29 - Al-Ankaboot ()

|

(1) আলিফ-লাম-মীম।

(2) মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’, বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদেরকে (ঈমানের সত্যতার) পরীক্ষা করা হবে না?

(3) আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই (প্রকাশ্যভাবে) জেনে নিবেন, কারা (ঈমানের ক্ষেত্রে) সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নিবেন, কারা মিথ্যাবাদী।

(4) নাকি যারা (শিরক ও অন্যান্য) পাপ কাজ করে তারা মনে করে নিয়েছে যে, তারা আমার (শাস্তির) আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে?(১) কতইনা নিকৃষ্ট, যা তারা ফয়সালা করে!

(5) যে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় আল্লাহর নির্ধারিত সময় আসবেই। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।

(6) আর যে (আনুগত্যের ওপর অটল এবং গুনাহ থেকে দূরে থাকতে) চেষ্টা করে সে তো তার নিজের জন্য চেষ্টা করে। নিশ্চয় আল্লাহ সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।

(7) আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, অবশ্যই আমি তাদের থেকে তাদের পাপসমূহ দূর করে দিবো এবং আমি অবশ্যই তাদের (দুনিয়ার) আমলের চেয়ে তাদেরকে (পরকালে) আরো উত্তম প্রতিদান দিবো।

(8) আর আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি, তার পিতামাতার সাথে সদাচরণ করতে। তবে যদি তারা তোমার ওপর প্রচেষ্টা চালায় (বল প্রয়োগ করে) আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করতে, যার সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না।(১) (কিয়ামতের দিন) আমার দিকেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে, অতঃপর তোমরা যা (যে আমল) করতে আমি তা তোমাদেরকে জানিয়ে দিবো (এবং প্রতিদানও দিবো)

(9) আর যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, (কিয়ামতের দিন) অবশ্যই আমি তাদেরকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করবো।

(10) আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা বলে, ‘আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি’, অতঃপর যখন আল্লাহর পথে (ঈমানের ব্যাপারে) তাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়, তখন তারা মানুষের নিপীড়নকে আল্লাহর শাস্তির মতো মনে করে। আর যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে কোনো বিজয় আসে, তখন অবশ্যই তারা বলে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে ছিলাম।’ সৃষ্টিকুলের অন্তরসমূহে যা কিছু আছে, আল্লাহ কি তা সম্পর্কে সম্যক অবগত নন?

(11) আর আল্লাহ অবশ্যই জানেন, কারা ঈমান এনেছে এবং তিনি অবশ্যই মুনাফিকদেরকেও জানেন।(১)

(12) আর কাফিররা মুমিনদেরকে বলে: ‘তোমরা আমাদের পথ (ধর্ম) অনুসরণ করো। তাহলে আমরা তোমাদের গুনাহসমূহের বোঝা বহন করব।’ অথচ তারা তাদের গুনাহসমূহের কিছুই বহন করবে না। নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।

(13) আর অবশ্যই তারা বহন করবে, তাদের (পাপের)বোঝা এবং তাদের (পাপের) বোঝার সাথে আরো কিছু (অনুসারীদের পাপের) বোঝা। আর তারা কিয়ামতের দিন অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে সে সম্পর্কে, যা তারা মিথ্যা বানাতো।

(14) আর আমি অবশ্যই নূহকে তার জাতির নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম এক হাজার (৯৫০) বছর অবস্থান করেছিলো। অতঃপর (তাদের কুফরীর কারণে) মহা-প্লাবন তাদেরকে গ্রাস করলো, এমতাবস্থায় যে, তারা ছিলো যালিম।

(15) অতঃপর আমি তাকে ও (তার সাথে) নৌকা আরোহীদেরকে (মু’মিন সাথীদেরকে) রক্ষা করলাম, আর এটাকে (নৌকাটিকে) সৃষ্টিকুলের জন্য একটি নিদর্শন করলাম।

(16) আর (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ করো ইবরাহীমকে, যখন সে তার জাতিকে বলেছিল: ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং (আদেশ-নিষেধ মেনে) তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করো; এটি তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।’

