(1) (হে মুসলিমরা!) এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে সে সব মুশরিকদের প্রতি সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা, যাদের সাথে তোমরা পারস্পারিক (যুদ্ধ না করার) চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে।
(2) অতঃপর (হে মুশরিকরা!) তোমরা জমিনে চার মাস (নিরাপদে) বিচরণ করো।(১) আর জেনে রাখো, তোমরা আল্লাহকে অক্ষম করতে পারবে না।(২) আর নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে (দুনিয়াতে বন্দী ও হত্যা এবং পরকালে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে) অপদস্থকারী।
(3) আর মহান হজ্জের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি ঘোষণা করা যাচ্ছে যে, নিশ্চয় আল্লাহ মুশরিকদের থেকে দায়মুক্ত এবং তাঁর রাসূলও। অতএব, (হে মুশরিকরা) তোমরা যদি তাওবা করো, তাহলে তা তোমাদের জন্যই উত্তম। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে জেনে রাখো, তোমরা আল্লাহকে অক্ষম করতে পারবে না। আর (হে রাসূল!) তুমি কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও।
(4) তবে মুশরিকদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা (কোনো রকম) চুক্তিবদ্ধ হয়েছো, অতঃপর তারা তোমাদের সাথে চুক্তি রক্ষায় কোন ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তাহলে তোমরা তাদের সাথে কৃত চুক্তির সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত, তা পূর্ণ করো। নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন।
(5) অতঃপর যখন (শত্রুদেরকে নিরাপত্তা দেয়ার) নিষিদ্ধ মাসগুলো(১) অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা করো এবং তাদেরকে পাকড়াও করো, তাদেরকে অবরোধ করো এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে ওৎ পেতে বসে থাকো। তবে যদি তারা (শিরক থেকে আল্লাহর নিকট) তাওবাহ করে, সালাত কায়েম করে, এবং যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও।(২) নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(6) আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়। অতঃপর তাকে পৌঁছিয়ে দাও তার নিরাপদ স্থানে। কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায়, যারা জানে না।
(7) আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের কাছে কীভাবে মুশরিকদের জন্য অঙ্গীকার (চুক্তি) বলবৎ থাকবে? অবশ্য যাদের সাথে মসজিদুল হারামের সন্নিকটে তোমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছ, তাদের কথা আলাদা। অতএব যতক্ষণ তারা তোমাদের ও তাদের মধ্যকার এ চুক্তির ওপর অটল থাকবে, ততক্ষণ তোমরাও তাদের চুক্তির ওপর অটল থাকবে। নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্যকারী) মুত্তাকী বান্দাদেরকে ভালোবাসেন।
(8) কেমন করে (মুশরিকদের সাথে) চুক্তি বলবৎ থাকবে? অথচ তারা যদি তোমাদের ওপর জয়ী হয়, তাহলে তারা তোমাদের ব্যাপারে আত্মীয়তার বন্ধন ও অঙ্গীকারের প্রতি লক্ষ্য রাখে না।(১) তারা মুখে তোমাদেরকে সন্তুষ্ট রাখতে চায়; কিন্তু তাদের অন্তর তা অস্বীকার করে। আর তাদের অধিকাংশই (ওয়াদা ভঙ্গের কারণে) ফাসিক।
(9) তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে (অনুসরণের পরিবর্তে) তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে তারা লোকদেরকে তাঁর পথে চলতে বাধা দিয়েছে। নিশ্চয় তারা যে কাজ করেছে, তা কতই না নিকৃষ্ট!
(10) তারা কোন মু’মিনের ব্যাপারে আত্মীয়তার বন্ধন ও অঙ্গীকারের প্রতি লক্ষ্য রাখে না। আর তারাই হলো সীমালঙ্ঘনকারী।
(11) অতএব যদি তারা (কুফরি থেকে সরে এসে আল্লাহর নিকট) তাওবাহ করে, সালাত কায়িম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে তারা তোমাদের দীনী (মুসলিম) ভাই। আর আমি আমার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করি, এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা জানে।
(12) আর যদি তারা (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুদ্ধ বন্ধ করার) চুক্তির পর তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দীন সম্পর্কে কটূক্তি করে, তাহলে তোমরা কাফিরদের নেতাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো। নিশ্চয় তাদের কোন প্রতিশ্রুতি বা শপথ অবশিষ্ট নেই, যেন তারা (কুফরি, চুক্তিভঙ্গ ও ইসলামের বিধান অবমাননা করা থেকে) বিরত হয়।
(13) (হে মু’মিনরা!) তোমরা কেন এমন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না, যারা নিজেদের চুক্তি ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে এবং রাসূলকে (মক্কা থেকে) বহিষ্কার করার সংকল্প করেছিল? আর তারাই প্রথমে তোমাদের বিরুদ্ধে (যুদ্ধ) শুরু করেছে।(১) তোমরা কি তাদেরকে ভয় করছো? অথচ আল্লাহই অধিক উপযুক্ত যে, তোমরা তাঁকে ভয় করবে, যদি তোমরা মু’মিন হও।
(14) (হে মু’মিনগণ) তোমরা তাদের (মুশরিকদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। তোমাদের হাতেই আল্লাহ তাদেরকে (হত্যার মাধ্যমে) শাস্তি দিবেন, তাদেরকে (পরাজিত ও বন্দী করার মাধ্যমে) অপদস্থ করবেন, তাদের ওপর তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন এবং (তাদেরকে হত্যা, বন্দী, পরাজয় ও মু’মিনদের বিজয়ের মাধ্যমে) মু’মিন সম্প্রদায়ের হৃদয়ে প্রশান্তি দান করবেন।
(15) আর তিনি তাদের (মু’মিনদের) অন্তরসমূহের ক্রোধ দূর করবেন এবং আল্লাহ যাকে চান তার তাওবা কবুল করবেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
(16) (হে মু’মিনরা!) তোমরা কি মনে করেছ যে, তোমাদেরকে (কোন ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই) এমনিতেই ছেড়ে দেয়া হবে? অথচ আল্লাহ এখনও প্রকাশ করেননি যে, তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণ ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেনি। আর তোমরা যা করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
(17) মুশরিকদের অধিকার নেই যে, তারা নিজেরা নিজেদের ওপর কুফরীর সাক্ষ্য দেয়া অবস্থায় আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে। (ঈমান না আনার কারণে) তাদের আমলসমূহ নষ্ট হয়ে গেছে এবং আগুনেই তারা চিরস্থায়ী হবে।
