(1) পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দা (মুহাম্মাদ) কে রাতের বেলায় ভ্রমণ করালেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা (বায়তুল মাক্বদাস) পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি। (রাতেরবেলায় আমি এ ভ্রমণ করিয়েছি) যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন(১) দেখাতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
(2) আর (ইতঃপূর্বে) আমি মূসাকে (তাওরাত) কিতাব দিয়েছি এবং তা বানূ ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশ বানিয়েছি। যেন তোমরা আমাকে ছাড়া আর কাউকেও (তোমাদের) কর্মবিধায়ক না বানাও।(১)
(3) তোমরা তো সেই তাদেরই বংশধর, যাদেরকে আমি নূহের সাথে (তুফানে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্যে নৌকাতে) আরোহণ করিয়েছিলাম। নিশ্চয় সে (নূহ) ছিল কৃতজ্ঞ বান্দা।
(4) আর আমি বানূ ইসরাঈলকে (তাওরাত) কিতাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, তোমরা জমিনে অবশ্যই দু’বার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমরা (মানুষের ওপর যুলম ও অত্যাচারের মাধ্যমে) মারাত্মকভাবে ঔদ্ধত্য দেখাবে।
(5) অতঃপর যখন এ দু’য়ের প্রথম ওয়াদা আসল, তখন আমি তোমাদের ওপর আমার কিছু বান্দাকে (শক্তিশালী করে) পাঠালাম, যারা কঠোর যুদ্ধবাজ। অতঃপর তারা (তোমাদের) ঘরে ঘরে ঢুকে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। আর এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল।
(6) অতঃপর (তোমরা যখন আল্লাহর নিকট তাওবা করলে) আমি তোমাদেরকে (বিজয় ও রাষ্ট্রক্ষমতা দিয়ে) আবার তাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত করলাম, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে তোমাদেরকে সাহায্য করলাম এবং জনবলে তোমাদেরকে (শত্রুদের ওপর) সংখ্যাধিক্যে পরিণত করলাম।
(7) (হে বানূ ইসরাঈল!) তোমরা যদি কল্যাণকর কাজ করো, তবে নিজেদের জন্যই কল্যাণকর হবে। আর যদি মন্দ কাজ করো তবে তাও নিজেদের জন্যই হবে। এরপর যখন (দ্বিতীয় ফ্যাসাদ সংঘটিত হওয়ার) পরবর্তী ওয়াদার নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলো, (তখন অন্য বান্দাদের প্রেরণ করলাম) যাতে তারা (শত্রুরা) তোমাদের (লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে) চেহারাসমূহ মলিন করে দেয়, যেন তারা (তোমাদেরকে ধ্বংস করার জন্যে) আবার মসজিদে (বায়তুল-মাক্বদাসে) প্রবেশ করে, যেভাবে তারা প্রথমবারে সেখানে প্রবেশ করেছিল এবং যাতে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়, যা ওদের কর্তৃত্বে ছিল।
(8) (হে বানূ ইসরাঈল! তোমরা যদি তাওবা ও নেক আমল করো তাহলে) আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের ওপর রহম (দয়া) করবেন। কিন্তু তোমরা যদি পুনরায় (ফ্যাসাদ) করো, তাহলে আমিও পুনরায় ( তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে ধ্বংস) করবো। আর আমি কাফিরদের জন্য জাহান্নামকে করেছি কারাগার।
(9) নিশ্চয় এ আলকুরআন এমন একটি পথ দেখায়, যা সবচেয়ে উপযুক্ত (সরল, সুদৃঢ়) এবং সৎকর্মপরায়ণ মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার (জান্নাত)।
(10) আর যারা আখিরাতে ঈমান রাখে না, আমি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(11) আর মানুষ (রাগের বশত) অকল্যাণের বদদু‘আ করে, যেমন সে দু‘আ করে কল্যাণের জন্য। আর মানুষ তো (স্বভাবগতভাবিই) তাড়াহুড়াকারী।
(12) আর আমি রাত ও দিনকে করেছি (আমার একত্ববাদ ও ক্ষমতার) দু’টো নিদর্শন। অতঃপর মুছে দিয়েছি রাতের (অন্ধকারকে করেছি) নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে করেছি আলোকময়, যাতে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো এবং যাতে তোমরা বর্ষ-সংখ্যা ও (মাস, দিন ও ঘণ্টার) হিসাব জানতে পারো। আর আমি সবকিছু বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।
