(1) ত্বা-সীন-মীম।
(2) এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের (আল কুরআনের) আয়াত।(১)
(3) (হে রাসূল!) তারা মু’মিন হবে না বলে সম্ভবত তুমি (তাদের হিদায়াতের আশায় ও তাদের কর্মকাণ্ডে মনঃকষ্টে ) নিজেকে ধ্বংস করে দিবে।
(4) আমি ইচ্ছা করলে আসমান থেকে তাদের ওপর এমন নিদর্শন অবতীর্ণ করতাম, ফলে তার প্রতি তাদের ঘাড়গুলো নত হয়ে যেতো।(১)
(5) আর যখনই তাদের কাছে পরম করুণাময়ের পক্ষ থেকে (তাঁর তাওহীদ ও তাঁর নবীর সত্যতার প্রমাণাদিসহ) কোনো নতুন উপদেশ আসে, তখনই তারা তা থেকে বিমুখ হয়।
(6) অতএব অবশ্যই তারা অস্বীকার করেছে। কাজেই তারা যা (যে শাস্তি) নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতো, তার সংবাদ অচিরেই তাদের কাছে এসে পড়বে।
(7) তারা কি জমিনের দিকে তাকিয়ে দেখেনি যে, আমি তাতে প্রত্যেক প্রকারের বহু উৎকৃষ্ট উদ্ভিদ উদ্গত করেছি?
(8) নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন(১), তারপরও তাদের অধিকাংশই মু’মিন নয়।
(9) আর নিশ্চয় তোমার রব, তিনি তো মহা পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।
(10) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো সে সময়ের কথা, যখন তোমার রব মূসাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি যালিম সম্প্রদায়ের কাছে যাও।’
(11) ‘ফির‘আউনের সম্প্রদায়ের কাছে। তারা কি (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই) ভয় করবে না?’
(12) মূসা বললো: ‘হে আমার রব! আমি অবশ্যই আশঙ্কা করছি যে, তারা আমাকে মিথ্যারোপ করবে।’
(13) ‘আর (তাদের মিথ্যারোপের দরুন) আমার বক্ষ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, আমার কথা মুখে আটকে যাবে। সুতরাং আপনি হারূনের প্রতি ওয়াহী পাঠান।’(১)
(14) ‘উপরন্তু (কিবতীকে মারার কারণে) আমার বিরুদ্ধে তাদের কাছে একটি অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। ফলে আমি আশঙ্কা করছি যে, তারা আমাকে হত্যা করে ফেলবে।’
(15) আল্লাহ বললেন: ‘কখনো নয়।(১) তোমরা উভয়ে আমার নিদর্শনাদিসহ যাও। অবশ্যই আমি (সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে তোমাদের পক্ষেই) আছি, তোমাদের সাথে শ্রবণকারী।’
(16) ‘সুতরাং তোমরা উভয়ে ফির‘আউনের কাছে গিয়ে বলো, ‘নিশ্চয় আমরা বিশ্বজগতের রবের রাসূল।’
(17) ‘যাতে তুমি বানূ ইসরাঈলকে আমাদের সাথে পাঠাও।’
(18) ফির‘আউন (মূসাকে) বললো: ‘আমি কি তোমাকে শৈশবে আমাদের মাঝে লালন পালন করিনি? আর তুমি তোমার জীবনের অনেক বছর আমাদের মধ্যে অবস্থান করেছো।’(১)
(19) ‘আর তুমি তোমার কর্ম (১) যা করার তা করেছো এবং তুমি অকৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত।’
(20) মূসা (নিজ দোষ স্বীকার করে) বললো: ‘আমি এটি তখন করেছিলাম, যখন আমি পথহারাদের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম ।’(১)
(21) ‘অতঃপর যখন আমি তোমাদেরকে ভয় করলাম,(১) তখন আমি তোমাদের থেকে (মাদয়ানে) পালিয়ে গেলাম। তারপর আমার রব আমাকে প্রজ্ঞা (নবুওয়্যাত) দান করলেন এবং আমাকে রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত করলেন’।
(22) ‘আর (আমাকে লালন-পালন করার) যে অনুগ্রহের খোঁটা তুমি আমাকে দিচ্ছো, তাতো এই জন্যে যে, তুমি বানূ ইসরাঈলকে দাস বানিয়ে রেখেছো।’(১)
(23) ফির‘আউন বললো, ‘সৃষ্টিকুলের রব আবার কে?’
