24 - An-Noor ()

|

(1) এটি (পবিত্র আল-কুরআনের) একটি সূরা, যা আমি নাযিল করেছি এবং এর বিধানকে অবশ্য পালনীয় করেছি। আর আমি এতে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেছি, যাতে তোমরা (এর বিধানগুলো থেকে) উপদেশ গ্রহণ করো।

(2) (অবিবাহিত) ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশটি করে বেত্রাঘাত করো। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক, তবে আল্লাহর দীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে। আর মু’মিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।(১)

(3) (অভ্যস্ত) ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করবে না এবং (একইভাবে) ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষ ছাড়া বিয়ে করবে না। আর মু’মিনদের ওপর এটা হারাম করা হয়েছে।(১)

(4) আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে(১), তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে না আসে, তাহলে (হে বিচারকগণ!) তোমরা তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক।

(5) তবে যারা এ ঘটনার পরে তাওবা করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে(১), তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(6) আর যারা নিজেদের স্ত্রীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেয়; অথচ নিজেরা ছাড়া তাদের আর কোন সাক্ষী নেই, তাহলে তাদের প্রত্যেকের সাক্ষ্য হবে আল্লাহর নামে চারবার শপথ করে বলবে যে, নিশ্চয়ই সে (তার স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়ার ব্যাপারে) সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।

(7) আর পঞ্চমবারে সাক্ষ্য দিবে যে, সে যদি (অপবাদ দেওয়ার ব্যাপারে) মিথ্যাবাদী হয়, তবে নিশ্চয় তার ওপর নেমে আসবে আল্লাহর লা‘নত।(১)

(8) তবে তারা স্ত্রীলোকটি থেকে শাস্তি রহিত করবে, যদি সে মহিলা আল্লাহর নামে চারবার শপথ করে বলে যে, নিশ্চয় তার স্বামী (তাকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়ার ব্যাপারে) মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।

(9) আর পঞ্চমবারে শপথ করে বলবে যে, যদি তার স্বামী (অপবাদ দেওয়ার ব্যাপারে) সত্যবাদী হয়, তবে নিশ্চয় তার ওপর নেমে আসবে আল্লাহর গযব।

(10) আর (হে মানুষ!) যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া না থাকতো, (তাহলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে)। আর নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা গ্রহণকারী, প্রজ্ঞাময়।

(11) নিশ্চয় যারা (উম্মুল-মু’মিনীন আয়িশা রা. এর ব্যাপারে অশ্লীল কাজের) অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। এটাকে তোমরা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (১) (অপবাদে অংশীদারি) তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে, তাদের পাপকাজের অনুরূপ শাস্তি। আর তাদের থেকে যে ব্যক্তি(২) এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তার জন্য রয়েছে মহা আযাব (শাস্তি )

(12) যখন তোমরা এ অপবাদ শুনলে, তখন কেনো মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীরা তাদের নিজেদের সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করলো না এবং বললো না যে, ‘এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ?’

(13) অপবাদদাতারা কেনো এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী নিয়ে আসলো না? সুতরাং যখন তারা সাক্ষী নিয়ে আসেনি, তখন তারাই আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী।

(14) আর (হে মু’মিনগণ!) যদি দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের ওপর আল্লাহর দয়া ও তাঁর অনুগ্রহ না থাকত, তবে তোমরা যাতে লিপ্ত ছিলে, তার জন্য তোমাদেরকে অবশ্যই কঠিন শাস্তি পেয়ে বসত।

(15) যখন এটা (আয়িশার ব্যাপারে অপবাদ) তোমরা তোমাদের মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে এবং তোমরা তোমাদের মুখ দিয়ে এমন কথা বলছিলে, যাতে তোমাদের কোনো জ্ঞান ছিলো না; আর তোমরা এটাকে খুবই তুচ্ছ মনে করছিলে; অথচ আল্লাহর নিকট এটা ছিল খুবই গুরুতর বিষয়।

(16) আর তোমরা যখন এ অপবাদ শুনলে, তখন তোমরা কেনো বললে না যে, ‘এ নিয়ে কথা বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। (হে আমাদের রব!) তুমি অতি পবিত্র মহান। এটা এক গুরুতর অপবাদ।’

