60 - Al-Mumtahana ()

|

(1) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা প্রেরণ করছ; অথচ যে সত্য (দ্বীন) তোমাদের কাছে এসেছে তারা তা অস্বীকার করছে এবং রাসূলকে ও তোমাদেরকে এ অপরাধে (মক্কা থেকে) বহিষ্কার করেছে যে, তোমরা তোমাদের রব আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছো। তোমরা যদি আমার পথে জিহাদে ও আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্যে বের হও, তবে কেন তোমরা তাদের সাথে গোপনে বন্ধুত্ব করছ? অথচ তোমরা যা গোপন করো এবং যা প্রকাশ করো তা আমি (আল্লাহ) জানি। তোমাদের মধ্যে যে এমন করবে, সে সরল পথ হতে বিচ্যুত হবে।(১)

(2) (অথচ) তারা যদি তোমাদেরকে কাবু করতে পারে, তবে তারা তোমাদের শত্রুতে পরিণত হবে এবং হাত ও জবান দ্বারা তোমাদের ক্ষতি সাধন করবে। তারা কামনা করে যদি তোমরা কুফরী করতে!

(3) কিয়ামত দিবসে তোমাদের আত্মীয়তা ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের কোন উপকার করতে পারবে না। আল্লাহ তোমাদের মাঝে ফায়সালা করে দিবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।

(4) (হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ!) তোমাদের জন্য অবশ্যই ইবরাহীম ও তার সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তারা যখন স্বীয় (কাফির) সম্প্রদায়কে বলছিল: ‘তোমাদের সাথে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যা কিছুর উপাসনা করো, তা হতে আমরা সম্পর্কমুক্ত। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি এবং তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শক্ৰতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো।’ তবে স্বীয় পিতার প্রতি ইবরাহীমের উক্তিটি ব্যতিক্রম: ‘আমি অবশ্যই তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবো, আর তোমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আমি কোন অধিকার রাখি না।’(১) (ইবরাহীম ও তার অনুসারীগণ বলেছিল,) হে আমাদের রব, আমরা আপনার ওপরই তাওয়াক্কুল করি, আপনারই অভিমুখী হই আর (কিয়ামত দিবসে) প্রত্যাবর্তন তো আপনারই কাছে।

(5) ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে কাফিরদের উৎপীড়নের পাত্র বানাবেন না। হে আমাদের রব, আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’

(6) নিশ্চয় তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, যারা আল্লাহর (ক্ষমা) ও শেষ দিবসের (কল্যাণ ও মুক্তির) প্রত্যাশা করে। আর যে ব্যক্তি (এ উত্তম আদর্শ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত।

(7) যাদের সাথে তোমরা শত্রুতা করছো, আশা করা যায়, আল্লাহ (তোমাদের শত্রুদেরকে ইসলামে দীক্ষিত করার মাধ্যমে) তোমাদের ও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দিবেন।(১) আর আল্লাহ সর্ব শক্তিমান এবং আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(8) দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করছেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন।

(9) আল্লাহ কেবল তাদের সাথেই বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন, যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ও তোমাদেরকে বের করে দেয়ার ব্যাপারে একে অন্যকে সহযোগিতা করেছে। এরপরও (তোমাদের মধ্যে) যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তারাই তো যালিম।

(10) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের কাছে মু’মিন নারীরা (কুফরীর দেশ থেকে) হিজরত করে আসলে তোমরা তাদের (ঈমানের সত্যতা) পরীক্ষা করে দেখো। আল্লাহ তো তাদের ঈমান সম্পর্কে অধিক অবগত আছেন। অতঃপর যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা সত্তিই মু’মিন নারী, তাহলে তাদেরকে আর কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিও না। কারণ মু’মিন নারীগণ কাফির স্বামীদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফিররাও তাদের জন্য বৈধ নয়। কাফির স্বামীরা (মোহর হিসেবে) যা ব্যয় করেছে, তা তাদেরকে ফিরিয়ে দাও। তোমরা তাদেরকে বিয়ে করলে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না, যদি তোমরা তাদেরকে তাদের প্রাপ্য মোহর প্রদান করো। আর তোমরা কাফির নারীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় রেখো না, তোমরা (ধর্মচ্যুত স্ত্রীদেরকে মোহর হিসেবে) যা ব্যয় করেছ, তা তোমরা (তাদের কাফির স্বামীদের কাছে) ফেরত চাও। আর তারা (ইসলামে দীক্ষিতা স্ত্রীদের জন্যে) যা ব্যয় করেছে, তা যেন তারা তোমাদের কাছে চেয়ে নেয়। এটা (উপরিউক্ত মোহর আদান-প্রদান হলো) আল্লাহর বিধান। তিনি তোমাদের মাঝে ফয়সালা করেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

(11) আর যদি তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে কেউ হাতছাড়া হয়ে কাফিরদের নিকট চলে যায়, অতঃপর যদি তোমরা যুদ্ধে জয়ী হয়ে গনীমত লাভ করো, তাহলে যাদের স্ত্রীরা চলে গেছে, তাদেরকে তারা যা (যে মোহরানা) ব্যয় করেছে, তার সমপরিমাণ (গনীমতের মাল থেকে) প্রদান করো। আর তোমরা আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় করো, যার প্রতি তোমরা বিশ্বাসী।

(12) হে নবী! যখন মু’মিন নারীরা তোমার কাছে এসে এই মর্মে বায়‘আত করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, তারা জেনে শুনে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকাজে তারা তোমার অবাধ্য হবে না। তখন তুমি তাদের বায়‘আত গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(13) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা সেই সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব করো না, যাদের প্রতি আল্লাহ রাগান্বিত হয়েছেন। তারা তো আখিরাত সম্পর্কে নিরাশ হয়ে পড়েছে, যেমনিভাবে কাফিররা কবরবাসীদের (তাদের কাছে ফেরত আসার) ব্যাপারে নিরাশ হয়েছে।(১)