(1) হে নবী! (তোমার সাথীদেরকে বলো), তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিবে, তখন তাদের ‘ইদ্দত অনুসারে (পবিত্রতার সময়) তাদের তালাক দাও এবং (যথাযথভাবে) ‘ইদ্দতের হিসাব রাখবে এবং তোমাদের রব আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় করবে। তোমরা তালাকপ্রাপ্তাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দিয়ো না এবং তারাও (ইদ্দত পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্বে) বের হবে না। যদি না তারা কোন স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয় (তবে তা ভিন্ন কথা)। আর এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমারেখাসমূহ অতিক্রম করে, সে অবশ্যই তার নিজের ওপরই যুলম করে। (হে তালাকদাতা!) তুমি জানো না, এরপর (উক্ত তালাকের পর ) আল্লাহ হয়ত (উভয়ের ফিরে আসার) কোন একটা পথ বের করে দিবেন।
(2) অতঃপর তারা যখন তাদের (নির্ধারিত) ইদ্দত পরিপূর্ণ হওয়ার শেষ সীমায় পৌঁছে, তখন তোমরা তাদের ন্যায়ানুগ পন্থায় রেখে দিবে অথবা ন্যায়ানুগ পন্থায় তাদেরকে পরিত্যাগ করবে। আর তোমাদের মধ্য থেকে ন্যায়পরায়ণ দুইজনকে সাক্ষী রাখবে।(১) আর তোমরা আল্লাহর জন্য সঠিক সাক্ষ্য দিবে। তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনে এটি (এ বিধান) দ্বারা তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। যে আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় করে, তিনি তার জন্য (সংকট উত্তরণের) পথ তৈরি করে দেন।
(3) এবং আল্লাহ তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে ব্যক্তি (স্বীয় কার্যাবলীর ব্যাপারে) আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট। অবশ্যই আল্লাহ তাঁর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
(4) তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ঋতুমতী হওয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে, তাদের ইদ্দতের ব্যাপারে তোমরা যদি সংশয়ে থাকো, তাদের ইদ্দত তিন মাস এবং যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি (তাদের ইদ্দতকালও হবে তিন মাস)। আর গর্ভবতী নারীর ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত। যে আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় করে, তিনি তার জন্য তার (সকল) কাজকে সহজ করে দেন।
(5) (তালাক ও ইদ্দতের ব্যাপারে) এটি হচ্ছে আল্লাহর বিধান, তিনি তা তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। আর যে আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় করে তিনি তার গুনাহসমূহ মোচন করে দিবেন এবং তার প্রতিদানকে বড় করে দিবেন।
(6) (ইদ্দত পালনকালীন সময়) তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তোমরা যে ধরনের বাড়িতে বসবাস করো তাদেরকেও সে ধরনের বাড়িতে বসবাস করতে দাও, তাদেরকে সংকটে ফেলার জন্য কষ্ট দিয়ো না। আর তালাকপ্রাপ্তারা যদি গর্ভবতী হয়, তবে তাদের সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তোমরা তাদের জন্য ভরণ-পোষণ দিবে। আর (সন্তান জন্মদানের পরে) তারা যদি তোমাদের সন্তানকে দুধ পান করায়, তবে তাদের পারিশ্রমিক তাদেরকে দিয়ে দাও। আর (মজুরির ব্যাপারে) তোমরা ন্যায়সংগতভাবে নিজেদের মাঝে পরামর্শ করো। আর যদি তোমরা (মজুরি নির্ধারণে) পরস্পর কঠোর হও, তবে অন্য একজন নারী (সন্তানের) পিতার পক্ষে দুধপান করাবে।
(7) সামর্থ্যবান যেন নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী (তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ও তার সন্তানের ভরণ-পোষণ বাবদ) ব্যয় করে, আর যার রিযক সংকীর্ণ করা হয়েছে, সে যেন আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন, তা হতে (সাধ্যানুযায়ী) ব্যয় করে। আল্লাহ যাকে যেটুকু সামর্থ্য দিয়েছেন, তিনি কাউকে তার চেয়ে বেশি বোঝা চাপাতে চান না। অচিরেই আল্লাহ তার কষ্টের পর প্রশস্ততা দান করবেন।
(8) আর কতো জনপদ তাদের রব ও তাঁর রাসূলগণের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। ফলে আমি তাদের কাছ থেকে কঠোর হিসাব নিয়েছি এবং আমি (ইহকাল ও পরকালে) তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিয়েছি।
(9) ফলে তারা নিজেদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করেছে। বস্তুত (দুনিয়া ও আখিরাতের) ক্ষতিই ছিল তাদের কাজের পরিণতি।
(10) (আখিরাতে) আল্লাহ তাদের জন্য কঠিন শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় কর, হে বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা! তোমরা যারা ঈমান এনেছ! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন এক উপদেশ।
(11) (উক্ত উপদেশ হলো) একজন রাসূল, যে তোমাদের কাছে আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে; যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, যাতে তিনি তাদেরকে (কুফরীর) অন্ধকার হতে (হিদায়াতের) আলোতে বের করে আনতে পারেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তিনি তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। অবশ্যই আল্লাহ তাকে অতি উত্তম রিযক দিবেন।
(12) তিনি আল্লাহ, যিনি সাত আসমান এবং অনুরূপ জমিন সৃষ্টি করেছেন। এগুলোর মাঝে তাঁর (জাগতিক ও শরী‘আতগত) আদেশ অবতীর্ণ হয়, যেন তোমরা জানতে পারো যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞানতো সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে।