(1) হে তোমরা যারা মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি (আদম) থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকেই তার স্ত্রী (হাওয়া)কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে অসংখ্য নর-নারী (সৃষ্টি করে পৃথিবীতে) ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো যাঁর দোহাই দিয়ে তোমরা একে অপরের কাছে নিজ নিজ অধিকার দাবী করো এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।
(2) আর তোমরা ইয়াতীমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ দিয়ে দাও এবং ভালো সম্পদের সাথে খারাপ সম্পদ বদল করো না। আর তোমরা তোমাদের সম্পদের সাথে তাদের (ইয়াতীমদের) সম্পদ মিশিয়ে গ্রাস করো না; নিশ্চয় এটা মহাপাপ (কবীরা গুনাহ)।
(3) আর যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, ইয়াতীম মেয়েদের ব্যাপারে ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে তোমরা (ইয়াতীম মেয়ে ব্যতীত অন্য মেয়েদেরকে) বিয়ে করো নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে; দু’টি, তিনটি অথবা চারটি। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তবে একটি বিবাহ করো অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ করো। এটা অধিকতর নিকটবর্তী যে, তোমরা যুলম করবে না (এবং সত্যভ্রষ্টও হবে না)।
(4) আর তোমরা স্ত্রীদেরকে (বাধ্যতামূলকভাবে) সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও। তবে তারা যদি নিজেরাই সন্তুষ্টচিত্তে (মোহরানার) কিছু অংশ ছাড় দেয় (মাফ করে দেয়), তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও।
(5) আর (হে অভিভাবকরা!) তোমরা নির্বোধদের(১) হাতে তোমাদের ধন-সম্পদ ছেড়ে দিও না; যা দ্বারা আল্লাহ তোমাদের জীবন চালানোর ব্যবস্থা করেছেন এবং তা থেকে তাদেরকে খাবার ও ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করো। আর তোমরা তাদের সাথে উত্তম কথা বলো(২)।
(6) আর (হে অভিভাবকরা) ইয়াতিমদেরকে যাচাই-পরীক্ষা করতে থাকো; যে পর্যন্ত না তারা বিবাহযোগ্য (সাবালক) হয়(১)। অতঃপর তাদের মধ্যে ভালো-মন্দ যাচাই করার যোগ্যতা দেখতে পেলে তাদের (পুরোপুরি) সম্পদ তাদেরকে ফিরিয়ে দাও। তারা বড় হয়ে (তাদের সম্পদ ফেরত নিবে এ ভয়ে) তাদের সম্পদ অপচয় করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না। যে (ইয়াতীমের তত্ত্বাবধায়ক) সম্পদশালী সে যেন (ইয়াতীমের সম্পদ থেকে তত্ত্বাবধানের খরচ নেওয়া থেকে) বিরত থাকে এবং যে অভাবী সে যেন সংগত পরিমাণে ভোগ করে। অতঃপর তোমরা যখন তাদেরকে তাদের সম্পদ হস্তান্তর করবে, তখন সাক্ষী রেখো। আর হিসেব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট।
(7) পিতা-মাতা এবং নিকটাত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষ ওয়ারিশদের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারী ওয়ারিশদেরও অংশ আছে; সেটা অল্পই হোক কিংবা বেশি(১)। (উভয়ের প্রাপ্য আল্লাহর পক্ষ থেকে) নির্ধারিত ও বিধিবদ্ধ।
(8) আর (মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশি) সম্পত্তি বন্টনকালে (যেসব আত্মীয়-স্বজন ওয়ারিশ নয় সেসব) আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম এবং অভাবগ্রস্ত লোক উপস্থিত থাকলে (সম্পদ বন্টনের আগেই) তাদেরকে তা থেকে কিছু সম্পদ দিয়ে দাও এবং তাদের সাথে উত্তমভাবে কথা বলো।
(9) আর তারা যেন এ কথা ভেবে ভয় করে যে, তারাও যদি অসহায় সন্তান রেখে মারা যেতো, তবে (মৃত্যুর সময়) তারা কতো যে উদ্বিগ্ন হতো! কাজেই তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে(১) এবং সংগত কথা বলে।
(10) নিশ্চয় যারা ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে(১), তারা তো আসলে তাদের পেটে আগুনই ভর্তি করছে। আর তারা অচিরেই জ্বলন্ত আগুনে জ্বলবে।
(11) আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের (উত্তরাধিকারের) ব্যাপারে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান; কিন্তু শুধু তারা (ওয়ারিশরা) যদি কন্যা সন্তান হয় এবং তারা যদি দুয়ের অধিক হয়, তবে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ পাবে। আর (মৃত ব্যক্তি যদি) একমাত্র কন্যা রেখে যায়, তবে সে (পরিত্যক্ত সম্পত্তির) অর্ধেক পাবে। (মৃত ব্যক্তির) সন্তান থাকলে তার পিতা-মাতা প্রত্যেকের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ; কিন্তু সে নিঃসন্তান হলে এবং পিতা-মাতাই উত্তরাধিকারী হলে তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ(১); তার ভাই-বোন থাকলে মাতার জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ(২)। এভাবে ওয়ারিশি সম্পদ বণ্টন করতে হবে মৃত ব্যক্তি যদি অসিয়ত করে যায় কিংবা কোন ঋণ রেখে যায়, তবে সেগুলো পরিশোধ করার পর। তোমরা জানো না যে, তোমাদের পিতামাতা ও সন্তানদের মধ্যে (দুনিয়া ও আখিরাতে) উপকারে কে তোমাদের বেশি নিকটবর্তী। (উত্তরাধিকার বণ্টনের) এ বিধান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
(12) (হে স্বামীরা) তোমাদের স্ত্রীরা যদি সন্তান না রেখে মারা যায়, তবে তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক তোমাদের জন্য। আর তাদের সন্তান থাকলে, তোমাদের জন্য তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ; (মৃত ব্যক্তি) যদি অসিয়ত করে যায় কিংবা কোন ঋণ রেখে যায়, তবে সেগুলো পরিশোধ করার পর। (হে স্বামীরা!) তোমরা নিঃসন্তান হলে, তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ স্ত্রীরা পাবে। আর তোমাদের সন্তান থাকলে, তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ তোমাদের স্ত্রীরা পাবে; তোমরা যা অসিয়াত করবে তা পালন করার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর। আর যদি কোনো পুরুষ অথবা নারীর ‘কালালাহ’ তথা পিতা-মাতা ও সন্তানহীন হলে, আর তার এক বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন থাকে, তবে তাদের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। তারা (ওয়ারিশ) এর চেয়ে বেশি হলে সবাই তিন ভাগের এক ভাগে সমান অংশীদার হবে; এটা অসিয়াত পালন এবং ঋণ পরিশোধের পর; কারো ক্ষতি না করে। (ওয়ারিশি সম্পত্তি বণ্টন বিষয়ে) এ হচ্ছে আল্লাহর বিধান। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, মহাধৈর্যশীল।
(13) (ওয়ারিশি সম্পদ বণ্টনের) এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। আর এটাই হলো মহাসাফল্য।
(14) আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধানাবলীর অবাধ্য হলে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করলে তিনি তাকে আগুনে (জাহান্নামে) নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে চিরকাল থাকবে এবং তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
(15) আর তোমাদের (বিবাহিতা কিংবা অবিবাহিতা) নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করেছে (বলে অভিযোগ উঠে) তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে (ন্যায়পরায়ণ) চারজন সাক্ষী উপস্থিত করাও। যদি তারা (চারজনই একই রকম) সাক্ষ্য দেয়, তবে তাদেরকে ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখবে; যতোদিন না তাদের মৃত্যু হয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোনো বিধান নাযিল করেন।(১)
(16) আর তোমাদের মধ্যে (বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত) যে দুজন ( নর-নারী) এতে (ব্যভিচারে) লিপ্ত হবে (প্রমাণিত হলে), তাদেরকে শাস্তি দাও। যদি তারা তাওবা করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, তবে তাদের (শাস্তি দেওয়া) থেকে বিরত থাকবে।(১) নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।
(17) আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকের তাওবা কবুল করবেন যারা অজ্ঞতাবশত(১) মন্দ কাজ করে এবং পরক্ষণেই ভীষণ অনুতপ্ত হয় এবং তাওবা করে। এরাই সেসব লোক, যাদের তাওবা আল্লাহ কবুল করেন। আর আল্লাহ তো সর্বজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
(18) তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে, ‘আমি এখন তাওবা করেছি’। আর সেসব লোকদের জন্যও তাওবা নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফির অবস্থায়। এরাই তারা যাদের জন্য আমি বেদনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।
(19) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! জবরদস্তি করে (সম্পদের ন্যায় তোমাদের বাপ-দাদার স্ত্রীদের) নারীদের ওয়ারিশ হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। (এমনিভাবে) তোমাদের জন্যে বৈধ নয় যে, তোমরা তাদেরকে (মোহরানার) যা দিয়েছ তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা। তবে তারা (অবাধ্যতা ও) ব্যভিচারের ন্যায় সুস্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়ে থাকলে, ভিন্ন কথা। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে ও সম্মানজনকভাবে জীবন যাপন করবে। তোমরা যদি তাদেরকে (স্ত্রীদেরকে) অপছন্দ করো, তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছো।
(20) আর (হে স্বামীরা!) তোমরা যদি (তালাক দিয়ে) এক স্ত্রীর জায়গায় অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা স্থির করো এবং (যাকে তালাক দিবে) তাকে যদি প্রচুর সম্পদ (মোহরানা) দিয়ে থাকো, তবুও তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না। তোমরা কি মিথ্যা অপবাদ এবং প্রকাশ্য পাপাচরণ দ্বারা তা গ্রহণ করবে?
(21) আর কীভাবে তোমরা তা (মোহরানাটুকু) ফেরত নিবে; অথচ তোমরা যখন একে অপরের সাথে একান্তে মিলিত হয়েছো(১) এবং তারা (স্ত্রীরা বিবাহের সময়) তোমাদের কাছ থেকে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়েছে?
(22) তোমরা তাদেরকে (ঐ সকল নারীদেরকে) বিয়ে করো না, যাদেরকে (কোন সময়) বিয়ে করেছিল তোমাদের পিতৃ পুরুষগণ। তবে (ইসলাম) পূর্বে যা সংঘটিত হয়েছে (সেটা ক্ষমা করা হলো)। নিশ্চয় তা ছিল অশ্লীল, মারাত্মক ঘৃণ্য ও চরম নিকৃষ্ট পন্থা।
(23) তোমাদের জন্যে (যেসব নারীদেরকে বিয়ে করা) হারাম করা হয়েছে, তারা হলোঃ তোমাদের মা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, দুধমা, দুধ-বোন, শাশুড়ি ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সহবাস করেছো তার আগের স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত মেয়ে, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে। তবে যদি তোমরা তাদের সাথে সহবাস না করে (তালাক দিয়ে থাকো) তবে পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত কন্যাকে বিয়ে করতে কোনো অপরাধ নেই। আর তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের ঔরসজাত ছেলের স্ত্রীদের (তালাকপ্রাপ্তা হলেও) এবং দুই বোনকে একত্র (বিয়ে) করা, তবে (ইসলাম পূর্ব জাহিলী যুগে) যা হয়েছে তা ছাড়া (আল্লাহ সেগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন)(১)। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(24) তাছাড়া নারীদের মধ্য থেকে অন্যের বিবাহিত সব নারীদেরকে তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে। তবে (আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে বন্দী করার মাধ্যমে) তোমরা যাদের মালিক হয়েছো সেসব দাসীগণ ব্যতীত। এটি তোমাদের ওপর আল্লাহর বিধান। উল্লিখিত নারীগণ ছাড়া অন্য সকল নারীকে নিজেদের অর্থ-সম্পদের (মোহরানার) বিনিময়ে বিয়ে করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে, (বিবাহ বহির্ভূত) অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদের যৌন স্বাদ আস্বাদন করেছো, তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহরানা দিয়ে দাও। আর মোহরানা নির্ধারণের পর তোমরা যদি কোন বিষয়ে (নির্ধারিত মোহরানার পরিমাণে কম-বেশি করতে) পরস্পর সম্মত হও, তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
(25) আর তোমাদের মধ্যে কারো (সম্পদের স্বল্পতার কারণে) স্বাধীন ঈমানদার নারীকে বিয়ের সামর্থ্য না থাকলে, তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত (অন্যের মালিকানাধীন) ঈমানদার দাসী বিয়ে করবে। আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত। মূলত তোমরা (ও দাসীগণ ধর্ম ও মনুষ্যত্বের বিবেচনায়) একে অপরের সমান। কাজেই তোমরা তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং তাদেরকে তাদের মোহরানা ন্যায়সংগতভাবে দিবে। তারা হবে সচ্চরিত্রা, ব্যভিচারিণী নয় ও উপপতি (ছেলে-বন্ধু) গ্রহণকারিণীও নয়। অতঃপর বিবাহিতা হওয়ার পর যদি তারা (দাসীরা) ব্যভিচার করে, তবে তাদের শাস্তি স্বাধীন নারীর অর্ধেক(১)। উক্ত (সতী মু’মিনা দাসীদেরকে বিবাহ করা জায়িয হওয়ার) বিধান তাদের জন্যে, তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে এবং স্বাধীন নারীদেরকে বিবাহে অক্ষম। আর তোমাদের জন্যে (দাসী বিয়ে করার চেয়ে) ধৈর্যধারণ করা উত্তম।(২) আর আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
(26) আল্লাহ তোমাদের কাছে (তাঁর দ্বীনের বিষয়াবলী ও শারী‘আতের হালাল-হারামের বিধানগুলো) বিশদভাবে বর্ণনা করতে চান। তিনি তোমাদের পূর্ববর্তীদের (নবীদের) রীতি-নীতি ও পথ তোমাদেরকে অবহিত করতে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে চান। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(27) আর আল্লাহ তোমাদের তাওবা কবুল ও তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে চান। আর যারা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা (ন্যায় ও সত্যের পথ থেকে) চরমভাবে বিচ্যুত হও।
(28) আল্লাহ (শারী‘আতের বিধানাবলীকে) তোমাদের ওপর হালকা ও সহজ করতে চান। কারণ, মানুষকে (গঠন ও স্বভাবগতভাবে)দুর্বলরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে ।
(29) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ, একে অপরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে(১) গ্রাস করো না; তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা করা বৈধ। আর নিজেদেরকে হত্যা করো না।(২) নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।
(30) আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন ও অন্যায়ভাবে তা (উক্ত নিষিদ্ধ কর্মগুলো) করবে, অবশ্যই আমি তাকে (কিয়ামত দিবসে জাহান্নামের) আগুনে নিক্ষেপ করবো। আর এসব কাজ করা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।
(31) (হে মুমিনরা!) তোমরা যদি সেসব কবীরা গুনাহ পরিহার করো, যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, তাহলে আমি তোমাদের (ছোট খাটো) গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবো এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবো।
(32) আর আল্লাহ যা কিছু (নি‘আমত) দিয়ে তোমাদেরকে একে অন্যের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, তোমরা তার লালসা (লোভ) করো না। পুরুষ যা অর্জন করে, তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে, তা তার প্রাপ্য অংশ। আর তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।
(33) পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তির জন্যে আমি উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করে দিয়েছি। আর যাদের সাথে তোমরা (কোনো কিছু দেয়ার ব্যাপারে) অঙ্গীকারাবদ্ধ তাদেরকে তাদের (উত্তরাধিকারের) অংশ দিয়ে দিবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বকিছুর সম্যক দ্রষ্টা।
(34) পুরুষরা নারীদের কর্তা (অভিভাবক ও দায়িত্বশীল)। কারণ আল্লাহ তাদের এককে (পুরুষকে) অপরের (মহিলার) উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এজন্যে যে, পুরুষেরা তাদের ধন-সম্পদ (নারীদের ভরণপোষণে) ব্যয় করে। কাজেই পুণ্যশীলা স্ত্রীরা হয়ে থাকে (স্বামীর) অনুগত এবং (স্বামীর অনুপস্থিতিতে) লোকচক্ষুর আড়ালে হিফাযতকারিনী সেসব বিষয়ের, (১) যা আল্লাহ হিফাযত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তোমরা যেসব স্ত্রীদের ব্যাপারে অবাধ্যতার আশঙ্কা করো, তাদেরকে (প্রথমে) সদুপদেশ দাও, তারপর (দ্বিতীয় পর্যায়ে) তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং (সর্বশেষে) তাদেরকে (আহত করা ছাড়া হালকাভাবে) প্রহার করো। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে (যুলম বা তিরস্কার করার) কোনো পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।
(35) আর তোমরা যদি তাদের (স্বামী-স্ত্রী) উভয়ের মধ্যে বিরোধ (বিচ্ছেদের) আশঙ্কা করো তাহলে তোমরা স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন (ন্যায়পরায়ণ) সালিশ নিযুক্ত করো। তারা (সালিশদ্বয়) উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের (স্বামী-স্ত্রীর) মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।
(36) আর তোমরা (পূর্ণ আনুগত্যসহ) এক আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, অনাত্মীয়- প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।
(37) (আল্লাহ তা‘আলা ওদেরকেও পছন্দ করেন না) যারা কৃপণতা করে এবং (কথায় ও কাজে অন্য) মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয়, আর গোপন করে তা, আল্লাহ যা নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে দিয়েছেন। আর আমি কাফিরদের জন্যে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।
(38) (তেমনিভাবে আমি লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি ওদের জন্য) যারা মানুষকে দেখানোর জন্য তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান আনে না। (আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন না।) আর শয়তান যার সাথী হয়, সাথী হিসেবে সে কতইনা নিকৃষ্ট !