(13) আর আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে (ভাগ্যকে) তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছি (১) এবং কিয়ামতের দিন তার জন্য আমি বের করবো (ভালো-মন্দ সকল আমলের) একটি লিখিত (আমলনামা),যা সে খোলা পাবে।
(14) (সে দিন আমি তাকে বলবো:) ‘তুমি তোমার কিতাব পাঠ করো, আজ তুমি নিজেই তোমার (আমলগুলোর) হিসাব-নিকাশকারী হিসেবে যথেষ্ট।’
(15) যে হিদায়াত গ্রহণ করে, সে তো নিজের জন্যই হিদায়াত গ্রহণ করে এবং যে পথভ্রষ্ট হবে সে তো পথভ্রষ্ট হবে নিজেরই ধ্বংসের জন্য। আর কোনো ব্যক্তি অন্য কারো পাপের বোঝা বহন করবে না। আর রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমি (কোন জাতিকে) শাস্তি প্রদানকারী নই।(১)
(16) আর আমি যখন কোনো জনপদ (জাতি) কে ধ্বংস করতে চাই, তখন সেখানকার সমৃদ্ধশালী অহংকারীদেরকে (আমার আনুগত্যের) আদেশ করি। অতঃপর তারা (আমার আদেশ না মেনে) তাতে সীমালঙ্ঘন করে। তখন তাদের ওপর (ধ্বংস হওয়ার) নির্দেশটি সাব্যস্ত হয়ে যায় এবং আমি সেটি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি।
(17) আর নূহের (মৃত্যুর) পর আমি কত (মিথ্যারোপকারী) জাতিকে ধ্বংস করেছি! (হে রাসূল!) তোমার রব তাঁর বান্দাদের পাপের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট।(১)
(18) যে ব্যক্তি (কল্যাণকর কর্মসমূহের মাধ্যমে) দুনিয়ার সুখ-সম্ভোগ চায়, যাকে যা ইচ্ছে এখানেই দ্রুত দিয়ে দেই। তারপর তার জন্য নির্ধারণ করি জাহান্নাম, সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত, (আল্লাহর রহমত থেকে) বিতাড়িত অবস্থায়।
(19) আর যে ব্যক্তি মু’মিন অবস্থায় (কল্যাণকর কর্মসমূহের মাধ্যমে) আখিরাত চায় এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে, তাদের প্রচেষ্টা হবে পুরস্কারযোগ্য।(১)
(20) এদের ও ওদের (নেককার ও বদকারের) প্রত্যেককে আমি তোমার রবের দান থেকে সাহায্য করি, আর তোমার রবের দান (দুনিয়াতে কারো জন্যেই) বন্ধ হওয়ার নয়।
(21) (হে রাসূল!) চিন্তা করে দেখো, আমি তাদের কতককে কতকের ওপর কীভাবে (রিযক ও মর্যাদার দিক দিয়ে) শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। আর নিশ্চয় (দুনিয়ার তুলনায়) আখিরাত মর্যাদায় মহান এবং প্রতিদান লাভের দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব।
(22) (হে বান্দা! তুমি) আল্লাহর সাথে অপর কোনো ইলাহ নির্ধারণ করো না। তাহলে তুমি (আল্লাহ ও তাঁর নেককার বান্দাদের নিকট) নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হয়ে বসে পড়বে।
(23) আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতামাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে (তাদের বার্ধক্যজনিত কোন আচরণে বিরক্ত হয়ে ) তোমরা তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না।(১) আর তাদের সাথে সম্মানজনক(২) কথা বলো।
(24) আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করো এবং (দু‘আয়) বলো: ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে শৈশবে তারা (দয়া-মায়া দিয়ে) আমাকে লালনপালন করেছেন।’
(25) তোমাদের রব তোমাদের অন্তরে (১) যা আছে, সে সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। যদি তোমরা সৎকর্মপরায়ণ হও তবে তিনি তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতি অধিক ক্ষমাশীল।(২)
(26) আর (হে মু’মিন!) নিকটাত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও। আর কিছুতেই অপব্যয় করো না।
(27) নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।
(28) আর (বর্তমানে তাদেরকে দান করার মতো কিছু না থাকায়) যদি তুমি তাদের থেকে বিমুখ থাকতেই চাও এবং যদি তোমার রবের কাছ থেকে অনুগ্রহ (রিযক) লাভের প্রত্যাশায় থেকে থাকো, তাহলে (এখন) তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলো।(১)
(29) আর তুমি তোমার হাত (কৃপণতা করে) তোমার ঘাড়ের সাথে আবদ্ধ রেখো না (১) এবং তা (খরচের সময় অপচয় করে) পুরোপুরি প্রসারিত করো না, তাহলে তুমি (কৃপণতার দরুন) নিন্দিত ও (অপচয়ের দরুন) নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে।
(30) নিশ্চয় তোমার রব যাকে ইচ্ছা তার জন্য রিযক প্রশস্ত করে দেন এবং (যাকে ইচ্ছা তার জন্যে) সীমিত করে দেন। তিনি অবশ্যই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত, সর্বদ্রষ্টা।
(31) অভাব-অনটনের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমিই তাদেরকে রিযক দিই এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ।
(32) আর তোমরা ব্যভিচারের ধারে-কাছেও যেও না। নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পথ।(১)
(33) আর আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, তোমরান্যায়সংগত কারণ ছাড়া।(১) তাকে হত্যা করো না, যে অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি অবশ্যই (এর প্রতিকারের জন্য ) তার অভিভাবককে (কিসাস গ্রহণের) ক্ষমতা দিয়েছি। সুতরাং হত্যার ব্যাপারে সে সীমালঙ্ঘন করবে না।(২) নিশ্চয় সে হবে সাহায্যপ্রাপ্ত।
(34) আর তোমরা ইয়াতিমের সম্পদের কাছে যেয়ো না সুন্দরতম পন্থা(১) ছাড়া; যতক্ষণ না সে বয়োপ্রাপ্ত হয়। আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
(35) আর তোমরা মাপে পরিপূর্ণ দাও, যখন তোমরা পরিমাপ করো এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লা দিয়ে ওজন করো।(১) এটা (দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের জন্য) কল্যাণকর এবং পরিণামে অতি উৎকৃষ্ট।
(36) আর যে বিষয় তোমার জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় (মানুষ তার) কান, চোখ ও অন্তঃকরণ (এর সঠিক ব্যবহার) সম্পর্কে (কিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসিত হবে।
(37) আর জমিনে অহংকার করে চলো না। তুমি (অহংকারবশে) তো কখনো জমিনকে বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় কখনো পাহাড়ের সমান পৌঁছতে পারবে না।
(38) (হে মানুষ!) এ সবের মধ্যে যা মন্দ, তা তোমার রবের নিকট অপছন্দনীয়।
(39) (হে রাসূল!) তোমার রব তোমার নিকট ওয়াহীর মাধ্যমে যে-সব হিকমত (আদেশ, নিষেধ ও বিধানাবলি) পাঠিয়েছেন, এগুলো তার অন্তর্ভুক্ত। আর (হে মানুষ!) তুমি আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্য নির্ধারণ করো না, (যদি নির্ধারণ কর,) তাহলে তুমি নিন্দিত ও বিতাড়িত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে ।
(40) (হে মুশরিকরা!) তোমাদের রব কি পুত্র সন্তানের জন্য তোমাদেরকে বাছাই করেছেন এবং তিনি ফিরিশতাদের থেকে কন্যা সন্তান গ্রহণ করেছেন?(১) নিশ্চয় তোমরা সাংঘাতিক কথা বলে থাকো।
(41) আর অবশ্যই আমি এ আলকুরআনে ( মানুষের জন্য বিভিন্ন বিধান, উপদেশ ও দৃষ্টান্তের) বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে; কিন্তু তা কেবল তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি করে।
(42) (হে রাসূল! তুমি এ মুশরিকদেরকে) বলো: ‘তাঁর সাথে যদি আরো উপাস্য থাকতো, যেমন তারা বলে, তবে তারা ‘আরশের অধিপতির ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য পথ খুঁজতো।’
(43) তিনি পবিত্র মহান এবং তারা যা বলে, তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।
(44) সাত আসমান ও জমিন এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে, তারা সবাই আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে এবং এমন কিছু নেই, যা তাঁর সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করে না; কিন্তু তোমরা তাদের তাসবীহ বুঝো না। নিশ্চয় তিনি পরম সহনশীল, অতি ক্ষমাশীল।
(45) আর (হে রাসূল!) তুমি যখন আলকুরআন পড়ো তখন আমি তোমার ও যারা আখিরাতে ঈমান আনে না, তাদের মধ্যে এক গোপন পর্দা লাগিয়ে দেই।(১)
(46) আর আমি তাদের (কাফিরদের) অন্তরের ওপর আবরণ সৃষ্টি করে দিয়েছি, যাতে তারা আলকুরআন বুঝতে না পারে এবং তাদের কানে দিয়েছি বধিরতা।(১) আর তুমি যখন আলকুরআনে তোমার রব এক হওয়ার কথা উল্লেখ করো, তখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালায়।
(47) যখন তারা তোমার প্রতি কান পেতে (আলকুরআন তিলাওয়াত) শোনে , তখন আমি জানি কেনো তারা কান পাতে এবং আমি এটাও জানি, যালিমরা যখন (মানুষকে তোমার থেকে দূরে সরানোর জন্যে) গোপন আলোচনায় মিলিত হয়ে বলে: ‘তোমরা তো কেবল এক যাদুগ্রস্ত লোকের অনুসরণ করছো।’
(48) (হে রাসূল! তুমি চিন্তা করে) দেখো, তারা তোমার জন্য কেমন সব (নিন্দিত) উপমা দিচ্ছে! ফলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। সুতরাং তারা সত্য পথের দিশা পাবে না।
(49) আর তারা (মুশরিকরা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে) বলে: ‘আমরা হাড্ডিতে পরিণত হলেও এবং চূর্ণ-বিচূর্ণ হলেও কি নতুন সৃষ্টিরূপে পুনরুত্থিত হবো?(১)
(50) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘তোমরা পাথর হয়ে যাও কিংবা লোহা’,
(51) ‘অথবা এমন কোনো সৃষ্টি, যা তোমাদের অন্তরে খুবই বড় মনে হয়।’(১) তবুও তারা বলবে: ‘কে আমাদের পুনরায় (সৃষ্টি) করবে?’ (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন (তিনিই তোমাদেরকে জীবিত করবেন)।’ অতঃপর তারা তোমার সামনে (ঠাট্টাবশত) মাথা নাড়বে এবং বলবে: ‘এটা (এ পুনরুত্থান) কবে?’ বলো: ‘আশা করা যায়, তা অতি সন্নিকটে।’
(52) ‘যেদিন তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে (হাশরের ময়দানের দিকে) ডাকবেন, তখন তাঁর প্রশংসার সাথে তোমরা সাড়া দিবে। আর তোমরা ধারণা করবে, (দুনিয়াতে) খুব অল্প সময়ই তোমরা অবস্থান করেছিলে।’
(53) আর (হে রাসূল! তুমি) আমার (ঈমানদার ) বান্দাদেরকে বলো, তারা যেন এমন কথা বলে, যা উত্তম। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের স্পষ্ট শত্রু।
(54) (হে মানুষ!) তোমাদের রব তোমাদের সম্পর্কে অধিক অবগত। তিনি যদি চান তোমাদের প্রতি রহম করবেন(১) অথবা যদি চান তবে তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন।(২) আর আমি তোমাকে তাদের কর্মবিধায়ক করে প্রেরণ করিনি।
(55) আর তোমার রব অধিক অবগত তাদের সম্পর্কে যারা আসমানসমূহ ও জমিনে রয়েছে। আর আমি তো কতক নবীকে কতকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি এবং দাঊদকে দিয়েছি যাবূর।
(56) (হে রাসূল! তুমি এই মুশরিকদেরকে) বলো: ‘তাদেরকে ডাক, আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা মা’বূদ (উপাস্য) মনে করো। তারা তো তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার ও পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না।’
(57) তারা যাদেরকে (যেসব ফিরিশতা ও তাদের ন্যায় অন্য কাউকে) ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের নৈকট্য লাভের উপায় অনুসন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে (আনুগত্যের মাধ্যমে) কে তাঁর অধিক নিকটতর? উপরন্তু তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার রবের শাস্তি ভয়াবহ।
(58) আর এমন কোনো জনপদ নেই, যা আমি কিয়ামতের দিনের পূর্বে ধ্বংস করবো না অথবা যাকে (যার অধিবাসীদেরকে) কঠোর শাস্তি দিবো না; এটা তো কিতাবে (আললাওহুল মাহফূযে) লিপিবদ্ধ আছে।
(59) আর এদের পূর্ববর্তী লোকেরা নিদর্শনাবলিকে (মু‘যিজাকে) অস্বীকার করেছে বলেই আমি (তোমার প্রতি মুশরিকদের চাহিদা অনুযায়ী) নিদর্শন প্রেরণ করা হতে বিরত রয়েছি। আর আমি শিক্ষা গ্রহণের জন্যে সামূদ জাতিকে (সুস্পষ্ট আলামত হিসেবে) উষ্ট্রী দিয়েছিলাম। অতঃপর তারা তার ওপর যুলম করেছিল।(১) আমি কেবল ভীতিপ্রদর্শনের উদ্দেশ্যে (রাসূলদের কাছে) নিদর্শনসমূহ পাঠাই।
(60) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো, যখন আমি তোমাকে বলেছিলাম: ‘নিশ্চয় তোমার রব মানুষকে (তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা দিয়ে) ঘিরে রেখেছেন। আর (ইসরা-মি’রাজের রাতে) যে ‘দৃশ্য’ আমি তোমাকে দেখিয়েছি তা এবং আলকুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত (যাক্কুম) বৃক্ষ কেবল মানুষের পরীক্ষাস্বরূপ নির্ধারণ করেছি।’ আমি তাদের ভয় দেখাই; কিন্তু তা কেবল তাদের চরম অবাধ্যতা (কুফরিকেই) বাড়িয়ে দেয়।
(61) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো, যখন আমি ফিরিশতাদেরকে বললাম: ‘তোমরা আদমকে সাজদাহ করো।’ তখন ইবলীস ছাড়া সকলে সাজদাহ করলো। সে (অহংকার করে) বললো, ‘আমি কি এমন ব্যক্তিকে সাজদাহ করবো যাকে আপনি কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন?’(১)
(62) ইবলীস (তার রবকে) বললো: ‘দেখুন, এ ব্যক্তিকে আপনি (সাজদাহ করার আদেশ দিয়ে) আমার ওপর তাকে সম্মানিত করেছেন, যদি আপনি আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দেন, তবে অতি সামান্য সংখ্যক (খাঁটি বান্দা) ব্যতিরেকে তার বংশধরের সবাইকে অবশ্যই আমি পথভ্রষ্ট করে ছাড়বো।’
(63) আল্লাহ বললেন, ‘যাও ( তোমাকে অবকাশ দিলাম), অতঃপর তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, জাহান্নামই হবে তোমাদের প্রতিদান, (তা হবে তোমাদের আমলের) পূর্ণ প্রতিদান হিসেবে।’
(64) ‘আর (গুনাহের প্রতি উৎসাহ ব্যঞ্জন আওয়াজের মাধ্যমে) তোমার কণ্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো পদস্খলিত করো, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদের Iপর আক্রমণ চালাও এবং তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অংশীদার হও এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও।’(১) আর শয়তান প্রতারণা ছাড়া তাদেরকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয় না।
(65) নিশ্চয় আমার (আনুগত্যকারী মু’মিন) বান্দাদের ওপর তোমার কোনো ক্ষমতা নেই। আর কর্মবিধায়ক হিসেবে তোমার রবই যথেষ্ট।
(66) (হে মানুষ!) তোমাদের রব তো তিনি, যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে চালিত করেন নৌযান, যাতে তোমরা (ব্যবসা-বাণিজ্যে লাভের মাধ্যমে) তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো। নিশ্চয় তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।
(67) আর যখন সমুদ্রে তোমাদেরকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন তিনি ছাড়া যাদেরকে তোমরা (ইতঃপূর্বে) ডাকতে, তারা (তোমাদের মন থেকে) হারিয়ে যায়। অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে আনেন, তখন তোমরা (তাওহীদ ও তাঁকে এককভাবে ডাকা থেকে) বিমুখ হয়ে যাও। আর মানুষ তো (স্বভাবগতভাবে আল্লাহর নি‘আমতের) খুব অকৃতজ্ঞ।
(68) (হে মুশরিকরা! আল্লাহ যখন তোমাদেরকে সমুদ্র থেকে রক্ষা করে স্থলে নিয়ে আসলেন, তখন) তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গিয়েছো যে, তিনি তোমাদেরসহ স্থলের কোনো দিক ধসিয়ে দিবেন না অথবা তোমাদের ওপর শিলা বর্ষণকারী বাতাস প্রেরণ করবেন না?(১) তারপর তোমরা তোমাদের জন্য কোনো কর্মবিধায়ক (রক্ষাকারী) পাবে না।
(69) অথবা তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছো যে, তিনি তোমাদেরকে আবার সমুদ্রে ফিরিয়ে নিবেন না, অতঃপর তোমাদের উপর প্রচণ্ড বাতাস পাঠাবেন না এবং তোমাদের (পুনরায়) কুফরী করার কারণে তোমাদেরকে ডুবিয়ে দিবেন না?(১) তারপর তোমরা আমার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে কোনো সাহায্যকারী পাবে না।
