39 - Az-Zumar ()

|

(1) এই কিতাব (আল কুরআন) পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।

(2) (হে রাসূল!) নিশ্চয় আমি তোমার কাছে যথাযথভাবে এই কিতাব নাযিল করেছি। অতএব তুমি আল্লাহর ‘ইবাদাত করো তাঁরই আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে।(১)

(3) জেনে রেখো, (শিরকমুক্ত) বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য আল্লাহর জন্যই। আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদেরকে (মূর্তি ও দেবতাকে) অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তারা বলে: ‘আমরা কেবল এজন্যই তাদের ‘ইবাদাত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করিয়ে দিবে।’ যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে আল্লাহ নিশ্চয় সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে (কিয়ামত দিবসে) ফয়সালা করে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ চরম মিথ্যাবাদী ও (তাঁর নি‘আমতকে অস্বীকারকারী) কাফিরকে হিদায়াত দেন না।

(4) আল্লাহ যদি সন্তান গ্রহণ করতে ইচ্ছা করতেন, তাহলে তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তা থেকে যাকে ইচ্ছা (সন্তান হিসেবে) বেছে নিতেন; কিন্তু তিনি পবিত্র মহান। তিনিই আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয় (তাঁর কোন শরীক নেই), (তিনি সৃষ্টিকুলের ওপর) প্রবল প্রতাপশালী।

(5) তিনি (এক মহান উদ্দেশ্যে) যথাযথভাবে আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবিষ্ট করেন আর দিনকে প্রবিষ্ট করেন রাতের মধ্যে এবং সূর্য ও চাঁদকে নিয়ন্ত্রণাধীন করেছেন। প্রত্যেকে এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলছে। জেনে রাখ, তিনি মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।

(6) তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি (আদম) থেকে, তারপর তা থেকে তার জোড়া (স্ত্রী হাওয়াকে) সৃষ্টি করেছেন। আর চতুষ্পদ জন্তু থেকে তোমাদের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন আট জোড়া(১); তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন তোমাদের মাতৃগর্ভে: এক সৃষ্টির পর আরেক সৃষ্টি, তিনটি অন্ধকারে(২); তিনিই হলেন আল্লাহ; তোমাদের রব; রাজত্ব তাঁরই; তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তারপরও তোমাদেরকে (তাঁর ইবাদাত পরিহার করে) কোথায় ফিরানো হচ্ছে?

(7) তোমরা যদি কুফরী কর তবে (জেনে রাখ,) আল্লাহ তোমাদের থেকে অমুখাপেক্ষী। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না এবং তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও তবে তোমাদের জন্য তিনি তা পছন্দ করেন। আর কোন বোঝা বহনকারী, অপরের বোঝা বহন করবে না। তারপর (কিয়ামতের দিন) তোমাদের রবের দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তোমরা (দুনিয়াতে) যে আমল করতে, তিনি তা তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন। নিশ্চয় তিনি (বান্দাদের) অন্তরে যা (লুকায়িত) আছে, সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।

(8) আর যখন মানুষকে দুঃখ-দুর্দশা স্পর্শ করে, তখন সে (তার বিপদ মুক্তির জন্য) একাগ্রচিত্তে তার রবকে ডাকতে থাকে। তারপর তিনি যখন তাকে নিজের পক্ষ থেকে নি‘আমত দান করেন (বিপদ কেটে যায়) তখন সে ভুলে যায়, ইতঃপূর্বে কি কারণে তাঁর কাছে দু‘আ করেছিল। উপরন্তু আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করে, অন্যকে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য। (হে রাসূল! তুমি এরূপ লোককে) বলো: ‘তুমি কিছুকাল কুফরী উপভোগ কর; নিশ্চয় তুমি (কিয়ামত দিবসে) জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’

(9) যে ব্যক্তি রাতের বিভিন্ন প্রহরে (আল্লাহর উদ্দেশ্যে) সাজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রবের রহমত কামনা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না?) (হে রাসূল! তুমি) বলো: ‘যারা (আল্লাহকে চিনে ও তাদের অপরিহার্য করণীয় বিধান) জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান?’ বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।

