(1) যখন (অবিশ্যম্ভাবী) কিয়ামত সংঘটিত হবে।
(2) (তখন) কেউ তার সংঘটিত হওয়ার অস্বীকারকারী থাকবে না।(১)
(3) তা কাউকে (কাফিরদেরকে জাহান্নামে প্রবিষ্ট করে) ভূলুণ্ঠিত করবে এবং কাউকে (মু’মিনদেরকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করে) সমুন্নত করবে।(১)
(4) যখন প্রবল প্রকম্পনে জমিন প্রকম্পিত হবে।
(5) আর পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে।
(6) অতঃপর তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হবে।
(7) আর (সেদিন) তোমরা তিন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে।
(8) (প্রথমত) সুতরাং ডান দিকের দল(১), ডান দিকের দলটি কত সৌভাগ্যবান!
(9) (দ্বিতীয়ত) আর বাম দিকের দল(১); আর বাম দিকের দলটি কত হতভাগা!
(10) (তৃতীয়ত) আর (দুনিয়ার জীবনে ভালো কাজে) অগ্রগামীরাই (পরকালেও পুরুস্কার লাভে) অগ্রগামী হবে।
(11) তারাই আল্লাহর নৈকট্যপ্ৰাপ্ত।
(12) তারা নিআমতপূর্ণ জান্নাতসমূহে অবস্থান করবে।
(13) তাদের একদল হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে,
(14) আর অল্পসংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে।(১)
(15) তারা স্বর্ণ ও দামী পাথরখচিত আসনে থাকবে।
(16) তারা সেখানে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে হেলান দিয়ে বসবে।
(17) তাদের আশ-পাশে (সেবার উদ্দেশ্যে) ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা,
(18) পানপাত্র, জগ ও প্রবাহিত ঝর্ণার শরাবপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে (তারা প্রদক্ষিণ করবে)।
(19) সে শরাব পানে না তাদের মাথা ব্যথা করবে, আর না তারা মাতাল হবে।(১)
(20) আর (এসব কিশোরেরা) তাদের পছন্দমত ফল নিয়ে (ঘোরাফেরা করবে)।
(21) আর (ওদের সামনে ঘুরে বেড়াবে) পাখির গোশত নিয়ে, যা তারা কামনা করবে।
(22) আর তাদের জন্য থাকবে ডাগরচোখা হূর।
(23) যেন তারা (ঝিনুকে লুকিয়ে থাকা) সুরক্ষিত মনি-মুক্তা।
(24) (এগুলো হচ্ছে দুনিয়ার জীবনে) তারা যে আমল করতো তার প্রতিদানস্বরূপ।
(25) তারা সেখানে শুনতে পাবে না কোন অর্থহীন কথা, এবং না কোন পাপের কথা;
(26) শুধু এই বাণী ছাড়া, ‘সালাম, সালাম’ (শান্তি, নিরবচ্ছিন্ন শান্তি)।
(27) আর ডান দিকের দল; কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল!
(28) তারা থাকবে কাঁটাবিহীন কুলগাছের নিচে,
(29) আর কাঁদিপূর্ণ কলাগাছের নিচে,
(30) আর বিস্তৃত ছায়ায়(১),
(31) আর সদা প্রবাহিত পানির পাশে,
(32) আর প্রচুর ফলমূলে,
(33) যার সরবরাহ কখনো শেষ হবে না এবং (যার আহরণ কখনো) নিষিদ্ধও হবে না।
(34) আর (তারা থাকবে) সুউচ্চ শয্যাসমূহে;
(35) নিশ্চয় আমি (উল্লিখিত) হূরদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছি।
(36) অতঃপর তাদেরকে কুমারী বানিয়েছি(১),
(37) (তারা হবে স্বামীদের প্রতি) সোহাগিনী ও সমবয়সী।
(38) (তাদেরকে সৃষ্টি করেছি) ডানদিকের লোকদের জন্য।
(39) তাদের অনেকেই হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে।
(40) এবং তাদের অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে।
(41) আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল!(১)
(42) তারা থাকবে তীব্র গরম হাওয়া এবং প্রচণ্ড উত্তপ্ত পানিতে,
(43) আর প্রচণ্ড কালো ধোঁয়ার ছায়ায়,
(44) যা শীতলও নয়, আরামদায়কও নয়।
(45) নিশ্চয় তারা ইতঃপূর্বে ভোগ-বিলাসিতায় মগ্ন ছিল।
(46) আর তারা অবিরাম জঘন্য পাপে (কুফরি ও মূর্তি পূজায়) লিপ্ত থাকত।
(47) আর তারা (পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে) বলতো: ‘আমরা যখন মরে যাব এবং মাটি ও হাড়ে পরিণত হবো, তখনও কি আমরা পুনরুত্থিত হবো?’
(48) ‘আমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষরাও (কি পুনরুত্থিত হবে)?’
(49) (হে রাসূল! তুমি পুনরুত্থানে অবিশ্বাসীদেরকে) বলো: ‘নিশ্চয় পূর্ববর্তীরা ও পরবর্তীরা,
(50) সবাইকে একত্র করা হবে একটি নির্ধারিত দিনের নির্দিষ্ট সময়ে।
(51) তারপর হে পথভ্রষ্ট ও অস্বীকারকারীরা,
(52) অবশ্যই তোমরা যাক্কূম (নামক নোংরা ও নিকৃষ্ট) বৃক্ষ থেকে ফল ভক্ষণ করবে।
(53) অতঃপর তোমরা তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে।
(54) তদুপরি পান করবে প্রচণ্ড উত্তপ্ত পানি।
(55) অতঃপর তোমরা প্রচুর পরিমাণে তা পান করবে, তৃষ্ণার্ত উটের ন্যায়।
(56) প্রতিফল দিবসে এই হবে তাদের মেহমানদারী,
(57) (হে মিথ্যারোপকারীরা!) আমিই তোমাদেরকে (অনস্তিত্ব থেকে) সৃষ্টি করেছি: তাহলে কেন তোমরা তা বিশ্বাস করছ না?(১)
(58) তোমরা কি ভেবে দেখেছো, (স্ত্রীদের গর্ভাশয়ে) তোমরা যে বীর্যপাত করছ সে সম্পর্কে?
(59) তোমরা কি এ বীর্য সৃষ্টি করো, না আমিই তার স্রষ্টা?
(60) আমি তোমাদের মধ্যে মৃত্যু নির্ধারণ করেছি(১) এবং আমাকে অক্ষম করা যাবে না,
(61) তোমাদের স্থানে তোমাদের বিকল্প আনয়ন করতে এবং তোমাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করতে, যা তোমরা জান না।
(62) আর অবশ্যই তোমরা প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে অবগত হয়েছো, তবে কেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ করছ না?
(63) তোমরা কি চিন্তা করে দেখেছো, তোমরা (শস্য উৎপাদনের জন্য) জমিনে যা (বীজ) বপন করো সে সম্পর্কে?
(64) তোমরা তা অঙ্কুরিত কর, না আমি অঙ্কুরিত করি?
(65) আমি চাইলে তা খড়-কুটায় পরিণত করতে পারি, (তা দেখে) তখন তোমরা হতভম্ব হয়ে পড়বে,
(66) (এই বলে,) ‘নিশ্চয় আমরা দায়গ্রস্ত হয়ে গেলাম।’
(67) ‘বরং আমরা হৃত-সর্বস্ব হয়ে পড়েছি।’(১)
(68) তোমরা কি ভেবে দেখেছো, তোমরা যে পানি পান করো সে সম্পর্কে?
(69) মেঘমালা থেকে তোমরা কি তা বর্ষণ কর, না আমি বৃষ্টি বর্ষণকারী?
(70) আমি ইচ্ছা করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি; তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না?
(71) তোমরা যে আগুন জ্বালাও সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছো কি?
(72) তোমরাই কি এর গাছ (লাকড়ি) উৎপাদন করো, না আমি সৃষ্টি করি?
(73) আমি এ আগুনকে করেছি তোমাদের জন্য উপদেশ(১) ও মরুচারীদের প্রয়োজনীয় বস্তু।
(74) অতএব, তুমি তোমার মহান রবের নামে তাসবীহ পাঠ করো।
(75) সুতরাং আমি শপথ করছি নক্ষত্ররাজির অস্তাচলের,
(76) আর নিশ্চয় এটি এক মহা শপথ, যদি তোমরা জানতে(১),
(77) নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত আল-কুরআন,
(78) যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে (আল-লাওহুল মাহফূযে),
(79) পবিত্রগণ ছাড়া কেউ তা স্পর্শ করবে না।
(80) এটা (আল-কুরআন) সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে নাযিলকৃত।
(81) তবুও কি তোমরা এ বাণীকে তুচ্ছ গণ্য করছো?
(82) আর একে মিথ্যারোপ করাকেই তোমরা তোমাদের রিযক বানিয়ে নিয়েছো!(১)
(83) সুতরাং কেন নয়- যখন রূহ কণ্ঠনালীতে পৌঁছে যায়? (তোমরা সেটাকে আটকাতে পারোনা কেন?)
(84) আর তখন তোমরা কেবল (মুমূর্ষু ব্যক্তির প্রতি) চেয়ে থাকো।
(85) আর তোমাদের চাইতে আমি তার খুব কাছে; কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না।(১)
(86) আচ্ছা,যদি তোমাদের পুনুরুত্থান ও হিসাব-নিকাশ না হওয়াই ঠিক হয় (যেমনটি তোমরা ধারনা করো),
(87) তাহলে তোমরা এই আত্মাকে ফিরাও না কেন? যদি তোমরা সত্যবাদী হও!
(88) অতঃপর সে যদি (আল্লাহর) নৈকট্যপ্রাপ্তদের একজন হয়,
(89) তবে তার জন্য থাকবে অফুরন্তু সুখ-শান্তি বিশ্রাম, উত্তম জীবনোপকরণ ও নি‘আমতে ভরপুর জান্নাত।
(90) আর যদি সে ডানদিকের (ডান হাতে আমলনামা প্রাপ্ত) একজন হয়,
(91) তবে (তাকে বলা হবে), ‘তোমাকে সালাম, যেহেতু তুমি ডানদিকের (ডানপন্থী বা ডান দলের) একজন।’
(92) আর সে যদি (আল্লাহকে) অস্বীকারকারী ও পথভ্রষ্ট দলের একজন হয়,
(93) তবে তার মেহমানদারী হবে প্রচণ্ড উত্তপ্ত পানি দিয়ে,
(94) আর সে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে।
(95) নিশ্চয় এটা (এ কাহিনী) সুনিশ্চিত সত্য।
(96) অতএব তুমি তোমার মহান রবের নামে তাসবীহ পাঠ করো।