(1) তিনি বড়ই বরকতময় যিনি তাঁর বান্দার (মুহাম্মাদের) ওপর ফুরকান (আল কুরআন) নাযিল করেছেন, যেন সে জগতবাসীর জন্য (আল্লাহর শাস্তি থেকে) ভীতি প্রদর্শনকারী হতে পারে।
(2) তিনি ঐ সত্ত্বা যার অধিকারে রয়েছে আসমানসমূহ ও জমিনের মালিকানা। আর তিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি এবং সার্বভৌমত্বে তাঁর কোনো শরীক নেই। তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তা যথাযোগ্য অনুপাতে নির্ধারণ করেছেন।
(3) আর তারা (অবিশ্বাসীরা) আল্লাহ ছাড়া অনেক ইলাহ গ্রহণ করেছে, যারা কোনো কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না; বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট। তারা নিজেদের কোন অকল্যাণ ও কল্যাণ করার ক্ষমতা রাখে না এবং তারা মৃত্যু, জীবন ও পুনরুত্থান করতেও সক্ষম হয় না।
(4) আর কাফিররা বলে: ‘এটি (এ আল কুরআন) তো জঘন্য মিথ্যা যা সে (মুহাম্মাদ) নিজেই রচনা করেছে, আর অন্য এক দল এ কাজে তাকে সাহায্য করেছে।’ সুতরাং অবশ্যই কাফিররা যুলম ও মিথ্যা (অপবাদ) নিয়ে এসেছে।
(5) তারা আরও বলে: ‘এটি প্রাচীনকালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; তারপর এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার কাছে পাঠ করা হয়।’
(6) (হে রাসূল! তুমি এ অস্বীকারকারীদেরকে) বলো: ‘যিনি আসমানসমূহ ও জমিনের রহস্য জানেন, তিনিই এটি নাযিল করেছেন। নিশ্চয় তিনি (তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি) অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
(7) আর তারা বলে: ‘এ রাসূলের কী হলো, সে (অন্য মানুষের মতো) আহার করে এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করে। ( সে যদি সত্যিকারের রাসূলই হয়, তবে ) তার কাছে একজন ফিরিশতা পাঠানো হল না কেনো, যে তাঁর সাথে সতর্ককারী হতো?’
(8) অথবা তাকে (আকাশ থেকে) ধনভাণ্ডার ঢেলে দেয়া হয় না কেনো অথবা তার জন্য একটি বাগান হয় না কেনো, যা থেকে সে খেতে পারে?’ যালিমরা বলে, ‘তোমরা শুধু এক যাদুগ্রস্ত লোকের অনুসরণ করছো।’
(9) (হে রাসূল!) দেখো, তোমার জন্য তারা কেমন উপমা পেশ করে; ফলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, সুতরাং তারা (হিদায়েতের) কোনো পথ পেতে সক্ষম হয় না।
(10) তিনি বরকতময় আল্লাহ, যিনি ইচ্ছা করলে (দুনিয়াতেই) তোমার জন্য করে দিতে পারেন তার (তাদের প্রস্তাবিত বস্তুসমূহের ) চেয়েও উত্তম বস্তু, উদ্যানসমূহ, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়(১) । আর ( শুধু তাই-ই নয় ), তিনি তোমাকে প্রাসাদসমূহও দিতে পারেন।
(11) বরং তারা কিয়ামতকে অস্বীকার করেছে। আর কিয়ামতকে যে অস্বীকার করে তার জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুন।
(12) দূর হতে আগুন যখন তাদেরকে দেখবে তখন তারা তার ক্রদ্ধ গর্জন ও প্রচণ্ড চিৎকার শুনতে পাবে।
(13) আর যখন হাতগুলো তাদের ঘাড়ের সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে তাদেরকে জাহান্নামের সংকীর্ণ জায়গায় নিক্ষেপ করা হবে, সেখানে তারা (আক্ষেপে ও আতঙ্কে ) নিজেদের ধ্বংস কামনা করবে।
(14) (কাফিরদেরকে বলা হবে), আজ তোমরা একবার ধ্বংসকে ডেকো না; বরং বহুবার ধ্বংসকে ডাকো।’(১)
(15) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘এটাই (উল্লিখিত শাস্তি) উত্তম, না চিরস্থায়ী জান্নাত? যার প্রতিশ্রুতি মুত্তাকীদেরকে দেয়া হয়েছে, তা হবে তাদের পুরস্কার ও প্রতাবর্তনস্থল।
(16) সেখানে (সে জান্নাতে) তারা চিরকাল বসবাসরত অবস্থায়, যা চাইবে তা-ই তাদের জন্য থাকবে। এটি তোমার রবের ওয়াদা, যা পূরণ করা তাঁরই দায়িত্ব।
(17) আর সেদিন তিনি তাদেরকে এবং আল্লাহ ছাড়া তাদের অন্যান্য মা’বূদদেরকে একত্র করবেন, তারপর বলবেন: ‘তোমরা কি আমার এই বান্দাদেরকে (নিজেদের ইবাদাতের আদেশ করে) পথভ্রষ্ট করেছো, নাকি তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছে?’
(18) তারা (মা’বূদরা) বলবে: ‘আপনি পবিত্র মহান! আপনি ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করা আমাদের উচিত নয়; বরং আপনি তাদেরকে ও তাদের পিতৃপুরুষদেরকে (দুনিয়ার) ভোগ-বিলাসের সুযোগ দিয়েছেন। অবশেষে তারা আপনার স্মরণকে ভুলে গিয়েছিলো এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছিলো।
(19) অতঃপর (আল্লাহ বলবেন: হে মুশরিকরা!) তোমরা যা দাবি করো, তারা তা অস্বীকার করেছে।(১) অতএব তোমরা শাস্তি ফেরাতে পারবে না এবং নিজেদের কোনো সাহায্যও করতে পারবে না। আর তোমাদের মধ্যে যে যুলম (শিরক) করবে তাকে আমি মহা শাস্তি আস্বাদন করাবো।’
(20) আর (হে রাসূল!) তোমার পূর্বে যত নবী-রাসূলই আমি পাঠিয়েছি, তারা (অন্যান্য মানুষের মতোই) সবাই আহার করত এবং হাট-বাজারে চলাফেরা করত। আর (হে মানুষ!) আমি তোমাদের একজনকে অপরজনের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ বানিয়েছি। তোমরা কি (পরীক্ষিত বিষয়ে) ধৈর্যধারণ করবে না ? আর তোমার রব সর্বদ্রষ্টা।
(21) যারা আমার সাক্ষাৎ প্রত্যাশা করে না, তারা বলে: ‘আমাদের নিকট ফিরিশতা নাযিল হয় না কেন? অথবা আমরা আমাদের রবকে দেখতে পাই না কেন’? অবশ্যই তারা তো তাদের অন্তরে অহংকার পোষণ করেছে এবং তারা গুরুতর সীমালঙ্ঘন করেছে।
(22) যেদিন(১) তারা (সত্যি সত্যি ) ফিরিশতাদেরকে দেখতে পাবে, সেদিন অপরাধীদের জন্য (তাঁদের নিকট) কোনো সুসংবাদ থাকবে না। আর তারা (ফিরিশতারা কাফিরদেরকে) বলবে: ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে যে কোন সুসংবাদ আজ তোমাদের জন্য একেবারেই নিষিদ্ধ।’(২)
(23) আর তারা (দুনিয়াতে ভালো-মন্দ) যে কাজই করেছে, আমি সেদিকে অগ্রসর হয়ে সেগুলোকে (ইচ্ছা করেই) বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দিবো।(১)
(24) সেদিন জান্নাতবাসীদের বাসস্থান হবে উত্তম এবং বিশ্রামস্থল হবে উৎকৃষ্ট।
(25) আর (হে রাসূল, ঐ দিনের অবস্থা স্মরণ করো ) যে দিন মেঘমালাসহ আকাশ ভেঙ্গে পড়বে এবং ফিরিশতাদেরকে (হাশরের ময়দানে) দলে দলে নাযিল করা হবে।
(26) সেদিন চূড়ান্ত সার্বভৌমত্ব হবে পরম করুণাময়ের (আল্লাহর)। আর সেদিনটি কাফিরদের জন্য বড়ই কঠিন হবে।
(27) আর সেদিন যালিম নিজের হাত দু’টো কামড়াতে কামড়াতে বলবে: ‘হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোনো পথ অবলম্বন করতাম!’(১)
(28) ‘হায় আমার দুর্ভোগ! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।’
(29) ‘অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশবাণী (আল কুরআন) থেকে পথভ্রষ্ট করেছে, তা আমার কাছে আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক।’
(30) আর রাসূল (তার জাতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে) বলবে: ‘হে আমার রব! নিশ্চয় আমার জাতি এই আল কুরআনকে পরিত্যাগ করেছে।’
(31) আর এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্য (তার সম্প্রদায়ের) অপরাধীদের মধ্য থেকে শত্রু বানিয়েছি। আর পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার রবই যথেষ্ট।
(32) আর কাফিররা বলে: ‘ ( আচ্ছা ) তাঁর (রাসূলের) ওপর পুরো আল কুরআন একসাথে কেনো নাযিল করা হলো না?’ (হে রাসূল! আমি আল কুরআনকে একের পর এক বিক্ষিপ্তভাবে নাযিল করেছি) এটা এজন্য যে, আমি এর মাধ্যমে যেন তোমার হৃদয়কে সুদৃঢ় করতে পারি। আর (সহজভাবে বুঝা ও মুখস্থ করার সুবিধার্থে) আমি তা ধীরে ধীরে তিলাওয়াতের মাধ্যমে নাযিল করেছি ।
(33) আর তারা (মুশরিকরা) তোমার কাছে ( যেকোনো সময়ে ) যেকোনো বিষয় নিয়েই আসুক না কেন, আমি এর সঠিক সমাধান ও (তার চেয়ে) সুন্দর ব্যাখ্যা তোমার কাছে নিয়ে এসেছি।
(34) যাদেরকে মুখের ওপর ভর দেয়া অবস্থায় জাহান্নামের দিকে একত্র করা হবে, এরা মর্যাদায় অধিক নিকৃষ্ট এবং সত্য পথের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি পথভ্রষ্ট।
(35) আর আমি তো মূসাকে কিতাব (তাওরাত) দিয়েছিলাম এবং তার সাথে তার ভাই হারূনকে (রাসূল করে) সাহায্যকারী বানিয়েছিলাম।
(36) অতঃপর আমি বলেছিলাম: তোমরা দুজন সেই জাতির (ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের) নিকট যাও, যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে। অতঃপর (তারা তাদের দুজনকে অস্বীকার করলে) আমি তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম।
(37) আর (আমি অনুরূপভাবে) নূহের সম্প্রদায়কেও (ধ্বংস করেছি), যখন তারা রাসূলদেরকে(১) অস্বীকার করলো, আমি তাদেরকে (প্লাবনের পানিতে) ডুবিয়ে দিলাম এবং তাদেরকে (ধ্বংস করে) মানুষের জন্য নিদর্শন বানিয়ে দিলাম। আর আমি যালিমদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি (জাহান্নামে) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(38) আর আমি ধ্বংস করেছি ‘ (হূদের জাতি )‘আদ, (সালিহের জাতি ) সামূদ, ‘রাস’(১) এর অধিবাসীদেরকে এবং তাদের মধ্যবর্তী কালের বহু প্রজন্মকেও (ধ্বংস করেছি)।
(39) আর আমি তাদের প্রত্যেকের জন্য (পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংস ও তার কারণ বর্ণনা করে) দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছি(১) এবং তাদের প্রত্যেককেই আমি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছি।
(40) আর অবশ্যই তারা সে জনপদ (১) দিয়ে অতিক্রম করেছে, যাতে অকল্যাণের (শাস্তিস্বরূপ পাথরের) বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল। তবে কি তারা তা দেখেনি? বরং তারা পুনরুত্থানের প্রত্যাশা করতো না।
(41) আর (হে রাসূল!) তারা যখন তোমাকে দেখে, তখন তারা তোমাকে ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাত্র হিসেবেই গ্রহণ করে, (তারা অস্বীকার ও ঠাট্টাচ্ছলে বলে:) ‘এ-ই কি সেই লোক, যাকে আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন’?
(42) ‘সে তো আমাদেরকে আমাদের দেবতাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিত, যদি আমরা সেগুলোর ইবাদাতে ধৈর্য না ধরতাম।’(১) আর যখন তারা শাস্তি দেখবে, তখন অবশ্যই জানতে পারবে, কে অধিক পথভ্রষ্ট।
(43) (হে রাসূল!) তুমি কি তাকে দেখনি, যে তার প্রবৃত্তিকে নিজের ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে?(১) তবুও কি তুমি তার যিম্মাদার হবে?(২)
(44) (হে রাসূল!) তুমি কি মনে করো যে, তাদের অধিকাংশ লোক ( আল কুরআনের কথা) শোনে অথবা (দলীল-প্রমাণ) বুঝে? তারা (শোনা, বুঝা ও অনুধাবনের ক্ষেত্রে) কেবল পশুদের মতো; বরং তারা আরো অধিক পথভ্রষ্ট।
(45) (হে রাসূল!) তুমি কি তোমার রবের (সৃষ্টি কৌশলের ) প্রতি লক্ষ্য করোনি, কীভাবে তিনি ছায়াকে দীর্ঘ করেছেন, আর তিনি যদি চাইতেন, তাহলেি এটিকে অবশ্যই স্থির করে দিতে পারতেন। অতঃপর আমি সূর্যকে ছায়ার নির্ণায়ক বানিয়েছি।(১)
(46) তারপর আমি এটাকে (ছায়াকে) ধীরে ধীরে আমার দিকে গুটিয়ে আনি।
(47) আর তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে (পোশাকের ন্যায়) আবরণ ও নিদ্রাকে আরামদায়ক করেছেন এবং দিনকে বানিয়েছেন কর্মসময়।(১)
(48) আর তিনিই তাঁর রহমতের (বৃষ্টি নাযিল হওয়ার) প্রাক্কালে সুসংবাদস্বরূপ বায়ু প্রেরণ করেন এবং আমি আকাশ থেকে পবিত্র (বৃষ্টির) পানি বর্ষণ করি(১)।
(49) যাতে তা দ্বারা আমি মৃত ভূ-খণ্ডকে (রকমারি উদ্ভিদ জন্ম দিয়ে সবুজ শ্যামল করে) জীবিত করি এবং আমি যে সকল জীবজন্তু ও মানুষ সৃষ্টি করেছি, তার মধ্য থেকে অনেককে তা পান করাতে পারি ।
(50) আর আমি এ আল কুরআনুল মাজীদে অনেক ধরনের দলীল ও প্রমাণাদি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি, যাতে তারা সেগুলো দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে; অথচ অধিকাংশ লোক শুধু অকৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করে।
(51) আর আমি ইচ্ছা করলে প্রতিটি জনপদে একজন করে সতর্ককারী (রাসূল) পাঠাতাম।
(52) সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি আল কুরআনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম চালিয়ে যাও।
(53) আর তিনিই (সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির ) দুটি সাগরকে একসাথে প্রবাহিত করেছেন। একটি সুপেয় সুস্বাদু, অপরটি লবণাক্ত ক্ষারবিশিষ্ট এবং তিনি এতদুভয়ের মাঝখানে একটি অন্তরায় (অদৃশ্য প্রাচীর) ও একটি অনতিক্রম্য সীমানা স্থাপন করেছেন(১)।
(54) আর তিনিই পানি(১) থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আর তোমার রব হলো মহা ক্ষমতাবান।
(55) আর তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর (সৃষ্টের) ইবাদাত করে, যা তাদের কোনো উপকারও করতে পারে না এবং তাদের কোনো ক্ষতিও করতে পারে না। আর কাফির তো তার প্রকৃত রবের বিরোধিতাকারী ।
(56) আর (হে রাসূল!) আমি তো তোমাকে শুধুমাত্র সুংসবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপেই প্রেরণ করেছি।
(57) (হে রাসূল!) তুমি বলে দাও: ‘আমি (আল্লাহর বাণী প্রচারের বিনিময়ে) এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাই না। তবে যার ইচ্ছা, সে তার রবের দিকে পথ অবলম্বন করুক।
(58) আর (হে রাসূল!) তুমি তাওয়াক্কুল করো এমন চিরঞ্জীব সত্তার ওপর যিনি মরবেন না। তাঁর প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করো। তাঁর বান্দাদের সকল গুনাহ সম্পর্কে খবর রাখার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট।
(59) যিনি আসমানসমূহ, জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনিই ‘রহমান’ পরম করুণাময়। সুতরাং (হে রাসূল!) তাঁর সম্পর্কে যে সম্যক অবহিত, তুমি তাকেই জিজ্ঞাসা করো।
(60) আর যখন তাদেরকে (কাফিরদেরকে) বলা হয়, তোমরা ‘রহমান’ কে সাজদা করো, তখন তারা বলে, রহমান আবার কে? তুমি আমাদেরকে ( কাউকে সাজদা করার ) আদেশ করলেই কি আমরা (তাকে ) সাজদা করবো?(১) আর তাদেরকে সাজদার আদেশ করা মূলত তাদের (আল্লাহর ওপর ঈমান আনা থেকে) দূরত্ব ও পলায়নপরতাই বৃদ্ধি করে।
(61) তিনি বরকতময় সেই সত্তা, যিনি আসমানে সৃষ্টি করেছেন বিশালাকায় গ্রহসমূহ। আর তাতে প্রদীপ (সূর্য) ও আলো বিকিরণকারী চাঁদ সৃষ্টি করেছেন।
(62) আর তিনিই রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী করেছেন(১) তার জন্যে যে উপদেশ গ্রহণ করতে চায় অথবা কৃতজ্ঞ হতে চায় তার জন্য।
(63) আর রাহমানের প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে। আর অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদেরকে (অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করে তখন তারা (সমপর্যায়ের মুকাবেলা না করে) বলে ‘সালাম’।(১)
(64) আর যারা তাদের রবের জন্য সাজদারত ও দণ্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে।
(65) আর যারা বলে: ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি সরিয়ে দিন। নিশ্চয় এর শাস্তি(কাফিরের জন্য) স্থায়ী ও অবিচ্ছিন্ন।’
(66) ‘নিশ্চয় তা অবস্থানস্থল ও আবাসস্থল হিসেবে অত্যন্ত নিকৃষ্ট।’
(67) আর তারা যখন নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে।
(68) আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফসকে হত্যা করা হারাম করেছেন যথার্থ কারণ(১) ছাড়া তাকে হত্যা করে না। উপরন্তু তারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা (এ সকল বড় অপরাধ) করবে, সে (অবশ্যই কিয়ামত দিবসে ) শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।
(69) কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে।
(70) তবে যে (আল্লাহর নিকট পাপকর্ম করার পর ) তাওবা করে, তাঁর প্রতি ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপকর্মগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ (তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি) অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(71) আর যে (আল্লাহর নিকট) তাওবা করে এবং সৎকাজ করে, নিশ্চয় সে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে(১)।
(72) আর যারা মিথ্যার সাক্ষ্য হয় না(১) এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন ( তা পরিহার করে) সসম্মানে চলে যায়।
(73) আর যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিলে অন্ধ ও বধিরদের মত পড়ে থাকে না।
(74) আর যারা বলে: ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন, যারা (তাকওয়া ও সত্যের ওপর অটল থাকার কারণে) আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন।’
(75) তারাই (এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারীরাই), যাদেরকে (জান্নাতে) সুউচ্চ কক্ষ প্রতিদান হিসাবে দেয়া হবে, যেহেতু তারা সবর করেছিল সেজন্য। আর তাদের সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে, অভিবাদন ও সালাম দ্বারা।
(76) সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। অবস্থানস্থল ও আবাসস্থল হিসেবে তা কতই না উৎকৃষ্ট!
(77) (হে রাসূল! তুমি কুফরীর উপর হঠধর্মী কাফিরদেরকে) বলো: ‘যদি তোমরা (আমার রবকে) না-ই ডাক, তাহলে আমার রব তোমাদের কোনো পরোয়া করেন না। তারপর তোমরা (রাসূলকে) অস্বীকার করেছো। তাই অচিরেই শাস্তি অপরিহার্য হবে ।