(1) হে নবী, আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মানার মাধ্যমে) ভয় করো এবং কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সম্যক জ্ঞানী, মহাপ্রজ্ঞাময়।
(2) আর তোমার রবের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা ওয়াহী করা হয় তুমি তার অনুসরণ করো। নিশ্চয় তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।
(3) আর তুমি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করো এবং কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই (আপনার জন্য) যথেষ্ট।
(4) আল্লাহ কোন মানুষের অভ্যন্তরে দু’টি হৃদয় সৃষ্টি করেননি। তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা যিহার কর, (১) তিনি তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি। আর তিনি তোমাদের পালক পুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা।(২) আর আল্লাহই সত্য কথা বলেন। আর তিনিই সরল-সঠিক পথ দেখান।
(5) তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ-পরিচয়ে ডাক; আল্লাহর কাছে এটাই অধিক ইনসাফপূর্ণ। আর যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই এবং (দাসত্ব থেকে আজাদকৃত) তোমাদের বন্ধু। আর এ বিষয়ে তোমরা অনিচ্ছাকৃত কোন ভুল করলে তোমাদের কোন পাপ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)। আর আল্লাহ অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(6) নবী (মুহাম্মাদ) মু’মিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাতাস্বরূপ। আর (উত্তরাধিকার বণ্টনের ক্ষেত্রে ) আল্লাহর বিধান অনুসারে মু’মিন ও মুহাজিরদের তুলনায় আত্মীয় স্বজনরা একে অপরের নিকটতর। তবে তোমরা যদি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে (সদাচরণমূলক অসিয়্যাত ও অনুদানের) ভালো কিছু করতে চাও (তা করতে পার)। এটা (বিধান আল্লাহর) কিতাবে (লাওহে মাহফূযে) লিপিবদ্ধ আছে।
(7) আর (হে নবী!) স্মরণ কর, যখন আমি নবীদের থেকে (রিসালত ও নবুওয়্যাতের) অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং তোমার থেকে, নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা থেকে। আর আমি তাদের কাছ থেকে (রিসালাতের বার্তা পৌঁছানোর দায়িত্ব পালনের) দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম।
(8) যাতে করে (হিসাব নিকাশের দিন ) তিনি সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আর তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন কাফিরদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(9) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহর নি‘আমতকে স্মরণ করো, যখন ((খন্দকের যুদ্ধের সময় মদীনাতে বহুজাতিক) সেনাবাহিনী তোমাদের কাছে (যুদ্ধ করতে) এসে গিয়েছিল, তখন আমি তাদের ওপর প্রবল বায়ু ও (ফিরিশতাদের) সেনাদল প্রেরণ করলাম, যা তোমরা দেখনি। আর তোমরা যা করো, আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। .
(10) যখন তারা (শত্রুরা তোমাদেরকে শেষ করে দেওয়ার জন্য ) তোমাদের ওপরের দিক থেকে এবং তোমাদের নিচের দিক থেকে তোমাদের কাছে এসেছিল (১) আর যখন চোখগুলো বাঁকা হয়ে পড়েছিলো এবং প্রাণ কণ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছেছিলো। আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা রকম ধারণা পোষণ করছিলে।(২)
(11) তখন (খন্দকের যুদ্ধের সময়) মু’মিনদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছিলো। আর তারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়েছিলো।
(12) আর স্মরণ করো, যখন মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরে ব্যাধি ছিল তারা বলছিলো: ‘আল্লাহ ও তার রাসূল আমাদেরকে (শত্রুর ওপর বিজয় ও সাহায্যের) যে ওয়াদা দিয়েছিলেন, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।‘
(13) আর যখন তাদের (মুনাফিকদের) একদল বলেছিলো: ‘হে ইয়াসরিববাসী, (খন্দকের) এখানে তোমাদের কোনো স্থান নেই, তাই তোমরা (বাড়ি) ফিরে যাও।’ আর তাদের একদল নবীর কাছে অনুমতি চেয়ে বলছিলো: ‘আমাদের বাড়ি-ঘর অরক্ষিত’; অথচ সেগুলো অরক্ষিত ছিল না। আসলে (শত্রু থেকে) পালিয়ে যাওয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
(14) আর যদি (সত্যি সত্যিই) মদীনার বিভিন্ন দিক থেকে তাদের ওপর শত্রুর প্রবেশ ঘটতো, তারপর তাদেরকে ফিতনা সৃষ্টির (কুফরী ও আল্লাহর সাথে শিরকের) আহ্বান জানানো হত, তবে তারা তাই করতো। এতে তারা কাল বিলম্ব করতো না।
(15) আর এরা পূর্বেই (ওহুদ যুদ্ধের সময়) আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না।(১) আর আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
(16) (হে রাসূল! তুমি মুনাফিকদেরকে) বলো: ‘যদি তোমরা মৃত্যু অথবা হত্যার ভয়ে পালাতে চাও তবে পালানো তোমাদের কোনো উপকারে আসবে না। আর সে ক্ষেত্রে তোমাদের সামান্যই ভোগ করতে দেয়া হবে।’
(17) (হে রাসূল! তাদেরকে) বলো: ‘আল্লাহ থেকে কে তোমাদেরকে রক্ষা করবে, যদি তিনি তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে চান? অথবা তিনি তোমাদের রহমত দান করতে ইচ্ছা করেন (কে তোমাদের ক্ষতি করবে ?)’। আর তারা (আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে) আল্লাহ ছাড়া তাদের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।
(18) আল্লাহ অবশ্যই জানেন তোমাদের মধ্যে কারা (রাসূলের সঙ্গ দিয়ে যুদ্ধ করা থেকে অন্যকে) বাধাদানকারী এবং কারা তাদের ভাইদেরকে বলে, ‘আমাদের কাছে আসো (তাঁর সাথে যুদ্ধ করো না)’ তারা খুব অল্পই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে-
(19) তোমাদের ব্যাপারে (সম্পদ ব্যয়, সাহায্য প্রদান ও বিজয় কামনায়) কৃপণতার কারণে। অতঃপর যখন (শত্রুর সাথে সাক্ষাৎকালে) ভীতি আসে তখন (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে দেখবে, তারা তোমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যে, তাদের চক্ষুগুলো মুমূর্ষু ব্যক্তির চোখের ন্যায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অতঃপর যখন ভয় চলে যায় তখন (গনীমতের) সম্পদের লোভে তোমাদেরকে তীক্ষ্ণ ভাষায় বিদ্ধ করে। এরা (প্রকৃতপক্ষে) ঈমান আনেনি। ফলে আল্লাহ তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করে দিয়েছেন। আর এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।
(20) তারা (মুনাফিকরা) মনে করে, (শত্রুপক্ষের) সম্মিলিত বাহিনী চলে যায়নি। তবে সম্মিলিত বাহিনী যদি (দ্বিতীয়বারের মতো) এসে পড়ে তখন তারা কামনা করবে যে, যদি তারা (মদীনার বাইরে) মরুবাসী বেদুইনদের সাথে অবস্থান করে তোমাদের (যুদ্ধের) খবর জিজ্ঞাসা করতে পারতো (তবে ভালোই হতো)! আর যদি এরা তোমাদের মাঝেই অবস্থান করত, তাহলে তারা অল্পই যুদ্ধ করতো।
(21) অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।
(22) আর মুমিনগণ যখন সম্মিলিত (শত্রু) বাহিনীকে দেখলো তখন তারা বললো: ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের যে ওয়াদা দিয়েছেন, এটি তো তাই।(১) আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছেন।’ এই (এ বাহিনী দেখে) তাদের ঈমান ও আনুগত্যই বৃদ্ধি পেলো।
(23) মু’মিনদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা (জিহাদে ধৈর্য ও অটল থাকার মাধ্যমে) আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার সত্যে বাস্তবায়ন করেছে। তাদের কেউ কেউ (শাহাদাত লাভ করে) তার দায়িত্ব পূর্ণ করেছে, আবার কেউ কেউ (শাহাদাতের) প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা (আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকারে) কোনো পরিবর্তনই করেনি।
(24) যাতে আল্লাহ সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতার জন্য পুরস্কৃত করতে পারেন এবং তিনি চাইলে মুনাফিকদের (কুফরীর ওপর মৃত্যু দিয়ে) শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদের (তাওবা কবুলের মাধ্যমে) ক্ষমা করে দিতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(25) আর আল্লাহ কাফিরদেরকে (মু’মিনদের মূলোৎপাটনের ব্যাপারে নিরাশ করে) তাদের যাবতীয় ক্রোধ ও আক্রোশসহ (খালি হাতে মদীনা থেকে) ফিরিয়ে দিলেন, তারা (যুদ্ধে) কোনো কল্যাণ লাভ করেনি। যুদ্ধে মু’মিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আর আল্লাহ প্রবল শক্তিমান, মহা পরাক্রমশালী।
(26) আর আহলে কিতাবদের (বানূ কুরাইযার ইয়াহূদীদের) মধ্যে যারা তাদেরকে (কাফিরদেরকে) সাহায্য করেছিলো, আল্লাহ তাদেরকে অবতরণ করালেন তাদের দুর্গসমূহ থেকে এবং তাদের অন্তরসমূহে ভীতির সঞ্চার করলেন। ফলে তোমরা হত্যা করছ একদলকে, আর বন্দী করছো অন্য দলকে।
(27) আর আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তরাধিকারী করলেন তাদের (পরিত্যক্ত) ভূমি, তাদের ঘর-বাড়ি ও তাদের ধন-সম্পদের এবং (খাইবারের) এমন ভূমির যাতে তোমরা পদার্পণও করনি। আল্লাহ সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।
(28) হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে বলো: ‘যদি তোমরা দুনিয়ার জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা করো তবে আসো, আমি তোমাদের ভোগ-বিলাসের ব্যবস্থা করে দেই এবং সুন্দর পন্থায় তোমাদের (ক্ষতি ও কষ্ট ব্যতিরেকে তালাক দিয়ে) বিদায় করে দেই।’
(29) ‘আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখিরাতের আবাস (জান্নাত) কামনা করো, তবে তোমাদের মধ্য থেকে সৎকর্মশীলদের জন্য আল্লাহ অবশ্যই মহা পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন।’
(30) হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমাদের মধ্যে যে কেউ প্রকাশ্য অশ্লীল কাজ করবে, (তার স্তর ও নবীর মর্যাদা রক্ষার্থে কিয়ামত দিনে) তার জন্য শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে। আর এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।
(31) (হে নবী-পত্নিগণ!) তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে এবং সৎকাজ করবে আমি তাকে (অন্য নারীদের তুলনায়) দু’বার তার প্রতিদান দিবো এবং তার জন্য (পরকালে) প্রস্তুত রেখেছি সম্মানজনক রিযক (জান্নাত)।
(32) হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা (সম্মান ও মর্যাদায়) অন্য কোনো নারীর মতো নও। যদি তোমরা আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করে) ভয় করো, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে (মুনাফিকী ও হারাম কাজের) ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হবে। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে।
(33) আর (হে নবীর স্ত্রীগণ!) তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করো এবং প্রাক-জাহিলী যুগের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়িম করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।
(34) আর তোমাদের ঘরে আল্লাহর যে, আয়াতসমূহ ও হিকমত (রাসূলের সুন্নাহ) পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রেখো। নিশ্চয় আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।
(35) নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মু’মিন পুরুষ ও নারী, (আল্লাহকে মান্যকারী) অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়াম পালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ (কিয়ামতের দিন) মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান (জান্নাত) প্রস্তুত রেখেছেন।
(36) আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো (বিষয়ে) নির্দেশ দিলে কোনো মু’মিন পুরুষ ও নারীর জন্য সে বিষয়ে কোন (ভিন্ন) সিদ্ধান্তের এখতিয়ার (অবকাশ) থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলো, সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।
(37) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো, আল্লাহ যার ওপর নি‘আমত দিয়েছিলেন এবং তুমিও যার প্রতি অনুগ্রহ করেছিলে(১), তুমি যখন তাকে বলেছিলে ‘তুমি তোমার স্ত্রীকে(২) (তালাক না দিয়ে) নিজের কাছে রেখে দাও এবং আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় করো ‘ আর তুমি অন্তরে যা গোপন(৩) রেখেছো আল্লাহ তা প্রকাশকারী এবং তুমি মানুষকে ভয় করছো; অথচ আল্লাহই অধিকতর হকদার যে, তুমি তাকে ভয় করবে। অতঃপর যায়দ যখন (তালাক দিয়ে) তার স্ত্রীর সাথে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করলো তখন আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম, যাতে পালক পুত্রদের স্ত্রীদের (বিয়ে করার) ব্যাপারে মু’মিনদের কোনো অসুবিধা না থাকে; যখন তারা তাদের স্ত্রীদের সাথে (তালাকের মাধ্যমে) বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়ে থাকে।
(38) নবীর কোনো অসুবিধা হবে না, আল্লাহ তার জন্য যা (যেসব হালালকৃত বিষয়) নির্ধারণ করেছেন তা করলে(১); পূর্বে যেসব নবী অতিবাহিত হয়েছে তাদের ব্যাপারে এটিই ছিল আল্লাহর বিধান। আর আল্লাহর বিধান সুনির্ধারিত, অবশ্যম্ভাবী।
(39) যারা আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দেয় ও তাঁকে ভয় করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না(১), আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আল্লাহই যথেষ্ট।
(40) মুহাম্মাদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নয়; তবে তিনি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।
(41) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।
(42) আর সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো।
(43) তিনিই তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফিরিশতারা তোমাদের জন্য দু‘আ করে, যেন তিনি তোমাদেরকে (কুফরীর) অন্ধকার থেকে (ইসলামের) আলোর দিকে বের করে আনেন। আর তিনি মু’মিনদের প্রতি অতি দয়ালু।
