7 - Al-A'raaf ()

|

(1) আলিফ, লাম, মীম, সোয়াদ।

(2) (হে রাসূল!) এটি কিতাব (আল-কুরআন), যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তার সম্পর্কে তোমার অন্তরে যেন কোন সঙ্কীর্ণতা ও সন্দেহ না থাকে, যাতে তুমি এর দ্বারা (মানুষকে) সতর্ক করতে পারো এবং এটি মু’মিনদের জন্য উপদেশ।

(3) (হে মানুষ!) তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তোমরা তার অনুসরণ করো এবং তাঁকে (আল্লাহকে) ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবকরূপে অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে খাকো।

(4) আর এমন বহু জনপদ রয়েছে, যা আমি (শাস্তির মাধ্যমে) ধ্বংস করে দিয়েছি। (যখনই তারা কুফরি ও ভ্রষ্টতার ব্যাপারে হঠকারিতা দেখিয়েছে) তখনই আমার শাস্তি তাদের রাতে অথবা দুপুরে ওপর আপতিত হয়েছিল, যখন তারা বিশ্রাম করছিল।

(5) অতঃপর যখন আমার শাস্তি তাদের ওপর আপতিত হয়েছিল, তখন তাদের মুখে শুধু এ কথাই ছিল যে, ‘অবশ্যই আমরা যালিম ছিলাম।’

(6) অতঃপর যাদের কাছে রাসূল পাঠানো হয়েছিল, (আর কিয়ামতের দিন) অবশ্যই তাদেরকে আমি জিজ্ঞেস করব (১) এবং রাসূলগণকেও অবশ্যই আমি জিজ্ঞেস করব (২)

(7) অতঃপর (সেদিন সকল সৃষ্টিজীবের সামনে) অবশ্যই আমি তাদের কাছে পূর্ণ জ্ঞানের সাথে (তারা দুনিয়াতে কী করেছে) তাদের কাজগুলো বর্ণনা করব। আর আমি তো তাদের নিকট থেকে অনুপস্থিতও ছিলাম না।

(8) আর সেদিন (কিয়ামতের দিন আমলসমূহের) পরিমাপ হবে যথাযথ। সুতরাং যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম।

(9) আর যাদের (নেকীর) পাল্লা হালকা হবে, তারাই হবে সেই সব লোক, যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কারণ তারা (দুনিয়াতে) আমার আয়াতসমূহের প্রতি (অস্বীকার করার মাধ্যমে) যুলম করত।

(10) আর (হে মানুষ!) অবশ্যই আমি তোমাদেরকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং সেখানে তোমাদের জন্যে জীবনোপকরণসমূহ তৈরি করে দিয়েছি। অথচ (সেসবের জন্য) তোমরা খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।

(11) আর অবশ্যই আমি (আল্লাহ) তোমাদেরকে (তোমাদের আদি পিতা আদমকে) সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদের আকৃতি দিয়েছি। তারপর ফিরিশতাদেরকে বলেছি: ‘তোমরা আদমকে সাজদা করো।’ অতঃপর তারা ইবলিস ছাড়া সকলেই সাজদা করেছে, । সে (অহংকার ও হঠকারিতা করায়) সাজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

(12) তিনি বললেন: ‘(হে ইবলিস!) আদমকে সাজদা দেয়ার আদেশ মানার ক্ষেত্রে কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছে?’ সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন, কাদামাটি থেকে।'

(13) তিনি বললেন: ‘তাহলে তুমি এখান ( জান্নাত ) থেকে বেরিয়ে যাও, এখানে থেকে অহংকার করার কোনো অধিকার তোমার নেই। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও। নিশ্চয় তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত।’

(14) ইবলিস বললো: ‘(হে আমার রব, ) আমাকে পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন।’

(15) আল্লাহ বললেন: ‘(হে ইবলিস,) নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’(১)

(16) সে (ইবলীস) বলল: ‘আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, সে কারণে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আপনার সরল সঠিক পথে (বিপথগামী করতে) বসে থাকব।’

(17) ‘তারপর অবশ্যই আমি তাদের কাছে আসব, তাদের সামনে থেকে ও তাদের পিছন থেকে, তাদের ডানদিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে(১) এবং আপনি তাদের অধিকাংশকে অকৃতজ্ঞ পাবেন।’

(18) আল্লাহ বললেন: ‘(হে ইবলিস!) তুমি লাঞ্ছিত আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত অবস্থায় এখান (জান্নাত) থেকে বের হয়ে যাও । অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে যে তোমার অনুসরণ করবে, আমি (কিয়ামতের দিন) তোমাদের সবাইকে দিয়ে অবশ্যই জাহান্নাম ভরে দিবো।’

(19) আর (আল্লাহ বললেন:) ‘হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো। অতঃপর সেখানকার (পবিত্র বস্তুসমূহ) হতে যা ইচ্ছা তা খাও; কিন্তু এ গাছের ধারে–কাছেও যেও না, তাহলে তোমরা (সীমালঙ্ঘনকারী) যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’

(20) তারপর শয়তান তাদের দুজনকে কুমন্ত্রণা দিল, যাতে তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল তা তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ে। আর সে বলল: ‘তোমাদের রব তোমাদেরকে এ গাছকে নিষিদ্ধ করেছেন, কারণ তোমরা (এ গাছের ফল খেলে) উভয় ফিরিশতা হয়ে না যাও কিংবা তোমরা (জান্নাতে) স্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে না পড়ো।’

(21) আর সে (তাদের নিকট) আল্লাহর শপথ করে বলল: ‘(হে আদম ও হাওয়া!) নিশ্চয় আমি তোমাদের উভয়ের জন্য কল্যাণকামীদের একজন।’

(22) অতঃপর শয়তান তাদের উভয়কে ধোঁকার মাধ্যমে তাদেরকে তাদের পূর্বের সম্মানজনক অবস্থান থেকে (নিচের পথে) নিচে নামিয়ে আনল। এরপর তারা উভয়ে যখন সে গাছের ফল খেলো, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের পরস্পরের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদের লজ্জাস্থান আবৃত করতে লাগল। তখন তাদের রব তাদেরকে ডেকে বললেন: ‘আমি কি তোমাদের জন্য এ গাছকে নিষিদ্ধ করিনি এবং আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের উভয়ের প্রকাশ্য শত্রু?।’

(23) তারা বলল: ‘হে আমাদের রব ! আমরা (নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে) নিজেদের প্রতি যুলম করছি। আর আপনি যদি আমাদের (গুনাহগুলো) ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তাহলে অবশ্যই আমরা (দুনিয়া ও আখিরাতে) ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো।’

(24) আল্লাহ (আদম, হাওয়া ও ইবলিসকে) বললেন: ‘তোমরা (জান্নাত থেকে পৃথিবীতে) নেমে যাও, (আজ থেকে ) তোমরা একে অন্যের শত্রু। পৃথিবীতে তোমাদের কিছুদিনের জন্য বসবাস ও জীবিকার ব্যবস্থা থাকবে।’

(25) তিনি (আরো) বললেন: ‘(এখন থেকে ) তোমরা সেখানেই জীবন যাপন করবে এবং সেখানেই তোমাদের মৃত্যু হবে। আর (পুনরুত্থানের দিন) সেখান থেকেই তোমাদেরকে বের করা হবে।’

(26) ‘হে আদম সন্তান! অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য (প্রয়োজনীয়) পোশাক নাযিল করেছি, তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার জন্য ও সাজসজ্জার ও শোভাবর্ধক হিসেবে। আর (আরেক ধরনের পোশাক রয়েছে, যা) তাকওয়ার পোষাক, এটাই (প্রকাশ্য পোশাকের চেয়ে) উত্তম। এটা (পোশাক মূলত:) আল্লাহর নিদর্শসমূহের অন্যতম, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

(27) ‘হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই ধোঁকায় না ফেলে(১), যেভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে (নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়াকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে ধোঁকায় ফেলে) জান্নাত থেকে বের করেছিল। সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাবার জন্য বিবস্ত্র করেছিল। নিশ্চয় সে ও তার বংশধররা তোমাদেরকে দেখতে পায়, যেখানে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমি শয়তানদেরকে তাদের অভিভাবক বানিয়েছি, যারা ঈমান আনায়ন করে না।’

(28) আর যখন তারা (মুশরিকরা) কোনো অশ্লীল কাজ করে(১), তখন বলে: ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এর ওপর পেয়েছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এরই নির্দেশ দিয়েছেন।’ ‘(হে রাসূল! তাদেরকে) বলে দাও: আল্লাহ অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না। (হে মুশরিকরা!) তোমরা কি আল্লাহ সম্বদ্ধে এমন কিছু (মিথ্যা ও অপবাদ) বলছ, যা তোমরা জান না।’

(29) (হে রাসূল! তুমি এ মুশরিকদেরকে) বলো: ‘আমার রব আমাকে ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন।’(১) আর তোমরা প্রত্যেক মসজিদে (সাজদার জায়গায় ও সকল ইবাদাতে) তোমাদের লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহকেই নির্ধারণ করো এবং তাঁকে খাঁটি আনুগত্যের ভিত্তিতে এককভাবে ডাকো। তিনি যেভাবে তোমাদেরকে (শূন্য থেকে) প্রথমে সৃষ্টি করেছেন, তোমরা সেভাবেই (মৃত্যুর পরে পুনরুত্থিত হয়ে) ফিরে আসবে।’

(30) (আল্লাহ মানুষকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন) একদলকে তিনি হিদায়াত করেছেন। আর আরেক দলের ওপর ভ্রষ্টতা নির্ধারিত হয়ে গেছে। নিশ্চয় তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে তাদের অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে এবং তারা ধারণা করছে যে, তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।

(31) হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক মসজিদের (ইবাদতের ও সালাতের) সময় সুন্দর সাজে সুসজ্জিত হও। আর তোমরা (হালালকৃত পবিত্র বস্তুসমূহ থেকে) খাও ও পান করো; কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।

