32 - As-Sajda ()

|

(1) আলিফ-লাম-মীম

(2) এ কিতাব (আল কুরআন) সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

(3) নাকি তারা (কাফিররা) বলে, ‘সে (মুহাম্মাদ) তা রচনা করেছে?’ বরং তা তোমার রবের পক্ষ থেকে সত্য, যাতে তুমি এমন জাতিকে সতর্ক করতে পার, যাদের কাছে (আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখানোর জন্যে) তোমার পূর্বে কোনো সতর্ককারী আসেনি। হয়ত তারা হিদায়াত লাভ করবে।

(4) তিনিই আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও জমিন এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তা ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন।(১) তারপর তিনি (তাঁর মর্যাদা অনুযায়ী) আরশের ওপর সমাসীন হয়েছেন। তিনি ছাড়া তোমাদের জন্য কোনো অভিভাবক নেই এবং নেই কোনো সুপারিশকারী। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?

(5) তিনি আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত সকল কার্য পরিচালনা করেন। তারপর তা একদিন (উক্ত পরিচালনার বৃত্তান্ত) তাঁর কাছেই উত্থিত হবে, যেদিনের পরিমাণ হবে তোমাদের (দুনিয়ার) গণনায় হাজার বছর।

(6) (যিনি এমন পরিচালনার কাজ করেন) তিনিই গায়িব ও উপস্থিত (সকল বিষয়) সম্পর্কে জ্ঞাত, মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

(7) যিনি তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকে সুনিপুণভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং কাদা মাটি থেকে মানুষ (আদমের) সৃষ্টির সূচনা করেছেন।

(8) তারপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেছেন তুচ্ছ পানির নির্যাস (বীর্য) থেকে।

(9) তারপর তিনি তাকে সুঠাম করেছেন এবং তাতে নিজের রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছেন। আর তিনি তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অন্তরসমূহ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।

(10) আর তারা (পুনরুত্থান অস্বীকারকারী মুশরিকরা) বলে: ‘আমরা যখন মাটিতে মিশে যাবো তখন কি আবার নতুন সৃষ্টি হবো?’ বরং তারা তো তাদের রবের সাক্ষাৎকে অস্বীকারকারী।

(11) (হে রাসূল! পুনরুত্থানকে অস্বীকারকারী এসব মুশরিকদেরকে) বলো: ‘তোমাদের মৃত্যু ঘটাবে (আল্লাহর নিযুক্ত) মৃত্যুর ফিরিশতা, যাকে তোমাদের মৃত্যু ঘটাবার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। তারপর (হিসাব ও প্রতিদানের জন্যে) তোমাদের রবের নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।’

(12) আর যদি তুমি দেখতে, যখন অপরাধীরা তাদের রবের সামনে অবনত মস্তকে বলবে: ‘হে আমাদের রব! আমরা (পুনরুত্থান) দেখেছি ও (রাসূলগণ যা নিয়ে এসেছে তা) শুনেছি। কাজেই আমাদেরকে পুনরায় (দুনিয়াতে) পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। নিশ্চয় এখন আমরা (পুনরুত্থানে ও রাসূলগণ যা নিয়ে এসেছেন তাতে) পূর্ণ বিশ্বাসী।’

(13) আর যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে হিদায়াত দান করতাম। কিন্তু আমার (হিকমত ও ইনসাফ অনুযায়ী) এ কথাই সত্যে পরিণত হবে যে, ‘নিশ্চয় আমি (হিদায়াত অস্বীকারকারী কাফির) জিন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবো।’

(14) (তাদেরকে ধমক দিয়ে বলা হবে,) কাজেই (দুনিয়াতে) তোমরা তোমাদের এই দিনের সাক্ষাৎকে যেভাবে ভুলে গিয়েছিলে, তার স্বাদ তোমরা (আজকে) আস্বাদন করো। আজ আমিও তোমাদেরকে (কঠিন শাস্তির মধ্যে নিমজ্জিত রেখে) পরিত্যাগ করলাম। আর তোমরা যা করতে, তার জন্য তোমরা (জাহান্নামের) স্থায়ী শাস্তি ভোগ করো।