(44) (পরকালে) যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সম্মানজনক প্রতিদান (জান্নাত)।
(45) হে নবী! আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, (জান্নাতের) সুসংবাদদাতা ও (জাহান্নাম থেকে) সতর্ককারীরূপে।
(46) আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী ও (হিদায়াতকামীদের জন্যে) দীপ্তমান প্রদীপরূপে।
(47) আর তুমি মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে মহাঅনুগ্রহ।(১)
(48) আর (হে রাসূল!) তুমি কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না এবং তাদের নির্যাতন উপেক্ষা করো। আর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করো; কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
(49) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! যখন তোমরা মু’মিন নারীদেরকে বিবাহ করবে অতঃপর তাদেরকে স্পর্শ করার (তাদের সাথে দৈহিকভাবে মিলিত হওয়ার)পূর্বেই (যদি) তালাক দিয়ে দাও, তবে তোমাদের জন্য তাদের কোনো ইদ্দত নেই, যা তোমরা গণনা করবে। সুতরাং (সান্ত্বনাস্বরূপ) তোমরা তাদেরকে কিছু উপহার সামগ্রী প্রদান করো এবং সুন্দরভাবে তাদেরকে বিদায় দাও।
(50) হে নবী! আমি তোমার জন্য তোমার স্ত্রীদেরকে হালাল করেছি যাদেরকে তুমি মোহরানা দিয়েছো, এবং বৈধ করেছি ফায় (যুদ্ধ ছাড়াই প্রাপ্ত শত্রুদের সম্পদ) হিসেবে আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন, তাদের মধ্য থেকে যারা তোমার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে। আর (বিয়ের জন্য বৈধ করেছি) তোমার চাচার কন্যা, ফুফুর কন্যা, মামার কন্যা, খালার কন্যাকে, যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে, আর কোনো মু’মিনাহ নারী যদি নবীর জন্য নিজেকে হেবা করে, নবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সেও তার জন্য বৈধ। এটা বিশেষভাবে তোমার জন্য, অন্য মু’মিনদের জন্য নয়। আমি মু’মিনদের ওপর তাদের স্ত্রীদের ও তাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে যে বিধি বিধান নির্ধারণ করেছি, তা আমি নিশ্চয় জানি; (কিন্তু তোমার জন্যে এ সুবিধা আমি এ জন্যেই দিয়েছি) যাতে তোমার কোনো অসুবিধা না হয়। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(51) (হে নবী!) স্ত্রীদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তার (রাত্রি যাপনের) পালা তুমি পিছিয়ে দিতে পারো, যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পারো; যাকে তুমি সরিয়ে রেখেছ তাকে যদি কামনা করো তাতে তোমার কোনো অপরাধ নেই; এ (সুযোগ ও সহজতার) বিধান এ জন্য যে, তোমার স্ত্রীদের চক্ষু শীতল হবে, তারা কষ্ট পাবে না এবং তুমি তাদের যা (যে অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা) দিয়েছো, তাতে তারা সবাই সন্তুষ্ট হবে। আর তোমাদের অন্তরে যা আছে(১) আল্লাহ তা জানেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, পরম সহনশীল।
(52) (হে রাসূল!) এরপর তোমার জন্য (এদের অতিরিক্ত) অন্য স্ত্রী গ্রহণ হালাল নয় এবং তোমার স্ত্রীদের (তালাক দিয়ে তাদের) পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয়; যদিও অন্যদের সৌন্দর্য তোমাকে বিমোহিত করে; তবে তোমার মালিকানাধীন দাসী ছাড়া। আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষণকারী।
(53) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নবীর ঘরসমূহে প্রবেশ করো না; অবশ্য যদি তোমাদেরকে খাবারের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে (প্রবেশ কর), খাবারের প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করে।(১) আর যখন তোমাদেরকে ডাকা হবে তখন তোমরা প্রবেশ করো এবং খাবার শেষ হলে (তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে) চলে যাও। আর কথাবার্তায় (গল্প গুজবে) লিপ্ত হয়ো না; কারণ তা নবীকে কষ্ট দেয়। সে তোমাদের (বেরিয়ে যেতে বলার) বিষয়ে সংকোচবোধ করে; কিন্তু আল্লাহ সত্য প্রকাশে সংকোচ বোধ করেন না। আর যখন নবীর স্ত্রীদের কাছে তোমরা কোনো কিছু চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র। আর (কথা বলার উদ্দেশ্যে অপেক্ষা করে) আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তার (মৃত্যুর) পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য সংগত নয়। নিশ্চয় এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর অপরাধ।
(54) যদি তোমরা কোনো কিছু প্রকাশ করো কিংবা গোপন করো তবে (তবে জেনে রাখ) নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।
(55) নবীর স্ত্রীদের জন্য তাদের পিতাদের, তাদের পুত্রদের, তাদের ভাইদের, তাদের ভাইয়ের ছেলেদের, তাদের বোনের ছেলেদের, তাদের নারীদের ও তাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের বেলায় (হিজাব না করায়) কোনো অপরাধ নেই। আর (হে মু’মিনাহ নারীগণ!) তোমরা আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করে) ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ সকল কিছুর প্রত্যক্ষদর্শী।
(56) নিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফিরিশতাদের কাছে) নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণ নবীর জন্য দু‘আ করেন। হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরাও নবীর উপর দরূদ (১) পাঠ করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম(২) জানাও।
(57) নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লা‘নত করেন এবং (পরকালে) তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন (জাহান্নামের) অপমানজনক শাস্তি।
(58) আর যারা মু’মিন পুরুষ ও মু’মিনাহ নারীদেরকে তাদের কৃত কোনো অন্যায় ছাড়াই (অকারণে) কষ্ট দেয়, নিশ্চয় তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করলো।
(59) হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মু’মিনদের নারীদেরকে বলো: ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের (চাদরের) কিছু অংশ নিজেদের (শরীরের) ওপর ঝুলিয়ে দেয়(১), (এবং এর দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত রাখে) এতে তাদেরকে (স্বাধীন নারী বলে) চেনা সহজতর হবে; ফলে তারা (পরাধীন নারীর মতো) কষ্টের সম্মুখীন হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(60) যদি মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা আর (মুসলিমদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যে) শহরে মিথ্যা সংবাদ প্রচারকারীরা বিরত না হয়, তবে আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে তোমাকে ক্ষমতাবান করে দিবো। অতঃপর তারা এ নগরীতে তোমার প্রতিবেশী হয়ে অল্প সময়ই থাকবে,
(61) অভিশপ্ত অবস্থায়। (মুনাফিকী ও ফ্যাসাদ সৃষ্টির কারণে) তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, পাকড়াও করা হবে এবং নির্মমভাবে হত্যা করা হবে।
(62) ইতোপূর্বে যারা অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটাই(১) ছিল আল্লাহর চিরন্তন নিয়ম। আর তুমি আল্লাহর চিরাচরিত নিয়মের কখনোই কোনো পরিবর্তন পাবে না।
(63) (হে রাসূল!) লোকেরা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বলো, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে। আর তুমি এ বিষয়টি কী করে জানবে, হয়ত কিয়ামত খুব শীঘ্রই সংঘটিত হবে!
(64) নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে লা‘নত করেছেন এবং তাদের জন্য জ্বলন্ত আগুন প্রস্তুত রেখেছেন।
(65) সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। তারা না পাবে কোনো অভিভাবক এবং না কোনো সাহায্যকারী।
(66) কিয়ামতের দিন তাদের চেহারাগুলো (জাহান্নামের) আগুনে উপুড় করে দেয়া হবে, তারা বলবে: ‘হায়, আমরা যদি (দুনিয়াতে) আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম’!
(67) এসব লোকেরা আরো বলবে: ‘হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের আনুগত্য করেছিলাম, তখন তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলো।’
(68) ‘হে আমাদের রব! আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদেরকে বেশি করে লা‘নত করুন।’
(69) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা মূসাকে কষ্ট দিয়েছিল। অতঃপর তারা যা বলেছিলো, তা থেকে আল্লাহ তাকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করেছেন।(১) আর সে ছিলো আল্লাহর নিকট মর্যাদাবান।
(70) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় করো এবং সত্য-সঠিক কথা বলো।
(71) তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে সংশোধন করে দিবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহাসাফল্য(১) অর্জন করলো।
(72) নিশ্চয় আমি আসমানসমূহ, জমিন ও পর্বতমালার প্রতি এ আমানত(১) পেশ করেছিলাম। অতঃপর তারা তা বহন করতে অস্বীকার করল এবং এতে ভীত হলো। আর মানুষ তা বহন করল। নিশ্চয় সে ছিলো অতিশয় যালিম, একান্তই অজ্ঞ।
(73) যাতে আল্লাহ (এ আমানতের দায়িত্ব অস্বীকারকারী) মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীদের শাস্তি দেন। আর (আমানতের দায়িত্ব পালনকারী) মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীদের ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।