(1) সোয়াদ; উপদেশপূর্ণ কুরআনের শপথ।(১)
(2) কিন্তু কাফিররা (আল্লাহর একত্ববাদের ক্ষেত্রে) চরম হঠকারিতায় ও (নবী মুহাম্মাদের) বিরোধিতায় নিমজ্জিত।
(3) (রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপের কারণে) তাদের পূর্বে আমি কত বংশধরকে ধ্বংস করেছি। অত:পর (তাদের ওপর শাস্তি আপতিত হলে) তখন তারা আর্তচিৎকার করেছিল; কিন্তু তখন (শাস্তি থেকে) পলায়নের কোন সময় ছিল না।
(4) আর তারা আশ্চার্যান্বিত হয়েছে যে, তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন সতর্ককারী (রাসূল) এসেছে এবং কাফিররা বলে: ‘এ তো জাদুকর, মিথ্যাবাদী।’
(5) ‘সে কি সকল উপাস্যকে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? নিশ্চয় এ তো এক আশ্চর্য বিষয়!’
(6) আর তাদের গণ্যমান্য ও মোড়লরা চলে গেল একথা বলে যে, ‘তোমরা (মুহাম্মাদের ধর্ম গ্রহণ না করে) চলে যাও এবং তোমাদের উপাস্যগুলোর ওপর অবিচল থাক। নিশ্চয় (মুহাম্মাদের এক ইলাহের ইবাদাতের) এ বিষয়টি উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’
(7) আমরা তো অন্য ধর্মাদর্শে (মুহাম্মাদের দাবীকৃত আল্লাহর একত্ববাদের) এমন কথা শুনিনি।(১) এটা তো মিথ্যা-বানোয়াট কথা ছাড়া আর কিছু নয়।
(8) (মুশরিকরা বলল:) ‘আমাদের মধ্য থেকে শুধু তার ওপরই কি যিক্র (আল কুরআন) নাযিল করা হল?(১) বরং তারা আমার যিকরের (আল কুরআনের) ব্যাপারে সন্দেহে রয়েছে। বরং তারা এখনও আমার শাস্তি আস্বাদন করেনি।(২)
(9) তাদের (এসব অবিশ্বাসী মুশরিকদের) কাছে কি তোমার রবের রহমতের ভাণ্ডার রয়েছে?(১) যিনি মহাপরাক্রমশালী, অসীম দাতা।
(10) নাকি তাদের হাতে আসমান ও জমিন এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা আছে,তার রাজত্ব রয়েছে? তাহলে তারা কোন উপায় অবলম্বন করে (আসমানে) আরোহণ করুক।(১)
(11) (মুহাম্মাদকে অস্বীকারকারী) এ বাহিনী অবশ্যই সেখানে (পূর্বে অতিবাহিত নবীদেরকে অস্বীকারকারী) দলসমূহের মতপরাজিত হবে।
(12) তাদের পূর্বেও নূহের জাতি, ‘আদ সম্প্রদায় ও প্রতাপশালী অধিপতি ফির‘আউন (নবীদেরকে) অস্বীকার করেছিল।(১)
(13) (আরো অবিশ্বাস করেছিল) ছামূদ, লুত সম্প্রদায় ও আইকার অধিবাসীরা (শুআইবের জাতি)। এরাই ছিল (রাসূলদের মিথ্যারোপকারী) দলসমূহ।
(14) তাদের প্রত্যেকেই রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল। ফলে আমার শাস্তি অবধারিত হয়েছিল।
(15) আর (মুহাম্মাদকে অস্বীকারকারী) এরা তো কেবল (শিঙ্গায় ফুৎকারের) একটি বিকট আওয়াজের অপেক্ষা করছে, যাতে কোন বিরাম থাকবে না।(১)
(16) আর তারা (বিদ্রুপের ছলে) বলে: হে ‘আমাদের রব, হিসাব দিবসের আগেই (পার্থিব জীবনে) আমাদের প্রাপ্য অংশটুকু আমাদেরকে তাড়াতাড়ি দিয়ে দিন।’