(17) আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন যে, যদি তোমরা মুমি’ন হও, তাহলে আর কখনো এর পুনরাবৃত্তি করবে না।

(18) আর আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছেন এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।

(19) নিশ্চয় যারা এটা পছন্দ করে যে, মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতা(১) ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না।

(20) আর (হে অপবাদে লিপ্তরা!) যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া না থাকতো, (তাহলে তিনি তোমাদেরকে দ্রুত শাস্তি দিতেন)। আর নিশ্চয় আল্লাহ পরম স্নেহশীল, অতি দয়ালু।

(21) হে মু’মিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ করো না। আর যে শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ করবে, (তার জেনে রাখা উচিত যে,) নিশ্চয় শয়তান অশ্লীল ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়। আর যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া না থাকতো, তাহলে (তোমাদের তাওবা কবুলের মাধ্যমে) তিনি কখনোই তোমাদেরকে পবিত্র করতেন না; কিন্তু আল্লাহ (তাওবা কবুলের মাধ্যমে) যাকে ইচ্ছা করেন, পবিত্র করেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

(22) আর তোমাদের মধ্যে যারা সম্মান-মর্যাদা ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন এমন কসম না করে যে, তারা নিকটাত্মীয়, মিসকীন ও আল্লাহর পথে হিজরতকারীদেরকে (কোন অপরাধে লিপ্ত থাকার কারণে) কিছুই দেবে না। আর তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেন? আর আল্লাহ (তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি) বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(১)

(23) নিশ্চয়ই যারা সতী-সাধ্বী সরলমনা(১) মু’মিন নারীদের প্রতি (ব্যভিচারের) অপবাদ দেয়, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

(24) যেদিন (কিয়ামতের দিন) তাদের জিহ্বাগুলো, তাদের হাতগুলো ও তাদের পাগুলো তারা যা করত, সে ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে।

(25) সেদিন আল্লাহ তাদেরকে তাদেরকে ইনসাফভিত্তিক প্রতিদান পুরোপুরি দিয়ে দিবেন। আর তারা জানতে পারবে যে, আল্লাহই সুস্পষ্ট সত্য।(১)

(26) দুশ্চরিত্রা নারীরা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষরা দুশ্চরিত্রা নারীদের জন্য। আর সচ্চরিত্রা নারীরা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষরা সচ্চরিত্রা নারীদের জন্য; (নিকৃষ্ট) লোকেরা যা বলে, তারা তা থেকে মুক্ত ও পবিত্র। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযক (জান্নাত)

(27) হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে অনুমতি না নিয়ে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।

(28) অতঃপর যদি তোমরা সেখানে কাউকে না পাও , তাহলে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও’ তাহলে সেখানে না ঢুকে ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য অধিক পবিত্র। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত।

(29) যে ঘরে কেউ বাস করে না, তাতে তোমাদের কোনো ভোগসামগ্রী থাকলে(১), সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোন পাপ হবে না। আর আল্লাহ জানেন, যা তোমরা প্রকাশ করো, আর যা তোমরা গোপন করো।

(30) (হে রাসূল! তুমি) মু’মিন পুরুষদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি (হারামকৃত কিছু দেখা থেকে) সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটাই তাদের (নিরাপদ থাকার ) জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।

(31) আর (হে রাসূল! তুমি) মু’মিন নারীদেরকে বলো, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে (হারাম কিছু দেখা থেকে) সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর ( শরীরের ) যা সাধারণত প্রকাশ পায়, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য যেন তারা প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের (মাথার ) ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজেদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন (ঘনিষ্ঠ ) নারীগণ, নিজেদের অধীন দাস-দাসী, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজেদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মু’মিনগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।

(32) আর (হে মু’মিনরা!) তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন। আল্লাহ প্রশস্ত রিযকদাতা ও মহাজ্ঞানী।

