(1) হা-মীম।
(2) এ আল কুরআন পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।
(3) এটি এমন এক কিতাব, যার আয়াতগুলো আল কুরআনরূপে আরবী ভাষায়, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।(১)
(4) (এ কিতাব হচ্ছে মু’মিনদের জন্যে জান্নাতের) সুসংবাদদাতা ও (কাফিরদের জন্যে জাহান্নাম থেকে) সতর্ককারী। কিন্তু (মানুষের) অধিকাংশই এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, অতএব তারা (এর হিদায়াতের বাণী) শুনবে না।
(5) আর তারা বলে: ‘(হে মুহাম্মাদ) তুমি আমাদেরকে যে বিষয়ের দিকে দাওয়াত দিচ্ছ, সে বিষয়ে আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত (তালাবদ্ধ), আমাদের কানের মধ্যে রয়েছে বধিরতা(১) আর তোমার ও আমাদের মধ্যে রয়েছে অন্তরায়।(২) অতএব তুমি (তোমার নিয়মানুযায়ী) কাজ কর, নিশ্চয় আমরাও (আমাদের নিয়মানুযায়ী) কাজ করব।(৩)
(6) (হে রাসূল! তুমি এসব অবাধ্যদেরকে) বল: ‘আমি কেবল তোমাদের মত একজন মানুষ। আমার কাছে এ মর্মে ওহী পাঠানো হয় যে, তোমাদের (সত্য) ইলাহ কেবল এক ইলাহ। অতএব তোমরা (একনিষ্ঠভাবে তাঁরই ইবাদাত করে) তাঁর পথে দৃঢ়ভাবে অটল থাক এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও।’ আর মুশরিকদের জন্য দুর্ভোগ;
(7) যারা যাকাত দেয় না। আর তারাই আখিরাতের অস্বীকারকারী।
(8) নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে, নিরবচ্ছিন্ন চিরস্থায়ী প্রতিদান (জান্নাত)।
(9) (হে রাসূল! তুমি মুশরিকদেরকে) বল: ‘তোমরা কি সে আল্লাহকে অস্বীকার করবে, যিনি দু’দিনে(১) জমিন সৃষ্টি করেছেন? উপরন্তু তোমরা কি (কাউকে) তাঁর সমকক্ষ বানাতে চাচ্ছ? অথচ তিনিই সৃষ্টিকুলের রব।’
(10) আর তিনি জমিনের উপরিভাগে দৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং তাতে বরকত দিয়েছেন, আর তিনি চারদিনের মধ্যে(১) (মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টিকুলের জন্যে) তাতে জীবিকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ (সৃষ্টির সময়ের পরিমাণ) সম্পর্কে যারা জানতে চায়, তাদের জন্য এটাই হবে সঠিক উত্তর।
(11) তারপর তিনি আসমান সৃষ্টির দিকে মনোনিবেশ করলেন, তখন তা ছিল ধোঁয়া। তারপর তিনি আসমান ও জমিনকে বললেন: ‘তোমরা উভয়ে স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় আমার নির্দেশের অনুগত হও। তারা উভয়ে বলল: ‘আমরা স্বেচ্ছায় অনুগত হয়ে এসে গেলাম।’
(12) তারপর তিনি দু’দিনে(১) আসমানসমূহকে সাত আসমানে পরিণত করলেন। আর প্রত্যেক আসমানে তার কার্যাবলী ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন।(১) আর আমি (দুনিয়ার) নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপমালা (তারকারাজি)-র দ্বারা সুসজ্জিত করেছি এবং (শয়তানদের চোরাই পথে শ্রবণের পথ) সুরক্ষিত করেছি। এগুলো হল মহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নির্ধারণ।
(13) তবুও যদি তারা (ঈমান আনা থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তুমি (তাদেরকে) বলে দাও: ‘আদ ও সামূদের ভয়াবহ শাস্তির মতই এক মহা শাস্তি সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি।’
(14) যখন তাদের অগ্র ও পশ্চাৎ থেকে (ধারাবাহিকভাবে) রাসূলগণ তাদের কাছে দাওয়াত নিয়ে এলো যে, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করো না।’ তখন তারা (কাফিররা) বলেছিল: ‘যদি আমাদের রব ইচ্ছা করতেন, তাহলে অবশ্যই (রাসূল হিসাবে) ফিরিশতা নাযিল করতেন। অতএব, তোমাদেরকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছে, নিশ্চয় আমরা তা অস্বীকার করলাম।
(15) আর ‘আদ সম্প্রদায়, তারা জমিনে অন্যায়ভাবে অহংকার করত এবং (নিজেদের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে) বলত: ‘আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী কে আছে?’ তবে কি তারা লক্ষ্য করেনি যে, নিশ্চয় আল্লাহ যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী? আর তারা ( নবী হূদ আনিত) আমার নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করত।
(16) অত:পর আমি তাদের উপর দুর্দিনে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া প্রেরণ করলাম, যাতে তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাতে পারি। আর আখিরাতের শাস্তি তো (দুনিয়ার শাস্তির চেয়ে) অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক, উপরন্তু তাদেরকে (শাস্তি থেকে উদ্ধার করতে) সাহায্য করা হবে না।
(17) আর সামূদ জাতি, আমি তাদেরকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়েছিলাম; কিন্তু তারা হিদায়াতের পথে চলার পরিবর্তে অন্ধ (ভ্রষ্ট) পথে চলাই পছন্দ করেছিল। ফলে তাদের (কুফরী ও পাপাচার) কৃতকর্মের কারণেই লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির বজ্রাঘাত তাদেরকে পাকড়াও করল।
(18) আর যারা ঈমান এনেছিল এবং (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) তাকওয়া অবলম্বন করত, আমি তাদেরকে (সে শাস্তি থেকে) রক্ষা করলাম।
(19) আর যেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে (জাহান্নামের) আগুনের দিকে সমবেত করা হবে এবং তাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করা হবে।
(20) অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের বিরুদ্ধে তাদের (কুফরী ও পাপাচার) কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে।
(21) আর তারা (জাহান্নামীরা) তাদের চামড়াগুলোকে বলবে: ‘কেন তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে?’ তারা বলবে: ‘আল্লাহ আমাদের বাকশক্তি দিয়েছেন, যিনি সবকিছুকে বাকশক্তি দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে (দুনিয়াতে) প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।'
(22) তোমরা (দুনিয়াতে পাপ কাজ করার সময়) কিছুই গোপন করতে না এই বিশ্বাসে যে, তোমাদের কান, চোখসমূহ ও চামড়াসমূহ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে না; বরং তোমরা মনে করেছিলে যে, তোমরা যা কিছু করতে, আল্লাহ তার অনেক কিছুই জানেন না।
(23) বস্তুত তোমাদের রবের ব্যাপারে এই কুধারণাই তোমাদেরকে ধ্বংস করেছে। ফলে তোমরা (ইহকাল ও পরকালে) ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলে।
(24) অতঃপর যদি তারা (তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া কান, চোখ ও চামড়ার সাক্ষ্যের উপর) ধৈর্যধারণ করে তবে জাহান্নামই হবে তাদের আবাস। আর যদি তারা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে চায় (এবং শাস্তি থেকে মুক্ত হতে চায়), তবুও তারা আল্লাহর সন্তুষ্টিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।(১)
(25) আর আমি (দুনিয়ার জীবনে) এ সব কাফিরদের জন্য শয়তানের সহযোগীদেরকে নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম, যারা (দুনিয়াতে) তাদের সামনে ও পিছনে যা আছে, তা তাদের দৃষ্টিতে শোভনীয় করে দিয়েছিল। আর তাদের ওপরে শাস্তির বাণী সত্যে পরিণত হল, তাদের পূর্বে গত হওয়া জিন ও মানুষের বিভিন্ন জাতির ন্যায়, নিশ্চয় এরা ছিল ক্ষতিগ্রস্ত।(১)
(26) আর কাফিররা বলে: ‘তোমরা এ আল কুরআন শ্রবণ করো না এবং এর আবৃত্তি কালে হট্টগোল সৃষ্টি কর, যেন তোমরা বিজয়ী হতে পার।’
(27) সুতরাং আমি অবশ্যই কাফিরদেরকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাবো এবং আমি অবশ্যই তাদের নিকৃষ্ট (শিরক ও পাপ) কাজের মন্দ প্রতিদান দিবো।
(28) এই জাহান্নাম, আল্লাহর দুশমনদের প্রতিদান। সেখানে তাদের জন্য থাকবে স্থায়ী আবাস, আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করার প্রতিফলস্বরূপ।
(29) আর কাফিররা (কিয়ামতের দিন) বলবে: ‘হে আমাদের রব, জিন ও মানুষের মধ্যে যারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে, তাদেরকে আমাদের দেখিয়ে দিন, আমরা তাদের উভয়কে আমাদের পায়ের নিচে রাখব, যাতে তারা (জাহান্নামের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়া) নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
(30) নিশ্চয় যারা বলে: ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার ওপর) অবিচল থাকে, (মৃত্যুর সময়) ফিরিশতারা তাদের কাছে নাযিল হয় (এবং বলে,) ‘তোমরা (মৃত্যু ও তার পরবর্তী বিষয়ে) ভীত হয়ো না, (পিছনে ফেলে আসা দুনিয়ার বিষয়ে) দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।’
(31) ‘আমরা দুনিয়ার জীবনে তোমাদের বন্ধু এবং আখিরাতেও। সেখানে (জান্নাতে) তোমাদের জন্য থাকবে, যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আরো থাকবে, যা তোমরা কামনা করবে।
(32) এটা পরম ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়নস্বরূপ।
(33) আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর (একত্ববাদ ও তাঁর দ্বীনের) দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, ‘অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত?’