(17) (হে রাসূল!) তারা (অপছন্দের) যেসব কথা বলে, সে ব্যাপারে তুমি ধৈর্যধারণ কর এবং আমার (আনুগত্যে ও শত্রুর বিরোধিতায়) শক্তিশালী বান্দা দাঊদকে স্মরণ কর; সে ছিল অধিক আল্লাহ অভিমুখী।
(18) নিশ্চয় আমি (দাঊদের সাথে) পর্বতমালাকে অনুগত করেছিলাম, তার সাথে এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় আমার তাসবীহ পাঠ করত।
(19) আর সমবেত পাখীদেরকেও (অনুগত করেছিলাম); প্রত্যেকেই ছিল অধিক আল্লাহ অভিমুখী।(১)
(20) আর আমি তার রাজত্বকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে হিকমত (নবুওয়াত) ও ফয়সালাকারী বাগ্মিতা(১) দিয়েছিলাম।
(21) আর (হে রাসূল!) তোমার কাছে কি ঝগড়াকারী লোকদের সংবাদ এসেছে? যখন তারা প্রাচীর ডিঙিয়ে মিহরাবে (দাঊদ এর ইবাদাতখানায়) আসল।
(22) যখন তারা (উভয়ে আকস্মিকভাবে) দাঊদের কাছে প্রবেশ করল, তখন সে তাদের (অস্বাভাবিকভাবে প্রবেশের কারণে) ভয় পেয়ে গেল। তারা (দাঊদকে) বলল: ‘আপনি ভয় করবেন না, আমরা বিবদমান দু’পক্ষ। আমাদের একে অন্যের উপর সীমালঙ্ঘন করেছে। অতএব আপনি আমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করুন, অবিচার করবেন না। আর আমাদেরকে সরল-সঠিক পথের নির্দেশনা দিন।’
(23) (বিবাদকারীদের একজন বললো:) ‘নিশ্চয় এ আমার ভাই। তার নিরানব্বইটি ভেড়ী আছে, আর আমার আছে মাত্র একটা ভেড়ী। তবুও সে বলে, ‘এ ভেড়ীটিও আমার তত্ত্বাবধানে দিয়ে দাও’, আর (প্রমাণ উপস্থাপনে) তর্কে সে আমার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করেছে।’
(24) দাঊদ (উভয়ের মধ্যে মীমাংসা করতে গিয়ে বাদীকে) বলল: ‘তোমার ভেড়ীকে তার ভেড়ীর পালের সাথে যুক্ত করার দাবি করে সে তোমার প্রতি যুলম করেছে। আর শরীকদের অনেকেই (অপরের অধিকার হরণ ও বেইনসাফির মাধ্যমে) একে অন্যের উপর সীমালঙ্ঘন করে থাকে। তবে কেবল তারাই এরূপ করে না, যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে। আর এরা সংখ্যায় খুবই কম।’ আর দাঊদ বুঝতে পারল যে, (এই দুজনের ঝগড়া দ্বারা) আমি তাকে পরীক্ষা করেছি। তারপর সে তার রবের কাছে ক্ষমা চাইল, সাজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং তাঁর অভিমুখী হল।
(25) তখন আমি তাকে তা ক্ষমা করে দিলাম। আর অবশ্যই আমার কাছে তার জন্য রয়েছে নৈকট্য এবং (পরকালে জান্নাতে) উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।
(26) হে দাঊদ! নিশ্চয় আমি তোমাকে জমিনে খলীফা বানিয়েছি, অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার করো এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল।
(27) আর আসমান, জমিন এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তা আমি অনর্থক সৃষ্টি করিনি। অনর্থক সৃষ্টি করার ধারণাটি কেবল কাফিরদের। সুতরাং কাফিরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ।
(28) যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আমি কি তাদেরকে (কুফরী ও পাপে লিপ্ত থেকে) জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের সমতুল্য গণ্য করব? নাকি আমি মুত্তাকীদেরকে পাপাচারীদের (কাফির মুনাফিকদের) সমতুল্য গণ্য করব?(১)
(29) আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব (আল কুরআন), যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ (তা থেকে) উপদেশ গ্রহণ করে।
(30) আর আমি দাঊদকে (পুত্র হিসাবে) সুলাইমানকে দান করলাম। সে কতই না উত্তম বান্দা! নিঃসন্দেহে সে ছিল অতিশয় আল্লাহ অভিমুখী।
(31) যখন তার সামনে সন্ধ্যাবেলায় (আসরের সময়ে) পেশ করা হল, দ্রুতগামী উৎকৃষ্ট ঘোড়াসমূহ।
(32) তখন সে (সুলাইমান) বলল: ‘আমি তো আমার রবের স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে ঐশ্বর্যের (তন্মধ্যে এসব ঘোড়ার) প্রেমে মগ্ন হয়ে পড়েছি, এদিকে সূর্য পর্দার আড়ালে চলে গেছে(১)।
(33) তোমরা আমার নিকট এসব ঘোড়া ফিরিয়ে আন। অতঃপর সে এগুলোকে (তরবারী দ্বারা) পা ও গলদেশ দিয়ে যবহ করা শুরু করল।(১)
(34) আর আমি তো সুলাইমানকে পরীক্ষা করেছিলাম এবং তার সিংহাসনের ওপর রেখেছিলাম (অপূর্ণাঙ্গ) একটি দেহ(১), অতঃপর সে (তাওবা করে) আমার অভিমুখী হল।
(35) সুলাইমান বলল: ‘হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন এক রাজত্ব দান করুন যা আমার পর আর কারও জন্যই প্রযোজ্য হবে না। নিশ্চয়ই আপনি বড়ই দানশীল।
(36) (তার দু‘আ কবুল করলাম) ফলে আমি বায়ুকে তার অনুগত করে দিলাম, যা তার আদেশে মৃদুমন্দভাবে যেখানে সে পৌঁছাতে চাইত প্রবাহিত হত।
(37) আর (তার অনুগত করে দিলাম) প্রত্যেক প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী শয়তান (জিন)সমূহকেও।
(38) আর শেকলে আবদ্ধ আরও অনেককে (জিন শয়তানদেরকে)।(১)
(39) (হে সুলাইমান! তোমাকে যা দান করা হয়েছে) ‘এসব আমার অনুগ্রহ। অতএব তুমি এ থেকে অন্যের জন্য খরচ করো অথবা নিজের জন্য রেখে দাও, (তোমার নিকট থেকে) এর কোন হিসাব নেওয়া হবে না।
(40) আর নিশ্চয় আমার নিকট রয়েছে তার জন্য নৈকট্য ও উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল (জান্নাত)।
(41) আর (হে রাসূল!) স্মরণ কর আমার বান্দা আইউবকে, যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল: ‘শয়তান তো আমাকে অনেক যন্ত্রণা ও কষ্টে ফেলেছে।’
(42) (আমি তাকে বললাম) ‘তুমি তোমার পা দিয়ে (ভূমিতে) আঘাত কর (ফলে পানির ঝর্ণা সৃষ্টি হলে বললাম:), এ হচ্ছে গোসলের সুশীতল পানি আর পান করার পানীয়।’(১)
(43) আর (তার ধৈর্যের প্রতিদান হিসেবে) আমার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ ও বুদ্ধিমানদের জন্য উপদেশস্বরূপ আমি তাকে তার পরিবার-পরিজন ও তাদের সাথে তাদের অনুরূপ অনেককে দান করলাম ।(১)
(44) আর (আমি তাকে আদেশ করলাম,) তুমি তোমার হাতে এক মুঠো তৃণলতা নাও এবং তা দিয়ে (স্বীয় স্ত্রীকে একশ) বেত্রাঘাত কর। আর শপথ ভঙ্গ করো না।(১) নিশ্চয় আমি তাকে ধৈর্যশীল পেয়েছি। সে কতই না উত্তম বান্দা! নিশ্চয়ই সে ছিল আমার অভিমুখী।
(45) আর (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ কর আমার বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়া‘কূবকে। তারা (আল্লাহর আনুগত্য তাঁর সন্তুষ্টি কামনায়) শক্তিমান এবং (সত্য অনুসন্ধানে) দূরদর্শী ছিল।
(46) নিশ্চয় আমি (একান্ত অনুগ্রহ করে) তাদেরকে বিশেষ করে পরকালের স্মরণের জন্য নির্বাচিত করেছিলাম।
(47) আর নিশ্চয় তারা ছিল (ইবাদাত, আনুগত্য ও রিসালাতের জন্যে) আমার মনোনীত, সর্বোত্তম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
(48) আর (হে রাসূল!) স্মরণ কর ইসমাঈল, আল-ইয়াসা‘আ ও যুল-কিফলের কথা। এরা প্রত্যেকেই ছিল (আল্লাহর মনোনীত) সর্বোত্তমদের অন্তর্ভুক্ত।
(49) এ আল কুরআন হলো (মনোনীত ব্যক্তিদের জন্য) এক স্মরণ। আর (এর আদেশ-নিষেধ মান্যকারী) মুত্তাকীদের জন্য অবশ্যই রয়েছে উত্তম নিবাস-
(50) চিরস্থায়ী জান্নাত, (কিয়ামত দিবসে) যার দরজাসমূহ তাদের প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
(51) সেখানে তারা হেলান দিয়ে আসীন থাকবে, সেখানে তারা (সেবকদের কাছে পছন্দের) বহু ফলমূল ও পানীয় চাইবে।
(52) আর তাদের পাশে থাকবে আনতনয়না সমবয়ষ্কা (হূর)।
(53) (হে মুত্তাকীরা) এসব (নি‘আমত) হচ্ছে, হিসাব দিবসের জন্যে তোমাদেরকে দেয়া প্ৰতিশ্রুতি।
(54) নিশ্চয় এটি (উল্লিখিত প্রতিদান) আমার দেয়া রিযক, যা নিঃশেষ হবার নয়।
(55) এটাই (উল্লিখিত প্রতিদান হচ্ছে মুত্তকীদের জন্য)। পক্ষান্তরে নিশ্চয় (কুফরী ও পাপের মাধ্যমে) সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্টতম নিবাস-
(56) জাহান্নাম, তারা সেখানে অগ্নিদগ্ধ হবে। কতই না নিকৃষ্ট সে নিবাস!
(57) এটাই (তাদের শাস্তি)। সুতরাং তারা এটি আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ।
(58) (তাদের জন্য) আরও রয়েছে এ জাতীয় বিভিন্ন ধরনের শাস্তি।(১)
(59) (জাহান্নামীরা বিবাদ করে একে অপরকে বলবে:) এই তো এক দল তোমাদের সাথেই প্রবেশ করছে, (প্রতিউত্তরে অপর দল বলবে:) তাদের জন্য নেই কোন অভিনন্দন। নিশ্চয় তারা (জাহান্নামের) আগুনে জ্বলবে।
(60) অনুসারীরা (অনুসরণীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে) বলবে: ‘বরং তোমরাও, তোমাদের জন্যও তো নেই কোন অভিনন্দন। তোমরাই (আমাদেরকে ভ্রষ্ট ও বিভ্রান্তিতে নিপতিত করে) আমাদের জন্য এ বিপদ এনেছ। অতএব কতই না নিকৃষ্ট এ আবাসস্থল’!
