40 - Al-Ghaafir ()

|

(1) হা-মীম।

(2) এই কিতাব (আল কুরআন) মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকে (মুহাম্মাদের উপর) অবতীর্ণ

(3) আল্লাহ (মানুষের) পাপ ক্ষমাকারী, তাওবা কবুলকারী, (অপরাধীদের) কঠোর শাস্তিদাতা, (মু’মিনদের প্রতি) মহা অনুকম্পাকারী। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। (কিয়ামত দিবসে) তাঁর কাছেই (বান্দাহদের) প্রত্যাবর্তন।

(4) কাফিররাই (তাদের বিবেক বিকৃতির দরুন) কেবল আল্লাহর আয়াতসমূহ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়। সুতরাং দেশে দেশে তাদের অবাধ বিচরণ(১) যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে।

(5) তাদের পূর্বে নূহের জাতি এবং তাদের পরেও অনেক দল (তাদের নবীদেরকে) মিথ্যারোপ করেছিল।(১) প্রত্যেক জাতিই স্বীয় রাসূলকে (হত্যা করতে) পাকড়াও করার সংকল্প করেছিল এবং সত্যকে বিদূরিত করার উদ্দেশ্যে তারা বাতিলের পক্ষে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল। ফলে আমিও তাদেরকে (শাস্তি দ্বারা) পাকড়াও করলাম। সুতরাং (ভেবে দেখ) কেমন (ভয়াবহ) ছিল আমার শাস্তি!

(6) আর (যেভাবে আল্লাহ এ সব মিথ্যারোপকারী জাতিকে ধ্বংস করার ফয়সালা করেন,) এভাবেই কাফিরদের (ধ্বংসের) ক্ষেত্রে তোমার রবের বাণী সত্যে পরিণত হল যে, নিশ্চয় এরা জাহান্নামী।

(7) যারা (যেসব ফিরিশতারা) আরশ বহন করে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করে এবং তাঁর প্রতি ঈমান রাখে। আর মু’মিনদের জন্য ক্ষমার দু‘আ করে বলে: ‘হে আমাদের রব! আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে আপনি রক্ষা করুন।’

(8) (ফিরিশতাগণ আরও বলেন:) ‘হে আমাদের রব! আর আপনি তাদেরকে চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করান, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন। আর তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে তাদেরকেও (জান্নাতে প্রবেশ করান)। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’

(9) ‘আর (কিয়ামতের দিন) আপনি তাদের মন্দ আমলের শাস্তি হতে রক্ষা করুন এবং সেদিন আপনি যাকে মন্দ আমলের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন, অবশ্যই তাকে অনুগ্রহ করবেন। আর এটিই (এই শাস্তি থেকে মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশ হলো) মহাসাফল্য।’

(10) নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে তাদেরকে (কিয়ামত দিবসে) উচ্চকণ্ঠে ডেকে বলা হবে: ‘(আজ) তোমাদের নিজেদের প্রতি তোমাদের এ অসন্তোষ অপেক্ষা অবশ্যই আল্লাহর অসন্তোষ অধিকতর ছিল, (দুনিয়াতে) যখন তোমাদেরকে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে আহ্বান করা হয়েছিল; কিন্তু তোমরা তা অস্বীকার করেছিলে।’

(11) তারা (কাফিররা স্বীকারোক্তি দিয়ে) বলবে: ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে দু’বার মৃত্যু দিয়েছেন এবং দু’বার জীবন দিয়েছেন।(১) অতঃপর আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি। অতএব (দুনিয়াতে পুনরায় ফিরে যেতে জাহান্নাম থেকে) বের হওয়ার কোন পথ আছে কি?’

(12) (জবাবে তাদেরকে বলা হবে) ‘এই শাস্তির কারণ হচ্ছে এই যে, (দুনিয়াতে) যখন আল্লাহকে এককভাবে ডাকা হত, তখন তোমরা তাঁকে অস্বীকার করতে, আর যখন তাঁর সাথে শরীক করা হত, তখন তোমরা তা বিশ্বাস করতে। সুতরাং (আজ) সর্বময় কর্তৃত্বের মালিক সমুচ্চ, সুমহান আল্লাহর।’

(13) তিনি সেই আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে তাঁর (ক্ষমতা ও একত্ববাদের প্রমাণ বহনকারী) নিদর্শনাবলি দেখান এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্য রিযক পাঠান। আর (এসব নিদর্শনসমূহ দ্বারা) সেই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে, যে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে।

(14) সুতরাং (হে মু’মিনগণ!) তোমরা (শিরকমুক্ত হয়ে) আল্লাহকে ডাক, তাঁর উদ্দেশ্যে দীনকে একনিষ্ঠভাবে নিবেদিত করে; যদিও কাফিররা অপছন্দ করে।

(15) আল্লাহ সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের অধিপতি, তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যার প্রতি ইচ্ছা আপন নির্দেশে তিনি ওহী পাঠান, যাতে সে (পূর্বাপর সকল মানুষের) সাক্ষাৎ লাভের দিনটি সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে।

(16) সেদিন মানুষ (হাশরের ময়দানে) প্রকাশ্যভাবে সমবেত হবে। সেদিন আল্লাহর কাছে তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (তিনি জিজ্ঞেস করবেন) ‘আজ রাজত্ব ও কর্তৃত্ব কার?’ (উত্তর আসবে) ’প্রবল প্রতাপশালী এক আল্লাহর।’

(17) আজ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার (ভালো-মন্দ) আমলের প্রতিদান দেয়া হবে। আজ (কারো প্রতিই) কোন যুলম-অবিচার নেই। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।

(18) আর (হে রাসূল!) তুমি তাদের আসন্ন দিন (কিয়ামত দিবস) সম্পর্কে সতর্ক করে দাও; যখন (সেদিনের ভয়াবহতায়) দুঃখ, কষ্ট সংবরণ অবস্থায় তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে। যালিমদের জন্য নেই কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু, নেই কোন সুপারিশকারী যার সুপারিশ গ্রাহ্য করা হবে।

(19) চক্ষুসমূহের খিয়ানত এবং অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে তিনি তা জানেন।

(20) আর আল্লাহ ইনসাফ ভিত্তিক ফয়সালা করেন এবং তারা (মুশরিকরা) আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকে, তারা কোন কিছুর বিচার-ফয়সালা করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

(21) তারা (মুশরিকরা) কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? তাহলে দেখত, তাদের পূর্বে (মিথ্যারোপকারী) যারা ছিল, তাদের পরিণাম কেমন হয়েছিল? অথচ সে সব জাতি এদের তুলনায় পৃথিবীতে শক্তিমত্তা ও (স্থাপনা নির্মাণ) কীর্তিতে অধিকতর প্রবল ছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদের পাপাচারের কারণে তাদেরকে পাকড়াও (ধ্বংস) করলেন। আর তাদের জন্য ছিল না, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন রক্ষাকারী।

(22) এটি (এই শাস্তি) এ কারণে যে, তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে আসত; কিন্তু তারা তাদেরকে অস্বীকার করত। ফলে আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও (ও ধ্বংস) করেছেন। নিশ্চয় তিনি শক্তিমান, শাস্তিদানে কঠোর।

(23) আর অবশ্যই আমি মূসাকে আমার নিদর্শনাবলি ও সুস্পষ্ট প্রমাণসহ প্রেরণ করেছিলাম,

(24) ফির‘আউন, হামান ও কারূনের কাছে। অতঃপর তারা বলল, ‘সে এক জাদুকর, চরম মিথ্যাবাদী।’