(34) আর ভালো কাজ ও মন্দ কাজ সমান হতে পারে না। তোমরা মন্দ আচরণকারী মানুষের অনিষ্টকে উত্তম আচরণ দ্বারা প্রতিহত করো, ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা রয়েছে, যেন সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে ।
(35) আর এটি (এই প্রশংসনীয় স্বভাব) তারাই লাভ করবে যারা ধৈর্যধারণ করবে, আর এর অধিকারী কেবল তারাই হয়, যারা মহা ভাগ্যবান।
(36) আর যদি কখনো শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে তুমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
(37) আর আল্লাহর (বড়ত্ব ও একত্ববাদের ওপর প্রমাণ বহনকারী) নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চাঁদ । (হে মানুষ) তোমরা সূর্যকে সাজদা করো না এবং চাঁদকেও নয়। বরং তোমরা একমাত্র আল্লাহকে সাজদা করো, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা প্রকৃতই তাঁরই ইবাদাত করে থাকো।
(38) অতঃপর যদি তারা অহংকার করে, (তাদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দাও) তবে যারা (যেসব ফিরিশতারা) তোমার রবের নিকটে রয়েছে, তারা দিন-রাত তাঁরই তাসবীহ পাঠ করছে এবং তারা সামান্যতমও ক্লান্তি বোধ করে না।
(39) আল্লাহর (মাহাত্ম্য ও একত্ববাদের ওপর প্রমাণবাহী) আরেকটি নিদর্শন হল এই যে, তুমি জমিনকে দেখতে পাও শুষ্ক-অনুর্বর, অতঃপর যখন আমি তার ওপর (বৃষ্টির) পানি বর্ষণ করি, তখন তা (তার ভেতরে লুকানো বীজ বৃদ্ধির কারণে) নড়ে ওঠে ও বেড়ে ওঠে। নিশ্চয়ই যিনি জমিনকে জীবিত করেন তিনি মৃতদেরও (পুনরুত্থান ঘটিয়ে) জীবিতকারী। নিশ্চয় তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
(40) নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে (অবিশ্বাস, মিথ্যারোপ ও বিকৃতির মাধ্যমে) সত্য থেকে বিমুখ থাকে, তাদের অবস্থা আমার নিকট গোপন নয়। যাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে সে কি উত্তম, না যে কিয়ামত দিবসে (শাস্তি থেকে) নিরাপদ হয়ে উপস্থিত হবে? (হে মানুষ) তোমাদের (ভালো-মন্দ) যা ইচ্ছা আমল কর। নিশ্চয় তোমরা যা আমল করো, তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা।
(41) নিশ্চয় যারা উপদেশ (আল কুরআন) আসার পরও তা অস্বীকার করে (তাদেরকে অবশ্যই কিয়ামত দিবসে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে); আর এটি নিশ্চয় এক (সংরক্ষিত ও) সম্মানিত গ্রন্থ।
(42) এতে বাতিল অনুপ্রবেশ করতে পারে না, সামনের থেকেও না, পিছন থেকেও না। এটি প্রজ্ঞাময়, চিরপ্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।
(43) (হে রাসূল!) তোমাকে (মিথ্যারোপমূলক) যা বলা হচ্ছে, তোমার পূর্ববর্তী রাসূলদেরকেও তাই বলা হয়েছিল।(১) নিশ্চয় তোমার রব (তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি) একান্তই ক্ষমাশীল এবং (অপরাধীদের জন্যে) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রদানকারী।
(44) আর আমি যদি একে (আল কুরআনকে) অনারবী ভাষায় আল কুরআনরূপে নাযিল করতাম, তবে নিশ্চিতভাবেই তারা (কাফিররা আপত্তি তুলে) বলত: ‘এর আয়াতসমূহকে (আমাদের ভাষায়) বিশদভাবে বর্ণিত হয়নি কেন? এটি অনারবী ভাষায় আর রাসূল আরবীভাষী! (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘কুরআন মূলত মু’মিনদের জন্য হিদায়াত ও (অন্তরের রোগের) নিরাময়। আর যারা ঈমান আনে না, তাদের কানে রয়েছে বধিরতা(১) যেন আল কুরআন তাদের (অন্তরের) জন্য অন্ধত্ব (পর্দা) সরূপ। তাদেরকেই ডাকা হবে দূরবর্তী স্থান থেকে।(২)