(17) ‘(হে মুশরিকরা!) তোমরা তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিগুলোর পূজা করছো(১) এবং মিথ্যা বানাচ্ছো (রচনা করে বেড়াচ্ছো । নিশ্চয় তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের উপাসনা করো তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। তাই আল্লাহর কাছেই রিযক তালাশ করো, তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

(18) আর যদি তোমরা (মুহাম্মাদ-এর আনিত বিধানকে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করো, তবে তোমাদের পূর্বে অনেক জাতিও (এমনিভাবে তাদের রাসূলদেরকে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলো। মূলত রাসূলের ওপর দায়িত্ব তো কেবল (আল্লাহর বাণী) সুস্পষ্টভাবে পৌঁছানো।

(19) তারা (এ মিথ্যারোপকারীরা) কি দেখে না যে, আল্লাহ কীভাবে সৃষ্টির সূচনা করেন? তারপর (তা নিঃশেষ হয়ে গেলে) তিনি তার পুনরাবৃত্তি করবেন। নিশ্চয় এটি আল্লাহর জন্য খুবই সহজ।

(20) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘তোমরা জমিনে ভ্রমণ করো, অতঃপর দেখো’ কীভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছিলেন, তারপর (মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ও হিসাবের জন্য তাদেরকে) আল্লাহই দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।

(21) তিনি যাকে ইচ্ছা (ইনসাফের ভিত্তিতে) শাস্তি দিবেন এবং যাকে ইচ্ছা দয়া করবেন, আর তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

(22) মনে রেখো, তোমরা আল্লাহকে অক্ষমকারী নও(১), না জমিনে আর না আসমানে, (অর্থাৎ তাঁর আয়ত্তের বাইরে যেতে পারবে না।) আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই।

(23) আর যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ ও (কিয়ামত দিবসে) তাঁর সাক্ষাৎ অস্বীকার করে, তারাই আমার রহমত থেকে হতাশ হবে এবং তাদের জন্যই রয়েছে (জাহান্নামের) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

(24) অতঃপর (উপরোক্ত তাওহীদের দাওয়াত দিলে) ইবরাহীমের জাতির জবাব শুধু এটাই ছিলো যে, তারা বললো: ‘ওকে হত্যা করো অথবা জ্বালিয়ে দাও।’ অতঃপর আল্লাহ আগুন থেকে তাকে রক্ষা করলেন; নিশ্চয় এতে (এ ঘটনায়) বহু নিদর্শন রয়েছে মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্যে।

(25) আর ইবরাহীম (তার সম্প্রদায়কে) বললো: ‘দুনিয়ার জীবনে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও পরিচয় রক্ষা করার জন্যই তো তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে মূর্তিদেরকে গ্রহণ করেছো। তারপর কিয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং পরস্পর পরস্পরকে লা‘নত করবে, আর তোমাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম এবং (সেদিন) তোমাদের জন্য থাকবে না কোনো সাহায্যকারী।’

(26) আর লূত তার (ইবরাহীমের)ওপর ঈমান আনলো। আর ইবরাহীম বললো: ‘আমি আমার রবের দিকে হিজরত করছি। নিশ্চয় তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’

(27) আর আমি তাকে (ইবরাহীমকে) দান করলাম (পুত্র) ইসহাক ও (পুত্র) ‘ইয়া‘কূবকে এবং তার বংশে নবুওয়্যাত ও কিতাব দিলাম। আর দুনিয়াতে তাকে তার (উপযুক্ত) প্রতিদান দিলাম এবং নিশ্চয় সে আখিরাতে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

(28) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো লূত এর কথা, যখন সে তার জাতির লোকদেরকে বলেছিলো: ‘নিশ্চয় তোমরা এমন অশ্লীল (সমকামিতা) কাজ করো, যা সৃষ্টিকুলের কেউ তোমাদের আগে করেনি।’

(29) ‘তোমরা তো (যৌন বাসনা পূরণার্থে) পুরুষদের সাথে সমকামিতা করো এবং রাস্তায় ডাকাতি করো। আর নিজেদের বৈঠকে প্রকাশ্যে ঘৃণ্য(১) কাজ করো!’ তার জাতির জবাব ছিলো কেবল এই যে, তারা বললো: ‘তুমি আল্লাহর শাস্তি নিয়ে আসো; যদি তুমি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’

(30) লুত (আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে ) বললো: ‘হে আমার রব! (কুফরী ও নিকৃষ্ট গুনাহের প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে জমিনে) ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন।’

(31) আর আমার ফিরিশতারা যখন ইবরাহীমের কাছে (ইসহাক এবং পরবর্তীতে তাঁর ছেলে ইয়া’কূবের) সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল তখন তারা বলেছিলো: ‘নিশ্চয় আমরা এ (সাদূম) জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করবো, নিশ্চয় এর অধিবাসীরা যালিম।’

(32) ইবরাহীম বললো: ‘নিশ্চয় সেখানে লূত আছে।’ ফিরিশতাগণ বললো: ‘আমরা ভালোই জানি সেখানে কারা আছে, আমরা অবশ্যই তাকে ও তার পরিবারকে (ধ্বংস থেকে) রক্ষা করবো; তবে তার স্ত্রীকে নয়, সে হবে পিছনে পড়ে থাকা (ধ্বংসপ্রাপ্ত) লোকদের একজন।’

(33) আর যখন আমার ফিরিশতারা লূতের কাছে আসলো, তখন তাদের জন্যে (তার সম্প্রদায়ের অশ্লীলতার ব্যাপারে) সে চিন্তিত হয়ে পড়লো এবং তাদের রক্ষায় নিজেকে অক্ষম মনে করলো। আর ফিরিশতারা বললো: ‘আপনি ভয় পাবেন না এবং চিন্তিত হবেন না; আপনাকে ও আপনার পরিবারকে আমরা (ধ্বংস থেকে) রক্ষা করবো; তবে আপনার স্ত্রীকে নয়, সে হবে পিছনে পড়ে থাকা (ধ্বংসপ্রাপ্ত) লোকদের একজন।’

(34) নিশ্চয় আমরা এ জনপদবাসীর ওপর আসমান থেকে শাস্তি নাযিল করবো। কারণ তারা (সমকামীতার) পাপাচার করতো।

(35) আর অবশ্যই আমি (ধ্বংসপ্রাপ্ত ) ঐ জনপদে সুস্পষ্ট নিদর্শন রেখে দিয়েছি বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য।

(36) আর আমি মাদইয়ানে পাঠিয়েছিলাম তাদের ভাই শু‘আইবকে। অতঃপর সে বললো: ‘হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, (তাঁর ইবাদাতের মাধ্যমে) শেষ দিবসের প্রতিদানের আশা করো এবং জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িও না।

(37) কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করলো; ফলে ভূমিকম্প তাদেরকে আক্রান্ত করলো। অতঃপর নিজেদের বাড়ি-ঘরেই তারা চেহারার উপর উপুড় হয়ে মরে রইলো।

(38) তেমনিভাবে আমি ‘আদ ও সামূদ জাতিকে (ধ্বংস করেছিলাম)। আর তাদের আবাসভূমির কিছু (১) তোমাদের জন্য উন্মোচিত হয়েছে। আর শয়তান তাদের কাজ তাদের চোখে শোভিত করে তাদেরকে সৎপথ থেকে বিরত রেখেছিলো; যদিও তারা ছিল বিচক্ষণ।

(39) আর আমি কারূন, ফির‘আউন ও হামানকে (ধ্বংস করেছি)। অবশ্যই তাদের কাছে মূসা প্রমাণসহ এসেছিলো। অতঃপর তারা জমিনে অহংকার করেছিলো; এতৎসত্ত্বেও তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি।

