51 - Adh-Dhaariyat ()

|

(1) শপথ ধূলিঝড়ের,

(2) অতঃপর শপথ (পানির) বোঝা বহনকারী মেঘমালার,

(3) অতঃপর শপথ (সমুদ্রে) মৃদুগতিতে চলমান নৌযানসমূহের,

(4) অতঃপর শপথ [আল্লাহর] নির্দেশ বণ্টনকারী ফিরিশতাগণের।

(5) তোমাদের (রবের) প্রদত্ত ওয়াদা অবশ্যই সত্য।

(6) (কিয়ামত দিবসের) প্রতিদান অবশ্যই সংঘটিত হবে।

(7) শপথ সৌন্দর্যমন্ডিত আকাশের,

(8) নিশ্চয় তোমরা মতবিরোধপূর্ণ কথায় লিপ্ত।

(9) যে পথভ্রষ্ট হয়েছে তাকেই তা (হিদায়াত) থেকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।

(10) অনুমানকারীরা ধ্বংস হোক!

(11) যারা (পরকাল সম্পর্কে) সন্দেহ-সংশয়ে নিপতিত, উদাসীন।

(12) তারা (ঠাট্টাচ্ছলে) জিজ্ঞাসা করে, ‘প্রতিদান দিবস কবে?’

(13) (আল্লাহ তাদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন,) ‘যে দিন তারা অগ্নিতে সাজাপ্রাপ্ত হবে।’

(14) বলা হবে, ‘তোমরা আযাবের স্বাদ আস্বাদন করো। এটিতো তোমরা ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলে।’

(15) নিশ্চয় (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্যকারী) মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতসমূহে ও ঝর্ণাধারায়,

(16) তাদের রব তাদের (সম্মানী প্রতিদান হিসাবে) যা দিবেন তা তারা খুশিতে গ্রহণকারী হবে। ইতঃপূর্বে (দুনিয়াতে) তারাই ছিল সৎকর্মশীল।

(17) রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাতো।(১)

(18) আর রাতের শেষ ভাগে এরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা ক্ষমা প্রার্থনা করত।

(19) আর তাদের ধনসম্পদে রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতের (দরিদ্র-অভাবগ্রস্তকে) অধিকার।

(20) আর সুনিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য জমিনে (আল্লাহর কুদরতের) অনেক নিদর্শন রয়েছে।

(21) এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও (আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শনাবলি রয়েছে)। তবুও তোমরা কি চক্ষুষ্মান হবে না?

(22) আকাশে রয়েছে তোমাদের রিযক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু।(১)

(23) অতএব আসমান ও জমিনের রবের শপথ। তোমরা যে কথা বলে থাক তার মতই পুনরুত্থান সত্য।

(24) (হে রাসূল!) তোমার কাছে কি ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে?

(25) যখন তারা তার কাছে এসে বলল: ‘সালাম’, উত্তরে সেও বলল, ‘সালাম’। (সে মনে মনে বলল,) এরা তো অপরিচিত লোক।

(26) অতঃপর ইবরাহীম দ্রুত চুপিসারে নিজ পরিবারবর্গের কাছে গেল এবং একটি মোটা-তাজা গো-বাছুর (ভাজা) নিয়ে আসল।

(27) অতঃপর সে ভুনা বাছুরটি তাদের সামনে পেশ করল এবং বলল, ‘তোমরা কি খাবে না?’

(28) (তারা খাবার গ্রহণ না করায়) এতে তাদের সম্পর্কে সে মনে মনে ভীত হল। তারা বললো: ‘ভয় পেয়ো না।’ তারা তাকে এক বিদ্বান পুত্র সন্তানের (ইসহাকের) সুসংবাদ দিল।

(29) তখন তার স্ত্রী চিৎকার করতে করতে এগিয়ে আসল এবং নিজ মুখ চাপড়িয়ে (আশ্চর্য হয়ে) বললো: ( আমি তো) ‘বৃদ্ধা, বন্ধ্যা।’(১)

(30) ফিরিশতারা বললো: ‘তোমার রব এরূপই বলেছেন। নিশ্চয়ই তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।’

(31) ইবরাহীম বললো: ‘হে প্রেরিত ফিরিশতাগণ! তোমাদের (আগমনের আসল ) উদ্দেশ্য কি?’

(32) তারা বললো: ‘আমরা এক অপরাধী (লূতের) জাতির নিকট প্রেরিত হয়েছি।’

(33) ‘যাতে তাদের উপর শক্ত মাটির পাথর নিক্ষেপ করি।’

(34) ‘যা তোমার রবের পক্ষ থেকে চিহ্নিত (করে দেওয়া হয়েছে), সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য (শাস্তিস্বরূপ)।’

(35) অতঃপর আমি সেখানে যেসব মু’মিন ছিল তাদেরকে বের করে নিয়ে আসলাম।(১)

(36) তবে আমি সেখানে একটি বাড়ি (লূতের পরিবার) ছাড়া কোন মুসলিম পাইনি।

(37) আর যারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিকে ভয় করে আমি তাদের জন্য সেখানে একটি নিদর্শন রেখেছি।

(38) আর মূসার কাহিনীতেও নিদর্শন রয়েছে, যখন আমি তাকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ ফির‘আউনের কাছে পাঠিয়েছিলাম।

(39) কিন্তু ফির‘আউন তার দলবলসহ মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বললো: ‘এ ব্যক্তি যাদুকর অথবা পাগল।’

(40) ফলে আমি তাকে ও তার সৈন্যবাহিনীকে পাকড়াও করলাম। অতঃপর তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। সে তো ছিল তিরস্কৃত।

(41) আর ‘আদ জাতির ঘটনায়ও (যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিকে ভয়কারীদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে), যখন আমি তাদের ওপর প্রেরণ করেছিলাম অকল্যাণকর-বন্ধা বায়ু।

(42) ঐ (বিধ্বংসী) বায়ু যার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল তাকেই চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিল।

(43) আর সামূদ জাতির ঘটনায়ও (যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিকে ভয়কারীদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে), যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল: ‘একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত (আমার নি‘আমত) ভোগ করে নাও।’

(44) অতঃপর তারা তাদের রবের আদেশ মানতে অহংকার করলো। ফলে বজ্রাঘাত তাদেরকে পাকড়াও করল, আর তখন তারা (অসহায়ের মতো) তা দেখছিল।

(45) অতঃপর (শাস্তির সামনে) তারা দাঁড়াতে সক্ষম হলো না এবং প্রতিরোধও করতে পারল না।

(46) আর ইতঃপূর্বে নূহের সম্প্রদায়কেও (আমি ডুবিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম)। নিশ্চয় তারা ছিল একটি ফাসিক সম্প্রদায়।।

(47) আর আমি স্বীয় ক্ষমতাবলে (সুবিশাল) আসমানসমূহকে সৃষ্টি করেছি এবং নিশ্চয় আমি এর প্রান্তগুলোকে প্রশস্তকারী।

(48) আর আমি জমিনকে (বসবাসকারীদের জন্যে) বিছিয়ে দিয়েছি। আমি কতই না উত্তম বিন্যস্তকারী!

(49) আর প্রত্যেক বস্তু থেকে আমি জোড়ায় জোড়ায় (নারী-পুরুষে) সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা (আল্লাহর একত্ববাদ ও ক্ষমতার ওপর) উপদেশ গ্রহণ করতে পারো।

(50) অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। আমি তো তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য (শাস্তি থেকে) এক সুস্পষ্ট সতর্ককারী।

(51) আর তোমরা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ গ্রহণ করো না; আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য (এ বিষয়ে) এক স্পষ্ট সতর্ককারী।

(52) এভাবে (মক্কাবাসীদের এই মিথ্যাচারের মতো) তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে যে রাসূলই এসেছে, তারা বলেছে: ‘এ তো একজন যাদুকর অথবা পাগল।’

(53) তারা কি (বংশানুক্রমে) একে অপরকে এই একই উপদেশই দিয়ে গেছে? বরং তারা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।

(54) অতএব, (হে রাসূল!) তুমি ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, এতে তুমি তিরস্কৃত হবে না।(১)

(55) আর (তুমি মানুষকে) উপদেশ দিতে থাক; কারণ উপদেশ মু’মিনদের উপকারে আসে।

(56) আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল আমার ইবাদাত করার জন্যেই সৃষ্টি করেছি।

(57) আমি তাদের কাছে কোন জীবিকা চাই না। আর আমি চাই না যে, তারা আমাকে খাবার যোগাবে।

(58) নিশ্চয় আল্লাহই রিযকদাতা, তিনি প্রবল শক্তিধর, পরাক্রমশালী।

(59) সুতরাং যারা (ঈমান না এনে নিজেদের ওপর) যুলম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের পূর্বসূরিদের অনুরূপ শাস্তি। কাজেই তারা যেন আমার কাছে (শাস্তি অবতীর্ণের জন্য) তাড়াহুড়া না করে।

(60) অতএব, যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য কিয়ামত দিবসের ধ্বংস, যেদিনের প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হয়েছে।