(33) আর (দরিদ্রতার কারণে) যাদের বিবাহ করার সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন (অশ্লীলতা ও ব্যভিচার থেকে) সংযম অবলম্বন করে। আর তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য (তোমাদের সাথে সম্পদ হস্তার্পণের) লিখিত চুক্তি করতে চায় তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যদি তোমরা তাদের মধ্যে কল্যাণ(১) আছে বলে জানতে পারো এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন, তা থেকে তোমরা তাদেরকে (কিছুটা ছাড় ) দাও। তোমাদের দাসীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে, তোমরা দুনিয়ার জীবনের সম্পদের কামানোর জন্য তাদেরকে ব্যভিচার করতে জবরদস্তি করো না। আর যারা তাদেরকে (ব্যভিচার করতে) জবরদস্তি করবে, নিশ্চয় তাদেরকে জবরদস্তি করার পর আল্লাহ তাদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(২)

(34) আর নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে নাযিল করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ এবং তোমাদের পূর্বে যারা চলে গেছে তাদের দৃষ্টান্ত। আর (নাযিল করেছি) মুত্তাকীদের জন্য উপদেশ।

(35) আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনের নূর ( জ্যোতি )(একজন মু’মিনের অন্তরে) তাঁর নূরের উপমা হচ্ছে, একটি প্রদীপদানি (দীপাদার ) যাতে রয়েছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি রয়েছে, একটি চকচকে কাঁচের ফানুসের মধ্যে। কাঁচের ফানুসটি যেন মুক্তার ন্যায় একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। প্রদীপটি বরকতময় যাইতুন গাছের তেল দ্বারা প্রজ্বলিত করা হয়, যা পূর্ব দিকের (সূর্যের আলো থেকে আলোকপ্রাপ্ত )-ও নয় এবং পশ্চিম দিকের (সূর্যের আলো থেকে আলোকপ্রাপ্ত ) -ও নয়।(১) এর তেল যেন আলো বিকিরণ করে, যদিও তাতে আগুন স্পর্শ না করে। নূরের ওপর নূর ( জ্যোতির উপর জ্যোতি )(২) আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁর নূরের দিকে হিদায়াত দান করেন । আর আল্লাহ মানুষের জন্য উপমাসমূহ উপস্থাপন করেন। আর আল্লাহ প্রতিটি বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।

(36) (এ প্রদীপটি জ্বালানো হয়) সেসব ঘরে (মসজিদগুলোতে) যাকে সমুন্নত করতে এবং যেখানে আল্লাহর নাম যিকর করতে আল্লাহই অনুমতি দিয়েছেন। সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করে।

(37) কিছু লোক এমন আছে , যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর যিকর, সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখতে পারেনা । তারা সেদিনকে (কিয়ামতের দিনকে) ভয় করে, যেদিন ( মানুষের ) অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে-পালটে যাবে।

(38) যাতে তাদের কৃত উত্তম আমলের জন্য আল্লাহ তাদেরকে প্রতিদান দেন এবং তিনি স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন বিনা হিসাবে রিযিক দান করেন।

(39) আর যারা কুফরী করে, তাদের আমলসমূহ মরুভূমির মরিচিকার মতো, পিপাসিত ব্যক্তি যাকে পানি মনে করে। অবশেষে যখন সে তার কাছে আসবে, তখন সে দেখবে সেটা কিছুই নয়। আর সে (মৃত্যুর পরে পুনরুত্থিত হয়ে) সেখানে আল্লাহকে দেখতে পাবে।(১) অতঃপর তিনি তাকে তার হিসাব পরিপূর্ণ করে দেবেন। আর আল্লাহ অতি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।

(40) অথবা (কাফিরদের আমলসমূহ) গভীর সমুদ্রে ঘনীভূত অন্ধকারের মতো, যাকে আচ্ছন্ন করে ঢেউয়ের উপরে ঢেউ, তার উপরে মেঘমালা। অনেক অন্ধকার; এক স্তরের উপর অপর স্তর। কেউ হাত বের করলে (অন্ধকারের দরুন) আদৌ তা দেখতে পায় না। আর আল্লাহ যাকে ( হিদায়াতের ) নূর (আলো) দেন না তার জন্য কোনো নূর বা আলো নেই।