(39) তারা (সত্যিকারার্থে) আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান আনলে এবং আল্লাহ তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করলে, তাদের এমন কী ক্ষতি হতো? (বরং এতেই রয়েছে প্রভূত কল্যাণ।) আর আল্লাহ তাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।
(40) নিশ্চয় আল্লাহ (কারো প্রতি) অণু পরিমাণও যুলম করেন না। আর কেউ একটি সৎকাজ করলে আল্লাহ সেটাকে (দয়া করে) বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন। (এমনকি তা বহুগুণে বৃদ্ধি করার পরেও) তিনি (তাকে) নিজের পক্ষ থেকে মহাপুরস্কার (জান্নাতও) প্রদান করবেন।
(41) অতএব, (হে রাসুল! কিয়ামতের দিন সম্পর্কে একটু ভেবে দেখো,) তখন কী অবস্থা হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে (তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে) একজন সাক্ষী হিসেবে (তাদের নবীকে) উপস্থিত করবো এবং তোমাকে উপস্থিত করবো তাদের (তোমার উম্মতের) ওপর সাক্ষীরূপে?
(42) যারা কুফরী করেছে এবং রাসূলের অবাধ্য হয়েছে তারা সেই (কিয়ামতের) দিন কামনা করবে, যদি জমিনকে তাদের সাথে (মিশিয়ে) সমান করে দেয়া হতো! আর (যত চেষ্টাই করুক সেদিন) তারা আল্লাহর কাছে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না।
(43) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না; যতক্ষণ না তোমরা যা বলো তা বুঝতে পারো।(১) অনুরূপ অপবিত্র অবস্থায়ও না (গোসল ফরয হলেও সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না); যতক্ষণ না তোমরা গোসল করো। তবে যদি তোমরা পথ অতিক্রমকারী (মুসাফির) হও (তবে ভিন্ন কথা।) আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা থেকে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রী সম্ভোগ করো, তবে যদি পানি না পাও, তাহলে পবিত্র মাটিতে তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসহ করো। নিশ্চয় আল্লাহ গুনাহ মার্জনাকারী,পরম ক্ষমাশীল।
(44) (হে রাসূল!) তুমি কি তাদেরকে (ইয়াহূদীদেরকে) দেখোনি যাদেরকে কিতাবের (তাওরাতের) এক অংশ দেয়া হয়েছিল? তারা (হিদায়েতের পরিবর্তে) ভ্রান্ত পথ ক্রয় করেছিলো। আর (হে মু’মিনগণ) তোমরাও যাতে পথভ্রষ্ট হও, এটাই তারা কামনা করে।
(45) আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের সম্পর্কে অধিক অবগত। আর অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহই যথেষ্ট।
(46) ইয়াহূদীদের মধ্যে কিছু (নিকৃষ্ট) লোক আছে যারা কথাগুলো (আল্লাহর নাযিলকৃত বাণীকে) স্থানচ্যুত করে (তার প্রকৃত অর্থকে) বিকৃত করে এবং বলে: ‘আমরা শুনলাম ও অমান্য করলাম’ এবং তুমি শোনো না শোনার মতো। আর নিজেদের জিহ্বা বাঁকা করে এবং দীনের প্রতি তাচ্ছিল্য করে বলে: ‘রাইনা’ (আমাদের রাখাল )। কিন্তু তারা যদি বলত: ‘আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম এবং আপনি শুনুন ও আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন’, তবে তা তাদের জন্য কল্যাণকর ও ইনসাফপূর্ণ হতো।(১) কিন্তু তাদের কুফরীর জন্য আল্লাহ তাদেরকে লা’নত করেছেন। ফলে তাদের অল্প সংখ্যকই ঈমান আনে।
(47) হে কিতাবপ্রাপ্তগণ (ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা), আমি (মুহাম্মাদ এর ওপর) যা নাযিল করেছি তার ওপর তোমরা ঈমান আনো, যা তোমাদের কাছে আছে (তাওরাত ও ইঞ্জীল) তার সত্যায়নকারী, সে সময় আসার আগে যখন আমি চেহারাসমূহকে বিকৃত করে তা তাদের পিঠের দিকে ফিরিয়ে দিবো অথবা তাদেরকে লা‘নত করার পূর্বে যেমনিভাবে লা‘নত করেছি শনিবার ওয়ালাদের(১)। আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়েই থাকে।
(48) নিশ্চয় আল্লাহ (সৃষ্টিকুলের কোন কিছুকে) তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না।(শিরক করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে) এছাড়া অন্যান্য অপরাধসমূহ যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন(১)। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।
(49) (হে নবী!) তুমি কি তাদেরকে দেখোনি, যারা নিজেরা নিজেদের কর্মের পরিশুদ্ধতার প্রশংসা করে? বরং একমাত্র আল্লাহই তাঁর বান্দাদের যাদেরকে চান, তাদের প্রশংসা করেন এবং তাদেরকে পবিত্র করেন। আর তাদেরকে সুতা (বিন্দু) পরিমাণও (১) যুলম করা হবে না।
(50) (হে রাসূল!) দেখো, কেমন করে তারা (নিজেদের ব্যাপারে প্রশংসার মাধ্যমে) আল্লাহর ওপর মিথ্যা রটনা করে। আর প্রকাশ্য গুনাহ হিসেবে (পথ ভ্রষ্টতার জন্যে) এটিই যথেষ্ট।
(51) তুমি কি তাদেরকে (ইয়াহূদীদেরকে) দেখোনি যাদেরকে (তাওরাত) কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছিল? তারা জিব্ত ও তাগূতে(১) বিশ্বাস করে। তারা (মক্কার) কাফিরদের সম্বন্ধে বলে: ‘এরা মু’মিনদের তুলনায় অধিক সঠিক পথপ্রাপ্ত।’
(52) এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ লা’নত করেছেন। আর আল্লাহ যাকে লা’নত করেন, তুমি কখনো তার জন্যে কোনো সাহায্যকারী পাবে না।
(53) তবে কি তাদের জন্য (আল্লাহর) সাম্রাজ্যে কোন অংশ আছে? তেমনটি হলে তারা মানুষকে একটি কানাকড়িও(১) দেবে না।
(54) অথবা আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে মানুষকে (মুহাম্মদ সা. ও তার সাথীদেরকে) যা দিয়েছেন সে জন্য কি তারা তাদেরকে হিংসা করে? তবে তাদের জেনে রাখা উচিত, আমি তো ইবরাহীমের বংশধরকেও কিতাব ও হিকমত দিয়েছিলাম এবং আমি তাদেরকে বিশাল রাজ্যও দান করেছিলাম।
(55) অতঃপর তাদের (আহলে কিতাবের) অনেকে এর প্রতি(১) ঈমান এনেছে এবং অনেকে এ থেকে বিরত থেকেছে। আর তাদের জন্যে দগ্ধকারী হিসেবে জাহান্নামই যথেষ্ট।
(56) নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করাবো। যখনই তাদের চামড়াগুলো পুড়ে যাবে তখনই তার স্থলে অন্য চামড়া বদলে দিবো, যাতে তারা শাস্তি আস্বাদন করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।
(57) আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে প্রবেশ করাবো জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র স্ত্রীগণ এবং তাদেরকে আমি প্রবেশ করাবো (চিরস্নিগ্ধ) ঘন ছায়ায়।
(58) নিশ্চয় আল্লাহ আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন। আর যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে কতই না উত্তম উপদেশ দিচ্ছেন! নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
(59) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের(১)। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো তাহলে তা (ফয়সালার জন্যে) আল্লাহ ও রাসূলের (কিতাব ও সুন্নাতের) নিকট উপস্থাপন করো- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখো। এটি উত্তম পন্থা এবং পরিণামেও উৎকৃষ্টতর।
(60) (হে নবী) তুমি কি তাদেরকে (ইয়াহূদীদের মধ্যকার মুনাফিকদের) দেখোনি যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তারা তাতে ঈমান এনেছে; কিন্তু তারা তাগূতের (মানব রচিত বিধানের) কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়। অথচ তাদের তাগূতকে প্রত্যাখ্যান করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর শয়তান তাদেরকে (সত্য পথ থেকে) দূরবর্তী বিভ্রান্তির দিকে নিতে চায়।
(61) তাদেরকে (মুনাফিকদেরকে) যখন বলা হয়, আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাবের দিকে এবং রাসূলের দিকে আসো (১), তখন মুনাফিকদেরকে তুমি তোমার কাছ থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখবে(২)।
(62) অতঃপর (মুনাফিকদের) কি অবস্থা হবে, যখন তাদের কৃতকর্মের (অর্থাৎ পাপসমূহের) কারণে তাদের ওপর কোন বিপদ আপতিত হবে? তখন তারা তোমার কাছে এসে আল্লাহর নামে শপথ করে (ওজর পেশ করে) বলবে: ‘আমরা কল্যাণ এবং সম্প্রীতি ছাড়া অন্য কিছুই চাইনি।’
(63) এরা তারাই (মুনাফিক), যাদের অন্তরে কি আছে আল্লাহ তা ভালো করেই জানেন। সুতরাং তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো এবং তাদেরকে সদুপদেশ দাও। আর তাদেরকে (আল্লাহর আশা ও ভয় দেখিয়ে) অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী কথা বলো।
(64) আর আমি যে কোন (জনপদে) রাসূল প্রেরণ করেছি তা কেবল এ জন্য, যেন আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর আনুগত্য করা হয়। আর তারা (মুনাফিকরা) যখন নিজেদের প্রতি (গুনাহর মাধ্যমে) যুলম করেছিল, তখন (গুনাহের স্বীকারোক্তি, লজ্জিত ও তাওবারত হয়ে) যদি তোমার কাছে আসত, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালুরূপে পেত।
(65) কিন্তু না (ব্যাপারটি এমন নয়, যা এ মুনাফিকরা ধারণা করেছে), অতএব তোমার রবের শপথ, তারা মু’মিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে (শর্তহীনভাবে) বিচারক নির্ধারণ করে; অতঃপর তোমার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের অন্তরে কোনো দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়।
(66) আর যদি আমি তাদেরকে আদেশ দিতাম যে, তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো বা নিজেদের গৃহ ত্যাগ করো, তাহলে তাদের অল্প সংখ্যকই তা করতো।(১) তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা তা করলে তাদের জন্যে ভালো হতো এবং তাদের ঈমানের স্থিরতায় সুদৃঢ় হতো।
(67) আর অবশ্যই তখন আমি তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে মহাপুরস্কার (জান্নাত) প্রদান করতাম।
(68) এবং অবশ্যই আমি তাদেরকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করতাম।
(69) আর যারা আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করবে তারা (কিয়ামতের দিন) তাদের সঙ্গী হবে যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন।(১) তাঁরা হলেনঃ নবী, সিদ্দীক (সত্যনিষ্ঠ), শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণগণ। আর সঙ্গী হিসেবে তারা কতোই না উত্তম!