(25) অতঃপর যখন মূসা আমার কাছ থেকে সত্য(১) নিয়ে তাদের কাছে উপস্থিত হয়েছিল, তখন তারা বলল: ‘যারা মূসার সাথে ঈমান এনেছে তোমরা তাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা কর এবং (অপদস্থ করতে) তাদের কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত রাখ।’ আর কাফিরদের ষড়যন্ত্র কেবল ব্যর্থই হবে।(১)

(26) আর ফির‘আউন (তার পরিষদবর্গকে) বলল: ‘আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে (আমার হাত থেকে রক্ষা পেতে) তার রবকে ডাকুক। নিশ্চয় আমি আশঙ্কা করছি যে, সে তোমাদের দ্বীন (জীবন যাপনের পদ্ধতি) পাল্টে দিবে অথবা সে (হত্যা ও নাশকতার মাধ্যমে) জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। 0

(27) মূসা (ফির‘আউনের হুমকি শুনে) বলল: ‘আমি আমার রব ও তোমাদের রবের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এমন প্রত্যেক অহংকারী থেকে, যে বিচার দিবসের প্রতি ঈমান রাখে না।’

(28) ‘আর ফির‘আউন পরিবারের একজন মু’মিন ব্যক্তি, যে তার ঈমান গোপন রেখেছিল সে বলল: ‘তোমরা কি (নিরপরাধ) একটি মানুষ কেবল এ কারণে হত্যা করতে চাও, যে বলে: ‘আমার রব আল্লাহ’; অথচ সে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছে। যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তবে তার ওপরই বর্তাবে তার মিথ্যা; আর যদি সে সত্যবাদী হয় তবে যে বিষয়ে সে তোমাদেরকে (যে শাস্তির) ওয়াদা দিচ্ছে, তার কিছু তোমাদের ওপর আপতিত হবে। নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন না, যে সীমালঙ্ঘনকারী, (রাসূলগণের প্রতি) চরম মিথ্যাবাদী।’ 0

(29) (মূসা আরও বলল:) ‘হে আমার জাতি! আজ তোমাদের হাতে (মিসরের) রাজত্ব; পৃথিবীতে তোমরাই কর্তৃত্বশীল (বিজয়ী); কিন্তু (ভেবে দেখো,) আল্লাহর শাস্তি আসলে, কে আমাদেরকে সাহায্য করবে?’ (তার বক্তব্যের মধেই) ফির‘আউন বলল: ‘আমি যা সঠিক মনে করি তা-ই আমি তোমাদেরকে দেখাই, আর আমি তোমাদেরকে কেবল সঠিক পথই দেখাই।’(১) 0 0

(30) আর যে ব্যক্তি ঈমান এনেছিল সে (স্বীয় জাতিকে উপদেশ দিয়ে) আরও বলল: ‘হে আমার জাতি! নিশ্চয় আমি তোমাদের ব্যাপারে পূর্ববর্তী দলসমূহের মতোই (বিপদসংকুল) দিনের (শাস্তির) আশঙ্কা করি’;

(31) ‘যেমন ঘটেছিল নূহ, ‘আদ ও ছামূদের জাতি এবং তাদের পরবর্তীদের ব্যাপারে।(১) আর আল্লাহ বান্দাদের ওপর কোন যুলম করতে চান না।’

(32) ‘আর হে আমার জাতি! আমি তোমাদের জন্য পারস্পরিক ভয়ার্ত আহ্বান দিনের (কিয়ামত দিবসের শাস্তির) আশঙ্কা করি।’

(33) ‘সেদিন তোমরা (আগুনের ভয়ে) পিছনে ফিরে পালাতে চাইবে, মূলত আল্লাহর থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করার জন্য কেউ থাকবে না। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই।’

(34) আর অবশ্যই ইতঃপূর্বে ইউসুফ তোমাদের কাছে (আল্লাহর একত্ববাদের) সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ এসেছিল। সে যা নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছিল তা নিয়ে তোমরা শুধু সন্দেহ পোষণ করেছিলে; এমনকি যখন সে মারা গেল তখন তোমরা বললে: ‘আল্লাহ তার পরে কখনো কোন রাসূল পাঠাবেন না।’ এভাবেই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী, (তাঁর একত্ববাদে) সংশয়বাদীদের পথভ্রষ্ট করেন।

(35) যারা নিজেদের কাছে (তাদের দাবির স্বপক্ষে) দলিল-প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর নিদর্শনাবলি সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়; তাদের এ কাজ আল্লাহ ও মু’মিনদের নিকট অতি ঘৃণিত। এভাবেই আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী স্বৈরাচারীর অন্তরে মোহর মেরে দেন।

(36) ফির‘আউন আরও বলল: ‘হে হামান! আমার জন্য একটি উঁচু অট্টালিকা (টাওয়ার) বানাও যাতে আমি (ওপরের দিকে যেতে) অবলম্বন পাই.....

(37) আসমানে আরোহরণের অবলম্বন, যাতে আমি (উঁকি মেরে) মূসার ইলাহকে দেখতে পাই, আর আমি কেবল তাকে মিথ্যাবাদী মনে করি।’ আর এভাবে ফির‘আউনের কাছে তার মন্দ কাজ শোভিত করে দেয়া হয়েছিল এবং তাকে বাধা দেয়া হয়েছিল সৎপথ থেকে। আর ফির‘আউনের ষড়যন্ত্র সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছিল।

(38) আর (ফিরাউন পরিবারের) যে ব্যক্তি ঈমান এনেছিল, সে বলল: ‘হে আমার জাতি! তোমরা আমার আনুগত্য কর। আমি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখাব।’

(39) ‘হে আমার জাতি, এ দুনিয়ার জীবন কেবল কিছু দিনের উপভোগের বস্তু। আর নিশ্চয় আখিরাতই হল স্থায়ী আবাস।’(১)

(40) ‘কেউ পাপ কাজ করলে, তাকে শুধু পাপের সমান শাস্তিই দেয়া হবে। আর যে পুরুষ অথবা নারী মু’মিন হয়ে সৎকাজ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে তাদেরকে বেহিসাব রিযক দেয়া হবে।’

(41) ‘আর হে আমার জাতি! আমার কী হল যে, আমি তোমাদেরকে (জাহান্নাম থেকে) মুক্তির দিকে ডাকছি, আর তোমরা আমাকে আগুনের দিকে ডাকছ !’

(42) ‘তোমরা আমাকে ডাকছ, যাতে আমি আল্লাহর সাথে কুফরী করি এবং তাঁর সাথে শরীক করি, যে ব্যাপারে আমার কোন জ্ঞান নেই; পক্ষান্তরে আমি তোমাদেরকে ডাকছি ,মহাপরাক্রমশালী ও পরম ক্ষমাশীলের দিকে (ঈমান আনতে)।’

(43) ‘এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, তোমরা আমাকে যার দিকে ডাকছ, সে দুনিয়া ও আখিরাতে তাকে ডাকা শোভনীয় নয়।(১) মূলত আমাদের প্রত্যাবর্তন হবে আল্লাহর দিকে এবং নিশ্চয় (কুফরী ও পাপাচারে লিপ্ত) সীমালঙ্ঘনকারীরা হবে (জাহান্নামের) আগুনের অধিবাসী।’

(44) (আজ) আমি তোমাদেরকে যা (যে উপদেশ) বলছি, অচিরেই তোমরা তা (সে উপদেশ) স্মরণ করবে।(১) আর আমি আমার সকল বিষয় আল্লাহর নিকট ন্যস্ত করলাম। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সর্বদ্রষ্টা।’

(45) অতঃপর আল্লাহ তাকে তাদের ষড়যন্ত্রের অশুভ পরিণাম থেকে রক্ষা করলেন। আর ফির‘আউনের সম্প্রদায়কে (দুনিয়াতে পানিতে ডুবিয়ে মারার) কঠিন শাস্তি গ্রাস করল।

(46) (তাদের মৃত্যুর পর কবরে) আগুন তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তাদের সামনে উপস্থিত করা হয়। আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে (সেদিন ঘোষণা করা হবে), ‘ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতম শাস্তিতে প্রবেশ করাও।’

(47) আর (হে রাসূল! স্মরণ করো সে সময়ের কথা) যখন জাহান্নামে তারা পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হবে, তখন দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে:(দুনিয়াতে) আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম, অতএব (এখন) তোমরা কি আমাদের থেকে জাহান্নামের আগুনের কিছু অংশ গ্রহণ করবে?'

