19 - Maryam ()

|

(1) কাফ-হা-ইয়া-‘আঈন-সোয়াদ।

(2) (হে নবী! ) এটা তোমার রবের অনুগ্রহের বিবরণ, যা তিনি তাঁর বান্দা যাকারিয়্যার প্রতি করেছিলেন।

(3) যখন সে তার রবকে গোপনে ডেকেছিল।

(4) সে বলেছিল: ‘হে আমার রব! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে এবং (বার্ধক্যবশত) আমার মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে। হে আমার রব! আপনার নিকট দু‘আ করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।’

(5) ‘আর আমি আমার (মৃত্যুর) পরে আত্মীয়-স্বজনদের সম্পর্কে (দুনিয়াদারীতে নিমগ্ন থাকার) আশঙ্কাবোধ করছি। এদিকে আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী (পুত্র সন্তান) দান করুন।’

(6) ‘যে আমার (নবুওয়াতের) উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকূবের বংশের উত্তরাধিকারী হবে। হে আমার রব! আপনি তাকে (ধর্ম, চরিত্র ও জ্ঞানে) পছন্দনীয় বানিয়ে দিন।’

(7) (প্রার্থনার সাড়া দিয়ে আল্লাহ তাঁকে বললেন:) ‘হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম ইয়াহইয়া। আমি ইতঃপূর্বে এ নামে অন্য কারো নাম রাখিনি।’

(8) সে (যাকারিয়্যা) বললো: ‘হে আমার রব! আমার কীভাবে পুত্র সন্তান হবে; অথচ আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা, আর আমিও তো বার্ধক্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি।’

(9) সে (সংবাদদাতা ফিরিশতা) বললো: ‘এভাবেই হবে।’ তোমার রব বলেছেন: ‘এটা (বন্ধ্যা মা এবং বৃদ্ধ পিতা থেকে কাউকে সৃষ্টি করা) আমার জন্য খুবই সহজ। আমি তো ইতঃপূর্বে তোমাকে সৃষ্টি করেছি, তখন তুমি কিছুই ছিলে না।’

(10) সে বললো: ‘হে আমার রব! আমার জন্য (সুসংবাদ লাভের) একটি নিদর্শন ঠিক করে দিন।’ তিনি বললেন: ‘তোমার জন্য এটাই নিদর্শন যে, তুমি সুস্থ থেকেও তিনদিন কারো সাথে কথা বলবে না।’

(11) অতঃপর সে মিহরাব(১) হতে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে আসলো এবং ইশারায় তাদেরকে বললো যে, ‘তোমরা সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ কর।’

(12) (পরিণত বয়সে উপনীত হলে আল্লাহ তাকে সম্বোধন করে বললেন:) ‘হে ইয়াহইয়া! তুমি কিতাবটিকে (তাওরাতকে) দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো।’ আমি তাকে শৈশবেই প্রজ্ঞা ও জ্ঞান(১) দান করেছি।

(13) আর আমি তাকে নিজ পক্ষ থেকে (দয়াপরবশ হয়ে) স্নেহ-মমতা ও পবিত্রতা দান করেছি। আর সে ছিল, (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানা সত্যিকারেরই) মুত্তাকী।

(14) আর সে ছিল তার পিতামাতার সাথে সদাচারী। আর সে (তার রব ও পিতামাতার প্রতি) উদ্ধত, অবাধ্য ছিল না।

(15) আর তার ওপর (আল্লাহর পক্ষ থেকে) শান্তি ও নিরাপত্তা, যেদিন সে জন্ম লাভ করেছিল, যেদিন সে মারা যাবে এবং যেদিন তাকে জীবিত অবস্থায় উঠানো হবে।

(16) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো এই কিতাবে (আলকুরআনে) মারইয়ামের কথা, যখন সে তার পরিবারবর্গ থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব দিকের কোনো এক (নির্জন) স্থানে চলে গেলো।

(17) অতঃপর সে তাদের (সম্প্রদায়ের) নিকট থেকে (নিজেকে) আড়াল করলো। তখন আমি তার নিকট আমার রূহ জিবরীলকে প্রেরণ করলাম। অতঃপর সে তার সামনে পরিপূর্ণ মানুষের আকৃতি ধারণ করলো।(১)

