(1) অবশ্যই মু'মিনগণ (দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভে) সফল হয়েছে,
(2) যারা তাদের সালাতে বিনয়ী।(১)
(3) আর যারা অনর্থক কথা-কর্ম থেকে বিমুখ।
(4) আর যারা যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে সক্রিয়।
(5) আর যারা তাদের নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী।(১)
(6) তবে তাদের স্ত্রীগণ বা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ছাড়া, নিশ্চয় এতে(১) তারা নিন্দিত হবে না।
(7) অতঃপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে, তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।(১)
(8) আর যারা নিজেদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকার রক্ষাকারী।
(9) আর যারা নিজেদের সালাতসমূহ হিফাযত করে।(১)
(10) মূলত, তারাই হলো উত্তরাধিকারী।
(11) যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে। তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে।
(12) আর অবশ্যই আমি মানুষকে (মানব পিতা আদমকে) মাটির নির্যাস (মূল উপাদান) থেকে সৃষ্টি করেছি।
(13) তারপর আমি তাকে (তার সন্তানদিগকে সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য) শুক্রবিন্দুরূপে সংরক্ষিত আধারে (জরায়ুতে) স্থাপন করেছি।
(14) তারপর আমি (জরায়ুতে) শুক্রবিন্দুকে ‘আলাকায় (লাল জমাট রক্তে) পরিণত করেছি। তারপর ‘আলাকাকে গোশতপিণ্ডে পরিণত করেছি। তারপর গোশতপিণ্ডকে হাড়ে পরিণত করেছি। তারপর হাড়কে গোশত দিয়ে আবৃত করেছি। অতঃপর (রূহ ফুকের মাধ্যমে জীবন দান করে) তাকে অন্য এক সৃৃষ্টিরূপে গড়ে তুলেছি। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ, কত বরকতময়!
(15) এরপর (হে মানুষ! নির্ধারিত জীবন শেষে) অবশ্যই তোমরা মরবে।
(16) তারপর কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমরা পুনরুত্থিত হবে।
(17) আর অবশ্যই আমি তোমাদের ওপর সাতটি আসমান সৃষ্টি করেছি। আর আমি সৃষ্টি সম্পর্কে উদাসীন ছিলাম না।
(18) আর আমি আকাশ থেকে পরিমিতভাবে পানি বর্ষণ করেছি। অতঃপর আমি তা জমিনে সংরক্ষণ করেছি। আর অবশ্যই আমি সেটাকে উঠিয়ে নিতেও সক্ষম।(১)
(19) তারপর আমি তা (এ পানি) দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগানসমূহ সৃষ্টি করেছি। তাতে তোমাদের জন্য থাকে প্রচুর ফল। আর তা থেকেই তোমরা খাও।
(20) আর আমি (সেই পানি দ্বারা ) এক বৃক্ষ (যাইতূন গাছ) সৃষ্টি করেছি, যা সিনাই পাহাড়ে জন্মায়, এতে উৎপন্ন হয় তেল ও আহারকারীদের জন্য তরকারী।
(21) আর (হে মানুষ!) নিশ্চয় গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। তাদের পেটে যা (যে দুধ) আছে, তা থেকে আমি তোমাদেরকে পান করাই। উপরন্তু এগুলোতে তোমাদের জন্য রয়েছে, প্রচুর উপকারিতা(১) এবং তা থেকে তোমরা খাও।
(22) আর এসব পশু ও নৌকার ওপর তোমাদেরকে আরোহণ করানো হয়।
(23) আর নিশ্চয়ই আমি নূহকে তার জাতির নিকট প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর সে বলেছিল: ‘হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তবুও কি তোমরা (আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলো মেনে) তাঁকে ভয় করবে না?’
(24) তারপর তার সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় কাফিররা বললো: ‘এতো তোমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া কিছুই না। সে মূলত তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চায়। আর আল্লাহ (সত্যিকারার্থে আমাদের নিকট কোন রাসূল পাঠাতে) ইচ্ছা করলে অবশ্যই ফিরিশতা পাঠাতেন। এ জাতীয় কথাতো আমরা আমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষদের সময়েও শুনিনি।’
(25) ‘মূলত সে একজন পাগল ব্যক্তি। অতএব তার সম্পর্কে (মানুষের কাছে সুস্পষ্ট হতে) তোমরা কিছুকাল অপেক্ষা করো।’
(26) নূহ বললো: ‘হে আমার রব! আমাকে সাহায্য করুন। কেননা তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছে।’
(27) তারপর আমি তার (নূহের) কাছে ওয়াহী প্রেরণ করলাম যে, তুমি আমার চাক্ষুষ তত্ত্বাবধানে ও আমার ওয়াহী অনুযায়ী নৌকা তৈরি করো। তারপর (তাদেরকে ধ্বংস করার ব্যাপারে) যখন আমার আদেশ আসবে এবং চুলা (প্রবল বেগে পানিতে) উথলে উঠবে, তখন প্রত্যেক জীবের (নর ও মাদি থেকে) এক জোড়া করে ও তোমার পরিবারবর্গকে নৌকায় তুলে নিও; তবে তাদের মধ্যে যাদের (ধ্বংসের) ব্যাপারে পূর্বে সিদ্ধান্ত হয়ে আছে তারা ছাড়া। আর যারা যুলম করেছে তাদের (নাজাতের) ব্যাপারে তুমি আমাকে সম্বোধন করো না। নিশ্চয় তারা (প্লাবনের পানিতে) নিমজ্জিত হবে (এবং ধ্বংস হবে)।
(28) অতঃপর যখন তুমি ও তোমার (নাজাতপ্রাপ্ত মু’মিন) সঙ্গীরা নৌকায় আরোহণ করবে, তখন বলবে: ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে যালিম জাতি থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’
(29) তুমি আরও বলবে: ‘হে আমার রব! আপনি আমাকে বরকতময় অবতরণস্থলে অবতরণ করান। আর আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ অবতরণকারী।’
(30) নিশ্চয় এতে রয়েছে অনেক নিদর্শন। আর নিশ্চয় আমি (নূহের সম্প্রদায়কে সব কিছুর মাধ্যমে ) পরীক্ষা করেছিলাম।
(31) তারপর তাদের (ধ্বংসের) পরে আমি আরেকটি প্রজন্মকে (‘আদ জাতিকে) সৃষ্টি করেছি।
(32) অতঃপর তাদের মধ্যে তাদেরই একজনকে আমি রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছিলাম, যিনি তাদেরকে (আল্লাহর দিকে ডেকে) বলেছিলেন: ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তবুও কি তোমরা (আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলো মেনে) তাঁকে ভয় করবে না?’
(33) আর তার সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ যারা কুফরী করেছে, আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছে, উপরন্তু আমি যাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ভোগ বিলাসিতা দিয়েছিলাম, তারা বললো: ‘সে তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, তোমরা যা খাও, সে তা-ই খায় এবং তোমরা যা পান করো, সে তা-ই পান করে।’
(34) ‘আর যদি তোমরা তোমাদের মতোই একজন মানুষের আনুগত্য করো, তবে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
(35) ‘সে কি তোমাদেরকে এ প্রতিশ্রুতি দেয় যে, তোমরা যখন মারা যাবে এবং তোমরা মাটি ও হাড়ে পরিণত হয়ে যাবে, তখন তোমাদেরকে অবশ্যই (কবর থেকে জীবিত) উঠানো হবে?’
(36) অসম্ভব, তোমাদেরকে (মৃত্যুর পর জীবিত করার) যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা অসম্ভব।
(37) ‘মূলত এ দুনিয়ার জীবনই আমাদের আসল জীবন।(১) এখানেই আমরা মরে যাই এবং বেঁচে থাকি। আর আমরা পুনরুত্থিত হওয়ার নই।’
(38) ‘সে তো এমন এক ব্যক্তি যে (নিজেকে রাসূল হিসেবে দাবি করে) আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করেছে। আর আমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনয়নকারী নই।’
(39) রাসূল বললো: ‘হে আমার রব! আমাকে সাহায্য করুন; কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছে।’
(40) আল্লাহ বললেন: ‘কিছু সময়ের মধ্যেই তারা (শাস্তিতে নিপতিত হয়ে) নিশ্চিতরূপে অনুতপ্ত হবে।’
(41) অতঃপর যথার্থই তাদেরকে এক বিকট আওয়াজ পেয়ে বসলো, তারপর আমি তাদেরকে (বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া) খড়কুটার ন্যায় (ধ্বংসস্তূপে) পরিণত করলাম। সুতরাং যালিম সম্প্রদায়ের জন্যই ধ্বংস।
(42) তারপর তাদের (ধ্বংসের) পরে আমি অন্যান্য প্রজন্মকে সৃষ্টি করেছি।(১)
(43) (এ মিথ্যারোপকারী) কোন জাতিই তাদের (ধ্বংস আসার) নির্ধারিত সময়কে এগিয়ে আনতে পারে না এবং বিলম্বিতও করতে পারে না।
(44) এরপর আমি আমার রাসূলদেরকে ধারাবাহিকভাবে প্রেরণ করেছি। যখনই কোনো জাতির কাছে তাদের রাসূল আসত, তখনই তারা তাকে অস্বীকার করত। অতঃপর আমি এদেরকে একের পর এক ধ্বংস করে দিয়েছি এবং তাদেরকে (মানুষের মুখের) কাহিনীতে পরিণত করেছি। সুতরাং ধ্বংস হোক সে জাতি যারা ঈমান আনে না।
(45) এরপর আমি মূসা ও তার ভাই হারূনকে আমার নিদর্শনাবলি ও সুস্পষ্ট প্রমাণসহ প্রেরণ করেছি।(১)
(46) তাদেরকে ফির‘আউন ও তার পরিষদবর্গের কাছে (পাঠানো হয়েছে); কিন্তু তারা অহঙ্কার করলো এবং তারা ছিল উদ্ধত জাতি।
(47) অতঃপর তারা বললো: ‘আমরা কি আমাদের মতোই দু’জন মানুষের ( কথায় বিশ্বাস করে তাদের) প্রতি ঈমান আনবো? অথচ তাদের সম্প্রদায় (বানূ ইসরাঈল) আমাদের সেবাদাস (দাসত্ব করে)।
(48) অতএব তারা তাদের উভয়ের প্রতি মিথ্যারোপ করল। ফলে তারা ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো।
(49) আর অবশ্যই আমি মূসাকে (তাওরাত) কিতাব প্রদান করেছিলাম, যাতে তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়।
(50) আর আমি মারইয়াম-পুত্র (‘ঈসা) ও তার মাকে (আমার অসীম ক্ষমতার) নিদর্শন বানালাম এবং তাদেরকে আবাসযোগ্য ও ঝরণাবিশিষ্ট এক উঁচু (সমতল) ভূমিতে আশ্রয় দিলাম।
(51) ‘হে রাসূলগণ! তোমরা (আমার হালালকৃত) পবিত্র ও ভালো বস্তু থেকে খাও এবং সৎকর্ম করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর, সে সর্ম্পকে আমি সম্যক জ্ঞাত।
(52) আর (হে রাসূলগণ!) নিশ্চয়ই তোমাদের ধর্ম তো একই ধর্ম(১) এবং আমি তোমাদের রব। সুতরাং তোমরা (আমার আদেশ ও নিষেধ মেনে) আমাকেই ভয় করো।
(53) তারপর (যুগে যুগে ) লোকেরা তাদের মাঝে তাদের ধর্মকে বহুভাগে বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে, তা নিয়ে আনন্দিত।
(54) সুতরাং (হে রাসূল! শাস্তি নাযিল হওয়া পর্যন্ত) কিছু সময়ের জন্য তাদেরকে স্বীয় বিভ্রান্তিতে থাকতে দাও।
(55) তারা কি মনে করছে যে, (দুনিয়ার জীবনে) ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি থেকে যা আমি তাদেরকে দিই,
(56) তা দ্বারা আমি তাদের কল্যাণে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি;(১) বরং তারা উপলদ্ধি করতে পারছে না।
(57) নিশ্চয় যারা তাদের রবের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে,
(58) আর যারা তাদের রবের আয়াতসমূহে ঈমান আনে,
(59) আর যারা তাদের রবের সাথে কাউকে শারীক করে না,
(60) আর যারা যা দান করে, তা ভীত-কম্পিত হৃদয়ে করে থাকে এজন্য যে, তারা তাদের রবের কাছে প্রত্যাবর্তনকারী।(১)
(61) তারাই কল্যাণসমূহের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং তাতে তারা অগ্রগামী।
(62) আর আমি কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো কাজ চাপিয়ে দেই না। আমার নিকট আছে (লিপিবদ্ধ) এমন কিতাব, যা সত্য কথা বলে এবং তারা অত্যাচারিত হবে না।(১)
(63) বরং কাফিরদের অন্তরসমূহ এ (কিতাবের) বিষয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছে। এছাড়া তাদের আরও অনেক বদ আমল রয়েছে, যা তারা করছে।
(64) অবশেষে যখন আমি তাদের (দুনিয়ার) ভোগবিলাসপূর্ণ জীবনধারীদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করবো, তখন তারা সজোরে আর্তনাদ করে উঠবে।
(65) (তাদেরকে বলা হবে:) আজ তোমরা সজোরে আর্তনাদ করো না। কারণ, নিশ্চয় তোমরা আমার পক্ষ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।
(66) আমার কিতাবের আয়াতসমূহ তোমাদের সামনে অবশ্যই তিলাওয়াত করা হত, তারপর তোমরা (সেগুলোকে অপছন্দ করে) তোমাদের পেছনে ফিরে চলে যেতে,
(67) এর ওপর অহংকারবশে, রাত জেগে অর্থহীন গল্প-গুজব করতে।(১)
(68) তারা কি কুরআনের এ বাণী সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের কাছে এমন কিছু এসেছে যা তাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষদের কাছে আসেনি?
(69) নাকি তারা তাদের রাসূলকে (মুহাম্মাদকে) চিনতে পারেনি, ফলে তারা তাকে অস্বীকার করছে?
(70) নাকি তারা বলে যে, তার মধ্যে কোনো পাগলামী রয়েছে? ( মূলত, এসবের কিছুই নয়) ; বরং সে তাদের কাছে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) সত্য নিয়েই এসেছে। আর তাদের অধিকাংশ লোকই সত্যকে অপছন্দকারী।
(71) আর সত্য (আল্লাহ) যদি তাদের কামনা-বাসনার অনুগামী হতেন(১), তবে আসমানসমূহ, জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যস্থিত সব কিছু ধ্বংস হয়ে যেতো। বরং আমি তাদেরকে দিয়েছি তাদের উপদেশবাণী (আলকুরআন)। অথচ তারা তাদের উপদেশ হতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
(72) ( হে রাসূল! আল্লাহর পথে দাওয়াতের বিনিময়ে) নাকি তুমি তাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাও? তবে তোমার রবের প্রতিদান সর্বোত্তম। আর তিনিই সর্বোত্তম রিযকদাতা।
(73) আর নিশ্চয় তুমি তাদের সরল-সঠিক পথের (ইসলামের) দাওয়াত দিচ্ছ।
(74) আর নিশ্চয় যারা আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে না, তারাই এই সরল-সঠিক পথ (ইসলাম) থেকে বিচ্যুত।
(75) আর যদি আমি তাদের প্রতি দয়া করতাম এবং তাদেরকে ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্ত রাখতাম, তবুও তারা অবাধ্যতায় বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াত।
(76) আর অবশ্যই আমি তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি (বিপদাপদ) দিয়ে পরীক্ষা করেছি, তবুও তারা তাদের রবের কাছে নত হয়নি এবং বিনীত প্রার্থনাও করেনি।
(77) অবশেষে আমি যখন তাদের জন্য কঠিন শাস্তির দরজা খুলে দিলাম, তখনই তাতে তারা হতাশ হয়ে পড়ল।
(78) আর তিনিই তোমাদের জন্য শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিসমূহ ও অন্তরসমূহ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা আদায় কর।
(79) আর (হে মানুষ!) তিনিই তোমাদেরকে এ পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন এবং (কিয়ামতের দিন হিসাব ও প্রতিদানের জন্য) তোমাদেরকে তাঁরই কাছে একত্র করা হবে।
(80) আর তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু দান করেন এবং রাত ও দিনের পরিবর্তন তাঁরই অধিকারে। তবুও কি তোমরা (তাঁর একত্ববাদের ব্যাপারটি) বুঝতে পারে না?
(81) বরং তারা তাই বলে, যেমনটি তাদের পূর্ববর্তীরা বলত।
(82) তারা বলে, যখন আমরা মরে যাব এবং আমরা মাটি ও হাড়ে পরিণত হব, তখনও কি আমরা (হিসাবের জন্য) পুনরুত্থিত হব?
(83) অবশ্যই আমাদেরকে ও ইতঃপূর্বে আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে (পুনরুত্থানের) এই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। এসব কেবল পূর্ববর্তীদের মিথ্যা ও কল্পকাহিনি ছাড়া আর কিছু নয়।
(84) (হে রাসূল! তুমি পুনরুত্থান দিবসকে অস্বীকারকারী কাফিরদেরকে) জিজ্ঞেস কর: ‘তোমরা যদি জান তবে বল, ‘এ জমিন ও এতে যারা আছে তারা কার?’
(85) অচিরেই তারা বলবে: (জমিন ও তার অধিবাসীর মালিকানা) একমাত্র আল্লাহর’। বলো, ‘তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’
(86) তাদেরকে বল: ‘কে সাত আসমানের রব এবং মহা ‘আরশের রব?’
(87) তারা সাথে সাথে জবাবে বলবে: ‘আল্লাহ।’ বলো, ‘তবুও কি তোমরা (আল্লাহর আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা মেনে) তাঁকে ভয় করবে না?’
(88) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘তিনি কে যাঁর হাতে সকল কিছুর কর্তৃত্ব, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যাঁর ওপর কোনো আশ্রয়দাতা নেই?’ যদি তোমরা জান।
(89) তারা বলবে: ‘আল্লাহ।’ বলো, ‘তবুও কীভাবে তোমরা মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছ?’(১)
(90) বরং আমি তাদের কাছে সত্য নিয়ে এসেছি, আর নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।
(91) আল্লাহ কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর সাথে অন্য কোনো ইলাহও নেই। (যদি থাকতো) তবে প্রত্যেক ইলাহই নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে পৃথক হয়ে যেতো এবং একে অন্যের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করত।(১) তারা (মুশরিকরা) যা বর্ণনা করে, তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র!
(92) তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত সূতরাং তারা (তাঁর সাথে) যা কিছু শরীক করে তিনি তার থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।
(93) (হে রাসূল!) বল: ‘হে আমার রব! যে বিষয়ে (যে শাস্তির সম্পর্কে ) তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা যদি আপনি আমাকে দেখাতেন?
(94) ‘হে আমার রব! তাহলে আমাকে যালিম সম্প্রদায়ভুক্ত করবেন না।’(১)
(95) আর আমি (আল্লাহ) তাদেরকে যে বিষয়ের (যে শাস্তির) প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, অবশ্যই আমি তা তোমাকে দেখাতে সক্ষম।
(96) (হে রাসূল!) যা উত্তম, তা দিয়ে তুমি মন্দের প্রতিহত করো। তারা (তোমার ব্যাপারে অশোভনীয়) যা বলে, সে সম্পর্কে আমি সবিশেষ অবিহিত ।
(97) আর তুমি বল: ‘হে আমার রব! আমি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই।’
(98) আর হে আমার রব! আমার কাছে (কোন কাজে) তাদের উপস্থিতি হতে আপনার কাছে পানাহ চাই।’ (১)
(99) অবশেষে যখন তাদের (এ মুশরিকদের) কারো মৃত্যু আসে, তখন সে বলে, ‘হে আমার রব! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) ফেরত পাঠান।
(100) যেন (এবার গিয়ে) আমি সৎকাজ করতে পারি, যা আমি (পূর্বে না করে) ছেড়ে দিয়েছিলাম।’ (বলা হবে:) কখনো নয়, এটি একটি বাক্য মাত্র,যা সে বলবে। যেদিন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে, সেদিন পর্যন্ত তাদের সামনে থাকবে বরযখ।(১)
(101) অতঃপর যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে সেদিন তাদের মাঝে কোনো আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না, এবং (নিজেদের বিষয়সমূহ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে) কেউ কারো বিষয়ে জানতে চাইবে না।
(102) অতঃপর যাদের (নেকির) পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম।
(103) আর যাদের (নেকির) পাল্লা হালকা হবে, তারাই নিজেদের ক্ষতি করলো; জাহান্নামে তারা হবে স্থায়ী।
(104) (জাহান্নামের) আগুন তাদের চেহারাগুলো দগ্ধ করবে, সেখানে তারা হবে বীভৎস চেহারাবিশিষ্ট।(১)
(105) (তাদেরকে ধমক দিয়ে বলা হবে:) ‘(দুনিয়াতে) আমার আয়াতসমূহ কি তোমাদের কাছে তিলাওয়াত করা হতো না? তখন তো তোমরা সেগুলোকে অস্বীকার করছিলে।’
(106) তারা বলবে: ‘হে আমাদের রব! দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল, আর আমরা ছিলাম এক পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়।’
(107) হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে এ আগুন থেকে বের করে দিন, তারপর যদি আমরা আবার কুফরী করি (এবং ভ্রষ্টতার দিকে ফিরে যাই), তবে অবশ্যই আমরা হব যালিম।’
(108) আল্লাহ বলবেন: ‘তোমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত অবস্থায় আগুনেই বসবাস করো, আর তোমরা আমার সাথে কোন কথাই বলবে না।’
(109) আমার বান্দাদের একদল ছিলো যারা বলতো: ‘হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদেরকে ক্ষমা ও দয়া করুন। আর আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’
(110) ‘তারপর তাদেরকে (প্রার্থনাকারী এ মু’মিনদেরকে) নিয়ে তোমরা ঠাট্টা করতে। অবশেষে তাদেরকে নিয়ে ঠাট্টা করার ব্যস্ততা তোমাদেরকে আমার স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছিল। আর তোমরা তাদের নিয়ে হাসি-তামাশায় মগ্ন থাকতে।’
(111) নিশ্চয় আমি তাদের (আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং তোমাদের পক্ষ থেকে পাওয়া কষ্টের) ধৈর্যের কারণে আজ তাদেরকে (জান্নাত প্রদান করে) পুরস্কৃত করলাম। নিশ্চয় তারাই হলো সফলকাম।
(112) আল্লাহ বলবেন: ‘বছরের হিসাবে তোমরা পৃথিবীতে কত বছর অবস্থান করেছিলে?’
(113) তারা বলবে: ‘আমরা একদিন বা এক দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি। সুতরাং আপনি গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করুন।’
(114) আল্লাহ বলবেন: ‘(আসলেই দুনিয়াতে) তোমরা কেবল অল্পকালই অবস্থান করেছিলে, তোমরা যদি (দুনিয়াতে তোমাদের অবস্থানের সময়টুকু) নিশ্চিত জানতে!’
(115) (হে মানুষ!) ‘তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে কেবল অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং (কিয়ামতের দিন হিসাব ও প্রতিদানের জন্য) তোমরা আমার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে না?’
(116) সুতরাং সত্যিকারের মালিক আল্লাহ মহিমান্বিত, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই; তিনি সম্মানিত ‘আরশের রব।
(117) আর যে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ইলাহকে ডাকে, যার ইবাদাতের উপযুক্ততার ব্যাপারে তার কাছে কোন প্রমাণ নেই; তার (কর্মের) হিসাব কেবল তার রবের কাছে। নিশ্চয় কাফিররা সফলকাম হবে না।
(118) আর (হে রাসূল! তুমি) বলো: ‘হে আমাদের রব! আপনি ক্ষমা করুন, দয়া করুন এবং আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’