31 - Luqman ()

|

(1) আলিফ-লাম-মীম।

(2) এগুলো প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাবের আয়াত,

(3) সৎকর্মশীলদের জন্য হিদায়াত ও রহমতস্বরূপ,

(4) (সৎকর্মশীল তারা) যারা সালাত কায়িম করে এবং যাকাত প্রদান করে, আর তারাই আখিরাতে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে।

(5) তারাই (এ সৎকর্মশীলরাই) তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারাই সফলকাম।

(6) আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অসার বাক্য(১) খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে। তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।

(7) আর যখন তার নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে শুনতে পায়নি, তার দু’কানে যেন বধিরতা। সুতরাং (হে রাসূল! তুমি) তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও।

(8) নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে নি‘আমতপূর্ণ জান্নাত;

(9) তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(10) তিনি খুঁটি ছাড়া আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন, যা তোমরা দেখছো, আর জমিনে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পাহাড়, যাতে তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে না পড়ে, আর তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রত্যেক প্রকারের প্রাণী। আর আমি আসমান থেকে (বৃষ্টির) পানি বর্ষণ করি, অতঃপর তাদ্বারা আমি সব ধরনের কল্যাণকর উদ্ভিদ উদ্গত করি।

(11) এটা (উল্লিখিত বিষয়াবলি) আল্লাহর সৃষ্টি; অতএব আমাকে দেখাও, তিনি ছাড়া আর যারা আছে তারা কী সৃষ্টি করেছে! বরং যালিমরা সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে নিমজ্জিত।

(12) আর আমি তো লুকমানকে হিকমাত(১) দিয়েছিলাম (এবং তাকে বলেছিলাম), ‘আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো। আর যে শুকরিয়া আদায় করে সে তো নিজের জন্যই শুকরিয়া আদায় করে এবং যে অকৃতজ্ঞ হয় (তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।’

(13) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল: ‘প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শিরক করো না; নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলম।’

(14) আর আমি মানুষকে তার মাতাপিতার সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে। সুতরাং তুমি আমার ও তোমার পিতামাতার শুকরিয়া আদায় করো। তোমাদের প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই।

(15) আর যদি তারা (পিতামাতা) তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে পীড়াপীড়ি করে, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তখন তাদের আনুগত্য করবে না এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে। আর অনুসরণ করো তার পথ, যে আমার অভিমুখী হয়।(১) তারপর (কিয়ামতের দিন) আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবো, যা তোমরা করতে।

(16) ‘হে আমার প্রিয় বৎস! নিশ্চয় তা (পাপ-পুণ্য) যদি সরিষা দানার পরিমাণ হয়, অতঃপর তা যদি (গোপন) থাকে পাথরের মধ্যে কিংবা আসমানসমূহে বা জমিনের মধ্যে; আল্লাহ তাও (কিয়ামতের দিন) উপস্থিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সর্বজ্ঞ।’

(17) ‘হে আমার প্রিয় বৎস! (পূর্ণভাবে) সালাত কায়িম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধরো। নিশ্চয় এগুলো অন্যতম দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’

(18) ‘আর তুমি (অহংকার ভরে) মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিও না। আর জমিনে দম্ভভরে চলাফেরা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’

(19) ‘আর তোমার চলার ক্ষেত্রে (দ্রুততা ও ধীর গতির) মধ্যপন্থা অবলম্বন করো, তোমার আওয়াজ নীচু করো। নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হলো গাধার আওয়াজ।’

(20) (হে মানবজাতি!) তোমরা কি দেখো না, নিশ্চয় আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে তার সবকিছুই তোমাদের (কল্যাণের) জন্য নিয়োজিত করেছেন। আর তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নি‘আমত ব্যাপক করে দিয়েছেন। (এতসব নি‘আমত পাওয়া সত্ত্বেও) মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান, হিদায়াত ও দীপ্তিমান কিতাব ছাড়াই বাক-বিতণ্ডা করে।

(21) আর যখন তাদেরকে(১) বলা হয়, ‘আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা তার অনুসরণ করো’ তখন তারা বলে, ‘বরং আমরা তার অনুসরণ করবো যার ওপর (যে দেবতাদের পূজায়) আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি।’ শয়তান তাদেরকে (জাহান্নামের) প্রজ্বলিত শান্তির দিকে আহ্বান করলেও কি (তারা পিতৃপুরুষদেরকে অনুসরণ করবে)?

(22) আর যে ব্যক্তি (ইবাদাতে ও আমলে) একনিষ্ঠ ও বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে, সে তো মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহরই কাছে রয়েছে।

(23) আর যে কুফরী করে, তার কুফরী যেন (হে রাসূল!) তোমাকে ব্যথিত না করে। আমার কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তারা যে আমল করতো আমি তা তাদেরকে জানিয়ে দিবো। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরসমূহে যা আছে, তা সম্পর্কে সম্যক অবহিত।

(24) আমি (দুনিয়ার জীবনে) কিছুকাল তাদেরকে ভোগ করতে দেই, তারপর তাদেরকে (কিয়ামত দিবসে জাহান্নামের) কঠোর শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করবো।

(25) আর যদি (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো, ‘কে আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন?’ তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ।’ (তখন তুমি তাদেরকে) বলো: ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর; কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না (কে প্রশংসার হকদার)?’

(26) আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে তা আল্লাহর; নিশ্চয় আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।

(27) আর জমিনে যত গাছ আছে তা যদি কলম হয়, আর সমুদ্র হয় কালি, তার সাথে কালিতে পরিণত হয় আরো সাত সমুদ্র; তবুও আল্লাহর বাণীসমূহ(১) (লিখা) শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(28) (হে মানব!) তোমাদের সৃষ্টি ও তোমাদের পুনরুত্থান (মূলত আল্লাহর কাছে) কেবল একটি প্রাণীর সৃষ্টি ও তার পুনরুত্থানের মতোই (সহজ)। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা।

(29) তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান? আর তিনি সূর্য ও চাঁদকে (তোমাদের কল্যাণে) নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই (নির্ধারিত কক্ষ পথে) চলছে, একটি সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। আর নিশ্চয় তোমরা যা করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত।

(30) এগুলো (এ পরিচালনা ও নির্ধারণ) প্রমাণ করে যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা (মুশরিকরা) আল্লাহর পরিবর্তে যাকে ডাকে, তা মিথ্যা। আর নিশ্চয় আল্লাহই হলেন সর্বোচ্চ, সুমহান।

(31) তুমি কি দেখনি যে, নৌযানগুলো আল্লাহর অনুগ্রহে সমুদ্রে চলাচল করে, যাতে তিনি তাঁর (ক্ষমতা ও অনুকম্পার) কিছু নিদর্শন তোমাদের দেখাতে পারেন। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।

(32) আর যখন ঢেউ তাদেরকে (পাহাড় ও মেঘমালার) ছায়ার ন্যায় আচ্ছন্ন করে নেয়, তখন তারা আল্লাহকে ডাকে (ইবাদাত ও দু‘আতে) একনিষ্ঠ হয়ে আনুগত্যভরে। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে পৌঁছে দেন, তখন তাদের কেউ কেউ (ঈমান ও কুফরীর) মধ্যপথে থাকে। আর বিশ্বাসঘাতক ও কাফির ব্যক্তি ছাড়া কেউ আমার নিদর্শনাবলি অস্বীকার করে না।(১)

(33) হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় করো এবং (কিয়ামতের) সেই দিনকে ভয় করো, যেদিন পিতা তার সন্তানের কোন উপকার করতে পারবে না এবং সন্তানও তার পিতার কোনো উপকারে আসবে না। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং দুনিয়ার জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে ধোঁকা দিতে না পারে এবং (আল্লাহর সহনশীলতা ও তাঁর শাস্তির বিলম্বের সুযোগে) মহাপ্রতারক (শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে ধোঁকায় ফেলতে না পারে।

(34) নিশ্চয় আল্লাহর নিকটেই রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান। আর তিনি (স্বীয় ইচ্ছায়) বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনিই জানেন গর্ভে যা আছে (সে অনুগত হবে, না অবাধ্য হবে)। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।