(1) শপথ তাদের (ফিরিশতাদের), যারা সারিবদ্ধভাবে (ইবাদাতে) দণ্ডায়মান।
(2) শপথ তাদের (ফিরিশতাদের), যারা কঠোরভাবে (মেঘমালাকে) পরিচালনাকারী।
(3) শপথ তাদের (ফিরিশতাদের), যারা সদা উপদেশ গ্রন্থ (আল কুরআন) তিলাওয়াতকারী।
(4) নিশ্চয় তোমাদের ইলাহ এক ও একক।
(5) তিনি আসমানসমূহ, জমিন ও এ দু’য়ের মধ্যে যা আছে, তার রব এবং (বছর ব্যাপী সূর্যের) উদয়স্থলসমূহেরও রব।
(6) নিশ্চয় আমি (জমিনের) নিকটবর্তী আসমানকে নক্ষত্ররাজির সৌন্দর্যের দ্বারা সুশোভিত করেছি।
(7) আর আমি (জমিনের নিকটবর্তী আসমানকে) প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান থেকে (তারকারাজির নিক্ষেপণের মাধ্যমে) হিফাযত করেছি।
(8) ফলে তারা ঊর্ধ্বজগতের (প্রত্যাদেশের) কিছু শুনতে পারে না। আর তাদের প্রতি সব দিক থেকে নিক্ষেপ করা হয় (উল্কাপিণ্ড)।
(9) তাদেরকে বিতাড়িত করার জন্য। আর তাদের জন্য রয়েছে (পরকালের) অব্যাহত শাস্তি।
(10) তবে কেউ (শয়তান) গোপনে হঠাৎ কিছু শুনে ফেললে (তার কথা ভিন্ন), তাকে পিছু তাড়া করে জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড।
(11) সুতরাং (হে রাসূল!) তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, ‘সৃষ্টি হিসেবে তারা বেশি শক্তিশালী, না আমি অন্য যা সৃষ্টি করেছি তা?’(১) নিশ্চয় আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি আঠালো মাটি থেকে।
(12) বরং তুমি (মুশরিকদের পুনরুত্থানকে অস্বীকার করা দেখে) বিস্মিত হচ্ছো; আর তারা (এ ব্যাপারে) বিদ্রুপ করছে।
(13) আর যখন তাদেরকে (উপদেশ বাণী) স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, তখন তারা স্মরণ করে না।(১)
(14) আর যখন তারা (নবীর সত্যতার প্রমাণবাহী) কোনো নিদর্শন দেখে তখন বিদ্রুপ করে।
(15) আর তারা বলে: ‘এতো স্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়!’
(16) ‘আমরা যখন মারা যাব এবং মাটি ও হাড়ে পরিণত হব তখনও কি আমরা পুনরুত্থিত হবো?’
(17) ‘আর আমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষগণও (পুনরুত্থিত হবে)?’
(18) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘হ্যাঁ, আর তোমরা অপমানিত-লাঞ্ছিত হবে।’
(19) তা হবে কেবল (দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুৎকারের) এক বিকট আওয়াজ, আর তৎক্ষণাৎ তারা (কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা) দেখতে পাবে।
(20) আর তারা (পুনরুত্থান অস্বীকারকারীরা) বলবে: ‘হায় আমাদের ধ্বংস, এ তো (দুনিয়ার জীবনের কৃতকর্মের) প্রতিদান দিবস!'