(40) অতঃপর আমি এদের প্রত্যেককে নিজ নিজ পাপের কারণে (ধ্বংসাত্মক শাস্তি দ্বারা) পাকড়াও করেছিলাম; তাদের কারো ওপর আমি পাথরকুচির ঝড় পাঠিয়েছি(১), কাউকে পাকড়াও করেছে বিকট আওয়াজ(২), কাউকে আবার মাটিতে ধসিয়ে দিয়েছি(৩), আর কাউকে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছি।(৪) আল্লাহ এমন নন যে, তাদের ওপর যুলম করবেন; বরং তারা (গুনাহে লিপ্ত হয়ে) নিজেরা নিজেদের উপর যুলম করতো।

(41) যারা (নিজেদের উপকার ও সুপারিশের আশায়) আল্লাহ ছাড়া বহু অভিভাবক গ্রহণ করে, তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার ন্যায়, যে (আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য) ঘর বানায়। অথচ মাকড়সার ঘরই সবচাইতে দুর্বল ঘর; যদি তারা জানতো।(১)

(42) আল্লাহকে ছাড়া তারা যাদেরকে ডাকে (পুজা করে), নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে জানেন; আর তিনি মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(43) আর এসব দৃষ্টান্ত আমি মানুষের জন্য পেশ করি(১); আর জ্ঞানীরা ছাড়া কেউ তা বুঝে না।

(44) আল্লাহ যথাযথভাবে আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে মু’মিনদের জন্য।

(45) (হে রাসূল!) তোমার প্রতি যে কিতাব (আল কুরআন) ওয়াহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত করো এবং সালাত কায়িম করো। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন, যা তোমরা করো।

(46) (হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ) তোমরা উত্তম (ও যুক্তিসঙ্গত ) পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না; তবে তাদের মধ্যে যারা যুলম করেছে(১), তাদের কথা আলাদা। আর তোমরা (কিতাবীদেরকে) বলো: ‘আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তার প্রতি এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ তো একই। আর আমরা তাঁরই সমীপে আত্মসমর্পণকারী।’

(47) আর (পূর্ববর্তীদের ওপর যেমনিভাবে কিতাবাদি নাযিল করেছি) এভাবেই আমি তোমার প্রতি কিতাব (আল কুরআন) নাযিল করেছি। অতএব, আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম তারা এর প্রতি ঈমান রাখে(১) এবং এদেরও (মক্কাবাসীদের) কেউ কেউ এর প্রতি ঈমান রাখে। আর কাফিররা ছাড়া আমার আয়াতসমূহকে কেউ অস্বীকার করে না।

(48) আর (হে রাসূল!) তুমি তো (আল কুরআন নাযিলের) পূর্বে কোনো কিতাব তিলাওয়াত করতে না এবং তোমার নিজের হাতে তা লিখতেও না(১) যে, বাতিলপন্থীরা এ দ্বারা সন্দেহ করার সুযোগ পেতে পারত।

(49) বরং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে এটি (আল কুরআন) একটি সুষ্পষ্ট নিদর্শন। আর যালিমরা ছাড়া আমার আয়াতসমূহকে কেউ অস্বীকার করে না।

(50) আর তারা (মুশরিকরা) বলে: ‘তার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে নিদর্শনসমূহ নাযিল হয় না কেনো?’ (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘নিদর্শনসমূহ তো আল্লাহর কাছে(১), আর আমি তো কেবল একজন প্রকাশ্য সতর্ককারী।’

(51) এটা কি তাদের জন্য (নিদর্শন হিসেবে) যথেষ্ট নয় যে, নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি কিতাব (আল কুরআন) নাযিল করেছি, যা তাদের নিকট তিলাওয়াত করা হয়? নিশ্চয় এর মধ্যে রহমত ও উপদেশ রয়েছে সেই জাতির জন্য, যারা ঈমান আনে।

(52) (হে রাসূল!) বলো: ‘আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে, তা তিনি জানেন। আর যারা বাতিলে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।’

(53) আর তারা তোমাকে দ্রুত শাস্তি এনে দিতে বলে। যদি নির্ধারিত সময় না থাকতো, তবে তাদের ওপর অবশ্যই শাস্তি আসতো এবং তা আকস্মিকভাবে তাদের ওপর আসবেই; অথচ তারা টেরও পাবে না।

(54) তারা তোমাকে দ্রুত শাস্তি এনে দিতে বলে। আর নিশ্চয় জাহান্নাম কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করবে।

(55) সেদিন আযাব তাদেরকে তাদের ওপর থেকে ও তাদের পায়ের নিচ থেকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে এবং আল্লাহ (ধমকের স্বরে) বলবেন: ‘তোমরা যা (শিরক ও অপরাধ) করতে, তার স্বাদ আস্বাদন করো।''

(56) হে আমার বান্দারা যারা ঈমান এনেছো, নিশ্চয় আমার জমিন প্রশস্ত(১); সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো।

(57) প্রতিটি জীবকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে, তারপর (কিয়ামতের দিন) আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

(58) আর যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে, তাদেরকে অবশ্যই আমি জান্নাতে এমন অট্টালিকায় স্থান বসবাস করতে দিবো, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। কতইনা উত্তম আমলকারীদের প্রতিদান!

(59) যারা(১) ধৈর্যধারণ করে এবং তাদের রবের ওপরই তাওয়াক্কুল করে।

(60) আর (একটু ভেবে দেখো) এমন কত জীব-জন্তু রয়েছে, যারা নিজেদের রিযক নিজেরা সঞ্চয় করে না (বা মজুত করে রাখে না), আল্লাহই তাদের রিযক দেন এবং তোমাদেরকেও। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।

(61) আর (হে রাসূল!) তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, ‘কে আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং চাঁদ ও সূর্যকে (তোমাদের জন্যে) নিয়োজিত করেছেন?’ তারা অবশ্যই বলবে: ‘আল্লাহ’। তাহলে (এক আল্লাহকে বাদ দিয়ে) কোথায় তাদের ফিরানো হচ্ছে?

(62) তিনি আল্লাহ, যিনি (তাঁর হিকমত অনুযায়ী) তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা করেন রিযক প্রশস্ত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা সংকীর্ণ করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।

(63) আর (হে রাসূল!) তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, ‘কে আসমান থেকে (বৃষ্টির) পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দ্বারা জমিনকে তার মৃত্যুর (শুকিয়ে যাওয়ার) পর সঞ্জীবিত করেন?’ তবে তারা অবশ্যই বলবে: ‘আল্লাহ’। (হে মুহাম্মাদ! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর।’ কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বুঝে না।

(64) আর এ দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং নিশ্চয় আখিরাতের নিবাসই হলো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানতো।(১)

(65) তারা (মুশরিকরা) যখন সাগরে নৌযানে আরোহণ করে, তখন তারা (ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে) একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে (ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে) স্থলে পৌঁছে দেন, তখনই তারা শিরকে লিপ্ত হয়।

(66) যাতে আমি তাদেরকে যা (যে নি‘আমত) দিয়েছি, তারা তা অস্বীকার করতে পারে এবং তারা যেন (পার্থিব) ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকতে পারে। অতঃপর শীঘ্রই তারা (এর পরিণাম) জানতে পারবে।

(67) তারা কি দেখে না যে, আমি ‘হারাম’ (মক্কা) কে নিরাপদ স্থান বানিয়েছি; অথচ তাদের আশ পাশ থেকে মানুষদেরকে ছিনিয়ে নেয়া হয়?(১) এরপরও কি তারা বাতিলকেই (ভ্রান্ত দেবতার উপরই) বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর নি‘আমতকে অস্বীকার করবে?

(68) আর সে ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে অথবা তার নিকট (রাসূলের আনিত) সত্য আসার পরও তা অস্বীকার করে? আর জাহান্নামই কি কাফিরদের (এবং তাদের সাদৃশ্যদের) আবাস নয়?

(69) আর যারা (আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্বেষায়) আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, অবশ্যই আমি তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো। আর নিশ্চয় আল্লাহ (হিদায়াত, সাহায্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে) সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন।