(1) আল্লাহ অবশ্যই সে নারীর(১) কথা শুনেছেন, যে তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে (যিহার প্রসঙ্গে) বাদানুবাদ করছিল এবং আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছিল। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শোনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
(2) তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে যিহার(১) করে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা তো কেবল তারাই যারা তাদেরকে জন্ম দিয়েছে। আর তারা অবশ্যই অসঙ্গত ও অসত্য কথা বলে। আর নিশ্চয় আল্লাহ অধিক পাপ মোচনকারী, বড়ই ক্ষমাশীল।
(3) আর যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে ‘যিহার’ করে, অতঃপর তারা যা বলেছে তা থেকে যদি ফিরে আসে, তবে একে অপরকে স্পর্শ করার (মিলনের) পূর্বে একটি দাস মুক্ত করবে। (এ বিধান) এর মাধ্যমে তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে।(১) আর তোমরা যা করো, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।
(4) কিন্তু যার এ (কাফফারা আদায়ের) সামর্থ্য থাকবে না, সে লাগাতার দু’মাস সিয়াম পালন করবে, একে অপরকে স্পর্শ করার (মিলনের) পূর্বে। আর যে (এরূপ করারও) সামর্থ্য রাখে না, সে ষাটজন মিসকিনকে খাবার খাওয়াবে। এ বিধান এ জন্য যে, তোমরা যাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনো। আর এগুলো আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমারেখা (তোমরা তা অতিক্রম করো না) এবং কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(5) নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে তাদেরকে অপদস্থ করা হবে যেভাবে অপদস্থ করা হয়েছিল, তাদের পূর্বেকার জাতিদেরকে। আর আমি নাযিল করেছি সুস্পষ্ট প্রমাণাদি। বস্তুত কাফিরদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
(6) যেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে পুনরুত্থিত করবেন, অতঃপর তারা যে আমল করেছিল, তা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। আল্লাহ তা হিসাব করে রেখেছেন যদিও তারা তা ভুলে গেছে। আর আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী।
(7) (হে রাসূল!) তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে, নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন? তিন জনের কোন গোপন শলা-পরামর্শ হয় না, যাতে চতুর্থজন হিসেবে আল্লাহ থাকেন না, আর পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি থাকেন না। (সংখায়) তারা এর চেয়ে কম হোক কিংবা বেশি হোক, তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে তাদের আমল সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে সম্যক অবগত।
(8) (হে রাসূল!) তুমি কি তাদের (সেসব ইয়াহূদীদের) প্রতি লক্ষ্য করনি, যাদেরকে গোপন শলা-পরামর্শ করতে নিষেধ করা হয়েছিল? তারপরও তারা তারই পুনরাবৃত্তি করল, যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল।(১) আর তারা পাপাচার, সীমালঙ্ঘন ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণের জন্য গোপন পরামর্শ করে। (হে রাসূল!) আর তারা যখন তোমার কাছে আসে তখন তারা তোমাকে এমনভাবে (আস-সামু আলাইকা - তোমার মৃত্যু হোক- দ্বারা) অভিবাদন জানায় যেভাবে আল্লাহ তোমাকে অভিবাদন করেননি। আর তারা মনে মনে বলে: ‘আমরা যা বলি, তার জন্য আল্লাহ আমাদেরকে শাস্তি দেন না কেন?’ (জেনে রেখো,) তাদের জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট। তারা তাতে প্রবেশ করবে। আর তা কতই না নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল!
(9) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যখন গোপনে শলা-পরামর্শ করবে, তখন তোমরা যেন গুনাহ, সীমালঙ্ঘন ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণের ব্যাপারে গোপন শলা-পরামর্শ না করো। আর তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার বিষয়ে গোপন পরামর্শ করো। তোমরা আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় করো, যাঁর কাছে তোমাদেরকে (কিয়ামত দিবসে হিসাব ও প্রতিদানের জন্যে) সমবেত করা হবে।
(10) মূলত,গোপন শলা-পরামর্শ তো শয়তানের প্ররোচনায় হয়, মু‘মিনদেরকে দুঃখ দেওয়ার জন্য। আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া শয়তান তাদের কোনোই ক্ষতি করতে পারে না। অতএব আল্লাহরই ওপর মু’মিনরা যেন তাওয়াক্কুল করে।
(11) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমাদেরকে যখন বলা হয়, ‘মজলিসে স্থান প্রশস্ত করে দাও’, তখন তোমরা (নড়ে-চড়ে বসে) স্থান প্রশস্ত করে দিও। আল্লাহ তোমাদের জন্য (ইহকাল ও পরকালে) স্থান প্রশস্ত করে দিবেন। আর যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা (মজলিস থেকে) উঠে যাও’, তখন তোমরা উঠে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে,আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদা বহু গুণে উন্নীত করবেন। আর তোমরা যে আমলই করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।
(12) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যখন রাসূলের সাথে একান্তে কথা বলতে চাও, তখন তোমাদের এরূপ কথার পূর্বে কিছু সাদাকা পেশ করো। এটি তোমাদের জন্য অধিক উত্তম ও পবিত্রকর; কিন্তু যদি তোমরা (দান করতে) সক্ষম না হও (তাতে কোন সমস্যা নেই), কেননা আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু।
(13) তোমরা কি (রাসূলের সাথে) একান্ত পরামর্শের পূর্বে সাদাকা পেশ করতে (অভাবের) ভয় করছো? অত:পর তোমরা যখন সাদাকা দিতে পারলে না, আর আল্লাহও তোমাদের ক্ষমা করে দিলেন, তখন তোমরা সালাত কায়িম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো।(জেনে রেখো,) তোমরা যে আমলই করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।
(14) (হে রাসূল!) তুমি কি তাদের (মুনাফিকদের) প্রতি লক্ষ্য করনি, যারা এমন এক সম্প্রদায়ের (ইহূদীদের) সাথে বন্ধুত্ব করে যাদের ওপর আল্লাহর গজব নিপতিত হয়েছে? তারা তোমাদের দলভুক্ত নয় এবং তোমরাও তাদের দলভুক্ত নও। আর তারা জেনে শুনেই মিথ্যার উপর শপথ করে।(১)
(15) আল্লাহ তাদের জন্য (পরকালের) কঠোর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। নিশ্চয় তারা (দুনিয়াতে কুফরির) যে কাজ করেছিল তা কতই না মন্দ!
(16) তারা (মুনাফিকরা) তাদের শপথগুলোকে (কুফরীর কারণে হত্যার শিকার হওয়া থেকে বাঁচতে) ঢাল বানিয়েছে। অতঃপর তারা আল্লাহর পথে বাধা প্রদান করেছে। ফলে তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
(17) (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর (শাস্তির) মোকাবিলায় তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তাদের কোন কাজেই আসবে না। এরাই জাহান্নামের আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে।
(18) সেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে পুনরুত্থিত করবেন, তখন তারা আল্লাহর নিকট (কুফরী ও মুনাফিকীর থেকে দায়মুক্তির দাবিতে) এমন শপথ করবে, যেমন (দুনিয়াতে মু’মিন হওয়ার ব্যাপারে) তোমাদের নিকট শপথ করে থাকে। আর তারা মনে করে যে, এতে (এ মিথ্যা শপথের মাধ্যমে) তারা ভালো কিছুর ওপর রয়েছে।(১) জেনে রেখো, নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।
(19) শয়তান এদের ওপর চেপে বসেছে এবং তাদেরকে আল্লাহর যিকর ভুলিয়ে দিয়েছে। এরাই শয়তানের দল। জেনে রাখো, নিশ্চয় শয়তানের দল (ইহকালে ও পরকালে) ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
(20) নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তারা (দুনিয়া ও আখিরাতে) চরম লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।
(21) আল্লাহ লিখে (নির্ধারণ করে) দিয়েছেন যে, ‘আমি ও আমার রাসূলগণ অবশ্যই বিজয়ী হবো।’ নিশ্চয় আল্লাহ মহা শক্তিমান, মহা পরাক্রমশালী।
(22) (হে রাসূল!) তুমি এমন জাতিকে পাবে না যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনে; অথচ তারা বন্ধুত্ব করে ওদের সাথে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে; যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। এরাই তারা, যাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ (আল-কুরআনের প্রমাণাদি ও নূর) দ্বারা তাদের শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদের প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতসমূহে যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এরাই আল্লাহর দল। জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহর দলই সফলকাম।