(1) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দা (মুহাম্মাদ) এর ওপর এ কিতাব (আলকুরআন) নাযিল করেছেন এবং তাতে কোন ধরনের বক্রতা রাখেননি।
(2) সরল-সঠিকরূপে, যাতে সে (মুহাম্মাদ) আল্লাহর পক্ষ থেকে (কাফিরদেরকে) কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করে এবং সেসব মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেয়, যারা সৎকর্ম করে, নিশ্চয় তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান।
(3) তারা তাতে (এ প্রতিদানের মাঝে) অনন্তকাল অবস্থান করবে।
(4) আর (এর মাধ্যমে) তাদেরকে(১) যেন সতর্ক করে , যারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।
(5) এ ব্যাপারে(১) তাদের কোনো জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও ছিল না। বড় মারাত্মক কথা, যা তাদের মুখ থেকে বের হয়! মিথ্যা ছাড়া তারা কিছুই বলে না।
(6) সম্ভবত (হে রাসূল!) তুমি তাদের পেছনে পেছনে ঘুরে দুঃখে নিজেকে ধ্বংস করে দিবে, যদি তারা এই বাণীর (আলকুরআনের) প্রতি ঈমান না আনে। (তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আসা তোমার কাজ নয়, বরং তাদের নিকট দীনের বাণী পৌঁছে দেয়াই তোমার কাজ। )
(7) নিশ্চয় আমি জমিনের ওপর যা (যত মাখলুকাত) সৃষ্টি করেছি, তা আমি (দুনিয়ার) সৌন্দর্যের জন্য করেছি, যাতে করে আমি তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি, কে কর্মে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ।
(8) আর তার (জমিনের) ওপর যা আছে, তা অবশ্যই আমি উদ্ভিদশূন্য শুষ্ক ময়দানে পরিণত করবো।
(9) (হে রাসূল!) তুমি কি মনে করো যে, গুহা ও রাকীমের(১) অধিবাসীরা ছিল আমার নিদর্শনসমূহের মধ্যকার এক বিস্ময়?(২)
(10) যখন যুবকেরা গুহায় আশ্রয় নিল, তখন (তারা তাদের রবের কাছে দু‘আ করে) বললো: ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কর্মকাণ্ড(১) সঠিক করে দিন।’
(11) অতঃপর আমি (তাদের কান বন্ধ করে দিয়ে) তাদেরকে গুহায় কয়েক বছর ঘুমন্ত অবস্থায় রাখলাম।
(12) তারপর (তাদের দীর্ঘ ঘুমের পর) আমি তাদেরকে জাগিয়ে তুললাম, যাতে আমি জানতে পারি(১) যে, কতটুকু সময় তারা (গুহায়) অবস্থান করেছিল, দু’দলের মধ্যে কে তা অধিক সঠিকভাবে নির্ণয়কারী?
(13) (হে রাসূল!) আমিই তোমাকে তাদের সংবাদ সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। নিশ্চয় তারা কয়েকজন যুবক, যারা তাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদের হিদায়াত (এবং সত্যের ওপর অবিচল থাকার শক্তি) আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
(14) আর আমি তাদের অন্তরগুলোকে দৃঢ় করেছিলাম, যখন তারা (কাফীর বাদশাহর সামনে এক আল্লাহর ওপর তাদের ঈমানকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়ার জন্য) উঠে দাঁড়িয়েছিল, তখন তারা বলেছিল: ‘আমাদের রব আসমানসমূহ ও জমিনের রব। তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহকে আমরা কখনো ডাকবো না। (যদি ডাকি) তাহলে নিশ্চয় আমরা (সত্য বহির্ভূত) গর্হিত কথা বলবো।’
(15) ( তারপর তারা নিজেরা পরস্পরকে বলল ,) ‘এরা আমাদের জাতি, তারা আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য উপাস্য গ্রহণ করেছে। (তারা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকে ) কেন তারা তাদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না? অতএব যে আল্লাহর ব্যাপারে (অংশীদার সাব্যস্ত করে) মিথ্যা রটায়, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে?
(16) আর (তারা পরস্পরকে বললো:) যখন তোমরা নিজেদের সম্প্রদায় থেকে আলাদা হয়েছ এবং আল্লাহ ছাড়া যাদের তারা উপাসনা করে তাদের থেকেও, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করো। তাহলে তোমাদের রব তোমাদের জন্য তাঁর রহমত উন্মুক্ত করে দিবেন এবং তোমাদের জন্য তোমাদের জীবনোপকরণের বিষয়টি সহজ করে দিবেন।
(17) (হে রাসূল ! ) তুমি দেখতে পেতে, সূর্য উদিত হলে তাদের গুহার ডানে তা হেলে পড়ছে, আর অস্ত গেলে তাদেরকে বামে রেখে কেটে যাচ্ছে, তখন তারা ছিল গুহার প্রশস্ত চত্বরে।(১) এগুলো আল্লাহর আয়াতসমূহের মধ্যে অন্যতম।(২) আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, সে হিদায়াতপ্রাপ্ত। আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি তার জন্য পথনির্দেশকারী কোনো অভিভাবক পাবে না।
(18) তুমি (তাদের দিকে তাকালে) তাদেরকে মনে করতে জাগ্রত; অথচ তারা ছিল ঘুমন্ত। আমি তাদেরকে (ঘুমের মাঝে) কখনো ডানে আবার কখনো বাঁয়ে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম এবং তাদের কুকুরটি গুহার প্রবেশ পথে তার সামনের পা দু’টো মেলে আছে। যদি তুমি তাদেরকে উঁকি মেরে দেখতে, তবে নিশ্চয় (ভয়ে) তাদের থেকে পেছনে ফিরে পালিয়ে যেতে এবং অবশ্যই তোমার হৃদয় আতঙ্কে ভরে যেতো।
(19) আর (ইতঃপূর্বে তাদের সাথে যেভাবে আমার শক্তিমত্তার আশ্চর্য আচরণ দেখিয়েছি) এভাবেই আমি তাদেরকে (দীর্ঘ ঘুমের পরে) জাগিয়ে তুলেছিলাম, যাতে তারা (ঘুমন্ত অবস্থার সময়ের ব্যাপারে) একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বললো: ‘তোমরা কত সময় (ঘুমের মধ্যে) অবস্থান করলে?’ তাদের কেউ কেউ উত্তরে বললো: ‘আমরা একদিন কিংবা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি।’ তাদের কেউ কেউ বললো: ‘তোমরা কত সময় অবস্থান করেছ, তা তোমাদের রবই ভালো জানেন। সুতরাং তোমরা তোমাদের কাউকে তোমাদের এই রৌপ্যমুদ্রাগুলো দিয়ে শহরে পাঠাও। অতঃপর সে যেন দেখে কোন খাদ্য উত্তম, তারপর তা থেকে যেন কিছু খাদ্য তোমাদের জন্য নিয়ে আসে। আর সে অবশ্যই যেন (শহরে প্রবেশ করা, বের হওয়া ও লেনদেনের সময়) বিচক্ষণতার সাথে কাজ করে এবং কাউকে যেন তোমাদের (অবস্থানের) ব্যাপারে না জানায়।’
(20) ‘নিশ্চয় তারা যদি তোমাদের অবস্থান সম্পর্কে জেনে যায়, তাহলে তারা তোমাদেরকে পাথর মেরে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে তাদের (মিথ্যা) ধর্মে ফিরিয়ে নিবে। আর তখন তোমরা (দুনিয়াতে ও আখিরাতে) কোনোভাবেই সফল হবে না।’(১)
(21) আর (যেমনিভাবে আমি তাদের সাথে কিছু আশ্চর্য কাণ্ড ঘটিয়েছি) এমনিভাবে আমি তাদের ব্যাপারে (শহরবাসী লোকদেরকে) জানিয়ে দিলাম, যাতে তারা জানতে পারে যে, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কিয়ামতের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। যখন তারা নিজেদের মধ্যে তাদের বিষয়টি (গুহাবাসীদের ব্যাপারে করণীয় বিষয়) নিয়ে বিতর্ক করছিল, তখন তাদের একদল বললো: ‘তাদের ওপর তোমরা একটি ভবন (স্মৃতি সৌধ) নির্মাণ করো।’ তাদের রবই তাদের ব্যাপারে অধিক জ্ঞাত। (গুহাবাসীদের ব্যাপারে) নিজেদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রাধান্য লাভ করেছিল, তারা বললো: ‘(তাদের সম্মানার্থে ও জায়গাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য) আমরা অবশ্যই তাদের ওপর একটি মসজিদ নির্মাণ করবো।’