(41) (হে রাসূল!) তুমি কি দেখনি যে, আসমানসমূহে ও জমিনে যারা আছে তারা এবং সারিবদ্ধ হয়ে উড়ন্ত পাখিরা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে? প্রত্যেকেই তাঁর সালাত ও তাসবীহের পদ্ধতি জানে। তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত।

(42) আর আসমানসমূহ ও জমিনের মালিকানা আল্লাহর জন্যই। আর আল্লাহর দিকেই (সকলের) প্রত্যাবর্তন করতে হবে ।

(43) (হে রাসূল!) তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহই মেঘমালাকে পরিচালিত করেন, তারপর তিনি সেগুলোকে একত্রে জুড়ে দেন, তারপর সেগুলোকে স্তূপীকৃত করেন, তারপর একসময় তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে বৃষ্টি বের হয়। আর তিনি আকাশের বিশাল পাহাড়ের ন্যায় ঘন মেঘমালা থেকে শিলা বর্ষণ করেন। তারপর তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন। আর যার কাছ থেকে ইচ্ছা তা সরিয়ে দেন। মেঘমালার বিদ্যুতের ঝলক এমন দৃষ্টিশক্তি প্রায় কেড়ে নেয়।

(44) আল্লাহই দিন ও রাতের আবর্তন ঘটান, নিশ্চয়ই এতে অন্তরদৃষ্টিসম্পন্নদের জন্য রয়েছে শিক্ষা।

(45) আর আল্লাহ (জমিনের ওপর বিচরণকারী) প্রত্যেক জীবকে পানি (বীর্য) থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সেগুলোর কোনটি পেটে ভর দিয়ে চলে(১), কোনটি চলে দু’পায়ের ওপর(২), আবার কোনটি চার পায়ের ওপর চলে(৩)। আল্লাহ (উল্লিখিত ও অনুল্লিখিত) যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।

(46) নিশ্চয়ই আমি (মুহাম্মাদের প্রতি ) সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নাযিল করেছি। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল সঠিক পথ দেখান।

(47) তারা (মুনাফিকরা) বলে: ‘আমরা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমরা আনুগত্য করেছি।’ তারপর তাদের একটি দল এরপরে (ঈমান ও আনুগত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়। বস্তুত তারা মু’মিন নয়।(১)

(48) আর যখন তাদেরকে (মুনাফিকদেরকে) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয়, যাতে তিনি তাদের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করতে পারেন, তখন তাদের একটি দল (তার ফয়সালা থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়।

(49) কিন্তু সত্য (দলিল-প্রমাণ ও ফয়সালা) যদি তাদের পক্ষে থাকে, তাহলে তারা তার (নবীর) কাছে একান্ত বিনীতভাবে ছুটে আসে।

(50) তাদের অন্তরে কি ব্যাধি রয়েছে, নাকি তারা (মুহাম্মাদের রিসালাতের ব্যাপারে) সন্দেহ পোষণ করে, না তারা ভয় করে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ফায়সালার ক্ষেত্রে) তাদের ওপর যুলম করবেন? বরং তারাই তো যালিম।

(51) যখন মুমিনদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে এ মর্মে ডাকা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করবেন, তখন তাদের কথা তো এই হয় যে, তারা বলে: ‘আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম।’ বস্তুত তারাই সফলকাম।

(52) আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে) তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, (দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ পেয়ে) তারাই হবে কৃতকার্য।

(53) আর তারা (মুনাফিকরা) সুদৃঢ়ভাবে আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে, ‘তুমি যদি তাদেরকে (জিহাদে বের হওয়ার) আদেশ করো, তবে তারা অবশ্যই বের হবে। (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে বলো: ‘তোমরা শপথ করো না। তোমাদের আনুগত্যের ব্যাপারটি তো জানাই আছে। তোমরা যা কিছু করো, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।’

(54) (হে রাসূল! এ মুনাফিকদেরকে) বলো: ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো।’ তারপর যদি তোমরা (তাঁদের আনুগত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে (জেনে রাখো,) সে শুধু তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য দায়ী। আর তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী। পক্ষান্তরে যদি তোমরা তার আনুগত্য করো, তবে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। মূলত রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া।

(55) তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে জমিনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেন, যেমনিভাবে তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তী মু’মিনদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দীনকে (ইসলামকে), যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভীতিকর অবস্থাকে নিরাপত্তায় রূপান্তরিত করবেন। (এর বিনিময়ে) তারা আমারই ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না। আর যারা এরপর (এ নি‘আমতগুলো পাওয়ার পরেও) কুফরী করবে, তারাই ফাসিক।

(56) আর তোমরা সালাত কায়িম করো, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পারো।

(57) (হে রাসূল!) তুমি কাফিরদেরকে জমিনে অপারগকারী মনে করো না(১); তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম। আর তা কতই না নিকৃষ্ট এই প্রত্যাবর্তনস্থল!

(58) হে মু’মিনগণ! তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি তারা যেন অবশ্যই তিন সময়ে (তোমাদের কাছে প্রবেশের) অনুমতি নেয়। ফজরের সালাতের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখো, এবং ‘ইশার সালাতের পর; এই তিনটি তোমাদের [গোপনীয়তার] সময়। এই তিন সময়ের পর (অন্য সময়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে) তোমাদের এবং তাদের কোনো দোষ নেই। তোমাদের একে অন্যের কাছে যাতায়াত করতেই হয়। এভাবে আল্লাহ তোমাদের উদ্দেশ্যে তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।

(59) আর তোমাদের সন্তান-সন্তুতি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন তারাও যেন (তোমাদের ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চায়, যেমনিভাবে তাদের পূর্বের বড়রা অনুমতি চাইতো। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।

(60) আর বৃদ্ধা নারীরা, যাদের বিবাহের প্রতি কোন আগ্রহ নেই, তাদের জন্য কোনো দোষ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের কিছু পোশাক(১) খুলে রাখে। তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।

(61) অন্ধের জন্য কোনো দোষ নেই, খোঁড়ার জন্য কোনো দোষ নেই, রোগাক্রান্তের জন্য কোনো দোষ নেই(১) এবং তোমাদের নিজেদের জন্যও কোনো দোষ নেই যে, তোমরা (অনুমতি ছাড়াই ) খাবে তোমাদের নিজেদের ঘরে অথবা তোমাদের পিতাদের ঘরে অথবা তোমাদের মায়েদের ঘরে অথবা তোমাদের ভাইদের ঘরে অথবা তোমাদের বোনদের ঘরে অথবা তোমাদের চাচাদের ঘরে অথবা তোমাদের ফুফুদের ঘরে অথবা তোমাদের মামাদের ঘরে অথবা তোমাদের খালাদের ঘরে অথবা সেসব ঘরে যার চাবি তোমাদের অধিকারে রয়েছে(২) অথবা তোমাদের বন্ধুদের ঘরে। তোমরা একত্রে খাও অথবা আলাদা আলাদা খাও তাতে কোনও দোষ নেই। তবে তোমরা যখনই কোনো ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা নিজেদের উপর সালাম করবে(৩), যা আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।

(62) নিশ্চয়ই (সত্যবাদী) মু’মিন শুধু তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনে এবং তাঁর সাথে কোন সমষ্টিগত কাজে একত্রিত হলে অনুমতি না নিয়ে চলে যায় না। নিশ্চয় তোমার কাছে যারা অনুমতি চায় তারাই কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর প্রকৃত ঈমান আনে। সুতরাং কোন প্রয়োজনে তারা তোমার কাছ থেকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে তোমার যাকে ইচ্ছা তুমি অনুমতি দিবে এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ (তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি) পরম ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু।

(63) (হে মু’মিনরা!) তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না।(১) তোমাদের মধ্যে যারা (বিনা অনুমতিতে) চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আক্রান্ত করার ভয় করে।

(64) সাবধান! (জেনে রাখো,) আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহর। (হে মানুষ!) তোমরা যে অবস্থায় আছো তা তিনি অবশ্যই জানেন এবং যেদিন তাদেরকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে সেদিন তারা (দুনিয়ায়) যা আমল করতো তিনি তাদেরকে তা জানিয়ে দিবেন। আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।