(70) এগুলো (উপরোক্ত প্রতিদান লাভ করা) আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। সর্বজ্ঞানী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
(71) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমরা (নিজেদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সরঞ্জাম গ্রহণের মাধ্যমে) তোমাদের সতর্কতা গ্রহণ করো। অতঃপর (তোমাদের সুবিধা অনুযায়ী) ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে (জিহাদে) বের হও অথবা (প্রয়োজনে) সম্মিলিতভাবে বের হও।
(72) আর নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ (মুনাফিক ও দুর্বল ঈমানের) এমন আছে, যে (কাপুরুষতার কারণে জিহাদে বের হতে) গড়িমসি করবেই। সুতরাং তোমাদের কোন বিপদ (হত্যা কিংবা পরাজয়) আপতিত হলে সে বলবে, ‘আল্লাহ আমার ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে, আমি তাদের সাথে উপস্থিত ছিলাম না।’
(73) আর তোমাদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন অনুগ্রহ এসে পৌঁছলে, তখন তোমাদের ও তার মধ্যে যেন কোনো হৃদ্যতাই ছিল না এমন ভাব দেখিয়ে সে অবশ্যই বলবে: ‘হায়! যদি আমি তাদের সাথে থাকতাম, তবে আমিও বিরাট সাফল্য লাভ করতাম।’
(74) সুতরাং যারা আখিরাতের (সাফল্যের) বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে বিক্রয় করে, তারাই আল্লাহর পথে (তাঁর বাণীকে সুউচ্চ করতে) যুদ্ধ করুক। আর কেউ আল্লাহর পথে যুদ্ধ করলে সে নিহত (শহীদ) হোক বা বিজয়ী হোক, আমি তো তাকে অচিরেই মহাপুরস্কার (জান্নাত ও আমার সন্তুষ্টি) প্রদান করব।
(75) আর তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না; অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা ফরিয়াদ করে বলছে: ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে এ জনপদ (মক্কা) থেকে বের করে নিন, যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন(১)। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।(২)
(76) যারা ঈমান এনেছে, তারা (আল্লাহর বাণীকে সুউচ্চ করতে) আল্লাহর পথে লড়াই (জিহাদ) করে। আর যারা কাফির তারা তাগূতের (মূর্তিগুলো ও ভ্রান্ত উপাস্যগুলোর) পথে লড়াই করে। কাজেই তোমরা শয়তানের বন্ধুদের (কাফিরদের) বিরুদ্ধে লড়াই করো। অবশ্যই শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল।
(77) (হে রাসূল!) তুমি কি তাদেরকে দেখনি(১) যাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমরা তোমাদের হাতগুলো (যুদ্ধ থেকে) গুটিয়ে রাখো এবং সালাত কায়েম করো ও যাকাত প্রদান করো? (এটা যুদ্ধ ফরজ হওয়ার পূর্বের ঘটনা, তখন তারা যুদ্ধের জন্য অস্থির হয়ে পড়েছিলো) অতঃপর তাদের উপর যখন যুদ্ধ ফরয করা হলো, তখন তাদের একদল মানুষ (প্রতিপক্ষ)কে ভয় করছিলো আল্লাহকে ভয় করার অনুরূপ অথবা তার চেয়েও বেশি। আর তারা বলল: ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদের ওপর যুদ্ধ কেন ফরয করলেন? আমাদেরকে কেন আরো কিছুকালের অবকাশ দিলেন না’? (হে রাসূল!) বল: ‘দুনিয়ার ভোগ-বিলাস অতি সামান্য। আর যে তাকওয়া অবলম্বন করে তার জন্য আখিরাতই উত্তম। আর তোমাদের প্রতি সামান্য (সূতা) পরিমাণ যুলুমও করা হবে না।’
(78) তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করো। আর যদি তাদের (মুনাফিকদের) কাছে কোন কল্যাণ (যেমন সন্তান ও সম্পদ) পৌঁছে, তবে তারা বলে: ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ আর যদি কোন অকল্যাণ পৌঁছে, তখন বলে: ‘এটি তোমার কারণে।’ (হে রাসূল!) বল: ‘সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ সুতরাং এই জাতির কী হলো, তারা কোনো কথাই বুঝতে চায় না!
(79) (হে আদম সন্তান) তোমার (দীন ও দুনিয়ার) যা কিছু কল্যাণ হয়, তা আল্লাহর কাছ থেকে এবং তোমার যা কিছু অকল্যাণ হয়, তা তোমার নিজের (পাপের) কারণে। (হে নবী) আমি তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে পাঠিয়েছি; আর (তোমার সত্যতার ব্যাপারে) সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
(80) যে ব্যক্তি রাসূলের (আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁর) আনুগত্য করল, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে (তোমার আনুগত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিলো, তবে (তাতে তুমি চিন্তিত হয়ো না, কারণ) আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি।
(81) আর তারা (মুনাফিকরা) বলে: আমরা তোমার ‘আনুগত্য করি। অতঃপর যখন তারা তোমার কাছ থেকে চলে যায়, তখন তাদের একদল লোক তোমার নিকট যা বলে, রাতে তার বিপরীত (পরিকল্পনা) করে। আর আল্লাহ লিখে রাখেন, তারা রাতে যা (পরিকল্পনা) করে। সুতরাং তুমি তাদেরকে এড়িয়ে চলো এবং আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করো। কর্মবিধায়ক (অভিভাবক) হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
(82) তবে কি তারা কুরআন সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা করে না? যদি তা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট হতে আসত, তবে তারা এতে অনেক অসংগতি (বৈপরীত্য) পেতো।
(83) আর যখন তাদের (মুনাফিকদের) নিকট শান্তি কিংবা ভীতিজনক কোন সংবাদ আসে, (সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই) তখন তারা তা প্রচার করে বেড়ায়। আর যদি তারা সেটি রাসূলের কাছে এবং তাদের কর্তৃত্বের অধিকারীদের কাছে পৌঁছে দিত, তাহলে যারা তথ্য অনুসন্ধান (উদ্ভাবন) করে তারা সেটার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। আর যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত না থাকতো, তবে ( এ ধরনের প্রচারণার ফলে) অবশ্যই অল্প সংখ্যক লোক ছাড়া তোমরা অধিকাংশই শয়তানের (কুমন্ত্রণার) অনুসরণ করতে।
(84) অতএব (হে নবী) তুমি (আল্লাহর বাণীকে সুউচ্চ করতে) আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করো। তুমি শুধু তোমার (যুদ্ধের ব্যাপারে) নিজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তুমি মু’মিনদেরকে (যুদ্ধের ব্যাপারে) উদ্বুদ্ধ করো। আশা করা যায়, আল্লাহ অচিরেই (যুদ্ধের মাধ্যমে) কাফিরদের শক্তি প্রতিহত করবেন। আর আল্লাহ শক্তিতে প্রবলতর এবং শাস্তিদানে কঠোরতর।
(85) কেউ কোনো ভালো কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার (সাওয়াবের) অংশ থাকবে এবং কেউ কোনো মন্দ কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার (পাপের) অংশ থাকবে। আর আল্লাহ প্রতিটি বস্তুর উপর নজর রাখেন।
(86) আর যখন তোমাদেরকে (সালাম বা অন্য কিছুর মাধ্যমে) কোনো অভিবাদন করা হয় তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম অভিবাদন করবে অথবা সেটির অনুরূপ জবাব দিবে। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে পূর্ণ হিসাবকারী।
(87) তিনি আল্লাহ, যিনি ব্যতীত অন্য কোন প্রকৃত ইলাহ নেই। তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে (তোমাদের আমলের প্রতিদান দিতে) কিয়ামতের দিন একত্রিত করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। কথায় আল্লাহর চেয়ে বেশী সত্যবাদী আর কে হতে পারে?
