48 - Al-Fath ()

|

(1) (হে রাসূল!) নিশ্চয় আমি তোমাকে (হুদায়বিয়ার সন্ধির মাধ্যমে) সুস্পষ্ট বিজয় দিয়েছি;

(2) যেন আল্লাহ তোমার (এই বিজয়ের) পূর্বের ও পরের পাপ ক্ষমা করেন, তোমার ওপর তাঁর নিআমত পূর্ণ করেন, আর তোমাকে সরল পথের হিদায়াত দেন।

(3) এবং আল্লাহ তোমাকে (শত্রুদের ওপর) প্রবল সাহায্য (ও বিজয়) দান করেন।

(4) তিনিই তো মু’মিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেছিলেন, যেন তাদের ঈমানের সাথে আরো ঈমান বৃদ্ধি করে নিতে পারে। বস্তুত আসমানসমূহ ও জমিনের সমুদয় সৈন্যবাহিনী তো আল্লাহরই।(১) আর আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

(5) যাতে তিনি মু’মিন পুরুষ ও নারীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আর তিনি তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আর এটি হলো আল্লাহর কাছে (মু’মিনদের জন্যে) মহাসাফল্য।

(6) আর যাতে তিনি শাস্তি দিতে পারেন মুনাফিক পুরুষ ও নারীদেরকে এবং মুশরিক পুরুষ ও নারীদেরকে যারা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করে; তাদের ওপরই অনিষ্টতা আপতিত হয়। আর আল্লাহ তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তাদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জাহান্নাম। আর সেটা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল!

(7) আর আসমানসমূহ ও জমিনের বাহিনীসমূহ এককভাবে আল্লাহর(১) এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(8) নিশ্চয় আমি তোমাকে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি।

(9) যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনো, তাঁকে সাহায্য ও সম্মান করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করো।

(10) আর যারা (হুদায়বিয়াতে) তোমার কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছে, তারা মূলত আল্লাহরই কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছে; আল্লাহর হাত তাদের হাতের ওপরই ছিলো। অতঃপর যে কেউ অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে, তার অঙ্গীকার ভঙ্গের পরিণাম তারই উপর বর্তাবে। আর যে আল্লাহকে দেয়া অঙ্গীকার পূরণ করবে অচিরেই আল্লাহ তাকে মহা পুরস্কার দিবেন।

(11) (হে রাসূল! মক্কা সফরে না গিয়ে) যারা গৃহে বসে রয়েছে সেসব বেদুঈনরা অচিরেই তোমাকে বলবে, ‘আমাদের ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজন আমাদেরকে ব্যস্ত রেখেছিল; অতএব আমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ তারা মুখে তা বলে, যা তাদের অন্তরে নেই। তাদেরকে বলো: ‘আল্লাহ যদি তোমাদের কোন ক্ষতি করতে চান কিংবা কোন উপকার করতে চান, তবে কে আল্লাহর (ইচ্ছার) মোকাবিলায় তোমাদের জন্য কোন কিছু করার মালিক হবে? বরং তোমরা যে আমল করো, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।’

(12) বরং তোমরা ধারণা করেছিলে রাসূল ও মু’মিনরা (মক্কা থেকে) তাদের পরিবারের কাছে কখনো ফিরে আসবে না। আর (শয়তান কর্তৃক) এটি তোমাদের অন্তরে শোভিত করে দেয়া হয়েছিল। আর তোমরা (আল্লাহর ব্যাপারে) মন্দ ধারণা করেছিলে এবং তোমরা ছিলে ধ্বংসমুখী জাতি।

(13) আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনে না (সে তো কাফির), তবে নিশ্চয় আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি (জাহান্নামের) জ্বলন্ত আগুন।

(14) আসমানসমূহ ও জমিনের সার্বভৌমত্ব আল্লাহর; তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, আর (তাঁর ইনসাফ অনুযায়ী) যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(15) (হে মু’মিনরা! খায়বারে) তোমরা যখন যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সংগ্রহের জন্যে যাবে, তখন পিছনে যারা পড়েছিল অচিরেই তারা বলবে: ‘আমাদেরকেও তোমাদের সাথে যেতে দাও।’ (এদ্বারা) তারা আল্লাহর বাণী (ফায়সালা) পরিবর্তন করতে চায়। (হে রাসূল! তাদেরকে) বলো: ‘তোমরা কখনো আমাদের সাথে যেতে পারবে না; আল্লাহ আগেই এমনটি বলেছেন।’ অতঃপর অচিরেই তারা বলবে: ‘বরং তোমরা (আমাদেরকে) হিংসা করছ।’(১) বরং তারা (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে) খুব কমই বুঝে।

(16) (হে রাসূল! তুমি) পেছনে পড়ে থাকা বেদুঈনদেরকে বলো: ‘এক কঠোর যোদ্ধা জাতির বিরুদ্ধে শীঘ্রই তোমাদেরকে (যুদ্ধ করতে) ডাকা হবে; তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে অথবা তারা (কোনরূপ যুদ্ধ ব্যতিরেকেই) ইসলামে প্রবেশ করবে। অতঃপর তোমরা যদি আনুগত্য করো তবে আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিবেন। আর পূর্বে (মক্কায় যাওয়া থেকে) তোমরা যেমন ফিরে গিয়েছিলে তেমনি যদি ফিরে যাও, তবে তিনি তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।

(17) (আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকলে) অন্ধের কোন অপরাধ নেই, লেংড়ার কোন অপরাধ নেই, অসুস্থের কোন অপরাধ নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে এমন জান্নাতে দাখিল করাবেন, যার পাদদেশে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত। আর যে ব্যক্তি পিছনে ফিরে যাবে তিনি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।

(18) অবশ্যই আল্লাহ মু’মিনদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা (হুদায়বিয়ায়) গাছের নিচে তোমার হাতে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল; অতঃপর তিনি তাদের অন্তরে (ঈমান, ইখলাস ও সততার) যা ছিল তা জেনে নিয়েছেন। ফলে তিনি তাদের ওপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করলেন নিকটবর্তী (খায়বারের) বিজয় দিয়ে।

(19) আর (তাদেরকে আরো পুরস্কৃত করলেন) বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ দিয়ে, যা তারা (খায়বারবাসীর নিকট থেকে) গ্রহণ করবে; আর আল্লাহ হলেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(20) আল্লাহ তোমাদেরকে বিপুল গনীমতের ওয়াদা দিয়েছেন, যা তোমরা (ভবিষ্যৎ বিজয়গুলোতে) গ্রহণ করবে, অতঃপর তিনি এটা (খায়বারের গনীমত) তোমাদের জন্য ত্বরান্বিত করেছেন। আর মানুষের হাত তোমাদের থেকে ফিরিয়ে রেখেছেন(১) এবং যাতে এটি (তড়িৎ গনীমতপ্রাপ্তি) মু’মিনদের জন্য একটি নিদর্শন হয়, আর তিনি তোমাদেরকে সরল পথ দেখান।

(21) আর আরেকটি (গনীমতের অঙ্গীকার দিয়েছেন), যা এখনো তোমরা অর্জন করতে সক্ষম হওনি। কিন্তু আল্লাহ তা বেষ্টন করে রেখেছেন।(১) আর আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।

(22) আর (সেদিন) কাফিররা যদি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তবে অবশ্যই তারা (পরাজিত হয়ে) পিঠ দেখিয়ে পালাবে। তারপর তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।

(23) এটাই আল্লাহর বিধান(১), যা পূর্ব থেকেই চলে আসছে, আর তুমি আল্লাহর বিধানে কোন পরিবর্তন পাবে না।

(24) আর তিনিই মক্কা উপত্যকায় তোমাদেরকে তাদের (মুশরিকদের) ওপর বিজয়ী করার পর তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের থেকে ফিরায়ে রেখেছেন।(১) আর তোমরা যা আমল কর, আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।

(25) তারাই তো কুফরী করেছিল এবং তোমাদেরকে মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করা থেকে বাধা দিয়েছিল, আর কুরবানীর পশুগুলোকে কুরবানীর স্থানে পৌঁছতে বাধা দিয়েছিল। যদি (সেদিন মক্কা নগরীতে) মু‘মিন পুরুষরা ও মু‘মিন নারীরা না থাকত, যাদের অনেককেই তোমরা জানতে না, (ফলে) তোমরা না জেনে তাদেরকে (কাফিরদের সাথে হত্যা করে) পদদলিত করতে, তাদের কারণে তোমরা অপরাধী ও দোষী সাব্যস্ত হতে, (এ কারণেই আল্লাহ তোমাদেরকে তখন যুদ্ধের অনুমতি দেন নি)। যাতে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমতে (মক্কায় অবস্থিত মু‘মিনদের মতো) প্রবেশ করান। যদি (সেদিন মক্কায়) মুমিনরা কাফিরদের থেকে পৃথক থাকত, তাহলে আমি অবশ্যই তাদের মধ্যে কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিতাম।

(26) যখন কাফিররা তাদের অন্তরে আত্ম-অহমিকা পোষণ করেছিল, জাহিলী যুগের অহমিকা। তখন আল্লাহ তাঁর রাসূলের ওপর ও মু‘মিনদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাকওয়ার বাণী (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাদের জন্য অপরিহার্য করলেন, আর তারাই ছিল এর সর্বাধিক উপযুক্ত ও এর অধিকারী। আর আল্লাহ হলেন প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ।

(27) অবশ্যই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে স্বপ্নটি যথাযথভাবে সত্যে পরিণত করে দিয়েছেন।(১) তোমরা ইন শা’ আল্লাহ নিরাপদে তোমাদের মাথা মুণ্ডন করে এবং চুল ছেঁটে নির্ভয়ে আল-মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ জেনেছেন যা তোমরা জানতে না। সুতরাং এ ছাড়াও তিনি দিলেন এক নিকটবর্তী বিজয়(২)

(28) তিনিই তাঁর রাসূল (মুহাম্মাদ)-কে হিদায়াত ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি এটাকে সকল দীনের ওপর বিজয়ী করতে পারেন। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।

(29) মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকূকারী, সাজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সাজদার চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজীলে (নিজেদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও পূর্ণতায়) তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার কচিপাতা উদ্‌গত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কাণ্ডের ওপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষিকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন।