(1) (হে রাসূল! তোমার উম্মতকে) বলো: ‘আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, নিশ্চয় জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে (আল-কুরআন তিলাওয়াত) শুনেছে। অতঃপর তারা (নিজ জাতির কাছে গিয়ে) বলেছে: ‘আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি,
(2) ‘যা সত্যের দিকে হিদায়াত করে; তাই আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। আর আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না।’
(3) ‘আর নিশ্চয় আমাদের রবের মর্যাদা সমুচ্চ। তিনি কাউকে স্ত্রী কিংবা সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেননি।’
(4) ‘আর আমাদের মধ্যকার নির্বোধেরা আল্লাহর ব্যাপারে অবাস্তব (শিরকী) কথা- বার্তা বলত।’
(5) ‘অথচ আমরা তো ধারণা করতাম যে, কোন মানুষ ও জিন কখনো আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা আরোপ করতে পারে না।’(১)
(6) আর নিশ্চয় কতিপয় (মূর্খ) মানুষ (জনহীন প্রান্তরে বিপদ-আপদে) কতিপয় জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা জিনদের অহংকার বাড়িয়ে দিয়েছিল।
(7) ‘আর নিশ্চয় তারা (কতিপয় জিনরা) ধারণা করেছিল যেমন তোমরা (কতিপয় মানুষ) ধারণা করেছ যে, আল্লাহ কাউকে কখনই পুনরুত্থিত করবেন না।’
(8) ‘আর নিশ্চয় আমরা (ঊর্ধ্বজগতের সংবাদ জানতে চোরাই পথে) আসমান স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম; কিন্তু আমরা সেটাকে পেলাম যে, তা কঠোর প্রহরী এবং উল্কাপিণ্ড দ্বারা পরিপূর্ণ।’
(9) ‘আর আমরা ইতঃপূর্বে তো (ঊর্ধ্বজগতের) সংবাদ শোনার জন্য আসমানের বিভিন্ন ঘাটিতে বসতাম; কিন্তু এখন যে শুনতে চাইবে, সে তার জন্য জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড প্রস্তুত পাবে।’
(10) ‘আর নিশ্চয় আমরা (এ কঠোর পাহারার কারণ) বুঝতে পারছিলাম না, জমিনে যারা রয়েছে তাদের জন্য অকল্যাণ চাওয়া হয়েছে; নাকি (এর মাধ্যমে) তাদের রব তাদের ব্যাপারে কোন কল্যাণের ইচ্ছা পোষণ করেছেন।’
(11) ‘আর নিশ্চয় আমাদের মধ্যে রয়েছে কতিপয় সৎকর্মশীল এবং কতিপয় এর ব্যতিক্রম (পাপিষ্ঠ কাফির)। আমরা ছিলাম বিভিন্ন মত ও পথের অনুসারী।’
(12) ‘আর আমরা এ দৃঢ় বিশ্বাস রাখি যে, আমরা কিছুতেই জমিনের মধ্যে আল্লাহকে অপারগ করতে পারব না এবং পালিয়েও কখনো তাকে অপারগ করতে পারব না।’
(13) ‘আর নিশ্চয় আমরা যখন হিদায়াতের বাণী (আল-কুরআন) শুনলাম, তখন এর প্রতি ঈমান আনলাম। আর যে তার রবের প্রতি ঈমান আনে, সে (তার পুণ্যের প্রতিদানের ব্যাপারে) না কোন ক্ষতির আশঙ্কা করবে এবং (পাপ বাড়িয়ে) না কোন অন্যায়ের।’
(14) ‘আর নিশ্চয় আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক আছে (আল্লাহর অনুগত) মুসলিম এবং আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সীমালঙ্ঘনকারী (কাফির)। কাজেই যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে, তারাই সরল-সঠিক পথ বেছে নিয়েছে।’
(15) ‘আর যারা সীমালঙ্ঘনকারী, তারা তো জাহান্নামের ইন্ধন।’
(16) ‘আর তারা যদি (ইসলামের) সঠিক পথে অবিচল থাকত, তাহলে আমি অবশ্যই তাদেরকে (আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে) প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতাম।’(১)
(17) যাতে আমি তা দিয়ে তাদেরকে (আল্লাহর নি‘আমতের শুকরিয়ার) পরীক্ষা করতে পারি। আর যে তার রবের স্মরণ (আল-কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাকে তিনি কঠিন শাস্তিতে (জাহান্নামে) প্রবেশ করাবেন।
(18) আর নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহর জন্যই (নির্দিষ্ট)। কাজেই (সেখানে) তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।
(19) আর নিশ্চয় আল্লাহর বান্দা (মুহাম্মাদ) যখন তাঁকে ডাকার জন্য (সালাতে) দাঁড়াল, তখন তারা (জিনেরা) তার নিকট ভিড় করল।
(20) (হে রাসূল! তুমি এসব মুশরিকদেরকে) বলো: ‘নিশ্চয় আমি আমার রবকেই ডাকি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না।’
(21) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য না কোন অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখি এবং না কোন কল্যাণ করার।’
(22) (হে রাসূল!) বলো: ‘(আমি আল্লাহর অবাধ্য হলে) নিশ্চয় আল্লাহর কাছ থেকে কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ছাড়া কখনো আমি কোন আশ্রয়ও পাবো না।’
(23) ‘কেবল আল্লাহর বাণী ও তাঁর রিসালাত পৌঁছানোই আমার দায়িত্ব। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।’
(24) অবশেষে যখন তারা (কাফিররা কিয়ামতের) সেদিনটি প্রত্যক্ষ করবে, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেওয়া হয়েছে, তখন তারা জানতে পারবে যে, সাহায্যকারী হিসেবে কে অধিক দুর্বল এবং সংখ্যায় কারা সবচেয়ে কম।
(25) (হে রাসূল! পুনরুত্থান অস্বীকারীদেরকে) বলো: ‘আমি (নিজেই) জানি না, তোমাদেরকে যার (কিয়ামতের) প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা কি নিকটবর্তী, নাকি এর জন্য আমার রব কোন দীর্ঘ মেয়াদ নির্ধারণ করবেন?(১)
(26) তিনি সমস্ত অদৃশ্যের জ্ঞানী, আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না।
(27) তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ছাড়া।(১) আর তিনি তখন তার সামনে ও তার পিছনে প্রহরী (ফিরিশতা) নিযুক্ত করেন।(২)
(28) যাতে তিনি এটা জানতে পারেন যে, তারা (রাসূলগণ) তাদের রবের রিসালাত (জিন ও মানুষের কাছে) পৌঁছিয়েছে কিনা। আর তাদের (ফিরিশতা ও রাসূলদের) কাছে যা (জ্ঞান) রয়েছে, তা তিনি পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি (সৃষ্টি জগতের) প্রতিটি বস্তু গুণে গুণে হিসাব করে রেখেছেন।