(18) তারাই তো আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি, সালাত কায়িম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা সৎপথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(19) (হে মুশরিকরা!) তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানো ও আলমসজিদুল হারাম রক্ষণাবেক্ষণ করাকে ঐ লোকের কাজের সমান বিবেচনা কর, যে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর পথে (নিজেদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে) জিহাদ করেছে। আল্লাহর কাছে তারা উভয়ে (সম্মানের ক্ষেত্রে) সমান নয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।(১)
(20) যারা ঈমান এনেছে, (দারুল কুফর থেকে দারুল ইসলামে) হিজরত করেছে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে তারা আল্লাহর কাছে মর্যাদায় (অন্যদের চেয়ে) শ্রেষ্ঠ। আর তারাই (জান্নাত লাভে) সফলকাম হবে।
(21) তাদের রব তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে সুসংবাদ দিচ্ছেন, তাঁর রহমত ও সন্তুষ্টির এবং এমন জান্নাতসমূহের যাতে রয়েছে, তাদের জন্য চিরস্থায়ী নি‘আমত।
(22) সেখানে (জান্নাতে) তারা চিরস্থায়ী হবে। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে আছে মহাপুরস্কার।(১)
(23) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা (অমুসলিম) পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরীকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে (কুফরির উপর অবিচল থাকার পরও) বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই যালিম।
(24) (হে রাসূল! তুমি মু’মিনদেরকে) বলো: ‘যদি তোমাদের পিতৃবর্গ, তোমাদের সন্তানেরা, তোমাদের ভ্রাতৃগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা হওয়ার আশঙ্কা করছো এবং সে বাসস্থান, যা তোমরা খুবই পছন্দ করছো, তোমাদের কাছে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে অধিক প্রিয় হয়, তবে তোমরা আল্লাহর নির্দেশ (শাস্তি) আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো।’ আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।
(25) (হে মু’মিনরা! তোমারা সংখ্যায় ও যুদ্ধের সরঞ্জামে কম থাকা সত্ত্বেও) অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন, বহু জায়গায় এবং হুনাইনের যুদ্ধের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল; অথচ তা তোমাদের (শত্রুর ওপর বিজয়ের) কোন কাজেই আসেনি। আর জমিন প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও (শত্রুদের আক্রমণের প্রচণ্ডতায়) তোমাদের ওপর সংকীর্ণ হয়ে আসছিল। অতঃপর তোমরা (পরাজিত অবস্থায় শত্রুর প্রতি) পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে।
(26) অতঃপর আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে প্রশান্তি নাযিল করলেন(১) তাঁর রাসূলের ওপর ও মু’মিনদের ওপর এবং এমন সৈন্যবাহিনী (ফিরিশতা) নাযিল করলেন যাদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি। আর তিনি কাফিরদেরকে (হত্যা, বন্দী ও সম্পদ ছিনিয়ে নেয়ার মাধ্যমে) শাস্তি দিলেন। আর এটা কাফিরদের কর্মফল।
(27) এরপর (উক্ত শাস্তির পর যে ব্যক্তি কুফরি ও ভ্রষ্টতা থেকে তাওবাহ করবে) আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা তাদের তাওবা কবুল করবেন। আর আল্লাহ (তাওবাকারী বান্দার প্রতি) অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(28) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর(১) তারা যেন (হজ্জ বা ‘উমরাহরত অবস্থায় হলেও) আলমসজিদুল হারামের নিকটবর্তী না হয়। আর তোমরা যদি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করো(২), তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে স্বীয় অনুগ্রহে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
(29) (হে মু’মিনগণ!) তোমরা যুদ্ধ করো আহলে কিতাবের সে সব (ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান) লোকদের বিরুদ্ধে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন, তা হারাম মনে করে না, আর সত্য দীন (ইসলাম) গ্রহণ করে না; যতক্ষণ না তারা নত হয়ে নিজ হাতে জিযয়াহ(১) দেয়।
(30) আর ইয়াহূদীরা বলে: ‘উযায়র আল্লাহর পুত্র’ এবং খ্রিস্টানরা বলে: ‘মাসীহ্ (ঈসা) আল্লাহর পুত্র।’ এটা তাদের (দলীল বিহীন) নিছক মুখের কথা, আগে যারা কুফরি করেছিলো, তারা তাদের মতো কথা বলছে।(১) আল্লাহ তাদের সবাইকে ধ্বংস করুণ (পথভ্রষ্ট হওয়ার কারণে) কোন দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে!(২)
(31) তারা (ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা) আল্লাহ ব্যতীত তাদের পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগীদেরকে তাদের রবরূপে গ্রহণ করেছে, উপরন্তু (খ্রিস্টানরা) মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও (উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে)। অথচ এক ইলাহ (আল্লাহকে) ছাড়া আর কারো ইবাদাত করতে তাদেরকে আদেশ করা হয়নি। তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে, তা থেকে তিনি মহা পবিত্র।
(32) তারা (কাফিররা) আল্লাহর নূরকে (দীনকে) মুখের ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়; কিন্তু আল্লাহ তো তাঁর নূরকে (দীনকে) পরিপূর্ণ করা ছাড়া অন্য কিছুই চান না; যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।
(33) তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত (কুরআন) ও সত্য ধর্ম (ইসলামকে) দিয়ে পাঠিয়েছেন, অন্য সব দীনের ওপর সেটিকে বিজয়ী করার জন্যে, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।
(34) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! জেনে রাখো, নিশ্চয় পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগীদের অনেকেই মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে এবং তারা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে। আর যারা সোনা ও রূপা (অর্থ-সম্পদ) পুঞ্জীভূত করে রাখে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না (যাকাত দেয় না), তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও।
(35) যেদিন (যে-সব সম্পদের যাকাত আদায় করা হয়নি) সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পাঁজরে এবং পিঠে সেঁক দেয়া হবে। (আর তিরস্কারের সুরে বলা হবে) ‘এগুলো তা-ই যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে, তার স্বাদ উপভোগ করো।’
(36) নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কিতাবে (লাওহে মাহফূযে) আল্লাহর কাছে মাসসমূহের সংখ্যা বারো মাস। তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ (যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম)। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ (নিষিদ্ধ) মাসসমূহে নিজেদের ওপর কোন যুলম করো না। আর তোমরা সকল মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করো, যেমনিভাবে তারা সকলে তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর সাহায্য ও অনুগ্রহ নিয়ে) মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
(37) নিশ্চয় নাসী’ (হারাম মাসকে হালাল মাসের স্থানে পরিবর্তন করে পিছিয়ে দেয়া) শুধু কুফরী বৃদ্ধি করে। এর দ্বারা কাফিরদেরকে পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত করা হয়ে থাকে। তারা এটি (হারাম মাসকে হালাল মাসের সাথে পরিবর্তন করে) এক বছর একটি মাসকে হালাল করে এবং আরেক বছর ঐ মাসকে হারাম করে, যাতে তারা আল্লাহ যেগুলো হারাম করেছেন, সেগুলোর গণনা পূর্ণ করতে পারে। ফলে আল্লাহ যা (মাসগুলোকে) হারাম করেছেন, তা তারা হালাল করে। (শয়তানের প্ররোচনায়) তাদের মন্দ কাজগুলো তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। আর আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।
(38) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের কী হলো, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় (যুদ্ধে) বের হতে বলা হয়, তখন তোমরা জমিনের প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়? তবে তোমরা কি আখিরাতের (স্থায়ী নি‘আমতের) পরিবর্তে দুনিয়ার জীবন (এর অস্থায়ী ভোগ-বিলাস) পছন্দ করে নিয়েছো? অথচ আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী একেবারেই নগণ্য।
(39) যদি তোমরা যুদ্ধে বের না হও, তিনি তোমাদের (লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও পদানত করার মাধ্যমে) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন এবং তোমাদের পরিবর্তে অন্য এক জাতিকে নিয়ে আসবেন। বস্তুত তোমরা (আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা করে) তাঁর কোনোই ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। আর আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
(40) (হে মু’মিনগণ!) যদি তোমরা তাকে (নবীকে আল্লাহর পথে জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে) সাহায্য না করো, তবে জেনে রাখো, ইতঃপূর্বে আল্লাহই তাকে সাহায্য করেছেন, যখন কাফিররা তাকে (জন্মভূমি মক্কা থেকে) বের করে দিয়েছিল, সে ছিল দু’জনের দ্বিতীয়জন। যখন তারা উভয়ে পাহাড়ের একটি গুহায় অবস্থান করছিল, সে তার সঙ্গীকে বলেছিল: ‘তুমি চিন্তা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে) আমাদের সাথেই আছেন।’ (১) অতঃপর আল্লাহ তার ওপর তাঁর পক্ষ থেকে প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাকে এমন এক সৈন্য বাহিনী (ফিরিশতা) দ্বারা সাহায্য করলেন, যাদেরকে তোমরা দেখোনি এবং তিনি কাফিরদের কথা তুচ্ছ করে দেন। আর আল্লাহর বাণীই সর্বদা সমুন্নত এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(41) তোমরা হালকা ও ভারী উভয় অবস্থায়(১) যুদ্ধে বেরিয়ে পড়ো এবং তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা জানতে।
(42) (হে নবী) যদি সহজে (গনীমতের) সম্পদ লাভের আশা থাকতো আর সফর যদি সহজতর হতো, তবে তারা (মুনাফিকরা) অবশ্যই তোমার অনুসরণ করতো; কিন্তু তাদের কাছে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া কষ্টকর মনে হলো। আর অচিরেই তারা (যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য) আল্লাহর শপথ করে বলবে: ‘আমরা যদি সক্ষম হতাম, তাহলে অবশ্যই তোমাদের সাথে (যুদ্ধে) বের হতাম।’ তারা তাদের নিজেদেরকেই ধ্বংস করে।(১) আর আল্লাহ ভালো করেই জানেন, নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।
(43) (হে রাসূল!) আল্লাহ ( তাদের অনুমতির ব্যাপারে ইজতিহাদ করায়) তোমাকে ক্ষমা করেছেন। তুমি কেন তাদেরকে (যুদ্ধে না যাওয়ার) অনুমতি দিলে; যতক্ষণ না তোমার কাছে (তাদের উপস্থাপিত ওজর-আপত্তিতে) প্রমাণিত হয়েছে যে, কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী।
(44) যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তারা তাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করা থেকে পিছিয়ে থাকার জন্য তোমার কাছে অনুমতি চায় না। আর আল্লাহ মুত্তাকীদের সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত।
(45) একমাত্র সেসব লোকই (মুনাফিকরা) তোমার নিকট (জিহাদে না যাওয়ার জন্য) অনুমতি চায়, যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি (সত্যিকারার্থে) ঈমান রাখে না, আর তাদের অন্তরসমূহ (আল্লাহর দীন সম্পর্কে) সংশয়গ্রস্ত হয়ে গেছে। সুতরাং তারা তাদের সংশয়েই ঘুরপাক খেতে থাকে।
(46) আর যদি তারা সত্যিই (আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য) বের হওয়ার ইচ্ছা করত, তবে তারা সে জন্য (যুদ্ধের) সরঞ্জাম প্রস্তুত করত। কিন্তু আল্লাহ স্বয়ং তাদের (মুনাফিকদের তোমার সাথে যুদ্ধে) বের হওয়াকে অপছন্দ করলেন। ফলে তিনি তাদেরকে যুদ্ধে বের হওয়ার কাজটি কঠিন করে দিলেন। আর বলা হলো: ‘তোমরা বাড়িঘরে বসে পড়া লোকদের সাথে বসে থাকো।’
(47) যদি তারা (মুনাফিকরা) তোমাদের সাথে (যুদ্ধে) বের হতো, তবে তোমাদের মধ্যে (অসহযোগিতা এবং সন্দেহ সৃষ্টি করে) ফ্যাসাদই বৃদ্ধি করত এবং তারা (পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে) বিপর্যয় সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে ছুটোছুটি করতো। আর তোমাদের মধ্যে রয়েছে, তাদের কথা অধিক শ্রবণকারী ও প্রচারকারী। আর আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত।