(18) মারইয়াম বললো: ‘আমি তোমার থেকে পরম করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি; যদি তুমি মুত্তাকী হও।’

(19) জিবরীল বললো: ‘ (ভয় পেয়ো না ) আমি তো কেবল তোমার রবের বার্তাবাহক, তোমাকে একজন পবিত্র পুত্র সন্তান দান করার জন্য এসেছি।’

(20) মারইয়াম বললো: ‘কীভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে? অথচ কোনো (পুরুষ) মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। আর আমি তো ব্যভিচারিণীও নই।’

(21) সে (জিবরীল) বললো: ‘এভাবেই হবে।’ তোমার রব বলেছেন: ‘এটা (পিতা ছাড়া সন্তান জন্ম দেয়া) আমার জন্য খুবই সহজ। আর যেন আমি তাকে করে দেই মানুষের জন্য নিদর্শন(১) এবং আমার পক্ষ থেকে রহমত। আর এটি (এ সন্তানের জন্ম) একটি সিদ্ধান্তকৃত বিষয়। (সুতরাং , এটির আর পরিবর্তন হবে না ।)

(22) তারপর (ফিরিশতার ফুঁয়ের পর) সে তাকে (‘ঈসাকে) গর্ভে ধারণ করলো এবং তাকে নিয়ে দূরবর্তী একটি স্থানে(১) চলে গেলো।

(23) অতঃপর (গর্ভধারণের সময় পূর্ণ হবার পর) প্রসব বেদনা তাকে একটি খেজুর গাছের গোড়ায় আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। (প্রসবের যাতনা ও লোকলজ্জার ভয়ে আর্তনাদ করে) সে বললো: ‘হায়! এর আগেই যদি আমি মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ হারিয়ে যেতাম।(১)

(24) তখন তার নিচ থেকে সে(১) তাকে ডেকে বললো যে, ‘তুমি চিন্তা করো না। তোমার রব তোমার নিচে একটি ঝরনা সৃষ্টি করেছেন।’

(25) ‘আর (খাবারের প্রয়োজন হলে ) তুমি খেজুর গাছের কাণ্ড ধরে তোমার দিকে নাড়া দাও, তাহলে তা তোমার ওপর তাজা-পাকা খেজুর দান করবে।’

(26) ‘অতঃপর তুমি (তাজা খেজুর) খাও, (পানি) পান করো এবং (নিজ সন্তানকে দেখে) চোখ জুড়াও। আর যদি তুমি কোনো লোককে দেখতে পাও তাহলে বলে দিও, ‘আমি পরম করুণাময়ের জন্য চুপ থাকার মানত করেছি। অতএব আজ আমি কোনো মানুষের সাথে কিছুতেই কথা বলবো না।’

(27) তারপর মারইয়াম তাকে (সন্তান ‘ঈসাকে) কোলে নিয়ে নিজ জাতির নিকট আসলো। তারা বললো: ‘হে মারইয়াম! তুমি তো একটি জঘন্য পাপের কাজ করে ফেলেছো!’(১)

(28) ‘হে হারূনের বোন!(১) (এমন একটা ঘটনা তুমি কিভাবে ঘটালে?) তোমার পিতা তো খারাপ লোক ছিলো না। আর তোমার মা-ও ব্যভিচারিণী ছিল না।’

(29) তখন মারইয়াম শিশুটির দিকে ইশারা করলো। তারা (আশ্চর্য হয়ে) বললো: ‘আমরা কীভাবে একটি কোলের শিশুর সাথে কথা বলবো?’

