27 - An-Naml ()

|

(1) ত্বা-সীন; এগুলো আল-কুরআন ও সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত।(১)

(2) (এ আয়াতগুলো) মু’মিনদের জন্য হিদায়াত ও সুসংবাদ।

(3) যারা সালাত কায়িম করে এবং যাকাত দেয়। আর তারাই আখিরাতের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে।

(4) নিশ্চয় যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের জন্য তাদের আমলসমূহকে সুশোভিত করে দিয়েছি। ফলে তারা (নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাঝে) বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়।(১)

(5) এদের জন্যই রয়েছে (দুনিয়াতে হত্যা ও বন্দিদশা ও আখিরাতে জাহান্নামের) নিকৃষ্ট শাস্তি। আর এরাই আখিরাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।

(6) আর (হে রাসূল!) নিশ্চয় তুমি প্রজ্ঞাময় মহাজ্ঞানী (আল্লাহ) এর পক্ষ থেকে আল কুরআন প্রাপ্ত।

(7) যখন মূসা তার পরিবারবর্গকে বললো: নিশ্চয় আমি আগুন দেখেছি। শীঘ্রই আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্য (প্রজ্বলনকারীর) কোনো সংবাদ নিয়ে আসবো অথবা তোমাদের জন্য জ্বলন্ত অঙ্গার নিয়ে আসবো, যাতে তোমরা (ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে) আগুন পোহাতে পার।

(8) অতঃপর সে যখন আগুনের নিকট এসে পৌঁছল, তখন ডেকে বলা হলো: ‘বরকতময়, যা এ আলোর মধ্যে ও এর চারপাশে আছে।(১) আর সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ মহাপবিত্র।’

(9) (আল্লাহ তাকে ডেকে বললেন:) হে মূসা! নিশ্চয় আমিই আল্লাহ, মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়।

(10) আর তুমি তোমার লাঠিটি নিক্ষেপ করো । তারপর যখন সে ওটাকে সাপের মতো ছোটাছুটি করতে দেখলো, তখন (ভয় পেয়ে ) সে পেছনের দিকে ছুটতে লাগলো এবং পেছনে ফিরেও তাকালো না। (তখন আল্লাহ তাকে ডেকে বললেন:) ‘হে মূসা! তুমি ভয় করো না। নিশ্চয় আমার কাছে রাসূলগণ (সাপ বা অন্য কিছু দেখে) ভয় পায় না।’

(11) ‘তবে যে (নিজের ওপর) যলুম করে, তারপর অসৎকাজের পরিবর্তে সৎকাজ করে, তবে (সে জেনে রাখুক) অবশ্যই আমি (তাদের প্রতি) অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’

(12) ‘আর তুমি তোমার হাত (জামার গলার ফাঁকা দিয়ে) বগলে প্রবেশ করাও, তা কোন দোষ বা অনিষ্ট ব্যতীত (বরফের মতো) ধবধবে সাদা হয়ে বের হয়ে আসবে (যা কোন শ্বেত রোগ নয়), এগুলো ফির‘আউন ও তার সম্প্রদায়ের কাছে আনীত নয়টি নিদর্শনের(১) অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয় তারা ছিল ফাসিক (আল্লাহর অস্বীকারকারী) সম্প্রদায়।’

(13) তারপর যখন আমার নিদর্শনগুলো দৃশ্যমান হয়ে তাদের কাছে আসলো, তখন তারা (ফির‘আউন ও তার সম্প্রদায়) বললো: ‘এটা তো সুস্পষ্ট যাদু।’

(14) আর তারা যলুম ও দাম্ভিকতার সাথে নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করলো; যদিও তাদের অন্তর তা (সত্য বলে) নিশ্চিত বিশ্বাস করেছিল। অতএব দেখো, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল।(১)

(15) আর অবশ্যই আমি দাঊদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করেছি এবং তারা উভয়ে (আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ার্থে) বললো: ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই, যিনি তাঁর অনেক মু’মিন বান্দাদের ওপর আমাদেরকে মর্যাদা দান করেছেন।’(১)

(16) আর সুলাইমান দাঊদের উত্তরাধিকারী(১) হলো এবং সে বললো: ‘হে মানুষ, আমাদেরকে পাখির ভাষা শেখানো হয়েছে এবং আমাদেরকে সকল কিছু দেয়া হয়েছে।(২) নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।’

(17) আর সুলাইমানের জন্য তার সেনাবাহিনী থেকে জিন, মানুষ ও পাখিদের সমবেত করা হলো। তারপর তাদেরকে (সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করতে) বিভিন্ন দলে বিন্যস্ত করা হলো।

(18) অবশেষে যখন তারা পিঁপড়ার উপত্যকায়(১) পৌঁছলো তখন এক পিঁপড়া বললো: ‘ওহে পিঁপড়ার দল, তোমরা তোমাদের ঘরে প্রবেশ করো। সুলাইমান ও তার সেনাবাহিনী তোমাদেরকে যেনো অজ্ঞাতসারে পিষ্ট করে মারতে না পারে।’

(19) অতঃপর সুলাইমান তার কথায় মুচকি হাসলো এবং (তার রবকে ডেকে) বললো: ‘হে আমার রব, তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতামাতার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছো তার জন্য আমাকে তোমার শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দাও। আর আমি যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ করো। আর তোমার অনুগ্রহে তুমি আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো।’

(20) আর সুলাইমান পাখিদের খোঁজ-খবর খবর নিলো। তারপর (হুদহুদকে দেখতে না পেয়ে) সে বললো: ‘কী ব্যাপার, আমি হুদহুদকে দেখছি না; নাকি সে অনুপস্থিতদের অন্তর্ভুক্ত?’

(21) (তার অনুপস্থিতির ব্যাপারটি সুস্পষ্ট হলে সুলাইমান বললো:) ‘অবশ্যই আমি তাকে কঠিন শাস্তি দিবো অথবা তাকে যবহ করবো অথবা সে আমার কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসবে।’

(22) কিছুক্ষণ পরেই হুদহুদ উপস্থিত হয়ে (সুলাইমানকে ) বললো: ‘আমি এমন কিছু জানতে পেরেছি, যা আপনি জানতে পারেননি। আমি সাবা (রাজ্য) থেকে আপনার জন্য নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে এসেছি।’

(23) ‘আমি এক নারীকে দেখতে পেলাম, সে তাদের ওপর রাজত্ব করছে। তাকে (শক্তি ও ক্ষমতার) সব কিছু দেওয়া হয়েছে। আর তার আছে এক বিশাল সিংহাসন।’

(24) ‘আমি তাকে ও তার জাতিকে দেখতে পেলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সাজদা করছে। আর শয়তান তাদের (শিরক ও গুনাহের) কার্যাবলীকে তাদের জন্য সৌন্দর্যমণ্ডিত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত করেছে, ফলে তারা হিদায়াত পায় না।’

(25) (শয়তান তাদেরকে সৎ পথ থেকে ফিরিয়ে রেখেছে) যাতে তারা আল্লাহকে সাজদা না করে, যিনি আসমান ও জমিনের লুকায়িত বস্তুকে বের করেন।(১) আর তোমরা যা গোপন করো এবং তোমরা যা প্রকাশ করো তিনি সবই জানেন।

(26) আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই। তিনি মহান আরশের রব।

(27) সুলাইমান (হুদহুদকে) বললো: ‘আমি দেখবো, তুমি কি সত্য বলেছো, নাকি তুমি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।’

(28) ‘তুমি আমার এ পত্র নিয়ে (সাবাবাসীদের কাছে) যাও। অতঃপর এটা তাদের কাছে নিক্ষেপ করো, তারপর তাদের কাছ থেকে একটু ( আড়ালে) সরে থাকো এবং দেখো, তারা কী জবাব দেয়?’

(29) সে (রানি) বললো: ‘হে পরিষদবর্গ! নিশ্চয় আমাকে এক সম্মানজনক পত্র দেয়া হয়েছে।’

(30) ‘নিশ্চয় এটা সুলাইমানের পক্ষ থেকে। আর নিশ্চয় এটা (শুরু করা হয়েছে) পরম করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।’

(31) ‘যাতে তোমরা আমার প্রতি উদ্ধত না হও এবং আনুগত্য স্বীকার করে আমার কাছে আসো।’

(32) সে (রানি) বললো: ‘হে পরিষদবর্গ! তোমরা আমার এ ব্যাপারে (সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে) আমাকে মতামত দাও। তোমাদের উপস্থিতি ছাড়া আমি কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না।’

(33) তারা (পরিষদবর্গ) বললো: ‘আমরা শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা। আর সিদ্ধান্ত আপনার কাছেই। অতএব চিন্তা করে দেখুন, আপনি কী নির্দেশ দিবেন।’

(34) সে (রানি) বললো: ‘নিশ্চয় রাজা-বাদশাহরা যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে তখন (হত্যা, ছিনতাই ও লুটের মাধ্যমে) সেই জনপদকে বিপর্যস্ত করে এবং সেখানকার সম্মানিত অধিবাসীদেরকে অপদস্থ করে। আর তা-ই তারা করবে।’

(35) ‘বরং আমি তাদের কাছে উপঢৌকন পাঠাচ্ছি, তারপর দেখি (আমার) দূতেরা কী (সংবাদ) নিয়ে ফিরে আসে।’

(36) অতঃপর দূত যখন সুলাইমানের কাছে আসলো, তখন সুলাইমান (তাদেরকে) বললো: ‘তোমরা কি আমাকে সম্পদ দ্বারা সাহায্য করতে চাচ্ছো? সুতরাং আল্লাহ আমাকে যা (যে নবুওয়্যাত, ক্ষমতা ও সম্পদ) দিয়েছেন, তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা থেকে উত্তম; (এসব উপঢৌকনে আমার কোন কাজ নেই) বরং তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে খুশি হও।’

(37) (সুলাইমান সেই রানির দূতকে বললো:) ‘তোমরা তাদের কাছে ফিরে যাও। তারপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে এমন সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসবো যাদের মোকাবেলা করার শক্তি তাদের নেই। আর (তারা আত্মসমর্পণ না করলে) আমি অবশ্যই তাদেরকে সেখান থেকে লাঞ্ছিত অবস্থায় বের করে দিবো, এবং (পরিণামে) তারা হবে অপদস্থ।’

(38) সুলাইমান বললো: ‘হে পরিষদবর্গ, তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার (রানির) সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসতে পারবে?’

(39) এক শক্তিশালী জিন উত্তরে বললো: ‘আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দিবো। আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত।’

(40) যার কাছে আল্লাহর কিতাবের এক বিশেষ জ্ঞান ছিল সে বললো: ‘আমি চোখের পলক পড়ার পূর্বেই সিংহাসনটি আপনার কাছে নিয়ে আসবো।’ অতঃপর যখন সুলাইমান তার সামনে (রানির সিংহাসনটি) স্থির দেখতে পেলো, তখন সে (আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে) বললো: ‘এটি আমার রবের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না কি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো তার নিজের কল্যাণেই তা করে, আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হবে, তবে নিশ্চয় আমার রব অভাবমুক্ত, অধিক দাতা।’

(41) সুলাইমান বললো: ‘তোমরা তার সিংহাসনটির আকার-আকৃতি একটু পরিবর্তন করে দাও। দেখবো সে তার সিংহাসনটি চিনতে পারে, নাকি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে, যারা সঠিক পথের দিশা পায় না।’(১)

(42) অতঃপর যখন সে (রানি) আসলো, তখন তাকে বলা হলো: ‘এরূপই কি তোমার সিংহাসন?’ সে বললো: ‘এটি যেন সেটিই।’ আর (সুলাইমান) বললো: ‘আমাদেরকে ইতঃপূর্বেই (নবুওয়্যাতের) সঠিক জ্ঞান দান করা হয়েছিল এবং আমরা (আল্লাহর নিকট) আত্মসমর্পণ করেছিলাম।’(১)

(43) আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে সে (রানি) যার উপাসনা করতো, তা তাকে (এতকাল যাবত) আল্লাহর ওপর ঈমান আনা থেকে সরিয়ে রেখেছিলো।। নিশ্চয় (এতো দিন) সে ছিল কাফির সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।

(44) (অতঃপর) তাকে (রানিকে) বলা হল: ‘তুমি প্রাসাদটিতে প্রবেশ করো।’ অতঃপর যখন সে তা দেখলো, সে তাকে এক গভীর জলাশয় ধারণা করলো এবং তার পায়ের গোছাদ্বয় খুলে ফেললো। সুলাইমান বললো: ‘এটি আসলে স্বচ্ছ কাঁচ-নির্মিত প্রাসাদ।’ সে বললো: ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি (এতো দিন তোমার সাথে অন্যের পূজা করে) আমার নিজের প্রতি যলুম করেছি। আমি এখন সুলাইমানের সাথে সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম।’

(45) আর অবশ্যই আমি সামূদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের ভাই সালিহকে (এ মর্মে) পাঠিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। অতঃপর তারা দু’দলে বিভক্ত হয়ে বিতর্ক করছিল।

(46) সালিহ (তাদের) বলল: ‘হে আমার জাতি, তোমরা কল্যাণের (রহমতের) পূর্বে কেনো অকল্যাণকে (শাস্তিকে) ত্বরান্বিত করতে চাইছো? কেন তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছো না, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পারো ?’

(47) তারা বললো: ‘আমি তুমি ও তোমার সাথে যারা আছে তাদেরকে অশুভ মনে করছি।’ সালিহ বললো: ‘তোমাদের অশুভ আল্লাহর নিকট। বরং তোমরা এমন এক জাতি যাদেরকে (কল্যাণের বিস্তৃতি ও অকল্যাণ দিয়ে) পরীক্ষা করা হচ্ছে।’

(48) আর সেই (হিজর) শহরে ছিল নয়জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, যারা (কুফরী ও গুনাহর মাধমে) জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতো এবং সংস্কার-সংশোধনমূলক কিছু করতো না।

(49) তারা (শলাপরামর্শ করে) বললো: ‘তোমরা পরস্পর আল্লাহর শপথকরো যে, আমরা রাত্রিকালে তার ও তার পরিবারের ওপর অবশ্যই আক্রমণ করবো, অতঃপর আমরা তার নিকটাত্মীয়দের বলবো, আমরা (সালিহ ও) তার পরিবারবর্গের হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করিনি। আর নিশ্চয় আমরা সত্যবাদী।’

(50) আর তারা (সালিহ ও তার মু’মিন অনুসারীদেরকে হত্যার) এক চক্রান্ত করলো এবং আমিও (কাফিরদেরকে ধ্বংস করার) কৌশল অবলম্বন করলাম; অথচ তারা উপলদ্ধিও করতে পারলো না।

(51) অতএব দেখো, তাদের চক্রান্তের পরিণাম কীরূপ হয়েছিল। আমি তাদেরকে ও তাদের জাতির সকলকে (শাস্তির মাধ্যমে) মূলোৎপাটন করে দিয়েছি।

(52) সুতরাং (ছাদসমেত ধসে পড়া) ঐগুলো তাদের বাড়িঘর, যা তাদের যুলমের কারণে বিরান হয়ে আছে। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে সে জাতির জন্য যারা জ্ঞান রাখে।

(53) আর আমি মু’মিনদের মুক্তি দিলাম এবং তারা ছিল আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয়কারী।

(54) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো লূতের কথা, যখন সে তার জাতিকে বলেছিল, ‘তোমরা জেনে-শুনে প্রকাশ্যে কেন অশ্লীল কাজ (সমকামিতা) করছো?’

(55) ‘তোমরা কি যৌনতৃপ্তি নিবারণের জন্য নারীদের বাদ দিয়ে পুরুষদের কাছে কাছেই আসবে? বরং তোমরা এক মূর্খ জাতি।’

(56) তখন তার জাতির একমাত্র জবাব এই ছিল যে, ‘লূতের পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। নিশ্চয় এরা এমন লোক, যারা (নাপাক ও অশ্লীল কাজ থেকে) পবিত্র থাকতে চায়।’

(57) অতএব আমি তাকে ও তার পরিবারকে মুক্তি দিলাম; তবে তার স্ত্রীকে ছাড়া। আমি তাকে ধ্বংসপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম।

(58) আর আমি তাদের ওপর মুষলধারে পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। (শাস্তির) ভয়-ভীতি প্রদর্শিতদের জন্য কতইনা নিকৃষ্ট ছিল এই বৃষ্টি!

(59) (হে রাসূল! তুমি আল্লাহর প্রশংসা করে) বলো: ‘সকল প্রশংসা আল্লাহরই। আর শান্তি তাঁর বান্দাদের প্রতি যাদের তিনি মনোনীত করেছেন।(১) আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, না কি যাদের এরা শরীক করে তারা’?

(60) নাকি তিনিই (শ্রেষ্ঠ), যিনি আসমানসমূহ ও জমিনকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য তিনি আসমান থেকে (বৃষ্টির) পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দ্বারা আমি মনোরম বাগান সৃষ্টি করি। এ বাগানগুলোর বৃক্ষাদি উৎপন্ন করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে?(১) বরং তারা এমন একজাতি যারা শিরক করে।

(61) নাকি তিনিই (শ্রেষ্ঠ), যিনি জমিনকে আবাসযোগ্য করেছেন এবং তার মধ্যে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা। আর তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা এবং (লবণাক্ত ও সুমিষ্ট পানির) দুই সাগরের মধ্যখানে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায়। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে?(১) বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।

(62) নাকি তিনিই (শ্রেষ্ঠ), যিনি নিরুপায় ব্যক্তির ডাকে সাড়া দেন, যখন সে (বিপদের পড়ে) তাঁকে ডাকে এবং তিনি বিপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে জমিনের প্রতিনিধি বানান। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে?(১) তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো।

(63) নাকি তিনিই (শ্রেষ্ঠ), যিনি তোমাদেরকে (তারকা ও নিদর্শনাবলির মাধ্যমে) স্থলে ও সমুদ্রের (গভীর) অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি স্বীয় রহমতের (বৃষ্টি নাযিল হওয়ার) প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোন ইলাহ আছে? তারা যা কিছু শরীক করে আল্লাহ তা থেকে ঊর্ধ্বে (পূত ও পবিত্র)

(64) নাকি তিনিই (শ্রেষ্ঠ), যিনি (মাতৃগর্ভে) সৃষ্টির সূচনা করেন, অতঃপর তিনি মৃত্যুর পর তাকে আবারো জীবিত করবেন এবং যিনি তোমাদেরকে আসমান ও জমিন থেকে রিযক দান করেন। আল্লাহর সাথে কি কোনো ইলাহ আছে?(১) (হে রাসূল! তুমি এ মুশরিকদেরকে) বলো: ‘তোমাদের প্রমাণ নিয়ে এসো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’

(65) (হে রাসূল!) বলো: ‘আল্লাহ ছাড়া আসমানসমূহে ও জমিনে যারা আছে তারা কেউ গায়িব জানে না। আর (প্রতিদানের জন্য কবর থেকে) কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে, তাও তারা অনুভব করতে পারে না।’

(66) বরং আখিরাত সম্পর্কে তাদের জ্ঞান নিঃশেষ হয়ে গেছে; মূলত তারা এ বিষয়ে সন্দেহে আছে; বরং তারা (তাদের দূরদৃষ্টি) এ ব্যাপারে (সম্পূর্ণ) অন্ধ।

(67) আর কাফিররা বলে: ‘আমরা ও আমাদের পিতৃপুরুষরা যখন মাটি হয়ে যাবো, তখনোও কি আমাদেরকে পুনরায় (জীবিত করে) বের করা করা হবে?’

(68) ইতঃপূর্বে আমাদেরকে ও আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে (পুনরুত্থানের) এ বিষয়ে ওয়াদা দেয়া হয়েছিল(১), ‘এটি প্রাচীন লোকদের উপকথা ছাড়া কিছুই নয়।’

(69) (হে রাসূল! তুমি পুনরুত্থান অস্বীকারকারীদেরকে) বলো: ‘তোমরা জমিনে ভ্রমণ করে দেখো, কিরূপ পরিণতি হয়েছিল (পুনরুত্থান অস্বীকারকারী) অপরাধীদের ?’

(70) আর (হে রাসূল! মুশরিকদের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার দরুন) তাদের জন্য দুঃখ করো না এবং তারা যে ষড়যন্ত্র করে, তাতে মনক্ষুণ্ন হয়ো না।(১)

(71) আর তারা (পুনরুত্থান অস্বীকারকারী কাফিররা) বলে: ‘তোমরা সত্যবাদী হলে বলো (শাস্তির) এই ওয়াদা কখন পূর্ণ হবে?’

(72) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘আশা করা যায়, তোমরা (শাস্তি নাযিলের) যে বিষয় দ্রুত কামনা করছো, তা অতি নিকটে।’

(73) আর নিশ্চয় তোমার রব, মানুষের প্রতি অতি অনুগ্রহশীল(১); কিন্তু তাদের অধিকাংশই (এ নি‘আমতের) কৃতজ্ঞতা আদায় করে না।

(74) আর তোমার রব অবশ্যই জানেন তাদের অন্তর যা গোপন করে এবং যা তারা প্রকাশ করে।

(75) আর আসমান ও জমিনে এমন কোনো অদৃশ্য বিষয় নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে (লাওহে মাহফূযে) লিপিবদ্ধ নেই।

(76) বানূ ইসরাঈল যে সব বিষয়ে মতভেদ করত, নিশ্চয় এ আল কুরআন তাদের কাছে তার অধিকাংশই বর্ণনা করে।

(77) আর নিশ্চয় এটি মু’মিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।(১)

(78) নিশ্চয় তোমার রব (কিয়ামতের দিন) নিজের ন্যায়বিচার-প্রজ্ঞা দ্বারা তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দিবেন। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ।

(79) অতএব (হে রাসূল! তুমি সকল ব্যাপারে) আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করো; কারণ তুমি সুস্পষ্ট সত্যের ওপর অধিষ্ঠিত আছো।

(80) (হে রাসূল!) নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে পারবে না, আর তুমি বধিরকে যখন তারা পিঠ দেখিয়ে চলে যায়, নিজের ডাক শোনাতে পারবে না।

(81) আর তুমি (সত্য দেখার ব্যাপারে) অন্ধদেরকে তাদের ভ্রষ্টতা থেকে হিদায়াতকারী নও। তুমি কেবল তাদেরকেই (হিদায়াতের ডাক) শোনাতে পারবে, যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে, আর তারাই আত্মসমর্পণকারী।

(82) আর যখন (কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে) তাদের ওপর ঘোষিত শাস্তি আসবে, তখন আমি জমিন থেকে একটি জন্তু (দাব্বাতুল আরদ)(১) বের করব, যে তাদের সাথে কথা বলবে। কারণ মানুষ আমার আয়াতসমূহে সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখতো না।

(83) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো সেদিনের কথা, যেদিন আমি দলে দলে সমবেত করবো, প্রত্যেক জাতির মধ্য থেকে একেকটি দলকে, যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করতো। অতঃপর তাদেরকে (হিসাবের দিকে) হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

(84) অবশেষে যখন তারা (আল্লাহর সামনে হিসাব-নিকাশের জন্যে) উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ (তাদেরকে ধমক দিয়ে) বলবেন: ‘তোমরা কি আমার আয়াতসমূহকে (শুধু এ কারণেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলে যে, সে বিষয়ে (উক্ত আয়াতের মর্ম বুঝতে) তোমাদের কোনো জ্ঞানই ছিল না? নাকি তোমরা আরো কত কী করেছিলে?’(১)

(85) আর যুলমের কারণে(১) তাদের ওপর ঘোষিত শাস্তি পতিত হবে, ফলে তারা (নিজেদের অক্ষমতা ও বাতিলের কারণে) কিছুই বলতে পারবে না।

(86) তারা (এ পুনরুত্থান অস্বীকারকারীরা) কি দেখে না যে, আমি রাতকে সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্য এবং (তাদের কাজের প্রতি মনোনিবেশ করতে) দিনকে করেছি আলোকিত? নিশ্চয় এতে নিদর্শনাবলি রয়েছে সেই জাতির জন্য যারা ঈমান এনেছে।

(87) আর যেদিন শিঙ্গায় (প্রথম বার) ফুঁক দেয়া হবে, সেদিন আসমানসমূহ ও জমিনে যারা আছে সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে; তবে আল্লাহ যাদেরকে চাইবেন তারা ছাড়া। আর সেদিন সবাই তাঁর কাছে হীন-অনুগত অবস্থায় উপস্থিত হবে।

(88) আর (হে মানুষ!) তুমি পাহাড়সমূকে দেখছো, সেগুলোকে তুমি স্থির মনে করছো; অথচ (কিয়ামতের দিন) তা মেঘমালার ন্যায় চলতে থাকবে। (এটা) আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্য, যিনি সব কিছু মজবুত করে বানিয়েছেন। তোমরা যা করো নিশ্চয়ই তিনি সে সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত।

(89) (কিয়ামতের দিন) যে ব্যক্তি (ঈমান ও) সৎকাজ নিয়ে আসবে, তার জন্য থাকবে, তা থেকে উত্তম প্রতিদান (জান্নাত) এবং তারা সেদিনের ভীতিকর অবস্থা থেকে নিরাপদ থাকবে।

(90) আর যারা (কুফরী ও) মন্দ কাজ নিয়ে আসবে, তাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (তাদেরকে ধমক দিয়ে বলা হবে) ‘তোমরা (দুনিয়াতে কুফরী ও গুনাহের) যে আমল করেছ, সেগুলোরই প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হলো।’

(91) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে বলে দাও:) ‘আমাকে তো নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এই (মক্কা) নগরীর রবের ইবাোত করতে, যিনি এটিকে সম্মানিত করেছেন।(১) সব কিছুর মালিকানা শুধু আল্লাহরই। আর আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি যেন মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই।’

(92) ‘আর (আমাকে আরো আদেশ করা হয়েছে) আমি যেন আল কুরআন তিলাওয়াত করি। অতঃপর যে হিদায়াত লাভ করলো, সে নিজের জন্যই হিদায়াত লাভ করলো। আর যে পথভ্রষ্ট হলো তাকে তুমি বলো: ‘আমি তো (আল্লাহর শাস্তি থেকে) একজন সতর্ককারী মাত্র।’

(93) আর (হে রাসূল! তুমি আল্লাহর নি‘আমতের শুকরিয়া আদায় করে) বলো: ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর; অচিরেই তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনসমূহ(১) দেখাবেন, তখন তোমরা তা চিনতে পারবে।(২) আর তোমরা যা আমল করো, সে ব্যাপারে তোমাদের রব গাফিল নন।’