(48) অবশ্য তারা (এ মুনাফিকরা তাবুক যুদ্ধের) আগেও (মু’মিনদের ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে) ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল এবং তারা তোমার বহু কাজ ওলট-পালট করে দিতে চেয়েছিল। অবশেষে সত্যের(১) আগমন ঘটল এবং আল্লাহর দীন বিজয়ী হলো; অথচ তারা ছিল অপছন্দকারী।
(49) আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ (ওজর-আপত্তি জানিয়ে) বলে: ‘আমাকে (যুদ্ধে না যাওয়ার) অনুমতি দিন এবং আমাকে বিপর্যয়ের মধ্যে (১) ফেলবেন না।’ জেনে রাখো, তারা তো বিপর্যয়ের মধ্যেই আছে। আর নিশ্চয় জাহান্নাম কাফিরদের বেষ্টনকারী।
(50) যদি তোমার কাছে কোন কল্যাণ(১) পৌঁছে, তবে তা তাদেরকে কষ্ট দেয়। আর যদি তোমাকে কোন বিপদ আক্রান্ত করে, তবে তারা বলে: ‘আমরা ইতঃপূর্বে নিজেদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম’ এবং তারা উৎফুল্ল চিত্তে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
(51) (হে রাসূল! তুমি এ মুনাফিকদেরকে) বলো: ‘আমাদের জন্য আল্লাহ যা লিখেছেন, তা ছাড়া আমাদের অন্য কিছু ঘটবে না। তিনি আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর ওপরই মু’মিনদের তাওয়াক্কুল করা উচিত।
(52) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘তোমরা কেবল আমাদের জন্য দু’টি কল্যাণের একটির অপেক্ষা করছো(১), আর আমরাও তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি যে, আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে শাস্তি অবতীর্ণ করবেন অথবা আমাদের হাত দ্বারা তোমাদেরকে (বন্দী কিংবা হত্যা করে) শাস্তি দিবেন। অতএব তোমরা (আমাদের পরিণতির) অপেক্ষা করো, নিশ্চয় আমরাও তোমাদের সাথে (তোমাদের পরিণতির) অপেক্ষায় থাকবো।’
(53) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘তোমরা ইচ্ছায় দান করো অথবা অনিচ্ছায়, তোমাদের থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না। নিশ্চয় তোমরা হচ্ছো, ফাসিক সম্প্রদায়।
(54) আর তাদের দানকৃত অর্থ-সম্পদ কবুল না হওয়ার এ ছাড়া আর কোন কারণ নেই যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে, আর অলসতা করে ছাড়া তারা সালাতে আসে না এবং অনিচ্ছাকৃত ছাড়া তারা দান করে না।(১)
(55) অতএব (হে রাসূল!) তোমাকে যেন আশ্চর্যান্বিত না করে তাদের (মুনাফিকদের) ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি। আল্লাহ এসবের দ্বারাই তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে শাস্তি দিতে চান। আর কুফরি অবস্থায় তাদের রূহগুলো শরীর থেকে বের হবে।(১)
(56) আর তারা আল্লাহর নামে শপথ করে যে, নিশ্চয় তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত; অথচ তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তারা এমন সম্প্রদায় যারা (মুশরিকদের ওপর আপতিত হত্যাযজ্ঞ ও বন্দিদশা তাদের ওপরও নেমে আসবে বলে) ভয় করে থাকে।
(57) যদি তারা (মুনাফিকরা) কোনো আশ্রয়স্থল বা কোন গিরিগুহা বা লুকিয়ে থাকার কোন প্রবেশস্থল (সুড়ঙ্গ পথ) পেতো, তবে তারা সেদিকেই দ্রুত দৌড়ে পালিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করতো।
(58) আর (হে রাসূল!) তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা সাদাকা বণ্টনের ব্যাপারে তোমাকে দোষারোপ করে। অতঃপর তাদেরকে যদি তা থেকে দেয়া হয়, তারা সন্তুষ্ট থাকে, আর যদি তাদেরকে না দেয়া হয়, তখন তারা অসন্তুষ্ট হয়।
(59) আর যদি তারা (এ মুনাফিকরা) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকতো এবং বলতো: ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, অচিরেই আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ দান করবেন এবং তাঁর রাসূলও (অচিরেই আমাদেরকে দিবেন)। নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই প্রতি অনুরক্ত।’ (১)
(60) নিশ্চয় সাদাকা (যাকাত) তো শুধু ফকীর(১), মিসকীন(২) ও যাকাত আদায়ের কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্যে, যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্যে(৩), দাসমুক্তিতে, ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্যে, আল্লাহর পথে (মুজাহিদদেরকে তৈরি করার জন্যে) ও মুসাফিরদের(৪) জন্যে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই নির্ধারিত বিধান। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(61) আর তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে: ‘সে (সব বিষয়ে) অতিশয় কর্ণপাতকারী।’ (হে নবী! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘তোমাদের জন্য যা কল্যাণকর, তা ছাড়া সে অন্য কিছু শুনে না। সে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং মু’মিনদের (সংবাদ) বিশ্বাস করে। আর তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার তাদের জন্য সে রহমত স্বরূপ এবং যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(62) তারা (মুনাফিকরা) তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য তোমাদের কাছে আল্লাহর নামে শপথ করে।(১) অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল বেশি হকদার যে, তারা তাদেরকে (ঈমান ও আমলের মাধ্যমে) সন্তুষ্ট করবে; যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে।
(63) তারা (এ মুনাফিকরা) কি জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, তার জন্য রয়েছে, জাহান্নামের আগুন। তাতে সে চিরকাল থাকবে। এটা চরম লাঞ্ছনা।
(64) মুনাফিকরা (সারাক্ষণ) ভয় করে যে, তাদের সম্পর্কে এমন একটি সূরা অবতীর্ণ হবে, যা তাদের অন্তরের বিষয়গুলো (মু’মিনদেরকে) জানিয়ে দিবে। (হে রাসূল!) বলো: ‘তোমরা (ইসলামের বিরুদ্ধে) ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে থাকো। নিশ্চয় আল্লাহ (কোন সূরা নাযিল করে) বের করবেন, তোমরা যা ভয় করছো।’
(65) আর তুমি তাদেরকে (ধর্মের প্রতি আঘাত ও মু’মিনদেরকে গালি দেয়া সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করলে অবশ্যই তারা বলবে: ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও খেল-তামাশা করছিলাম।‘ (হে রাসূল!) বলো: ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছিলে?