(24) মূসা বললো: ‘যিনি আসমানসমূহ ও জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর রব, যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হয়ে থাকো।’
(25) ফির‘আউন তার আশেপাশে থাকা লোকদেরকে (নেতাদেরকে) বললো: ‘তোমরা কি মনোযোগসহ শুনছো না?’
(26) মূসা বললো: ‘তিনি তোমাদের রব এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদেরও রব।’
(27) ফির‘আউন বললো: ‘তোমাদের কাছে প্রেরিত তোমাদের এই রাসূল অবশ্যই পাগল।’
(28) মূসা বললো: ‘তিনি পূর্ব ও পশ্চিম এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর রব; যদি তোমাদের বিবেক-বুদ্ধি থাকে, তাহলে তোমরা তা বুঝতে পারবে।’
(29) ফির‘আউন (মূসার সাথে তর্কে অক্ষম হয়ে) বললো: ‘যদি তুমি আমাকে ছাড়া কাউকে ইলাহরূপে গ্রহণ করো, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে কারারুদ্ধদের অন্তর্ভুক্ত করব।’
(30) মূসা বললো, ‘যদি আমি তোমার কাছে (আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার নবুওয়্যাতের সত্যতা প্রমাণস্বরূপ) স্পষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে আসি, তবুও?’(১)
(31) ফির‘আউন বললো: ‘তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকলে, তা নিয়ে এসো।’
(32) অতঃপর সে তার (হাতের ) লাঠিটি (জমিনে) ফেলে দিলো, ফলে তৎক্ষণাৎ তা একটি স্পষ্ট অজগর সাপে পরিণত হলো।
(33) আর মূসা তার হাত (পকেটে ঢুকিয়ে আবার) বের করলো, ফলে তা তৎক্ষণাৎ দর্শকদের সামনে উজ্জ্বল-সাদা (হাত) হয়ে দেখা দিলো।
(34) ফির‘আউন তার আশপাশের পরিষদবৰ্গকে বললো: ‘এ তো এক বিজ্ঞ যাদুকর!’
(35) ‘সে তোমাদেরকে তার যাদুর (শক্তির) মাধ্যমে তোমাদের দেশ থেকে বের করতে চায়। অতএব, (তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে) তোমরা আমাকে কী পরামর্শ দাও?’
(36) তারা বললো: ‘তাকে ও তার ভাইকে (দ্রুত শাস্তি না দিয়ে) কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দিন, আর (যাদুকরদেরকে একত্রিত করতে) নগরে নগরে সংগ্রহকারীদেরকে পাঠিয়ে দিন।’
(37) ‘তারা আপনার নিকট প্রত্যেক বিজ্ঞ যাদুকরকে একত্রিত করবে।’
(38) অতঃপর (মূসার সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য) এক নির্ধারিত দিনের নির্দিষ্ট সময়ে যাদুকরদের একত্র করা হলো।
(39) উপরন্তু লোকদের বলা হলো, ‘তোমরাও কি (সেখানে বিজয়ী লোকটিকে দেখতে) সমবেত হবে?’
(40) ‘যাতে আমরা যাদুকরদের (ধর্ম) অনুসরণ করতে পারি, যদি তারা (মূসার ওপর) বিজয়ী হয়।’
(41) অতঃপর যখন যাদুকররা আসলো, তারা ফির‘আউনকে বললো, ‘যদি আমরা (মূসার ওপর) বিজয়ী হই, তবে আমাদের জন্য কি সত্যিই পুরস্কার থাকবে তো?’
(42) ফির‘আউন বললো: ‘হ্যাঁ এবং নিশ্চয় তোমরা তখন আমার নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’
(43) (যাদু-যুদ্ধের প্রারম্ভে) মূসা তাদেরকে বললো: ‘তোমরা যা (যে যাদু) নিক্ষেপ করার তা নিক্ষেপ করো।’
(44) অতঃপর তারা নিজেদের রশি ও লাঠি নিক্ষেপ করলো এবং বললো: ‘ফির‘আউনের ইজ্জতের শপথ! অবশ্যই আমার বিজয়ী হবো।’
(45) অতঃপর মূসা তার হাতের লাঠিটি নিক্ষেপ করলো, ফলে তৎক্ষণাৎ তা (অজগর হয়ে) তাদের অলীক কীর্তিগুলোকে গ্রাস করতে লাগলো।
(46) তখন যাদুকররা সাজদাবনত হয়ে পড়লো।
(47) তারা বললো: ‘আমরা ঈমান আনলাম সৃষ্টিকুলের রবের প্রতি।’
(48) ‘মূসা ও হারূনের রব।’
(49) ফির‘আউন (যাদুকরদের ক্রোধান্বিত হয়ে) বললো: ‘আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে? নিশ্চয় সে তোমাদের মহাগুরু, যে তোমাদের যাদু শিক্ষা দিয়েছে। অতএব অচিরেই তোমরা (এর পরিণাম) জানতে পারবে। আমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও পাসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলবো এবং আমি অবশ্যই তোমাদের সকলকে (খেজুর গাছের গুঁড়িতে) শূলবিদ্ধ করবো।’
(50) তারা (যাদুকররা ফিরআউনকে) বললো: ‘এতে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই। অবশ্যই আমরা আমাদের রবের দিকেই ফিরে যাবো।’
(51) ‘আমরা আশা করি যে, আমাদের রব আমাদের (পূর্বের) অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দিবেন; কারণ আমরা (মূসার ওপর ঈমান আনার ক্ষেত্রে) মু’মিনদের মধ্যে প্রথম।’
(52) আর আমি মূসার প্রতি এ মর্মে ওয়াহী পাঠিয়েছিলাম যে, ‘আমার বান্দাদের নিয়ে রাত্রিকালে যাত্রা শুরু করো, নিশ্চয়ই (ফির‘আউন ও তার সাথীদের কর্তৃক তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য) তোমাদের পিছু নেয়া হবে।’
(53) অতঃপর ফির‘আউন (বানূ ইসরাঈলকে ফেরত আনার জন্য) নগরে নগরে লোক সংগ্রহকারী (সেনাবাহিনী) পাঠালো।
(54) (ফির‘আউন তুচ্ছ করে বললো,) ‘নিশ্চয়ই এরা তো ক্ষুদ্র একটি দল।’
(55) ‘আর এরা অবশ্যই আমাদের (নানাভাবে ) ক্রোধের উদ্রেক ঘটিয়েছে।’
(56) ‘আর (তাদের মোকাবেলায়) আমরা সবাই সদাজাগ্রত সতর্ক একটি সেনাদল।’
(57) পরিণামে আমি তাদেরকে (ফির‘আউন ও তার সম্প্রদায়কে মিশরের) উদ্যানমালা ও ঝর্ণাধারাসমূহ থেকে বের করে দিলাম।
(58) এবং ধন-ভাণ্ডার ও সুন্দর ঘর-বাড়ি বিশিষ্ট এলাকা থেকেও।
(59) এরূপই ঘটেছিল এবং আমি বানূ ইসরাঈলকে এসবের উত্তরাধিকার বানিয়েছিলাম।(১)
(60) অতঃপর তারা (ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়) সূর্য উঠা মাত্রই তাদের (বানূ ইসরাঈলের) পিছু নিলো।
(61) অতঃপর যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখলো, তখন মূসার সাথীরা বললো: ‘অবশ্যই আমরা ধরা পড়ে গেলাম!’
(62) মূসা বললো: ‘কখনই নয়; আমার সাথে আমার রব রয়েছেন। নিশ্চয় অচিরেই তিনি আমাকে (রক্ষার)পথনির্দেশ দিবেন।’
(63) অতঃপর আমি মূসার প্রতি ওয়াহী পাঠালাম: ‘তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত করো।’ ফলে তা ( বিদীর্ণ হয়ে ) বিভক্ত হয়ে গেলো। তারপর প্রত্যেক ভাগ বিশাল পাহাড়ের মতো হয়ে গেলো।
(64) আর আমরা সেখানে কাছে নিয়ে এলাম অন্য দলটিকে,
(65) আর আমি মূসা ও তার সাথে (বানূ ইসরাঈলের) যারা ছিলো সকলকে উদ্ধার করলাম।
(66) তারপর অপর দলটিকে (ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়কে) ডুবিয়ে দিলাম।
(67) নিশ্চয় এতে(১) রয়েছে নিদর্শন। আর তাদের (ফির‘আউনের সম্প্রদায়ের) অধিকাংশই মু’মিন নয়।
(68) আর নিশ্চয় তোমার রব তো মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।
(69) আর তুমি তাদের নিকট ইবরাহীমের ঘটনা বর্ণনা করো।
(70) যখন সে তার পিতা ও তার জাতিকে বলেছিলো: ‘তোমরা (আল্লাহকে বাদ দিয়ে) কীসের ইবাদাত করো?’
(71) তারা বললো: ‘আমরা মূর্তির পূজা করি। অতঃপর এগুলোর পূজায় আমরা নিষ্ঠার সাথে আঁকড়ে থাকব।’
(72) সে বললো: ‘যখন তোমরা মূর্তিগুলোকে ডাকো, তখন কি তারা তোমাদের ডাক শুনতে পায়?’
(73) ‘অথবা তারা কি তোমাদের উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারে?’
(74) তারা বললো: (না, পারে না।) ‘বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের পেয়েছি, তারা এরূপই (এগুলোর পূজা) করতো।’
(75) ইবরাহীম বললো: ‘তোমরা যাদের পূজা করো-তাদের সম্পর্কে তোমরা কি ভেবে দেখেছো?’
(76) ‘তোমরা এবং তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষেরা?’
(77) ‘সৃষ্টিকুলের রব ব্যতীত অবশ্যই তারা সকলে আমার শত্রু।’
(78) ‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনিই আমাকে হিদায়াত দিয়েছেন ।’
(79) ‘আর যিনি আমাকে খাওয়ান এবং পান করান।’
(80) ‘আর যখন আমি অসুস্থ হই, তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য করেন।’
(81) ‘আর যিনি আমার (হায়াত শেষে) মৃত্যু দিবেন, অত:পর (মৃত্যুর পর) আমাকে জীবিত করবেন।’
(82) ‘আর যাঁর কাছে আমি আশা করি, তিনি বিচার দিবসে আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিবেন।’
(83) (অতপর ইরবাহীম দু‘আ করে বললো) ‘হে আমার রব! আমাকে (দ্বীনের) প্রজ্ঞা দান করুন এবং আমাকে (জান্নাতে) সৎকর্মশীলদের সাথে শামিল করে দিন।’
(84) ‘এবং পরবর্তী বংশধরদের কাছে আমার উত্তম স্মরণ ও সুন্দর প্রশংসা অব্যাহত রাখুন।’
(85) ‘আর আপনি আমাকে নি‘আমতে পরিপূর্ণ জান্নাতের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।’
(86) ‘আর আপনি আমার পিতাকে (হিদায়াতের তাওফীক দিন এবং তাকে) ক্ষমা করুন, নিশ্চয় সে (শিরকের কারণে) পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।’(১)
(87) ‘আর যেদিন (হিসাবের জন্য সবাইকে) পুনরুত্থিত করা হবে, সেদিন আমাকে (শাস্তি দিয়ে) লাঞ্ছিত করবেন না।’
(88) ‘যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনো উপকারে আসবে না।’
(89) ‘তবে যে আল্লাহর কাছে পরিচ্ছন্ন অন্তর নিয়ে আসবে (সেই লাভবান হবে)।’
(90) আর সে দিন মুত্তাকীদের জন্য জান্নাত নিকটবর্তী করা হবে।
(91) এবং পথভ্রষ্টকারীদের জন্য জাহান্নাম উন্মোচিত করা হবে।
(92) আর তাদেরকে বলা হবে, ‘তারা কোথায় যাদের তোমরা পূজা করতে,
(93) ‘আল্লাহর পরিবর্তে?’ তারা কি ( আজ আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করে) তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারছে, না তারা নিজেরাই নিজেদের সাহায্য করতে পারছে?
(94) অতঃপর তাদেরকে এবং পথভ্রষ্টকারীদেরকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
(95) আর ইবলীসের সকল সৈন্যবাহিনীকেও।
(96) সেখানে পরস্পর ঝগড়া করতে গিয়ে তারা বলবে-
(97) ‘আল্লাহর শপথ! আমরা তো সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ছিলাম’,
(98) ‘যখন আমরা তোমাদেরকে সকল সৃষ্টির রবের সমকক্ষ বানাতাম।’
(99) ‘আর অপরাধীরাই শুধু আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলো’;
(100) ‘অতএব, (আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচাতে আজ) আমাদের কোনো সুপারিশকারী নেই,
(101) এবং কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধুও নেই।’
(102) ‘হায়, আমাদের যদি (দুনিয়ার জীবনে ফিরে যাওয়ার) একবার সুযোগ হতো, তবে আমরা মু’মিনদের অর্ন্তভুক্ত হতাম।’
(103) নিশ্চয় এতে(১) রয়েছে নিদর্শন, আর তাদের অধিকাংশ মু’মিন নয়।
(104) আর নিশ্চয় তোমার রব, তিনি তো মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।
(105) নূহের সম্প্রদায় (তার প্রতি মিথ্যারোপ করে মূলত সকল) রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিলো।
(106) যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বলেছিলো: ‘তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না?’
(107) ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রাসূল।’
(108) ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর নির্দেশ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।’
(109) ‘আর আমি (এ দাওয়াত পৌঁছানোর বিনিময়ে) তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান চাই না। ; আমার প্রতিদান শুধু সৃষ্টিকুলের রবের নিকট।’
(110) ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।’
(111) ‘তারা বললো: ‘আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবো; অথচ (সমাজের) নিম্নশ্রেণীর লোকেরা তোমাকে অনুসরণ করছে?’
(112) নূহ বললো: ‘তারা আগে কি করত, তা জানা আমার কী প্রয়োজন?’(১)
(113) ‘তাদের হিসাব গ্রহণ তো কেবল আমার রবের দায়িত্বে, যদি তোমরা বুঝতে (তবে এ কথা কখনোই বলতে না)।’
(114) ‘আর আমি তো (তোমাদের ঈমান আনার আশায়) মু’মিনদেরকে (মজলিস থেকে) তাড়িয়ে দেওয়ার নই।’
(115) ‘আমি তো শুধু একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী।’
(116) তারা বললো: ‘হে নূহ! যদি তুমি (এ কাজ থেকে) বিরত না হও, তবে অবশ্যই তুমি পাথরের আঘাতে নিহতদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’
(117) নূহ বললো: ‘হে আমার রব! আমার জাতি আমাকে অস্বীকার করেছে।’
(118) ‘সুতরাং আপনি আমার ও তাদের মধ্যে একটা চূড়ান্ত ফয়সালা করে দিন।(১) আর আমাকে ও আমার সাথে থাকা মু’মিনদেরকে রক্ষা করুন।’
(119) অতঃপর আমি (তাঁর এ প্রার্থনা কবুল করলাম এবং) তাঁকে এবং তাঁর সাথে যারা ভরা নৌকায় আরোহী ছিলো তাদেরকে (ধ্বংস থেকে) রক্ষা করলাম।
(120) তারপর অবশিষ্ট লোকদেরকে (মহা প্লাবনে) ডুবিয়ে দিলাম।
(121) নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, বস্তুত তাদের অধিকাংশই মু’মিন ছিল না।
(122) আর নিশ্চয় তোমার রব মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।
(123) ‘আদ সম্প্রদায় রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিলো।
(124) যখন তাদের ভাই হূদ তাদেরকে বলেছিলো: ‘তোমরা কি (গাইরুল্লাহর ইবাদাত পরিত্যাগ করে) আল্লাহকে ভয় করবে না?’
(125) ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রাসূল।’
(126) ‘তাই তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।’
(127) ‘আর এর জন্যে আমি তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না; আমার প্রতিদান কেবল সৃষ্টিকুলের রবের নিকট।’
(128) ‘তোমরা কেন প্রতিটি উঁচু স্থানে নিরর্থক স্তম্ভ (স্মৃতিসৌধ) নির্মাণ করছো?’(১)
(129) ‘আর তোমরা সুদৃঢ় প্রাসাদ নির্মাণ করছো, (দেখে মনে হয়) যেনো তোমরা এখানে চিরস্থায়ী হবে।’(১)
(130) ‘আর তোমরা যখন কাউকে (মারতে ও হত্যা করতে) আঘাত করো, তখন স্বেচ্ছাচারী হয়ে (নিষ্ঠুরভাবে) আঘাত করো।’
(131) ‘তাই তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।’
(132) ‘আর তোমরা তাঁকে (আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে) ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন এমন কিছু (নি‘আমতরাজি) দিয়ে, যা তোমরা ভালো করেই জানো।’
(133) ‘তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন গবাদি পশু ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা,
(134) আর বাগান ও ঝর্ণাধারা দ্বারা।’
(135) ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের ওপর এক মহা দিবসের (কিয়ামতের দিনের) শাস্তির ভয় করছি।’
(136) তারা বললো: ‘তুমি আমাদের উপদেশ দাও কিংবা না দাও, উভয়ই আমাদের জন্য সমান।’(১)
(137) ‘এসব পূর্ববর্তীদের (ধর্ম, অভ্যাস ও) চরিত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।’
(138) ‘আর আমরা শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হব না।’
(139) অতঃপর তারা তাকে (নবী হূদকে) অস্বীকার করলো, ফলে আমি (কঠিন ঝড়ো হাওয়ার মাধ্যমে) তাদেরকে ধ্বংস করে দিলাম। নিশ্চয় এতে (এ ধ্বংসের মাঝে) নিদর্শন রয়েছে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই মু’মিন ছিলো না।
(140) আর নিশ্চয় তোমার রব মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।
(141) সামূদ সম্প্রদায় (নিজেদের নবী সালিহকে অস্বীকার করার মাধ্যমে) রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিলো।
(142) যখন তাদের ভাই সালিহ তাদেরকে বলেছিলো: ‘তোমরা কি (গাইরুল্লাহর ইবাদাত পরিত্যাগ করে) আল্লাহকে ভয় করবে না?’
(143) ‘আমি তো তোমাদের জন্যে একজন বিশ্বস্ত রাসূল।’
(144) ‘তাই তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।’
(145) ‘আর এর জন্যে আমি তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না; আমার প্রতিদান কেবল সৃষ্টিকুলের রবের নিকট।’
(146) ‘(তোমরা কি মনে করছো যে,) তোমাদেরকে কি এখানে যা (দুনিয়াতে যে কল্যাণ ও নি‘আমত) আছে, তাতে নিরাপদে ছেড়ে দেওয়া হবে?’
(147) ‘ সুশোভিত বাগান ও ঝর্ণাধারায়’
(148) ‘আর ক্ষেত-খামার ও সুকোমল গুচ্ছ বিশিষ্ট (কাঁচা ও পাকা) খেজুর বাগানে?’
(149) ‘আর তোমরা নৈপুণ্যের সাথে পাহাড় কেটে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করছো।’(১)
(150) ‘তাই তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।’
(151) ‘আর (কখনো) সীমালঙ্ঘনকারীদের নির্দেশের আনুগত্য করো না-
(152) ‘যারা জমিনে (পাপকর্ম ছড়িয়ে) বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং (আল্লাহর আনুগত্য আঁকড়ে ধরে) নিজেদেরকে সংশোধন করে না।’
(153) তারা (তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা) বলল: ‘তুমিতো যাদুগ্রস্তদের একজন।’
(154) ‘তুমি তো কেবল আমাদের মতো একজন মানুষ। সুতরাং তুমি যদি (রিসালাতের দাবিতে) সত্যবাদী হও, তবে কোনো নিদর্শন (মু‘জিযা) নিয়ে এসো।’
(155) সালিহ (তাদেরকে) বললো: ‘এটি একটি উষ্ট্রী (এটিই আমার নিদর্শন); তার জন্য রয়েছে পানি পানের পালা, আর তোমাদের জন্য আছে নির্ধারিত দিনে পানি পানের পালা।’(১)
(156) ‘আর তোমরা তাকে (হত্যা করে বা মেরে) কোন অনিষ্ট সাধন করো না; যদি করো, তবে এক মহা দিনের শাস্তি তোমাদেরকে পাকড়াও করবে।’(১)
(157) অতঃপর তারা সেটি যবহ করলো; ফলে (কঠিন শাস্তি দেখে) তারা ভীষণভাবে অনুতপ্ত হলো।(১)
(158) ফলে (বিকট আওয়াজ ও ভূমিকম্পের) শাস্তি তাদেরকে পাকড়াও করলো। নিশ্চয় এতে (এ ঘটনায়) রয়েছে নিদর্শন, আর তাদের অধিকাংশই মু’মিন ছিলো না।
(159) আর নিশ্চয় তোমার রব মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।
(160) লূতের সম্প্রদায় (নবী লূতকে অস্বীকার করার মাধ্যমে) রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিলো।
(161) যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বলেছিলো: ‘তোমরা কি (গাইরুল্লাহর ইবাদাত পরিত্যাগ করে) আল্লাহকে ভয় করবে না?’