(10) (হে রাসূল! তুমি আমার মু’মিন বান্দাহদেরকে) বলো: ‘হে আমার মু’মিন বান্দারা! যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তোমাদের রবকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় করো। যারা এ দুনিয়ায় ভালো কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে (দুনিয়া ও আখিরাতে) কল্যাণ।(১) আর আল্লাহর জমিন প্রশস্ত।(২) নিশ্চয় ধৈর্যশীলদেরকে (পরকালে) বিনা হিসেবে পূর্ণরূপে তাদের প্রতিদান দেয়া হবে।’

(11) (হে রাসূল!) বল: ‘নিশ্চয় আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন আল্লাহর-ই জন্য আনুগত্যকে একনিষ্ঠ করে ইবাদাত করি ।’

(12) ‘আমাকে আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আমি (এই উম্মতের) প্রথম মুসলিম হই।’

(13) (হে রাসূল!) বলো: ‘আমি যদি আমার রবের অবাধ্য হই, তবে আমি এক মহাদিবসের (কিয়ামত দিবসের) শাস্তির ভয় করি।’

(14) (হে রাসূল!) বলো: ‘আমি (খাঁটি মনে) আল্লাহর-ই জন্য আমার আনুগত্যকে একনিষ্ঠ করে তারই ইবাদাত করি।’

(15) ‘অতএব (হে মুশরিকরা!) তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইচ্ছা তার ‘ইবাদাত কর। (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলে দাও: ‘নিশ্চয় তারাই ক্ষতিগ্রস্ত, যারা কিয়ামত দিবসে নিজেদের ও নিজেদের পরিবারবর্গের (জাহান্নামে প্রবেশের মাধ্যমে ) ক্ষতি সাধন করে । জেনে রেখো, এটাই (জাহান্নামে প্রবেশই) স্পষ্ট ক্ষতি।

(16) তাদের জন্য তাদের ওপরের দিকে থাকবে (জাহান্নামের) আগুনের মেঘমালা(১) আর তাদের নিচের দিকেও থাকবে অনুরূপ আগুনের মেঘমালা। উপরিউক্ত শাস্তি দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ভয় দেখান। ‘হে আমার বান্দারা, তোমরা (আমার আদেশ-নিষেধ মানার মাধ্যমে) আমাকেই ভয় করো।’

(17) আর যারা তাগূতের(১) উপাসনা পরিহার করে এবং আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তাদের জন্য রয়েছে (জান্নাতের) সুসংবাদ। অতএব (হে রাসূল! তুমি) আমার বান্দাদেরকে (জান্নাতের) সুসংবাদ দাও।

(18) যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে, অতঃপর (ভালো-মন্দের পার্থক্য করে) তার মধ্যে যা উত্তম তা অনুসরণ করে, তাদেরকেই আল্লাহ হিদায়াত দান করেন, আর তারাই বুদ্ধিমান।

(19) যার ব্যাপারে (কুফরী ও পাপের কারণে) শাস্তির আদেশ অবধারিত হয়েছে, (হে রাসূল!) তুমি কি তাকে মুক্তি দিতে পারবে যে জাহান্নামে আছে?

(20) কিন্তু যারা স্বীয় রবকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য কারার মাধ্যমে) ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে (জান্নাতে) সুউচ্চ আবাসস্থল, যার একটি অপরটির ওপর অবস্থিত। তার তলদেশ দিয়ে নদ-নদী প্রবাহিত। এটি আল্লাহর প্রতিশ্রুতি; আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।

(21) তুমি কি দেখ না, আল্লাহ আকাশ থেকে (বৃষ্টির) পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর জমিনে তা (নদ-নদী ও) ঝর্ণা হিসেবে প্রবাহিত করেন, তারপর তা দিয়ে নানা বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন, তারপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তোমরা তা দেখতে পাও হলুদ বর্ণের, অবশেষে তিনি তা খড়-খুটায় পরিণত করেন। অবশ্যই এতে (উল্লিখিত বিষয়সমূহে) বুদ্ধিমানদের জন্য উপদেশ রয়েছে।

(22) আল্লাহ ইসলামের জন্য যার বক্ষ খুলে দিয়েছেন, ফলে সে তার রবের পক্ষ থেকে নূরের (জ্ঞানের) ওপর রয়েছে, (সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়?) অতএব ধ্বংস সে সব কঠিন হৃদয়ের লোকদের জন্য যারা আল্লাহর স্মরণ বিমুখ! তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিপতিত।