(45) আর অবশ্যই আমি মূসাকে (তাওরাত) কিতাব দিয়েছিলাম। অতঃপর তাতে মতভেদ করা হয়।(১) আর যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে (তাদের শাস্তির সময়ের ব্যাপারে) পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকতো(২), তবে (দুনিয়াতে শাস্তি নাযিল হয়ে) এদের মধ্যে ফয়সালা হয়ে যেত। নিশ্চয় এরা এ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে নিমজ্জিত।
(46) যে ব্যক্তি সৎকাজ করে সে তার নিজের জন্যই তা করে। আর যে অসৎকাজ করে তা (এর পরিণাম) তার ওপরই বর্তাবে। তোমার রব তাঁর বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলমকারী নন।
(47) কিয়ামতের জ্ঞান শুধু আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়।(১) তাঁর অজ্ঞাতসারে আবরণ হতে ফলসমূহ বের হয় না, কোন নারী গর্ভধারণ করে না এবং সন্তানও প্রসব করে না এবং সেদিন যখন তিনি তাদেরকে ডেকে বলবেন: ‘(আজ) আমার শরীকরা কোথায় (যাদেরকে তোমরা বানিয়েছো?’ তারা (মুশরিকরা) বলবে: ‘আমরা আপনার সামনে স্বীকার করছি যে, আপনার শরীক হওয়ার ব্যাপারে আমাদের নিকট কোন সাক্ষী নেই।’
(48) আর পূর্বে (দুনিয়ার জীবনে) যাদেরকে (যেসব মূর্তিকে) তারা (উপাস্য হিসেবে) ডাকত, তারা (সেদিন) তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে যাবে এবং তারা বিশ্বাস করবে, তাদের পলায়নের কোন জায়গা নেই।
(49) মানুষ (বৈষয়িক) কল্যাণ (১) প্রার্থনায় ক্লান্তি বোধ করে না; কিন্তু যদি অকল্যাণ তাকে স্পর্শ করে তাহলে সে (আল্লাহর রহমত থেকে) নিরাশ ও হতাশ হয়ে পড়ে।
(50) আর আমি যদি তাকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করার পর রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই তখন সে অবশ্যই বলে থাকে, ‘এটি আমার প্রাপ্য, আমার মনে হয় না কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমাকে যদি আমার রবের কাছে ফিরিয়েও নেয়া হয়; তবুও তার কাছে আমার জন্য শুধু কল্যাণই থাকবে।’ (আল্লাহ বলেন) ‘অবশ্যই আমি কাফিরদেরকে তাদের (দুনিয়ার জীবনের কুফরী ও পাপ) আমল সম্পর্কে অবহিত করবো এবং অবশ্যই তাদেরকে (সে আমল অনুযায়ী) কঠিন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাব।
(51) আর যখন আমি মানুষের প্রতি (নি‘আমত দান করে) অনুগ্রহ করি তখন সে (আমার স্মরণ ও আনুগত্য থেকে) বিমুখ হয় এবং দূরে সরে যায়; আর যখন অকল্যাণ তাকে স্পর্শ করে তখন সে (তা থেকে বাঁচার জন্য) দীর্ঘ দু‘আকারী হয়ে যায়।
(52) (হে রাসূল! তুমি এসব মুশরিকদেরকে) বলো: ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ, যদি তা (এই আল- কুরআন) আল্লাহর কাছ থেকে এসে থাকে আর তোমরা তা অস্বীকার কর(১); তবে তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে, যে ব্যক্তি (এর) ঘোর বিরোধিতায় লিপ্ত?’
(53) অচিরেই আমি তাদেরকে বিশ্বজগতে ও তাদের নিজেদের মধ্যে আমার নিদর্শনাবলি দেখাবো, যাতে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয় যে, এটি (আল-কুরআন) সত্য। (হে রাসূল!) তোমার রবের সম্পর্কে এটা কি যথেষ্ট নয় যে, তিনি সকল বিষয়েই সাক্ষী?(১)
(54) জেনে রাখ, নিশ্চয় তারা (মুশরিকরা) তাদের রবের সাক্ষাতের বিষয়ে সন্দেহে রয়েছে; জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।