(66) তোমরা মিথ্যা ওযর পেশ করো না। তোমরা ঈমান আনার পরে অবশ্যই কুফরি করেছ। যদি আমি তোমাদের মধ্যে কোন দলকে (মুনাফিকি ছেড়ে তাওবাহ করার কারণে) ক্ষমা করলেও অন্য দলকে (মুনাফিকির ওপর অটল থাকা ও তাওবাহ না করার কারণে) অবশ্যই শাস্তি দিবো। কারণ, তারা হচ্ছে অপরাধী।
(67) মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীরা একে অপরের অংশ, তারা অসৎকাজের কাজের আদেশ দেয়, আর সৎকাজ থেকে নিষেধ করে। তারা (আল্লাহর পথে ব্যয় করা থেকে) নিজেদের হাতগুলোকে গুটিয়ে রাখে। তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে তিনিও তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন। নিশ্চয় মুনাফিকরা হচ্ছে ফাসিক।
(68) আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফিরদেরকে জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাতে তারা চিরদিন থাকবে। (শাস্তি হিসেবে) এটি তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।
(69) (হে মুনাফিকরা! কুফরি ও ঠাট্টা-বিদ্রুপের ক্ষেত্রে) তোমাদের আচরণ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতোই। তারা ছিল তোমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী, ধন-সম্পদ ও সন্তানাদিতে অধিক। ফলে তারা তাদের (বরাদ্দকৃত দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের) অংশ ভোগ করেছে, আর তোমরাও তোমাদের (বরাদ্দকৃত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের) অংশ ভোগ করেছো, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা তাদের অংশ ভোগ করেছে। আর তোমরাও (ধর্মকে অবজ্ঞা করে) খেল-তামাশায় মত্ত হয়েছো, যেমনিভাবে তারাও মত্ত হয়েছিলো। (কুফরির কারণে) দুনিয়া ও আখিরাতে এদের আমলসমূহ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
(70) তাদের (এ মুনাফিকদের) কাছে কি তাদের পূর্বের লোকদের সংবাদ পৌঁছেনি? নূহ, ‘আদ ও সামূদের সম্প্রদায়, ইবরাহীমের সম্প্রদায়, মাদ্ইয়ানবাসী ও (লূতের সম্প্রদায়ের) বিধ্বস্ত নগরীর সংবাদ? তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ উপস্থিত হয়েছিলো। অতএব আল্লাহ তাদের ওপর যুলম করার নন; বরং তারা নিজেরাই (আল্লাহর সাথে কুফরি ও তাঁর রাসূলদেরকে অস্বীকার করে) নিজেদের ওপর যুলম করছিল।
(71) আর মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীরা একে অপরের বন্ধু (সহযোগী ও সাহায্যকারী)। তারা সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়িম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এরাই সেসব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ অচিরেই রহম করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(72) আল্লাহ মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীদেরকে সেই জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। তিনি আরো ওয়াদা করেছেন যে, সে চিরস্থায়ী জান্নাতসমূহে থাকবে পবিত্র বাসস্থান। আর আল্লাহর সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এটাই মহাসফলতা।
(73) হে নবী! তুমি কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো এবং তাদের প্রতি কঠোর হও। আর তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল!
(74) তারা (মুনাফিকরা) আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে, তারা (তোমাকে গালি দেয়া ও তোমার ইসলামকে নিন্দা করা বিষয়ে) কিছুই বলেনি; অথচ সত্য হলো) তারা কুফরি বাক্য বলেছে এবং ইসলাম গ্রহণের পর তারা আবার কুফরি করেছে। আর তারা সংকল্প করেছিল এমন কিছুর (নবীকে হত্যা করার), যা তারা সফল হতে পারেনি। আর তারা একমাত্র এ কারণেই দোষারোপ করেছিল যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাঁর স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ দ্বারা) অভাবমুক্ত করেছেন। এরপর যদি তারা (মুনাফিকি ছেড়ে) তাওবাহ করে, তবে তা হবে তাদের জন্যই উত্তম। আর যদি তারা (আল্লাহর নিকট তাওবাহ না করে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আল্লাহ তাদেরকে (হত্যা ও বন্দিদশার মাধ্যমে) দুনিয়ায় এবং (জাহান্নামের আগুনের মাধ্যমে) আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন। আর তাদের জন্য (শাস্তি থেকে রক্ষা করতে) জমিনে কোনো অভিভাবক নেই এবং কোনো সাহায্যকারীও নেই।
(75) আর তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, যদি আল্লাহ তার স্বীয় অনুগ্রহে আমাদের দান করেন, আমরা অবশ্যই দান-খয়রাত করবো এবং অবশ্যই আমরা সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবো।
(76) অতঃপর আল্লাহ যখন তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে দান করলেন, তারা তাতে কার্পণ্য করলো এবং তারা (ঈমান থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিলো।
(77) পরিণামে তিনি (আল্লাহ) তাদের অন্তরে মুনাফিকী স্থায়ী করে দিলেন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে। কারণ তারা আল্লাহকে যে ওয়াদা দিয়েছে, তা ভঙ্গ করেছে এবং তারা মিথ্যাচার করেছে।
(78) তারা (এ মুনাফিকরা) কি জানে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদের অন্তরের গোপন কথা ও তাদের গোপন পরামর্শ জানেন? আর নিশ্চয় আল্লাহ গায়িবসমূহের ব্যাপারে সম্যক জ্ঞাত।
(79) মু’মিনদের মধ্যে যারা সন্তুষ্টচিত্তে সদাকা (যাকাত ও দান) দেয় এবং যারা নিজ কষ্ট ও শ্রম ছাড়া কিছুই (দান করতে) পায় না, তাদেরকে (স্বল্প দানের কারণে) যারা দোষারোপ ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, আল্লাহও তাদেরকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেন(১) এবং তাদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(80) (হে রাসূল!) তুমি তাদের (মুনাফিকদের) জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো, কিংবা ক্ষমা প্রার্থনা না-ই করো, একই কথা। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা করো, তবুও আল্লাহ তাদেরকে কখনোই ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরি করেছে। আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।
(81) (তাবুক যুদ্ধ থেকে) পেছনে থাকা (মুনাফিক) লোকগুলো আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে বসে থাকতেই আনন্দবোধ করলো। আর তারা তাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে অপছন্দ করলো এবং তারা (অন্যান্য মুনাফিকদেরকেও নিরুৎসাহিত করে) বললো: ‘তোমরা গরমের মধ্যে যুদ্ধে বের হয়ো না।’ (হে রাসূল!) বলো: ‘জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, হায়! যদি তারা বুঝতো।
(82) অতএব তারা (এ মুনাফিকরা নশ্বর দুনিয়ার জীবনে) অল্প কিছু সময় হেসে নিক। কারণ তারা তাদের কৃতকর্মের জন্যে (আখিরাতের স্থায়ী জীবনে) প্রচুর কাঁদতে হবে।
(83) অতএব (হে নবী! পরবর্তীতে) আল্লাহ যদি তোমাকে তাদের কোন দলের কাছে ফিরিয়ে আনেন এবং তারা তোমার কাছে (অন্য যুদ্ধে) যাওয়ার অনুমতি চায়, তবে তুমি তাদেরকে বলো: ‘তোমরা আমার সাথে কখনো (আল্লাহর পথে যুদ্ধে) বের হবে না এবং আমার সাথে কোন দুশমনের বিরুদ্ধে কখনও জিহাদও করবে না। নিশ্চয় তোমরা (তাবুক যুদ্ধে না গিয়ে) প্রথমবার বসে থাকাকেই পছন্দ করেছিলে। সুতরাং তোমরা পেছনে বসে থাকা লোকদের সাথে বসে থাকো।
(84) আর (হে রাসূল!) তাদের (এ মুনাফিকদের) মধ্যে কেউ মারা গেলে, তার জন্যে তুমি (জানাযার) সালাত আদায় করবে না এবং তার কবরের কাছে দাঁড়াবেও না। নিশ্চয় তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে এবং তারা ফাসিক অবস্থায় মারা গিয়েছে।(১)
(85) আর (হে রাসূল!) এ মুনাফিকদের সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি যেন তোমাকে আশ্চর্যান্বিত না করে। আল্লাহ এর দ্বারা কেবল তাদের দুনিয়ার জীবনে শাস্তি দিতে চান এবং কাফির অবস্থায় তাদের রূহগুলো তাদের শরীর থেকে বের হয়ে যাবে।
(86) আর যখন আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার এবং রাসূলের সঙ্গী হয়ে জিহাদ করার নির্দেশ নিয়ে কোনো সূরা নাযিল হয়, তখন তাদের (মুনাফিকদের) শক্তি-সামর্থ্যবান লোকেরা তোমার কাছে (যুদ্ধে না যাওয়ার) অনুমতি চায় এবং বলে: ‘আমাদেরকে অব্যাহতি দিন, আমরা (যুদ্ধে না গিয়ে) বসে থাকা লোকদের সাথে (বসে) থাকতে চাই।’
(87) তারা ঘরে বসবাসকারী নারীদের সাথে থাকাকেই পছন্দ করেছে এবং (কুফরি ও মুনাফিকির কারণে) তাদের অন্তরসমূহের ওপর মোহর এঁটে দেয়া হয়েছে। ফলে তারা (সত্যকে) বুঝতে পারে না ।
(88) কিন্তু রাসূল ও তার সাথে থাকা মু’মিনরা তাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। আর সে সব লোকের জন্যই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ(১) এবং তারাই সফলকাম।
(89) আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাতসমূহ, যার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই হচ্ছে, মহা সফলতা।
(90) আর আরব বেদুইনদের মধ্য থেকে কিছু লোক অজুহাত পেশ করতে আসল, যেন তাদেরকে (জিহাদে না যাওয়ার) অনুমতি দেয়া হয় এবং যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে মিথ্যা বলেছিল, তারা (জিহাদ না করে) বসে থাকলো।(১) তাদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে, তাদেরকে অচিরেই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আক্রান্ত করবে।
(91) দুর্বল (মহিলা ও শিশু), অসুস্থ এবং যেসব লোকের জিহাদে শরীক হওয়ার আর্থিক সামর্থ্য নেই, (তারা যদি জিহাদের না গিয়ে পিছনে থেকে যায়, তাতে) তাদের কোনো অপরাধ (গুনাহ) নেই; যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হিতাকাঙ্ক্ষী হয়। এ ধরনের সৎকর্মশীলদের বিরুদ্ধে (অভিযোগের) কোন পথ নেই। আর আল্লাহ পরশ ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
(92) আর তাদের ওপরও কোন দোষ নেই, যারা (যুদ্ধে যাওয়ার জন্যে) তোমার কাছে বাহনের জন্যে এসেছিল, আর তুমি বলেছিলে: ‘আমি তোমাদের জন্যে কোনো বাহন পাচ্ছি না।’ তখন তারা ফিরে গেলো, এমতাবস্থায় যে, তাদের চোখ অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে, এ দু:খে যে, তারা খরচ করার মত (নিজের কাছে বা তোমার কাছে) কিছুই পায়নি।
(93) কিন্তু (অভিযোগের) পথ আছে তাদের ওপর, যারা অভাবমুক্ত হয়েও তোমার কাছে (জিহাদে না যাওয়ার) অনুমতি চেয়েছে। তারা পেছনে থাকা লোকদের সাথে থাকাটাই পছন্দ করেছিল। আর আল্লাহ তাদের অন্তরসমূহের ওপর মোহর এঁটে দিয়েছেন, ফলে তারা জানতে পারে না (কোন কাজে তাদের জন্যে উপকার রয়েছে আর কোন কাজে বিপদ ও ক্ষতি রয়েছে)।
(94) তোমরা যখন (জিহাদ থেকে) তাদের কাছে ফিরে আসবে, তখন তারা তোমাদের নিকট ওযর-আপত্তি পেশ করবে। (হে রাসূল! তাদেরকে) বলো: ‘তোমরা এ সব মিথ্যা ওযর পেশ করো না। আমরা তোমাদেরকে কখনোই বিশ্বাস করবো না। অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের খবর আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। এখন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমাদের কাজকর্ম(১) দেখবেন । তারপর তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে গায়িব (অপ্রকাশ্য) ও প্রকাশ্যের জ্ঞানীর (আল্লাহর) নিকট। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে যা তোমরা আমল করতে, সে সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন।’
(95) তোমরা যখন (যুদ্ধ থেকে মদীনায়) তাদের কাছে ফিরে আসবে, তখন তারা অচিরেই তোমাদের কাছে আল্লাহর নামে শপথ করবে, যাতে তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করো।(১) সুতরাং তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করো। নিশ্চয় তারা অপবিত্র এবং তাদের (মন্দ) কৃতকর্মের প্রতিফলস্বরূপ জাহান্নামই হলো তাদের আশ্রয়স্থল।
(96) তারা (মুনাফিকরা) তোমাদের কাছে শপথ করবে, যাতে তোমরা (তাদের ওযর-আপত্তি গ্রহণ করে) তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হও। জেনে রেখো, তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেও, আল্লাহ তো (কুফরি ও মুনাফিকির মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে আসা) ফাসিক সম্প্রদায়ের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না।
(97) আরব বেদুঈনরা কুফরি ও মুনাফিকিতে অধিক কঠোর এবং আল্লাহ তাঁর রাসূলের ওপর যা নাযিল করেছেন, তার সীমারেখা (ফরয, সুন্নাত ও বিধানগত সূত্রাবলি) সম্পর্কে না জানার অধিক যোগ্য। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
(98) আর বেদুঈন মুনাফিকদের কেউ কেউ আল্লাহর পথে ব্যয় করাকে জরিমানা মনে করে এবং তোমাদের বিপর্যয়ের (অকল্যাণ নাযিলের) প্রতীক্ষায় থাকে।(১) তবে নিকৃষ্টতম বিপর্যয়(২) তাদের ওপরই এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।