(162) ‘আমি তো তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রাসূল।’
(163) ‘তাই তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।’
(164) ‘আর এর জন্যে আমি তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না; আমার প্রতিদান কেবল সৃষ্টিকুলের রবের নিকট।’
(165) ‘সৃষ্টিকুলের মধ্যে (যৌনকর্ম করতে) তোমরাই কি কেবল পুরুষের কাছে যাও?’(১)
(166) ‘আর (যৌন চাহিদা পূরণের জন্য) তোমাদের রব তোমাদের জন্য যে স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে তোমরা ত্যাগ করো; বরং তোমরা এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’
(167) তারা বললো: ‘হে লূত! তুমি যদি (আমাদেরকে এ কাজ করতে নিষেধ করা থেকে) বিরত না হও, তাহলে তুমি অবশ্যই (এ দেশ থেকে) নির্বাসিত হবে।’
(168) লূত বললো: ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের কাজকে ঘৃণা করি।‘
(169) ‘হে আমার রব! তারা যা (যে অপকর্ম) করছে, তা থেকে (এর পরিণতিতে নেমে আসা শাস্তি থেকে) আমাকে ও আমার পরিবার-পরিজনকে তুমি রক্ষা করো।‘
(170) অতঃপর আমি তাকে ও তার পরিবার-পরিজন সবাইকে (শাস্তি থেকে) রক্ষা করলাম।
(171) তবে পেছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত এক বৃদ্ধা ছাড়া।(১)
(172) অতঃপর (লূত ও তাঁর পরিবার সাদূম এলাকা থেকে বেরিয়ে আসার পরে) অবশিষ্টদেরকে আমি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিলাম।
(173) আর আমি তাদের ওপর (আকাশ থেকে) শিলাবৃষ্টি বর্ষণ করলাম। সুতরাং সেই বৃষ্টি (লূত কর্তৃক শাস্তির) ভীতি প্রদর্শিতদের জন্য কতইনা মন্দ ছিল!
(174) নিশ্চয় এতে (এ শাস্তিতে) রয়েছে এক নিদর্শন। আর তাদের অধিকাংশই মু’মিন ছিলো না।
(175) আর নিশ্চয় তোমার রব মহা পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।
(176) আইকার অধিবাসীরা(১) (তাদের নবী শু‘আইবকে অস্বীকার করে মূলত সকল) রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিলো।
(177) যখন (তাদের নবী) শু‘আইব তাদেরকে বলেছিলো: ‘তোমরা কি (গাইরুল্লাহর ইবাদাত পরিত্যাগ করে) আল্লাহকে ভয় করবে না?’
(178) ‘আমি তো তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রাসূল।’
(179) ‘তাই তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।’
(180) ‘আর এর জন্যে আমি তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না; আমার প্রতিদান কেবল সৃষ্টিকুলের রবের নিকট।’
(181) ‘তোমরা (বেচা-কেনার সময়) মাপে পূর্ণ মাত্রায় দাও এবং যারা মাপে ঘাটতি করে, তোমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’
(182) ‘আর (ওজন করার সময়) সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো।’
(183) ‘আর মানুষকে তাদের প্রাপ্যবস্তু কম দিও না এবং জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।’
(184) ‘যিনি তোমাদেরকে ও পূর্ববর্তী প্রজন্মসমূহকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে তাকে ভয় করো।’
(185) তারা বললো: ‘(হে শু‘আইব!) তুমি তো কেবল যাদুগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।’
(186) ‘তাছাড়া তুমি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। আর আমরা তোমাকে অবশ্যই মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করি।’
(187) ‘অতএব, তুমি যদি সত্যবাদী হও, তবে আকাশ (ভেঙ্গে) এর এক খণ্ড আমাদের ওপর ফেলে দাও।’
(188) সে (শুয়াইব) বললো: ‘তোমরা যা (যে শিরক ও গুনাহের কাজ) করো, সে সম্পর্কে আমার রব অধিক জ্ঞাত।’
(189) অতঃপর তারা তাকে অস্বীকার করলো। ফলে তাদেরকে এক মেঘাচ্ছন্ন দিনের (আগুন বর্ষণের) শাস্তি পাকড়াও করলো। অবশ্যই তা ছিল এক ভয়ংকর দিনের শাস্তি।
(190) নিশ্চয় এতে (শু‘আইবের জাতির ধ্বংসে) রয়েছে অনেক নিদর্শন। আর তাদের অধিকাংশই মু’মিন ছিলো না।
(191) আর নিশ্চয় তোমার রব মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।
(192) আর নিশ্চয় এ আল কুরআন সৃষ্টিকুলের রবেরই নাযিলকৃত।
(193) বিশ্বস্ত আত্মা (জিবরীল) এটা নিয়ে অবতরণ করেছে।
(194) (হে রাসূল! জিবরীল) তোমার হৃদয়ে (এটি নাযিল করেছে), যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।
(195) সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।
(196) আর নিশ্চয়ই পূর্ববর্তীদের কিতাবসমূহে (তাওরাত এবং ইঞ্জীলে ) এটির (আল কুরআনের) উল্লেখ রয়েছে।
(197) এটা কি তাদের (মিথ্যারোপকারীদের) জন্য একটি নিদর্শন নয় যে, বানূ ইসরাঈলের আলিমগণ তা(১) জানে?