(21) (তখন তাদের উদ্দেশ্যে বলা হবে) এটাই ফয়সালা করার দিন, যা তোমরা অস্বীকার করতে।
(22) (ফিরিশতাদেরকে বলা হবে) ‘একত্র কর (শিরককারী) যালিম ও তাদের সঙ্গী-সাথীদেরকে এবং যাদের (যেসব সৃষ্টির) ইবাদাত তারা করত তাদেরকে।
(23) ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে (যাদের পূজা করত)। আর তাদেরকে (জাহান্নামের) আগুনের পথে নিয়ে যাও।’
(24) ‘আর তাদেরকে (জাহান্নামে প্রবেশের পূর্বে হিসাবের উদ্দেশ্যে) থামাও, অবশ্যই তারা জিজ্ঞাসিত হবে।’
(25) (তাদেরকে ধমক দিয়ে বলা হবে) ‘তোমাদের কী হল, তোমরা একে অপরকে সাহায্য করছ না?’(১)
(26) বরং তারা হবে আজ আত্মসমর্পণকারী।(১)
(27) আর তারা একে অপরের মুখোমুখি হয়ে (পরস্পর দোষারোপ ও ঝগড়া করে) জিজ্ঞাসা করবে,
(28) তারা (অনুসারিরা নেতাদের উদ্দেশ্য করে) বলবে: ‘তোমরাই তো আমাদের কাছে দ্বীন ও হকের দোহাই দিয়ে আসতে।’(১)
(29) প্রতিউত্তরে তারা (নেতৃস্থানীয় কাফিররা) বলবে: (এখন আমাদেরকে কেন দোষ দিচ্ছো ?) ‘বরং তোমরা তো মু’মিন ছিলে না।’
(30) ‘আর তোমাদের ওপর তো আমাদের কোন কর্তৃত্ব ছিল না; বরং তোমরা ছিলে (কুফরী, শিরক ও পথভ্রষ্টতায়) সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’
(31) ‘তাই আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের রবের (শাস্তির) বাণী সত্য হয়েছে; নিশ্চয় আমরা (আল্লাহর অঙ্গীকার অনুযায়ী জাহান্নামের শাস্তি) আস্বাদন করব।’
(32) ‘আর আমরা তোমাদেরকে (পথভ্রষ্টতা ও কুফরীর প্রতি আহ্বান করে) বিভ্রান্ত করেছিলাম; কারণ আমরা নিজেরাই ছিলাম বিভ্রান্ত।’
(33) নিশ্চয় তারা (অনুসারী ও অনুসৃতরা পৃথিবীতে অপরাধের ক্ষেত্রে যেভাবে অংশীদার ছিল) সেদিন শাস্তিতেও একইভাবে অংশীদার হবে।
(34) অপরাধীদের সাথে আমি এমন আচরণই করে থাকি।(১)
(35) তাদেরকে (এসব মুশরিকদেরকে দুনিয়াতে) যখন বলা হত, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই’; তখন নিশ্চয় তারা অহংকার করত।
(36) আর (কুফরীর ওপর প্রমাণ পেশ করতে গিয়ে) তারা বলত: ‘আমরা কি এক পাগল কবির (মুহাম্মাদের) কথায় আমাদের উপাস্যদের ছেড়ে দিবো?’
(37) বরং সে সত্য (কিতাব) নিয়ে এসেছিল এবং সে রাসূলদেরকে সত্য বলে ঘোষণা দিয়েছিল।
(38) (হে মুশরিকরা!) অবশ্যই তোমরা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদনকারী।
(39) আর তোমরা (দুনিয়ার জীবনে কুফরী ও পাপাচারের) যে আমল করতে, (আজ) শুধু তারই প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে।
(40) অবশ্য আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দারা ছাড়া (তারা তা থেকে রেহাই পাবে);
(41) তাদের জন্য (জান্নাতে) থাকবে নির্ধারিত রিযক,
(42) ফলমূল; আর তারা (তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি ও রবের চেহারা দর্শন লাভের মাধ্যমে) সম্মানিত হবে,
(43) নি‘আমত-পূর্ণ জান্নাতে,
(44) মুখোমুখি পালঙ্কে আসন পেতে বসে পরস্পরের দিকে তাকাতে থাকবে।
(45) তাদের চারপাশে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে বিশুদ্ধ সুরাপাত্র,(১)
(46) তা সাদা বর্ণের, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।
(47) তাতে থাকবে না ক্ষতিকর কিছু এবং তারা এগুলো দ্বারা মাতালও হবে না।
(48) (জান্নাতে) তাদের কাছে থাকবে আনতনয়না(১), ডাগরচোখা (হূর)।
(49) তারা যেন সুরক্ষিত ডিম।(১)
(50) অতঃপর তারা (জান্নাতীরা) মুখোমুখি হয়ে পরস্পরকে (তাদের অতীত ও দুনিয়াতে সংঘটিত বিষয়ে) জিজ্ঞাসা করবে।
(51) তাদের একজন বলবে, (‘পৃথিবীতে পুনরুত্থান অস্বীকারকারী) আমার এক সঙ্গী ছিল’,
(52) সে (আমাকে অস্বীকার ও ঠাট্টার ছলে) বলত: ‘তুমি কি সে লোকদের অন্তর্ভুক্ত যারা (পুনরুত্থানে) বিশ্বাস করে।’
(53) ‘আমরা যখন মরে যাব এবং (পচে-গলে) মাটি ও হাড়ে পরিণত হব, তখনও কি আমাদেরকে (পুনরুত্থান করে দুনিয়ার কৃতকর্মের) প্রতিফল দেয়া হবে’?
(54) সে (তার জান্নাতী সাথীদেরকে) বলবে: ‘তোমরা কি উঁকি দিয়ে (পুনরুত্থানে অবিশ্বাসী আমার সেই সাথীর পরিণতি) দেখতে চাও?’
(55) অতঃপর সে উঁকি দিয়ে দেখবে এবং তাকে (পৃথিবীর সঙ্গীকে) জাহান্নামের মধ্যস্থলে দেখতে পাবে।
(56) সে বলবে: ‘আল্লাহর শপথ! তুমি তো আমাকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিলে।’(১)
(57) ‘(ঈমান ও আমলের তাওফীকের পথ নির্দেশের মাধ্যমে) আমার রবের অনুগ্রহ না থাকলে, আমিও তো (জাহান্নামে) হাযিরকৃতদের একজন হতাম।’
(58) (জান্নাতবাসী ব্যক্তি বলবে) ‘তাহলে আমরা (জান্নাতবাসীরা) কি আর মৃত্যুবরণকারী হব না?
(59) ‘(দুনিয়ার জীবনে) আমাদের প্রথম মৃত্যু ছাড়া। আর আমরা (এখন কাফিরদের ন্যায়) শাস্তিপ্রাপ্ত হব না।’(১)
(60) ‘নিশ্চয় এটি(১) মহাসাফল্য!’
(61) এরূপ সাফল্যের জন্যই আমলকারীদের আমল করা উচিত।
(62) আপ্যায়নের জন্য এগুলো(১) উত্তম না যাক্কূম বৃক্ষ?(২)
(63) নিশ্চয় আমি তাকে (যাক্কুম বৃক্ষকে) যালিমদের জন্য করে দিয়েছি পরীক্ষাস্বরূপ।(১)
(64) নিশ্চয় এ (যাক্কুম) বৃক্ষটি জাহান্নামের তলদেশ থেকে উদ্গত হয়।
(65) এর ফল (এমন কুৎসিত-বিশ্রী) যেন শয়তানের মাথা;(১
(66) নিশ্চয় তারা (জাহান্নামীরা) তা থেকে খাবে এবং তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে।
(67) তদুপরি (উক্ত খাবারের পর) তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ।
(68) তারপর তাদের প্রত্যাবর্তন হবে জাহান্নামের আগুনেরই দিকে।
(69) নিশ্চয় এরা (জাহান্নামীরা) নিজেদের পিতৃপুরুষদেরকে পথভ্রষ্ট পেয়েছিল;(১)
(70) ফলে তারাও (ভ্রষ্টতার পথে) তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে দ্রুত ছুটে চলেছিল।
(71) আর নিশ্চয় এদের আগে (তাদের) পূর্ববতীদের অধিকাংশ মানুষও পথভ্রষ্ট হয়েছিল।(১)
(72) আর অবশ্যই আমি তাদের কাছে সতর্ককারী (রাসূল)দেরকে পাঠিয়েছিলাম;
(73) সুতরাং (হে রাসূল! তুমি) দেখ, যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল, তাদের পরিণতি কী হয়েছিল!
(74) তবে আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দারা ছাড়া।
(75) আর অবশ্যই নূহ (তার মিথ্যারোপকারী জাতির বিরুদ্ধে বদ দু‘আ করার সময়ে ) আমাকে ডেকেছিল, আর আমি কতইনা উত্তম সাড়াদানকারী!
(76) আর আমি তাকে ও তার পরিজনকে মহাবিপদ (মহা প্রলয়ংকরী প্লাবন) থেকে উদ্ধার করেছিলাম।
(77) আর তার (মু’মিন) বংশধরদেরকেই আমি অবশিষ্ট রেখেছিলাম,
(78) আর আমি পরবর্তীদের মধ্যে তার স্মরণ (সুনাম-সুখ্যাতি) রেখে দিয়েছিলাম।
(79) সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে নূহের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
(80) (নূহকে যেভাবে প্রতিদান দিয়েছি) নিশ্চয় আমি এভাবে সৎকর্মশীলদের পুরস্কার দিয়ে থাকি।
(81) নিশ্চয় সে ছিল আমার মু’মিন বান্দাদের একজন।
(82) তারপর আমি অন্যদের (প্লাবনে) ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।
(83) আর নিশ্চয় ইবরাহীম তার দীনের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত।(১)
(84) (হে নবী! স্মরণ করো) যখন সে (শিরকমুক্ত হয়ে) বিশুদ্ধচিত্তে তার রবের নিকট উপস্থিত হয়েছিল।
(85) যখন সে তার পিতা ও তার সম্পপ্রদায়কে বলেছিল: ‘তোমরা (আল্লাহর পরিবর্তে) কিসের ইবাদাত করছ?’
(86) ‘তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে মিথ্যা উপাস্যগুলোকে পেতে চাও?’
(87) ‘তাহলে সৃষ্টিকুলের রব সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী।’(১)
(88) অতঃপর সে (ইবরাহীম তার জাতির সাথে মেলায় বের হওয়া থেকে বাঁচার পথ খোঁজার জন্য) তারকারাজির দিকে একবার দৃষ্টি দিল।
(89) তারপর সে বলল: ‘আমি তো অসুস্থ।’
(90) অতঃপর তারা তাকে পিছনে রেখে (মেলায়) চলে গেল।
(91) তারপর চুপে চুপে সে তাদের দেবতাদের কাছে গেল এবং (সেগুলোকে বিদ্রুপের ছলে) বলল: ‘তোমরা কি (তোমাদের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতকৃত খাবার) খাবে না?’
(92) ‘তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা কথা বলছ না?’(১)
(93) অতঃপর (সেগুলোকে ভেঙ্গে ফেলার জন্যে) সে তাদের ওপর ডান হাতে সজোরে আঘাত হানল।
(94) তখন (তার সম্প্রদায়ের মূর্তিপূজারী) লোকেরা তার দিকে দ্রুত ছুটে আসল।
(95) সে (ইবরাহীম) বলল: ‘তোমরা নিজেরা খোদাই করে যেগুলোকে বানাও, তোমরা কি সেগুলোেই উপাসনা কর?’
(96) ‘অথচ আল্লাহই তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কিছু তৈরি কর, তা সৃষ্টি করেছেন?’
(97) তারা (প্রমাণ ভিত্তিক জবাব দিতে ব্যর্থ হয়ে) বলল: ‘তার জন্য একটি স্থাপনা (অগ্নিকুণ্ড) তৈরি কর, তারপর তাকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ কর।’
(98) আর তারা তার ব্যাপারে(১) একটা ষড়যন্ত্র করতে চেয়েছিল; কিন্তু আমি (আগুনকে সুশীতল বানিয়ে) তাদেরকে সম্পূর্ণ পরাভূত করে দিলাম।
(99) আর সে (ইবরাহীম) বলল: ‘আমি আমার রবের দিকেই (হিজরত করে) যাচ্ছি, তিনি অবশ্যই আমাকে হিদায়াত করবেন।’
(100) ‘হে আমার রব, আমাকে সৎকর্মশীল একটি সুসন্তান দান করুন।’
(101) অতঃপর তাকে আমি পরম ধৈর্যশীল একজন পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলাম।
(102) অতঃপর সে (ইসমাঈল) যখন তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল(১), তখন সে বলল: ‘হে আমার প্রিয় বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে (আল্লাহর নামে) যবহ (কুরবানী) করছি। অতএব দেখ তোমার কী অভিমত।’ সে (ইসমাঈল) বলল: ‘হে আমার পিতা! আপনাকে (কুরবানীর) যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইন শা’ আল্লাহ, আমাকে আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’
(103) অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং ইবরাহীম তার পুত্রকে কাত করে শুইয়ে দিল।
(104) তখন আমি তাকে ডেকে বললাম: ‘হে ইবরাহীম!
(105) ‘তুমি তো (নিজ পুত্রকে যবহ করার চূড়ান্ত প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে) স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। নিশ্চয় আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি।’
(106) ‘নিশ্চয় এটা ছিল সুস্পষ্ট এক পরীক্ষা।’
(107) আর আমি এক মহান যবহের বিনিময়ে(১) তাকে (ইসমাঈলকে) মুক্ত করলাম।
(108) আর আমি তার জন্য পরবর্তীদের মধ্যে সুনাম-সুখ্যাতি রেখে দিয়েছি।
(109) ইবরাহীমের প্রতি সালাম।
(110) (যেভাবে ইবরাহীমকে তার আনুগত্যের প্রতিদান দিয়েছি) এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি।
(111) নিশ্চয় সে আমার মু’মিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
(112) আর আমি তাকে (আরেক পুত্র) ইসহাকের সুসংবাদ দিয়েছিলাম যে, সে হবে নবী ও সৎকর্মশীল বান্দাদের একজন।
(113) আর আমি তার ওপর এবং ইসহাকের ওপর বরকত দান করেছি। আর তাদের বংশধরদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ছিল সৎকর্মশীল এবং কিছু সংখ্যক (কুফরী, শিরক ও পাপাচারের মাধ্যমে) নিজেদের প্রতি স্পষ্ট যুলমকারী।
(114) আর নিশ্চয় আমি মূসা ও হারূনের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম,
(115) আর আমি তাদেরকে ও তাদের সম্প্রদায়কে মহাসংকট (ফিরাউনের দাসত্ব ও ডুবে যাওয়ার হাত) থেকে রক্ষা করেছিলাম।
(116) আর আমি তাদেরকে (ফিরআউন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে) সাহায্য করেছিলাম, ফলে তারাই (ফিরাউনের উপর) ছিল বিজয়ী।
(117) আর আমি উভয়কে (মূসা ও তার ভাই হারূনকে) সুস্পষ্ট কিতাব (তাওরাত) দান করেছিলাম।
(118) আর আমি দু’জনকেই সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেছিলাম।
(119) আর আমি তাদের জন্য পরবর্তীদের মধ্যে সুনাম-সুখ্যাতি রেখে দিয়েছি।
(120) মূসা ও হারূনের প্রতি সালাম (শান্তি ও নিরাপত্তা)।
(121) (যেভাবে আমি মূসা ও হারূনকে উত্তম প্রতিদান দিয়েছি) আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি।
(122) নিশ্চয় তারা দু’জনই ছিল আমার মু’মিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
(123) আর নিশ্চয় ইলইয়াসও ছিল রাসূলদের একজন।
(124) যখন সে তার জাতিকে বলেছিল: ‘তোমরা কি (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে তাঁকে) ভয় করবে না?’
(125) তোমরা কি ‘বা’ল’ ( নামক দেবতা) কেই ডাকবে আর সর্বোত্তম সৃষ্টিকর্তাকে (আল্লাহকে) পরিত্যাগ করবে?
(126) ‘আল্লাহই তোমাদের একমাত্র রব এবং তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষদেরও রব?’(১)
(127) কিন্তু তারা তাকে (ইলইয়াসকে) মিথ্যারোপ করেছিল, ফলে তাদেরকে অবশ্যই (শাস্তির জন্য) উপস্থিত করা হবে।
(128) আল্লাহর (আনুগত্যের জন্য) একনিষ্ঠ বান্দাগণ ছাড়া।(১)
(129) আর আমি তার জন্য পরবর্তীদের মধ্যে সুনাম-সুখ্যাতি রেখে দিয়েছি।
(130) ইলইয়াসের প্রতি সালাম (শান্তি ও নিরাপত্তা)।
(131) (ইলইয়াসকে যেভাবে আমি প্রতিদান দিয়েছি) নিশ্চয় আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি।
(132) নিশ্চয় সে ছিল আমার মু’মিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
(133) আর নিশ্চয় লূত ছিল রাসূলদেরই একজন।
(134) (হে রাসূল! তুমি স্মরণ করো সে সময়ের কথা) যখন আমি তাকে ও তার পরিবার পরিজন সকলকে (ধ্বংসকারী শাস্তি থেকে) রক্ষা করেছিলাম।
(135) পিছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত (অবিশ্বাসী) এক বৃদ্ধা ছাড়া।(১)
(136) অতঃপর আমি (তার জাতির অবিশ্বাসী) অবশিষ্টদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম।
(137) আর (হে মক্কাবাসীরা! সিরিয়ায় গমনকালে) তোমরা নিশ্চয় তাদের (ধ্বংসাবশেষের) ওপর দিয়ে অতিক্রম করে থাক, সকালে
(138) এবং রাতে।(১) তবুও কি তোমরা বুঝবে না?
(139) আর নিশ্চয় ইউনুসও ছিল রাসূলদের একজন।
(140) (হে রাসূল! তুমি স্মরণ করো সে সময়ের কথা) যখন সে একটি বোঝাই নৌযানের দিকে পালিয়ে গিয়েছিল।
(141) অতঃপর সে (ভাগ্য পরীক্ষার জন্য ) লটারীতে অংশগ্রহণ করল এবং তাতে সে হেরে গেল।(১)
(142) তারপর বড় মাছ তাকে গিলে ফেলল। আর সে (নিজেকে) ধিক্কার দিচ্ছিল।(১)
(143) অতঃপর সে যদি (মাছের পেটে থাকাবস্থায়) আল্লাহর তাসবীহ পাঠকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হত,
(144) তাহলে সে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত তার (মাছের) পেটেই থেকে যেত।(১)
(145) অতঃপর আমি তাকে এক তৃণলতাহীন প্রান্তরে (নদীর তীরে) নিক্ষেপ করলাম এবং সে ছিল অসুস্থ।
(146) (সেখানে তাকে ছায়া দেয়ার জন্য) আর আমি একটি ইয়াকতীন(১) গাছ তার ওপর উদগত করলাম।
(147) এবং আমি তাকে (তার জাতির) এক লক্ষ বা তার চেয়েও বেশি লোকের কাছে পাঠালাম।
(148) অতঃপর তারা ঈমান আনল, ফলে আমি তাদেরকে কিছুকাল পর্যন্ত (দুনিয়াকে) উপভোগ করতে দিলাম।
(149) অতএব (হে রাসূল! তুমি) তাদেরকে (মুশরিকদেরকে) জিজ্ঞাসা কর: ‘তোমার রবের জন্য কি কন্যা সন্তান এবং তাদের জন্য পুত্র সন্তান?’(১)
(150) অথবা আমি কি ফিরিশতাদেরকে নারীরূপে সৃষ্টি করেছিলাম, আর তারা তা প্রত্যক্ষ করছিল?(১)
(151) জেনে রাখ, তারা (মুশরিকরা) অবশ্যই তাদের মনগড়া কথা বলে যে,
(152) ‘আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেন’ অথচ তারা অবশ্যই (এই দাবিতে) মিথ্যাবাদী।
(153) আল্লাহ কি পুত্রসন্তানদের পরিবর্তে কন্যা সন্তানদের বেছে নিয়েছেন?(১)
(154) (হে মুশরিকরা!) তোমাদের কী হল? তোমরা কেমন বিচার করছ!(১)
(155) তাহলে কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?