(99) আর ঐসব বেদুঈনদের কেউ কেউ আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা (যে সম্পদ আল্লাহর পথে) ব্যয় করে তাকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ও রাসূলের দু‘আ লাভের উপায় হিসেবে গণ্য করে। জেনে রাখো, নিশ্চয় তা তাদের জন্য নৈকট্যের মাধ্যম। অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে তাঁর রহমতে প্রবেশ করাবেন।(১) নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর তাওবাকারী বান্দার প্রতি) অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(100) আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা (ঈমানের দাওয়াত গ্রহণে) প্রথম অগ্রগামী এবং যারা (ঈমান, ও আমলের ক্ষেত্রে) নিষ্ঠার সাথে তাদেরকে অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও তাঁর ওপর সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য।
(101) আর তোমাদের আশেপাশে যেসব বেদুঈনরা বসবাস করে তাদের মধ্যে কিছু লোক আছে মুনাফিক এবং মদীনাবাসীদের মধ্যেও রয়েছে কিছু মুনাফিক, যারা মুনাফিকির ওপর অটল ও অবিচল। (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে জান না, আমি (আল্লাহ) তাদেরকে জানি-চিনি। অচিরেই আমি তাদেরকে দু’বার শাস্তি দিবো,(১) তারপর তাদেরকে মহাশাস্তির (জাহান্নামের তলদেশের কঠিন শাস্তির) দিকেফিরিয়ে নেয়া হবে ।
(102) এছাড়াও (মদীনাবাসীদের মধ্যে) কিছু লোক আছে, যারা (যুদ্ধে না যাওয়ার মিথ্যা ওজর পেশ না করে) তাদের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। তারা সৎকর্মের সঙ্গে অন্য অসৎকর্ম মিশিয়ে ফেলেছে। আশা করা যায়, আল্লাহ তাদেরকে (তাওবাহ কবুল করে) ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(103) (হে রাসূল!) তুমি তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ করো। এর দ্বারা তুমি তাদেরকে (গুনাহ ও পাপরাশি থেকে) পবিত্র এবং পরিশুদ্ধ করো। আর তুমি (সাদাকা গ্রহণ করার পরে) তাদের জন্য দু’আ করো। তোমার দু’আ তো তাদের জন্য রহমত ও প্রশান্তি স্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
(104) তারা কি জানে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবাহ কবুল করেন এবং দান-সাদাকা গ্রহণ করেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।
(105) আর (হে রাসূল!) তুমি (জিহাদ থেকে পিছিয়ে পড়া এবং নিজেদের পাপ থেকে তাওবাকারীদেরকে) বলো: ‘তোমরা আমল করতে থাকো। অতএব, অচিরেই আল্লাহ তোমাদের আমল দেখবেন এবং তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণও। আর অচিরেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে, অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্যের জ্ঞানীর নিকট। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের (দুনিয়ার) কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন।
(106) আর আল্লাহর নির্দেশ আসার অপেক্ষায় (তাবুক যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে পড়া) অপর কিছু লোকের বিষয়ে ফয়সালা পিছিয়ে দেয়া হলো। (তারা তাওবাহ না করলে) তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন, আর (তাওবাহ করলে) তাদের তাওবাহ কবুল করবেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(107) আর (মুনাফিকদের) যারা মসজিদ নির্মাণ করেছে (মুসলিমদের) ক্ষতিসাধন, (মুনাফিকদেরকে শক্তিশালী করে) কুফরী প্রকাশ ও মু’মিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ইতঃপূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যে লড়াই করেছে তার গোপন ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের জন্যে। (তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকো। কারণ, এখন) তারা (মুনাফিকরা) অবশ্যই শপথ করে বলবে: ‘আমরা সৎ উদ্দেশ্যেই এটি করেছি।’ আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তারা (নিজেদের এ দাবিতে) অবশ্যই মিথ্যাবাদী।
(108) (হে নবী!) তুমি সেখানে কখনো সালাতের জন্য দাঁড়াবে না। অবশ্যই যে মসজিদটি(১) প্রথম দিন থেকেই তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তোমার সেখানে সালাতের জন্য দাঁড়ানো অধিকতর সমীচীন। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন(২) ভালোবাসে। আর আল্লাহ (প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নাপাক এবং গুনাহ থেকে) পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন।
(109) যে ব্যক্তি তার গৃহের ভিত্তি আল্লাহর তাকওয়া ও সন্তুষ্টির ওপর প্রতিষ্ঠা করলো, সে কি উত্তম না ঐ ব্যক্তি যে তার গৃহের ভিত্তি স্থাপন করেছে, এক গর্তের ধ্বংসোন্মুখ কিনারে?(১) অতঃপর তাকে নিয়ে তা ধসে পড়ল জাহান্নামের আগুনে। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।
(110) তাদের নির্মিত গৃহ (মসজিদু দিরার ) তাদের অন্তরে স্থায়ী সন্দেহের (মুনাফিকির) কারণ হয়ে থাকবে, যে পর্যন্ত না (মৃত্যু অথবা তরবারির আঘাতে) তাদের অন্তরগুলো ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(111) নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। অতএব তারা (কাফিরদেরকে) হত্যা করবে এবং এবং তারা নিজেরাও নিহত হবে। তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে (১) সত্য অঙ্গীকার রয়েছে। আর আল্লাহর চেয়ে অধিক অঙ্গীকার পূর্ণকারী কে আছে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সাথে) যে কেনা-বেচা করেছ, সে কেনা-বেচার জন্যে সুসংবাদ গ্রহণ করো। আর এ (কেনা-বেচা্টাই) মহাসাফল্য।
(112) তারা (এ মহাসাফল্য অর্জনকারীরা) তাওবাহকারী, ‘ইবাদতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকূ‘কারী, সাজদাহকারী, সৎকাজের আদেশদাতা, অসৎকাজের নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী। আর (হে রাসূল!) তুমি (এসব গুণাবলির অধিকারী) মু’মিনদেরকে (দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার) সুসংবাদ দাও।
(113) নবী ও মু’মিনদের জন্য সংগত নয় যে, তারা (আল্লাহর কাছে) মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে; যদিও তারা আত্মীয়-স্বজন হোক না কেন। অথচ এটা তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, নিশ্চয় তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী(১)।
