাম, যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছিলো। বস্তুত তারা ছিল এক নিকৃষ্ট জাতি। তাই আমি তাদের সকলকেই পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছি।

(78) আর (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ করো দাঊদ ও সুলায়মানের কথা, যখন তারা শস্যক্ষেত সম্পর্কে বিচার করছিল, যাতে রাতের বেলায় কোনো জাতির মেষ ঢুকে পড়েছিল। আর আমি তাদের বিচার কাজের সাক্ষী ছিলাম।(১)

(79) অতঃপর আমি এ বিষয়ের মীমাংসা (দাঊদকে না বুঝিয়ে) সুলায়মানকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। আর আমি তাদের প্রত্যেককেই দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। আর আমি পর্বতমালা ও পাখিদেরকে দাঊদের অধীন করে দিয়েছিলাম, তারা দাঊদের সাথে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। আর এসব কিছু আমিই করছিলাম।

(80) আর আমিই তাকে (সুলায়মানকে বাদ দিয়ে দাঊদকে) তোমাদের জন্য বর্ম বানানো শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারে। তারপরেও কি তোমরা কৃতজ্ঞ হবে না?

(81) আর আমি সুলায়মানের জন্য অনুগত করে দিয়েছিলাম প্রবল হাওয়াকে, যা তার নির্দেশে প্রবাহিত হতো সেই দেশের (সিরিয়ার) দিকে, যেখানে আমি প্রচুর বরকত রেখেছি। আর আমি প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কেই অবগত ছিলাম।

(82) আর শয়তানদের মধ্যে কতক তার জন্য ডুবুরীর কাজ করত, এছাড়া অন্যান্য কাজও করতো। আর আমিই তাদের জন্য হিফাযতকারী ছিলাম।

(83) আর (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ করো আইউবের কথা, যখন (তার ওপর বিপদ নেমে আসলে) সে তার রবকে ডেকে বলেছিল: ‘(হে আমার রব!) আমি রোগাক্রান্ত (এবং পরিবারহারা) হয়ে গেছি। আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’

(84) তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। আর তার যত অসুখ (দুঃখ-কষ্ট) ছিল তা দূর করে দিলাম এবং তাকে তার পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে দিলাম। আর তাদের সাথে তাদের অনুরূপ আরো দিলাম, আমার পক্ষ থেকে রহমত এবং ইবাদাতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ।

(85) আর (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ করো ইসমাঈল, ইদরীস ও যুল্ কিফল এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই (দায়িত্ব পালনে ও বিপদ-আপদে) ধৈর্যশীল ছিল।

(86) আর আমি তাদেরকে আমার রহমতে শামিল করেছিলাম। তারা ছিলো সৎকর্মপরায়ণ।

(87) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো যুন-নূন (মাছওয়ালা ইউনুস) এর কথা, যখন সে (তার সম্প্রদায়ের অবিরত গুনাহে লিপ্ত হওয়ার দরুন) রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিলো এবং সে মনে করেছিলো যে, আমি তাকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করবো না। তারপর সে অন্ধকার(১) থেকে ডেকে বলেছিলো, ‘(হে আমার রব!) আপনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছি।’

(88) অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মু’মিনদেরকে (বিপদ থেকে) উদ্ধার করে থাকি।

(89) আর (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ করো যাকারিয়্যার কথা, যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিলো, ‘হে আমার রব! আমাকে একা (নিঃসন্তান) রেখো না, তুমি তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী।’(১)

(90) অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম পুত্র ইয়াহইয়াকে। আর তার জন্য তার স্ত্রীকে (গর্ভধারণের) উপযোগী করেছিলাম। তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত। আর তারা আমাকে আগ্রহ ও ভীতি সহকারে ডাকত। আর তারা ছিল আমার নিকট একান্ত বিনয়ী।

(91) আর (হে রাসূল! তুমি আরো) স্মরণ করো সে নারীর (মারইয়ামের) কথা, যে নিজ সতীত্ব রক্ষা করেছিলো। অতঃপর আমি (জিবরীলের মাধ্যমে) তার মধ্যে আমার ‘রূহ’ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার পুত্র (`ঈসা) কে বিশ্ববাসীর জন্য করেছিলাম (আল্লাহর অসীম ক্ষমতার) এক নিদর্শন।

(92) (হে মানুষ!) নিশ্চয় তোমাদের এ জাতি তো একই জাতি। আর আমিই তোমাদের রব। অতএব তোমরা আমার ইবাদাত করো।