(30) শিশুটি বললো: ‘নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব (ইন্জীল) দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন।’

(31) ‘আর আমি যেখানেই থাকি না কেনো তিনি আমাকে (তাঁর বান্দাদের জন্য) বরকতময় করেছেন এবং যতদিন আমি জীবিত থাকি তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায় করতে আদেশ করেছেন।’

(32) ‘আর তিনি আমাকে মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে (আমার রবের আনুগত্যের ব্যাপারে) অহংকারী, অবাধ্য বানাননি।’

(33) ‘আর আমার ওপর শান্তি ও নিরাপত্তা, যেদিন আমি জন্মেছি এবং যেদিন আমি মারা যাবো আর যেদিন (কিয়ামতের দিনে) আমাকে জীবিত অবস্থায় উঠানো হবে।’(১)

(34) এই(১) হচ্ছে মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা। এটিই হলো তাঁর ব্যাপারে চূড়ান্ত সত্য কথা, যে বিষয়ে লোকেরা সন্দেহ পোষণ করছে।

(35) সন্তান গ্রহণ করা তো আল্লাহর কাজ নয়। তিনি পবিত্র মহান। তিনি যখন কোন কিছু করতে চান তখন তদুদ্দেশ্যে শুধু বলেন: ‘হও’, অমনি তা হয়ে যায়।(১)

(36) আর নিশ্চয় আল্লাহ আমার রব এবং তোমাদেরও রব। সুতরাং তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদাত করো। এটাই সরল-সঠিক পথ।

(37) অতঃপর (‘ঈসার ব্যাপারটিকে নিয়ে) তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন দল মতভেদ করল।(১) কাজেই মহাদিবস (কিয়ামত) প্রত্যক্ষকালে কাফিরদের ধ্বংস অনিবার্য।

(38) যেদিন তারা আমার কাছে আসবে, সেদিন তারা কতই না স্পষ্টভাবে শুনতে পাবে এবং দেখতে পাবে! কিন্তু যালিমরা আজ স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে রয়েছে।

(39) আর (হে রাসূল! তুমি) মানুষদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপ দিবস সম্পর্কে, যখন সব বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে; অথচ তারা (দুনিয়ার জীবনে সে ব্যাপারে) রয়েছে উদাসীনতায় বিভোর এবং তারা ঈমান আনছে না।

(40) নিশ্চয় আমি জমিন ও এর ওপরে যারা আছে, তাদের সবাইর চূড়ান্ত মালিক হবো এবং (কিয়ামতের দিন হিসাব ও প্রতিদানের জন্য) আমারই নিকট তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।

(41) আর (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ করো এই কিতাবে (আলকুরআনে উল্লিখিত ) ইবরাহীমের কথা। নিশ্চয় সে ছিলো পরম সত্যবাদী, নবী।

(42) যখন সে তার পিতা (আযর)কে বললো: ‘হে আমার পিতা! তুমি কেনো (আল্লাহকে বাদ দিয়ে) তার ইবাদাত করো, যে (ডাকলে) না শুনতে পায়, না দেখতে পায় এবং না তোমার কোনো উপকারে আসতে পারে?’

(43) ‘হে আমার পিতা! আমার কাছে (ওয়াহীর মাধ্যমে) এমন জ্ঞান এসেছে, যা তোমার কাছে আসেনি। সুতরাং তুমি আমার অনুসরণ করো, তাহলে আমি তোমাকে সঠিক পথ দেখাবো।’

(44) ‘হে আমার পিতা! তুমি শয়তানের ইবাদাত করো না। নিশ্চয় শয়তান হলো পরম করুণাময়ের অবাধ্য।’

(45) ‘হে আমার পিতা! আমি আশংকা করছি যে, পরম করুণাময়ের (পক্ষ থেকে) তোমাকে শাস্তি স্পর্শ করবে (যদি কুফরীর ওপর মারা যাও), ফলে তুমি শয়তানের সঙ্গী হয়ে যাবে।’

(46) সে (আযর তার ছেলেকে) বললো: ‘হে ইবরাহীম! তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে বিমুখ? যদি তুমি (আমার মূর্তিগুলোকে গালি দেয়া থেকে) বিরত না হও, তবে অবশ্যই আমি তোমাকে পাথর মেরে হত্যা করব। আর তুমি চিরতরে আমাকে ছেড়ে চলে যাও।’

(47) (ইবরাহীম তার পিতাকে) বললো: ‘তোমার প্রতি সালাম। আমি আমার রবের কাছে তোমার জন্য ক্ষমা (ও হিদায়াত) চাইব।(১) নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি বড়ই অনুগ্রহশীল।’

