(1) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রবর্তী হয়ো না এবং তোমরা (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) তাঁকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
(2) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নবীর আওয়াজের ওপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরকম উচ্চস্বরে কথা বলো না। এ আশঙ্কায় যে তোমাদের সকল আমল-নিষ্ফল হয়ে যাবে; অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না।
(3) নিশ্চয় যারা আল্লাহর রাসূলের নিকট নিজেদের আওয়াজ অবনমিত করে, আল্লাহ তাদেরই অন্তরগুলোকে তাকওয়ার জন্য বাছাই করেছেন, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান (জান্নাত)।
(4) নিশ্চয় যারা (যে সব বেদুঈনরা) তোমাকে স্ত্রীদের কক্ষের পিছন থেকে ডাকাডাকি করে, তাদের অধিকাংশই বুঝে না।
(5) (হে রাসূল!) তুমি তাদের কাছে বের হয়ে আসা পর্যন্ত যদি তারা ধৈর্যধারণ করত, তাহলে সেটাই তাদের জন্য উত্তম হতো। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(6) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোন সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে বসবে, ফলে (সংবাদ মিথ্যা সাব্যস্ত হলে) তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।
(7) আর তোমরা জেনে রেখো যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন। সে যদি অধিকাংশ বিষয়ে তোমাদের কথা মেনে নিতো, তাহলে তোমরা অবশ্যই কষ্টে পতিত হতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত করেছেন। আর তোমাদের কাছে কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে অপছন্দনীয় করে দিয়েছেন। তারাই তো সত্য পথপ্রাপ্ত।
(8) এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে করুণা ও নি‘আমত স্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(9) আর যদি মু’মিনদের দু’দল পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের ওপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি সীমালঙ্ঘন করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করো; যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর বিধানের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের উভয়ের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা করো এবং ন্যায়বিচার করো। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদেরকে ভালোবাসেন।
(10) নিশ্চয় মু’মিনরা পরস্পর (ইসলামের) ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ- মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।
(11) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোন সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে বসবে, ফলে (সংবাদ মিথ্যা সাব্যস্ত হলে) তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে! তোমাদের কোন সম্প্রদায় যেন অপর কোন সম্প্রদায়কে ঠাট্টা-বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর নারীরাও যেন অন্য নারীদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট! আর যারা (এ সব পাপাচার থেকে) তাওবা করে না, তারাই তো যালিম।
(12) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা বেশি বেশি অনুমান করা থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। আর তোমরা আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মানার মাধ্যমে) ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবূলকারী, অসীম দয়ালু।
(13) হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ (আদম) ও একজন নারী (হাওয়া) থেকে সৃষ্টি করেছি।(১) আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।
(14) বেদুঈনরা বলল: ‘আমরা ঈমান আনলাম।’ (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘তোমরা ঈমান আনোনি’; বরং তোমরা বলো: ‘আমরা আত্মসমর্পণ করলাম।’ আর এখন পর্যন্ত তোমাদের অন্তরে যথার্থ ঈমান প্রবেশ করেনি। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো, তাহলে তিনি তোমাদের আমলসমূহের প্রতিদান কিছুই ক্ষুণ্ন করবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(15) মু’মিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর (ঈমানের ব্যাপারে তারা) সন্দেহ পোষণ করেনি। আর নিজেদের সম্পদ ও নিজেদের জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। এরাই সত্যনিষ্ঠ (ঈমানদার)।
(16) (হে রাসূল! তুমি এ সব বেদুইনকে) বলো: ‘তোমরা কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে আল্লাহকে শিক্ষা দিচ্ছ? অথচ আল্লাহ জানেন, যা কিছু আছে আসমানসমূহে এবং যা কিছু আছে জমিনে। আর আল্লাহ সকল কিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত।’
(17) (এ সব বেদুইনরা মনে করে) ‘তারা ইসলাম গ্রহণ করে তোমার ওপর অনুগ্রহ করেছে।’ (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমার ওপর অনুগ্রহ করেছো বলে মনে করো না; বরং তোমরা যদি নিজেদের দাবি অনুযায়ী প্রকৃতই ইসলামে দীক্ষিত হয়ে থাকো, তাহলে আল্লাহই তোমাদেরকে ঈমানের দিকে পরিচালিত করে তোমাদের ওপর বড়ো অনুগ্রহ করেছেন।’
(18) নিশ্চয় আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনের গায়েব সম্পর্কে অবগত আছেন। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।