43 - Az-Zukhruf ()

|

(1) হা-মীম।

(2) সুস্পষ্ট কিতাবের (আল-কুরআনের) শপথ।

(3) নিশ্চয় আমি তো একে আরবী (ভাষায়) কুরআন বানিয়েছি, যাতে তোমরা (এর অর্থ) বুঝতে পার।

(4) আর নিশ্চয় তা আমার কাছে উম্মুল কিতাবে (আল-লাওহুল মাহফূযে) সুউচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, প্রজ্ঞাপূর্ণ ।

(5) আমি কি তোমাদের কাছ থেকে এ উপদেশবাণী (আল-কুরআন) সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নেব এ কারণে যে, তোমরা একটি সীমালঙ্ঘনকারী জাতি!

(6) আর আমি পূর্বেকার জাতিদের মাঝে বহু নবী পাঠিয়েছিলাম।

(7) আর যখনই তাদের কাছে কোনো নবী এসেছে, তারা তাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছে।

(8) ফলে তাদের অপেক্ষা অধিক প্রতাপশালীদেরকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। আর পূর্ববর্তীদের দৃষ্টান্ত অতীত হয়ে গেছে।(১)

(9) আর (হে রাসূল!) তুমি যদি (এ সব মিথ্যারোপকারী মুশরিকদেরকে) জিজ্ঞাসা কর, আসমানসমূহ ও জমিন কে সৃষ্টি করেছে? তারা উত্তরে অবশ্যই বলবে: এগুলো মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন।

(10) যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা (সদৃশ) বানিয়েছেন এবং তাতে তোমাদের জন্য বানিয়েছেন চলার পথ, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার।

(11) আর যিনি আসমান থেকে পরিমিতভাবে (বৃষ্টির) পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর আমি তা দ্বারা মৃত জনপদকে (উদ্ভিদের সাহায্যে সবুজায়ন করে) সঞ্জীবিত করি। এভাবেই তোমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে।

(12) আর যিনি সব কিছুই জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্য নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা আরোহণ করো।

(13) যাতে তোমরা (ভ্রমণকালে) এর পিঠে স্থির থাকতে পারো, তারপর তোমাদের রবের অনুগ্রহ স্মরণ করবে, যখন তোমরা এর ওপর স্থির হয়ে বসবে আর বলবে: ‘পবিত্র-মহান সেই সত্তা যিনি এগুলোকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। আর আমরা এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিলাম না’।

(14) আর নিশ্চয় আমরা আমাদের রবের কাছেই প্রত্যাবর্তনকারী।’

(15) আর তারা তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে তাঁর অংশ সাব্যস্ত করেছে।(১) নিশ্চয়ই মানুষ স্পষ্ট অকৃতজ্ঞ।

(16) (হে মুশরিকরা!) তিনি কি যা সৃষ্টি করেছেন, তা থেকে ( নিজের জন্য) কন্যা সন্তান গ্রহণ করেছেন, আর তোমাদের জন্যে নির্ধারন করেছেন পুত্র সন্তান?

(17) আর যখন তাদের কাউকে (কন্যা সন্তানের) সুসংবাদ দেয়া হয়, যা রহমানের প্রতি তারা দৃষ্টান্ত পেশ করে, তখনই (কঠিন দুশ্চিন্তা ও আশঙ্কায়) তার মুখমণ্ডল মলিন (কালো) হয়ে যায়। এমতাবস্থায় যে, সে দুঃসহ যাতনা পিষ্ট।

(18) আর (তারা কি স্বীয় রবের প্রতি এমন কাউকে সম্পর্কিত করছে) যে অলংকারে সজ্জিত অবস্থায় লালিত পালিত হয় এবং সে বিতর্ককালে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদানে অক্ষম।

(19) আর তারা রহমানের বান্দা ফিরিশতাদেরকে নারী হিসেবে গণ্য করেছে। তারা কি তাদের সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছে? তাদের সাক্ষ্য অবশ্যই লিখে রাখা হবে এবং তাদেরকে (কিয়ামত দিবসে) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।(১)

(20) আর তারা বলে: ‘পরম করুণাময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের (ফিরিশতাদের) ইবাদাত করতাম না।’ মূলত এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা শুধু মনগড়া (মিথ্যা) কথা বলছে।

(21) নাকি আমি তাদেরকে কুরআনের পূর্বে কোন কিতাব দিয়েছি(১), ফলে তারা তা দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছে?

(22) বরং তারা বলে: ‘নিশ্চয় আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে একটি দ্বীন ও মতাদর্শের উপর পেয়েছি, আর নিশ্চয় আমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে হিদায়াতপ্রাপ্ত হবো।’

(23) আর এভাবেই (হে নবী) তোমার পূর্বে যখনই আমি কোন জনপদে সতর্ককারী (রাসূল) পাঠিয়েছি, তখনই সেখানকার বিত্তবানরা বলেছে: ‘নিশ্চয় আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে একটি দ্বীন ও মতাদর্শের উপর পেয়েছি এবং নিশ্চয় আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করব।’

(24) তখন সে (সতর্ককারী রাসূল) বলল: ‘তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যে মতাদর্শের ওপর পেয়েছ, আমি যদি তোমাদের কাছে তার চেয়ে উৎকৃষ্ট পথ নিয়ে আসি তবুও কি (তোমরা তাদের অনুসরণ করবে)?’ জবাবে তারা বলত: ‘নিশ্চয় তোমাদেরকে যা সহ প্রেরণ করা হয়েছে, আমরা তার অস্বীকারকারী।’

(25) ফলে আমি তাদের (রাসূলগণকে অবিশ্বাসকারীদের) থেকে প্রতিশোধ নিলাম। (১) অতএব দেখ, মিথ্যারোপকারীদের পরিণতি কেমন হয়েছিল?

(26) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো সে সময়ের কথা, যখন ইবরাহীম স্বীয় পিতা ও তার জাতিকে বলেছিল: ‘তোমরা যেগুলোর (মূর্তিদের) ইবাদাত (পূজা) কর, নিশ্চয় আমি তাদের থেকে সম্পর্কমুক্ত।’

(27) ‘তবে (তিনি ছাড়া) যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর নিশ্চয় তিনি আমাকে শীঘ্রই হিদায়াত দিবেন।’

(28) আর এটিকে(১) সে তার উত্তরসূরীদের মধ্যে এক চিরন্তন বাণী বানিয়ে রেখে গেল, যাতে তারা (শিরক ও পাপাচার থেকে তাওবার মাধ্যমে) প্রত্যাবর্তন করতে পারে।

(29) (আমি এ সব মিথ্যারোপকারী মুশরিকদেরকে শাস্তি প্রদানে তাড়াহুড়ো করি নি) বরং তাদের কাছে সত্য ও স্পষ্ট বর্ণনাকারী রাসূল (মুহাম্মাদ) আগমন না করা পর্যন্ত, আমি তাদের এবং তাদের পিতৃপুরুষদের (দুনিয়াতে) ভোগ করার সুযোগ দিয়েছিলাম।

(30) অথচ যখন সত্য (আল-কুরআন) তাদের কাছে আসল তখন তারা বলল: ‘এতো যাদু এবং নিশ্চয় আমরা তা অস্বীকার করছি।’

(31) আর তারা (মিথ্যারোপকারী মুশরিকরা) বলল: ‘এ আল-কুরআন কেন দুই জনপদের মধ্যকার কোন মহান ব্যক্তির ওপর নাযিল করা হল না?’(১)

(32) তারা কি তোমার রবের রহমত ভাগ-বণ্টন করে? আমিই দুনিয়ার জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করে দেই এবং তাদের একজনকে অপর জনের ওপর মর্যাদায় উন্নীত করি যাতে একে অপরকে অধীন হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। আর তারা (দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সম্পদ) যা সঞ্চয় করে, তোমার রবের রহমত তা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট।

(33) যদি সব মানুষ একই জাতিতে পরিণত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকত, তবে যারা পরম করুণাময়ের প্রতি কুফরী করে আমি তাদের গৃহসমূহের জন্য রৌপ্যনির্মিত ছাদ ও ঊর্ধ্বে আরোহণের সিঁড়ি তৈরি করে দিতাম।

(34) (শুধু তাই নয়)তাদের গৃহসমূহের জন্য দরজা ও হেলান দেয়ার জন্য রুপা দিয়ে নির্মিত খাট -পালঙ্ক ( বানাতাম)

(35) আর (প্রয়োজনে সেগুলোকে) স্বর্ণ নির্মিতও (করে দিতে পারতাম)। আর এর সব কয়টিই দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী। আর আখিরাত তো তোমার রবের কাছে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্যকারী) মুত্তাকীদের জন্যই ।(১)

(36) আর যে পরম করুণাময়ের যিকির(১) থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী।

(37) আর নিশ্চয় তারাই (শয়তানরাই) মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বাধা দেয়; অথচ মানুষ (ভ্ৰষ্ট পথে থাকার পরও) মনে করে তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত।

(38) পরিশেষে যখন সে আমার নিকট আসবে তখন সে (তার শয়তান সঙ্গীকে উদ্দেশ্য করে) বলবে: ‘হায়, আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব-পশ্চিমের ব্যবধান থাকত!’ সুতরাং কতই না নিকৃষ্ট সে সঙ্গী!

(39) আর আজ তা (তোমাদের এই অনুতাপ) তোমাদের কোনো উপকারেই আসবে না। যেহেতু তোমরা (শিরক ও পাপাচারের মাধ্যমে নিজেদের ওপর) যুলম করেছিলে। নিশ্চয় তোমরা শাস্তিতে পরস্পর অংশীদার হয়ে থাকবে।

(40) (হে রাসূল!) তুমি কি বধিরকে শুনাতে পারবে অথবা হিদায়াত করতে পারবে অন্ধকে এবং ঐ ব্যক্তিকে যে সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় রয়েছে?

(41) অতঃপর যদি আমি তোমাকে (দুনিয়া থেকে মৃত্যু দিয়ে উঠিয়ে ) নিয়ে যাই, তবে নিশ্চয় আমি তাদের থেকে (ইহকাল ও পরকালে) প্রতিশোধ গ্রহণ করব।

(42) অথবা আমি তাদেরকে যে শাস্তির ওয়াদা দিয়েছি, তা যদি তোমাকে প্রত্যক্ষ করাই, তবে নিশ্চয় আমি তাদের ওপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।

(43) অতএব (হে রাসূল!) তোমার প্রতি যা ওহী করা হয়েছে, তা তুমি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো (১)। নিশ্চয় তুমি সরল-সঠিক পথের ওপর রয়েছ।

(44) নিশ্চয় এ আল-কুরআন তোমার জন্য এবং তোমার জাতির জন্য উপদেশ। আর অচিরেই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।(১)

(45) আর (হে রাসূল!) তোমার পূর্বে আমি যেসব রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখ(১), আমি কি রহমানের পরিবর্তে অন্য কোন উপাস্যকে ইবাদাত করার জন্যে নির্ধারণ করেছিলাম?

(46) আর অবশ্যই আমি মূসাকে আমার নিদর্শনাবলিসহ ফির‘আউন ও তার নেতৃবর্গের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে বলেছিল: ‘নিশ্চয় আমি সৃষ্টিকুলের রবের একজন রাসূল।’

(47) অতঃপর যখন সে আমার নিদর্শনাবলিসহ তাদের কাছে আসল, তখন তারা তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে লাগল।

(48) আর আমি তাদের (ফির‘আউন ও তার গোত্রের নেতাদেরকে) যে নিদর্শনই দেখাতাম, তা ছিল তার পূর্ববর্তী নিদর্শন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর। আর আমি তাদেরকে শাস্তির মাধ্যমে পাকড়াও করলাম, যাতে তারা (কুফরী থেকে) ফিরে আসে।

(49) আর তারা (মূসাকে) বলল: ‘হে যাদুকর, তোমার রবের কাছে তুমি আমাদের জন্য তাই প্রার্থনা কর, যার ওয়াদা তিনি তোমার সাথে করেছেন।(১) নিশ্চয় আমরা হিদায়াতের পথে আসব।’

(50) অতঃপর যখন আমি তাদের থেকে শাস্তি সরিয়ে নিলাম, তখনই তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে বসল।

(51) আর ফির‘আউন (দম্ভভরে) তার সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘোষণা দিয়ে বলল: ‘হে আমার সম্প্রদায়! মিসরের রাজত্ব কি আমার নয়? আর এ সব নদ-নদী কি আমার (অট্টালিকার) পাদদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে না? তোমরা কি দেখছ না?’

(52) ‘আমি কি এই ব্যক্তি (মূসা) থেকে শ্রেষ্ঠ নই, যে হীন এবং স্পষ্ট কথা বলতেও সক্ষম নয়?’

(53) ‘তবে (রাসূল হওয়ার প্রমাণ স্বরূপ) তাকে কেন স্বর্ণের অলঙ্কারাদি প্রদান করা হল না অথবা দলবদ্ধভাবে ফিরিশতারা তার সাথে কেন আসল না?’

(54) এভাবেই সে তার সম্প্রদায়কে বোকা বানালো, ফলে তারা তার আনুগত্য করল। নিশ্চয় তারা ছিল এক ফাসিক সম্প্রদায়।

(55) অতঃপর তারা যখন (কুফরীর ওপর অটল থাকার মাধ্যমে) আমাকে ক্রোধান্বিত করল, তখন আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করলাম এবং তাদের সকলকে (পানিতে) ডুবিয়ে দিলাম।

(56) ফলে আমি তাদেরকে পরবর্তীদের জন্য (শিক্ষণীয়) অতীত ইতিহাস ও দৃষ্টান্ত বানালাম।

(57) আর যখনই মারইয়াম পুত্র (‘ঈসা)কে দৃষ্টান্তস্বরূপ পেশ করা হয়, তখন তোমার জাতি শোরগোল শুরু করে দেয়।

(58) আর তারা (মুশরিকরা) বলে: ‘আমাদের উপাস্যরা শ্রেষ্ঠ নাকি ‘ঈসা? তারা কেবল বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই তাকে তোমার সামনে পেশ করে; বরং তারা এক ঝগড়াটে সম্প্রদায়।

(59) ঈসা কেবল আমার একজন বান্দা, আমি তার ওপর অনুগ্রহ করেছিলাম এবং বানূ ইসরাঈলের জন্য তাকে (আল্লাহর কুদরতের) দৃষ্টান্ত বানিয়েছিলাম।

(60) আর (হে আদম সন্তান!) আমি যদি চাইতাম, তবে আমি তোমাদের পরিবর্তে ফিরিশতাদেরকে সৃষ্টি করে (দুনিয়াতে) পাঠাতাম, যারা জমিনে তোমাদের উত্তরাধিকার হতো।

(61) আর নিশ্চয় ‘ঈসা (শেষ জামানায় অবতীর্ণ) কিয়ামতের এক সুনিশ্চিত আলামত। সুতরাং তোমরা কিয়ামত সম্পর্কে সংশয় পোষণ করো না। তোমরা আমারই অনুসরণ কর। এটিই সরল পথ।

(62) আর শয়তান যেন তোমাদেরকে কোন অবস্থায়ই (সরল পথ থেকে) বাধা দিতে না পারে। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

(63) আর ‘ঈসা যখন (তার রাসূল হওয়ার) সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে আসল, তখন সে বলল: ‘আমি অবশ্যই তোমাদের কাছে হিকমত নিয়ে এসেছি এবং এসেছি তোমরা যে সব বিষয়ে মতবিরোধে লিপ্ত, তা স্পষ্ট করে দিতে। অতএব তোমরা আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য কারার মাধ্যমে) ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।’

(64) ‘নিশ্চয় আল্লাহই আমার রব এবং তোমাদেরও রব। অতএব তাঁরই ইবাদাত করো; এটিই সরল-সঠিক পথ।’

(65) অতঃপর তাদের (খ্রিস্টানদের) মধ্যকার কতগুলো দল মতভেদ শাস্তির দুর্ভোগ!

(66) তারা তো তাদের অজ্ঞাতসারে অকস্মাৎ কিয়ামত আসার অপেক্ষা করছে।

(67) সেদিন মুত্তাকীরা ছাড়া বন্ধুরা একে অন্যের শত্রু হবে ।

(68) (আল্লাহ তাদেরকে বলবেন:) হে আমার বান্দাগণ! আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না।

(69) যারা আমার আয়াতে ঈমান এনেছিল এবং যারা ছিল মুসলিম।

(70) তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীগণ(১) সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর।

(71) তাদেরকে (সেখানে খাদ্যদ্রব্যে পরিপূর্ণ) স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে (সেবকগণ কর্তৃক) প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয়, তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে চিরস্থায়ী।

(72) আর এটি হচ্ছে সেই জান্নাত, তোমাদেরকে যার অধিকারী করা হয়েছে তোমাদের আমলের প্রতিদান স্বরূপ।

(73) সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর ফলমূল, যা থেকে তোমরা খাবে।

(74) নিশ্চয় অপরাধীরা জাহান্নামের শাস্তিতে স্থায়ী হবে;

(75) তাদের শাস্তির কোন কিছুই লাঘব করা হবে না এবং তারা সেথায় হতাশ হয়ে পড়বে।

(76) আর আমি তাদের উপর যুলম করিনি; কিন্তু তারা নিজেরাই ছিল যালিম।

(77) আর তারা (শাস্তির তীব্রতায় অতিষ্ট হয়ে জাহান্নামের পাহারাদারকে) চিৎকার করে বলবে: ‘হে মালিক! তোমার রব যেন আমাদেরকে শেষ করে দেন।’ সে বলবে: ‘নিশ্চয় তোমরা (এখানে চিরকাল) অবস্থানকারী।’

(78) ‘অবশ্যই আমি তোমাদের কাছে সত্য নিয়ে এসেছিলাম; কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই ছিলে সত্য অপছন্দকারী।’

(79) নাকি তারা কোনো ব্যাপারে (নবীর ব্যাপারে) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে? নিশ্চয় আমিই তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী।

(80) নাকি তারা মনে করে, আমি তাদের গোপন কথা ও সলাপরামর্শ শুনতে পাই না? অবশ্যই হ্যাঁ, ( আমি শুনতে পাই)। আর আমার ফিরিশতাগণ তাদের কাছে থেকে (সব কর্মকাণ্ড) লিখছে।

(81) (হে রাসূল! আল্লাহর সাথে কন্যা সন্তানদের সম্বন্ধকারীদেরকে) বল: ‘রহমানের যদি সন্তান থাকত, তবে আমি প্রথম তাঁর ইবাদাতকারী হতাম।’(১)

(82) তারা যা (যে অংশীদার) আরোপ করে, আসমানসমূহ ও জমিনের রব এবং আরশের রব তা থেকে পবিত্র-মহান।

(83) অতএব (হে রাসূল!) তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা মগ্ন থাকুক অর্থহীন কথাবার্তায় এবং মত্ত থাকুক খেল-তামাশায়; যতক্ষণ না তারা সেদিনের (কিয়ামত দিবসের) সাক্ষাৎ করে যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হয়েছে।

(84) আর তিনিই আসমানে ইলাহ এবং তিনিই জমিনে ইলাহ; আর তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।

(85) আর তিনি বরকতময়, যার কর্তৃত্বে রয়েছে আসমানসমূহ, জমিন ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সবকিছু। আর কিয়ামতের (সময় সম্পর্কে) জ্ঞান কেবল তাঁরই আছে এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

(86) আর তিনি ছাড়া যাদেরকে তারা (মুশরিকরা) ডাকে, তারা (আল্লাহর নিকট) সুপারিশের মালিক হবে না; তবে তারা ছাড়া যারা জেনে-শুনে (আল্লাহর একত্ববাদের) সত্য সাক্ষ্য দেয়।(১)

(87) আর তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে: ‘আল্লাহ।’ তবু তারা কীভাবে (আল্লাহর ইবাদাত থেকে) বিমুখ থাকে?

(88) আর (আল্লাহ তাঁর রাসূলের এ অভিযোগ সম্পর্কেও জানেন) তার রাসূলের এ বক্তব্য: ‘হে আমার রব! নিশ্চয় এরা এমন জাতি যারা ঈমান আনবে না।’

(89) অতএব (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে এড়িয়ে চল এবং বল, ‘সালাম’।তবে শীঘ্রই তারা (সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে) জানতে পারবে।