(48) ‘আর (শুনে রেখো ) আমি তোমাদেরকে এবং তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করো সেসব মা’বূদদেরকে পরিত্যাগ করছি। আর আমি আমার একক রবকে ডাকছি (তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করি না)। আশা করি আমি আমার রবকে ডেকে দুর্ভাগা হবো না।’

(49) অতঃপর যখন ইবরাহীম তাদেরকে এবং আল্লাহ ছাড়া যাদের তারা যেগুলোর ইবাদাত করত, তাদের সবাইকে পরিত্যাগ করলো, তখন আমি তাকে (নিজ পরিবার হারানোর বিকল্প হিসেবে) ইসহাক ও ইয়া‘কূবকে দান করলাম এবং তাদের প্রত্যেককে নবীও করলাম।

(50) আর আমি তাদেরকে (নবুওয়াতের পাশাপাশি) আমার অনুগ্রহ দান করলাম। আর আমি (আমার বান্দাদের মুখে মুখে) তাদের সুনাম সুখ্যাতিকে সমুচ্চ করলাম।

(51) আর (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ করো এই কিতাবে (আলকুরআনে) উল্লেখিত মূসাকে। অবশ্যই সে ছিল বিশেষভাবে মনোনীত এবং সে ছিল রাসূল ও নবী।

(52) আমি তাকে তূর পাহাড়ের ডান দিক থেকে ডেকেছিলাম এবং অন্তরঙ্গ আলাপের উদ্দেশ্যে তাকে নৈকট্য দান করেছিলাম।

(53) আর আমি স্বীয় অনুগ্রহে তার জন্য তার ভাই হারূনকে নবীরূপে দান করলাম।

(54) আর (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ করো এই কিতাবে (আলকুরআনে) ইসমা‘ঈলকে। সে ছিলো সত্যিকারের ওয়াদা পালনকারী এবং সে ছিলো রাসূল ও নবী।

(55) আর সে তার পরিবার পরিজনকে সালাত কায়িম ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিতো এবং সে ছিল তার রবের সন্তোষভাজন।

(56) আর (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ করো এই কিতাবে (আলকুরআনে) ইদরীসকে। সে ছিলো পরম সত্যনিষ্ঠ নবী।

(57) আর আমি তাকে (নবুওয়াত দিয়ে) উচ্চ মর্যাদায় সমুন্নত করেছিলাম।

(58) বস্তুত, এরাই ঐসব নবী-রাসূল, আদম সন্তানের মধ্য থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং যাদের আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম। আর ইবরাহীম ও ইসরা‘ঈলের বংশোদ্ভূত এবং যাদেরকে আমি (ইসলামের প্রতি) পথপ্রদর্শন করেছিলাম ও (নবী হিসেবে) মনোনীত করেছিলাম। যখন তাদের কাছে পরম করুণাময়ের আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো, তারা (আল্লাহর ভয়ে) কাঁদতে কাঁদতে সাজদায় লুটিয়ে পড়তো।

(59) তাদের (এসব মনোনীত নবীদের) পরে আসলো এমন এক অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করলো এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করলো। সুতরাং শীঘ্রই তারা জাহান্নামে অনিষ্ট ও ব্যর্থতার সাক্ষাৎ পাবে(১)

(60) তবে তারা নয়, যারা (ত্রুটি ও অপকর্ম থেকে) তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে। তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোনো যুলম করা হবে না।

(61) সেগুলো চিরস্থায়ী জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি পরম করুণাময় তাঁর বান্দাদের গায়িবের সাথে দিয়েছেন। নিশ্চয় তাঁর ওয়াদাকৃত বিষয় অবশ্যম্ভাবী।

(62) তারা সেখানে ‘সালাম’ (শান্তি) ছাড়া কোনো অর্থহীন ও অশ্লীল কথা শুনবে না এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় তাদের জন্য থাকবে তাদের রিযক।

(63) সেই জান্নাত, আমি যার উত্তরাধিকারী বানাব আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যারা মুত্তাকী।