(198) আর আমি যদি এটাকে কোনো অনারবের প্রতি নাযিল করতাম,
(199) অতঃপর সে তা তাদের নিকট পাঠ করতো; তবুও তারা এতে ম ‘মিন হতো না।(১)
(200) এভাবেই আমি (কুফরী ও মিথ্যারোপের) বিষয়টি অপরাধীদের অন্তরে ঢুকিয়ে দিয়েছি।
(201) যতক্ষণ না তারা যন্ত্রণাদায়ক শা প্রত্যক্ষ করবে; ততক্ষণ পর্যন্ত তারা এতে ঈমান আনবে না।(১)
(202) সুতরাং তা (শা) আকস্মিকভাবে তাদের নিকট এসে পড়বে; অথচ তারা টেরই পাবে না।
(203) তখন তারা বলবে: ‘আমাদেরকে কি (আল্লাহর নিকট তাওবা করার) একটু সুযোগ দেওয়া হবে?’
(204) তাহলে কি তারা আমার শাস্তি ত্বরান্বিত করতে চায়?
(205) (হে রাসূল!) তুমি কি লক্ষ্য করেছ, আমি যদি তাদেরকে দীর্ঘকাল ভোগ-বিলাসের সুযোগ দিতাম।
(206) অতঃপর তাদেরকে যে বিষয়ে (শাস্তির) ওয়াদা করা হয়েছে, তা তাদের নিকট এসে পড়তো,
(207) তখন (দুনিয়াতে) তাদের ভোগ-বিলাসের জন্য যা দেয়া হয়েছিলো, তা তাদের কোনোই কাজে লাগত না।
(208) আর আমি এমন কোনো জনপদকে ধ্বংস করিনি, যাতে কোনো সতর্ককারী (নবী-রাসূল) আসেনি।
(209) এটা (তাদের জন্য) উপদেশস্বরূপ। আর আমি তো যালিম নই (যে তাদেরকে সতর্ক না করেই, ধ্বংস করে দিবো)।
(210) আর শয়তানরা এ আল কুরআন নিয়ে (রাসূলের অন্তরের ওপর) অবতরণ করেনি।
(211) আর এটা তাদের (শয়তানদের) জন্য সমোচিত নয় (যে, তারা এ নিয়ে তার অন্তরের ওপর নাযিল হবে) এবং তারা এর ক্ষমতাও রাখে না।
(212) নিশ্চয়ই এটির (আল কুরআনের ওয়াহী) শ্রবণ করা থেকে তাদেরকে আড়ালে রাখা হয়েছে।
(213) অতএব, (হে রাসূল!) তুমি আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহকে ডেকো না, তাহলে তুমি শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
(214) আর (হে রাসূল!) তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে (আল্লাহর শাস্তি থেকে) সতর্ক করো।
(215) আর মু’মিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তুমি তোমার বাহুকে বিনয়াবনত করো।
(216) তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বলো: ‘তোমরা যা (সেসব পাপ ও শিরক) করো, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ দায়মুক্ত ‘
(217) ‘আর তুমি সকল ব্যাপারে মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালুর ওপর তাওয়াক্কুল করো।
(218) ‘যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (সালাতের জন্য) দণ্ডায়মান হও,
(219) এবং সাজদাকারীদের মধ্যে তোমার উঠাবসা।’(১)
(220) ‘নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।’
(221) ‘আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দিবো, শয়তানরা মূলত কার নিকট অবতীর্ণ হয়?’
(222) তারা (জিন শয়তানরা) অবতীর্ণ হয়, প্রত্যেক চরম মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট।
(223) তারা (ফিরিশতাদের কাছ থেকে কথা চুরি করে গণকদের কাছে পৌঁছে দিতে) কান পেতে থাকে এবং তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী।
(224) আর কবিদের অনুসরণ করে তো বিভ্রান্তরাই।
(225) (হে রাসূল!) তুমি কি লক্ষ্য করো নি যে, (তাদের ভ্রষ্টতার একটি নিদর্শন হলো) তারা প্রত্যেক উপত্যকায় উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়?
(226) আর নিশ্চয় তারা এমন কথা বলে, যা তারা করে না।
(227) তবে যারা (যে কবিরা) ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, উপরন্তু আল্লাহকে অনেক স্মরণ করেছে, আর তারা নির্যাতিত হওয়ার পর প্রতিশোধ নেয়, (তারা অবশ্যই এ থেকে ভিন্ন)। আর যালিমরা শীঘ্রই জানতে পারবে, কোন্ প্রত্যাবর্তন স্থলে তারা প্রত্যাবর্তন করবে।