(1) শপথ নক্ষত্রের, যখন তা অস্ত যায়।
(2) তোমাদের সঙ্গী (মুহাম্মাদ) পথভ্রষ্ট হয়নি এবং বিপথগামীও হয়নি।
(3) আর সে (কখনই) মনগড়া কোন কথা বলে না।
(4) এই আল-কুরআন ওহী ব্যতীত আর কিছুই নয়, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়।
(5) তাকে (আল-কুরআন) শিক্ষা দিয়েছে প্রবল শক্তিধর (একজন ফিরিশতা)(১),
(6) যে (জিবরাঈল) সুন্দর আকৃতির অধিকারী। অতঃপর সে (স্বীয় আকৃতিতে রাসূলের সামনে) দাঁড়ালো,
(7) তখন সে (জিবরীল) ছিল ঊর্ধ্ব দিগন্তে।
(8) তারপর জিবরীল (মুহাম্মাদের) নিকটবর্তী হলো, এরপর আরো নিকবর্তী হলো।
(9) তখন তাদের মধ্যে ব্যবধান ছিল দু’ ধনুকের পরিমাণ, অথবা তারও কম।
(10) অতঃপর আল্লাহ তাঁর বান্দা (মুহাম্মাদ)-র প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন।
(11) সে (মুহাম্মাদ) যা দেখেছে, অন্তকরণ সে সম্পর্কে মিথ্যা বলেনি।
(12) সে (মুহাম্মাদ) যা দেখেছে, সে সম্পর্কে তোমরা (মুশরিকরা!) কি তার সাথে বিতর্ক করবে?
(13) আর সে (মুহাম্মাদ) তো তাকে (জিবরীলকে মি‘রাজের রাতে নিজ আকৃতিতে) আরেকবার দেখেছিল।
(14) ‘সিদরাতুল মুনতাহা’-র নিকট।
(15) যার কাছে জান্নাতুল মা’ওয়া অবস্থিত।
(16) যখন (আল্লাহর কোন মহান বিষয়) কুল গাছটিকে যা আচ্ছাদিত করার তা আচ্ছাদিত করেছিল।
(17) তার (মুহাম্মাদের) দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি এবং (তার দৃষ্টি) সীমাও অতিক্রম করেনি (সে যা কিছু দেখেছে, যথাযথভাবেই দেখেছে)।
(18) নিশ্চয় সে (মুহাম্মাদ) তার রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ থেকে দেখেছে।(১)
(19) (হে মুশরিকরা!) তোমরা কি লাত ও ‘উযযা দেবতা সম্পর্কে ভেবে দেখেছ?’
(20) এবং তৃতীয় আরেকটি (দেবতা) মানাত সম্পর্কে?(১)
(21) তোমাদের জন্য কি (তোমাদের পছন্দের) পুত্র সন্তান, আর আল্লাহর জন্য (তোমাদের অপছন্দের) কন্যা সন্তান?
(22) এটাতো এক অসঙ্গত বণ্টন!
(23) এগুলো (এ সব দেবতা) তো কতিপয় (অর্থহীন) নাম, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষেরা রেখেছ। এ ব্যাপারে আল্লাহ কোন দলিল-প্রমাণ নাযিল করেননি। তারা তো কেবল অনুমান এবং নিজেদের কুপ্রবৃত্তির যা চায়, তার অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে (নবীর মাধ্যমে) হিদায়াত এসেছে।
(24) মানুষ যা চায়, তাই কি সে পায়?
(25) বস্তুতঃ আখিরাত ও দুনিয়া আল্লাহরই।(১)
(26) আর আসমানসমূহে বহু ফিরিশতা রয়েছে, তাদের সুপারিশ কোনই কাজে আসবে না, তবে আল্লাহর অনুমতির পর, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন এবং যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট।
(27) নিশ্চয় যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তারাই ফিরিশতাদেরকে নারীবাচক নামে নামকরণ করে থাকে।(১)
(28) অথচ (ফিরিশতাদের নারীবাচক নামকরণের) এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞানই নেই। তারা তো শুধু অনুমানেরই অনুসরণ করে। আর নিশ্চয় অনুমান সত্যের মোকাবেলায় কোনই কাজে আসে না।
(29) অতএব (হে রাসূল!) তুমি তাকে উপেক্ষা করে চল, যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হয় এবং কেবল দুনিয়ার জীবনই কামনা করে।
(30) এটাই তাদের (মতো দুর্ভাগা লোকের) জ্ঞানের শেষসীমা। নিশ্চয় তোমার রবই সবচেয়ে ভালো জানেন, কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন কে হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে।
(31) আর আসমানসমূহে ও জমিনে যা কিছু আছে সব কিছুর মালিকানা আল্লাহরই। যাতে তিনি তাদের কাজের প্রতিফল (জাহান্নাম) দিতে পারেন যারা মন্দ কাজ করে এবং তাদেরকে তিনি উত্তম পুরস্কার (জান্নাত) দিতে পারেন যারা সৎকর্ম করে।
(32) যারা ছোট খাটো দোষ-ত্রুটি ছাড়া বড় বড় পাপ ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকে, নিশ্চয় তোমার রব (তাদেরকে) ক্ষমার ব্যাপারে উদার। তিনি তোমাদের ব্যাপারে (তখন থেকেই) ভালো করে জানেন, যখন তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যখন তোমরা তোমাদের মাতৃগর্ভে ভ্রূণরূপে ছিলে। কাজেই তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। তিনিই সম্যক অবগত কে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করে) তাকওয়া অবলম্বন করেছে।
(33) (হে রাসূল!) তুমি কি সেই ব্যক্তিকে দেখেছ, যে (ইসলামের নিকটবর্তী হয়েও তা থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়?(১)
(34) আর সামান্য দান করে, পরে (সেটুকুও) বন্ধ করে দেয়?