(61) অনুসারীরা বলবে: ‘হে আমাদের রব, যে (আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করে) আমাদের জন্য এ বিপদ এনেছে, জাহান্নামে তুমি তার শাস্তিকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দাও।’
(62) তারা (অনুসারীরা) আরো বলবে: ‘আমাদের কী হল যে, আমরা (দুনিয়াতে) যাদেরকে হতভাগা গণ্য করতাম সে সকল লোককে এখানে দেখছি না।’(১)
(63) ‘তবে কি আমরা তাদেরকে অহেতুকই ঠাট্টা বিদ্রুপের পাত্র মনে করতাম, নাকি তাদের ব্যাপারে (আমাদের) দৃষ্টি বিভ্রম ঘটেছে?’(১)
(64) নিশ্চয় (কিয়ামত দিবসে) জাহান্নামীদের এই পারস্পরিক বাকবিতণ্ডা এটি সুনিশ্চিত সত্য (ঘটনা)।
(65) (হে রাসূল! তুমি কাফিরদেরকে) বলো: ‘আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। আল্লাহ ছাড়া আর কোন (সত্য) ইলাহ নেই। যিনি এক, প্রবল প্রতাপশালী।’
(66) যিনি আসমানসমূহ ও জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যস্থিত যা কিছু রয়েছে, সব কিছুর রব। তিনি মহাপরাক্রমশালী, মহাক্ষমাশীল।
(67) (হে রাসূল! তুমি মিথ্যারোপকারীকে) বলো: ‘অবশ্যই এটি (আল কুরআন) এক মহাসংবাদ।’
(68) ‘তোমরা এ মহা সংবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে আছ।’
(69) ‘ঊর্ধ্বলোক সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞানই ছিল না যখন তারা (ফিরিশতারা আদমের সৃষ্টি সক্রান্ত বিষয়ে) বাদানুবাদ করছিল।’(১)
(70) আমার কাছে তো এ ওহীই এসেছে যে, আমি একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।’
(71) (হে রাসূল! তুমি সে সময়ের কথা) স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফিরিশতাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন: ‘নিশ্চয় আমি মাটি হতে মানুষ (আদমকে) সৃষ্টি করব।’
(72) ‘অতঃপর যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিবো, তখন তোমরা তার সম্মানে সাজদাবনত হয়ে যাও।’
(73) ফলে ফিরিশতারা (স্বীয় রবের নির্দেশে) সকলেই সাজদাবনত হল।
(74) ইবলীস (শয়তান) ছাড়া, সে অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ল।
(75) আল্লাহ বললেন: ‘হে ইবলীস, আমি আমার দু’হাতে যাকে (আদমকে) সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সাজদাবনত হতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি কি অহংকার করলে, না তুমি অধিকতর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন?’
(76) ইবলীস বলল: ‘আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।’(১)
(77) তিনি (আল্লাহ ইবলীসকে) বললেন: ‘তুমি এখান (জান্নাত) থেকে বের হয়ে যাও। কেননা নিশ্চয় তুমি অভিশপ্ত বিতাড়িত।
(78) আর নিশ্চয় বিচার দিবস (কিয়ামত) পর্যন্ত তোমার ওপর আমার লা‘নত বলবৎ থাকবে।’
(79) সে (ইবলীস) বলল: ‘হে আমার রব, আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন, যেদিন তারা পুনরুত্থিত হবে।’(১)
(80) আল্লাহ বললেন: আচ্ছা তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হলে-
(81) ‘(পুনরুত্থানের) নির্ধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।'
(82) সে (ইবলীস) বলল: ‘আপনার ইজ্জতের শপথ! আমি তাদের সকলকেই পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব।’
(83) তবে তাদের মধ্য থেকে আপনার একনিষ্ঠ বান্দারা ছাড়া।
(84) আল্লাহ বললেন: ‘সত্য আমার পক্ষ থেকে, আর আমি সত্য-ই বলি...
(85) ‘(হে ইবলীস, কিয়ামতের দিনে) তোমাকে দিয়ে এবং তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করত তাদের দিয়ে নিশ্চয় আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব।’
(86) (হে রাসূল! তুমি এসব মুশরিককে) বলো: ‘এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না, আর আমি লৌকিকতা প্রদর্শনকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।’
(87) সৃষ্টিকুলের জন্য এ (আল কুরআন) তো উপদেশ ছাড়া আর কিছু নয়।
(88) আর অচিরেই তোমরা (মৃত্যুর পরে) এর (এই আল কুরআনের সত্যতার) সংবাদ জানতে পারবে।