(70) আর নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানদেরকে সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে চলাচলের বাহন দিয়েছি(১) এবং তাদেরকে দিয়েছি উত্তম রিযক। আর আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।
(71) (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ করো, যেদিন (কিয়ামতের দিন) আমি প্রত্যেক মানুষকে তাদের ইমামসহ (দুনিয়ার অনুসরণীয় নেতাসহ) ডাকবো। অতঃপর যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে তারা নিজেদের আমলনামা (খুশিমনে) পড়বে এবং তাদের প্রতি (খেজুরের আঁটির মধ্যকার সুতার সমান) সামান্য পরিমাণও যুলম করা হবে না।
(72) আর যে ব্যক্তি এখানে (দুনিয়ার জীবনে সত্য গ্রহণ ও তা মানার ক্ষেত্রে) অন্ধ সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট।
(73) আর আমি তোমার নিকট যে ওয়াহী পাঠিয়েছি, তা থেকে তারা (মুশরিকরা) তোমার পদস্খলন ঘটানোর চেষ্টায় কোনো ত্রুটি করেনি, যাতে তুমি (মনগড়া) আমার নামে এর বিপরীত মিথ্যা কিছু রটাতে পারো। আর (তুমি যদি তাদের ইচ্ছামতো তা করতে) তখন তারা অবশ্যই তোমাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত।
(74) আর আমি যদি তোমাকে (সত্যের ওপর) অটল না রাখতাম, তবে অবশ্যই তুমি তাদের দিকে কিছুটা হলেও ঝুঁকে পড়তে,(১)
(75) (তুমি যদি তাদের প্রস্তাবের প্রতি ঝুঁকে পড়তে) তখন আমি অবশ্যই তোমাকে ইহজীবনে দ্বিগুণ ও পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তি আস্বাদন করাতাম। অতঃপর তুমি তোমার জন্য আমার বিরুদ্ধে কোনো সাহায্যকারী পেতে না।
(76) আর (তাদের অবস্থা এমন ছিল যে,) তারা তোমাকে এ দেশ থেকে উৎখাত করার এবং সেখান থেকে বের করে দেয়ার চূড়ান্ত চেষ্টা করেছে। (১) (কিন্তু তারা এমনটি করতে সক্ষম হলে) তখন তোমার পরে তারাও স্বল্প সময়ই সেখানে টিকে থাকতে পারতো।
(77) আমি আমার রাসূলদের মধ্যে তোমার পূর্বে যাদেরকে পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও এরূপ নিয়ম ছিল(১) এবং তুমি আমার নিয়মে কোনো পরিবর্তন পাবে না।
(78) (হে রাসূল! তুমি) সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়িম করো(১) এবং ফজরের সালাত (আদায় করো) । নিশ্চয় ফজরের সালাত (ফিরিশতাদের) উপস্থিতির সময়।(২)
(79) আর (হে রাসূল!) রাতের কিছু অংশে তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ‘তাহাজ্জুদ’ আদায় করো । আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে (কিয়ামতের দিন সুপারিশকারী হিসেবে পুনরুত্থান করে) প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।
(80) আর (হে রাসূল!) বলো: ‘হে আমার রব! আমাকে প্রবেশ করান উত্তমভাবে এবং বের করেন উত্তমভাবে।(১) আর আপনার পক্ষ থেকে আমাকে (আমার শত্রুর বিরুদ্ধে) সাহায্যকারী শক্তি দান করুন।’
(81) আর বলো: ‘হক (ইসলাম) এসেছে এবং বাতিল (কুফরী ও শিরক) বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় বাতিল বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।’
(82) আর আমি আলকুরআন নাযিল করেছি, যা মু’মিনদের জন্য শিফা(১) ও রহমত। কিন্তু এটি যালিমদের (কাফিরদের) ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বাড়ায় না।
(83) আর ( মানুষের অবস্থা এমন ) আমি যখন মানুষের প্রতি (সুস্বাস্থ্য ও ধনাঢ্য প্রভৃতি) নি‘আমত দান করি, তখন সে (আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং ( অহংকারে) দূরে সরে যায়। পক্ষান্তরে যখন তাকে (রোগ-ব্যাধি, দরিদ্রতা ইত্যাদি) অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে (মহান আল্লাহর রহমত থেকে) খুব হতাশ হয়ে পড়ে।
(84) (হে রাসূল! তুমি মানুষদেরকে) বলে দাও: ‘প্রত্যেকেই (হিদায়াত ও ভ্রষ্টতার ক্ষেত্রে) নিজ পদ্ধতি অনুযায়ী আমল করে থাকে। আর তোমার রব সর্বাধিক জানেন, কে (সত্যের প্রতি) সর্বাধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত।’
(85) আর তারা (আহলুল কিতাব) তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলো: ‘রূহ আমার রবের একটি আদেশ।(১) আর তোমাদেরকে (তাঁর) জ্ঞান থেকে অতি সামান্যই দেয়া হয়েছে।’
(86) আর (হে রাসূল!) আমি ইচ্ছা করলে তোমার কাছে যে ওয়াহী নাযিল করেছি, তা অবশ্যই ফেরত নিতে পারতাম।(১) অতঃপর তুমি এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে তোমার জন্য কোনো কর্মবিধায়ক (সাহায্যকারী) পেতে না।
(87) তবে (নাযিলকৃত ওয়াহী ফেরত না নেওয়া) তোমার রবের পক্ষ থেকে রহমত। নিশ্চয় তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ অনেক বড়।
(88) (হে রাসূল! তুমি চ্যালেঞ্জ করে) বলো: ‘যদি সকল মানুষ ও জিন মিলে এই আলকুরআনের অনুরূপ অন্য কুরআন(১) রচনার জন্যে একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ আলকুরআন আনতে পারবে না; যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়।’
(89) আর আমি অবশ্যই মানুষের জন্য এই আলকুরআনে প্রত্যেকটি উপমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি (যাতে তারা ঈমান আনে); কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুফরী করা ছাড়া ক্ষান্ত হয়নি।
(90) আর তারা (মুশরিকরা) বলে: ‘আমরা তোমার প্রতি কখনো ঈমান আনবো না; যতক্ষণ না তুমি আমাদের জন্য (মক্কার) জমিন থেকে একটি অবিরাম ঝর্ণাধারা উৎসারিত করবে।’
(91) ‘অথবা তোমার জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের একটি বাগান হবে, অতঃপর তুমি তার মধ্যে প্রবাহিত করবে নদী-নালা-ঝরনাধারা।’
(92) ‘অথবা তুমি যেমনটি ধারণা করো, সে অনুযায়ী (শাস্তিস্বরূপ) আকাশকে খণ্ড বিখণ্ড করে আমাদের ওপরে ফেলবে অথবা আল্লাহ ও ফিরিশতাদেরকে প্রকাশ্যে আমাদের সামনে উপস্থিত করবে।’
(93) ‘অথবা তোমার জন্য স্বর্ণ-নির্মিত একটি ঘর হবে অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে; কিন্তু তোমার ঊর্ধ্বে উঠাতেও আমরা ঈমান আনবো না; যতক্ষণ না তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব নাযিল করবে, যেটি আমরা পড়বো।’ (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘পবিত্র মহান আমার রব! আমি তো (অন্যান্য রাসূলগণের ন্যায়) একজন মানব-রাসূল ছাড়া কিছু নই।’(১)
(94) আর যখন মানুষের নিকট হিদায়াত আসে, তখন তাদের (কাফিরদের) ঈমান আনতে বাধা দেয় কেবল এ কথা যে, ‘আল্লাহ কি (আমাদের নিকট) একজন মানুষকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন?’ (১)
(95) (হে রাসূল! তুমি তাদের প্রত্যুত্তরে) বলো: ‘ফিরিশতারা যদি নিশ্চিন্তভাবে জমিনে বিচরণ (ও বসবাস) করত, তাহলে আমি অবশ্যই আসমান হতে তাদের কাছে ফিরিশতাকে রাসূল হিসেবে পাঠাতাম।’(১)
(96) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘(আমার রাসূল হিসেবে প্রেরিত হওয়ার ব্যাপারে) আল্লাহই আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে পূর্ণ জ্ঞাত, পূর্ণ দ্রষ্টা।’
(97) আর আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন সে-ই (সত্যিকারের) হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনো তাদের জন্য তাঁকে ছাড়া অভিভাবক পাবে না। আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদেরকে অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায় উপুড় করে একত্র করব । তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম। যখনই আগুন একটু নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দিবো।
(98) এটাই তাদের প্রতিদান (শাস্তি), কারণ তারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং (পুনরুত্থানকে অসম্ভব ভেবে) বলেছে: ‘আমরা হাড়ে পরিণত ও ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেলেও কি নতুন সৃষ্টিরূপে পুনরুজ্জীবিত হবো?’
(99) আচ্ছ, তারা (পুনরুত্থান অস্বীকারকারীরা) কি দেখে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? আর তিনি তাদের (পুনরুত্থানের) জন্য একটি সময় নির্ধারণ করেছেন, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু (পুনরুত্থানের প্রমাণসমূহ সুস্পষ্ট থাকা সত্ত্বেও) যালিমরা কুফরী করা ছাড়া ক্ষান্ত হয়নি।
(100) (হে রাসূল! তুমি এ মুশরিকদেরকে) বলো: ‘যদি তোমরা আমার রবের রহমতের ভাণ্ডারসমূহের মালিক হতে, তবুও নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে তোমরা তা (খরচ না করে) আটকে রাখতে। বস্তুত মানুষ তো অতি কৃপণ।’
(101) আর আমি মূসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন(১) দিয়েছিলাম। সুতরাং (হে রাসূল!) তুমি বানূ ইসরাঈলকে জিজ্ঞাসা কর, যখন সে তাদের কাছে (এ নিদর্শনসমূহ নিয়ে) এসেছিল, তখন ফির‘আউন তাকে বলেছিল: ‘হে মূসা, আমি তো ধারণা করি তুমি যাদুগ্রস্ত।’
(102) মূসা (এ কথার প্রত্যুত্তরে ) বললো: ‘(হে ফিরা‘উন!) তুমি অবশ্যই জানো যে, এ সব নিদর্শন কেবল আসমানসমূহ ও জমিনের রবই (তাঁর রাসূলের সত্যবাদিতার) প্রত্যক্ষ প্রমাণ হিসেবে নাযিল করেছেন। আর হে ফিরা‘উন! আমি তো ধারণা করি, তুমি ক্ষতিগ্রস্ত, ধ্বংসপ্রাপ্ত।
(103) অতঃপর ফিরাউন তাদেরকে দেশ (মিসর) থেকে উৎখাত করার ইচ্ছা করলো; তখন আমি তাকে ও তার সাথে যারা ছিলো সকলকে ডুবিয়ে দিলাম।
(104) আর আমি এরপর (তার ধ্বংসের পর ) বানূ ইসরাঈলকে বললাম: ‘তোমরা জমিনে বাস করো। অতঃপর যখন (তোমাদের কাছে ) আখিরাতের প্রতিশ্রুতি আসবে, তখন আমি তোমাদেরকে (হিসাবের জন্য হাশরের মাঠে) একত্রিত করবো।
(105) আর আমি আলকুরআনকে যথাযথভাবে নাযিল করেছি এবং (কোন ধরনের পরিবর্তন ও বিকৃতি ছাড়াই) সত্যসহ তা (মুহাম্মাদের ওপর) নাযিল হয়েছে। (হে রাসূল! ) আমি তো তোমাকে কেবল (জান্নাতের) সুসংবাদদাতা ও (জাহান্নাম থেকে) সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি।
(106) আর এই আলকুরআন আমি অল্প অল্প করে নাযিল করেছি, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ধীরে সুস্থে এবং আমি তা (ঘটনা ও পরিস্থিতির অনুসারে) পর্যায়ক্রমে নাযিল করেছি।
(107) (হে রাসূল! তুমি মানুষদেরকে) বলো: ‘তোমরা এর প্রতি ঈমান আন বা ঈমান না আন(১), নিশ্চয় এর পূর্বে যাদেরকে (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা তিলাওয়াত করা হয়, তখন তারা সাজদায় লুটিয়ে পড়ে।
(108) আর তারা (সাজদায় গিয়ে) বলে: ‘পবিত্র মহান আমাদের রব! আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে।’(১)
(109) ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে সাজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং এটা (আলকুরআন শ্রবণ ও তার অর্থ অনুধাবন) তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’
(110) (হে রাসূল!) বলো: ‘তোমরা (তোমাদের রবকে) ‘আল্লাহ’ নামে ডাকো অথবা ‘রাহমান’ নামে ডাকো, যে নামেই তোমরা ডাকো না কেনো, তাঁর জন্যই তো রয়েছে সুন্দর নামসমূহ। তুমি তোমার সালাতে স্বর উঁচু করো না এবং তাতে ক্ষীণও করো না; বরং এর মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করো।
(111) আর (হে রাসূল!) বলো: ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি, রাজত্বে তাঁর কোনো শরীক নেই এবং অপমান থেকে বাঁচতে তাঁর কোনো অভিভাবকের প্রয়োজন নেই।’ আর তুমি বেশি বেশি তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য ঘোষণা করো।