(114) আর ইবরাহীম তাঁর পিতার জন্য যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল, তার কারণ, সে তাকে (ইসলাম গ্রহণের আশায়) এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু যখন তার কাছে (ওহীর মাধ্যমে) এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে গেলো যে, সে আল্লাহর শত্রু(১), তখন ইবরাহীম তার (পিতার) সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেললো। নিশ্চয় ইবরাহীম ছিলো (আল্লাহর প্রতি) বেশি অনুরাগী ও (তার যালিম সম্প্রদায়ের প্রতি) অতিমাত্রায় ধৈর্যশীল।
(115) আর আল্লাহর রীতি এটা নয় যে, তিনি কোনো সম্প্রদায়কে হিদায়াত দানের পর তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন; যতক্ষণ না তাদের কাছে স্পষ্ট হয় যে, কোন কোন (হারাম) বিষয়গুলো তাদেরকে বর্জন করতে হবে। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।
(116) নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনের মালিক। তিনি জীবন দান করেন এবং তিনি মৃত্যু ঘটান। আর (হে মানুষ!) আল্লাহ ছাড়া তোমাদের (দায়িত্বভার বহনের) কোনো অভিভাবক নেই এবং (বিপদাপদ প্রতিহত করতে) কোন সাহায্যকারীও নেই।
(117) আল্লাহ অবশ্যই নবী(১), মুহাজির ও আনসারদের তাওবাহ কবুল করলেন, যারা অত্যন্ত কঠিন সংকটকালে তার (নবীর) অনুসরণ করেছিল, তাদের এক দলের অন্তর বক্রতার দিকে ধাবিত হওয়ার উপক্রম হওয়ার পরেও(২)। তারপর আল্লাহ (তাদেরকে যুদ্ধে বের হওয়া ও ময়দানে অটল থাকার তাওফীক দিয়েছেন, উপরন্তু) তাদের তাওবাহ কবুল করেছেন। নিশ্চয় তিনি তাদের প্রতি অতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু।
(118) আর তিনি সে তিনজনের(১) তাওবাহ কবুল করলেন, যাদের (তাওবাহ কবুল করা বা না করা) সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল।(২) শেষ পর্যন্ত পৃথিবী বিশাল হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সেটা সংকুচিত হয়ে গেলো এবং (সমাজচ্যুত হওয়ায়) তাদের নিজেদের জীবনও তাদের জন্যে বোঝা হয়ে দাঁড়ালো। আর তারা নিশ্চিত জেনে নিলো যে, (আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচার জন্য) তিনি ছাড়া আর কোনো আশ্রয়স্থল নেই। তারপর তিনি তাদের তাওবাহ কবুল করলেন, যাতে তারা তাঁর দিকে ফিরে আসে। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।
(119) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং (ঈমান, কথা ও কাজে) সত্যবাদীদের সাথেই থাকো।
(120) (রাসূল নিজেই যুদ্ধের জন্য বের হলে) মদীনাবাসী ও তাদের পার্শ্ববর্তী মরু বেদুঈনদের সমীচীন নয় যে, তারা আল্লাহর রাসূলের (সাথে যুদ্ধে) সঙ্গী না হয়ে পিছনে থেকে যাবে এবং রাসূলের জীবন অপেক্ষা নিজেদের জীবনকে প্রিয় মনে করবে। কারণ আল্লাহর পথে তাদের কোন পিপাসা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা লাগলে, এমনকি কাফিরদেরকে রাগান্বিত করে এমন কোন জায়গায় তারা অবস্থান করলে, উপরন্তু শত্রুদেরকে (হত্যা, বন্দী, তাদের থেকে গনীমত লাভ বা তাদেরকে পরাজিত করে) কোনো কষ্ট প্রদান করলে, এর পরিবর্তে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) তাদের জন্য উত্তম আমলের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের কাজের প্রতিফল নষ্ট করেন না।
(121) আর তারা অল্প ও বেশি যা কিছুই (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করে এবং (চলার পথে) যে কোন প্রান্তরই অতিক্রম করুক না কেন, তা তাদের জন্যে (সে ব্যয় ও সফরের কষ্ট তাদের আমলনামায় পুণ্য হিসেবে) লিপিবদ্ধ করা হয়, যাতে তারা যে আমল করে (পরকালে) আল্লাহ তার উৎকৃষ্টতর পুরস্কার তাদেরকে দিতে পারেন।
(122) আর মু’মিনদের উচিত নয় যে, তারা সবাই যুদ্ধের জন্য এক সাথে বের হয়ে যাবে।(১) অতঃপর তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দীনের গভীর জ্ঞান(২) অর্জন করতে পারে এবং যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে (আল্লাহর শাস্তির) ভীতিপ্রদর্শন করতে পারে, যাতে তারা (তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে) সতর্ক হয়।
(123) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী(১) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়।(২) আর জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর নিজ সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে) মুত্তাকীদের সাথেই আছেন।
(124) আর যখনই কোনো সূরা নাযিল হয়, তখন তাদের (মুনাফিকদের) কেউ কেউ (ঠাট্টা ও মশকরা করে) বলে: ‘এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করল? বস্তুত যারা মু’মিন এটি তাদেরই (পূর্বের ঈমানের ওপর আরো) ঈমান বৃদ্ধি করে এবং (অহী নাযিল হওয়াতে) তারা আনন্দিত হয়।(১)
(125) আর যাদের অন্তরে (মুনাফিকির) ব্যাধি আছে, এটা (সূরা অর্থাৎ কুরআনের সূরা বা আয়াতের অবতরণ) তাদের অন্তরের কলুষতার সাথে আরো কলুষতা বৃদ্ধি করে। আর কাফির অবস্থায় তাদের মৃত্যু ঘটে।
(126) তারা (মুনাফিকরা) কি দেখে না যে, তাদেরকে প্রতিবছর একবার বা দু’বার (মুনাফিকি ও তাদের গোমর ফাঁস করে) বিপর্যস্ত করা হয়? এর পরও তারা (কুফরি থেকে) তাওবাহ করে না এবং উপদেশ গ্রহণ করে না।
(127) আর যখনই (মুনাফিকদের অবস্থা সম্বলিত) কোন সূরা নাযিল হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকায় এবং জিজ্ঞেস করে: কেউ কি তোমাদেরকে দেখতে পাচ্ছে? তারপর তারা (সমবেতস্থল থেকে চুপিসারে) সরে পড়ে। আসলে আল্লাহ তাদের অন্তরকে (হিদায়াত ও কল্যাণ থেকে) বিমুখ করে দেন। কারণ, তারা এক অবুঝ সম্প্রদায়।
(128) (হে আরব জাতি!) অবশ্যই তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকেই(১) একজন রাসূল এসেছেন, তোমাদের যে দুঃখ-কষ্ট হয়ে থাকে, তা তার জন্য বড়ই পীড়াদায়ক। তিনি তোমাদের (হিদায়াত ও কল্যাণের ব্যাপারে) অতি আগ্রহী, মু’মিনদের প্রতি তিনি করুণাশীল ও অতি দয়ালু।
(129) অতঃপর তারা যদি (তোমার আনীত বিধান থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তুমি তাদেরকে বলো: ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই। আমি তাঁরই ওপর তাওয়াক্কুল করি এবং তিনিই মহা ‘আরশের একচ্ছত্র অধিপতি ।