(156) নাকি (নিজেদের দাবির পক্ষে) তোমাদের কোন সুস্পষ্ট দলীল- প্রমাণ আছে?
(157) অতএব তোমরা (নিজেদের দাবিতে) সত্যবাদী হলে, তোমাদের (প্রমাণবিশিষ্ট) কিতাব নিয়ে আস।
(158) আর তারা (মুশরিকরা) আল্লাহ ও জিন জাতির মধ্যে একটা বংশসম্পর্ক সাব্যস্ত করেছে; অথচ জিন জাতি জানে যে, নিশ্চয় তাদেরকেও (হিসাবের উদ্দেশ্যে কিয়ামতের ময়দানে) উপস্থিত করা হবে।
(159) তারা (মুশরিকরা) যা (যে সন্তান কিংবা অন্য কোন শিরক) আরোপ করে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্ৰ মহান।
(160) তবে আল্লাহর (আনুগত্যের জন্য) একনিষ্ঠ বান্দাগণ ছাড়া।(১)
(161) (হে মুশরিকরা!) নিশ্চয় তোমরা এবং তোমরা (আল্লাহর পরিবর্তে) যাদের ইবাদাত করো-
(162) তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে (একনিষ্ঠ বান্দাদের) কাউকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না।
(163) শুধু জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশকারী ছাড়া। (১)
(164) আর (ফিরিশতাগণ বললেন, আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে) আমাদের প্রত্যেকের জন্যই একটা নির্ধারিত স্থান রয়েছে।
(165) ‘আর আমরা (ফিরিশতারা, আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্যে) তো সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান
(166) এবং আমরা অবশ্যই তাঁর পবিত্ৰতা ও মহিমা ঘোষণাকারী।’
(167) আর তারা (মক্কার মুশরিকরা) অবশ্যই বলে আসছিল,
(168) ‘যদি আমাদের কাছে পূর্বর্তীদের মত কোন উপদেশ (কিতাব) থাকত,
(169) ‘তাহলে অবশ্যই আমরা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা হতাম।’(১)
(170) অতঃপর তারা তা (আল কুরআন) অস্বীকার করল। অতএব শীঘ্রই তারা জানতে পারবে (এর ভয়াবহ পরিণাম)।
(171) আর নিশ্চয় আমার প্রেরিত বান্দাদের (রাসূলদের) জন্য আমার কথা পূর্ব নির্ধারিত হয়েছে যে,
(172) নিশ্চয় তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে
(173) আর নিশ্চয় আমার বাহিনীই (শত্রুদের ওপর) বিজয়ী হবে।
(174) অতএব (হে রাসূল!) তুমি তাদের (এই হঠকারী মুশরিকদের) থেকে কিছু কাল পর্যন্ত(১) মুখ ফিরিয়ে থাক।
(175) আর তাদেরকে পর্যবেক্ষণ কর(১), অচিরেই তারাও দেখবে (শাস্তি)।
(176) তারা কি আমার শাস্তির জন্যে তাড়াহুড়ো করছে?
(177) আর যখন আল্লাহর শাস্তি তাদের আঙিনায় নেমে আসবে, তখন সতর্ককৃতদের সকাল কতই না মন্দ হবে!
(178) (হে রাসূল!) তুমি আরো কিছু কাল পর্যন্ত(১) তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাক।
(179) আর (হে রাসূল! তুমি শাস্তি প্রত্যক্ষ করতে) তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করো, অচিরেই তারা (শাস্তি) দেখতে পাবে।
(180) তারা যা আরোপ করে তোমার রব তা থেকে পবিত্র মহান, সম্মান ও ক্ষমতার মালিক।
(181) আর রাসূলদের প্রতি সালাম (শান্তি ও নিরাপত্তা)।
(182) আর সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহরই জন্য।