(48) অহংকারী নেতারা বলবে: ‘আমরা সবাইতো এখন জাহান্নামেই আছি। নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করে ফেলেছেন।’

(49) আর যারা জাহান্নামে আছে তারা জাহান্নামের প্রহরীদেরকে (ফিরিশতাদেরকে) বলবে: ‘তোমরা তোমাদের রবকে একটু ডাকো না! তিনি যেন এক দিনের জন্য হলেও আমাদের শাস্তি লাঘব করে দেন।’

(50) জাহান্নামের রক্ষীরা (কাফিরদেরকে) বলবে: ‘তোমাদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তোমাদের রাসূলগণ আসেনি’? জাহান্নামীরা বলবে, ‘হ্যাঁ অবশ্যই এসেছেন (কিন্তু আমরা তাদের কথা শুনিনি)। রক্ষীরা (ব্যঙ্গ করে) বলবে: ‘তবে তোমরাই তোমাদের জন্যে দু‘আ কর। বস্তুত কাফিরদের দু‘আ ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়।’

(51) অবশ্যই আমি আমার রাসূলদেরকে ও এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সাহায্য করব দুনিয়ার জীবনে এবং (পরকালে) যেদিন সাক্ষীগণ (তাদের পক্ষে কথা বলার জন্যে) দাঁড়িয়ে যাবে।(১)

(52) যেদিন যালিমদের কোন ওযর-আপত্তি তাদের উপকার করবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে লা‘নত এবং তাদের জন্য রয়েছে (জাহান্নামে) নিকৃষ্ট আবাস।

(53) আর অবশ্যই আমি মূসাকে হিদায়াত দান করেছিলাম এবং বনী ইসরাঈলকে (তাওরাত) কিতাবের উত্তরাধিকারী করেছিলাম।

(54) যা ছিল বুদ্ধিমানদের জন্য (সৎ পথের দিকে) হিদায়াত ও উপদেশ স্বরূপ।

(55) কাজেই (হে রাসূল! স্বীয় জাতির থেকে পাওয়া কষ্ট ও মিথ্যারোপের উপর) তুমি ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আর তুমি তোমার ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং সকাল- সন্ধ্যায় তোমার রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ কর।

(56) নিশ্চয় যারা নিজেদের কাছে কোন দলিল-প্রমাণ না আসা সত্ত্বেও আল্লাহর (নাযিলকৃত) আয়াতসমূহ সম্পর্কে বিতর্ক করে, তাদের অন্তরসমূহে আছে কেবল অহংকার, তারা কিছুতেই সেখানে (সাফল্যের মনযিলে) পৌঁছবে না। কাজেই (হে রাসূল!) তুমি (এদের অনিষ্ট থেকে) আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

(57) অবশ্যই আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করা, মানুষ সৃষ্টি করার চেয়ে বহু গুণ বড় কাজ(১); কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না।

(58) আর অন্ধ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি কখনো সমান হতে পারে না । আর (অনুরূপভাবে) যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আর যারা (কুফুরী ও পাপাচারের কারণে) অপরাধী (তারাও সমান নয়)। তোমাদের অল্প সংখ্যকই (আমার হিদায়াত থেকে) উপদেশ গ্রহণ করে।

(59) নিশ্চয় কিয়ামত আসবেই, এতে কোন সন্দেহ নেই; কিন্তু অধিকাংশ লোক (কিয়ামতের ওপর) ঈমান আনে না।

(60) আর তোমাদের রব বলেছেন: ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে(১), তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’

(61) তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম করতে পার এবং দিনকে করেছেন আলোকোজ্জ্বল (যাতে তোমরা তাতে কাজকর্ম করতে পারো)। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি বড়ই অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ (আল্লাহর নি‘আমতের) কৃতজ্ঞতা আদায় করে না।

(62) তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব; সব কিছুর স্রষ্টা, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। সুতরাং (তাঁর ইবাদাত ছেড়ে) তোমাদেরকে কোথায় ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে?