(32) (হে রাসূল! যারা আল্লাহর হালালকৃত পোশাক ও খাদ্য ইত্যাদি পবিত্র বস্তুকে হারাম করে, তুমি সেসব মুশরিকদেরকে) বলো: ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের জন্যে যেসব সৌন্দর্য সামগ্রী এবং পবিত্র রিযক সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো কে হারাম করেছে?’ (হে রাসূল! তাদেরকে) তুমি বলো: ‘দুনিয়ার জীবনে এসব জিনিস ঈমানদারদের জন্যে (যদিও কাফিররা তাতে অংশীদার হয়), তবে তা কিয়ামতের দিন তাদের জন্যেই নির্দিষ্ট থাকবে।’ এভাবেই আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি।’

(33) (হে রাসূল! আল্লাহর হালালকৃত বস্তু হারামকারী এ মুশরিকদেরকে) তুমি বলো: ‘নিশ্চয় আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, সকল প্রকারের গুনাহের কাজ, অন্যায়ভাবে (কারো রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত হরণ ও মানহানি প্রভৃতির মাধ্যমে) সীমালঙ্ঘন করা, কোনো কিছুকে আল্লাহর সাথে শরীক করা-যার স্বপক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি এবং না জেনে-বুঝে আল্লাহর (নাম, গুণাবলি, তাঁর কর্ম ও শরী‘আতের) ব্যাপারে তাঁর উপর মিথ্যারোপ করা।’

(34) আর প্রত্যেক জাতির রয়েছে (মৃত্যুর) একটি নির্দিষ্ট সময়। অতঃপর যখন তাদের (মৃত্যুর নির্ধারিত) সময় আসবে, তখন তারা মুহূর্তকালও বিলম্ব করতে পারবে না এবং এগিয়েও আনতে পারবে না।

(35) হে আদম সন্তান! যখন তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ এসে আমার আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে বর্ণনা করবে(১), তখন যারা (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে) তাঁকে ভয় করবে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করবে, (কিয়ামতের দিন) তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং (দুনিয়ার জীবনের ব্যাপারে) তারা চিন্তিতও হবে না।

(36) তবে যারা কুফরী করবে এবং অহংকারবশত আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করবে, তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।

(37) সুতরাং তার চেয়ে বড় যালিম আর কে, যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রটনা করে(১) কিংবা তাঁর আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে? তাদের জন্য যে অংশ লেখা আছে, তা তাদের কাছে পৌঁছবে। অবশেষে যখন আমার (মৃত্যুর) ফিরিশতাগণ তাদের জান কবজের জন্য তাদের কাছে আসবে, তখন তারা (তাদেরকে) জিজ্ঞেস করবে: ‘আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে (যে দেবতাগুলোকে) তোমরা ডাকতে, তারা এখন কোথায়?' তারা বলবে: ‘তারা আমাদের থেকে উধাও হয়ে গেছে।’ আর তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয় তারা কাফির ছিল।

(38) আল্লাহ বলবেন: ‘(হে মুশরিকরা,) তোমাদের আগে যে (কাফির ও পথভ্রষ্ট) জিন ও মানবজাতি গত হয়েছে, তাদের সাথে তোমরা জাহান্নামে প্রবেশ করো।’ যখনই কোনো একদল তাতে প্রবেশ করবে তখনই তারা অন্য দলকে অভিসম্পাত করবে। অবশেষে যখন সবাই তাতে (জাহান্নামে) একত্র হবে, তখন তাদের পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবে: ‘হে আমাদের রব! এরাই আমাদেরকে (হিদায়েতের পথ থেকে দূরে সরিয়ে) পথভ্রষ্ট করেছিল। কাজেই এদেরকে দ্বিগুণ আগুনের শাস্তি দিন।’ আল্লাহ বলবেন: ‘প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি; কিন্তু তোমরা তা জান না।’

(39) আর তাদের পূর্ববর্তীরা (অনুসরণীয় নেতৃস্থানীয়রা) পরবর্তীদেরকে (অনুসারীদেরকে ) বলবে: ‘(হে অনুসারীরা!) আমাদের ওপর তোমাদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কাজেই তোমরা (কুফরি ও গুনাহের) যা অর্জন করেছিলে তার জন্য শাস্তি ভোগ করো (যেমনিভাবে আমরা শাস্তি ভোগ করছি)

(40) নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে এবং তা সম্বন্ধে অহংকার করেছে, (তারা মারা গেলে) তাদের (রূহগুলোর) জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না; যতক্ষণ না সূঁচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে ( যা সম্পূর্ণ অসম্ভব)। আর এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে শাস্তির প্রতিফল দেই।

(41) তাদের (অহংকারী মিথ্যাবাদীদের) জন্যে থাকবে জাহান্নামের বিছানা এবং তাদের ওপরের আচ্ছাদনও (আগুনের হবে)। আর এভাবেই আমি যালিমদেরকে প্রতিফল দেই।

(42) পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে ও (সাধ্যমতো) সৎকাজ করবে, বস্তুত আমি (আল্লাহ) কারো ওপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত ভার চাপিয়ে দেই না। আর তারাই হবে জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।

(43) আর আমি (জান্নাতে) তাদের অন্তরসমূহ থেকে হিংসা ও বিদ্বেষ দূর করে দিবো, তাদের (জান্নাতের) পাদদেশে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। আর তারা বলবে: ‘সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদেরকে এ পথের হিদায়াত দান করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত না করলে, আমরা কখনো হিদায়াত পেতাম না। অবশ্যই আমাদের রবের প্রেরিত রাসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছিলেন।’ আর তাদেরকে (একজন ঘোষণাকারী ফিরিশতা মাধ্যমে) সম্বোধন করে বলা হবে: ‘তোমাদের নেক আমলের কারণে তোমাদেরকে এ জান্নাতের উত্তরাধিকার করা হয়েছে।’

(44) আর জান্নাতবাসীগণ জাহান্নামীদেরকে ডেকে বলবে: ‘আমাদের রব আমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন আমরা তা বাস্তবেও নিশ্চিতভাবে পেয়েছি। (হে কাফিররা!) তোমাদের রব তোমাদেরকে যে (জাহান্নামের) ওয়াদা দিয়েছিল, তোমরা কি তা বাস্তবে নিশ্চিতভাবে পেয়েছো?’ তারা বলবে: ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর একজন ঘোষণাকারী তাদের মধ্যে ঘোষণা করবে: ‘যালিমদের ওপর আল্লাহর (স্থায়ী) অভিসম্পাত।

(45) যারা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করতো এবং তাতে বক্রতা খুঁজে বেড়াতো(১) এবং তারা ছিল, আখিরাতকে অস্বীকারকারী।’

(46) আর তাদের উভয়ের (জান্নাতী ও জাহান্নামীদের) মধ্যে পর্দা থাকবে। আর আ’রাফে(১) কিছু লোক থাকবে, যারা (জান্নাতবাসী ও জাহান্নামী) প্রত্যেকে প্রত্যেককে তাদের চেহারা চিহ্ন দেখে চিনতে পারবে।(২) আর তারা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে (সম্মানার্থে) বলবে: ‘তোমাদের ওপর সালাম তথা শান্তি বর্ষিত হোক।’ তারা তখনো জান্নাতে প্রবেশ করেনি; কিন্তু (আল্লাহর রহমতে সেখানে প্রবেশের) আশা করে।

(47) আর যখন আ‘রাফবাসীদের দৃষ্টি জাহান্নামবাসীদের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে, তখন তারা (ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আল্লাহর নিকট দু‘আ করে) বলবে: ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে (আপনার সাথে শিরক ও কুফরকারী) যালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গী করবেন না।’

(48) আর আ‘রাফের অধিবাসীরা এমন (কিছু জাহান্নামী কাফির) লোকদেরকে ডাকবে, যাদেরকে তারা তাদের (চেহারার কালো ও নীল চোখের) চি‎‎হ্ন দ্বারা চিনবে, তারা তাদেরকে ডেকে বলবে:(আজ) তোমাদের প্রচুর সম্পদ ও জনবল এবং তোমাদের অহংকার কোনো কাজে আসল না।’

(49) (আল্লাহ মু’মিনদের দিকে ইঙ্গিত করে কাফিরদেরকে বলবেন:) এরাই কি তারা যাদের সম্পর্কে তোমরা শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ তাদেরকে দয়া করবেন না? (অথচ তাদেরকেই বলা হবে) ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো, (ভবিষ্যৎ নিয়ে) তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং (দুনিয়ার সুবিধাদি হারিয়ে) তোমরা চিন্তিতও হবে না।’

(50) আর জাহান্নামীরা জান্নাতীদেরকে ডেকে বলবে: ‘আমাদের ওপর কিছু পানি অথবা তোমাদেরকে আল্লাহ যে রিযক দিয়েছেন, তা ঢেলে দাও।’ তারা বলবে: ‘নিশ্চয় আল্লাহ তো এ দুটি কাফিরদের ওপর হারাম করেছেন।’

(51) যারা (এ কাফিররাই দুনিয়াতে) তাদের দীনকে ঠাট্টার পাত্র ও খেল-তামাশা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। আর দুনিয়ার জীবনের চাকচিক্য ও সৌন্দর্য যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছিল। কাজেই আজ আমি তাদেরকে ভুলে যাবো (এবং তাদেরকে শাস্তিতে নিক্ষেপ করবো), যেমনিভাবে তারা তাদের এ দিনের সাক্ষাতকে ভুলে গিয়েছিলো। উপরন্তু তারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছিল।

(52) আর অবশ্যই আমি তাদের নিকট নিয়ে এসেছি এমন এক কিতাব (আল-কুরআন) যা আমি পূর্ণ জ্ঞানের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি এবং এটি মু’মিনদের জন্য পথনির্দেশনা ও রহমতস্বরূপ।

(53) তারা (কাফিররা) কি শুধু সে পরিণামের (যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির) অপেক্ষা করছে? যেদিন তার পরিণাম প্রকাশ হবে, সেদিন যারা আগে সেটার (শাস্তির) কথা ভুলে গিয়েছিল তারা বলবে: ‘আমাদের রবের রাসূলগণ তো সত্য নিয়ে এসেছিলেন (আমরাই মূর্খের মতো তা অস্বীকার করেছি)। আমাদের কি এমন কোনো সুপারিশকারী আছে, যে আমাদের জন্য সুপারিশ করবে, কিংবা আমাদেরকে কি আবার (দুনিয়ার জীবনে) ফেরত পাঠানো হবে, যেন আমরা আগে যা করতাম তা থেকে ভিন্ন আমল করতে পারি? অবশ্যই তারা (কুফরির কারণে) নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং তারা যে মিথ্যা রটাত (আল্লাহ ব্যতীত যাদের পূজা করত), তা তাদের থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।

(54) (হে মানুষ!) নিশ্চয় তোমাদের রব তো তিনিই (আল্লাহ), যিনি আসমানসমূহ ও জমিন (পূর্ব নমুনা ছাড়াই) ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন; তারপর তিনি ‘আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন। তিনিই দিনকে রাত দিয়ে ঢেকে দেন(১), তাদের একটি অন্যটিকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে (২)। আর সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্ররাজি (তিনিই সৃষ্টি করেছেন এবং এগুলো) তাঁরই হুকুমের অনুগত। জেনে রাখো, সৃষ্টিও তাঁর, আদেশও একমাত্র তাঁরই। সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ কত না বরকতময়!