(64) (হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদকে বলে দাও:) ‘আর আমরা আপনার রবের নির্দেশ ছাড়া (জমিনে) অবতরণ করি না। আমাদের সামনে (আখিরাতে) যা কিছু আছে, আর যা আছে আমাদের পিছনে (দুনিয়াতে) এবং যা রয়েছে এতদুভয়ের মধ্যে, সব তাঁরই মালিকানাধীন। আর (হে রাসূল!) তোমার রব ভুলে যান না।

(65) আসমানসমূহ, জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে, এর প্রতিটি জিনিসেরই তিনি রব । সুতরাং তুমি তাঁর ইবাদাত করো এবং তাঁরই ইবাদাতে অটল থাকো। তুমি কি (ইবাদাতের ক্ষেত্রে) তাঁর সমগুণ সম্পন্ন কাউকে জানো?

(66) আর (পুনরুত্থান অস্বীকারকারী কাফির) মানুষ বলে: ‘আমার মৃত্যু হলে অচিরেই আমাকে (কবর থেকে) কি জীবিত অবস্থায় উত্থিত করা হবে !’(১)

(67) (পুনরুত্থান অস্বীকারকারী এ) মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাকে ইতঃপূর্বে সৃষ্টি করেছি; অথচ সে কিছুই ছিল না?(১)

(68) অতএব (হে রাসূল!) তোমার রবের শপথ ! আমি অবশ্যই তাদেরকে ও শয়তানদেরকে (কবর থেকে হাশরের ময়দানে) সমবেত করবোই, অতঃপর জাহান্নামের চারপাশে লাঞ্ছিত ও নতজানু অবস্থায় তাদেরকে হাজির করবোই।

(69) তারপর আমি প্রত্যেক (পথভ্রষ্ট) দল থেকে, পরম করুণাময়ের প্রতি সর্বাধিক অবাধ্যকে টেনে বের করবোই।

(70) উপরন্তু আমিই সর্বাধিক ভালো জানি তাদের সম্পর্কে, যারা জাহান্নামে প্রবেশের এবং দগ্ধীভূত হওয়ার অধিক উপযুক্ত।

(71) আর (হে মানুষ!) তোমাদের প্রত্যেককেই তা (জাহান্নামের ওপর স্থাপিত পুলসিরাত) অতিক্রম করতে হবে। এটি তোমার রবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

(72) তারপর আমি এদেরকে মুক্তি দিব, যারা (তাদের রবের আদেশ ও নিষেধ মেনে) তাকওয়া অবলম্বন করেছে। আর যালিমদেরকে আমি সেখানে রেখে দিব, নতজানু অবস্থায়।

(73) আর যখন তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টরূপে তিলাওয়াত করা হয়, তখন কাফিররা ঈমানদারদেরকে বলে:(আমাদের )দুই দলের মধ্যে কোনটি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর এবং মজলিস হিসেবে উত্তম?’

(74) আর (তারা কেন ভুলে যায় যে,) পূর্বে আমি তাদের (অহংকারী এ কাফিরদের) কত প্রজন্ম ধ্বংস করে দিয়েছি, যারা সম্পদের ও বাহ্যদৃষ্টিতে (উন্নত পোশাক ও সুঠাম দেহের জন্যে) তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিল!

(75) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলে দাও: ‘যে পথভ্রষ্টতায় রয়েছে, তাকে পরম করুণাময় প্রচুর অবকাশ দিবেন(১); যতক্ষণ না যে বিষয়ে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা তারা প্রত্যক্ষ করবে, চাই তা শাস্তি হোক অথবা কিয়ামত। তখন তারা জানতে পারবে কে মর্যাদায় নিকৃষ্ট ও দলবলে দুর্বল।(২)

(76) আর যারা হিদায়াতের পথে চলে, আল্লাহ তাদের হিদায়াত বাড়িয়ে দিবেন। আর স্থায়ী সৎকর্মসমূহ তোমার রবের কাছে পুরস্কার প্রাপ্তির দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ এবং পরিণতি হিসেবেও অতি উত্তম।

(77) (হে রাসূল!) তুমি কি সেই ব্যক্তিকে দেখেছ, যে আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে এবং বলে:(আমি মরে গেলে আমাকে পুনরুত্থান করা হলেও) আমাকে অবশ্যই প্রচুর ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হবে?’

(78) (এমন কথা যে বলে ) সে কি গায়িব সম্পর্কে অবহিত হয়েছে, নাকি পরম করুণাময়ের কাছ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে?(১)

(79) ব্যাপারটি কখনোই সে রকম নয় (যা তারা ধারণা করছে), সে যা বলে আমি তা লিখে রাখব এবং তার শাস্তির মাত্রা বাড়াতেই থাকব।

(80) আর সে যে বিষয়ে কথা বলে, তা আমার অধিকারে থাকবে(১) এবং (কিয়ামতের দিন) আমার কাছে সে একাকী আসবে।

(81) আর তারা (মুশরিকরা) আল্লাহ ছাড়া নিজেদের জন্যে বহু ‘ইলাহ’ গ্রহণ করেছে, যাতে ওরা তাদের সাহায্যকারী হতে পারে।

(82) ব্যাপারটি কখনোই সে রকম নয় (যা তারা ধারণা করছে), এরা (ভ্রান্ত মা‘বূদরা) তাদের ইবাদাতের কথা অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী শত্রু হয়ে যাবে।

(83) (হে রাসূল!) তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আমি কাফিরদের জন্য শয়তানদেরকে ছেড়ে দিয়েছি; ওরা তাদেরকে (গুনাহের কাজে এবং আল্লাহর দ্বীন থেকে সরিয়ে নেয়ার কাজে) বিশেষভাবে প্ররোচিত করে।

(84) সুতরাং (হে রাসূল!) তুমি তাদের (ধ্বংসের) ব্যাপারে তাড়াহুড়া করো না; আমি তো কেবল তাদের জন্য নির্ধারিত কাল গণনা করছি।

(85) (সে দিনটি অবশ্যই আসবে ) যেদিন আমি পরম করুণাময়ের নিকট মুত্তাকীদেরকে সম্মানিত মেহমানরূপে সমবেত করবো।

(86) আর অপরাধীদেরকে (কাফিরদেরকে) তৃষ্ণার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবো।

(87) যারা পরম করুণাময়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছে, তারা ছাড়া অন্য কেউ সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখবে না।(১)

(88) আর তারা (ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান ও কিছু মুশরিকরা) বলে: ‘পরম করুণাময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’

(89) অবশ্যই তোমরা এক জঘন্য বিষয়ের অবতারণা করেছ।

(90) এতে (এ জঘন্যতম কথার কারণে) আসমানসমূহ ফেটে পড়ার, জমিন বিদীর্ণ হওয়ার এবং পাহাড়সমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হবে।

(91) কারণ তারা পরম করুণাময়ের সন্তান আছে বলে দাবি করে।(১)

(92) অথচ সন্তান গ্রহণ করা পরম করুণাময়ের জন্য শোভনীয় নয়।

(93) আসমানসমূহ ও জমিনে এমন কেউ নেই, যে বান্দা হিসেবে পরম করুণাময়ের কাছে উপস্থিত হবে না।

(94) তিনি তাদের সংখ্যা জানেন এবং তাদেরকে যথাযথভাবে গণনা করে রেখেছেন।(১)

(95) আর তাদের সবাই কিয়ামতের দিন একাকী অবস্থায় তাঁর নিকট আসবে (উপস্থিত হবে )

(96) নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, পরম করুণাময় অবশ্যই (বান্দাদের হৃদয়ে) তাদের জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন।(১)

(97) আর (হে রাসূল!) আমি তো তোমার ভাষায় আলকুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি এর দ্বারা মুত্তাকীদেরকে (জান্নাতের) সুসংবাদ দিতে পারো এবং কলহপ্রিয় জাতিকে তদ্বারা (জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করে) সতর্ক করতে পারো।

(98) আর আমি তাদের পূর্বে কত সম্প্রদায়কেই তো ধ্বংস করে দিয়েছি! তুমি কি তাদের কারো অস্তিত্ব অনুভব করতে পার, কিংবা শুনতে পাও তাদের কোনো ক্ষীণ আওয়াজ?