67 - Al-Mulk ()

|

(1) বরকতময় ও মহিমান্বিত সেই সত্ত্বা (আল্লাহ), যাঁর হাতে রয়েছে সর্বময় কর্তৃত্ব ও রাজত্ব। আর তিনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।

(2) যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম? আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।

(3) যিনি সাত আসমান (একটির ওপর অপরটি রেখে) স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোনো অসামঞ্জস্যতা (খুঁত) দেখতে পাবে না। তুমি আবার দৃষ্টি ফেরাও, কোনো ত্রুটি (ফাটল) দেখতে পাও কি?

(4) অতঃপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফেরাও, সেই দৃষ্টি লাঞ্ছিত ও ক্লান্ত হয়ে (আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনরূপ দোষ-ত্রুটি দেখা ব্যতিরেকে) তোমার দিকেই ফিরে আসবে ।

(5) আমি (পৃথিবীর) নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপমালা (নক্ষত্ররাজি) দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি।(১) আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি, জ্বলন্ত আগুনের আযাব।

(6) আর যারা তাদের রবের সাথে কুফরী করেছে, (কিয়ামত দিবসে) তাদের জন্য রয়েছে, জাহান্নামের শাস্তি। আর কতই না নিকৃষ্ট সেই প্রত্যাবর্তনস্থল!

(7) যখন তাদেরকে সেখানে (জাহান্নামে) নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা তার বিকট শব্দ শুনতে পাবে। আর তা (ফুটন্ত হাড়ির ন্যায়) উথলাতে থাকবে।

(8) প্রচণ্ড ক্রোধে তা (জাহান্নাম) ছিন্ন-ভিন্ন হওয়ার উপক্রম হবে। যখনই তাতে (কাফিরদের) কোনো দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তার প্রহরীরা (ফিরিশতাগণ) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবে: ‘(দুনিয়াতে) তোমাদের নিকট কি কোনো সতর্ককারী আসেনি?’

(9) তারা (কাফিররা) বলবে: ‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদের নিকট সতর্ককারী (রাসূল) এসেছিল। তখন আমরা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলাম: ‘আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা তো সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছ।’

(10) আর তারা (আফসোস করে) বলবে: ‘যদি আমরা (তাদের উপকারী কথাগুলো) শুনতাম অথবা (সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য) বুঝতাম, তাহলে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসীদের মধ্যে থাকতাম না।’

(11) অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। অতএব ধ্বংস জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসীদের জন্য।

(12) নিশ্চয় যারা তাদের রবকে না দেখেই ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে, (সেই রবের পক্ষ থেকে) ক্ষমা ও বড় প্রতিদান (জান্নাত)

(13) আর (হে মানুষ!) তোমরা তোমাদের কথা গোপন করো অথবা তা প্রকাশ করো, নিশ্চয় তিনি অন্তরসমূহে যা আছে, সে বিষয়ে সম্যক অবগত।

(14) (তোমাদের কি মনে হয়) যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি (গোপন বস্তুর খবর) জানেন না? অথচ তিনি অতি সূক্ষ্মদর্শী, পূর্ণ অবহিত।

(15) তিনিই তো তোমাদের (বসবাসের) জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তাঁর রিযক থেকে তোমরা আহার করো। আর তাঁর নিকটই (তোমাদের) পুনরুত্থান।

(16) আচ্ছা, তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছো যে, যিনি আসমানে আছেন, তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরসহ জমিনকে ধসিয়ে দেবেন না? পক্ষান্তরে আকস্মিকভাবে তা (জমিন) থর থর করে কাঁপতে থাকবে।

(17) নাকি তোমরা নিরাপদ হয়ে গেছো যে, যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের ওপর পাথর নিক্ষেপকারী ঝড়ো হাওয়া পাঠাবেন না ? তখন অচিরেই তোমরা জানতে পারবে, কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী।(১)

(18) আর অবশ্যই তাদের পূর্ববর্তীরাও (এভাবেই) অস্বীকার করেছিল। ফলে কেমন ছিল, আমার প্রত্যাখ্যান (এর শাস্তি)?

(19) তারা (এ সব মিথ্যারোপকারীরা) কি লক্ষ্য করে না তাদের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া পাখিদের প্রতি, যারা (উড়ার সময় কখনো) ডানা বিস্তার করে ও কখনো ডানা গুটিয়ে নেয়? পরম করুণাময় ছাড়া অন্য কেউ এদেরকে (মাটিতে পড়ে যাওয়া থেকে) স্থির রাখে না। নিশ্চয় তিনি সব কিছুর সম্যক দ্রষ্টা।

(20) (আল্লাহ যদি তোমাদেরকে শাস্তি দিতে চান) পরম করুণাময় ছাড়া তোমাদের কি আর কোন সৈন্য আছে, যারা তোমাদেরকে সাহায্য করবে? কাফিররা শুধু তো ধোঁকায় নিপতিত।

(21) অথবা এমন কে আছে, যে তোমাদেরকে রিযক দান করবে যদি আল্লাহ তাঁর রিযক বন্ধ করে দেন? বরং কাফিররা অহংকার ও সত্য বিমুখতায় অবিচল রয়েছে।

(22) যে ব্যক্তি (মুশরিক অবস্থায়) উপুড় হয়ে মুখের ওপর ভর দিয়ে চলে সে কি অধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত নাকি সেই (মু’মিন) ব্যক্তি যে সোজা হয়ে সরল পথে চলে?

(23) (হে রাসূল! এসব মিথ্যারোপকারী মুশরিককে) বলো: ‘তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তরসমূহ দিয়েছেন। তোমরা খুব অল্পই (আল্লাহর নি‘আমতের) শুকরিয়া আদায় করো।

(24) (হে রাসূল! এ সব মিথ্যারোপকারী মুশরিককে) বলো: ‘তিনিই তোমাদেরকে জমিনে সৃষ্টি করে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে (কিয়ামত দিবসে) সমবেত করা হবে।’

(25) আর তারা (পুনরুত্থান অস্বীকারকারীরা) বলে: যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে বলো, ‘সে অঙ্গীকার কখন বাস্তবায়িত হবে?

(26) (হে রাসূল!) বলো: ‘এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আল্লাহরই নিকট। আর আমি তো স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।’

(27) অতঃপর তারা যখন তা (কিয়ামত দিবস) আসন্ন দেখতে পাবে, তখন কাফিরদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে এবং তাদেরকে বলা হবে: ‘এটাই হলো তা, যা (সংঘটিত হওয়ার জন্যে) তোমরা দাবী করছিলে।’

(28) (হে রাসূল! এ সব মিথ্যারোপকারী মুশরিককে) বলো: ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি যদি আল্লাহ আমাকে এবং আমার সাথীদেরকে ধ্বংস করে দেন অথবা আমাদের প্রতি দয়া করেন, তাহলে কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে কে রক্ষা করবে?’

(29) (হে রাসূল! তুমি এ সব ‍মুশরিককে) বলো: ‘তিনিই পরম করুণাময়। আমরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল করেছি। কাজেই তোমরা অচিরেই জানতে পারবে, কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে?’

(30) (হে রাসূল! এ সব মুশরিককে) বলো: ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভে চলে যায়, তাহলে কে তোমাদেরকে বহমান পানি এনে দিবে?’