(55) (হে মু’মিনগণ!) তোমরা তোমাদের রবকে ডাক অনুনয় বিনয় করে ও গোপনে। নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।

(56) আর তোমরা জমিনে শান্তি স্থাপনের পর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না এবং তাঁকে ডাক ভয় ও আশা নিয়ে। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের অতি নিকটে।

(57) আর তিনিই তাঁর রহমত (বৃষ্টি) বর্ষণের আগে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রবাহিত করেন। অবশেষে যখন সেটা ভারী মেঘমালা ধারণ করে, তখন আমি সেটাকে মৃত জনপদের দিকে হাঁকিয়ে নেই। অতঃপর আমি তা দ্বারা বৃষ্টি বর্ষণ করি, তারপর তা দিয়ে সব রকমের ফল-ফসল উৎপাদন করি। এভাবেই আমি মৃতদেরকে (তাদের কবর থেকে জীবিত) বের করব। (আমি এটি এ জন্য করেছি যে,) যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।

(58) আর উৎকৃষ্ট ভূমি থেকে তার রবের আদেশে ফসল উৎপন্ন হয়।(১) আর যা নিকৃষ্ট ভূমিতে কঠোর পরিশ্রম না করলে, কিছুই জন্মে না।(২) এভাবে আমি কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ের জন্য (সত্যের পক্ষে) নিদর্শনসমূহ বিভিন্নভাবে বর্ণনা করি।

(59) অবশ্যই আমি নূহকে (রাসূল হিসেবে) তার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর তিনি বলেছিলেন: 'হে আমার সম্প্রদায়! এক আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই। (যদি তোমরা কুফরির ওপর অটল থাকো তবে) নিশ্চয় আমি তোমাদের ওপর (কিয়ামতের) ভয়াবহ দিনের শাস্তির আশঙ্কা করছি।’

(60) (প্রত্যুত্তরে) তার সম্প্রদায়ের নেতারা বলেছিল: ‘আমরা তো তোমাকে অবশ্যই সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি।’

(61) সে (নূহ) বললো: ‘হে আমার সম্প্রদায়, আমার মধ্যে কোন ভ্রষ্টতা নেই(১); বরং আমি তো সৃষ্টির রবের পক্ষ থেকে রাসূল।’

(62) ‘আমি তোমাদের নিকট আমার রবের রিসালাত (অহী) পৌঁছাচ্ছি এবং তোমাদের কল্যাণ কামনা করছি।(১) আর আমি আল্লাহর কাছ থেকে সেসব বিষয় (অহী) জানি, যা তোমরা জানো না।’

(63) ‘তোমরা কি আশ্চর্য হচ্ছো যে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকে (চেনা-জানা) এক ব্যক্তির নিকট উপদেশ (অহী) এসেছে, যাতে সে তোমাদেরকে (কঠিন শাস্তি হতে) সতর্ক করে, আর যাতে তোমরা (আল্লাহ তা‘আলার আদেশ-নিষেধ মেনে) তাঁকে ভয় করো এবং যাতে তোমরা (তাঁর প্রতি ঈমান এনে) রহমতপ্রাপ্ত হও’?

(64) অতঃপর তারা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করলো। ফলে আমি তাকে ও তার সাথে নৌকায় যারা (যেসব মু’মিনরা) ছিল, তাদেরকে (ডুবে যাওয়া থেকে) রক্ষা করলাম। আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যারোপ করেছিল, তাদেরকে আমি (তুফান ও মহা প্লাবনের দ্বারা) ডুবিয়ে দেই। নিশ্চয় তারা ছিল (সত্য গ্রহণের ক্ষেত্রে ) এক অন্ধ সম্প্রদায় ।

(65) আর ‘আদ জাতির কাছে তাদের ভাই হূদকে প্রেরণ করলাম। সে বলল: ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তোমরা কি (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে) তাঁকে ভয় করবে না?(১)

(66) (প্রত্যুত্তরে) তার সম্প্রদায়ের কাফির নেতৃবৃন্দরা বলল: ‘নিশ্চয় আমরা তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় দেখতে পাচ্ছি এবং আমরা অবশ্যই তোমাকে (রাসূল হওয়ার দাবিতে) মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত মনে করি।’

(67) সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার মধ্যে কোন নির্বুদ্ধিতা নেই; বরং আমি সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে একজন রাসূল।’

(68) (আমার কর্তব্য হচ্ছে) ‘আমি তোমাদের নিকট আমার রবের রিসালাতসমূহ (তাওহীদ ও শরী‘আতের বাণী) পৌঁছাচ্ছি। আর আমি তোমাদের জন্য বিশ্বস্ত হিতাকাঙ্ক্ষী।’

(69) ‘তোমরা কি আশ্চর্য হচ্ছো যে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকে (চেনা-জানা) এক ব্যক্তির নিকট উপদেশ বাণী (অহী) এসেছে, যাতে সে তোমাদেরকে (আল্লাহর শাস্তি থেকে) সতর্ক করে? আর তোমরা স্মরণ করো, যখন তিনি নূহের সম্প্রদায়ের (কুফুরির কারণে ধ্বংস করার) পর তোমাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করেছেন এবং সৃষ্টিতে (দৈহিক গঠনে) তোমাদেরকে অধিক হৃষ্ট-পুষ্ট ও বলিষ্ঠ করেছেন।(১) সুতরাং তোমরা আল্লাহর নি‘আমতসমূহের কথা স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’

(70) তারা বলল: ‘(হে হূদ!) তুমি কি আমাদের কাছে এজন্যে এসেছো যে, আমরা যেন এক আল্লাহর ইবাদত করি এবং আমাদের পূর্বপুরুষরা যার ইবাদত (যে মূর্তিগুলোর পূজা) করত তা ছেড়ে দেই? কাজেই তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার (যে শাস্তির) ভয় দেখাচ্ছ, তা নিয়ে এসো।’

(71) সে (হূদ) বললো: ‘নিশ্চয় তোমাদের ওপর তোমাদের রবের পক্ষ থেকে শাস্তি ও ক্রোধ নির্ধারিত হয়েই আছে। তোমরা কি আমার সাথে এমন নামসমূহের (মূর্তিসমূহের) ব্যাপারে বিবাদ করছ, তোমরা যেগুলোকে (ইলাহ বলে) নামকরণ করেছো, যার ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ নাযিল করেননি? সুতরাং তোমরা (শাস্তির) অপেক্ষা করো। আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি (যা আপতিত হবেই)।’

(72) অবশেষে আমি তাকে (হূদকে) ও তার সাথীদেরকে আমার বিশেষ রহমতে মুক্তি দান করেছি। আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল এবং যারা মু’মিন ছিল না, তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে মূলোৎপাটন করেছি।

(73) আর ছামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালিহকে (রাসূল হিসেবে) প্রেরণ করেছি। তিনি তাদেরকে বললেন: ‘হে আমার জাতি! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। নিশ্চয় তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ(১) এসেছে। এটি আল্লাহর উষ্ট্রী, তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন। সুতরাং তোমরা তাকে আল্লাহর জমিনে চরে খেতে দাও(২) এবং তাকে কোনো কষ্ট দিও না, দিলে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তোমাদেরকে পাকড়াও করবে।’

(74) আর স্মরণ করো, যখন ‘আদ জাতির (ধ্বংসের) পর তিনি তোমাদেরকে (তাদের) স্থলাভিষিক্ত করলেন এবং তোমাদেরকে জমিনে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করলেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ করছো এবং পাহাড় কেটে বাড়িঘর বানাচ্ছ। সুতরাং তোমরা আল্লাহর নি‘আমতসমূহ স্মরণ করো এবং জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না।

(75) তাঁর সম্প্রদায়ের দাম্ভিক নেতারা সে সম্প্রদায়ের শক্তি-সামর্থ্যহীন মু’মিনদেরকে বললো:(হে মু’মিনরা!) তোমরা কি (সত্যিই) এটা জানো যে, সালিহ তার রব এর পক্ষ থেকে (সত্যিকারার্থেই) প্রেরিত হয়েছেন?’ তারা বললো: ‘নিশ্চয় তিনি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন, আমরা তাতে বিশ্বাসী।(১)

(76) তার সম্প্রদায়ের অহংকারীরা বললো: ‘নিশ্চয় তোমরা যার প্রতি ঈমান এনেছ, আমরা সেটাকে অস্বীকার করি।’

(77) অতঃপর তারা (অহংকারবশত আল্লাহর নিদর্শন ) সেই উষ্ট্রীকে হত্যা করে এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করে। উপরন্তু তারা (সালিহকে ঠাট্টা করে) বললো: ‘হে সালিহ! তুমি আমাদেরকে যার (যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির) ভয় দেখাচ্ছ, তা নিয়ে এসো, যদি তুমি সত্যিই রাসূলগণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকো?’

(78) অতঃপর তাদেরকে প্রচণ্ড ভূমিকম্প পাকড়াও করল। ফলে তারা তাদের গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে (মরে) রইল।

(79) এরপর তিনি (সালিহ) তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো এবং বললো: ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো আমার রবের রিসালত তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি এবং (আল্লাহর ভয় ও আশার বাণী শুনিয়ে) তোমাদের কল্যাণ কামনা করেছি; কিন্তু তোমরা কল্যাণকামীদেরকে পছন্দ কর না।’

(80) আর আমি লূতকেও (নবী হিসেবে) পাঠিয়েছিলাম। যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে (তাদের অপকর্মে বিরক্ত হয়ে) বললেন: ‘তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ (সমকামিতা) করছ, যা তোমাদের পূর্বে সৃষ্টিকুলের কেউ করেনি’?

(81) ‘তোমরা তো যৌন তাড়না নিবারণের জন্য নারীদের বাদ দিয়ে পুরুষদের সাথে মিলিত হচ্ছো; বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।

(82) আর তাঁর সম্প্রদায়ের উত্তর কেবল এই ছিল যে, তারা বললো: ‘তোমরা তাদেরকে (লূত ও তাঁর পরিবারকে) তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। নিশ্চয় তারা এমন লোক, যারা অতি পবিত্র হতে চায়।’

(83) অতঃপর আমি তাঁকে ও তাঁর পরিবার পরিজনকে (শাস্তি থেকে) রক্ষা করেছিলাম, তাঁর স্ত্রী ছাড়া, কারণ সে ছিল পিছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।(১)

(84) আর আমি তাদের ওপর ভীষণভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম।(১) সুতরাং (হে রাসূল!) দেখো, এ অপরাধীদের পরিণতি কীরূপ ছিল?

(85) আর আমি মাদইয়ানবাসীদের কাছে তাদের ভাই শু‘আইবকে (রাসূল হিসেবে) পাঠিয়েছিলাম।সে (তাঁর সম্প্রদায়কে) বললো: ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। (আমার আনীত বিষয়ের সত্যতার ব্যাপারে) তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। সুতরাং তোমরা পরিমাণে ও ওজনে পরিপূর্ণ দাও এবং লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দেবে না। আর তোমরা জমিনে শান্তি স্থাপনের পর বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। এটাই (উল্লিখিত উপদেশগুলো) তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা মু`মিন হও।’

(86) আর মানুষকে (সম্পদ অপহরণের জন্যে) ভীতসন্ত্রস্ত করতে, যারা তাঁর (আল্লাহর) প্রতি ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিতে এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করতে তোমরা প্রতিটি পথে বসে থেকো না।’ উপরন্তু (তাঁর নি‘আমতের কথা) স্মরণ করো, ‘তোমরা যখন সংখ্যায় কম ছিলে, আল্লাহ তখন তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন। আরো লক্ষ্য করে দেখো, (তোমাদের পূর্বে) জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কীরূপ হয়েছিল?

(87) (শু‘আইব আরো বললো:) আমি (আমার রবের নিকট থেকে) যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তাতে যদি তোমাদের কোনো একদল ঈমান আনে এবং আরেক দল ঈমান না আনে, তবে (হে মিথ্যারোপকারীরা! তোমরা) অপেক্ষা করো; যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেন। আর তিনিই সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।

(88) ( জবাবে) তাঁর (শু’আইবের) সম্প্রদায়ের (সত্য প্রত্যাখ্যানকারী) অহংকারী নেতারা বললো: ‘হে শু'আইব! আমরা অবশ্যই তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে, তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বের করে দিবো। অন্যথায় তোমাদেরকে আমাদের আদর্শে (ধর্মে) ফিরে আসতে হবে।’ সে বললো: ‘যদিও আমরা সেটাকে (তোমাদের ধর্ম ও মিল্লাতকে) ঘৃণা করি, তবুও?’(১)

(89) ‘আমরা তো আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপকারী হয়ে যাবো- যদি আমরা তোমাদের ধর্মে ফিরে যাই- (শিরক ও কুফরীর) যে ধর্ম থেকে আল্লাহ আমাদেরকে মুক্ত করেছেন। আর আমাদের জন্য উচিত হবে না, তোমাদের (বাতিল) ধর্মে ফিরে যাওয়া; তবে আমাদের রব আল্লাহ চাইলে সেটা ভিন্ন কথা।(১) সবকিছুই আমাদের রবের জ্ঞানের সীমায় রয়েছে। আমরা আল্লাহরই ওপর তাওয়াক্কুল করি। হে আমাদের রব, আমাদের ও আমাদের (কাফির) সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্যভাবে ফয়সালা করে দিন।(২) আর আপনিই তো শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী।’

(90) আর তার সম্প্রদায়ের কাফির নেতারা (মানুষকে হুকমি দিয়ে) বললো: ‘তোমরা যদি (বাপ-দাদার ধর্ম পরিত্যাগ করে) শু'আইবকে অনুসরণ করো, তবে নিশ্চয় তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে (ধ্বংস হয়ে যাবে)।’

(91) অতঃপর (নবীর বিরোধিতার করার কারণে) প্রচণ্ড ভূমিকম্প তাদেরকে পাকড়াও করল। ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে (মরে) রইল।

(92) শু'আইবকে যারা মিথ্যাবাদী বলেছিল, (তারা সবাই এমনভাবে ধ্বংস হয়ে গেলো), ‘মনে হলো তারা যেন কখনো সেখানে বসবাসই করেনি। যারা শু'আইবকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, তারাই (জীবন ও সম্পদ হারিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতে) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

(93) অতঃপর সে (তাদের ধ্বংসের পর) তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো এবং বললো: ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার রবের রিসালাত আমি তো তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদের কল্যাণ কামনা করেছি (উপদেশ দিয়েছিলাম; কিন্তু তোমরা তা গ্রহণ করোনি)। সুতরাং আমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্য কি করে আক্ষেপ করি?

(94) আর আমি যে জনপদেই নবী প্রেরণ করেছি, (সেখানকার লোকেরা যদি তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং তার সাথে কুফরি করে, তবে), এর অধিবাসীকে আমি অর্থসংকট ও দুঃখ-কষ্ট দ্বারা পাকড়াও করেছি, যেন তারা অনুনয় বিনয় করে (কুফরি ও হঠকারিতা পরিহার করে ঈমান আনে)

(95) অতঃপর আমি অকল্যাণকে (দুঃখ-কষ্ট ও রোগ-ব্যাধিকে) কল্যাণে (সচ্ছলতা ও নিরাপত্তা দিয়ে) পরিবর্তন করি। অবশেষে তারা প্রচুর প্রাচুর্যের অধিকারী হয়ে যায় এবং (আমার নি‘আমতের কথা ভুলে গিয়ে ) বলে: 'আমাদের পূর্বপুরুষদেরকেও তো দু:খ-দুর্দশা ও আনন্দ স্পর্শ করেছে।’(১) অতঃপর হঠাৎ আমি তাদেরকে এমনভাবে পাকড়াও করি যে, তারা টেরও পায় না।

(96) আর যদি জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করতো, তবে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম; কিন্তু তারা (রাসূলদের আনীত বিধানকে) মিথ্যারোপ করেছিল। কাজেই আমি তাদের (অসৎ) কৃতকর্মের কারণে তাদেরকে পাকড়াও করেছি।

(97) তবে কি জনপদের (মিথ্যারোপকারী) অধিবাসীরা নিরাপদ হয়ে গেছে যে, রাতের বেলায় তাদের নিকট আমার শাস্তি আসবে না, যখন তারা গভীর ঘুমে নিমগ্ন থাকবে?

(98) নাকি জনপদের (মিথ্যারোপকারী) অধিবাসীরা নিরাপদ হয়ে গেছে যে, দিনের বেলায় তাদের ওপর আমার শাস্তি আসবে না, যখন তারা (দুনিয়াবী কাজে ও) খেলাধুলায় মগ্ন থাকবে?

(99) তারা (মিথ্যারোপকারীরা) কি আল্লাহর কৌশল ও পরিকল্পনা থেকেও নিরাপদ হয়ে গেছে? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর কৌশল থেকে কেউ নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারে না।

(100) কোনো জনপদের অধিবাসীদের (ধ্বংস হওয়ার) পর যারা তার উত্তরাধিকারী হয়, তাদের কাছে কি এ ব্যাপারটি সুস্পষ্ট নয় যে, আমি চাইলে তাদের পাপের কারণে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারি? এমনকি আমি তাদের অন্তরেও মোহর মেরে দিতে পারি। ফলে তারা আর (কোন উপদেশই) শুনবে না।

(101) (হে রাসূল!) এসব জনপদের(১) কিছু সংবাদ আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি, তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ (তাদের সত্যতার) সুস্পষ্ট প্রমাণসহ এসেছিল; কিন্তু পূর্বে তারা যে বিষয়কে একবার মিথ্যারোপ করেছিল, এর ওপর তদের ঈমান আনার ছিল না।(২) এভাবেই আল্লাহ কাফিরদের অন্তরে মোহর মেরে দেন।(৩)

(102) আর (যে জাতিগুলোর নিকট রাসূলগণকে পাঠানো হয়েছে) তাদের অধিকাংশকে আমি প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাইনি; বরং আমি তাদের অধিকাংশকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হয়ে যেতে দেখেছি (পাপাচারীরূপে পেয়েছি)

(103) অতঃপর আমি তাদের (উক্ত রাসূলগণের) পরে মূসাকে আমার নিদর্শনসহ ফির’আউন ও তার সভাসদদের কাছে প্রেরণ করেছি; কিন্তু তারা সেগুলোর সাথে যুলম করেছে।(১) সুতরাং (হে রাসূল!) বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণতি কি হয়েছিল তা তুমি লক্ষ্য করো।

(104) মূসা বললো: ‘হে ফির‘আউন, আমি তো সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল।’

(105) ‘(যখন আমি তাঁর পক্ষ থেকেই প্রেরিত রাসূল, তখন) আমার উচিত তাঁর ব্যাপারে সত্য ছাড়া আর কিছু না বলা। আমি তোমাদের রবের কাছ থেকে (আমার সত্যতার) সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে, তোমাদের কাছে এসেছি। কাজেই বানূ ইসরাঈলকে (বন্দিদশা ও নির্যাতন থেকে মুক্তি দিয়ে) তুমি আমার সাথে পাঠিয়ে দাও।’

(106) ফির’আউন (মূসাকে) বললো: ‘যদি তুমি (তোমার নবুওয়াতের প্রমাণের) কোনো নিদর্শন এনে থাকো, তবে তুমি (তোমার দাবীতে) সত্যবাদী হলে, তা পেশ করো।’

(107) অতঃপর মূসা তাঁর হাতের লাঠি নিক্ষেপ করলেন এবং সাথে সাথেই তা স্পষ্ট এক অজগর সাপে পরিণত হলো।

(108) আর তিনি তাঁর হাত (নিজের বগলের নীচ থেকে) বের করলেন। ফলে তা তৎক্ষণাৎ দর্শকদের সামনে উজ্জ্বল-সাদা হয়ে দেখা দিল।

(109) ফির’আউনের সম্প্রদায়ের সভাসদরা বললো: ‘নিশ্চয় এ তো একজন সুদক্ষ যাদুকর।’

(110) সে (তার যাদুবিদ্যা ব্যবহার করে) তোমাদেরকে তোমাদের দেশ (মিশর) থেকে বের করে দিতে চায়। (ফির‘আউন তার সভাসদদের থেকে মত চেয়ে বললো:) অতএব, এখন তোমরা এ ব্যাপারে কি পরামর্শ দাও?

(111) তারা (সভাসদরা ফির‘আউনকে) বললো: ‘তাকে ও তার ভাইকে (হারূনকে) কিছু সময় দিন এবং (যাদুকরদেরকে একত্রিত করতে) নগরে নগরে লোক পাঠান।’

(112) ‘তারা (শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে) আপনার কাছে সকল বিজ্ঞ যাদুকর নিয়ে আসবে।’

(113) যাদুকররা ফির‘আউনের কাছে এসে বললো: ‘(যাদুর মাধ্যমে) যদি আমরাই বিজয়ী হই, তবে আমাদের জন্য কি সত্যিই পুরস্কার থাকবে?‘

(114) সে (ফির‘আউন) বললো: হ্যাঁ (নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য পুরস্কার তো আছেই), উপরন্তু তোমরা অবশ্যই আমার ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’

(115) তারা (যাদুকররা মূসাকে) বললো: ‘হে মূসা, তুমি (প্রথমে যাদু) নিক্ষেপ করবে, না আমরাই নিক্ষেপ করব?’

(116) সে (মূসা) বললো: ‘তোমরাই (প্রথমে যাদু) নিক্ষেপ কর।’ যখন তারা (দড়ি ও লাঠি) নিক্ষেপ করলো, তখন তারা মানুষের চোখে যাদু করলো এবং তাদেরকে আতঙ্কিত করলো। আসলেই তারা (দর্শনকারীদের দৃষ্টিতে) এক বিশাল শক্তিশালী যাদু নিয়ে এলো।

(117) আর আমি মূসার প্রতি অহী পাঠালাম যে, ‘তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো।’ তৎক্ষণাৎ (লাঠিটি সাপে রূপান্তরিত হয়ে) সেটা তারা যে অলীক বস্তু (লাঠি ও দড়ি) বানিয়েছিল, তা গিলে ফেলতে লাগল।

(118) অবশেষে (সর্বসাধারণের চোখের সামনেই ) সত্য প্রকাশ হয়ে গেল এবং তারা (যাদুর) যা কিছু করছিল, তা বাতিল হয়ে গেল।

(119) তাই সেখানে তারা (ফির‘আউন ও তার যাদুকররা) পরাজিত হলো, উপরন্তু তারা লাঞ্ছিত ও পরাজিত হয়ে ফিরে গেলো।

(120) আর যাদুকররা সাজদায় লুটিয়ে পড়ল।

(121) তারা (একযোগে) বললো: ‘আমরা সৃষ্টিকুলের রবের প্রতি ঈমান আনলাম।’

(122) ‘যিনি মূসা ও হারূনের রব।’

(123) ফির'আউন (তাদেরকে) বললো: ‘আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগে তোমরা তার (মূসার) প্রতি ঈমান আনলে? এটা তো এক বড় ষড়যন্ত্র; তোমরা (উভয় পক্ষ মিলে) নগরবাসীদেরকে এখান থেকে বের করে দেয়ার জন্য এ ষড়যন্ত্র করেছো। সুতরাং তোমরা শীঘ্রই এর পরিণাম (শাস্তি) জানতে পারবে।’

(124) ‘আমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে টুকরো করে ফেলবো (ডান হাত ও বাম পা অথবা বাম হাত ও ডান পা )। তারপর অবশ্যই তোমাদের সবাইকে শূলে চড়াব।’

(125) তারা ( জাদুকররা) বললো: ‘অবশ্যই আমরা তো আমাদের রবের কাছেই ফিরে যাব।’

(126) ‘আর (হে ফির‘আউন!) তুমি তো আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছ শুধু এ জন্যে যে, আমরা (মূসার মাধ্যমে আনিত) আমাদের রবের নিদর্শনের ওপর ঈমান এনেছি, যখন তা আমাদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে। হে আমাদের রব! আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসেবে আমাদেরকে মৃত্যু দিন।’

(127) আর (পরাজয়ের পর ) ফির‘আউনের সম্প্রদায়ের সভাসদগণ বললো: ‘আপনি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে ছেড়ে দিবেন, যাতে তারা জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং আপনাকে ও আপনার উপাস্যগুলোকে বর্জন করে?’ সে বললো: ‘অচিরেই আমরা তাদের পুত্রসন্তানদেরকে হত্যা করবো, আর (আমাদের সেবা করার জন্যে) তাদের কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত রাখবো। আর নিশ্চয় আমরা তাদের ওপর শক্তিধর।’

(128) (এমন অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে) মূসা তাঁর সম্প্রদায়কে বললো: ‘তোমরা (বিপদাপদ দূর ও বিজয়ের জন্যে) আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং (এ পরীক্ষায়) ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় জমিন আল্লাহরই। তিনিই তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে এর উত্তরাধিকারী বানান। আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্যেই।’

(129) তারা (বানূ ইসরাঈলরা) বললো: ‘(হে মূসা!) তুমি আমাদের কাছে আসার আগেও আমাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়েছে এবং তুমি আমাদের কাছে আসার পরেও।’(১) সে (মূসা) বললো: ‘আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের শত্রুকে ধ্বংস করবেন এবং জমিনে তোমাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করবেন। অতঃপর তিনি দেখবেন, তোমরা কেমন কাজ করো।’(২)

(130) আর আমি ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে বছরের পর বছর দুর্ভিক্ষ ও ফল- ফলাদির ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে আক্রান্ত (পরীক্ষা) করেছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

(131) অতঃপর যখনই তাদের (ফির‘আউন গোষ্ঠীর) কাছে কল্যাণ আসত, তখন তারা বলত: ‘এটা তো আমাদের প্রাপ্য।’(১) আর যখন তাদের কাছে অকল্যাণ পৌঁছত, তখন তারা মূসা ও তার সঙ্গীদেরকে অলক্ষুণে মনে করত। সাবধান! তাদের অকল্যাণ তো কেবল আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।

(132) আর তারা (হঠকারিতা করে মূসাকে) বললো: ‘তুমি আমাদেরকে যাদু করার জন্য যে কোন নিদর্শন আমাদের কাছে নিয়ে আস না কেন, আমরা তো তোমার প্রতি ঈমান আনবো না।’

(133) অতঃপর আমি (তাদের মিথ্যারোপ ও হঠকারিতার শাস্তি স্বরূপ) তাদের উপর তুফান (প্লাবন), পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে প্রেরণ করি। এরপরও তারা অহংকার করল। আর তারা ছিল এক অপরাধী সম্প্রদায়।

(134) আর যখন তাদের ওপর শাস্তি আসত হতো তখন তারা বলতো: ‘হে মূসা তুমি আমাদের জন্যে তোমার রবের কাছে দুআ করো, তিনি যে ওয়াদা তোমার সাথে করেছেন, সে অনুযায়ী।(১) যদি তুমি আমাদের ওপর থেকে শাস্তি সরিয়ে দাও, তাহলে অবশ্যই আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনবো এবং বানূ ইসরাঈলকে অবশ্যই তোমার সাথে যেতে দিবো।’

(135) যখনই আমি তাদের ওপর থেকে শাস্তি দূর করে দিতাম এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, যা তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল, তারা তখনই তাদের কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করত।(১)

(136) অতঃপর আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলাম। ফলে, তাদেরকে গভীর সমুদ্রে ডুবিয়ে (শাস্তি) দিলাম। কারণ তারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং এ সম্পর্কে তারা ছিল গাফিল।

(137) আর যে জাতিকে একদা দুর্বল মনে করা হতো, তাদেরকে আমি বরকতপ্রাপ্ত ভূমির পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানালাম(১) এবং বানূ ইসরাঈলের ওপর তোমার রবের উত্তম বাণী পূর্ণতা লাভ করলো।(২) কারণ তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। আর ধ্বংস করে দিলাম ফির‘আউন ও তার সম্প্রদায় যা কিছু তৈরি করেছিল এবং তারা যেসব প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল সেগুলোকে।

(138) আর আমি বানূ ইসরাঈলকে সাগর পার করিয়ে দেই। অতঃপর তারা এমন এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো, যারা (আল্লাহকে বাদ দিয়ে) নিজেদের মূর্তিগুলোর পূজায় নিমগ্ন ছিল। তারা বললো: ‘হে মূসা! তাদের যেমন উপাস্য (মূর্তি) আছে, আমাদের জন্যও তেমনি একজন উপাস্য (মূর্তি) নির্ধারণ করে দাও।’ সে বললো: ‘নিশ্চয় তোমরা এক মূর্খ সম্প্রদায়।’(১)

(139) ‘নিশ্চয় এসব লোক যাতে (যে মূর্তি পূজায়) লিপ্ত রয়েছে তার জন্য তারা তো ধ্বংসপ্রাপ্ত হবেই এবং তারা যা (আনুগত্য ও আমল) করছে, তাও বাতিল হয়ে যাবে।’

(140) সে আরো বললো: ‘আল্লাহ ছাড়া আমি কি তোমাদের জন্য অন্য ইলাহ সন্ধান করব; অথচ তিনি তোমাদেরকে (তোমাদের সময়ের) সৃষ্টিকুলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন?’

(141) আর (হে বানূ ইসরাঈল! তোমরা সে সময়ের কথা) স্মরণ কর, যখন আমি তোমাদেরকে ফির‘আউনের লোকদের (শাস্তি ও লাঞ্ছনা) থেকে উদ্ধার করেছিলাম। তারা তোমাদেরকে কঠিন নিকৃষ্ট শাস্তি দিত। তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করত এবং তোমাদের নারীদেরকে (শত্রুদের সেবিকা বানাতে) জীবিত রাখত। আর এতে(১) ছিল তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মহাপরীক্ষা।

(142) আর (আরো স্মরণ করো) আমি মূসাকে (আত-তাওরাহ গ্রন্থ দেওয়ার জন্যে) ত্রিশ রাতের ওয়াদা দিয়েছিলাম এবং আরো দশ বাড়িয়ে তা পূর্ণ করেছিলাম। এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাত পূর্ণ হয়। মূসা তার ভাই হারূনকে বললো: ‘আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করো, (সুষ্ঠু পরিচালনা ও নম্রতার মাধ্যমে তাদেরকে) সংশোধন করো, আর বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করো না(১)।’

(143) আর মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে (ও স্থানে) উপস্থিত হয়েছিল এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন, তখন সে (তার রবকে) বললো: ‘হে আমার রব! আমাকে দেখা দিন, আমি আপনাকে দেখতে চাই।’ তিনি বললেন:(দুনিয়াতে) তুমি আমাকে কখনোই দেখতে পাবে না; বরং তুমি পাহাড়ের দিকে তাকাও, সেটা যদি (প্রতিক্রিয়া ছাড়াই) নিজের জায়গায় স্থির থাকে তবে তুমি আমাকে (অচিরেই দুনিয়াতে) দেখতে পাবে।’ যখন তার রব পাহাড়ে নূর প্রকাশ করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করল(১) এবং মূসা বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলো। যখন সে জ্ঞান ফিরে পেলো তখন বললো: ‘(হে আমার রব!) আপনি পবিত্র মহান, আমি (দুনিয়াতে আপনাকে দেখার আবেদন থেকে অনুতপ্ত হয়ে) আপনার কাছে তাওবাহ করলাম এবং আমি (আমার সম্প্রদায়ের) মু’মিনদের মধ্যে প্রথম।’

(144) তিনি (আল্লাহ) বললেন: ‘হে মূসা! আমি তোমাকে আমার রিসালাত ও বাক্যালাপ দিয়ে মানুষের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। কাজেই আমি তোমাকে যা (যে মহা সম্মান) প্রদান করলাম, তা গ্রহণ করো এবং কৃতজ্ঞতা আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’

(145) আর আমি তার জন্য ফলকসমূহে প্রত্যেক বিষয়ের উপদেশ এবং সকল বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি। সুতরাং তা শক্ত করে ধরো এবং তোমার সম্প্রদায়কে (বানূ ইসরাঈলকে) নির্দেশ দাও, তারা যেন এর উত্তম বিষয়গুলো গ্রহণ করে ।(১) আমি অচিরেই তোমাদেরকে ফাসিকদের আবাস দেখাব ।(২)

(146) যারা অন্যায়ভাবে (সত্যকে প্রত্যাখান করে) জমিনে অহংকার করে বেড়ায়, আমি অচিরেই তাদেরকে আমার নিদর্শনসমূহ থেকে অবশ্যই ফিরিয়ে রাখবো।(১) আর তারা সকল নিদর্শন দেখলেও তার ওপর ঈমান আনবে না এবং তারা সৎপথ দেখলেও সেটাকে (নিজেদের) পথ হিসেবে গ্রহণ করবে না। কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলেই সেটাকে (নিজেদের) পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। এটা এ জন্য যে, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যারোপ করেছে এবং সে ব্যাপারে (চিন্তা ভাবনা করা থেকে) তারা গাফিল ছিল ।

(147) আর যারা আমার আয়াতসমূহ ও আখিরাতের সাক্ষাতকে(১) অস্বীকার করেছে, তাদের আমলসমূহ নিষ্ফল হয়ে গেছে। তারা যা করে, সে অনুযায়ীই তাদের প্রতিফল দেয়া হবে।

(148) আর মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে (সে তার রবের একান্ত সাক্ষাতে যাওয়ার পর) নিজেদের অলংকারাদি দিয়ে একটি গো-বাছুরের দেহাবয়ব তৈরি করল, যার থেকে 'হাম্বা’ ধ্বনি বের হতো। তারা কি (এই সামান্য বিষয়টাও ) দেখেনি যে, এটা তাদের সাথে কথা বলে না এবং তাদেরকে (কল্যাণ-অকল্যাণের) পথও দেখায় না? তারা এটাকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করল আর তারা ছিল যালিম।

(149) আর যখন তারা (তাদের ভুল বুঝে) লজ্জিত ও অনুতপ্ত হলো এবং দেখলো যে, (গো-বাছুরকে আল্লাহর পাশাপাশি উপাস্য বানিয়ে) তারা তো পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, তখন তারা (বিনয়ী হয়ে) বললো: ‘আমাদের রব যদি আমাদের প্রতি রহম না করেন এবং আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’

(150) আর মূসা যখন ক্ষুব্ধ ও দু:খ ভারাক্রান্ত হয়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসল, তখন সে বললো: ‘আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার কত খারাপ প্রতিনিধিত্ব করেছ! তোমাদের রবের আদেশের আগেই তোমরা তাড়াহুড়া করলে?’ আর সে (রাগে ও দুঃখে তাওরাতের) ফলকগুলো ফেলে দিল এবং স্বীয় ভাইয়ের মাথা (চুল) ধরে নিজের দিকে টেনে আনতে লাগল। সে বললো: ‘হে আমার সহোদর! এ জাতি আমাকে দুর্বল মনে করেছে এবং আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে। তাই তুমি আমার সাথে এমন আচরণ করো না, যাতে শত্রুরা আনন্দিত হয় এবং (তোমার রাগের কারণে) আমাকে যালিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না।’

(151) সে বললো: ‘হে আমার রব! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করুন এবং আপনার রহমতের মধ্যে আমাদেরকে প্রবেশ করান। আর আপনিই রহমকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।‘

(152) নিশ্চয় যারা গো-বাছুরকে (উপাস্য হিসাবে) গ্রহণ করেছে, অচিরেই দুনিয়ার জীবনে তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্রোধ ও লাঞ্ছনা তাদেরকে আক্রান্ত করবে । আর এভাবেই আমি মিথ্যা রটনাকারীদের প্রতিফল দান করি।

(153) আর যারা মন্দ কাজ করল(১), তারপর (অনুতপ্ত হয়ে) তাওবা করল এবং(পরিপূর্ণ) ঈমান আনল, নিশ্চয় তোমার রব এরপরও (তাদের প্রতি ) ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(154) অবশেষে যখন মূসার ক্রোধ থেমে গেল, তখন সে ফলকগুলো তুলে নিল। যারা নিজেদের রবকে ভয় করে এর লেখাগুলোতে তাদের জন্যে হিদায়াত ও রহমত ছিলো ।

(155) আর মূসা তার সম্প্রদায় থেকে (গো-বাছুর পূজার অপরাধের ওজর পেশ করার জন্যে তার সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ) সত্তর জন লোককে আমার নির্ধারিত স্থানে নিয়ে আসার জন্যে নির্বাচন করল। অতঃপর (তারা আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখার ধৃষ্টতা দেখালে) যখন ভূমিকম্প তাদেরকে পাকড়াও করল, তখন সে (মূসা) বললো: ‘হে আমার রব, আপনি চাইলে ইতঃপূর্বে এদের এবং আমাকেও ধ্বংস করতে পারতেন । আমাদের মধ্যে নির্বোধরা যা করেছে, তার কারণে কি আপনি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন? এটাতো আপনার পরীক্ষা ছাড়া কিছু না। এর মাধ্যমে যাকে চান আপনি পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হিদায়াত দান করেন। আপনি আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আর ক্ষমাশীলদের মধ্যে আপনিই তো শ্রেষ্ঠ।’

(156) আর আপনি আমাদের জন্য এ দুনিয়াতে কল্যাণ লিখে দিন এবং আখেরাতেও (জান্নাত দান করুন)। নিশ্চয় আমরা (তাওবা করছি ও ভুল-ত্রুটি স্বীকার করে) আপনার কাছেই ফিরে এসেছি।’ আল্লাহ বললেন: ‘আমার শাস্তি যাকে ইচ্ছে দিয়ে থাকি বটে; কিন্তু আমার রহমত তো প্রত্যেক বস্তুকে ঘিরে আছেই। কাজেই আমিই তা লিখে দিবো তাদের জন্য, যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করে, যাকাত দেয় ও আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে।’

(157) যারা অনুসরণ করে রাসূল উম্মী ( নিরক্ষর ) নবীর(১), যার উল্লেখ তারা তাদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জীলে লিপিবদ্ধ পায়। সে তাদেরকে সৎকাজের আদেশ দেয়, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে এবং অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর সে তাদেরকে তাদের কঠিন বিধানাদি দূর করে ও শৃঙ্খল হতে মুক্ত করে, যা তাদের ওপর ছিল। কাজেই যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং যে নূর (আল-কুরআন) তার সাথে নাযিল হয়েছে সেটার অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম।

(158) (হে রাসূল! তুমি) বলো: ‘হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর (প্রেরিত) রাসূল, যিনি আসমানসমূহ ও জমিনের সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, তিনি (মৃতকে) জীবিত করেন ও (জীবিতকে) মৃত করেন। কাজেই তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূল উম্মী নবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহের(১) প্রতি ঈমান রাখে। আর তোমরা তার অনুসরণ করো, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।’

(159) মূসার সম্প্রদায় থেকে এমন এক দল রয়েছে, যারা অন্যকে ন্যায়ভাবে পথ প্রদর্শন করে এবং তার ভিত্তিতেই ইনসাফ করে।

(160) আর আমি তাদেরকে বারোটি গোত্রে বিভক্ত করেছি। আর মূসার সম্প্রদায় যখন তার কাছে পানি চাইল, তখন আমরা তার প্রতি অহী পাঠালাম যে, ‘তুমি তোমার লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত করো। (সে আঘাত করল) ’ ফলে এ থেকে (লাঠির আঘাতে) বারোটি ঝর্ণা উৎসারিত হলো। প্রত্যেক গোত্র নিজেদের পানি পানের জায়গা চিনে নিল। আর আমি তাদের ওপর মেঘমালার ছায়া দিয়েছিলাম(১) এবং তাদের ওপর নাযিল করেছিলাম মান্না ও সালওয়া।(২) (আমি তাদেরকে বললাম:) ‘তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার করো।’ আর তারা আমার প্রতি যুলম করেনি; বরং তারা (আল্লাহর আদেশ অমান্য করে ও নি‘আমতের অকৃতজ্ঞ হয়ে) নিজেদের ওপরই যুলম করেছে।

(161) আর (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ করো সে সময়ের কথা, যখন তাদেরকে (বানূ ইসরাঈলকে) বলা হয়েছিল: ‘তোমরা এ জনপদে (বাইতুল-মাক্বদাসে) বসবাস করো এবং সেখানের যেখান থেকে ইচ্ছা আহার করো এবং বলো ‘হিত্তাহ’ (হে আমাদের রব! আমাদেরকে ক্ষমা করুন)। আর নতশিরে (বিনয়ী হয়ে রুকূ’ অবস্থায়) দরজা দিয়ে প্রবেশ করো। তাহলে আমি তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দিবো। অবশ্যই আমি সৎকর্মশীলদেরকে (প্রতিদান) বাড়িয়ে দিবো।

(162) অতঃপর তাদের মধ্যে যারা যালিম ছিল, তাদেরকে যা বলা হয়েছিল, তার পরিবর্তে তারা অন্য কথা বলল।(১) ফলে তাদের যুলমের কারণে আমি আসমান থেকে তাদের প্রতি শাস্তি পাঠালাম।

(163) আর (হে রাসূল! তুমি) তাদের (ইয়াহূদীদের) কাছে জিজ্ঞেস করো সাগর তীরের(১) জনপদবাসী সম্বন্ধে, যখন তাদের কাছে শনিবারে তাদের মাছগুলো ভেসে আসত তখন তারা শনিবারে (মাছ শিকার নিষেধাজ্ঞার পরেও আল্লাহর) সীমালঙ্ঘন করত; । আর যেদিন তারা ‘শনিবার’ পালন করত না, সেদিন তা তাদের কাছে আসত না। এভাবে আমি তাদেরকে পরীক্ষা করতাম। কারণ তারা পাপাচার করত।(২)

(164) আর (হে রাসূল! তুমি) স্মরণ করো, যখন তাদের একদল (অসৎ কাজ থেকে নিষেধকারী দলকে) বলেছিল: ‘তোমরা কেন উপদেশ দিচ্ছ এমন সম্প্রদায়কে, যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করবেন কিংবা কঠিন শাস্তি দিবেন’? তারা বললো: ‘তোমাদের রবের নিকট ওযর পেশ করার জন্যে এবং যাতে তারা (এ উপদেশ থেকে) সাবধান হয়।’

(165) অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, যখন তারা তা ভুলে গেল, তখন যারা অসৎকাজ থেকে নিষেধ করত তাদেরকে আমি (শাস্তি থেকে) মুক্তি দিয়েছিলাম। আর যারা (শনিবারে মাছ আটকে রেখে আল্লাহর সাথে হঠকারিতা দেখিয়ে নিজেদের ওপর) যুলম করেছিল, তাদেরকে আমি কঠোর শাস্তি দিয়ে পাকড়াও করেছিলাম, কারণ তারা পাপাচারে লিপ্ত ছিল।

(166) অতঃপর যখন তারা (অহংকার ও হঠকারিতাবশত) নিষিদ্ধ কাজ সীমালঙ্ঘনের সাথে করতে লাগল, তখন আমি তাদেরকে বললাম: ‘তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।’

(167) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো, যখন তোমার রব ঘোষণা করলেন যে, অবশ্যই তিনি কিয়ামত পর্যন্ত তাদের (ইয়াহূদীদের) ওপর এমন লোকদেরকে পাঠাবেন (ক্ষমতা দিবেন), যারা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে।(১) আর নিশ্চয় তোমার রব (পাপীদের) দ্রুত শাস্তিদাতা এবং নিশ্চয় তিনি (তাওবাকারীদের প্রতি) অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।

(168) আর আমি তাদেরকে জমিনে বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত করেছি; তাদের কেউ কেউ সৎকর্মপরায়ণ আর কেউ অন্য রকম (কাফির, পাপী ও অত্যাচারী)। আর আমি তাদেরকে কল্যাণ ও অকল্যাণ(১) দ্বারা পরীক্ষা করেছি, যাতে তারা (অপরাধ পরিত্যাগ করে আমার হিদায়াতের পথে ) ফিরে আসে।

(169) অতঃপর একটি (অযোগ্য ও অধম ) নিকৃষ্ট দল একের পর এক তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে, যারা (পূর্বসূরী থেকে) কিতাবের (তাওরাতের) উত্তরাধিকারী হয়েছে, তারা (আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব বহির্ভূত বিচার-ফায়সালা করে ঘুষ হিসেবে) এ নগণ্য (দুনিয়ার) সামগ্রী গ্রহণ করে। আর তারা বলে: ‘শীঘ্রই আমাদের ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ কিন্তু পরক্ষণে যদি অনুরূপ সামগ্রী (আবারও) তাদের সামনে আসে তবে তারা তা গ্রহণ করবে। তাদের কাছ থেকে কি কিতাবের অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর ব্যাপারে সত্য ছাড়া কোন কথা বলবে না? আর তারা তো কিতাবে যা আছে, তা পাঠ করেছে। যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করে চলে আখিরাতের আবাস তাদের জন্য উত্তম। তোমরা কি বুঝ না?

(170) আর যারা (আল্লাহর) কিতাবকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং সালাত কায়িম করে (অচিরেই আল্লাহ তাদের আমলের প্রতিদান দিবেন)। নিশ্চয় আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করি না।

(171) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো, যখন (বানূ ইসরাঈলরা তাওরাতের বিধান মানতে অস্বীকৃতি জানালে) আমি তাদের (মাথার) ওপর পাহাড় তুলে ধরলাম, যেন তা একখণ্ড মেঘ এবং তারা মনে করল যে, নিশ্চয় তা তাদের ওপর ভেঙ্গে পড়বে। (তখন তাদেরকে বলা হলো:) ‘আমি তোমাদের যা দিয়েছি, তা শক্তভাবে ধরো এবং তাতে যা ( বিধানাবলি) আছে, তা স্মরণ করো। (এগুলো পালন করলে) আশা করা যায়, তোমরা তাকওয়াবান হতে পারবে।’

(172) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো, যখন তোমার রব আদম-সন্তানের পিঠ থেকে তাদের বংশধরকে বের করেছিলেন এবং (স্রষ্টা ও রব হিসেবে ঈমানের স্বীকৃতির ব্যাপারে) তাদের নিজেদের ওপর নিজেদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: ‘আমি কি তোমাদের রব নই?’ তারা সমস্বরে বলেছিলো: ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। আমরা সাক্ষী রইলাম।’ এটা এ জন্যে যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন (আল্লাহর ওপর ঈমান আনার প্রমাণকে অস্বীকার করে) বলতে না পারো: ‘আমরা তো এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম।’

(173) অথবা তোমরা যাতে বলতে না পারো: ‘আমাদের পিতৃ-পুরুষরাই পূর্বে শিরক করেছে, আর আমরা তো তাদের পরবর্তী বংশধর। তবে কি (শিরকের মাধ্যমে) বাতিলপন্থিরা যে আমল করেছে, তার কারণে আপনি কি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন’?