(88) অতঃপর মুনাফিকদের ব্যাপারে তোমাদের কী হল যে, তোমরা দু’ দলে বিভক্ত হয়ে গেলে?(১) অথচ আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পূর্বাবস্থায় ( পথভ্রষ্টতায়) ফিরিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেছেন তোমরা কি তাকে হিদায়াতের পথে চালাতে চাও? আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনো তার জন্য (হিদায়েতের) পথ খুঁজে পাবে না।
(89) তারা (মুনাফিকরা) কামনা করে যে, তোমরা যেন কুফুরী করো, যেমন তারা কুফরী করেছে, যাতে তোমরা (কুফুরীর দিক থেকে) তাদের সমান হয়ে যাও। সুতরাং আল্লাহর পথে হিজরত না করা পর্যন্ত তোমরা তাদের মধ্য থেকে কাউকেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। অতএব, তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তাদেরকে যেখানে পাবে সেখানেই পাকড়াও করবে এবং হত্যা করবে। আর তাদের মধ্য থেকে কাউকেই বন্ধু ও সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করবে না।
(90) তবে তাদেরকে (হত্যা) করো না, যারা এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট পৌঁছে গেছে যাদের সাথে তোমরা (শান্তি ও সম্প্রীতির ব্যাপারে) চুক্তিবদ্ধ অথবা যারা তোমাদের কাছে এমন অবস্থায় আগমন করে যখন তাদের মন তোমাদের সাথে বা তাদের সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করতে সংকীর্ণ হয়ে গেছে।(১) আল্লাহ যদি চাইতেন তবে তাদেরকে তোমাদের ওপর ক্ষমতাবান করে দিতেন(২), ফলে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত। কাজেই তারা যদি তোমাদের কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়, তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের নিকট শান্তি প্রস্তাব করে, তবে (তোমরা তা গ্রহণ করো, কেননা) আল্লাহ তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা অবলম্বনের পথ রাখেন নি (৩)।
(91) (হে মু’মিনগণ) তোমরা অচিরেই (মুনাফিকদের) আরেকটি দল পাবে, যারা (তাদের নিরাপত্তার জন্য) তোমাদের ও তাদের সম্প্রদায়ের স্বার্থে শান্তি ও নিরাপত্তা চাইবে। (এদের বৈশিষ্ট্য হলো) যখনই তাদেরকে ফিতনার দিকে (আল্লাহর সাথে কুফরি ও শিরক করতে) ডাকা হবে, তখনই তারা তাতে লিপ্ত হবে। এরা যদি তোমাদের (সাথে যুদ্ধ করা) থেকে দূরে সরে না দাঁড়ায়, তোমাদের কাছে শান্তি ও সন্ধি প্রস্তাব না দেয় এবং নিজেদের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে না রাখে, তবে তাদেরকে যেখানেই পাবে পাকড়াও করবে ও হত্যা করবে। আর আমি তোমাদের জন্য এদের বিরুদ্ধাচারণের(১) সুস্পষ্ট প্রমাণ রেখেছি।
(92) কোন মু’মিনকে হত্যা করা কোন মুমিনের কাজ নয়। তবে ভুলবশত করে ফেললে সেটা স্বতন্ত্র। আর কেউ কোনো মু’মিনকে ভুলবশত হত্যা করলে তার কাফফারা হলো একজন মু’মিন দাস মুক্ত করা এবং নিহত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনকে রক্তপণ (দিয়াত) আদায় করা; তবে তারা যদি ক্ষমা করে দেয় (তাহলে রক্তপণ দিতে হবে না)। আর যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু পক্ষের লোক হয় এবং মু’মিন হয় তবে তার কাফফারা হলো এক মু’মিন দাস মুক্ত করা। আর যদি সে এমন সম্প্রদায়ভুক্ত হয় যাদের সাথে তোমরা সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ, তবে তার পরিবার-পরিজন উপযুক্ত রক্তপণ (দিয়াত) আদায় এবং একজন মু’মিন দাস মুক্ত করা কর্তব্য। আর যে ব্যক্তি তা পাবে না (মুক্ত করার জন্যে দাস অথবা মূল্য পরিশোধে অক্ষম, তার বিধান হচ্ছে) একাধারে দু মাস সিয়াম পালন করা। (এটাই হচ্ছে) আল্লাহর পক্ষ থেকে (এ অপরাধের) তাওবাহ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(93) আর যে ইচ্ছাকৃত কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে চিরস্থায়ী হবে। আর আল্লাহ তার ওপর ক্রোধান্বিত হবেন, তাকে লা‘নত করবেন (তাকে তাঁর রহমত থেকে বিতাড়িত করবেন) এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন।
(94) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! যখন তোমরা আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের জন্যে) বের হবে তখন যাচাই-বাছাই করে নিবে (কে তোমাদের বন্ধু, কে শত্রু)। আর কেউ তোমাদের নিকট ইসলামকে প্রকাশ করে, পার্থিব জীবনের স্বার্থ হাসিলের আশায় তাকে বলবে না যে, ‘তুমি মু’মিন নও’।(১) অথচ আল্লাহর কাছে রয়েছে প্রচুর গনীমত। তোমরাতো পূর্বে এর মতোই ছিলে।(২) অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন। সুতরাং (কাউকে হত্যার আগে) তোমরা যাচাই-বাছাই করবে। নিশ্চয় তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত।
(95) মু’মিনদের মধ্যে যারা ওযরগ্রস্ত নয়; অথচ ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে নিজের জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে তারা উভয়ে এক সমান নয়। যারা নিজের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে (জিহাদ না করে) ঘরে বসে থাকাদের ওপর অনেক মর্যাদা দিয়েছেন। আল্লাহ তাদের প্রত্যেকের জন্য যথোপযুক্ত প্রতিদানের (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বস্তুত যারা জিহাদ করে তাদেরকে আল্লাহ ঘরে বসে থাকাদের উপর মহা পুরস্কারের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।
(96) তাঁর (আল্লাহর) পক্ষ থেকে তাদের জন্যে রয়েছে অনেক মর্যাদা, ক্ষমা ও রহমত। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(97) যারা (হিজরত না করে কুফরি এলাকায় বসবাস করে) নিজেদের ওপর যুলম করে, তাদের প্রাণ গ্রহণের সময় ফিরিশতাগণ বলে: ‘তোমরা কী অবস্থায় ছিলে?’ তারা বলে: ‘দুনিয়ায় আমরা দুর্বল-অসহায় ছিলাম।’ ফিরিশতারা বলে: ‘(নিজেদের ধর্ম ও জীবনকে লাঞ্ছনা ও পরাধীনতা থেকে রক্ষা করতে) আল্লাহর জমিন কি এমন প্রশস্ত ছিল না, যেখানে তোমরা হিজরত করতে পারতে?’ এদের আবাসস্থল হলো জাহান্নাম। আর তা কতই না মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল!