(35) তার কাছে কি গায়িবের জ্ঞান আছে যে, সে দেখছে?
(36) নাকি তাকে জানানো হয়নি, যা আছে মূসার সহীফাসমূহে (তাওরাতে),
(37) এবং যা রয়েছে ইবরাহীমের সহীফাসমূহে, যে পূর্ণ করেছিলো (তার অঙ্গীকার)।
(38) (তাকে কি বলা হয়নি যে,) কোন বোঝা বহনকারী অন্যের (পাপের) বোঝা বহন করবে না।
(39) আর মানুষ যা চেষ্টা করে, তাই সে পায়।
(40) আর তার প্রচেষ্টার ফল শীঘ্রই (কিয়ামত দিবসে) তাকে দেখানো হবে।
(41) তারপর তাকে (তার আমলের) পূর্ণ প্রতিফল প্রদান করা হবে।
(42) আর নিশ্চয় তোমার রবের নিকটই হলো (বান্দাদের) শেষ গন্তব্য।
(43) আর নিশ্চয় তিনিই (যাকে ইচ্ছা) হাসান এবং তিনিই কাঁদান।
(44) আর নিশ্চয় তিনিই মৃত্যু দেন এবং তিনিই (পুনরুত্থানের মাধ্যমে) জীবন দেন।
(45) আর তিনিই পুরুষ ও নারী উভয় প্রকার যুগল সৃষ্টি করেন।
(46) (তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সামান্য) এক ফোঁটা শুক্রবিন্দু থেকে যখন তা (গর্ভাশয়ে) নিক্ষিপ্ত হয়।
(47) আর নিশ্চয় (পুনরুত্থানের উদ্দেশ্যে) পুনরায় সৃষ্টির দায়িত্ব তাঁর ওপরই।
(48) আর তিনিই (তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা) অভাবমুক্ত করেন ও সম্পদ দান করেন।
(49) আর তিনিই (মুশরিকদের পূজিত) শি’রা নক্ষত্রের রব।
(50) আর তিনিই প্রাচীন ‘আদ জাতিকে ধ্বংস করেছেন।(১)
(51) আর সামূদ জাতিকেও (ধ্বংস করেছেন)। তিনি তাদের কাউকে অবশিষ্ট রাখেন নি।
(52) আর পূর্বে নূহের সম্প্রদায়কেও (ধ্বংস করেছেন)। নিশ্চয় তারা ছিল ভীষণ যালিম ও চরম অবাধ্য।
(53) আর তিনি উল্টানো আবাসভূমিকে (ওপরে তুলে জমিনে) নিক্ষেপ করেছিলেন।(১)
(54) অতঃপর সে জনপদের ওপর তিনি আচ্ছন্ন করেছিলেন, যা আচ্ছন্ন করার ছিল।(১)
(55) সুতরাং (হে মানুষ!) তুমি তোমার রবের কোন অনুগ্রহ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করবে?
(56) অতীত সতর্ককারী নবীদের মত এই নবীও একজন সতর্ককারী।
(57) কিয়ামত নিকটবর্তী।
(58) আল্লাহ ছাড়া কেউই তা (সে সময়টির তথ্য) প্রকাশ করতে সক্ষম নয়।
(59) তোমরা কি এ কথায়(১) বিস্ময় বোধ করছ?
(60) আর (সেটিকে নিয়ে) তোমরা হাসি-ঠাট্টা করছো এবং (এর উপদেশ শুনে) কাঁদছ না?
(61) আর তোমরা তো (আল-কুরআনের ব্যাপারে) গাফিল।
(62) সুতরাং তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাজদা করো এবং ইবাদাত করো।