(93) কিন্তু তারা নিজেদের কার্যকলাপে পরস্পরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে।(১) সকলেই (কিয়ামতের দিন) আমার নিকট প্রত্যাবর্তন করবে।

(94) সুতরাং যে মু’মিন অবস্থায় সৎকাজ করে, তার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করা হবে না। আমি তো তা লিখে রাখি।

(95) আর আমি যে জনপদকে (কুফরীর দরুন) ধ্বংস করেছি, তার সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যে, তার অধিবাসীবৃন্দ আর (পৃথিবীতে) ফিরে আসবে না।

(96) অবশেষে যখন ইয়া’জূজ ও মা’জূজকে (দেয়াল খুলে আবদ্ধ অবস্থা থেকে ) মুক্তি দেয়া হবে, তখন তারা জমিনের প্রতিটি উঁচু ভূমি হতে দ্রুত বেরিয়ে আসবে।

(97) আর সত্য ওয়াদার (কিয়ামতের) সময় নিকটে আসলে আকস্মাৎ কাফিরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবে: ‘হায়, আমাদের দুর্ভোগ! আমরা তো এ বিষয়ে উদাসীন ছিলাম(১); বরং আমরা ছিলাম যালিম।’

(98) (হে মুশরিকরা!) নিশ্চয় তোমরা এবং আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদের পূজা করো, সেগুলো তো জাহান্নামের জ্বালানী। তোমরা (এবং তোমাদের মা‘বূদরা) সেখানে প্রবেশ করবে।

(99) যদি তারা (এ মা‘বূদগুলো) ইলাহ হত, তবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করত না। পক্ষান্তরে তারা সবাই তাতে স্থায়ী হয়ে থাকবে।

(100) সেখানে (যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির কারণে) থাকবে তাদের চিৎকার-আর্তনাদ, আর সেখানে (কঠিন বিভীষিকা ও ভয়াবহতার কারণে কোন আওয়াজই) তারা শুনতে পাবে না।

(101) নিশ্চয় আমার পক্ষ থেকে যাদের জন্য পূর্বেই কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে, তাদেরকে তা (জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে।

(102) ( এত দূরে যে ) তারা জাহান্নামের ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাবে না। সেখানে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত ভোগবিলাসে চিরকাল থাকবে।

(103) মহাভীতি(১) তাদেরকে পেরেশান করবে না। আর ফিরিশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলবে: ‘এটাই তোমাদের সেই দিন, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিলো।’

(104) সে দিন আমি আসমানসমূহকে গুটিয়ে নিব, যেভাবে গুটিয়ে রাখা হয় লিখিত দলিল পত্রাদি। যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব। এটা আমার কৃত প্রতিশ্রুতি (যার বরখেলাফ হবে না)। নিশ্চয় আমি তা পালন করবই।

(105) আর আমি লাওহে মাহফূজে (উপদেশ) লিখার পর, আমি রাসূলগণের ওপর নাযিলকৃত সকল কিতাবেই লিখে দিয়েছি যে, ‘আমার যোগ্যতর(১) বান্দাগণই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে।’

(106) নিশ্চয় এতে ইবাদাতকারী সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশ বাণী রয়েছে।

(107) আর (হে মুহাম্মাদ!) আমি তো তোমাকে (রাসূল বানিয়ে) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।

(108) (হে রাসুল! তুমি তাদেরকে ) বলো: ‘আমার প্রতি ওয়াহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহ একক ইলাহ। সুতরাং তোমরা কি আত্মসমর্পণকারী হবে?’

(109) আর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তুমি বলে দাও: ‘আমি যথাযথভাবে তোমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি। আর আমি জানি না, তোমাদেরকে যে বিষয়ের (শাস্তির) প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা কি নিকটবর্তী না দূরবর্তী?’

(110) নিশ্চয়ই তিনি প্রকাশ্য কথা সম্পর্কেও জানেন এবং তোমরা যা গোপন কর, তাও জানেন।

(111) আর আমি জানি না, হয়তো তা (শাস্তি দিতে বিলম্ব করা) তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা এবং কিছু কালের জন্য উপভোগের সুযোগ।

(112) রাসূল (তার রবকে ডেকে) বলেছিল: ‘হে আমার রব! আপনি (আমাদের ও আমাদের জাতির মাঝে) ন্যায়সঙ্গতভাবে ফয়সালা করে দিন।’ আর (হে মানুষ ! ) আমাদের রব তো পরম করুণাময়। তোমরা যা বলছ, সে বিষয়ে তিনিই একমাত্র সহায়স্থল।