(98) তবে সেসব দুর্বল-অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশু নয়, যারা কোনো উপায় অবলম্বনের সামর্থ্য রাখে না(১) এবং (যুলম থেকে নিষ্কৃতির ও হিজরতের) কোনো পথও খুঁজে পায় না।
(99) আল্লাহ (স্বীয় দয়া ও করুণায়) অচিরেই তাদেরকে ক্ষমা করবেন। কারণ আল্লাহ পাপ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।
(100) আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে, সে দুনিয়ায় বহু আশ্রয়স্থল এবং প্রাচুর্য (১) লাভ করবে। আর কেউ আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্যে নিজ ঘর থেকে হিজরতকারী হিসেবে বের হয়ে (পথিমধ্যে) তার মৃত্যু ঘটলে, তার প্রতিদান আল্লাহর ওপর অবধারিত হয়ে যায়। আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(101) আর যখন তোমরা জমিনে ভ্রমণে বের হও, তখন তোমাদের সালাত কসর (সংক্ষিপ্ত) (১) করাতে কোন দোষ নেই; যদি আশঙ্কা করো যে, কাফিররা (সালাতের সময় ) তোমাদেরকে ফিতনায় ফেলবে।(২) নিশ্চয় কাফিররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
(102) আর (হে নবী!) যখন তুমি তাদের (মুসলিম সৈন্যদের ) মধ্যে থাকবে, অতঃপর (যুদ্ধ ও ভীতকালীন সময়ে) তাদের সাথে নিয়ে সালাতে দাঁড়াবে, তখন যেন তাদের মধ্য থেকে একদল তোমার সাথে দাঁড়ায়(১) এবং তারা (সালাতে) তাদের অস্ত্র সাথে রাখবে। এরপর যখন তারা (প্রথম রাক‘আতের) সাজদাহ করে ফেলবে, তখন তারা যেন তোমাদের (জামা‘আতের) পেছনে অবস্থান নেয়। আর অপর একটি দল যারা এখনো সালাত আদায় করেনি তারা যেন তোমার সাথে এসে সালাত আদায় করে এবং তারা যেন তাদের সতর্কতা অবলম্বন করে ও (সালাতের সময়) অস্ত্র সাথে রাখে। কারণ, কাফিররা কামনা করে, যদি তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও, তাহলে তারা তোমাদের ওপর একসাথে (যুদ্ধে) ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর যদি বৃষ্টির কারণে তোমাদের কোন কষ্ট হয় অথবা তোমরা অসুস্থ হও, তাহলে (সালাতে দাঁড়াতে) অস্ত্র রেখে দিলে তোমাদের কোন দোষ নেই। আর ( অস্ত্র সরিয়ে রাখলেও) তোমরা তোমাদের সতর্কতা অবলম্বন করবে। নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
(103) অতঃপর যখন তোমরা সালাত শেষ করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহর যিকর করবে। অতঃপর যখন তোমরা (যুদ্ধ ও ভয়-ভীত অবস্থা থেকে) নিরাপদ হবে তখন যথা নিয়মে(১) সালাত কায়িম করবে। নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়িম করা মু’মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
(104) আর (হে মু’মিনগণ) তোমরা শত্রু সম্প্রদায়ের অনুসন্ধানে দুর্বল ও অলস হয়ো না। যদি তোমরা (আহত-নিহত হয়ে) যন্ত্রণা ভোগ করে থাকো, তবে তারাও তো তোমাদের মতো যন্ত্রণা পাচ্ছে। আর (পার্থক্য হলো) তোমরা আল্লাহর নিকট থেকে যা (সাওয়াব, সাহায্য ও সহযোগিতা) আশা করছো, তারা তো তা আশা করছে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
(105) (হে রাসূল!) আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব (আলকুরআন) নাযিল করেছি, যাতে আল্লাহ তোমাকে যে সঠিক পথ দেখিয়েছেন, সে অনুযায়ী তুমি মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করতে পারো। আর (সে ক্ষেত্রে) তুমি বিশ্বাসভঙ্গকারীদের পক্ষে তর্ক করো না।
(106) আর তুমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
(107) আর যারা নিজেদের সাথে খিয়ানত করে, তুমি তাদের পক্ষে বিতর্ক করো না। নিশ্চয় আল্লাহ খিয়ানতকারী পাপীকে পছন্দ করেন না।
(108) তারা (ভয়ে ও লজ্জায় দুষ্কর্ম) মানুষের কাছ থেকে গোপন করতে চায়; কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে গোপন করতে পারবে না। তিনি তাদের সাথেই আছেন, যখন তারা রাতে এমন কথার পরিকল্পনা করে, যা তিনি পছন্দ করেন না। আর তারা (প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য) যা কিছু করে, আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে আছেন।
(109) (হে অপরাধীদের সাহায্যকারীগণ) দেখো, তোমরা ইহজীবনে তাদের (অপরাধীদের) পক্ষে বিতর্ক করছো; কিন্তু কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে কে তাদের পক্ষাবলম্বন করে বিতর্ক করবে? কিংবা কে তাদের পক্ষে উকিল (তত) হবে?
(110) আর যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি যুলম করে, অতঃপর (স্বীয় পাপ স্বীকার করে লজ্জিত হয়ে) আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহকে সে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।
(111) আর যে পাপ উপার্জন করবে, বস্তুত সেতো তা নিজের বিরুদ্ধেই উপার্জন করবে। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(112) আর কেউ কোনো অপরাধ বা পাপ করে সেটা কোনো নির্দোষ ব্যক্তির প্রতি আরোপ করলে, সে তো মিথ্যা অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করবে।
(113) আর (হে রাসূল!) তোমার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া না থাকলে, তাদের মধ্য থেকে একদল তোমাকে পথভ্রষ্ট করতে বদ্ধপরিকর ছিল! কিন্তু তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করে না এবং তারা তোমার কোনোই ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন কিতাব ও হিকমত (কুরআন ও সুন্নাহ) এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তুমি জানতে না। আর তোমার প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।
(114) তাদের অধিকাংশ গোপন সলাপরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই; তবে কল্যাণ আছে (সে গোপন পরামর্শে) যে নির্দেশ দেয় দান সাদকার, সৎকাজ করার ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কেউ এসব কাজ করলে, আমি তাকে অবশ্যই মহা পুরস্কার দান করবো।
(115) আর কারো নিকট হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পরও সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে সে যেদিকে মুখ ফিরিয়েছে আমি তাকে সেদিকেই ফিরিয়ে দিবো এবং তাকে প্রবেশ করাবো জাহান্নামে। আর তা কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থল!
(116) নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না।(১) তবে এ (শিরক) ছাড়া অন্যান্য গুনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে (নিজ দয়া ও করুণায়) ক্ষমা করেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হলো।
(117) তারা (মুশরিকরা) তো আল্লাহর পরিবর্তে দেবীরই পূজা করে (ডাকে) এবং তারা কেবল অবাধ্য শয়তানকেই ডাকে (পূজা করে)।
(118) আল্লাহ তাকে লা‘নত করেছেন এবং সে (শপথ করে) বলেছে: ‘অবশ্যই আমি তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী হিসেবে গ্রহণ করব (এবং সত্যভ্রষ্ট করবো)।’
(119) আর আমি অবশ্যই তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবো; মিথ্যা আশ্বাস দিবো (১), আর অবশ্যই আমি তাদেরকে আদেশ করবো, ফলে তারা পশুর কান ছিদ্র করবে। আর অবশ্যই তাদেরকে নির্দেশ দিবো, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে।’ আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, সে স্পষ্টতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে।
(120) সে (শয়তান) তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়। আর শয়তান তাদেরকে কেবল প্রতারণামূলক প্রতিশ্রুতিই দেয়।
(121) (শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণকারীদের) এদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম। আর তারা সেখান থেকে পালাবার জায়গা পাবে না।
(122) আর যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, আমি তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবো, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আর কথায় আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী কে?
(123) (হে মুসলিমগণ! মূলত নাজাত ও চূড়ান্ত সফলতার ব্যাপারটি) না তোমাদের আশার অধীন, না আহলে কিতাবের (বরং তা আমলেরই অধীন)। যে মন্দকাজ করবে, তাকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। আর সে তার জন্য আল্লাহ ছাড়া কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।
(124) আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে মু’মিন অবস্থায় সৎকাজ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও (১) যুলম করা হবে না।
(125) আর দীনের দিক থেকে তার চেয়ে কে উত্তম, যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে (প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে) আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের মিল্লাতের (জীবন ব্যবস্থার) অনুসরণ করে? আর আল্লাহ ইবরাহীমকে পরম বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।
(126) আর আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, তার একক মালিকানা (সার্বভৌমত্ব) আল্লাহর জন্যই । আর আল্লাহ (তাঁর জ্ঞান ও ক্ষমতা দিয়ে) সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন।
(127) আর (হে রাসূল!) লোকেরা তোমার কাছে নারীদের (স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের অধিকারের) ব্যাপারে সমাধান চাচ্ছে। বল: ‘আল্লাহ তাদের ব্যাপারে তোমাদেরকে সমাধান দিচ্ছেন এবং একই সাথে সে বিধানও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, যা ইয়াতীম নারীদের ব্যাপারে কিতাবে তোমাদেরকে পাঠ করে শুনানো হচ্ছে, যাদের প্রাপ্য তোমরা পরিশোধ করছো না; অথচ তোমরা তাদেরকে বিবাহ করতে আগ্রহী হও। আর (তেমনিভাবে তিনি সমাধান দিচ্ছেন) অসহায় শিশুদের ব্যাপারেও(১)। (অনুরূপভাবে তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন), ইয়াতীমদের প্রতি তোমাদের ইনসাফের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো। আর তোমরা যে কোন কল্যাণকর কাজ করো, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে বিশেষভাবে জ্ঞাত।
(128) আর কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার (অনীহা ও নিরুৎসাহিতার) আশঙ্কা করে, তবে তারা (কিছু অত্যাবশ্যকীয় অধিকার ছেড়ে) পরস্পর সমঝোতা করতে চাইলে, তাদের কোনো দোষ নেই এবং (তালাকের চেয়ে) পরস্পর সমঝোতাই শ্রেয়। কেননা লোভ ও কৃপণতা দিয়েই মানুষের মানসিকতা তৈরি করা হয়েছে। আর যদি তোমরা সৎকর্মপরায়ণ ও মুত্তাকী হও, তবে জেনে রেখো, তোমরা যা করো আল্লাহ তো তার খবর রাখেন।
(129) আর (হে স্বামীরা!) তোমরা যতই ইচ্ছে করো না কেন, তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান আচরণ (পরিপূর্ণরূপে ইনসাফ) করতে কখনই পারবে না। সুতরাং তোমরা কোনো একজনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না ও অপরকে (ভালোবাসা না দিয়ে) ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে দিও না। আর যদি তোমরা (স্ত্রীর অধিকার আদায়ের ব্যাপারে) নিজেদেরকে সংশোধন করো এবং সে ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করো, তবে নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(130) আর যদি তারা (স্বামী-স্ত্রী) উভয়ে (তালাক অথবা খোলা'র (১) মাধ্যমে) বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে আল্লাহ প্রত্যেককে নিজ প্রাচুর্য দ্বারা অভাবমুক্ত করবেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাবান।
(131) আর আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সব কিছুর মালিকানা (সার্বভৌমত্ব) আল্লাহরই। তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে (ইয়াহূদী-খ্রিস্টান) তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও নির্দেশ দিয়েছি এবং অঙ্গীকার নিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো। আর তোমরা যদি কুফরী করো, তবে জেনে রাখো, নিশ্চয় আসমানসমুহ ও জমিনে যা কিছু আছে, তা সবই আল্লাহর। আর আল্লাহ (সকল সৃষ্টির থেকে) অভাবমুক্ত, (তাঁর সকল কর্ম ও গুণাবলীতে) প্রশংসিত।
(132) আর আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, তা আল্লাহর জন্যই। আর সৃষ্টির সকল বিষয়াদির পরিচালনায় অভিভাবক (কর্মবিধায়ক) হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
(133) হে মানুষ! তিনি চাইলে তোমাদেরকে অপসারিত (ধ্বংস) করে অন্যদেরকে স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন(১)। আর আল্লাহ তা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম।
(134) (হে মানুষ! তোমাদের আমলের মাধ্যমে) কেউ দুনিয়ার প্রতিদান চাইলে তবে (সে যেন জেনে রাখে যে,) আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতিদান রয়েছে। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
(135) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমরা (সর্বাবস্থায়) ইনসাফের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকো, আল্লাহর সাক্ষী হিসেবে; যদিও তা তোমাদের নিজেদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায়। যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র, তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে, তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা (যথোপযুক্তভাবে সাক্ষ্যটিকে আদায় না করে) ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলো কিংবা এড়িয়ে যাও, তবে (তোমরা জেনে রেখো যে,) তোমরা যা করো, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।
(136) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমরা ঈমান আনয়ন করো আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং সে কিতাবের প্রতি, যা তিনি তাঁর রাসূলের (মুহাম্মাদের) ওপর নাযিল করেছেন এবং ঐ কিতাবের প্রতি যা তিনি পূর্বে (তাঁর রাসূলগণের উপর) নাযিল করেছেন। আর যে আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিনকে অস্বীকার করবে, সে মূলত পথভ্রষ্ট হয়ে বহুদূরে চলে গেলো।
(137) নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, তারপর কুফরী করেছে, আবার (কিছুকাল পর) ঈমান এনেছে, তারপর কুফরী করেছে, অতঃপর তারা তাদের কুফরীর পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে (১), আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে সত্য-সঠিক পথ দেখাবেনও না।
(138) (হে রাসূল!) মুনাফিকদের সুসংবাদ দাও যে, নিশ্চয় তাদের জন্যই রয়েছে, যন্ত্রণাদায়ক আযাব (শাস্তি)।
(139) (পার্থিব স্বার্থের জন্য) যারা মু’মিনগণের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারা (মুনাফিকরা) কি ওদের কাছে সম্মান চায়? যাবতীয় সম্মান তো আল্লাহরই।
(140) অথচ তিনি তো (এর পূর্বেও ) কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না; যতক্ষণ তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে। তা না হলে, তোমরাও তাদের মতো (আল্লাহর আদেশ অমান্যকারী) হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ (কিয়ামতের দিন) মুনাফিক ও কাফির সবাইকে জাহান্নামে একই জায়গায় একত্র করবেন।
(141) (মুনাফিকরা) যারা তোমাদের (কল্যাণ অথবা অকল্যাণ যাই হোক, এর) অপেক্ষায় থাকে, অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি তোমাদের বিজয় (ও যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) অর্জিত হয়, তখন তারা বলে: ‘আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না’? আর যদি কাফিরদের আংশিক বিজয় হয়, তখন তারা বলে: ‘আমরা কি তোমাদের দায়িত্বভার নেইনি (তোমাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখিনি) এবং মু’মিনদের কবল থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করিনি’? সুতরাং আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে বিচার করবেন। আর আল্লাহ কখনো মু’মিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদের (বিজয় লাভের) জন্য কোন পথই রাখবেন না।
(142) নিশ্চয় মুনাফিকরা (কুফরীকে লুকিয়ে বাহ্যিকভাবে ইসলাম প্রকাশের মাধ্যমে) আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে। বস্তুত তিনিই তাদেরকে (১) ধোঁকায় ফেলে রেখেছেন। আর তারা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, (সালাতে আসে) শুধু লোক দেখানোর জন্যে এবং তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে।(২)
(143) তারা এর মধ্যে দোদুল্যমান (১)। না এদের (মু’মিনদের) দিকে, আর না ওদের (কাফিরদের) দিকে। বস্তুত আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, (হে রাসূল!) তুমি কখনো তার জন্য (পথভ্রষ্টতা থেকে বাচার জন্যে হিদায়াতের) কোন পথ খুঁজে পাবে না।
(144) হে তোরা যারা ঈমান এনেছো! তোমরা মু’মিনগণ ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি (এ বন্ধুত্বের মাধ্যমে) নিজেদের ওপর আল্লাহর প্রকাশ্য অভিযোগ কায়িম করতে চাও? (যা তোমাদের শাস্তির উপযুক্ততা বুঝাবে?)
(145) নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য তুমি কখনো কোন সাহায্যকারী পাবে না।
(146) কিন্তু যারা তাওবাহ করে, নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং আল্লাহর জন্য নিজেদের দীনকে (অর্থাৎ নিজেদের আমলকে) একনিষ্ট করে, তারা (দুনিয়া ও আখিরাতে) মু’মিনদের সাথেই থাকবে। আর অচিরেই আল্লাহ মু’মিনদেরকে মহা পুরস্কার (জান্নাত) দান করবেন।
(147) যদি তোমরা (আল্লাহর) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং (আল্লাহর প্রতি) ঈমান আনো, তাহলে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহ কী করবেন? আল্লাহ কৃতজ্ঞতার পুরস্কার দানকারী, সর্বজ্ঞ।
(148) আল্লাহ কোনো মন্দ ও পাপের কথা প্রচার করা পছন্দ করেন না; তবে কারো ওপর যুলম করা হলে ভিন্ন কথা। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।
(149) তোমরা যদি সৎকাজ প্রকাশ্যে করো কিংবা গোপনে করো অথবা (তোমাদের প্রতি দুর্ব্যবহারকারীদেরকে) দোষত্রুটি ক্ষমা করে দাও, তবে (জেনে রাখো) আল্লাহও দোষ মোচনকারী, ক্ষমতাবান।
(150) নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে (ঈমানের ব্যাপারে) পার্থক্য করতে চায়(১) উপরন্তু তারা বলে: ‘আমরা কতক-এর ওপর ঈমান আনি এবং কতকের সাথে কুফরী করি।’ আর তারা এ দুয়ের (ঈমান ও কুফরীর) মধ্যবর্তী ভিন্ন একটি পথ অবলম্বন করতে চায়।(২)
(151) (মূলত যারা এ পথ অবলম্বন করে) তারাই প্রকৃত কাফির। আর আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
(152) আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে এবং (কাফিরদের মতো) তাদের কারো মধ্যে (ঈমান আনা ও না আনার ব্যাপারে) পার্থক্য করেনি, অচিরেই তাদেরকে তিনি তাদের (আমলের প্রতিদান স্বরূপ) মহা পুরস্কার দিবেন। আর আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
(153) (হে রাসূল!) আহলে কিতাবগণ (ইয়াহূদীরা) তোমার কাছে তাদের জন্য আসমান হতে (দৃশ্যমান) পুরো একটি কিতাব নাযিল করতে বলে; যেমনিভাবে তারা মূসার কাছে এর চেয়েও বড় দাবী করেছিল। তারা বলেছিল: ‘আল্লাহকে প্রকাশ্যে আমাদেরকে দেখাও।’ ফলে তাদের সীমালংঘনের শাস্তিস্বরূপ তাদেরকে বজ্রপাতে মৃত্যু দেয়া হয়।(১) তারপর (আল্লাহর একত্ববাদের) সুস্পষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে আসার পরও তারা গরুর বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল। তারপরও আমি তাদেরকে ক্ষমা করেছিলাম এবং আমি মূসাকে সুস্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করেছিলাম।
(154) আর তাদের কাছ থেকে শক্ত অঙ্গীকার গ্রহণের জন্য ‘তূর’ পর্বতকে আমি তাদের (মাথার) ওপরে তুলে ধরেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম: ‘(মাথা ঝুঁকিয়ে) সাজদারত হয়ে (বায়তুল মাকদাসের) দরজা দিয়ে প্রবেশ করো।’ আর আমি তাদেরকে আরও বলেছিলাম: ‘শনিবারে (মাছ শিকারের ব্যাপারে) সীমালংঘন করো না’ এবং আমি তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম।
(155) অতঃপর (তারা আরো অভিশপ্ত হয়েছে) তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য, আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করার জন্য, নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্য এবং তাদের এ উক্তির জন্য ‘আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত’।(১) বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তাদের অন্তর সিলমোহর করে দিয়েছেন। ফলে অল্পসংখ্যক লোক ছাড়া তারা ঈমান আনবে না।
(156) আর (তারা অভিশপ্ত হয়েছে) তাদের কুফরীর জন্য এবং মারইয়ামের বিরুদ্ধে (ব্যভিচারের মিথ্যা) গুরুতর অপবাদ আরোপের জন্য।
(157) আর (আমি তাদেরকে অভিশম্পাত করেছি) তাদের এ উক্তির জন্যে, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়ামের পুত্র ‘ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি’। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি; বরং তাদের জন্য (এক লোককে) তার সদৃশ করা হয়েছিল(১)। আর নিশ্চয় যারা (ইয়াহুদী ও খৃস্টান) তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, তারা অবশ্যই এ বিষয়ে সংশয়ের মধ্যে ছিল; এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ছাড়া তাদের কোনো জ্ঞানই ছিল না। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাঁকে হত্যা করেনি।
(158) বরং আল্লাহ তাকে (শরীর ও রূহ সহ) তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(159) (শেষ যুগে ‘ঈসার অবতরণের পরে) আহলে কিতাবের প্রতিটি মানুষ তার মৃত্যুর পূর্বে তাঁর (ঈ‘সার) ওপর ঈমান আনবেই। আর কিয়ামতের দিন তিনি (‘ঈসা) তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবেন।
(160) সুতরাং ইয়াহূদীদের যুলম ও অবাধ্যতার এবং আল্লাহর পথ থেকে অনেককে বাঁধা দেওয়ার কারণে আমি উত্তম খাবারগুলো তাদের ওপর হারাম করেছিলাম, যা তাদের জন্য যা হালাল ছিল।(১)
(161) আর (তাদেরকে অভিশম্পাত করা হয়েছে) তাদের সুদ গ্রহণের কারণে; অথচ তা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অবৈধভাবে মানুষের ধন-সম্পদ গ্রাস করার কারণে। আর আমি তাদের মধ্য থেকে কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(162) কিন্তু তাদের (ইয়াহূদীদের) মধ্যে যারা জ্ঞানে দৃঢ় ও পরিপক্ব তারা এবং মু’মিনগণ ঈমান আনে তার ওপর, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে (আলকুরআনের প্রতি) এবং যা তোমার আগে নাযিল করা হয়েছে (তাওরাত এবং ইঞ্জীলের প্রতি)। আর তারা সালাত কায়িমকারী , যাকাত প্রদানকারী এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান আনয়নকারী। তাদেরকে অচিরেই আমি মহা পুরস্কার প্রদান করবো।
(163) (হে রাসূল!) নিশ্চয় আমি তোমার নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম, যেমন নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি ওহী প্রেরণ করেছিলাম। আর আমি ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়া‘কূব ও তার বংশধরগণ, ‘ঈসা, আইউব, ইউনুস, হারূন ও সুলাইমানের নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম এবং দা্ঊদকে যাবূর (কিতাব) প্রদান করেছিলাম।
(164) আর অনেক রাসূলের বর্ণনা আমি তোমাকে ইতঃপূর্বে (আলকুরআনে) দিয়েছি এবং অনেক রাসূলের বর্ণনা আমি তোমাকে (আমার বিশেষ হিকমতের কারণে আলকুরআনে) দেইনি। আর অবশ্যই আল্লাহ মূসার সাথে (সুস্পষ্টভাবে) কথা বলেছেন।
(165) (মু’মিনদের জন্যে) সুসংবাদদাতা ও (কাফিরদের জন্যে) সতর্ককারীরূপে আমি রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণ আসার পর আল্লাহর নিকট মানুষের কোনো অভিযোগ না থাকে। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(166) (হে রাসূল! লোকেরা চাইলে আলকুরআন না মানতে পারে) কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তোমার প্রতি তিনি যা নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে। তিনি তা (কুরআন) নাযিল করেছেন, নিজ জ্ঞানের ভিত্তিতে। আর ফিরিশতাগণও (আলকুরআনের সত্যতার বিষয়ে) সাক্ষী দিচ্ছেন। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
(167) নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথ থেকে বাঁধা দিয়েছে, তারা অবশ্যই সত্য থেকে অনেক দূরে পথভ্রষ্ট হয়েছে।
(168) নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে ও (কুফরির ওপর অটল থেকে নিজেদের ওপর) যুলম করেছে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোনো পথও দেখাবেন না (যা শাস্তি থেকে তাদেরকে রক্ষা করবে)।
(169) জাহান্নামের পথ ছাড়া(১); সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে এবং এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।
(170) হে মানবজাতি! অবশ্যই রাসূল (মুহাম্মাদ) তোমাদের রবের কাছ থেকে সত্য (দীন) নিয়ে এসেছে। সুতরাং তোমরা ঈমান আনো, এটাই হবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর যদি তোমরা কুফরী করো, তবে (তোমরা জেনে রাখো) আসমানসমূহে ও জমিনে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহর। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
(171) হে আহলে কিতাব (খ্রিস্টানগণ)! তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর ওপর (‘ঈসার ব্যাপারে) সত্য ব্যতীত অন্য কিছু বলো না। নিশ্চয় মারইয়াম-পুত্র ঈসা মসীহ আল্লাহর একজন রাসূল এবং তাঁর বাণী (‘কুন’-হয়ে যাও), যা তিনি মারইয়ামের কাছে (জিবরীলের মাধ্যমে) পাঠিয়েছিলেন ও তাঁর পক্ষ থেকে একটি রূহ (যে মারইয়ামের গর্ভে শিশুর রূপ ধারণ করেছিল)। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের প্রতি ঈমান আনো এবং (কখনো) বলো না: ‘তিন!’ (ইলাহ)। তোমরা (এ জাতীয় মিথ্যা ও অসার কথা থেকে) নিবৃত্ত হও। এটাই তোমাদের (দুনিয়া ও আখিরাতের) জন্য কল্যাণকর হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তো এক ইলাহ (উপাস্য)। তাঁর সন্তান থাকবে- এমন বিষয় থেকে তিনি পবিত্র। আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও জমিনে যা কিছু আছে, সব আল্লাহরই। আর ( সব কিছুর) তত্ত্বাবধায়ক ও পরিচালক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
(172) মসীহ কখনো আল্লাহর বান্দা হতে (নিজেকে) হেয় মনে করে না এবং ঘনিষ্ঠ ফিরিশতাগণও করে না।(১) আর যারা তাঁর (আল্লাহর) ইবাদতকে হেয় জ্ঞান করে এবং অহংকার করে, তবে তিনি অচিরেই তাদের সবাইকে (কিয়ামতের দিন) তাঁর কাছে একত্র করবেন(২)।
(173) পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তিনি তাদেরকে তাদের পুরস্কার পরিপূর্ণ দিবেন এবং তাঁর দয়া ও করুণায় তাদের সাওয়াব আরো বাড়িয়ে দিবেন। আর যারা (আল্লাহর ইবাদাত ও তাঁর আনুগত্যকে) হেয় জ্ঞান করেছে এবং অহংকার করেছে, তিনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন এবং তারা তাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।
(174) হে যারা মানুষ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট উজ্জ্বল প্রমাণ (মুহাম্মাদ) এসেছে এবং আমি তোমাদের নিকট স্পষ্ট আলো (আলকুরআন) নাযিল করেছি।
(175) সুতরাং যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং (আলকুরআন আলমাজীদকে) দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছে, তাদেরকে তিনি অবশ্যই (জান্নাতে দিয়ে) তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ করাবেন এবং তাদেরকে তিনি তাঁর দিকে আসার সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।
(176) (হে রাসূল) তারা তোমার কাছে (কালালার উত্তরাধিকার সম্পর্কে) সমাধান চায়। বল: ‘আল্লাহ তোমাদেরকে সমাধান দিচ্ছেন ‘কালালা’ (পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তির উত্তরাধিকার) সম্পর্কে। কোন পুরুষ যদি মারা যায়, সে যদি সন্তানহীন হয় এবং তার এক বোন থাকে, তবে তার বোনের জন্য তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক। আর সে মহিলা (একক বোনটি) যদি সন্তানহীনা হয় (আর ভাইয়ের আগে মারা যায়), তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। কিন্তু যদি (উক্ত কালালা মৃত ব্যক্তির) দুই বোন থাকে, তবে তাদের জন্য তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ। আর যদি ভাই-বোন উভয়ে থাকে, তবে এক পুরুষের অংশ দুই নারীর অংশের সমান। আল্লাহ তোমাদেরকে (কালালার উত্তরাধিকার সম্পর্কে) সুস্পষ্ট বিধান দিচ্ছেন, যাতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও। আর আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।’