(23) আল্লাহ নাযিল করেছেন সর্বোৎকৃষ্ট বাণী (আল কুরআন), সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব(১) যা বারবার পাঠ করা হয়। যারা তাদের রবকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করে) ভয় করে, এতে (এ কিতাব শোনার ফলে) তাদের গা শিহরিত হয়, তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়ে যায়। এটা (আল কুরআন ও এর প্রভাব) আল্লাহর হিদায়াত, তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হিদায়াত করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই।

(24) যে ব্যক্তি (কুফরীতে লিপ্ত থাকার কারণে) কিয়ামতের দিন তার মুখমণ্ডল দ্বারা (জাহান্নামের) কঠিন শাস্তি ঠেকাতে চাইবে, (সে কি তার মত যে হিদায়েতের ওপর থাকায় শাস্তি থেকে নিরাপদ?) আর যালিমদেরকে (ধমকির স্বরে) বলা হবে: ‘তোমরা (দুনিয়াতে) যা অর্জন করতে, তার স্বাদ আস্বাদন কর।’

(25) তাদের (এসব মুশরিকদের) পূর্বে যারা ছিল, তারাও (রাসূলদেরকে) মিথ্যারোপ করেছিল। ফলে তাদের প্রতি এমনভাবে শাস্তি এসেছিল যে, তারা অনুভব করতে পারেনি।

(26) ফলে আল্লাহ (শাস্তির মাধ্যমে) তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা আস্বাদন করালেন, আর আখিরাতের শাস্তি নিশ্চয় আরো বড় কঠিন, যদি তারা জানত!

(27) আর নিশ্চয় আমি এই আল কুরআনে মানুষের জন্য প্রত্যেক প্রকার দৃষ্টান্ত(১) বর্ণনা করেছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

(28) বক্রতামুক্ত আরবী (ভাষায় নাযিলকৃত) আল কুরআন, যাতে তারা (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) তাকওয়া অবলম্বন করতে পারে।

(29) আল্লাহ (মুশরিক ও একত্ববাদীর) একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন: এক ব্যক্তি যার মনিব অনেক, যারা পরস্পর বিরোধী; পক্ষান্তরে আরেক ব্যক্তি, যে এক মনিবের অনুগত, এ দু’জনের অবস্থা কি সমান? সকল প্রশংসা আল্লাহর; কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।

(30) নিশ্চয় (হে রাসূল!) তুমি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।

(31) তারপর (হে মানুষ!) নিশ্চয় তোমরা কিয়ামতের দিন তোমাদের রবের সামনে পরস্পর বাক-বিতণ্ডা করবে।(১)

(32) সুতরাং তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে , যে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে(১) এবং তার কাছে সত্য (দ্বীন) আসার পরও তা অস্বীকার করে? জাহান্নামই কি কাফিরদের আবাসস্থল নয়?

(33) পক্ষান্তরে (নবীগণ) যে সত্য (দ্বীন) নিয়ে এসেছে এবং যে ব্যক্তি তা সত্য বলে মেনে নিয়েছে (ও আমল করেছে), তারাই মুত্তাকী (স্বীয় রবের আদেশ-নিষেধ মান্যকারী)

(34) তাদের জন্য তাদের রবের কাছে (জান্নাতে উপভোগের) তা-ই রয়েছে যা তারা চাইবে। এটাই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান।

(35) যাতে তারা (দুনিয়াতে) যেসব মন্দ কাজ করেছিল, আল্লাহ তা (তাদের তাওবার কারণে) ক্ষমা করে দেন এবং তারা যে সর্বোত্তম আমল করত, তার প্রতিদানে তাদেরকে (পরকালে) পুরস্কৃত করেন।

(36) আল্লাহ কি তাঁর বান্দা (মুহাম্মাদ) এর (হেফাযতের) জন্য যথেষ্ট নন? অথচ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের (দেবতাদের পক্ষ থেকে ক্ষতির) ভয় দেখায়। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই।

(37) আর আল্লাহ যাকে হিদায়াত করেন, তার জন্য কোন পথভ্রষ্টকারী নেই। আল্লাহ কি মহাপরাক্রমশালী প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন?