(22) (গুহাবাসী যুবকদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক করতে গিয়ে) অচিরেই কিছু সংখ্যক লোক বলবে: ‘তারা ছিল তিন জন, চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর।’ আর কেউ কেউ বলবে: ‘তারা ছিল পাঁচজন, ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর।’ (এরা উভয় দল যা বললো) এসবই অজানা বিষয়ে অনুমান করে বলেছে। আর তাদের কেউ কেউ বলবে: ‘তারা ছিল সাতজন; অষ্টম হলো তাদের কুকুর।’ (হে রাসূল! তুমি এদেরকে) বলো: ‘আমার রবই তাদের সংখ্যা সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত।’ কম সংখ্যক লোকই তাদের (সঠিক সংখ্যা) সম্পর্কে জানে।(১) সুতরাং সাধারণ আলোচনা ছাড়া তুমি তাদের ব্যাপারে বিতর্ক করো না। আর তাদের ব্যাপারে (বিস্তারিত জানতে) এদের কাউকেও জিজ্ঞেস করো না।(২)
(23) আর (হে রাসূল!) কোনো কিছুর ব্যাপারে তুমি মোটেই বলবে না যে, ‘নিশ্চয় আমি তা আগামীকাল করবো।’(১)
(24) তবে ‘আল্লাহ যদি চান’। আর যখন ভুলে যাও, তখন তুমি তোমার রবকে স্মরণ করো এবং বলো: ‘আশা করি, আল্লাহ আমাকে এ কাজের চেয়েও সত্যের কাছাকাছি পথ নির্দেশ (ও তাওফীক দান) করবেন।’
(25) আর তারা তাদের গুহায় অবস্থান করেছে তিনশ’ বছর এবং এর সাথে অতিরিক্ত হয়েছিল নয় বছর।
(26) (হে রাসূল!) বলো: ‘তারা কত কাল অবস্থান করেছিল, সে ব্যাপারে আল্লাহই অধিক জানেন।’ আসমানসমূহ ও জমিনের গায়িবের জ্ঞান একমাত্র তাঁরই। তিনি কতই না উত্তম দ্রষ্টা ও উত্তম শ্রোতা! তিনি ছাড়া তাদের কোনো অভিভাবক নেই। তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে কাউকে শরীক করেন না।
(27) আর (হে রাসূল!) তোমার রবের কিতাব (আলকুরআন) থেকে তোমার নিকট যে ওয়াহী পাঠানো হয়, তুমি তা তিলাওয়াত করে শুনাও। তাঁর বাণীসমূহের কোনো পরিবর্তনকারী নেই এবং তিনি ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল তুমি পাবে না।
(28) আর (হে রাসূল!) তুমি নিজেকে (ধৈর্যের সাথে) অবিচলভাবে সম্পৃক্ত রাখো তাদের সাথে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে, তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং তুমি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তোমার দু’চোখ যেন তাদের থেকে অন্যত্র ফিরে না যায়।(১) আর ওই ব্যক্তির আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার যিকর থেকে গাফিল করে দিয়েছি এবং যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে এবং যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে।
(29) আর (হে রাসূল! তুমি আল্লাহর স্মরণে অমনোযোগী লোকদেরকে) বলো: ‘সত্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এসে গেছে। সুতরাং যে ইচ্ছা করে, সে যেন ঈমান আনে এবং যে ইচ্ছা করে, সে যেন কুফরী করে। (তবে জেনে রেখো!) নিশ্চয় আমি যালিমদের জন্য প্রস্তুত করেছি আগুন, যার (চার পাশের) প্রাচীরগুলো তাদেরকে বেষ্টন করে রেখেছে। (পিপাসায় কাতর হয়ে সেখানে) তারা পানি চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানি, যা তাদের চেহারাগুলো ঝলসে দিবে; কী নিকৃষ্ট পানীয়! আর কী মন্দ বিশ্রামস্থল!
(30) নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, (তারাই সাওয়াব লাভে ধন্য হবে,) নিশ্চয় আমি উত্তম আমলকারীদের কর্মফল বিনষ্ট করি না।
(31) এরাই তারা, যাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণের চুড়ি দিয়ে এবং তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু রেশমের সবুজ পোশাক। তারা সেখানে থাকবে হেলান দিয়ে সুসজ্জিত আসনে। কতই না উৎকৃষ্ট প্রতিদান! আর কতই না সুন্দর বিশ্রামস্থল!
(32) আর (হে রাসূল!) তুমি তাদের কাছে দুই ব্যক্তির দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করো, তাদের একজনকে আমি দু’টি আঙ্গুরের বাগান দিয়েছি এবং উভয় বাগানকে পরিবেষ্টিত করেছিলাম খেজুর গাছ দ্বারা এবং উভয়ের মাঝখানে রেখেছি শস্যক্ষেত।
(33) উভয় বাগান (ফসল, আঙুর ও খেজুর জাতীয় প্রচুর) ফল দিয়েছে, তাতে কিছুই ত্রুটি করেনি এবং আমি উভয়ের মাঝ দিয়ে নদী প্রবাহিত করেছি।
(34) আর এ বাগানদ্বয়ের মালিকের ছিল বিপুল (সম্পদ ও) ফল-ফলাদি। তাই সে তার (মু’মিন) সঙ্গীকে (অহংকারবশত) কথায় কথায় বললো: ‘সম্পদে আমি তোমার চেয়ে অধিক এবং জনবলেও অনেক শক্তিশালী।’
(35) আর সে (কাফির ব্যক্তি মু’মিন বন্ধুকে সাথে নিয়ে) তার বাগানে প্রবেশ করলো, নিজের প্রতি যুলমরত অবস্থায়। সে (অহংকার করে) বললো: ‘আমি মনে করি না যে, এটি কখনো ধ্বংস হবে।’
(36) ‘আর আমি মনে করি না যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর যদিও (পুনরুত্থিত করে) আমাকে আমার রবের কাছে ফিরিয়ে নেয়া হয়, তবে নিশ্চয় আমি এর (এই বাগানের) চেয়েও উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল পাব।’
(37) তার (মু’মিন) সাথী কথোপকথন করতে গিয়ে তাকে বললো: ‘তুমি কি সেই সত্তার সাথে কুফরী করলে যিনি তোমাকে(১) সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর ‘বীর্য’ থেকে, তারপর তোমাকে অবয়ব দিয়েছেন পূর্ণাঙ্গ পুরুষের?’(২)
(38) ‘কিন্তু তিনিই আল্লাহ, আমার রব। আর আমি আমার রবের সাথে কাউকে শরীক করি না।’
(39) ‘আর যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন কেন তুমি এ কথা বললে না যে, ‘মাশাআল্লাহ’! (আল্লাহ যা চেয়েছেনو তাই হয়েছে) আল্লাহর তৌফিক ছাড়া কোনো কিছু করার শক্তি নেই। যদিও তুমি দেখো যে, আমি সম্পদে ও সন্তানে তোমার চেয়ে কম।
(40) তবে আমি আশা করছি যে, ‘আমার রব আমাকে তোমার বাগানের চেয়ে উত্তম (কিছু) দান করবেন এবং তোমার বাগানের ওপর আসমান থেকে বজ্র পাঠাবেন। ফলে তা অনুর্বর উদ্ভিদশূন্য জমিনে পরিণত হবে।’
(41) ‘কিংবা তার (তোমার বাগানের) পানি জমিনের গভীরে চলে যাবে, ফলে তা তুমি কোনোভাবেই খুঁজে পাবে না।’(১)
(42) আর বিপর্যয় তার ফল-ফলাদিকে পরিবেষ্টন করে নিলো। ফলে তাতে সে যা ব্যয় করেছিল, তার জন্য (আফসোস ও লজ্জায় নিজের) হাত কচলাতে লাগল এবং সেটি মাচানসহ ভূমিসাৎ হয়ে গেল । আর সে বলছিল: ‘হায় আফসোস! আমি যদি আমার রবের সাথে কাউকে শরীক না করতাম!’
(43) আর আল্লাহ ছাড়া তার (এ কাফিরের) এমন কোনো লোকবলও ছিল না, যারা (আপতিত শাস্তি থেকে) তাকে সাহায্য করবে এবং সে (আল্লাহর ধ্বংস থেকে রক্ষায়) সাহায্যপ্রাপ্তও ছিল না।
(44) এখানে অভিভাবকত্ব আল্লাহর, যিনি সত্য। তিনিই পুরস্কার প্রদানে সর্বোত্তম এবং পরিণাম নির্ধারণে শ্রেষ্ঠ।
(45) আর (হে রাসূল!) তুমি তাদের জন্য(১) দুনিয়ার জীবনের দৃষ্টান্ত পেশ করো যে, (ধ্বংস ও দ্রুত নিঃশেষ হওয়ার ক্ষেত্রে) দুনিয়ার জীবন হলো (বৃষ্টির) পানির মতো, যা আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করেছি। অতঃপর তা থেকে ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদ্গত হয়। তারপর সেগুলো শুকিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। ফলে বাতাস সেগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।
(46) ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা। আর স্থায়ী সৎকাজ(১) তোমার রবের নিকট প্রতিদানে উত্তম এবং প্রত্যাশাতেও উত্তম।
(47) আর (হে রাসূল! স্মরণ করো সে দিনের কথা) যেদিন আমি পাহাড়গুলোকে চলমান করবো এবং জমিনকে তুমি দেখতে পাবে দৃশ্যমান।(১) আর আমি তাদেরকে (সকল সৃষ্টিকে হাশরের ময়দানে) একত্রিত করবো। অতঃপর তাদের কাউকেই (পুনরুত্থান না করে) ছাড়বো না।
(48) আর সেদিন তাদেরকে তোমার রবের সামনে সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত করা হবে। (আল্লাহ বলবেন:) ‘তোমরা আমার কাছে তেমনভাবে(১) এসেছো, যেমন আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম; বরং তোমরা তো ভেবেছিলে, আমি তোমাদের জন্য কোনো প্রতিশ্রুত সময় (পুনরুত্থান) নির্ধারণ করে রাখিনি।’
(49) আর (সেদিন) আমলনামা সামনে রাখা হবে। (হে রাসূল!) তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখতে পাবে ভীত আতঙ্কগ্রস্ত, তাতে যা (যে কুফরী ও পাপরাশি) রয়েছে তার কারণে। আর তারা (আফসোস করে) বলবে: ‘হায় আমাদের দুর্ভাগ্য! কী হলো এ কিতাবের! তা ছোট-বড় কোন কিছুই বাদ না দিয়ে (গুণে গুণে) সংরক্ষণ করে রেখেছে।’ আর তারা (দুনিয়ার জীবনে) যা করেছে, তা সামনে উপস্থিত পাবে। আর তোমার রব কারো প্রতি যুলম করেন না।(১
(50) আর (হে রাসূল! স্মরণ করো সেদিনের কথা) যখন আমি ফিরিশতাদের বলেছিলাম, তোমরা আদমকে (সম্মানার্থে) সাজদা করো। অতঃপর তারা সাজদা করলো, ইবলীস ছাড়া। সে ছিল জিনদের একজন। সে তার রবের নির্দেশ অমান্য করলো। তোমরা কি তাকে ও তার বংশকে আমার পরিবর্তে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, অথচ তারা তোমাদের শত্রু? যালিমদের জন্য কী নিকৃষ্ট বিনিময়!(১)
(51) আমি তাদেরকে (তোমাদের ভ্রান্ত বন্ধুদেরকে) আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টির সময় সাক্ষী করিনি এবং তাদের নিজেদের সৃষ্টির সময়ও না। আর আমি পথভ্রষ্টকারীদেরকে(১) সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণকারী নই।
(52) আর যেদিন তিনি (আল্লাহ দুনিয়ার মুশরিকদেরকে) বলবেন: ‘তোমরা ডাকো আমার শরীকদের, যাদেরকে তোমরা (শরীক) মনে করতে।’ অতঃপর তারা তাদেরকে ডাকবে; কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না। আর আমি তাদের (উপাসক ও উপাস্যদের) মধ্যে রেখে দিবো ধ্বংসস্থল (জাহান্নামের আগুন)।
(53) আর তখন অপরাধীরা আগুন দেখবে, অতঃপর তারা নিশ্চিতরূপে জানতে পারবে যে, নিশ্চয় তারা তাতে নিপতিত হবে এবং তারা তা থেকে বাঁচার কোনো জায়গা (পরিত্রাণের জন্যে) খুঁজে পাবে না ।
(54) আর আমি এই আলকুরআনে মানুষের জন্য সকল প্রকার দৃষ্টান্ত সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি।(১) তবে মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝগড়াটে, বিতর্কপ্রিয়।
(55) আর মানুষের নিকট যখন হিদায়াত এসেছে, তখন তাদেরকে ঈমান আনতে এবং তাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধা প্রদান করেছে কেবল এ বিষয়টিই যে, (তারা হঠকারিতা দেখিয়ে জোর দাবি করতো) পূর্ববর্তী জাতিসমূহের (ব্যাপারে আমার নির্ধারিত শাস্তির) রীতি তাদের নিজেদের ওপর নেমে আসুক কিংবা তাদের ওপর শাস্তি সরাসরি এসে উপস্থিত হোক।
(56) আর আমি তো রাসূলদেরকে (ঈমানদারদের জন্যে) সুসংবাদদাতা ও (কাফিরদের জন্য) সতর্ককারীরূপেই পাঠিয়েছি এবং যারা কুফরী করেছে তারা বাতিল অবলম্বনে তর্ক করে, যাতে তার মাধ্যমে সত্যকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। আর তারা আমার আয়াতসমূহকে এবং যা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, সেগুলোকে উপহাস হিসেবে গ্রহণ করে।
(57) আর তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে, যাকে তার রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তা থেকে (উপদেশ গ্রহণ না করে) বিমুখ হয়েছে এবং সে ভুলে গেছে যা তার দু-হাত পেশ করেছে? নিশ্চয় আমি তাদের অন্তরসমূহের উপর পর্দা দিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা তা (আলকুরআন) বুঝতে না পারে। আর তাদের কর্ণসমূহে রয়েছে বধিরতা(১) এবং তুমি তাদেরকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করলেও তারা কখনো হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে না।
(58) আর (হে রাসূল!) তোমার রব ক্ষমাশীল, দয়াময়। তারা যা উপার্জন করেছে, তার কারণে তিনি যদি তাদেরকে (শাস্তি দিতে) পাকড়াও করতেন, তবে অবশ্যই তিনি তাদের জন্য (দুনিয়াতেই) শাস্তি ত্বরান্বিত করতেন।(১) বরং তাদের জন্য রয়েছে প্রতিশ্রুত সময়, যা থেকে তারা কোনো আশ্রয়স্থল পাবে না।
(59) আর এগুলো সেসব জনপদ, যেগুলো আমি ধ্বংস করেছি(১) যখন তারা (কুফরী ও গুনাহের মাধ্যমে নিজেদের ওপর) যুলম করেছে এবং আমি তাদের ধ্বংসের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করেছিলাম (এবং সেই সময়ে আমি তাদেরকে ধবংস করেছি )।
(60) আর (হে রাসূল! তুমি সে সময়ের কথা) স্মরণ করো, যখন মূসা তার সঙ্গী যুবকটিকে(১) বললো, আমি চলতে থাকব; যতক্ষণ না দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে পৌঁছাবো; কিংবা আমি দীর্ঘ সময় চলতে থাকবো।
(61) অতঃপর যখন তারা দুজন তাদের দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে পৌঁছল, তখন তারা তাদের (সঙ্গে থাকা) মাছের কথা ভুলে গেলো। ফলে মাছটি সুড়ঙ্গের ন্যায় একটি পথ তৈরি করে সমুদ্রে নেমে গেল।
(62) অতঃপর যখন তারা সে জায়গা অতিক্রম করলো তখন সে (মূসা) তার সঙ্গী যুবককে বললো: ‘আমাদের দুপুরের খাবার নিয়ে আসো। আমাদের এই সফরে আমরা অনেক ক্লান্তির সম্মুখীন হয়েছি।’
(63) সে (সঙ্গী যুবকটি) বললো: ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে, যখন আমরা পাথরটির ওপর বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন আমি মাছটির কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আর শয়তানই মূলত আপনাকে তা স্মরণ করিয়ে দিতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে। আর মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে সমুদ্রে তার পথ তৈরি করে নিয়েছে।’
(64) সে (মূসা যুবকটিকে) বললো: ‘ঐ স্থানটিই আমরা খুঁজছি।(১) তাই তারা তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে পেছনে ফিরে গেলো।’
(65) অতঃপর (তারা মাছ হারানোর জায়গায় পৌঁছালো) তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দাকে(১) পেল, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছি এবং তাকে আমার পক্ষ থেকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছি।
(66) মূসা তাঁকে বললো: ‘আমি কি আপনাকে (এই শর্তে) অনুসরণ করতে পারি যে, আপনাকে (আল্লাহ প্রদত্ত) যে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তা আমাকে শিক্ষা দিবেন, যা দ্বারা আমি সঠিক পথ পাব?’
(67) সে (খাদির) বললো: ‘আপনি কখনো আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না।’(১)
(68) ‘আর আপনি তাতে কীভাবে ধৈর্য ধরবেন, যে সম্পর্কে আপনি জানেন না?’
(69) সে (মূসা) বললো: ‘ইন শা আল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং কোনো বিষয়ে আমি আপনার অবাধ্য হবো না।’
(70) সে (খাদির) বললো: ‘তবে আপনি যদি আমাকে অনুসরণই করেন, তাহলে কোনো বিষয় সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করবেন না; যতক্ষণ না আমি (নিজের থেকে) সে সম্পর্কে আপনাকে জানাই।’
(71) অতঃপর তারা দুইজন চলতে লাগল। অবশেষে যখন তারা (বিনা ভাড়ার) নৌকায় চড়লো, সে (খাদির) তা ফুটো করে দিলো। সে (মূসা) বললো: ‘আপনি কি তার আরোহীদের ডুবানোর জন্য তা ফুটো করে দিলেন? আপনি অবশ্যই গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।’
(72) সে (খাদির) বললো: ‘আমি কি বলিনি, আপনি (আমার কর্মকাণ্ড দেখে) আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না?’
(73) সে (মূসা) বললো: ‘আপনি আমাকে (আপনার সাথে) কৃত অঙ্গীকার ভুলবশত ভঙ্গ করার কারণে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অত্যাধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।’
(74) অতঃপর তারা (সাগরের পাড়ে) চলতে লাগলো। অবশেষে যখন তারা এক বালকের সাক্ষাৎ পেলো, তখন সে (খাদির) তাকে হত্যা করলো। সে (মূসা) বললো: ‘আপনি নিষ্পাপ ব্যক্তিকে হত্যা করলেন, যে কাউকে হত্যা করেনি? আপনি তো মারাত্মক অন্যায় কাজ করলেন।’
(75) সে (খাদির) বললো: ‘আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি আমার সাথে কখনই ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না’?
(76) মূসা বললো: ‘এরপর যদি আমি আপনাকে আর কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করি, তাহলে আপনি আমাকে আর আপনার সাথে রাখবেন না। আমার পক্ষ থেকে আপনি ওযর পেয়ে গেছেন।’(১)
(77) অতঃপর তারা দু’জন সামনের দিকে চলতে লাগল। অবশেষে তারা যখন একটি জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছলো তখন তাদের কাছে কিছু খাবার চাইলো; কিন্তু তারা তাদেরকে মেহমানদারি করতে অস্বীকার করলো। অতঃপর তারা সেখানে একটি প্রাচীর দেখতে পেলো, যা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। সে ( খাদির ) তখন প্রাচীরটি সোজাভাবে দাঁড় করিয়ে দিলো। মূসা বললো: ‘আপনি ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক নিতে পারতেন।’
(78) সে (খাদির) বলল: ‘এখানেই (১) আমার ও আপনার মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন (বিচ্ছেদ) হয়ে গেলো। (ইতঃপূর্বে সংঘটিত) যেসব বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেননি, আমি এখন আপনাকে সেগুলোর ব্যাখ্যা দিচ্ছি।’
(79) ‘ (প্রথমেই) নৌকাটির বিষয় হলো, তা ছিলো কিছু দরিদ্র লোকের, যারা সমুদ্রে কাজ করত। আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি; কারণ তাদের সামনে ছিলো এক (অত্যাচারী) রাজা, যে (ভাল) নৌকাগুলো জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিচ্ছিলো।’
(80) ‘আর বালকটির বিষয় হলো, তার পিতামাতা ছিলো মু’মিন। অতঃপর আমরা আশঙ্কা করলাম যে, সে (সাবালক হয়ে) সীমালঙ্ঘন ও কুফরী দ্বারা তাদেরকে অতিষ্ঠ করে তুলবে।’(১)
(81) ‘তাই আমরা চাইলাম, তাদের রব তাদেরকে তার (বালকটির) পরিবর্তে এমন সন্তান দান করবেন, যে হবে তার চেয়ে পবিত্রতায় উত্তম এবং (পিতামাতার প্রতি) দয়ামায়ায় অধিক ঘনিষ্ঠ।’
(82) ‘আর প্রাচীরটির বিষয় হলো, তা ছিল শহরের দু’জন ইয়াতীম বালকের এবং তার নিচে তাদের গুপ্তধন লুকায়িত ছিল। আর তাদের (মৃত) পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। তাই আপনার রব চাইলেন যে, তারা দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তাদের গুপ্তধন বের করে নেবে। এ সবই আপনার রবের রহমত স্বরূপ। আমি নিজ থেকে তা করিনি(১)। এ হলো সে বিষয়ের ব্যাখ্যা, যে সম্পর্কে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেননি।’
(83) আর (হে রাসূল!) তারা (মুশরিক ও ইয়াহূদীরা) তোমাকে যুলকারনাইন(১) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। বলো: ‘আমি এখন তার সম্পর্কে তোমাদের নিকট বর্ণনা দিচ্ছি।’
(84) আমি তাকে জমিনে কর্তৃত্ব দান করেছিলাম এবং সববিষয়ের উপায়-উপকরণ দান করেছিলাম।(১)
(85) অতঃপর সে একটি পথ ধরে (সূর্যাস্তের দিকে ) রওয়ানা করলো।
(86) অবশেষে যখন সে (ভ্রমণ করতে করতে) সূর্যাস্তের স্থানে পৌঁছলো, তখন সে সূর্যকে একটি কর্দমাক্ত পানির ঝর্ণায় ডুবতে দেখতে পেলো এবং সে এর কাছে একটি জাতির দেখা পেলো। আমি বললাম: ‘হে যুলকারনাইন! তুমি তাদেরকে (হত্যা কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে) শাস্তিও দিতে পার অথবা তাদের ব্যাপারে সদাচরণও করতে পার।’
(87) সে বললো: ‘যে ব্যক্তি (আল্লাহর ইবাদাতের দিকে আহ্বানের পর তাঁর সাথে শিরক করে) যুলম করবে, আমরা অচিরেই তাকে (হত্যার মাধ্যমে) শাস্তি দিবো। অতঃপর তাকে তার রবের নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে। তখন তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দেবেন।’
(88) ‘আর যে ব্যক্তি ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে, তার জন্য প্রতিদান স্বরূপ রয়েছে উত্তম প্রতিদান (জান্নাত) এবং আমিও তার প্রতি ব্যবহারের সময়, তার সাথে কোমল-নমনীয় কথা বলবো।’
(89) তারপর সে আরেকটি পথ ধরে (সূর্য উদয়ের দিকে) অগ্রসর হলো।
(90) অবশেষে সে যখন (চলতে চলতে) সূর্যোদয়ের স্থানে এসে পৌঁছলো তখন সে দেখতে পেলো, তা এমন এক জাতির ওপর উদিত হচ্ছে, যাদের জন্য সূর্যতাপ হতে কোনো অন্তরাল আমরা সৃষ্টি করিনি। (১)
(91) (যুলকারনাইনের) প্রকৃত ঘটনা এটাই। আর তার নিকট যা (ক্ষমতা ও শক্তি) ছিল, আমি সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত।
(92) অতঃপর সে (সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পথ বাদ দিয়ে) আরেক পথ ধরে অগ্রসর হলো।
(93) অবশেষে (যেতে যেতে) যখন সে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছল, তখন সেখানে সে এমন এক জাতির সাক্ষাত পেল, যারা তার কথা তেমন একটা বুঝতে পারছিল না।
(94) তারা বললো: ‘হে যুলকারনাইন! নিশ্চয় ইয়া’জূজ ও মা’জূজ(১) (হত্যা এবং অন্যান্য অপরাধের মাধ্যমে) জমিনে অশান্তি সৃষ্টি করছে। তাই আমরা কি আপনাকে এ জন্য কিছু খরচ (অনুদান) দেব যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি (প্রতিবন্ধক) প্রাচীর নির্মাণ করে দিবেন?’
(95) সে (যুলকারনাইন) বললো: ‘আমার রব আমাকে যে (রাষ্ট্র ও ক্ষমতার মাধ্যমে) সামর্থ্য দিয়েছেন, সেটাই উত্তম। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দিবো।’
(96) ‘তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও’। অবশেষে যখন (লোহার স্তুপের দ্বারা) সে দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী জায়গা সমান করে দিলো, তখন সে বললো: ‘তোমরা (আগুন জ্বালিয়ে) হাঁপরে দম দিতে থাক।’ অতঃপর যখন সে তা আগুনে পরিণত করলো, তখন বললো: ‘তোমরা আমাকে কিছু তামা এনে দাও, আমি তা এর ওপর ঢেলে দিই।’
(97) এরপর (প্রাচীরটি উঁচু হওয়ায়) তারা প্রাচীরের ওপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারলো না এবং (সুদৃঢ় হওয়ায়) নিচ দিয়েও তা (ছিদ্র করে) ভেদ করতে পারলো না।
(98) সে (যুলকারনাইন) বললো: ‘এটা আমার রবের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ। অতঃপর যখন আমার রবের ওয়াদাকৃত সময় আসবে(১) তখন তিনি তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবেন। আর আমার রবের ওয়াদা সত্য।’
(99) আর আমি সেদিন তাদেরকে(১) এমন অবস্থায় ছেড়ে দিবো যে, তারা একদল আরেক দলের ওপর তরঙ্গমালার মতো আছড়ে পড়বে এবং শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সকলকে (হিসাব ও প্রতিদানের জন্য) একত্র করবো।
(100) এবং আমি সেদিন কাফিরদের জন্য জাহান্নামকে (স্বচক্ষে দেখাতে) সরাসরি উপস্থিত করবো।
(101) (আমি সেদিন জাহান্নামকে ওই সব কাফিরদের জন্য উপস্থিত করব) আমার স্মরণ থেকে যাদের চোখ (দুনিয়াতে) ছিল আবরণে ঢাকা এবং যারা (আমার আয়াতসমূহ) শুনতেও অক্ষম ছিল।
(102) যারা কুফরী করছে, তারা কি মনে করেছে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে(১) অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে? নিশ্চয় আমি জাহান্নামকে কাফিরদের আপ্যায়নের জন্য প্রস্তুত করেছি।
(103) (হে রাসূল!) তুমি বলো: ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকদের কথা জানাবো, যারা আমলের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত?’
(104) এরাই তারা, (কিয়ামতের দিন দেখতে পাবে যে,) দুনিয়ার জীবনে তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে; অথচ তারা মনে করছে যে, তারা সৎকাজই করছে।’
(105) ‘তারাই সেসব লোক, যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছে। ফলে (কুফরীর কারণে) তাদের সকল আমল নিষ্ফল হয়ে গেছে। সুতরাং আমি তাদের জন্য কিয়ামতের দিন কোনো ওজনের ব্যবস্থা রাখবো না।’ (বরং তারা বিনা হিসেবে জাহান্নামী হবে।)
(106) ‘তাদের প্রতিফল জাহান্নাম। কেননা তারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহ ও আমার রাসূলগণকে ঠাট্টা-বিদ্রুপের বিষয়বস্তু বানিয়েছে।’
(107) নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের আতিথেয়তার জন্য (প্রস্তুত ) রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস।
(108) সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। তারা সেখান থেকে অন্য কোথাও যেতে চাইবে না।
(109) (হে রাসূল!) তুমি বলো: ‘আমার রবের বাণী লেখার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়ে যায়, তবে আমার রবের বাণীগুলো শেষ হওয়ার আগেই সমুদ্রের পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে; যদিও এর সাহায্যার্থে অনুরূপ আরো একটি সমুদ্রও নিয়ে আসি, তবে সেটাও (যথেষ্ট হবে না)।’
(110) (হে রাসূল!) তুমি বলো: ‘আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার নিকট ওয়াহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহই এক ইলাহ। সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে।’