(174) আর আমি এভাবেই আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি, যাতে তারা (শিরক ত্যাগ করে তাওহীদের দিকে) ফিরে আসে।

(175) আর (হে রাসূল!) তুমি তাদেরকে (বানূ ইসরাঈলকে) সে ব্যক্তির(১) সংবাদ পাঠ করে শোনাও, যাকে আমি আমার আয়াতসমূহ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে তা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অতঃপর শয়তান তার পেছনে লাগে। ফলে সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল।

(176) আর আমি ইচ্ছা করলে উক্ত নিদর্শনাবলীর দ্বারা তাকে অবশ্যই উচ্চ মর্যাদা দিতাম; কিন্তু সে পৃথিবীর (ভোগ-বিলাসের) প্রতি ঝুঁকে পড়েছে এবং সে তার কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে, কুকুরের মতো (যে সবসময় খাদ্যের লোভে লালায় সিক্ত জিহ্বা বের করে হাঁপাতে থাকে)। যদি তার ওপর বোঝা চাপিয়ে দাও, তাহলে সে জিহ্বা বের করে হাঁপাবে, আর বোঝা না চাপালেও সে জিহ্বা বের করে হাঁপাবে। এটি হচ্ছে সে সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত, যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে। অতএব, (হে রাসূল!) তুমি এ ঘটনাগুলো তাদের কাছে বর্ণনা করো, যাতে তারা (এগুলোর ব্যাপারে) চিন্তা-ভাবনা করতে পারে।

(177) সে সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত কতই না মন্দ! যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যারোপ করে। আর তারা নিজেরাই (ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে) নিজেদের প্রতিই যুলম করত।

(178) আল্লাহ যাকে সঠিক পথ দেখান, সে-ই সঠিক পথ পায় এবং তিনি যাদেরকে পথভ্রষ্ট করেন, তারাই (প্রকৃতপক্ষে দুনিয়া ও আখিরাতে) ক্ষতিগ্রস্ত।

(179) আর আমি অবশ্যই বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের অন্তর আছে; কিন্তু তা দ্বারা তারা (নিজেদের লাভ-ক্ষতি) অনুধাবন করতে পারে না। তাদের চোখ আছে; তবে তা দ্বারা তারা (আল্লাহর নিদর্শনসমূহ) দেখে না। আর তাদের কান আছে; কিন্তু তা দ্বারা তারা (আল্লাহর আয়াতসমূহ) শুনে না। মূলত তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং তারা (পথভ্রষ্টতার ক্ষেত্রে) এর চেয়েও অধিক পথভ্রষ্ট। তারাই হচ্ছে প্রকৃত গাফিল।

(180) আর (মনে রেখো, ) আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাকো। আর যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো। অচিরেই তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দেয়া হবে।

(181) আর আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে এমন একদল আছে, যারা ন্যায়ভাবে (মানুষকে) সঠিক পথ দেখায় এবং তার ভিত্তিতেই ন্যায়বিচার করে।

(182) আর যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে এমনভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাব যে, তারা জানতেও পারবে না।

(183) আর আমি তাদেরকে (কিছুকালের জন্যে শাস্তি সরিয়ে) অবকাশ দিচ্ছি। নিশ্চয় আমার কৌশল অতি শক্তিশালী।

(184) (যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে) তারা কি কখনো চিন্তা-ভাবনা করেনি যে, তাদের সঙ্গীর (মুহাম্মাদের) মধ্যে কোন মস্তিষ্ক বিকৃতি নেই; সে তো স্পষ্ট ( ও প্রকাশ্য )সতর্ককারী।

(185) তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আসমানসমূহ ও জমিনের সার্বভৌম কর্তৃত্ব সম্পর্কে এবং এতদুভয়ের মাঝে আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সে সম্পর্কে? আর এর প্রতি যে, হয়তো তাদের নির্ধারিত সময় নিকটে এসে গিয়েছে?(১) সুতরাং তারা (আল-কুরআন এবং তাতে যে জান্নাত ও জাহান্নামের ওয়াদা রয়েছে তার ওপর ঈমান না এনে) এরপর আর কোন কথার (কিতাবের) প্রতি ঈমান আনবে?

(186) আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন হিদায়াতকারী নেই এবং তিনি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায়(১) ছেড়ে দেন, ফলে তারা দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়ায়।

(187) তারা (মিথ্যারোপকারীরা) তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে: ‘তা কখন সংঘটিত হবে’? (হে রাসূল!) তুমি বলো: ‘এর জ্ঞান তো রয়েছে আমার রবের নিকট। তিনিই এর নির্ধারিত সময়ে তা প্রকাশ করবেন। আসমানসমূহ ও জমিনের ওপর তা (কিয়ামত) অত্যন্ত কঠিন হবে। সেটি তোমাদের কাছে আকস্মিক এসে পড়বে। তারা তোমাকে প্রশ্ন করছে যেন, তুমি এ সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত আছো। তুমি বলো: ‘এ বিষয়ের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকট আছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।’

(188) (হে রাসূল!) তুমি বলো: ‘আমি আমার নিজের কোনো উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান তা ছাড়া। আর আমি যদি গায়িবের খবর জানতাম, তাহলে আমি অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোনো ক্ষতিই স্পর্শ করতো না। আমি তো ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে (শাস্তি থেকে বাঁচতে) একজন সতর্ককারী ও (মহা প্রতিদানের) সুসংবাদদাতা ছাড়া আর কিছুই নই।

(189) তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি (আদম) থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী (হাওয়াকে) সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে প্রশান্তি পায়। অতঃপর যখন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে মিলন করলো, তখন সে হালকা গর্ভধারণ করলো এবং এটা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করতে লাগল। অতঃপর গর্ভ যখন বড় হয়ে (শরীর) ভারী হয়ে আসে তখন তারা উভয়ে তাদের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, ‘যদি আপনি আমাদেরকে একটি পূর্ণাঙ্গ সুসন্তান দান করেন, তাহলে অবশ্যই আমরা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো।’

(190) অতঃপর তিনি (আল্লাহ) যখন তাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সুসন্তান দান করেন, তখন তারা তাদেরকে যা দেয়া হয়েছে, সেটাতে আল্লাহর বহু শরিক নির্ধারণ করে।(১) কিন্তু তারা যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরিক করে, তিনি তাদের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে (পূত-পবিত্র)

(191) তারা কি এমন বস্তুকে (মূর্তিগুলোকে) আল্লাহর শরিক বানাচ্ছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না? বরং এরা নিজেরাই সৃষ্ট।

(192) এরা (এ মূর্তিগুলো) না তাদেরকে (উপাসনাকারীদেরকে) সাহায্য করতে করতে পারে, আর না নিজেদেরকে সাহায্য করতে পারে।(১)

(193) আর (হে মুশরিকরা!) তোমরা তাদেরকে (এ মূর্তিগুলোকে) সৎপথে ডাকলেও তারা তোমাদেরকে অনুসরণ করবে না। তোমরা ওদেরকে ডাক বা চুপ থাক, তোমাদের জন্য উভয়ই সমান(১)

(194) আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে ডাকো (উপাসনা করো), তারা তো তোমাদেরই মত বান্দা।(১) সুতরাং তোমরা তাদেরকে ডাকতে থাকো, অতঃপর তারা যেনো তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।

(195) (হে মুশরিকরা!) তোমরা যে মূর্তিগুলোকে নিজেদের ইলাহ বানিয়ে নিলে) ওদের কি পা আছে, যা দিয়ে ওরা (নিজেদের প্রয়োজন মিটাতে) চলে? ওদের কি হাত আছে, যা দিয়ে ওরা (তোমাদের বিপদ প্রতিহত করতে) ধরে? কিংবা ওদের কি চোখ আছে, যা দিয়ে ওরা (অদৃশ্যের কোন খবর) দেখে? কিংবা ওদের কি কান আছে, যা দিয়ে ওরা (গোপন কিছু) শুনে? (হে রাসূল! তুমি এ মুশরিকদেরকে) বলো: ‘তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরিক করেছো তাদেরকে ডাকো, তারপর আমার বিরুদ্ধে (ক্ষতি করার ক্ষমতা থাকলে) ষড়যন্ত্র করো এবং আমাকে অবকাশ দিও না।’

(196) নিশ্চয় আমার অভিভাবক তো হলেন সেই আল্লাহ, যিনি কিতাব (আল-কুরআন) নাযিল করেছেন এবং তিনিই সৎকর্মপরায়ণদের অভিভাবকত্ব করে থাকেন।

(197) আর (হে মুশরিকরা!) তোমরা তাঁকে (আল্লাহকে) ছাড়া যাদেরকে ডাকো, তারা তোমাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারে না এবং তারা নিজেদেরকেও সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারে না।(১)

(198) আর (হে রাসূল! তুমি মুশরিকদেরকে বলো:) যদি তোমরা তাদেরকে সৎপথের দিকে আহ্বান করো, তবে তারা কিছুই শুনতে পাবে না। আর তুমি দেখতে পাবে যে, তারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে; অথচ তারা দেখে না।

(199) (হে রাসূল!) তুমি ক্ষমা প্রদর্শন করো এবং ভালো কাজের আদেশ দাও। আর মূর্খদের উপেক্ষা করে চলো।(১)

(200) আর (হে রাসূল!) যদি শয়তানের কোন কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

(201) নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, যখন তাদেরকে শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে(১), তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়।(২)

(202) আর (জিন শয়তানের ও মানুষরূপী শয়তানের) সঙ্গী-সাথীরা তাদেরকে ভ্রষ্টতার দিকে টেনে নিয়ে যায়। অতঃপর এ বিষয়ে(১) তারা কোনো ত্রুটি করে না।

(203) (হে রাসূল!)(১) তুমি যখন তাদের কাছে (তাদের চাহিদা মতো) কোনো নিদর্শন নিয়ে না আসো, তখন তারা বলে: ‘তুমি নিজেই একটি নিদর্শন বানিয়ে নাও না কেন?’ বলো: ‘আমার রবের পক্ষ থেকে যা আমার কাছে ওহী হিসেবে প্রেরণ করা হয়, আমি তো শুধু তারই অনুসরণ করি। এটি (আল- কুরআন) তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ। আর তা হিদায়াত ও রহমত এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা ঈমান আনে।’

(204) আর যখন আল-কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমরা (আল্লাহর) রহমত লাভ করো।

(205) আর (হে রাসূল!) তুমি তোমার রবকে সকাল-সন্ধ্যায় নিজ মনে স্মরণ করো, অনুনয়বিনয় ও ভীতি সহকারে এবং অনুচ্চস্বরে। উপরন্তু (আল্লাহর স্মরণ থেকে কখনো) গাফিল হয়ো না।

(206) নিশ্চয় তোমার রবের সান্নিধ্যে যারা (যেসব ফিরিশতাগণ) আছে, তারা তাঁর ইবাদাতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং তারা তাঁরই তাসবীহ পাঠ করে। আর তাঁর জন্যই সাজদা করে।