(63) (যেভাবে এসব লোক আল্লাহর ওপর ঈমান আনা ও তাঁর ইবাদাত থেকে বিমুখ হয়েছে) এভাবেই ফিরিয়ে নেয়া হয় তাদেরকে, যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করে।

(64) তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে স্থিতিশীল করেছেন এবং আসমানকে করেছেন ছাদ। আর তিনি তোমাদেরকে (মাতৃগর্ভে) আকৃতি দিয়েছেন, অতঃপর তোমাদের আকৃতিকে সুন্দর করেছেন এবং তিনি পবিত্র জীবিকা থেকে তোমাদেরকে রিযক দান করেছেন। (যিনি এসব নি‘আমত দান করেছেন) তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। সুতরাং সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ কতই না বরকতময়!

(65) তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা তাঁকে ডাক, তাঁর ইবাদাতে-আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে (তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করে)। সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সৃষ্টিকুলের রব।

(66) (হে রাসূল!) বল: ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাক, তাদের ইবাদাত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে, যেহেতু আমার রবের পক্ষ থেকে আমার কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি এসেছে। আর আমি আদিষ্ট হয়েছি সৃষ্টিকুলের রবের নিকট আত্মসমর্পণ করতে।’

(67) তিনিই তোমাদেরকে (পিতা আদমকে) মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমাদেরকে শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর ‘আলাকা’ (জমাট রক্ত) থেকে (সৃষ্টি করেছেন)। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে (মাতৃগর্ভ থেকে) শিশুরূপে বের করে আনেন, যেন তোমরা তোমাদের যৌবনে পদার্পণ কর, অতঃপর যেন তোমরা বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হও। আর তোমাদের কেউ কেউ এর পূর্বেই মারা যায়। আর যাতে তোমরা (আল্লাহর জ্ঞানে) নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যাও। আর যাতে তোমরা (তাঁর ক্ষমতা ও একত্ববাদের দলিল-প্রমাণ) অনুধাবন করতে পারো।

(68) তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। আর তিনি যখন কোন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি এজন্য শুধু বলেন: ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়।

(69) (হে রাসূল!) তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি, যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলি সম্পর্কে বাক-বিতণ্ডা করে? (সত্য সুস্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও) তাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে?

(70) যারা কিতাব (আল কুরআন) এবং আমার রাসূলগণকে যা দিয়ে আমি প্রেরণ করেছি, তা অস্বীকার করে, অতএব অচিরেই তারা (অস্বীকারের পরিণতি) জানতে পারবে-

(71) যখন তাদের গলদেশে বেড়ি ও শিকল থাকবে, তাদেরকে (শাস্তির ফিরিশতাদের দ্বারা) টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হবে-

(72) (জাহান্নামের) ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে প্রজ্বলিত আগুনে পোড়ানো হবে।

(73) অতঃপর তাদেরকে বলা হবে: ‘(তোমাদের ভ্রান্ত দেবতারা) কোথায় তারা, যাদেরকে তোমরা শরীক করতে।

(74) আল্লাহ ছাড়া?’ তারা (কাফিররা) বলবে: ‘তারা তো আমাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে গেছে; বরং এর পূর্বে আমরা (দুনিয়াতে) কোন কিছুর ইবাদাতই করতাম না।’ এভাবেই আল্লাহ কাফিরদেরকে (সত্য থেকে) পথভ্রষ্ট করেন।

(75) এটা (এ শাস্তি) এ জন্য যে, তোমরা পার্থিব জীবনে অযথা আনন্দ-উল্লাস করতে এবং এজন্য যে, তোমরা অহংকার করতে।

(76) তোমরা চিরকাল অবস্থানের জন্য জাহান্নামের দরজাসমূহ দিয়ে প্রবেশ কর। অতএব অহংকারীদের বাসস্থান কতই না নিকৃষ্ট!