(15) আমার আয়াতসমূহের ওপর শুধু তারাই ঈমান আনে, যারা এর দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দেয়া হলে সাজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করে। আর তারা (আল্লাহর ইবাদাত করতে) অহংকার করে না।

(16) তাদের পার্শ্বদেশ (রাতের বেলায়) বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা তাদের রবকে (শাস্তির) ভয় ও (রহমতের) আশা নিয়ে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিযক দান করেছি, তা থেকে তারা (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে।

(17) অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না, (দুনিয়াতে) তারা যা করতো, তার পুরস্কারস্বরূপ তাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে!

(18) সুতরাং যে ব্যক্তি মু’মিন সে কি ফাসিক ব্যক্তির মতো? (প্রতিদানের ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে) তারা সমান নয়।

(19) যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ আপ্যায়ন হিসেবে তাদের জন্যে রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাতের বাসস্থান।

(20) আর যারা নাফরমানি করে, তাদের বাসস্থান হবে (জাহান্নামের) আগুন; যখনই তারা তা থেকে বের হতে চাইবে, তাদেরকে তাতেই ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে: ‘তোমরা আগুনের শাস্তি আস্বাদন করো, যাকে তোমরা (দুনিয়াতে) অস্বীকার করতে।

(21) আর অবশ্যই আমি তাদেরকে (পরকালে জাহান্নামের) গুরুতর শাস্তির পূর্বে (দুনিয়াতে পরীক্ষা ও বিপদের মাধ্যমে) লঘু শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে তারা (তাদের রবের আনুগত্যের দিকে) ফিরে আসে।

(22) আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে, যাকে তার রবের আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেয়ার পর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? নিশ্চয় আমি অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

(23) আর আমি তো মূসাকে (তাওরাত) কিতাব দিয়েছিলাম। অতএব (হে রাসূল!) তুমি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে সন্দেহে থেকো না। আর আমি (মূসার উপর অবতীর্ণ) কিতাবকে বানূ ইসরাঈলের জন্য হিদায়াতস্বরূপ করেছিলাম।

(24) আর আমি তাদের (বানূ ইসরাঈলদের) মধ্য থেকে বহু নেতা মনোনীত করেছিলাম, তারা আমার আদেশানুযায়ী সৎপথ প্রদর্শন করতো, যখন তারা (আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের পথে কষ্টের ওপর) ধৈর্যধারণ করেছিলো। আর তারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখতো।

(25) নিশ্চয় তোমার রব কিয়ামতের দিন তাদের মাঝে সেসব বিষয়ের ফয়সালা করে দিবেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে।

(26) এটা কি তাদেরকে হিদায়াত করলো না যে, আমি তাদের পূর্বে কত জাতিকে ধ্বংস করেছি, যাদের বাসভূমিতে আজ তারা চলাফেরা করছে? নিশ্চয় এতে বহু নিদর্শন রয়েছে। তবুও কি তারা (উপদেশ গ্রহণের জন্যে) শুনবে না?

(27) (পুনরুত্থানকে মিথ্যারোপকারী) এসব লোকজন কি লক্ষ্য করে না যে, আমি শুকনো ভূমিতে পানি প্রবাহিত করি। অতঃপর তা দিয়ে শস্য উৎপন্ন করি, যা থেকে তাদের গবাদি পশু ও তারা নিজেরা খাদ্য গ্রহণ করে? তবুও কি তারা লক্ষ্য করবে না।(১)

(28) আর তারা বলে, কখন হবে এ ফয়সালা (কিয়ামত)? তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বলো।

(29) (হে রাসূল! তাদেরকে) বলো, ফয়সালার (কিয়ামতের) দিনে কাফিরদের ঈমান গ্রহণ তাদের কেনো উপকার করবে না। আর তাদেরকে (তাওবা ও স্বীয় রবের প্রতি প্রত্যাবর্তনের) অবকাশ দেওয়া হবে না।

(30) অতএব তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো, আর (তাদের ভয়াবহ পরিণতির) অপেক্ষা করো, নিশ্চয় তারা (সেটার) অপেক্ষমাণ।