(38) আর (হে রাসূল!) তুমি যদি তাদেরকে (মুশরিকদেরকে) জিজ্ঞাসা কর, কে আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে: ‘আল্লাহ’। (হে রাসূল!) বলো: ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ- আল্লাহ আমার কোন ক্ষতি চাইলে, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের (যে সব দেবতাদেরকে) ডাক, তারা কি সেই ক্ষতি দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমাকে রহমত করতে চাইলে, তারা (সেসব দেবতারা) সেই রহমত বারণ করতে পারবে?! বলো: ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ তাওয়াক্কুলকারীগণ তাঁর ওপরই তাওয়াক্কুল করে।

(39) (হে রাসূল!) বল, ‘হে আমার জাতি! তোমরা স্ব স্ব অবস্থানে কাজ করে যাও, নিশ্চয় আমিও আমার কাজ করব। অতঃপর শীঘ্রই তোমরা (প্রত্যেকের পরিণতির কথা) জানতে পারবে।’(১)

(40) (অচিরেই তোমরা জানতে পারবে,) কার ওপর (দুনিয়াতে) লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি নেমে আসবে এবং কার ওপর (পরকালে) স্থায়ী শাস্তি আপতিত হবে?

(41) (হে রাসূল!) নিশ্চয় আমি মানবজাতির (হিদায়াতের) জন্য তোমার প্রতি যথাযথভাবে এ কিতাব (আল কুরআন) নাযিল করেছি। তাই যে সৎপথ অবলম্বন করে, সে তা নিজের জন্যই করে এবং যে পথভ্রষ্ট হয় সে নিজের ক্ষতির জন্যই পথভ্রষ্ট হয়। আর তুমি তাদের তত্ত্বাবধায়ক নও।(১)

(42) আল্লাহ জীবসমূহের প্রাণ হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যারা মরেনি (আয়ু শেষ হয়নি) তাদের নিদ্রার সময়। তারপর যার জন্য তিনি মৃত্যুর ফয়সালা করেন, তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অন্যগুলো ফিরিয়ে দেন (তাঁর জ্ঞানে নির্ধারিত) একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।(১)

(43) তবে কি তারা (মুশরিকরা) আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে সুপারিশকারী গ্রহণ করেছে? (হে রাসূল! তুমি এসব মুশরিকদেরকে) বলো: ‘তারা কোন কিছুর মালিক না হলেও এবং তারা না বুঝলেও? (তখনও কি তোমরা তাদেরকে সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করবে?)

(44) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘সকল সুপারিশ আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব একমাত্র তাঁরই। তারপর (হিসাব ও প্রতিদানের জন্যে কিয়ামত দিবসে) তোমরা তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে।’

(45) যখন আল্লাহকে এককভাবে স্মরণ করা হয়, তখন যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর (অনীহা পোষণ করে) সংকুচিত হয়ে যায়। পক্ষান্তরে আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যগুলোর কথা বলা হলে তখনই তারা আনন্দে উৎফুল হয়।

(46) (হে রাসূল!) বলো: ‘হে আল্লাহ, আসমানসমূহ ও জমিনের (পূর্বের নমুনা ছাড়া) স্রষ্টা, গায়িব ও উপস্থিত বিষয়াদির জ্ঞানী; তুমি তোমার বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করে দিবে, যাতে তারা মতবিরোধ করছে।’(১)

(47) আর যারা (শিরক ও পাপাচারের মাধ্যমে) যুলম করেছে, যদি জমিনে যা আছে, তা সব এবং এর সমপরিমাণ সম্পদও তাদের জন্য হয়; তবে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে মুক্তিপণস্বরূপ তারা তা দিয়ে দিবে।(১) সেখানে আল্লাহর কাছে থেকে তাদের জন্য এমন কিছু (নানা ধরনের শাস্তি) প্রকাশিত হবে, যা তারা কখনো কল্পনাও করত না।

(48) আর তারা যা (যে শিরক ও পাপ কর্ম) অর্জন করেছিল, তার মন্দ ফল (শাস্তি) তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং (দুনিয়াতে) তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত, তা-ই তাদেরকে পরিবেষ্টন করবে।

(49) অতঃপর যখন কোন বিপদাপদ (অবিশ্বাসী) মানুষকে স্পর্শ করে, তখন সে আমাকে ডাকে। তারপর যখন আমি আমার পক্ষ থেকে (সুস্থতা কিংবা সম্পদের) নি‘আমত দিয়ে তাকে অনুগ্রহ করি তখন সে বলে, ‘জ্ঞানের কারণেই কেবল আমাকে তা দেয়া হয়েছে।’ বরং এটা একটি পরীক্ষা। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।

(50) অবশ্যই তাদের পূর্ববর্তী কাফিররাও এ ধরনের কথা বলেছিল; কিন্তু তারা যা অর্জন করেছে, তা তাদের কোন উপকারে আসেনি।

(51) ফলে তাদের (শিরক ও পাপাচার) কৃতকর্মের মন্দ পরিণতি তাদের উপর আপতিত হয়েছিল। আর এদের মধ্যে যারাই (শিরক ও পাপাচারের মাধ্যমে) যুলম করে, তাদের ওপরেও (পূর্ববর্তী লোকজনের মতো) তাদের কৃতকর্মের মন্দ পরিণতি শীঘ্রই আপতিত হবে। আর তারা (আল্লাহকে) অক্ষম করতে পারবে না।

(52) এ সব মুশরিকরা কি জানে না, আল্লাহ (পরীক্ষা করতে) যাকে ইচ্ছা করেন রিযক প্রশস্ত করে দেন আর যাকে ইচ্ছা (রিযক) সংকীর্ণ করে দেন? নিশ্চয় এতে মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।(১)

(53) (হে রাসূল! আমার বান্দাহদেরকে) বলো: ‘হে আমার বান্দাগণ! যারা (শিরক ও পাপাচার করে) নিজেদের ওপর অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। (তোমরা তাওবা করলে) অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয় তিনি (তাওবাকারীদের প্রতি) অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’

(54) আর তোমরা (তাওবা ও নেক আমালের মাধ্যমে) তোমাদের রবের দিকে প্রত্যাবর্তন করো এবং তোমাদের ওপর শাস্তি আসার পূর্বেই তার কাছে আত্মসমর্পণ কর। অতঃপর (শাস্তি এসে গেলে) তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না।(১)

(55) আর তোমরা অনুসরণ কর আল কুরআনের যা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে (রাসূলের উপর) সর্বোত্তম বাণী হিসাবে নাযিল করা হয়েছে, তোমাদের ওপর আকস্মিকভাবে শাস্তি আসার পূর্বে; অথচ তোমরা উপলব্ধি করতে পারবে না।

(56) (কিয়ামত দিবসে) যাতে কাউকেও বলতে না হয়, ‘হায় আফসোস! (কুফরী ও পাপাচারে লিপ্ত হয়ে) আল্লাহর হক আদায়ে আমি যে শৈথিল্য করেছিলাম, তার জন্য (এ শাস্তি)। আর আমি কেবল ঠাট্টা-বিদ্রুপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।’

(57) অথবা যাতে কাউকে একথাও বলতে না হয়, ‘আল্লাহ যদি আমাকে হিদায়াত দিতেন, তাহলে অবশ্যই আমি (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করে) মুত্তাকীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’

(58) অথবা শাস্তি প্রত্যক্ষ করার পর যাতে কাউকে একথাও বলতে না হয়, ‘আমার যদি একবার (দুনিয়াতে) ফিরে যাওয়ার সুযোগ হত, তাহলে আমি (তাওবা ও আমল করে) সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’

(59) (আল্লাহ বলবেন,) হ্যাঁ, অবশ্যই তোমার কাছে আমার নিদর্শনাবলি এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলোকে মিথ্যারোপ করেছিলে এবং তুমি অহংকার করেছিলে। আর তুমি কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।

(60) আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কিয়ামতের দিন তুমি তাদের চেহারাগুলো (দুর্ভাগ্যের লক্ষণ স্বরূপ) কালো দেখতে পাবে। অহংকারীদের বাসস্থান জাহান্নামের মধ্যে নয় কি?

(61) আর যারা (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করে) তাকওয়া অবলম্বন করেছে, আল্লাহ তাদেরকে সাফল্যসহ (জান্নাতে প্রবিষ্ট করার মাধ্যমে) উদ্ধার করবেন। তাদেরকে কোন অকল্যাণ (শাস্তি) স্পর্শ করবে না এবং তারা কোন ব্যাপারে চিন্তিতও হবে না।

(62) আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর তত্ত্বাবধায়ক।

(63) আসমানসমূহ ও জমিনের (কল্যাণসমূহের) চাবিসমূহ তাঁরই কাছে। আর যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে, তারাই (দুনিয়া ও আখিরাতে) ক্ষতিগ্রস্ত।

(64) (হে রাসূল! যারা তোমাকে গাইরুল্লাহর ইবাদাত করতে আহ্বান করে, তাদেরকে) বল: ‘হে অজ্ঞরা, তোমরা কি আমাকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাত করার আদেশ করছ?’

(65) আর অবশ্যই তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি (আল্লাহর সাথে) শিবক করলে তোমার সমস্ত আমল নিষ্ফল হবেই এবং অবশ্যই তুমি (ইহকালে দ্বীন হারিয়ে এবং পরকালে জাহান্নামে প্রবেশ করে) ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

(66) বরং তুমি আল্লাহরই ইবাদাত কর এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও।

(67) আর তারা (মুশরিকরা) আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি; অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে, তিনি তাদের অনেক ঊর্ধ্বে।

(68) আর (যখন ফিরিশতা কর্তৃক প্রথমবার) শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত আসমানসমূহে যারা আছে এবং জমিনে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে (মরে) যাবে। তারপর (দ্বিতীয়বার) আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন সকলে (জীবিত হয়ে) দাঁড়িয়ে (কিয়ামত দিবসের বীভৎস দৃশ্য) তাকিয়ে দেখতে থাকবে।

(69) আর (আল্লাহ যখন বান্দাদের মাঝে ফায়সালা করার উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হবেন তখন) জমিন তার রবের নূরে আলোকিত হবে, (সকলের) আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবীগণকে ও সাক্ষীগণকে আনা হবে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে এমতাবস্থায় যে, (সেদিন) তাদের প্রতি কোন যুলম করা হবে না।

(70) আর প্রত্যেককে তার (ভালো-মন্দ) আমলের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে এবং তারা (দুনিয়াতে) যা করে সে সম্পর্কে তিনিই সর্বাধিক পরিজ্ঞাত।

(71) আর (ফিরিশতাগণ কর্তৃক) কাফিরদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে এসে পৌঁছবে, তখন তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষী (ফিরিশতা)-রা তাদেরকে বলবে: ‘তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের রবের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করত এবং এ দিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করত?’ তারা বলবে: ‘অবশ্যই এসেছিল’; কিন্তু কাফিরদের উপর শাস্তির বাণী সত্যে পরিণত হল (আমরা তো কাফির ছিলাম)

(72) তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা জাহান্নামের দরজাসমূহে প্রবেশ কর, তাতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য। অতএব (সত্য বিমুখ) অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট’!

(73) আর যারা (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করে) তাদের রবকে ভয় করেছে তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে যখন তারা জান্নাতের কাছে পৌঁছবে এবং এর দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে তখন জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে: ‘তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা (তোমাদের অন্তর ও আমল) ভালো ছিলে। অতএব চিরস্থায়ীভাবে থাকার জন্য জান্নাতে প্রবেশ কর।’

(74) আর মু’মিনরা (জান্নাতে প্রবেশের পর) বলবে: ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের দেয়া তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। আর আমাদেরকে (জান্নাতের এ) জমিনের অধিবাসী করেছেন, এখন আমরা (এ) জান্নাতে যেখানে ইচ্ছা সেখানেই বসবাসের জায়গা করে নিবো। অতএব (নেক) আমলকারীদের প্রতিফল কতই না উত্তম!’

(75) আর (হে রাসূল! সেদিন) তুমি ফিরিশতাদেরকে আরশের চারপাশ সমবেত হয়ে তাদের রবের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করতে দেখতে পাবে। আর তাদের (সৃষ্টিকুলের) মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচার-ফয়সালা করে দেয়া হবে এবং (তখন চারদিক থেকে) বলা হবে: ‘সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য।’