(77) অতএব (হে রাসূল! নিজ জাতির কষ্ট ও মিথ্যারোপের ওপর) তুমি ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আর আমি তাদেরকে (শাস্তির) যে ওয়াদা দেই, তার কিছু অংশ যদি (তোমার জীবদ্দশায়) তোমাকে দেখাই অথবা তোমাকে মৃত্যু দেই, তাহলেও (কিয়ামত দিবসে) আমার কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন হবে।(১)

(78) আর (হে রাসূল!) অবশ্যই আমি তোমার পূর্বে অনেক রাসূল পাঠিয়েছি।(১) তাদের মধ্যে কারো কারো কাহিনী আমি তোমার কাছে বর্ণনা করেছি আর কারো কারো কাহিনী তোমার কাছে বর্ণনা করিনি। আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন (মু’জিযাহ) নিয়ে আসা কোন রাসূলের কাজ নয়। তারপর যখন আল্লাহর নির্দেশ আসবে, তখন ন্যায়সঙ্গতভাবে ফয়সালা করা হবে। আর তখনই বাতিলপন্থীরা (কুফরীর কারণে ধ্বংস ও) ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

(79) আল্লাহই তোমাদের জন্য গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা এদের কতকের ওপর আরোহণ করতে পার আর কতক তোমরা খেতে পার।

(80) আর এসব সৃষ্টির মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে (সর্বযুগে নবায়নযোগ্য আরও) বহুবিধ উপকারিতা এবং যাতে তোমরা এগুলোর ওপর আরোহণ করে নিজেদের অন্তরের প্রয়োজন পূরণ করতে ও পছন্দের স্থানে উপনীত হতে পারো। ওগুলোর ওপর আর নৌযানের ওপর তোমাদেরকে আরোহণ করানো হয়।

(81) আর (এভাবে) আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর (একত্ববাদ ও ক্ষমতার উপর প্রমাণবাহী) নিদর্শনাবলি দেখান। অতএব তোমরা আল্লাহর কোন নিদর্শনকে অস্বীকার করবে?

(82) এ সব মিথ্যারোপকারীরা কি জমিনে ভ্রমণ করেনি, তা হলে তারা দেখত, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণতি কী হয়েছিল? অথচ সে সব জাতি এদের তুলনায় পৃথিবীতে সংখ্যায় অধিক, আর শক্তিমত্তা ও (স্থাপনা নির্মাণ) কীর্তিতে তাদের চেয়ে অধিক প্রবল ছিল। অতঃপর তারা যা অর্জন করত, তা (আল্লাহর শাস্তির মোকাবেলায়) তাদের কোন কাজে আসেনি।

(83) অতঃপর তাদের কাছে যখন তাদের রাসূলগণ সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ আগমন করেছিল, তখন তারা (সেগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে) তাদের নিজেদের কাছে বিদ্যমান থাকা জ্ঞানকে আঁকড়ে ধরে উৎফুল্ল হয়ে উঠল। আর যা (শাস্তি) নিয়ে তাঁরা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত, তা-ই তাদেরকে বেষ্টন করল।

(84) তারপর তারা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করলো তখন বলল: ‘আমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম, আর যাদেরকে আমরা তার সাথে শরীক করতাম, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম।’

(85) কিন্তু তারা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না। এটা আল্লাহর বিধান(১), তাঁর বান্দাদের মধ্যে চলে আসছে। আর এখানে (শাস্তি আসার আগে তাওবা না করার কারণে) কাফিররাই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।